22 Oct

জুজু

লিখেছেন:তপন মোদক


(১)

আত্মহত্যার প্রথম প্রচেষ্টা

সকাল থেকে এক নাগারে বৃষ্টিটা পড়েই যাচ্ছে । নার্সিং হোম থেকে একটু দূরেই চায়ের দোকান । একটা  চা মেরে আসবো – সে উপায়ও নেই । রিনি অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার সময় বলেছিল ছাতাটা নিতে – বউ’এর কথা বাসি হলে মিঠে হয় । আমার জীবনে বারবার এটা প্রমাণ হয়েছে । সমু’র বউ’এর অ্যাসিড খাবার কথা  শুনেই রিনি বলেছিল- ন্যাকামি । শব্দটা সকাল থেকেই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে । গুপ্তবাবুকে কথাটা বলার জন্য মুখটা উসখুস করলে কি হবে – কথাটা বলা যাবে না । একটা বাচ্ছা মেয়ে শ্বশুর-শাশুরি বা স্বামীর ওপর অভিমান বশতঃ পুরো এক বোতল মিউরেটিক  অ্যাসিড গলায় ঢেলে দিয়েছে । আশেপাশের বাড়ির সবাই তার চিৎকার শুনেছে – অ্যাসিড’এর জ্বালায় কাটা পাঁঠার মত ছটফটানি দেখেছে – তবুও রিনি বলল- ন্যাকামি । মহিলারা এক আশ্চর্য জীব। এই যে আমরা চারজন নার্সিং হোমে এসেছি – সবাই পুরুষ । আমি – গুপ্তবাবু – ছোটন আর সমু । আমি আর গুপ্তবাবু প্রতিবেশী – ছোটন পাড়ার উঠতি মাতব্বর – সমুর বন্ধু । সমু রুগীর কাছে । ছোটন গেছে থানায় – ম্যানেজ করতে । আমার  আর গুপ্তবাবুর কোনও ভূমিকাই নেই । সকাল থেকে নার্সিং হোমে বসে আছি । গুপ্তবাবু অবশ্য তার ক্রণিক হাঁপানি নিয়ে ব্যস্ত । মাঝে মাঝেই ইনহেলার নিচ্ছেন । হঠাৎ গুপ্তবাবু পাশে এসে ফিসফিস করে বললেন, বাপিদা ফোন করেছিল । না বাপি তো ফোন করে নি। আমি সে কথা বললাম । তারপর বললাম, সমুকে নিশ্চয় করেছে । তাড়াহুড়োতে সমু ফোনটা বাড়িতে ফেলে এসেছে এটা খেয়াল করেন নি, গুপ্তবাবু সেই একই ভলিউমে বলে চললেন –  ছেলের বউ সুইসাইড করেছে –  কোনও উদ্বেগ থাকবে না – আরে টেঁসে গেলে কত্তা গিন্নি সব তো আজীবন জেলের ঘানি টানতে হবে – কিছু বুঝছেন আপনি । আমি হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম গুপ্তবাবুর দিকে । অনেক গল্প আছে মশাই – এমনি এমনি তো একটা সোমত্ত বউ – যার একটা বাচ্চা আছে – সুইসাইড করতে যায় না – সমুটাও বদের গোড়া – বউ মেইনটেন করতে পারিস না – বিয়ে করেছিস কেন । গুপ্তবাবু যে ভলিউমে কথাগুলো বলে যাচ্ছেন – তাতে কিছু বুঝছি –  আবার অনেকটাই বুঝতে পারছি না । তবে গুপ্তবাবু সমুর বউ’এর এই অ্যাটেম্পটের পিছনে বাপি  আর বাপির বউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছে – এটা বেশ বুঝতে পারছি। বাপিকে আমি আজ থেকে চিনি না । আমার কথামতই এখানে জমি কিনে বাড়ি করে । ওর বিয়ে – তারপর সমুর জন্ম – সবার সাক্ষী আমি । অত্যন্ত নরম মনের মানুষ । কেতকী – ওর বউ – যথেষ্ট সুন্দরী এবং অভিজাত । বউমার সঙ্গে বাইরে বেরোলে এখনও কেতকীই নজরে পড়ে । সমুর বিয়ের আগে পর্যন্ত ইর্ষনীয়ভাবে সুখী পরিবার । সমু সরকারী চাকরী করে -অডিট এণ্ড অ্যাকাউন্টস ডিপার্ট্মেন্টে । বাপি বছর দুয়েক আগে সমুর মেয়ে হবার পর রিটায়ার করে । আমার চোখে বাপি আর কেতকীর কোনো গলদ চোখে পড়েনি । আর সমুর তো তুলনা নেই । অমন ভদ্র বিনয়ী ছেলে আজকাল দেখাই যায় না ।  একদম পাশের বাড়ি হবার জন্য আর বাপির সঙ্গে অনেকদিনের মেলামেশার কারণে পরিবারটার সঙ্গে একটা আত্মীয়তার বন্ধন অস্বীকার করতে পারি না । সমুর বউ ওর মা বাবার একমাত্র সন্তান ।  সে জন্য সমুর শ্বশুর-শাশুড়ি প্রায়ই এখানে এসে থাকেন – এর জন্য বাপির কোনও বিরক্ত ভাব কখনও আমার চোখে পড়েনি । তা ছাড়া বাপির বাড়িতে সর্বক্ষণের কাজের মেয়ে ঝুমাকে আমিই যোগাড় করে দিয়েছি । ঝুমা আমাদের বাড়িতে প্রায়ই আসে – ঝুমাও আমাদের কাছে কোনোদিন গণ্ডগোলের বিন্দুমাত্র আভাসও দেয় নি ।  