ফেসবুকের সার্চ লেখা জায়গাটায় গিয়ে দময়ন্তি টাইপ করে “অর্কপ্রভ ব্যানার্জি”।
প্রায় ছয় বছর পর দময়ন্তির মনে পড়ে তারও একটা ফেসবুক আ্যকাউন্ট ছিল। অর্কই খুলে দিয়েছিল এই মুখপত্রিকা। এতগুলো বছরে সাইক্রিয়াটিস্ট দময়ন্তি বসুর একবারও মনে আসেনি ফেসবুকের কথা। সময়, ইচ্ছে কোনোটাই নেই তার। সারাদিন কেটে যায় কতরকম গল্প শুনতে। সকাল থেকে হরেকরকম চরিত্র।তাদের বিভিন্ন মানসিক স্টেটাস আপডেট করারএকমাত্র নির্ভরযোগ্য স্থান দময়ন্তির চেম্বার। তাই দময়ন্তির চোখের বালি ফেসবুক কারণ সে আর জানতে আগ্রহী নয় মনের গল্প ওই সাদা-নীল আভরণে।ওখানে মনের গল্পগুলো অনেক ক্ষেত্রেই “মনগড়া”। তাই মনের সমস্যার একমাত্র সমাধান দময়ন্তি বসু, সারাদিন পর ব্যস্ত থাকে নিজের ছোট্ট গন্ডিতেই। কিন্তু কোভিডের সন্ত্রাসে মনের অসুখগুলো আজ বাক্সবন্দি।ভার্চুয়াল আ্যপয়েন্টমেন্ট চলে তার পেশেন্টদের সাথে এখন। ভালো থাকাটা আজকাল যেন আরও কঠিন। বেড়েছে ব্যর্থতা, বিফলতা, নৈরাশ্য। দময়ন্তি জানে যাদের সাথে কথা হয় তারা তাও সমস্যা ভাগ করে কিছুক্ষণের জন্য শান্তি পায়। কিন্তু ঘরবন্দি ভার্চুয়াল জগতে সংখ্যাটা বেশী তাদের, যারা সবার সামনে বলেই উঠতে পারে না তাদের কষ্ট পাছে লোকে তামাসা করে তাদের নিয়ে। বাড়ছে অবসাদ। কঠিন হয়ে উঠছে দমবন্ধ বেঁচে থাকা। বাইরে মৃত্যভয়, অন্দরমহলে দীর্ঘশ্বাস।সারাদিন ল্যাপটপে চলে তার কাউন্সেলিং। অনেকসময় শুধু চুপ করে শুনে যাওয়া না বলতে পারা কথার উচ্চারণ। কখনও অনর্গল কথা বলে যাওয়া বন্ধু হয়ে। জীবন এখন ক্ষণস্থায়ী। এমন মহামারী যেখানে বিপদে গিয়ে পাশে দাঁড়ালেও ছড়িয়ে পড়বে সংক্রমণ। শৈশব থেকে বৃদ্ধজন সবাই আজ নিজস্ব দ্বীপপুঞ্জের বাসিন্দা। নাহলে যেন বিলুপ্ত হয়ে যাবে শহরটা। দময়ন্তির তেমন বন্ধু নেই। তবুও এখন সে ফেসবুকে খুঁজে বের করেছে স্কুলের আর মেডিকাল কলেজের কয়েকজনকে। একবার শুধু বলা, “কেমন আছিস”। পুরণো পরিচিত মুখগুলো পরিবর্তন হয়েছে সময়ের স্রোতে কিন্তু পাল্টায়নি বন্ধুত্ব।
কিন্তু অর্ক তো বন্ধু ছিল না। তবুও তাকে খুঁজে বের করে দময়ন্তি। এতগুলো বছর পর আজও মনের একটা সুপ্ত কোনায় সজীব হয়ে থাকে নিজেকে চেনার সবথেকে প্রিয় দিনগুলো।কোনওদিনই ভুলতে না চাওয়া মুহুর্তগুলোকে আমাদের কখনও সযত্নে তুলে রাখতে হয় স্মৃতির মণিকোঠায়।
আসলে সাইক্রিয়াটিস্ট দময়ন্তি বসু জানে সে নিজে বড্ড অন্তর্মুখী। বন্ধু নেই বললে খুব ভুল বলা হয়না। নিঃস্বঙ্গতা তার বেশ লাগে। সময় কাটে বইয়ের সাথে। অন্তর্মুখী কথাটার অর্থ কোনও অসুস্থতা বা স্বকামী ব্যক্তি নয়। তাই কেউ তাকে দাম্ভিক আবার কেউ অসামাজিক ভাবলেও দময়ন্তি কোনওদিনই বিশেষ পাত্তা দেয়নি সেগুলো যতক্ষণ না দেখা হয় তার অর্কপ্রভ ব্যানার্জির সাথে।হোঁচট খায় ভাবনাটা। দময়ন্তির মতন মানুষও অনেক কথা বলত সেই দুটো বছর যখন অর্কর প্রাণবন্ত স্বভাবটা বের করে এনেছিল সে। অর্ক বলত, “দুর একটা ফেসবুক না খুললে তুমি প্রেমট্রেম করতে পারবে না। ওই ডাক্তারি বইগুলো ছেড়ে ওঠো তো। তবে তো প্রিয় বন্ধু পাবে”।
