01 Oct

স্বপ্নের বাড়ি

লিখেছেন:সায়ন্বিতা সরকার শেঠ


তাড়াতাড়ি করে হাতের কাজ সারছিল রুমি। যদি একটু সময় বাঁচিয়ে আজ আগে আগে তিন্নিকে স্কুল থেকে আনতে যেতে পারে তাহলে স্কুলে পৌঁছানোর আগে একবার মায়ের কাছে ঢুঁ মেরে যাবে। কদিন যাবৎ মায়ের শরীরটা একদম ভালো যাচ্ছে না। এমনিতে মায়ের প্রেসার হাই। ইদানিং চিন্তা করে করে আবার সুগারটাও বাড়িয়ে ফেলেছে। তাছাড়া হাঁটুর ব্যথা, বাত, অম্বল এসবতো নিত্যদিন লেগে আছে। বাবা যতদিন বেঁচে ছিল তাও একরকম চলছিল। কিন্তু দুম করে হার্ট এ্যাটাকে বাবা চলে যাবার পর মা আরও একা হয়ে গেল। আগে মায়ের সাথে নিয়মিত দেখা করতো রুমি। কিন্তু মেয়ের স্কুল কোচিং সব সামলে এখন আর বড় একটা দেখা করার সময় করে উঠতে পারে না সে। আর মাও এখন ভীষণ চুপচাপ হয়ে গেছে। আগে রুমিকে সব কথা শেয়ার করতো, কিন্তু এখন আর করে না। আসলে আগে রুমিও দিনে দশবার ফোন করতো। ‘মা জানো আজ মন ভালো নেই’ কিংবা ‘মা আজ শাশুড়ির সাথে এই নিয়ে ঝামেলা হয়েছে’, ‘মা আজ সঞ্জয়কে নতুন কিছু বানিয়ে খাওয়ানোর আছে কিছু সহজ রেসিপি বলো’ ইত্যাদি নানা কারণে অকারণে। মা ছিল তার সব সমস্যার একমাত্র সমাধান। কিন্তু এখন আর সেই সময় কই। সকালে উঠেই দৌড়াদৌড়ি করে সঞ্জয়ের অফিসের সব কিছু রেডি করা, মেয়েকে স্কুলের জন্য তৈরি করা। সেসব সারা হলে শ্বশুর শাশুড়ির জলখাবার, লাঞ্চ ও বাড়ির অন্যান্য কাজ। বাসন মজা, ঘর মোছার লোক থাকলেও রান্নাঘরে কোনো লোক রাখার পক্ষপাতী নয় রুমির শাশুড়ি। আগে মোটামুটি তিনি একছত্র রান্নাঘরের মালকিন ছিলেন, কিন্তু গতবছর থেকে পায়ে ব্যথা ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে এখন বাধ্য হয়ে রুমিকে জায়গা ছেড়েছেন। কিন্তু মন থেকে সেভাবে এখনো ছাড়তে পারেননি। তাই রুমির কোনো কাজই ওনার ঠিক পছন্দ হয় না। তাও এখন মোটামুটি রুমি ঝটপট সব সেরে ফেলতে পারে।

— “ওমা কোথায় গো, সাড়া শব্দ নেই, বাথরুমে নাকি গো?” পুরোনো বাড়ির ভাঙাচোরা দেওয়াল আর স্যাঁতস্যাঁতে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে হাঁক পারে রুমি।

রুমির মা মল্লিকাদেবী শুয়ে ছিলেন, তাড়াতাড়ি করে উঠে বসেন।

— “একি তুমি এই অবেলায় শুয়ে? শরীর খারাপ নাকি? রান্না হয়ে গেছে সিরিয়াল দেখছো?”

– “উফ তুই কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই এই এত এত সব প্রশ্ন করে যাবি? আয় আগে বসবি আয়। দিদিভাইকে স্কুল থেকে আনতে বেরিয়েছিস? সঞ্জয় ভালো আছে? আর তোর শ্বশুর শাশুড়ি ?”