আমি গুপ্তবাবুর স্টাইল নকল করে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললাম, সুইসাইডের কারণ কিছু বুঝলেন । জলের মত পরিস্কার – ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স মশাই, অত্যন্ত বিজ্ঞের ভঙ্গিতে উত্তর দিলেন গুপ্তবাবু । আমি আবার হাঁ করে ফেললাম । পাগলেও মেলাতে পারবে না – বাপি কেতকী আর সমুর  সঙ্গে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সকে । সারা দেশে ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সে কত মেয়ে রোজ মারা যায় জানেন? আমি আর শুনতে পারছিলাম না । একটা সিগারেট ধরাবার নাম করে উঠে পড়লাম । বাইরে আর বেরুতে হোলো না । সমু এই সময় হন্তদন্ত হয়ে নীচে নেমে এল । ছোটন ফিরেছে? খুব উদ্বিগ্ন হয়ে আমাদের কাছে প্রশ্নটা ছুড়ে দিল । সমুকে দেখে মনে হল একটা ঘটনাতেই ওর বয়স কয়েক বছর বেড়ে গেছে । ওর মুখটা দেখে একটা অপত্য স্নেহে আমার বুকটা টনটন করে উঠল ।  ছোটন এখনও ফেরেনি – এটা জানানোর সঙ্গে সঙ্গে জিজ্ঞেস করলাম, তোর বউ’এর কথা বল – কেমন আছে । এখনও তো বোঝা যাচ্ছে না – সাকসান করে পেটের ভেতর থেকে সব বার করেছে – তবে কাকু – অ্যাসিডটা অত পাওয়ারফুল ছিল না – মানে ডাক্তারবাবু বললেন – মিউরেটিক অ্যাসিড খেলে যে ভাবে ক্ষতি হবার কথা – তা কিন্তু কিছুই হয়নি । সমুকে থামিয়ে দিয়ে গুপ্তবাবু বললেন, মানে অ্যাসিডে ভেজাল ছিল – এই তো । সমু বলল, হবে হয়তো – গলায় পাইপ-ফাইপ ঢোকানো  হয়েছে তো – একটু নেতিয়ে আছে – সন্ধ্যেতে ছেড়ে দেবে -কিন্তু ছোটন কি করছে বুঝতে পারছি না -আচ্ছা কাকু পুলিশ কেস কি হবেই – কিছুই তো হয়নি । এর উত্তর আমার জানা ছিল না ।     যতদূর জানি Attempt to Suicide হলে  পুলিশ ছাড়ে না ।   হ্যারাস তো করবেই । এর ওপর যদি সমুর শ্বশুর একটা FIR ঠুকে দেয় – একেবারে সোনায় সোহাগা । আমি সমুকে বললাম, তোর শ্বশুর-শাশুড়ি জানে ? গুপ্তবাবু আর সামলাতে পারলেন না – সমুকে জিজ্ঞেস করেই ফেললেন, ঠিক কি হয়েছিল সমু । আমি সঙ্গে সঙ্গে বাধা দিয়ে বললাম, ছাড়ুন না – পরে হবে ও সব – আগে মেয়েটা বাড়ি ফিরুক । সমু আগের কথার জের ধরে বলল, ওদের এখনও জানাইনি কাকু । গুপ্তবাবুকে উদ্দেশ্য করে বলল, আমিও ঠিক বুঝতে পারছি না – সুইসাইড করার মত এমন কিছু ঘটেনি । গুপ্তবাবু ছোড়নেবালা নয় । বলল, পুলিশের কাছে তো ব্যাপারটা জাসটিফাই করতে হবে – তারা তো আর এমন কিছু ঘটেনি বললে শুনবে না । গুপ্তবাবুকে থামানো দরকার । সমুর মুখ চোখ আস্তে আস্তে শুকিয়ে যাচ্ছে । গুপ্তবাবুকে বললাম, আপনার কাছে ছোটনের ফোন নাম্বার আছে । সমুকে বললাম, নার্সিং হোম থেকে কি থানায় ইনফর্ম করেছে – করেনি তো – তাহলে অত ঘাবড়াবার কিছু নেই – কিছু সমস্যা হলেও ছোটন সব ম্যানেজ করে দেবে । বলতে বলতে ছোটনের মটর সাইকেলের শব্দ শোনা গেল । আমরা সবাই বাইরে বেরিয়ে এলাম । অবাক কাণ্ড । ছোটনের বাইকের পিছন থেকে সমুর শ্বশুর  নামছে । ভদ্রলোক   আমাদের থেকে অনেকটাই ছোট । ইমপোর্ট এক্সপোর্টের ব্যবসা করতেন –  এখন কিছু করেন না । স্বচ্ছল বেকার । ভদ্রলোক হন্তদন্ত হয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে এলেন, মিষ্টি কেমন আছে – সমু আমি ওর কাছে যাব । সমু সঙ্গে সঙ্গে শ্বশুরমশাইকে নিয়ে ভেতরে চলে গেল । ছোটন বলল, থানা থেকেই সাজেসান দিল সমুর শ্বশুরকে নিয়ে আসতে – উনি বা নার্সিং হোম যদি পুলিশকে না জানায় – তাহলে থানা এ ব্যাপারে মাথা ঘামাবে না – সেইজন্য শ্বশুরকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এলাম । সুইসাইডের কথা বলেছ নাকি, গুপ্তবাবু তদন্তের ভঙ্গিতে বললেন । না না ওসব বলে কেস খাব নাকি – বললাম মেয়ে অসুস্থ এখুনি নার্সিং হোমে যেতে হবে – আমি নার্সিং হোমে ফোন করেছিলাম – বলল তো পেসেন্ট ভালই আছে – বিকালে ছেড়ে দেবে- তাই তো , প্রশ্নটা আমাদের দিকে ছুঁড়ে দিল ছোটন । আমি বললাম, সমু তো তাই বলল -ডাক্তার বলেছে নাকি অ্যাসিডে অত জোর ছিল না । লে হালুয়া – অ্যাসিডেও ভেজাল – সমুর বউ ঢপ মারেনি তো – একটিং করছে – মেয়েরা সব পারে কাকু, আরও অনেক কথা বলে চলে পাড়ার উঠতি মাতব্বর ছোটন । এক্টিং’এর ব্যাপারটা আমার মাথায় ঢুকে গেল । রিনি বলেছে, ন্যাকামি । কথা দুটোর মধ্যে একটা যেন মিল খুঁজে পাচ্ছি ।              

