বইপোকারা অজয়দের বাড়িতেই থাকে বলে পাড়ার লোকেরা বিশ্বাস করত।সাত শরিকের বাড়িতে গজিয়ে ওঠা পুরোনো ধাঁচের পরিবারতন্ত্রে লেখক না থাকলেও ঠাকুরদার আমলের বৈঠকখানার আলমারির ঠাসা বই যে বাড়ির সব সদস্যরাই আগ্রাসী পাঠকের মতন গোগ্রাসে গিলেছেন এ নিয়ে দুর্গানগরের মতন সুদূর আধা মফঃস্বল শহরের লোকেদের কোন সন্দেহ ছিল না, আর তাই তারাঐ দত্ত বাড়িকে ‘বইপোকাদের -বাড়ি ‘ বলেই চেনে। এই বই পড়াটা ওই বাড়ির ছেলে মেয়ে বৌ কিংবা জোয়ান বুড়ো সকলের কাছেই যেন কিছুটা অভ্যাস ।বাড়িতে গেলেই দেখা যায় কেউ না কেউ কিছু না কিছু পড়ছেই।ছেলে বুড়ো সকলের কাছেই অভ্যাস টা যেন নৈতিক কর্তব্যর পর্যায়ে ।তবে বাইরের লোকেদের সাথে মেলামেশা বা কথোপকথনে এই পাঠযাপনের কোন প্রডাবই ফেলতে দেন না ,এ বাড়ির কোন সদস্য ।বরং রবীন্দ্র জয়ন্তী বা কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিন্দুমাত্র মাতব্বরি না করে যাবতীয় তথ্য সাহায্য করতে এদের কোনো জুড়ি নেই ।এমনকি দুর্গানগর লাইব্রেরির উন্নয়নে নানা সময়ে অর্থ সাহায্য করেও লাইব্রেরির গভর্নিং বডির সদস্য হিসেবেই থেকে গেছেন বাড়ির কেউ না কেউ ।বাড়তি কোনো অহংবোধের অসংগতি চোখে পড়ে নি কারোর ।সবাই একটু বেশি রকম ভালো মানুষ পড়ুয়া গোছের।তাই বাড়িতে শিক্ষক অধ্যাপক প্রচুর না থাকলেও বাড়িটার প্রতি একটা আলাদা টান বা সমীহ আছে পাড়ার লোকদের।
এমন বাড়ির লোকের ব্যবহারে আহত হয়েছেন দুর্গানগর কলেজেরই নবাগত তরুণ অধ্যাপক প্রফেসর স্বপ্ননীল চৌধুরী—- খবরটা শোনার পর সামান্য হোঁচট খেয়েছিলেন দুর্গানগর লাইব্রেরির বহু পুরোনো ঝানু -পড়ুয়া লাইব্রেরিয়ান অনাদি বসু।পরে সামান্য কথোপকথনে যার নাম সামনে এল তিনি ও বাড়ি র বর্ষীয়ান সদস্যা চিত্রিতা দেবী , যিনি নিজেকে বিন্দুমাত্র শো- অফ করতে নারাজ একজন জেনুইন পড়ুয়া হওয়া সত্বেও ।খুব কম আসেন আজকাল । কিন্তু আসলে গল্পের আসর জমাতে তার জুড়ি মেলা ভার ।
অল্প বয়সী পাঠকরা মুহূর্তে হয়ে যেত তার ফ্যান।রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ,উপনিষদের থেকে রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিম,শরৎচন্দ্র কিংবা সুনীল, শীর্ষেন্দুদের নানা গল্প ,গল্পকারের অনুষঙ্গে তুলে তুলে বলতেন তাতে প্রথমদিকে অবাকই লাগত নবাগত লাইব্রেরিয়ান অনাদির।
কিছু দিনের মধ্যে আলাপ হয় দত্ত বাড়ি র তরুণ সদস্য ওনার সমবয়সী অজয়ের সাথে ।পরে পরিচয় গড়ায় বন্ধুত্বে। এরপর বইয়ের টান দুজনকেই হরিহর আত্মায় পরিণত করে ।সেই সূত্রে একটা সময় প্রায় প্রতিদিনই যাতায়াত করতেন অজয়দের বাড়িতে ।তখনই ওদের বাড়ির লাইব্রেরির সংগ্রহ দেখে প্রায় চমকে উঠেছিলেন আর তার চেয়েও বেশি স্তম্ভিত হয়েছিলেন ওদের পড়ার ধরণ আর বহর