— “মা আগে তুমি আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। তারপর আমি তোমারগুলোর উত্তর দেব।” সোফায় ব্যাগ রেখে মার পাশে গিয়ে বসে রুমি।

– “আরে কাল থেকে শরীরটা একটু ম্যাচম্যাচ করছে। ঠান্ডা লেগে গেছে আসলে। ওদিকে দুদিন একটু অবেলায় স্নান করেছিলাম। ওষুধ খেয়েছি, ঠিক হয়ে যাবে। আজ ওই মুখে অরুচি বলে ভাবলাম ভাত আর খাবো না, একটু মুড়ি চা খেয়ে নেব। তাই কি আর করবো শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছিলাম। তুই খেয়ে এসেছিস? দাঁড়া ঝট করে তোর পছন্দের কিছু একটু বানিয়ে দি। খেয়ে  দিদি ভাইয়ের জন্য নিয়ে চলে যা।”

— “না না। তুমি বসোতো। এদিকে শরীর খারাপ, ওদিকে উনি চললেন রান্নাঘরে। তুমি চুপটি করে বোসো। আমি  তোমার সাথে দেখা করতেই এসেছি। তুমি একবারও ফোনে বলোনি তো কাল যে শরীর ভালো নেই।”

– “তুই এমনিই সারাদিন ব্যস্ত, নানা চিন্তায় থাকিস তার মধ্যে আমার শরীর খারাপ শুনলে আরো চিন্তা বাড়বে।তাছাড়া সেরকম কিছুতো হয়নি। কতদিন এসে থাকিস না। দুদিন এসে থেকেও তো যেতে পারিস।”

— “ইচ্ছা করে তো মা। ও বাড়িতে সারাদিন কাজ আর কাজ, তাও কারুর মনে কোনো সন্তুষ্টি নেই। মনের কথা বলারও কেউ নেই। সঞ্জয়ের অফিসে কাজের চাপ বেড়েছে অনেক রাতে বাড়ি ফেরে আজকাল। আমার শাশুড়ি এদিকে লোকের কাছে বলবেন আমি নাকি কিছুই করি না। সংসারের সব কাজ উনিই করেন। অথচ আমি না থাকলে গিয়ে দেখবো উনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এদিকে সঞ্জয়কেও বলে কোনো লাভ নেই। যখনই বলি মা একা আছে, মায়ের কাছে গিয়ে কদিন থেকে আসি, বলবে, তুমি মাকে এখানে এসে আমাদের সাথে থাকতে বলো না, সেটাইতো সুবিধা।”

হেসে ওঠে রুমির মা।  বলে, – “সঞ্জয় আসলে তোকে ছেড়ে থাকতে পারবে না। তাই ওরকম বলো। এই নিয়ে আর ওর সাথে ঝগড়া করিস না। তোর সংসার ছেড়ে, বাড়ি ছেড়ে এখানে এই বুড়ির কাছে এসে করবি কি?”

— “কি বলছো মা, আমার বাড়ি? আমার সংসার? তুমি জানো না মা ওখনে আমি একটা কাজের লোক ছাড়া আর কিছুই নয়। সংসার এখনো সঞ্জয়ের মায়েরই আছে। উনি যা বলেন আমাকে শুধু সেগুলো করতে হয়।

আর বাড়ি? যেখানে নিজের বিন্দুমাত্র স্বাধীনতা নেই সেটা কি নিজের বাড়ি? সঞ্জয়ও বলে জানো, তুমি আমাদের বাড়িটাকে নিজের বাড়ি ভাবই না, তাই তোমার এই বাড়িতে ভালো লাগে না। তুমি, সঞ্জয় যে যাই বলো না কেন ওটাকে আমি সত্যি নিজের বাড়ি ভাবি না। ওটা আমার শ্বশুরবাড়ি। আর শ্বশুরবাড়ি কখনোই নিজের বাড়ি হয় না।”

– “আচ্ছা কি মুশকিল তোর এই রাগটা তো তোর শাশুড়ির ওপর। তিনি আর কদিন আছেন। তারপরে তো ওটা তোরই সংসার হবে। তাছাড়া তোর শাশুড়িও হয়তো বিয়ের পর এভাবেই থেকেছেন, এখন কিছুদিন নিজের মতো আছেন। আমিও তো বিয়ে করে যখন এ বাড়ি এলাম কত সমস্যা ছিল। কিন্তু এখন এটাই আমার শেষের ঠিকানা। এখনো আমি বেঁচে আছি বলে তোর এত মনকেমন করে এখানে আসার জন্য, আমি চলে গেলে দেখবি এখানে আসতেই আর ভালো লাগবে না। একটা সময়ের পর মেয়েদের বাপের বাড়ি নয়, শ্বশুর বাড়িটাই নিজের বাড়ি হয়ে ওঠে।”