 

(২)

আত্মহত্যার দ্বিতীয় প্রচেষ্টা

বাবা, আরকিটেকের সঙ্গে দেখা করেছিলে? বাপি যে ভয়টা পাচ্ছিল  সেই প্রশ্নটাই মিষ্টি করল । দোতলার গেষ্টরুমের বাথরুমটা রিনোভেশানের জন্য মিষ্টি কদিন ধরেই বলছে । মিষ্টির মা-বাবা এখানে এলে ওই ঘরেই ওঠেন । সমুর শাশুড়ির ওই  বাথরুমে অসুবিধা হচ্ছে । নীচের বাথরুমটা যথেষ্ট আধুনিক । সমুর বিয়ের সময়ই ওটা ঢেলে সাজানো হয়েছে । ওরা এটাই ব্যবহার করতেই পারেন । কেতকীরও এ ব্যাপারে কোনও আপত্তি নেই । ও যথেষ্ট লিবারেল । বাপি বুঝতে পারছে একটা সামান্য ব্যাপার নিয়ে সমুর ওপর চাপ বাড়ছে । আর ছেলের অসুখী মুখ দেখতে কোন মা-বাবার ভাল লাগে । সমুটা হয়েছে বাপির একদম কার্বন কপি । একটু চাপে পড়লেই ভেঙে পড়ে । বাথরুমটা রিনোভেট না করার কারণটা সমু জানে । মিষ্টিকে বলেছে । কিন্তু মিষ্টি জেদ ধরেই আছে । মা-বাবার একমাত্র সন্তান । আদরে মানুষ । সেই আদরের কোনও খামতি এখানে হয়নি । সমুর বিয়ের পর থেকেই বাপি আর কেতকীর  ওয়ান পয়েন্ট প্রোগ্রাম – মিষ্টিকে খুশি রাখা । নাতনি হবার পর ব্যাপারটা ভাগ হয়ে গেছে । তবুও  এখনো মিষ্টির সমস্ত ইচ্ছাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় এ বাড়িতে । সমু’টা অফিস আর বাড়ি ছাড়া কিছুই বোঝেনা । বাড়িতে থাকলে টিভিতে-ল্যাপটপে-মোবাইলে ক্রিকেট ম্যাচ দেখে । কেতকী মাঝে মাঝে অভিযোগ তোলে, এবার আস্তে আস্তে ছেলের হাতে ছাড় সবকিছু – তোমার কিছু হলে ও তো অকুল পাথারে পড়বে । কথাটা সত্যি । বাপি ছেলেকে কিছুই করতে দেয়না । উপরন্তু অফিস যাবার সময় জুতোটা পর্যন্ত পালিশ করে দেয় । মিষ্টিও ব্যাপারটা বুঝে গেছে । তার যা কিছু আবদার বাপিকেই করে । সমুর শ্বশুরবাড়ি পাঁচটা স্টেসান পরেই । যাতায়াতে আধঘন্টা লাগে । তবুও সনৎবাবুরা প্রতি মাসেই এখানে এলে সপ্তাখানেক থেকে যান । ব্যাপারটা বাপি আর কেতকীর কাছে রহস্যময় । সমুর ব্যাপারটা অপছন্দ এটা বেশ বোঝা যায় । একবারই শ্বশুর-শাশুড়ির আসার ব্যাপারটায় মৃদু আপত্তি  জানাতে কেলেঙ্কারি কাণ্ড । অ্যাসিডটা একটু কমা ছিল বলে রক্ষে । পুলিশের ঝামেলাটাও এড়ানো গেছে । সেই থেকে সমু আর কোনও ব্যাপারেই আপত্তি করে না। সনৎবাবুরা এলে বাপি কেতকী যথাসাধ্য আপ্যায়ন করে । ঝুমাটা নাতনীর দেখাশুনা করার ফাঁকে রান্নার ব্যাপারে কেতকীকে যথেষ্ট সাহায্য করে বলে কোনও অসুবিধা হয়না । তবুও । প্রত্যেক পরিবারের একটা প্রাইভেসি থাকে । সেটা যথেষ্ট বিঘ্নিত হয় । বাপি বাড়িতে লুঙ্গী পরে । অনেকদিনের অভ্যাস । ওরা এলে অনভ্যাসের পাজামা পাঞ্জাবী পরে সব সময় দাঁত বার করে বসে থাকতে হয় । এটা একটা সামান্য উদাহরণ মাত্র । মিষ্টির ওই হটকারিতার পর থেকেই ওরা আসলেই সবার মধ্যে একটা চাপ থাকে । কিন্তু ওদের তা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে দেওয়া যাবে না । এটা আরও চাপের । বাপি মিষ্টিকে আর্কিটেক্ট আউট অফ স্টেসান বলে সেদিনটার মত ছাড় পেলেও পরদিন সমু অফিস বেরিয়ে যেতেই মিষ্টি বলল, বাবা আর্কিটেক্টকাকুর ফোন নাম্বারটা একটু দাও তো – দেখি কবে ফিরবে – না হলে নোয়াপাড়ায় অনেক ভাল ভাল আর্কিটেক্ট আছে – তাদের সঙ্গে কথা বলব। বাপি বেশ বুঝতে পারে, মিষ্টি যাচাই করতে চাইছে – বাপি সত্যি সত্যিই আর্কিটেক্টের সঙ্গে কথা বলেছে কিনা । বাপি বেশ অসহায় বোধ করে । এই সময় ঘুর্ণি এসে বাপিকে উদ্ধার করে । দাদাই আমাকে তি-তি করে ঘুরতে নিয়ে যাবে না, ঘুর্ণি সাইকেলকে তি-তি বলে । যাব সোনাই তুমি ঝুমা-আন্টির কাছে জুতোটা পরে নাও আমি সাইকেলটা বার করছি, বলতে বলতে বাপি পালিয়ে বাঁচে । 

রাতে সমুই কথাটা পাড়ল । খাবার টেবিলে সমু বলল, বাবা দোতলার বাথরুমটা রিনোভেট করাটা খুবই জরুরী – আমি জানি দাদুর স্মৃতিটা তুমি রেখে দিতে চাইছ – কিন্তু সেটা কতদিন – তুমি কি বলছ । বাপি বুঝতে পারল সংসারটা তার আর কেতকীর হাতে থাকছে না । পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী । এবং এটাই স্বাভাবিক – সময়ের দাবী । তবে কথাগুলো তো সমু বলছে না – সংসারের এইসব ব্যাপারে ও কোনও দিন মাথা ঘামায়নি । মিষ্টির মুখপাত্র হয়ে ও কথা বলছে । কেতকী মাঝখান থেকে বলে উঠল, ওটা ছাড়াও বাড়িতে আরও দু-দুটো বাথরুম – ওটা নিয়ে পড়েছিস কেন তোরা । মিষ্টি একমনে নিজে খেতে খেতে ঘুর্ণিকে খাইয়ে দিচ্ছে । যেন  এদিকের কথা শুনতেই পাচ্ছে না । ঘুর্ণি একটা মোবাইলে কার্টুন দেখছে । খাবার সময় ওটাই ওর অভ্যাস । আপাত শান্ত পরিবেশ । সমু কেতকীর কথার কোনও উত্তর দিতে পারে না । যদিও সমুর বলার কিছুই নেই । বাপি খেতে খেতে বোঝার চেষ্টা করে, সমু মিষ্টিকে খুশি করতে চাইছে না ও নিজেও বাথরুমটা রিনোভেট হোক এটা চাইছে । সমু এবার আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে বলল, বাবা তুমিও জানো আমরা ছাড়া ওই বাথরুমটা ব্যবহার করা খুবই অসুবিধা – দাদু হুইলচেয়ারে ওই বাথরুমে যেত – আর তুমিও সেইভাবে বাথরুমটা বানিয়েছো । বাপি এবার বাধা দিয়ে বলে, আমি বানাইনি – ওটা তোর দাদুই বানিয়েছিল – আমি মিস্ত্রি-টিস্ত্রি যোগাড় করে দিয়েছিলাম মাত্র – একচুয়ালি আমি কিছুই বানাইনি – সেটা তুই ভালোই জানিস ।   এ বাড়িতে এ ধরণের কথাবাত্রা কদাচিৎ হয় । ঝুমা প্রতিদিনকার মত ঘরের কোণে একটা টুলে বসে অপেক্ষা করছিল কার কি লাগে । হঠাৎ কেতকী ঝুমার ওপর চড়াও হল, হাঁ করে কি গিলছিস  –    যা নিজের ঘরে যা । বারে – আমি তোমাদের কথা শুনতে যাব কেন – যেন নতুন এসেছি আজ – যা লাগবে নিজেরা নিয়ে নিও , ঝুমা চলে যেতে যেতে বলে । মিষ্টি এবার মুখ খোলে । ঝুমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, তোর খাবারটা নিয়ে যা । আমার খিদে নেই , দূর থেকে ঝুমার উত্তর। দেখেছ কেমন ঝাঁঝ দেখাচ্ছে – এসব কালসাপ পোষা, কেতকী আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল । মিষ্টি বলে ওঠে, ঝুমা চলে গেলে কিন্তু আমরা সবাই বিপদে পরে যাব । সবাই ভাবছিল ঘুর্ণি  বোধহয় খেতে খেতে কার্টুনেই মগ্ন । মিষ্টির কথা শেষ হওয়া মাত্র ঘুর্ণি বলে ওঠে, বিপদে মোরে রক্ষা কর – এ নহে মোর প্রার্থনা – বিপদে যেন না করি ভয় । ব্যাস সেদিনের মত গোলটেবিল বৈঠক মাঝপথেই বন্ধ হয়ে গেল ।