কিন্তু প্রিয় বন্ধু দময়ন্তি পেয়েছিল তার মেডিকেল চেম্বারেই। পাল্টে গেছিল জীবনের চেনা ছকটা হঠাৎ। হাসি কান্নায় কিস্তিমাত করে গেছিল দাবার চালের মতন জীবনের দানগুলো। সুস্থ আছে তো অর্ক এই অসুস্থ দাবানলে? ভাল আছে তো নিজের মতন করে? থাবা বসায়নি তো মারণরোগ তাকে?
ফেসবুকে কালো-সাদা প্রোফাইলে দীপ্তিয়মান অর্কর মুখ। এক ঝাঁক কোকড়ানো চুল আর বুদ্ধিদীপ্ত দুটো চোখ। সেই ঠোঁটের কোণে একচিলতে হাসিতে অবিরাম ইয়ার্কি মারার ক্ষমতা। ভীষণ ছবি তুলতে ভালবাসত অর্ক। কভার ফোটোয় জ্বলজ্বল করছে অর্কপ্রভ আর ইরার ছবি। আলতো হেসে একটু স্ক্রল ডাউন করতেই দময়ন্তির চোখ আটকায় তারিখটায়। আজ তো অর্কর জন্মদিন। উনিশ বছর আগে প্রথম দেখা হয়েছিল তাদের এই দিনটাতেই। জন্মদিনের শুভেচ্ছা দিয়েই তাহলে কথাবলা শুরু করবে
দময়ন্তি আজ।
কিন্তু হঠাৎ তোলপাড় হয়ে যায় পৃথিবী।বুকের ভেতর, পাঁজরগুলো যেন দুমড়ে-মুচড়ে দিচ্ছে কেউ। শিথিল হয়ে পড়ছে দময়ন্তির শরীর। জলের গ্লাসটা কোনওমতে মুখে ঠেকায় সে।শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে
গলাটা।
অর্কপ্রভর টাইমলাইনে প্রত্যেকটি জন্মদিনের শুভেচ্ছার পরে লেখা “রেস্ট ইন পিস, তুমি বেঁচে থাকবে তোমার প্রত্যেকটি ক্যানভ্যাসের রং-তুলিতে”।
ইরা মুখার্জি দময়ন্তিকে অপছন্দ করে তা জানে সে। তবুও ফোনটা করতেই হবে তাকে আজ। মহামারী কেড়ে নিয়েছে যে মানুষটাকে তার অনেক বড় সত্যিটা লোকানো আছে দময়ন্তির কাছে। আজ অর্ককে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভাঙ্গতেই হবে অর্কর বলিদানটা সামনে আনার জন্য।মুখোশটা খুলে দিতেই হবে প্রতারক, ভন্ডদের। দময়ন্তি ভালবাসে অর্ককে আজও। তার কারণ অর্কপ্রভ তাকে চিনিয়েছিল বেঁচে থাকা আর ভালথাকার পার্থক্য। একজন পেশেন্ট প্রথমবার তাকে হাসতে শিখিয়েছিল মন খুলে। ভাইরাসের প্রকোপে আর নিশ্বাস নিতে পারেনি অর্ক কিন্তুআজ সময় এসেছে তার মুক্তি পাওয়ার। আত্মা আছে কিনা জানেনা দময়ন্তি। শুধু জানে কোনও একটা টান না থাকলে আজ এতগুলো বছর পর ফেসবুক খুলত না সে। অর্কর সাথে তার সম্পর্কের যে নোংরা নামকরণ দিয়েছিল সামাজিক পশুরা তাদের মুখোশগুলো টেনে ছিড়েদিলে তবেই মুক্তি পাবে
অর্ক।
মরচে পড়া ফোন নম্বরটায় ডায়াল করে দময়ন্তি। ফোন তোলে চেনা কন্ঠস্বর।
-“ আমি দময়ন্তি বসু বলছি। কেমন আছ ইরা”
– “ কিসের জন্য ফোন করেছ তুমি? কি চাও?” ঝাঝালো কন্ঠে উত্তর দেয় ইরা।
-“ তোমার সাথেই একান্তে খুব প্রয়োজনীয় কিছু কথা আছে ইরা।একবার ভিডিওকলে এসো
প্লিজ।” কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে সম্মতি জানায় ইরা।
অনেকবছর পর মুখোমুখী ইরা, দময়ন্তি। মধ্যবর্তী সেতুটি আজনিশ্চিহ্ন। ইরা বলে, “অর্ক তো এখন আর নেই। আর যখন ছিল তখনও আমার ছিল না। তাহলে আমার সাথে তোমার কি প্রয়োজন”?