দেখে।
অনাদির ছোটবেলা থেকেই ভালো পড়ুয়া খুঁজে বেড়াবার শখ ছিল। তাই কিছুটা নেশার বশেই লাইব্রেরিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন ।দীর্ঘদিন বই ঘাঁটাঘাঁটি করে পাঠককে বই পড়াতে পড়াতে আর নানা স্তরের পড়াশোনা জানা মানুষদের সাথে মিশতে মিশতে অনাদি বুঝে গেছে যে একশ্রেণীর পড়ুয়া হয় জাত পড়ুয়া ,বইকে প্রায় নিঙড়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেন।দত্ত বাড়ির পড়ুয়ারা সেই জাতের।
বইয়ের রসে নিজেদের ডুবিয়ে সবসময়েই প্রায় রসালো হয়ে থাকে ,ফলে খাস্তা খোঁজা কোনো পড়ুয়া ঐরস চাখতে এলে এবাড়ির লোকেরা হয় তাকে ঐ রসে ডুবিয়ে নেবে না হলে রসালো করে বাজারে ছেড়ে দেবে। অনাদি নিজে যেমন ঐ রসে ডুব দিয়েছিলেন ।আজও ঐ গামলা থেকে উঠতেই পারেন নি।
স্বপ্ননীলের অভিযোগ শোনার পর ঘটনা কিছু টা আন্দাজ করেছিলেন দুঁদে লাইব্রেরিয়ান অনাদি ।প্রকৃত সত্য জানতে সেদিন লাইব্রেরিতে আসার পর অজয়কে পাকড়াও করে প্রসঙ্গেটি তুলতেই মুচকি হেসে অজয় বলল– জানই তো আমাদের বাড়ি।যা হয় আরকি, আমাদের বাড়ি তে! ঠিক তাই হয়েছে ।এরপর অজয় সেদিন এর যে গল্প শোনায় তাতে আজকের ইনটেলেকচ্যুয়াল পাঠক যথেষ্ট ভয়ই পাবেএটা বুঝে হেসেই ফেললেন অনাদি।
(২)
দুর্গানগর লাইব্রেরিতে মাসখানেক আগে ‘অর্কিড’ সাহিত্য পত্রিকার সন্ধান করতে এসেছিলেন অধ্যাপক স্বপ্ননীল। ঠিক ওই সময়েই আগমন অজয়ের। লাইব্রেরিয়ান অনাদি অজয়ের সাথে দু’এক কথা বলার পর জানতে চান তাঁদের বাড়ির লাইব্রেরিতে ‘অর্কিড’ সাহিত্য পত্রিকার কোনও সংগ্রহ আছে কিনা? উত্তরে অজয় জানায়, দু’একটা আছে বোধহয়। উনি এসে দেখে নিতে পারেন। এভাবেই উভয়ের মধ্যে যোগাযোগের মাধ্যম হন অনাদি। অজয়কে দেখিয়ে বলেন, জ্ঞানের খনির সন্ধান দিলাম। সোনা তোলার দায়িত্ব আপনার।
সেই সূত্রেই দিন পনেরো আগে অজয়দের বাড়ি উপস্থিত হয়েছিলেন স্বপ্ননীল। দত্তবাড়ির নিয়ম অনুযায়ী বাড়ির প্রথম চেকপোস্ট চিত্রিতা দেবী। এলাকার বাচ্চাদের কাছে যিনি গল্পদিদা। দুর্গানগর কলেজের এই নবীন অধ্যাপক বাংলার লোক জেনে সহজাত আনন্দে আপ্যায়ন করে নিলেন। এবং তার কাঙ্ক্ষিত ‘অর্কিড’-এর কয়েকটা দুষ্প্রাপ্য সংখ্যা লাইব্রেরি থেকে বের করে দেখতেও দিলেন। এর মধ্যে চা এল। স্বপ্ননীল জানালেন তাঁর কাঙ্ক্ষিত প্রবন্ধটি ওর মধ্যে তিনটি সংখ্যায় রয়েছে।
– কার লেখা? কোন বিষয় নিয়ে কাজ করছেন আপনি?’ জানতে চাইলেন চিত্রিতা।