রাতে ঘুর্ণি ঘুমিয়ে পড়লে মিষ্টি সমুর ওপর চড়াও হল । রাত একটা বেজে গেছে ।  কাল অফিস আছে । কথাটা সমু মৃদু ভাবে জানাতেও মিষ্টিকে থামানো গেল না । দেখো তোমাদের বাপ-ছেলের ব্যাপার আমি জানিনা – বাথরুম ঠিকঠাক না হলে মা আসবে না বলে দিয়েছে – আর মা না আসতে পারলে আমি অন্য ব্যবস্থা করব, মিষ্টি আল্টিমেটাম দিয়ে দেয় । সমু গলা নামিয়ে আরও কিছু বলতে গেলে মিষ্টি গলা উচিঁয়ে আবার ঝাঁঝিয়ে ওঠে, হে ভগবান এ কোন ছাগলের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়েছে – যার নিজের কিছু করার ক্ষমতা নেই । সমু হাত জোর করে বলে, প্লীজ মিষ্টি – একটু আস্তে মা-বাবা শুনতে পাবে – মেয়ে উঠে যাবে । আমি তো চাইছি মা-বাবা শুনুক – একটা নপুংসক – কাওয়ার্ড, মিষ্টি আরও নামতে থাকে । এই মিষ্টিকে সমু চেনে না । ওর হিসট্রিতে মাস্টার ডিগ্রি আছে । একটা বস্তির মেয়ের মত ও চিৎকার করতে থাকে । এত রাতে আশেপাশের বাড়ির লোকজন  জেগে যেতে পারে। মান-সম্মান সব জলাঞ্জলি । হঠাৎ দরজায় ধাক্কা । বাবার গলা শোনা যায়, একটু আস্তে কথা বল তোরা – এত রাতে এটা কি হচ্ছে । এতে মিষ্টি চুপ করে গেল । যাও বাবার কোলে উঠগে যাও,     আস্তে করে বলে মিষ্টি পাশ ফিরে শুয়ে পড়ল । বাবার গলা আর শোনা যাচ্ছে না । অনভ্যস্ত বিধ্বস্ত সমু বিছানার ওপর চুপচাপ বসে রইল ।

বাপি-কেতকীও সারারাত ঘুমোতে পারেনি । বাপি সিদ্ধান্ত নিয়েও নিল বাথরুমটা যেমন ভাবে মিষ্টি চাইছে সেই ভাবেই করে দেবে । আজই সাত্যকির সঙ্গে কথা বলবে । সাত্যকিই এই বাড়ির প্লান থেকে সুপারভাইজিং সব করেছে । কেতকী বলল, বউমা সুস্থ নয় – পাগল – ওরা লুকিয়ে বিয়ে দিয়েছে । সমুর জন্য মনটা হু হু করে উঠল কেতকীর । আর বাপির মনের মধ্যে কি যে চলছে – তা ভগবানই জানেন । কেতকী জানে বাপি ছেলেটাকে পাগলের মত ভালবাসে । বাপির কানে মিষ্টির নোংরা কথাগুলো এখনও বাজছে । না শুনলে বিশ্বাস করা অসম্ভব – এমন একটা লাজুক প্রকৃতির নরম মেয়ে ওরকম এগ্রেসিভ অসভ্য হতে পারে ! সকালের চা’টা মিষ্টিই করে । আজও অন্যথা হল না । সমুর জন্য চা নিয়ে যাবার সময় দরজায় টোকা মেরে যায় । ডাইনিং টেবিলে বাপি কেতকীর চা ঢাকা দেওয়া থাকে । আজ যেতে ইচ্ছা করল না । এমন এমন পরিস্থিতিতে ওরা পড়ছে – যা আগে কখনও ঘটেনি । অতীত থেকে শিক্ষা নেবার প্রশ্নই নেই । কেতকী বলল, চল চা’টা খেয়ে নাও – নাহলে তোমার তো আবার মাথা ধরে যাবে । বাপি মিষ্টির দিকে কি ভাবে তাকাবে – বুঝে উঠতে পারছে না । কাল রাতের ঘটনা ভুলে যাওয়া যায় না । 