দময়ন্তি খুলতে শুরু করে এতদিনের গোপন রাখা প্রতিশ্রুতির ভার।
এগারো বছর আগে অর্কপ্রভর সাথে দময়ন্তির দেখা হয় তার সাইক্রিয়াটিস্ট চেম্বারে। জন্মদিনের দিন একটা সাতাশ বছরের ছেলে মুখনিচু করে ঢোকে তার ঘরে। আড়ষ্ট, বেমানান, ত্রস্ত ছেলেটা কাঁধের গিটারটা নামিয়ে না রেখেই চুপ করে বসে কালো চেয়ারটায়। দময়ন্তি বলে, “ গিটারটা নামিয়ে রাখতে পার, কেউ নেবে না”। কথা শোনে সেএকবারেই। কিছুক্ষণ চুপ থাকে দুজনেই। অর্কই প্রথমে বলে “আপনিকিছু জিজ্ঞাসা করবেন না?”
দময়ন্তি হেসে বলে, “ নাতো। তোমার কিছু বলতে ইচ্ছে হলে আমি শুনব নাহলে বন্ধুর মতন চুপ করে সঙ্গ দেব তোমায়”।
অর্ক প্রথমবার মুখ তুলে তাকায় দময়ন্তির দিকে। বাবা-মাকে লুকিয়ে সেএসছে দময়ন্তির কাছে। তখন সবে চাকরি পেয়েছে সে। বেশ নামকড়াএকটা
মাল্টিনেসনল কোম্পানীতে ইন্টার্ন সে। ছ’মাস অবেক্ষকাল শেষ হলে স্থায়ী চাকরি পাবে সেখানেই। কিন্তু তার বোধহয় আর চাকরি করা হবে না। ভীষণ অসুস্থ সে। বাবা বলেছে এভাবে চললে সে মারা যাবে শিগ্গিরি। বংশের মুখ রক্ষা করা তো দূরের কথা, তার অসুস্থতায় একঘরেহয়ে যাবে পরিবারের
সবাই।
দময়ন্তি জিজ্ঞেস করে, “ কি হয়েছে তোমার”?
অর্ক চুপ করে চেয়ে থাকে মাটির দিকে।
দময়ন্তি বলে, “ তোমার প্রত্যেকটি কথা এখানে সুরক্ষিত। ধরে নাওআয়নার সাথে কথা বলছ তুমি শুধু
এখানে তোমার প্রতিচ্ছবি তোমায়সঠিক রাস্তা দেখাতে সাহায্য করে”।
অর্ক বলে, “ আমি একটা ছেলের সাথে শুই”।
কথাটা ছ্যাৎ করে লাগে দময়ন্তির কানে। “ শুই মানে? ভালবাসো না?”