— আসলে এটা আমার কাজ নয়। আমাদের পত্রিকা মালকোষের আগামী উৎসব সংখ্যার বিশেষ ক্রোড়পত্রটি হবে অমিয়া সান্যালকে নিয়ে। ওঁর ওপরেই বেশ কিছু আলোচনামূলক লেখা বেরিয়েছিল এই ‘অর্কিড’ পত্রিকায় সত্তরের দশকে। সেগুলি রিপ্রিন্টের দরকার আমাদের। সেগুলি রিপ্রিন্টের জন্য খুঁজছি। গর্বের সঙ্গে জানালেন অধ্যাপক।
– বাহ! খুব বড় লেখিকা উনি। বহুদিন অনালোচিত ছিলেন। বছর দুএক হল ওনার রচনাবলীও বেরিয়েছে। ওনার সেই বিখ্যাত উপন্যাস ‘যুগান্ত’ পড়েছেন নিশ্চয়ই। আর সেই তোলপাড় করা ঐতিহাসিক উপন্যাস ‘অস্তাচলের সূর্য’? কথা বলতে বলতে উৎসাহিত চিত্রিতা যেন টগবগ করে ফুটছেন।
— না, মানে সবগুলো আমাদের পড়া হয়ে ওঠেনি। আগে আমরা ওনার ওপর যে সমস্ত আলোচনামূলক লেখা বেরিয়েছিল, সেগুলোই দেখে নিতে চাইছি। হোঁচট খেয়ে নিজেকে সামলালেন স্বপ্ননীল।
— সে কী! ওনার আসল লেখাগুলোই আপনারা পড়েননি? অথচ ওনাকে নিয়ে আপনারা সংকলন করছেন, এ তো ভারি মজা! দত্তবাড়ির নিয়ম মেনে বাক্যবান ছুঁড়লেন চিত্রিতা দেবী, — অরিজিনাল লেখা না পড়ে শুধু আলোচনা পড়ে একজন লেখিকাকে নিয়ে কাজ করবেন কী করে? আপনার বা আপনাদের মতামত বা বিশ্লেষণ দেবেন কী করে?
–আসলে পুরো সংখ্যা নয়, এটা তো একটা ক্রোড়পত্র। তাই আমরা ভেবেছি ওনার ওপর কিছু পুরনো লেখা রিপ্রিণ্ট করে দেব। আমরা একই ভাবে এর আগে ‘মালকোষ’ পত্রিকায় দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, সুলেখা সান্যাল, অনন্য রায়, বোধিসত্ব মৈত্রসহ বহু অনালোচিত লেখকদের ওপর ক্রোড়পত্র করেছি। আমাদের পত্রিকা শুধু লিটিল ম্যাগ হিসেবে সবাই দেখে না। বাংলাদেশের সিরিয়াস পাঠকরা যথেষ্ট মর্যাদা দিয়ে পড়েন। আপনাকে দেব সেই পুরনো সংখ্যাগুলো। নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ করার মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নবীন অধ্যাপকটি।
— কিন্তু এতো প্রকাশক মানে পাবলিশার্সের কাজ। চাড্ডি পুরনো লেখা জোগাড় করে ছাপিয়ে দেয়া। সম্পাদকের কাজ তো আরও গুরুত্বপূর্ণ। পুরনো লেখার পাশাপাশি নতুন লেখক খুঁজে বের করে, তাদের দিয়ে নতুন নতুন দৃষ্টিকোণে আলোচনা করিয়ে নেওয়াই তো প্রকৃত সম্পাদনা। অরিজিনাল লেখা না পড়লে দৃষ্টিকোণ নির্ধারণ করবেন কী করে? যেভাবে এক সময় করেছেন রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, জলধর সেন, হুমায়ুন কবীর, শিবনারায়ণ রায়, নির্মাল্য আচার্যরা। আসলে একটা নতুন ট্রেন্ড হয়েছে বাংলায়। আমরা বাড়িতে বলি উজ্জ্বল উদ্ধার সিরিজের সম্পাদক। বেশ কিছু হারিয়ে যাওয়া পুরনো লেখা যোগাড় করো আর বেশ একটা জমকালো পত্রিকার নাম দিয়ে সে সব ছেপে দাও। লেখকের মূল লেখা পড়ার দরকার নেই। ওই আলোচনাটুকু গিলিয়ে দিলেই হল। একদল কেনেও নিশ্চয়ই। আসলে স্কুল কলেজ থেকে এই অভ্যাস শিখছে সব। নোট পড়ে পড়ে। আমি কিন্তু বাবা মূল লেখা না পড়ে অন্যের মুখে আলোচনা শুনতে একদম রাজি নই। অন্তত আমাদের যুগের ধরনটাই ছিল তাই। — বাগে পেয়ে প্রায় চেপে ধরেছেন এই অধ্যাপককে দুর্গানগরের রিটায়ার্ড স্কুল শিক্ষিকা চিত্রিতা দেবী।