যথা সময়ে রান্নার মাসি এসে রান্না করে চলে গেল । সমুও ঠিক সময়ে স্নান করে ভাত খেয়ে ঘুর্ণিকে চুমু খেয়ে – বাবা-মাকে টা টা করে অফিস চলে গেল । যেন কোনও ঘটনাই ঘটেনি । খালি মোবাইলে দেখল পাশের বাড়ির গুপ্তদা ভোর পাঁচটা থেকে সাড়ে ছটা পর্যন্ত মোট সাতবার কল করেছে । গুপ্তদা নির্ঘাত কাল রাতের ঘটনা সব শুনেছে । হাঁপানীর রুগী – রাতে ঘুমোন না । তাছাড়া এই সব ব্যাপারে ওনার কৌতূহল ভদ্রতার সীমা ছাড়িয়ে যায় । গুপ্তদাকে ফেস করা খুব কঠিন । বাপি বোকার মত মোবাইলের সুইচটা বন্ধ করে দিল । ঝুমা খুব ভোর থেকেই মিষ্টিকে সাহায্য করে । ঘুর্ণিকে রেডি করা – বিছানা তোলা এগুলো ওর কাজের মধ্যেই পড়ে । এক ফাঁকে কেতকী ঝুমাকে ইশারায় ডেকে নিল । ও নিশ্চয় সবই শুনেছে । যাতে বাইরে পাঁচকান না করে তাই সাবধান করা দরকার । ওর আবার বামুন বাড়ির সঙ্গে খুব মাখামাখি –     পার্থবাবুই ঝুমাকে এ বাড়িতে কাজে ঢুকিয়েছে । কেতকীর কথায় ঘাড় নেড়ে হ্যাঁ হ্যাঁ করে ঝুমা বলল, বাথরুমটা একটু ঠিকঠাক করে দিলেই হয় – আমারও তো ওই বাথ্রুমে ঢুকতে ভয় লাগে – মনে হয় যেন বুড়ো বাবা এই চাকা-চেয়ার নিয়ে ঢুকল বলে – বউদি তো ঠিকই বলে ওটা নাকি – কি যেন বলে হ্যাণ্ডিক্যাপ বাথরুম । ঝুমা এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেল । কেতকী এতটা অবাক হয়ে গেল যে আর কোনও কথাই বলতে পারল না । বেলা দশটা নাগাদ জলখাবার খেয়ে বাপির ঘরে এসে কেতকী দেখে দাদু নাতনীতে বেশ আড্ডা জমে উঠেছে । হঠাৎ ঝুমার চিৎকার সঙ্গে দরজা ধাক্কার শব্দ , দরজা খোলো বউদি । বাপি ছুটে যেতে গিয়ে কেতকীর সঙ্গে ধাক্কাই লেগে গেল । ভেতর থেকে দরজা বন্ধ । হাউমাউ করে ঝুমা যা বলল, তা হল – মিষ্টি ছাদ থেকে কাপড় মেলবার দড়িগুলো নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছে – খুলছে না – নির্ঘাত গলায় দড়ি দিয়েছে । বাপিও কয়েকবার দরজায় ধাক্কা মারল – ভেতর থেকে কোনো শব্দ নেই । বাপি ঘামতে শুরু করল । ঝুমা বলল, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছ কি দরজা ভেঙ্গে ফেল । কেতকী চিৎকার করে বলল, বউমা  তুমি যা বলছ তাই হবে – দরজাটা খোলো এবার । তাতেও কোনও শব্দ নেই । সমুর বন্ধু ছোটন কোত্থেকে এসে বলল, কি হয়েছে কাকু চেঁচামেচি শুনে বাড়িতে ঢুকলাম – কোনও সমস্যা ? বাপি কোনও রকমে বলে, সমুর বউ ঘরে ঢুকে দরজা দিয়েছে – সাড়া শব্দ পাচ্ছিনা – দেখতো দরজাটা ভাঙ্গা যায় কিনা । ছোটনের তৎপরতায় মিনিট পাঁচেকের মধ্যে দরজা ভাঙ্গা হল । ঝুমার কথাই ঠিক । সিলিং ফ্যানের সঙ্গে দড়ি লাগানো ।  খাটের নীচে ঘরের চেয়ারটা উলটে পড়ে আছে । আর মিষ্টি খাটের ওপর অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে রয়েছে । সম্ভবত দড়িটা ছিঁড়ে মিষ্টি খাটে পড়ে গেছে । প্রথম ধাক্কায় সবাই থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল । কোন ফাঁকে ঘুর্ণি ঘরে ঢুকে পড়ে । মাম-মামের কি হয়েছে দাদাই, আর কিছু বলতে না দিয়ে কেতকী ঘুর্ণিকে ঘরের বাইরে নিয়ে গেল । ছোটন মিষ্টির নাকের কাছে হাত নিয়ে গিয়ে নিঃশ্বাস পড়ছে কিনা দেখতে দেখতে ঝুমাকে বলল, হাতে   পায়ে হাত দিয়ে দেখতো ঠাণ্ডা হয়ে গেছে কিনা । তারপর বাপিকে বলল, কাকু এক্ষুণি হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে – বেঁচে আছে মনে হচ্ছে – ক্লাবের এম্বুলেন্সটা  আছে কিনা ফোন করুন – সমু কোথায় ? বাপির কানে কোনও কথাই যাছিল না । শেষ প্রশ্নটা বুঝতে পারল, ও তো অফিস। আচ্ছা আমি এম্বুলেন্সটা দেখছি – আপনি সমুকে ফোন করুন, পরিস্থিতির রাশটা নিজের হাতে নিয়ে নেয় ছোটন ।

 

(৩)

আত্মহত্যার তৃতীয় প্রচেষ্টা

দিন দুয়েকের জন্য ঝুমা বাড়িতে এসেছিল ওর বাড়িতে একদম ভাল লাগে না মাসে একবার এসে মায়ের হাতে মাইনের টাকাটা দিয়েই পালিয়ে যায় মা চিররুগ্ন বিছানাতেই থাকে ছোট বোনটা হবার পর থেকেই মা বিছানায় শোয়া বাবা রাজমিস্ত্রীর কাজ করে ঝুমার যেদিন আসার কথা থাকে সেদিন আর কাজে বেরোয় না মায়ের কাছ থেকে টাকাটা ছিনিয়ে নেয় ছোট বোনটা ঘুর্ণির চেয়ে একটু বড়, কিন্তু কত তফাৎ দু বোনই স্কুলে যায় না বাড়ির কাজ করে কদিন পরেই পরের বোনটাকে বাবা লোকের বাড়ি কাজে লাগিয়ে দেবে নির্ঘাৎ। ঝুমা ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছিল নবজাগরণ নামে একটা ক্লাব ওর পড়াশোনার দায়িত্ব নেয় বাবা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে দেয় নি ওই ক্লাবের পার্থস্যার বাবাকে অনেক বুঝিয়েছিলবাবাকে টলানো যায়নি বাবা অন্য মিস্ত্রীদের মত মদ খায় না বটেপাতা খায় পাতাখোর বাবা মেয়েদের রোজগারে বসে বসে খাবার স্বপ্ন দেখে মা সুস্থ থাকলে হয়ত পড়াশুনাটা চালিয়ে যেতে পারতো পার্থস্যারই মিষ্টি বৌদিদের বাড়ি ঢুকিয়ে দেয় হাসপাতাল থেকে ফিরে মিষ্টি বউদি এখন বাপের বাড়ি কাজের চাপ কম এদিকে বাবাও দুদিন এসে থাকতে বলেছে কেন বলেনি বোনের খুব খুশিদিদিকে পেয়ে দিদিকে ওদের সিরিয়ালের নায়িকাদের মত মনে হয় কি পরিষ্কারসুন্দর গা থেকে কি সুন্দর গন্ধ বেরোয় বিকালে রেল স্টেসানের ধারে দুই বোনকে স্পেশাল ঘুঘনি খাওয়াতে হবে পরের বোন রীতা ঘুঘনি খেতে যাবার আনন্দে দিদিকে বলে ফেলল, দিদি তোকে কাল দেখতে আসবেতোর বিয়েএই যা তোকে বলে ফেললামবাবাকে বলিস না শুনেই ঝুমার মাথাটা গরম হয়ে গেল চোটটা পড়ল মায়ের ওপর, মা কি শুনছিএই জন্য আমাকে আসতে বলেছ আমি কিছু জানি নাতোর বাপ জানেআর এটাও তো ঠিকআজ না হলে কাল তোকে বিয়ে করতে হবে, মা থেমে থেমে বলে। আমি পরিষ্কার জানিয়ে রাখছিএখন আমি বিয়ে করব নাআর বিয়ে করলে তোমরা খাবে কিবাবার রোজগার তো বাবার পাতাতেই চলে যায়তোমার ডাক্তার খরচ, ঝুমা ঝাঁঝিয়ে ওঠে তোর বাপ তো একটা পিশাচএসব না ভেবে কি তোর বিয়ে দিচ্ছেবাপের সঙ্গে কথা বলভাল বুঝলে করবিনা হলে রোজগার করছিসপালিয়ে যা, মা হাঁপাতে থাকে ঝুমা বেশ বুঝতে পারে ব্যাপারটায় মা অমত আছে ঝুমা ফুঁসতে থাকে   বোনেদের ঘুঘনি খাওয়ানো আজ শিকেই উঠল । প্রথমে ভাবল, এখুনি চলে যাবে, তারপর ভাবল, দেখা যাক না বাবা কি বলে । মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ের মত ও আর ছোট্ট ঝুমাটি নেই । লোকের বাড়ি কাজ করে সংসারের ঘাঁতঘোঁত অনেকটাই জেনে গেছে । অনেক রাতে বাবা ফিরল । পাতা খাওয়ার কারণে বাবা সব সময়ই একটা ঘোরের মধ্যে থাকে । সেই ঘোর অবস্থাতেই বলল, ঝুমা এসেছিস – কাল সকালে তোকে একজন দেখতে আসবে – তোকে পছন্দ করলে রাজরানী হয়ে যাবি – আমাকে আর দশতলায় উঠে ভাড়া বেঁধে কাজ করতে হবে না । বাবা যতই তার ক্ষতি করে থাকুক না কেন , মানুষটাকে সে ভালবাসে । ছোট্টবেলায় যখন আরো দুটো বোন জন্মায় নি, তখন অনেক আদর পেয়েছে বাবার কাছ থেকে । সে ছিল বাবার নয়নের মণি । এখনও বাবাকে কটু কথা বলতে পারে না । খুব ঠাণ্ডা মাথায় বাবাকে বলল, দেখ বাবা- যাদের বাড়ি আমি কাজ করি তাদের কাজ হুট বলতে ছেড়ে দেওয়া যাবে না । একটা ছোট বাচ্চা আছে ওদের – তাছাড়া আমার কি এমন বয়স হয়েছে – কিছুদিন বাদে বিয়ের ব্যবস্থা কোরো । বাবার ভেতর অন্য একটা মানুষ বেরিয়ে এল, হারামজাদী বাবার মুখে মুখে কথা – বাবুর বাড়ি কাজ করে নিজেকে বাবুদের বাড়ির মেয়ে ভাবছিস নাকি – কাল সকালে পাত্র নিজে আসবে – পছন্দ করলে কালকেই বিয়ে দিয়ে দেব । ঝুমা আর কথা বাড়ায় না । কাল ভোরেই পালিয়ে যাবে । দরকার হলে পার্থস্যারকেও বলবে ।   