— “কি যে বলো মা আমি বুঝি না। তোমার সবসময় এই ধরণের কথা আমার মোটে ভালো লাগে না।

আর তুমি সাত তাড়াতাড়ি চলেই বা যাবে কেন! তুমিই ভাব না তুমিও তো আমার শ্বশুরবাড়ি গিয়ে থেকেছো বেশ কয়েকবার। সঞ্জয়ের মায়ের সংসার ওটা। মুখে উনি কিছু না বললেও তুমি থাকলে ওনার অসুবিধাই হয়। আমি বেশ ভালো বুঝতে পারি। আজ যদি আমার নিজের একটা বাড়ি থাকতো তাহলে তোমাকে আমি সেখানেই রেখে দিতাম। কিন্তু ওখানে আমি নিজেই হাজারটা অসুবিধায় থাকি, তোমাকে আবার কি বলবো থাকতে!”

– “ধ্যুর পাগলী মেয়ে, বয়সটাই যা বেড়েছে, চিন্তা ভাবনাতে সেই বাচ্চাই রয়ে গেলি। নিজের বাড়ি নয় আবার কি কথা! বরং মেয়েদের দুটো করে বাড়ি, এটাও যেমন তোর বাড়ি ওটাও তোরই বাড়ি। তাছাড়া আমি এখানে বেশ আছি। ওখানে গিয়ে থাকতেই বা যাবো কেন?”

— “না মা এই ব্যাপারে তোমার সাথে একমত হলাম না। আমার নিজের মানে সম্পূর্ণ নিজের একটা বাড়ি যদি থাকতো, নিজের টাকা দিয়ে কেনা বা তৈরি করা তাহলে…….”

– “তাহলে কি ? ”

— “কিছু না মা, আজ উঠি।” একটা লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুমি আবার বলে, “তিন্নিরও ছুটির সময় হয়ে এলো। তুমি নিজের খেয়াল। রাতে ফোন করবো।”

তড়িঘড়ি উঠে পড়ে রুমি। বাইরে খুড়তুতো ভাই তোতনের সাথে দেখা। মুখ ঘুরিয়ে নেয় রুমি। কথা বলতে ভালো লাগে না। রুমির বাবারা তিন ভাই। দুই কাকার ছেলেরা এখন উঠে পড়ে লেগেছে বাড়িটাকে প্রমোটিং করার জন্য। রুমির মা এখন বাড়ির সবচেয়ে বড়। কিন্তু মাকে ওরা পাত্তা দেয় না। ফ্ল্যাট মোটেই পছন্দ নয় রুমির। নিজের স্বাধীনতাটুকুও থাকে না। কিন্তু এখন আবার মাঝে মাঝে মনে হয় নিজের একটা ফ্ল্যাট হলে মন্দ হয় না। সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে অটোতে উঠতেই বিনীতা কাকিমার সাথে দেখা।

– “কি রে রুমি মেয়েকে আনতে যাচ্ছিস ? এবাড়ি এসেছলি বুঝি?”

ব্যস এবার এনার দৌলতে শাশুড়ি ঠিক খবর পেয়ে যাবে। বিরক্তি সহকারে হ্যাঁ বলে মোবাইল দেখতে থাকে রুমি।

তিন্নিকে নিয়ে বাড়ি ফিরতেই যথারীতি শাশুড়ি বললেন,  “আজ বুঝি বাড়ি গেছিলে? বিনীতা ফোন করেছিল একটু আগে ওই বললো।”

উফ্ এই পড়শী ভদ্রমহিলার কি লোকের বাড়িতে কথা চালাচালি করা ছাড়া আর কোনো কাজ নেই , মনে মনে বলে রুমি। মুখে বলে, “হ্যাঁ  মা তাড়াহুড়োর মধ্যে আর বলা হয়নি। ওই তিন্নিকে নেওয়ার আগে একটু ঢুঁ মারলাম। মায়ের শরীরটা ভালো যাচ্ছে না।”