— না মানে আমাদের পত্রিকাতেও অমিয়া দেবীকে নিয়ে দুটি নতুন আলোচনা থাকছে। লিখছেন এই মুহূর্তের সবচেয়ে বিতর্কিত লেখক অধ্যাপক ত্রিশঙ্কু ভট্টাচার্য। ওনার সঙ্গে আমার আবার ব্যক্তিগত সম্পর্কটা একটু অন্যরকম। শিলচর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার মানুষ। ওনার সেই বিখ্যাত বইটা ‘পোস্ট মর্ডানিজম ও বাংলা গদ্যে আধুনিকতা’ পড়েছেন নিশ্চয়য়ই? খুব হৈচৈ ফেলেছে তো। আগেরবার স্রেফ আমার অনুরোধে দীপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর একটা যা আলোচনা করেছিলেন না…
— থামো। সরি, আপনাকে তুমি বলে ফেললাম। কিছু মনে করো না বয়সে অনেকটা ছোট তাই তুমি বলছি।
–না, না। ঠিক আছে।
— শোনও অন্যের মত পরে শুনব খন। মানুষ সব সময় নিজের মতকে অন্যের মতে চুবিয়ে নেয় আসলটা পড়া না থাকার দরুন। কোথাকার কোন প্রোফেসর কী আলোচনা করল, তা জেনে আমার কী হবে? বিতর্ক উঠেছে বুঝলাম, তুমি সেই বিতর্কে কোন পক্ষ নেবে? অরিজিনাল না পড়লে তুমি সেই সিদ্ধান্ত নেবে কী করে? তখন অন্যের ঢাক তোমাকে পেটাতে হবে। তুমি বয়সে ছোট একটা ঘটনা বলি শোনও — আমার ঠাকুমার বাংলা অক্ষর জ্ঞানটুকু ছিল শুধু। ঝাঁকামুটেদের থেকে বই কিনতেন। শরৎচন্দ্র মুখস্থ বলতে পারতেন। কী বলবে? বই দেখতে হত না ‘অভাগীর স্বর্গ’ গড়গড় করে বলে যেতে পারেতেন। একইভাবে ‘পল্লীসমাজ’, ”বামুনের মেয়ে’ কণ্ঠস্থ ছিল। রামায়ণ, মহাভারত এতটাই জানা ছিল মহাকাব্যের চরিত্রদের মিলিয়ে মিলিয়ে নিজের দেখা মানুষদের চেনাতেন। তার সঙ্গে মহাকাব্যের গল্পগুলো জুড়ে দিতেন। এত কথায় কথায় অধ্যাপকীয় রেফারেন্স দরকারই হত না। নিজে নিজেই বিশ্লেষণ করতেন। তিনি আবার বলেছিলেন, তাঁর ঠাকুমার মুখ থেকে মূল গল্পগুলো শুনেছিলেন। কী বলবে বলো? আরে, এই বছর তিরিশ আগেও দেখেছি নিতান্ত সাধারণ পাঠক, যে কিনা ভারি তত্ত্বকথার বই পড়ে না বোঝেও না। সে এক একটা বই নিয়ে গিয়ে চার দিনের মধ্যে ফেরত দিয়ে যাচ্ছে। এখন তো পুরো বই পড়ারই ধৈর্য নেই। আর আছে তোমাদের মতন লিটিল ম্যাগের সম্পাদকরা — এ আলোচনা ছেপেছি, অমুকে অমুক বইয়ের ওপর আলোচনা করেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