 

মিষ্টিবৌদি এখন বাড়িতে নেই – সে জন্য ঘুর্ণিটাও নেই । বাড়িটা কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে । দোতলার বাথরুমের ভেতরটা পুরো ভেঙ্গে ফেলে নতুন করে করা হচ্ছে । বাথ্রুমের মেঝেটা এমন ভাবে হচ্ছে যেন মিষ্টিবউদির মা ওখানে এসে শোবে । তবে মিষ্টিবউদির ক্যালি আছে । ঠিক বাথরুমটা পালটে ছাড়ল । এবারের মরতে যাওয়াটা পুরো জালি কেস । ওই সরু সরু দড়ি দিয়ে কেউ মরে । তবে একটিংটা হেভি হয়েছে – কোনও মাল ধরতে পারেনি । লোকে বলে ডাক্তারদের কাছে কিছু লুকোনো যায় না । ডাক্তাররাও ধরতে পারলো না । কি সাংঘাতিক । জেঠু-জেঠিমা খুব ভয় পেয়ে গেছে – আর সমুদা তো মেনীমুখো – বউ যা বলবে শুনবে । পরসু বাড়ি থেকে পালিয়ে আসার পর ভেবেছিল বাবা এসে এখানে ঝামেলা করবে । বোনদুটোকে এবারও ঘুগনি খাওয়ানো হোল না । আসার সময় মায়ের বালিশের নীচে একশ টাকা রেখে এসেছে – মা কি বুঝবে কে জানে । ঝোঁকের মাথায় পালিয়ে এল বটে – তবে বাবা বলেছিল বিয়ে হলে রাজরানী হয়ে যাবি। মালটাকে একবার দেখে আসলে হতো । তবে মা কিছু নিশ্চই কিছু বুঝেছে । মা চাইছে না । কেতকীর ডাকে ভাবনায় ছেদ পড়ে । জেঠিমা মিস্ত্রিদের জন্য চা করতে বলল । জেঠু-জেঠিমা খুব ভালো লোক । এরকম শ্বশুর-শাশুড়ি পেলে ঝুমা মাথায় করে রাখবে । বাবার ‘রাজরানী’ কথাটা মনের মধ্যে খুব ছটফট করে মাঝেমাঝে ।  

 

দিন দশেকের মধ্যেই মিষ্টিবউদি ফিরে এল । ঘুর্ণি আসাতে বাড়িটা আবার জেগে উঠল । তবে  সঙ্গে মিষ্টিবউদির মা-বাবাও এল ।  মিষ্টিবউদির বাবার চাউনিটা একদম ভালো নয় ।ওরা দুজনে বহুত জ্বালায় । যেন আমি ওদের কাজের লোক । ঘরের মধ্যে বসে বসে সারাদিন ধরে – এটা নিয়ে আয় – ওটা নিয়ে আয় – খুব ঝামেলা করে । জেঠুকে দেখেও কষ্ট হয় , সারাদিন ধরে বাজার করে যাচ্ছে । আমাকে একবারও বলবে না, ঝুমা দোকান থেকে ওটা নিয়ে আয় । মিষ্টিবউদির  বাবা পাড়ার মোড়ের দোকান থেকে আগে সিগারেট এনে দিতে বলত। জেঠু সে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে । জেঠু বাজার থেকে বেশি করে সিগারেট এনে রেখে দেয় । সন্ধ্যেবেলা মিষ্টিবউদি বলল, ঝুমা আজ রাতে আমরা একটু কথা বলব, রাতে খাবার সময় তুই মোট্টে এদিকে  আসবি না । আমার মুখে এসে গেছল, বাথরুম তো হয়ে গেছে – এবার কি । বললাম, আমার যেতে বয়েই গেছে ।

 