– “তোমার মায়ের তো শুনি প্রায়ই শরীর খারাপ। একটা সারাদিনের লোক রাখলে তো ভালো হয়।”

— “দেখুন মা, আমার মা একলা থাকে, বয়স হয়েছে। আপনি ওভাবে থাকলে আপনারও শরীর দুদিন ছাড়াই খারাপ হত।” বেশ রাগত স্বরে বলে রুমি।

– “এভাবে কথা বলছো কেন, আমি খারাপ কি বললাম?”

তর্কাতর্কিতে মেজাজটা খিঁচড়ে যায় রুমির।

রাতে বাড়ি ফেরে সঞ্জয়। মায়ের থেকে সংসারের যাবতীয় খুঁটিনাটি প্রতিদিন খাবার টেবিলে বসে সে শোনে। না শুনতে চাইলেও মা তাকে জোর করে শোনায়।

রাতে রুমিকে সঞ্জয় বলে,  “বাড়ি গেলে মাকে অন্তত বলে যাওয়া উচিত তোমার। মা মনে খুব দুঃখ পেয়েছেন।”

— “আচ্ছা, তুমি যে তোমার বাড়িতে আছো কখনো আমার পারমিশন নিয়েছো সঞ্জয়?”

– “মানে?”

— ” মানেটা খুব পরিষ্কার না, তোমার বাড়িতে কখন তুমি আসবে, কখন বাইরে যাবে এসব তুমি আমাকে বা আমার মাকে বলে করো কি? আমার মাও দুঃখ পেতে পারেন। তাহলে আমিও কখন আমার বাড়ি যাবো, দিনে একদিন যাবো কি রোজ যাবো, কবে কখন যাবো এসব তোমাদের সবাইকে সবসময় বলে করতে হবে? তুমি দুদিন আগেই কিছু একটা কথা প্রসঙ্গে বলেছিলে তুমি এখন এডাল্ট তাই সবকিছু তোমার মাকে বলে করতে ভালো লাগে না। আচ্ছা আমি কি এডাল্ট নই? আর তোমার মাকেই বা সবকিছু বলতে হবে কেন? তুমি যদি আজ অফিস ফেরত পথে কোনো বন্ধুর বাড়ি ঘুরে আসো, এসে বলো? না বেরোনোর আগে বলে যাও আজ অমুকের বাড়ি যেতে পারি? আমিও আজ একটু সময় এক্সট্রা পেয়েছিলাম তাই বাড়ি ঘুরে এসেছি। যাবার আগে বলে যাওয়া হয়নি। এতে তোমার মা দুঃখ পেলে আমার কিছু করার নেই।”

– “কি মুশকিল এই বাড়িটাকে তুমি কখনোই নিজের বাড়ি ভাবতে পারো না না রুমি? বাড়িতে থাকতে গেলে কিছু নিয়ম তো মানতেই হয় তাই না।”

— “নিয়মগুলো শুধু মেয়েদের জন্যই করা হয় তাই না? তোমার মা আমার মা এই নিয়মের মধ্যে দিয়ে এসেছে, তাই আমাকেও এই নিয়ম বজায় রাখতে হবে, ভবিষ্যতে তিন্নিকেও হয়তো করতে হতে পারে। আর এই বাড়িটা নিজের বলে ভাবি না তা নয় তবে তুমিই বলো না মেয়েদের কি সত্যি নিজের বাড়ি বলে কিছু হয়? ছোট থেকে বড় অবধি বাবার বাড়িতেও হাজার নিয়ম , আবার বিয়ের পরে যেখানে যাবো সেখানেও নানা নিয়ম। মেয়ে হয়েছে যখন সবই বুঝবে সময় এলে। জানো সঞ্জয় মাঝে মাঝে আমি একটা বাড়ি কিনবো স্বপ্ন দেখি যেটা সম্পূর্ণ আমার বাড়ি হবে।”

– “তুমি রোজগার কর যে বাড়ি কিনবে?” হেসে ফেলে সঞ্জয়।

— “আমি আবার চাকরি জয়েন করবো।” সিরিয়াস মুখে বলে রুমি।

– “বেশ ভালোই তো! আমারই তো হেল্প হয়।”

