প্রথম পুরুষ
-‘শোন, রাজীবের কাছে কাল যেটা শুনলাম সেটা কি সত্যি ? তোর সঙ্গে নাকি অহনার ব্রেক-আপ হয়ে গিয়েছে ?’
-‘ব্রেক-আপ ! ওঃ…আজকাল তো এই কথাটাই চালু হয়েছে ।’
– ‘কথা একদম ঘোরাস না সুশান্ত । আমার প্রশ্নটার জবাব দে । তোদের দুজনের মধ্যে কি হয়েছে আমাকে পরিস্কার বল তো ? তোর সঙ্গে অহনার কবে দেখা হয়েছে শেষ ? ফোনে কথা হচ্ছে না ?’
– ‘শেষ দেখা ? সে বোধ হয় সপ্তা দুই হবে । না, ফোন করিনি…অহনা-ও আর করবে না । আরে ছাড় না ওসব কথা ।’
– ‘কি ছাড়বো ! তাহলে যেটা শুনেছি সেটাই সত্যি । ওই শালা অরিন্দম ! তক্কে তক্কে তোদের দুজনের মধ্যে হাড্ডি হয়ে ছিল এতদিন ধরে !’
-‘অরিন্দম কত বড়ো চাকরি করে বল তো ! জানিস, অহনার সঙ্গে একদিন ওর অফিসের রেসিডেন্সিয়াল ফ্ল্যাটে গিয়েছিলাম । চারিদিকে শুধু ইমপোর্টেড জিনিস ! ফার্নিচারগুলোও নাকি সিঙ্গাপুর থেকে…’
– ‘রাখতো…বড়ো চাকরি ! তুই সিভিল সার্ভিস পরীক্ষাটা একবারে ক্র্যাক করবি আমি ঠিক জানি । তখন ওই কর্পোরেট অরিন্দম তোর অফিসের বাইরে ভিজিটর রুমে বসে থাকবে, তোর সঙ্গে দেখা করার জন্য ।’
– ‘আরে আজ তো আমি কেবল একটা ইংলিশ এম এ রে ! ফার্স্ট ক্লাস ছিলো তো কি হলো ! সেটা তো আর অহনাকে ভরসা দিতে পারলো না রে !’
-‘আর অহনা-ই বা কি ! দশ দশটা বছরের ভালোবাসা…তোদের দুজনকে সেই স্কুলের সময় থেকে দেখছি । আমি তো জানি তোকে…পাগলের মতো ভালোবাসিস তুই ওকে । আর ও কিনা…বড়ো চাকরি আর ইমপোর্টেড ফার্নিচার…ছি ছি ছিঃ !’
-‘আহা, শান্ত হয়ে বোস তো এখানে…বোস ! আমাকে তো জানিস…ভালো চিনিস বলছিস, তাহলে !’
-‘বসছি । কিন্তু আমাকে বল কি কথা হলো শেষে তোদের মধ্যে… শুনি…কি বললো অহনা ?’
-‘শেষ কথা ? ওই তো ! আমার সঙ্গে জীবনটা জুড়লে ও কোনো ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছে না, তাই…
-‘তাই ?
-‘ তাই…তাই অরিন্দম কয়েকদিন আগে ওকে প্রোপোজ করেছে…সব দিক চিন্তা করে তাই ও ভাবছে…হ্যাঁ ওই তো…ভাবছেই বললো…ভাবছে আমি যদি কিছু মনে না করি তাহলে ও মুভ অন করতে চায় ।’
-‘আর তুই ? তুই কিছু বললি না ? ও বললো মুভ অন করবো আর তুই চুপচাপ মেনে নিলি ?’
-‘এই যে এক্ষুণি বললি তুই আমাকে ভালো করে চিনিস ! আমাদের দুজনকে এতো বছর ধরে দেখছিসও বললি ! তাহলে ? অহনার কোনো কথা, কোনো ইচ্ছে, আমাকে কখনও ফেলতে দেখেছিস…বল তুই আমাকে ?’
দ্বিতীয় পুরুষ
-‘শোন, অদিতির কাছে যেটা শুনলাম সেটা কি সত্যি ? তুই ওর সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করছিস না….তোর ফোন নট রিচেবল ? কি ব্যাপার…তোর কি ব্যাপার রে ? অদিতির সঙ্গে ব্রেক-আপ করার প্ল্যান ?’
– ‘তোকে ফোন করেছিল ?’
-‘ না । আজ দেখা করলো…বিকেলে, কলেজের গেটের বাইরে । মুখ শুকনো । আমাকে বললো, সাতদিন ধরে তোর সঙ্গে কনট্যাক্ট নেই । আমিও তো গত রবিবার তোর কবিতার বইটা রিলিজের সময় দেখিনি অদিতিকে । তখন অতটা খেয়াল হয়নি । এই-ই…কি দেখছিস ওদিকে ! আমার কথা শুনছিস ? এই-ই-ই অর্ক !’
-‘ওহ…কি বলছিলি ! হ্যাঁ…কবিতার বই ! ওই বইটাতে প্রায় সব কবিতাতেই তো অদিতি রয়েছে ।’
-‘ আঃ, সে আমি জানি, পড়া হয়ে গেছে । কথা ঘোরাবি না । আমায় জবাব দে…কেন ওর সঙ্গে যোগাযোগ করছিস না ?’
-‘আমি…’
-‘শোন অর্ক, অদিতিকে আমি কথা দিয়ে এসেছি । মেয়েটা তোর এইসব হরকতের কথা বলতে বলতে প্রায় কেঁদে ফেলছিল ।’
-‘তাই ! কেমন দেখলি ওকে ?’
-‘বললাম তো ! খুব দুঃখী মুখ । তবে লম্বা চুলটা কেটে বব করে বেশ স্মার্ট লাগছিল ।’
-‘চুল ! ‘কুন্তলিনী / তোমার চুলের ঘন অন্ধকারে হাত ডুবিয়ে হেঁটে যাই চরাচর / আমার আঙুলের ফাঁকে খেলে বেড়ায় সে চুলের স্বর্গসুবাস / তুমি বলো আমায় সাজিয়ে দাও / আমি এলোমেলো করে দিই সেই দীর্ঘ কেশের বিন্যাস / যেন একরাশ কালো মেঘ লুটিয়ে পড়ে আমার হাতের পাতায় / কুন্তলা, প্রিয় কুন্তলিনী আমার, সুগন্ধে আমার হাত ভরে যায়…..’
-‘কি বিড়বিড় করছিস রে…এ-ই…এই-ই-ই অর্ক !’
-‘ওহ…ছাড়, ও কিছু না…তুই বুঝবি না ! অদিতিও বোঝেনি ।’
Tags: গল্প, দুই পুরুষ, সিদ্ধার্থ সান্যাল
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।