ঝুমা ঠিক বুঝতে পারলো কথাবার্তা শুরু হয়ে গেছে । অন্য দিনের চাইতে আজ দেরী করে খাচ্ছে ওরা । ঘুর্ণিকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে । একটু আগে মিষ্টিবউদি ঝুমাকে বলে গেছে ঘুর্ণি ঘুমোচ্ছে – একটু খেয়াল রাখতে । যেন যুদ্ধ করতে যাচ্ছে । দিনে রাতে খাবার সময় অন্যদিন ঝুমা জেঠিকে সাহায্য করে । আজ যাওয়া বারণ । কি কথা হচ্ছে না শুনলে ঝুমার ঘুম আসবে না ।   ঘুর্ণিকে দেখার   নাম করে মিষ্টিবউদির ঘরের দরজার কাছে দাঁড়ায় । এখান থেকে বেশ কথা শোনা যাচ্ছে । জেঠু বলল, এটা আপনি কি বলছেন সনৎবাবু – লোকে কি বলবে – এটা হয় নাকি । মিষ্টিবউদির বাবার গলা, পার্থদা একটু ভেবে দেখুন – এরা দুজন আমাদের সন্তান – আপনাদের যেমন সমু আমাদেরও তেমনি মিষ্টি – আর ঘুর্ণি আমাদের সবার নাতনী ।এর  মধ্যে মধ্যে জেঠি কি একটা বলল ঠিক শোনা গেল না । মিষ্টিবউদির মা বলল, খেতে খেতে কথা হোক – এটা তো আলোচনা । এবার জেঠির কথা শোনা গেল, এর আবার আলোচনা কি –   আপনারা তো    আমাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন ।  ব্যাপারটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না – কিসের আলোচনা – বড়োলোকদের বড়ো বড়ো ব্যাপার সব। এবার বেশ জোরে জেঠুর কথা শোনা গেল, সমু তুই কিছু বলছিস না কেন – তোর যদি শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে থাকার ইচ্ছা হয় – এখানে কেন – ওদের বাড়িতে থাকগে যা – আমাদের কোনও অসুবিধা নেই । মিষ্টিবউদির গলা, ও বাড়িটাতো খুবই ছোট – এখানে এতবড় দোতলাটা তো ফাঁকাই পড়ে থাকে – তাছাড়া এখানকার কমিউনিকেশান অনেক বেটার – আপনার ছেলের অফিস যেতে এখান থেকে অনেক সুবিধা । আবার কিছুক্ষণ সব চুপচাপ । জেঠির গলা, আপনাদের বাড়িটা কি হবে । মিষ্টিবউদির বাবা সঙ্গে সঙ্গে বলল, বিক্রি করে দেব – আপনারা চাইলে আপনার একাউন্টে টাকাটা ট্রান্সফার করে দেব – আল্টিমেটলি সমু-মিষ্টিই তো সব পাবে । বা আপনারা বেশ আটঘাট বেঁধেই এসেছেন, এটা জেঠির কথা । ও হরি , ওরা পাকাপাকি এ বাড়িতে চলে আসতে চাইছে । হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ পাওয়া গেল । ঝুমা পালাতে গিয়েও পারল না । মিষ্টিবউদি বলল, এখানে কি করছিস । ঝুমার উত্তর রেডি ছিল, ঘুর্ণি ঘুমোচ্ছে কিনা দেখতে এসেছিলাম – তুমিই তো মাঝেমাঝে দেখতে বললে । আড়ি পেতে সব শুনেছিস তাহলে, মিষ্টিবউদি হাসতে হাসতে বলল। তারপর বলল, এদের কি করে হ্যাঁ বলাতে হয় আমার জানা আছে । 

 

পরদিন সকালে মিষ্টিবউদি আবার বাথরুমের অ্যাসিড খেল । 

 

(৪)

আত্মহত্যার প্রথম প্রচেষ্টা 

 

সবে চা-টা শেষ করেছি গুপ্তবাবু এসে হাজির । বেশ হাসি হাসি মুখ । যেন একটা জটিল কেস এইমাত্র সলভ করে এলেন । আমি চা অফার করতে গুপ্তবাবু ইশারায় না বলে মুখ হাঁ করে বার কয়েক ইনহেলারটা নিলেন । একটু পরে বললেন , বলেছিলাম কিনা । কি বলেছিলেন সেটাই তো বুঝতে পারছি না । আমি ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম । শুনেছেন বাপির বউমা আবার সুইসাইডের অ্যাটেম্পট নিয়েছে – এবার আর ওদের হাজতবাস থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না- সমুর শ্বশুর-শাশুড়ি এবার হাজির । আমি বুঝতে পারলাম না এতে  গুপ্তবাবুর আনন্দের কি আছে । খবরটা আঁতকে ওঠার মত । বাপির মত নিরীহ মানুষ কি ঝামেলার মধ্যে পড়ছে বারবার । আমি বললাম, চলুন ওখানে যাওয়া যাক – বাপিটার পাশে এখন থাকা দরকার । এবার আর ছোটনও আসেনি – অ্যাম্বুলেন্স ডেকে নিজেরাই ধরাধরি করে নিয়ে গেল, গুপ্তবাবু সংবাদটা জানালেন । আমি কোনও রকমে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম । কেতকী খুবই ভেঙ্গে পড়েছে । ঝুমার কাছে জানা গেল সমুর বউ আবার মিউরেটিক অ্যাসিড খেয়েছে  । মেয়েটা তলে তলে এত কষ্ট পায় কেন কে জানে । এটা একটা রোগও হতে পারে । বারবার সুইসাইড করার প্রবণতা একটা মানসিক ব্যাধি । মেয়েটা সেই রোগে ভুগছে কিনা কে জানে । বাপির নাতনীকে দেখলাম ঝুমা সামলাচ্ছে । ওর মধ্যে এই ঘটনার প্রভাব পড়েনি বলেই মনে হচ্ছে । আমি আর গুপ্তবাবু নার্সিং হোমে গিয়ে দেখলাম গেটের বাইরে বাপি, সমু, সমুর শাশুড়ি মুখ চুন করে দাঁড়িয়ে আছে । সমুর শ্বশুরকে দেখছি না । আমি গিয়ে বাপির কাঁধে    আলতো   করে হাত রাখলাম । অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে  বাপি ভেঙ্গে পড়ল। এ সময় সান্ত্বনার কোনও ভাষা থাকে না । তবুও বললাম, এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে – দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে। যদিও কিভাবে ঠিক হবে আমার জানা নেই । আমি আবার বললাম, ডাক্তার কি বলছে । উত্তর দিল সমু, আগের মতই – কোনও সিম্পটম্পস নেই – কিন্তু খুব কষ্ট পাচ্ছে – চোখে দেখা যায় না । ওদিকটা কে সামলাচ্ছে – মানে থানা পুলিশ, গুপ্তবাবু প্রশ্নটা করলেন । সমু খুব হতাশ ভাবে বলল, ওসব নিয়ে কিচ্ছু ভাবছি না কাকু – যা হবার হবে – অন্তত এর চেয়ে কিছু খারাপ হবে না । সমুর চোখে মুখেও একটা ভেঙ্গে পড়া মানুষের ছবি । সমুর শ্বশুর হন্তদন্ত হয়ে এলেন, এম ডি’র সঙ্গে কথা হল, এরা পুলিশকে ইনফর্ম করছে না – যেহেতু পেশেন্টের ডেথ রিস্ক নেই । সবাই হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।   কিন্তু  পেশেন্টের কাছে কে আছে , জিজ্ঞেস করতে কেউ উত্তর দিল না ।গুপ্তবাবু আমাকে আলতো করে টিপলেন । ইঙ্গিতটা আমি বুঝতে পারলাম না ।