— আসলে আধুনিক সোসাইটিতে কনটেন্টাই জানতে চাইছে সবাই। সে জন্যেই এ অবস্থা। পুরোটা পড়বার সময় কোথায়? নিজের গলদ ঢাকতে তৎপর অধ্যাপক, — হয়তো আপনারাই ঠিক। কিন্তু ওই কন্সেপ্টটা না অদ্ভুত ভাবে চলে যাচ্ছে। এখন ইন্টেলেকচুয়েল এক্সপ্ল্যানেশনটাই লোকে মেনে নিচ্ছে। তাই এত আলোচনা সমালোচনার আসর বসাচ্ছে লিটলম্যাগগুলো।
— অরিজিনাল একদম না পড়েই সে সবে যোগ দেব কেন? তাহলে আমার মতটা কোথায় যাবে? নিজেকে অসম্মান করা হবে না? নিজেকে ছোট করা হবে না? নিজের প্রতি পাঠক হিসেবে আমার তো একটা দায়িত্ব আছে না? চেপে ধরেছেন চিত্রিতা, — পুরো উপন্যাস, পুরো গল্প তো অর্ধেক স্কুল কলেজে পড়ানোই হয় না। ফলে বাচ্চারা ছোট থেকেই নোটে অভ্যস্ত। ফলে আলোচনার আসরে স্রেফ শ্রোতা বা আলোচনা গ্রন্থে স্রেফ পাঠকমাত্র। নিজের মত তৈরি করতে অন্যের মতকে ধার করতে হয়। আচ্ছা, তুমি পড়াও গোটা গল্প বা উপন্যাস?
— কনটেন্টের ওপর ঝোঁক বাড়ায় মূল থেকে সরে যাওয়ার মূল কারণ। আসল সমস্যা সময়ের অভাব। এতটা সময়ের অভাব আপনাদের সময় ছিল না। মরিয়া হয়ে চাপ সরিয়ে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলেন স্বপ্ননীল। কিন্তু মাঝপথে তাঁর কথা থামিয়ে প্রায় ঝাঁপিয়ে পরলেন চিত্রিতা, — রাখো তোমার কনটেন্ট, কন্সাইজড আর আব্রিজডের গল্প। শোনও পুরোটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ার রেওয়াজ শিখিয়েছিলেন বাবা। বলেছিলেন, যা পড়বে তা যেন আত্মস্থ হয়। এখনও সেটা মানি। সেটাই খুঁজি। তাই তোমাকে একটু…
–আজ আসি, রাত হল। পরে আবার কখনও কথা হবে। মাঝপথে কথা থামিয়ে রাত বাড়ার অজুহাত দিয়ে বিদায় নিলেন বিপর্যস্ত স্বপ্ননীল। সদর অবধি এগিয়ে দিতে গিয়ে অজয় দেখলেন চোখমুখ লাল।
রাতে খাবার পর ঠাকুমার ঘরে ঢুকল অজয়, — হঠাৎ এত চেপে ধরলে লোকটাকে?
— না, এমনি। মুচকি হাসলেন চিত্রিতা, — মনে হল একটা ফাঁপা ফানুস। একটু ফুটো করে দেখলুম হাওয়া কতটা।
চোখ টিপে অজয় জিজ্ঞেস করল, — দেখলে কতটা?
চিত্রিতা চোখের মধ্যে হাসি ছড়িয়ে বললেন, — পুরোটা। নিউ ইন্টেলেকচুয়ল সোসাইটির কেতাবী ঢঙের আসলি আঁতেল। এক্কেবারে নয়া মিক্সড প্রোডাক্ট। একটা আসলি মলাট পণ্ডিত।
Tags: কেতাবি, গল্প, দেবাশিস মজুমদার
email:galpersamay@gmail.com
ত্রিদিবেশ বন্দোপাধ্যায় on November 1, 2020
নতুন বিষয় নিয়ে গল্প। লেখক নিজে একজন সম্পাদক। তিনি যে সম্পাদনার কাজটা হৃদয় থেকে করেন সেটা এই গল্প থেকে বোঝা যায়। বর্তমান সময়ে সব কিছুতেই শর্টকাট করার যে প্রবনতা দেখা যায় সাহিত্য ক্ষেত্রও তার বাইরে নয়। লেখক তাকেই বিদ্রুপ করেছেন। গল্পে এই সমস্যাটা তুলে ধরা হয়েছে সাফল্যের সঙ্গে, একই সঙ্গে গল্পটিও দাঁড়িয়েছে।
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।