— “এই যে মুখে বলছো হেল্প হয় এটাতো মুখেই। কাজে কি কিছু সহযোগিতা করতে পারো? তোমার বাড়িতে সব কাজ করে আমার রোজগার করা সম্ভব নয়। তখনতো বলবে আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়েছে, মেয়েকে সময় দিচ্ছ না ইত্যাদি। তুমি রোজ অফিস থেকে এসে চা জলখাবার বা হাতের সামনে সব না পেলে মাথা গরম করে ফেল। আবার বেরোনোর সময়ও সব রেডি করে দিতে হয়। এই ছোটখাট কিছু কাজ যেমন জল ভরা, চা বানানো, দোকান করা, মেয়েকে একটু পড়ানো, নিজের জিনিসগুলো নিজে গুছিয়ে রাখা এগুলো তুমি যদি করতে পার তাহলে আমি রোজগার করতেই পারি সঞ্জয়। হয়তো এখুনি ভালো কিছু কাজ পাবো না, তবে কিছু না হোক টিউশন তো পড়াতেই পারি। আগেতো পড়াতাম। সেই সোর্স থেকেই নাহয় আবার শুরু করবো।

অবশ্য তুমি কাজ করবে কি, তোমার মা তো সবার আগে ব্যাগড়া দেবেন। বলবেন, ‘ছেলেটা সারাদিন খেটে এলো। এরপরে আবার সংসারের কাজ করতে হচ্ছে। এটাও আমার দেখা বাকি ছিল…’ দেখো ভেবে এ সব কথা উপেক্ষা করে আমাকে সাহায্য করতে পারবে কি না।”

– “বুঝলাম। ঠিক আছে বাবা, চেষ্টা করবো, এত লেকচারের দরকার ছিল না। তবে রুমি তোমার এই রোজগার করে বাড়ি কেনার স্বপটা কিন্তু জাস্ট টু মাচ….” বলেই আবার হেসে ফেলে সঞ্জয়।

— “আঃ, আস্তে হাসো, মেয়ে উঠে পড়বে। স্বপ্ন সত্যি হোক না হোক দেখতে ক্ষতি কি?” দাঁতে দাঁত চিপে শান্ত দৃঢ় কণ্ঠে বলে রুমি।

রাত বাড়ে । নিজের শারীরিক সুখ ভোগের পর ক্লান্ত সঞ্জয় ঘুমিয়ে পড়ে। আস্তে করে উঠে অঘোরে ঘুমন্ত তিন্নির মাথায় আলতো চুমু খেয়ে রুমি নিজের মনে বলে, “তোকেও আমি স্বপ্ন বুনতে শিখিয়ে দেবো তিন্নি। আর তোর নিজের একটা বাড়ি থাকবে বুঝলি। বাবার না, বরের না, শুধু তোর বাড়ি। যেখানে তোর ইচ্ছা মত সময় কাটাতে পারবি। যেখানে বড় হয়ে গেলেও বাবা বা কাকা কথায় কথায় বলবে না, ‘এবাড়ির একটা নিয়ম আছে, বিয়ে হলে তারপর যা খুশি কোরো…’ আবার বিয়ের পর বর বা তার বাড়ির লোকেরাও বলবে না, সেই বাড়িরও একটা নিয়ম আছে। তোর বাড়ির নিয়ম তোর কাছে থাকবে, শুধু তোর কাছে। মনের মতো করে সাজাবি স্বপ্নের সেই বাড়িকে। মনখারাপের দিনে বা কোনো কোনো সময় একটু একলা থাকার প্রয়োজন পড়ে, তখন থাকবি সেই বাড়িতে। মেয়েদের একটা নিজের বাড়ির খুব প্রয়োজন।”

কাল সকালে আবার নতুন করে জীবন শুরু করার স্বপ্ন বুনতে থাকে রুমি। সারাদিনের হাড় ভাঙা খাটুনির পর ক্লান্ত দু চোখে ধীরে ধীরে ঘুম নেমে আসে।

[বানানবিধি/মতামত লেখকের নিজস্ব]

Tags: , ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