 

যত খারাপই হোক বা যত ভালোই হোক একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে তার আর গুরুত্ব থাকে না । সমুর বউ’এর আত্মহত্যার ঘটনাটাও তাই । আমি বাপিকে সাজেসান দিলাম বউমাকে ভাল সাইক্রিয়াটিস্ট দেখাতে । বাপি বলল, পার্থদা ব্যাপারটা অন্যরকম – আমি কালকে একবার সময় পেলে আপনার কাছে যাব । পরদিন বাপি এসে যা বলল তা আমার কল্পনারও বাইরে । আমি বাপিকে বললাম, তিনবারই সাজানো – সত্যি সত্যি আত্মহত্যা করতে যাওয়া নয় । প্রথমবারটা নিয়ে একটু সন্দেহ আছে – তবে কেতকীর ধারণা ওটাও সাজানো , বাপি এবার একটু থেমে বলল, সমুর শ্বশুর-শাশুড়ি পাকাপাকিভাবে এখানে চলে এসেছে । রিনি তাহলে এতদিন ধরে ঠিকই বলে এসেছে । প্রথমবারই ও বলেছিল ন্যাকামি । আর আমরা কেউ ধরতে পারলাম না । বাপি যাবার সময় বলে গেল, তবে একটা ব্যাপার আপনাকে বলা দরকার – ওরা বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছে – আর সমস্ত টাকাটাই সমুর একাউন্টে ট্রান্সফার করে দিয়েছে । মা-বাবা একমাত্র মেয়ের সঙ্গে থাকতে চাইছে – এর মধ্যে অন্যায় কিছু নেই । আমাদের সামাজিক প্যাটার্নটা অন্যরকম তো – সেইজন্যই চোখে লাগে – তবে এত ঝামেলা না করে সোজাসুজি আলোচনা করে নিলেই হত, আমার এ কথার উত্তরে বাপি বলল, এটা আমি আর কেতকী ভেবে দেখেছি পার্থদা – সে ক্ষেত্রে ওনাদের এখানে থাকাটা আমরা কিছুতেই মেনে নিতে পারতাম না ।

 

গল্পটা এখানেই শেষ হলে ভালো হত । কিন্তু হল না । এই ঘটনার একজন নীরব অবজার্ভার ঝুমা মিষ্টির এই ভয় দেখানো আত্মহত্যার ঘটনাটা মনের মধ্যে গেঁথে নিল । বাপির বাড়িতে লোকসংখ্যা বেড়ে গেল । সমুর শশুরের ঠারেঠারে তাকানো আর কারণ অকারণে ঝুমাকে ডেকে পাঠানোতে কাজের আনন্দটা অনেকটাই কমে গেল । ঘুর্ণিও নিজের কাজ শিখে যাচ্ছে আস্তে আস্তে । গত মাসে বাড়িতে মাইনের টাকা দিতে যাবার সময় বাবা আবার ধরেছিল ঝুমাকে । গালাগাল দিয়ে বলেছিল, যার ঝি-গিরি করতে জন্ম হয়েছে – সে রাজরানী হবে কি করে । এতদিন জেঠুর বাড়িটা ওর খুব আপন লাগত । এখন নিজেকে ঝি ছাড়া কিছুই মনে হয় না । বাপিদের কিছু না বলে পার্থস্যার কে জানিয়ে কাজ ছেড়ে দিল । বাবা পরদিনই পাত্র নিয়ে এল । আগে পাত্র সম্পর্কে কিছুই বলে নি । পাত্র ঝুমার তিনগুন বয়সী এক বুড়ো । আগের বউ মারা গেছে  । ছোটখাটো কন্ট্রাক্টর । বাবা ওখানেই কাজ করে । ঝুমার পাতাখোর বাবাকে অনেক টাকা ধার দিয়েছে । ওইজন্য বাবার অত আগ্রহ । বুড়োটা দেখতে এসেই বাবার সামনে – বোনেদের সামনে ঝুমার গাল টিপে দিয়ে বলল, বা খুব সুন্দর হয়েছে তো । ঝুমার গা’টা ঘেন্নায় রি রি করে ওঠে । এই বস্তির জীবন থেকে ঝুমা অনেকদূরে সরে এসেছে । বুড়োটা যতক্ষণ ছিল পুরো শকুনের দৃষ্টিতে ঝুমার শরীর চাটছিল । বুড়োটার নিজের দোতলা বাড়ি । আগের পক্ষের একটা ছেলে আছে -মামার বাড়িতে থাকে । ঝুমাদের বাড়িটা পাকা করে দেবে – সাথে বাবাকে অনেক টাকাও দেবে । বাবা পাত্রকে কথাও দিয়ে দিয়েছে । আজও কিছু টাকা দিয়ে গেল । ঝামেলা শুরু হল বুড়োটা চলে যেতেই । ঝুমা জানিয়ে দিল এ বিয়ে ও কিছুতেই করবে না । পাতাখোর বাবা একটা জন্তুর মত ঝুমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল । বিছানা থেকে মা বলে উঠল, মেয়েটার কাল বিয়ে দেবে বলছ – মারধোর করা মেয়েকে কেউ নেয় । এতে ঝুমার বাবার সম্বিত ফিরল । ছেড়ে দিয়ে বাইরে গিয়ে দরজায় শেকল তুলে দিল । 

 

ঘন্টা খানেক পর মা’র চেঁচামেচিতে কেউ একজন ঘরের শেকল খুলে দিল । ঝুমা বাথরুম যাবার নাম করে বেরিয়ে গেল । আজকাল সব বাড়িতেই প্যান পরিষ্কার করার জন্য মিউরেটিক অ্যাসিড রাখা থাকে । ঝুমা বাথরুমের দরজা বন্ধ করে অ্যাসিডের বোতলটা থেকে অর্ধেকটা ফেলে দিয়ে অর্ধেক জল মিশিয়ে পুরোটাই গলায় ঢেলে দিল । বাথরুমের ভেতর থেকে ঝুমার চিৎকার আর ছোট বোন দুটোর কান্নায় আশেপাশের লোকজন ছুটে এল । বাথরুমের দরজা ভাঙ্গা হল । ততক্ষণে ঝুমার চিৎকার থেমে গেছে । চোখদুটো যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে । এরপর চিত্রটা যেমন হয়ে থাকে । একটা ভ্যানরিক্সায় ঝুমাকে তোলা হল – হাসপাতাল প্রথমে নিতে চাইছিল না । কিন্তু বস্তির লোকজনদের  দেখে পুলিশে খবর দিল । বিনা চিকিৎসায় ঘন্টা দুয়েক হাসপাতালে পড়ে থাকার পর ঝুমা মারা গেল । মিষ্টিবউদির শেখানো বিদ্যা ঠিকঠাক প্রয়োগ করতে পারলো না ঝুমা । 

Tags: , ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