অর্কপ্রভ বলে, “ বাবার কাছে ধরা পড়ার পর বাবা বলেছে এটা নাকিভালবাসা না। অসাস্থ্যকর শারীরিক ইচ্ছা। তাই বিপ্রকে ভালবাসাটা জাস্ট একটা অসুস্থ সমকামি মানসিকতা। নোংরা একটা খেলা।”
দময়ন্তি জানতে পারে কিভাবে গান ভালবাসা ছেলেকে জোর করে তারবাবা ক্যারাটেতে ভর্তি
করেছে। কিভাবে তাকে নগ্ন করে মেয়েদের শরীরের প্রতি আকর্ষিত করার চেষ্টা চালায় তার জ্ঞাতি ভাইয়েরা। বিপ্র আর অর্ক দুজনেই একই কলেজ তারপর একই অফিসে চাকরি পায়। অর্কর বাবা বলে, “ তোদের দেখে তো বুঝিনি তোরা এমন নোংরা মানসিকতার”।
অর্ক বোঝেনা সমকামিদের আলাদা কিরকম দেখতে হয়। তাদের হাবভাব আলাদা কিছু হয় না বোঝানোর চেষ্টা করলে বাবা তার গায়ে হাত তোলে বারবার। তার কোমড়ে বেঁধে দেওয়া হয় মাদুলি। অপমানিত করা হয় বিপ্রকেও। তার জন্মদিনের দিন তার ভাইয়েরা একটা মেয়েকে নিয়ে এসে জোর করে তাকে শুতে বাধ্য করে তার সাথে। অর্ক জানতে পারে তার মাও জানত এইসব সম্বন্ধে। ছেলে মারাত্মক অসুস্থ তাই এই ব্যবস্থা।রোজ কাঁদে মা। অফিসের নীচে দাড়িয়ে থাকে বাবা। আজ অসুস্থতাসারাতে দময়ন্তির কাছে আশ্রয়প্রার্থী অর্ক।
দময়ন্তি প্রথমবার রেগে যায়। “ এতো ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স। তুমিএকেবারেই অসুস্থ না।
অসুস্থ, ভীতু, মিথ্যীবাদী তোমার পরিবার। ভেঙ্গে না পড়ে, কোণঠাসা না হয়ে মুখোমুখী হও প্রতিপক্ষের।”
অর্ক বলে, “ আপনার মনে হয় পুলিশকে অভিযোগ করলে আদৌ কিছুহবে? তার থেকে ওষুধ দিন আমি বিপ্রকে ভুলে যাই।”
দময়ন্তি বলে, “ আমি আছি তোমাদের সাথে। সেরকম হলে অন্য শহরেচলে যাও চাকরি পাকা হলেই।
পরিবারের সাথে লড়াইটা বেশী কঠিন।যদি দুজনেই নিশ্চিত থাকো তোমাদের সম্পর্ক নিয়ে তাহলে
চলে যাও অন্যশহরে। লড়তে তোমাদের হবেই কিন্তু তখন একটু সহজ হবে লড়াইটা।আর
ক’বছরেই আইনও তোমাদের সঙ্গে থাকবে।”
দময়ন্তি রোজ এই বিশ্বাসটা দিতে থাকে অর্ককে যে তারা স্বাভাবিক। দেখাহয় বিপ্রর সাথেও এক দু’বার। অর্কর সাথে আড্ডা মেরে কেটে যেতঅনেক সন্ধ্যা। দময়ন্তি ফিরিয়ে আনত অর্কপ্রভর আত্মবিশ্বাস প্রতিদিন আর অর্ক তার বিনিময়ে উপহার দিয়ে যেত একমুঠো জীবনের স্বাদ। ওইপ্রথম দময়ন্তির মনের মতন বন্ধু পাওয়া। ফুলগাছ লাগানো থেকেএকসাথে চুরমুর, রান্না শেখা থেকে গিটারে নতুন গান, অর্কর সাথেইপাখনা মেলে অন্যথা অন্তর্মুখী প্রাণ।
দময়ন্তিকে সাজাতে ভালবাসতঅর্ক। নিপুণ ছিল তার আই-মেকআপ। বিপ্রকে জড়িয়ে ধরে বসে থাকতঅর্ক দময়ন্তির মোজাইক বারান্দায়। তাদের ঘনিষ্ঠ চুম্বনে সিক্ত হতদময়ন্তি কখনও। কখন যে অর্ককে ভালবেসেছিল দময়ন্তি তার প্রিয় বন্ধুহিসেবে অজানা সেটা তার। কিন্তু বেশীদিন টেকে না এই ভালো থাকা।দু’বছর কেটে গেছিল তখন
বাইরে যাওয়ার ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করছে ওরা।অর্কের বাবামা তাকে অনুসরণ করে পৌঁছে যান
দময়ন্তির কাছে। খুশীতারা ছেলের শারীরিক চাহিদা পরিবর্তনে। তাড়াতাড়ি বিয়ে হোক দময়ন্তিআর অর্কপ্রভর এটাই চায় অর্কর মা। দময়ন্তি বয়সে বেশ কিছুটা বড়হলেও সমাজের জন্য এই পাত্রী মেনে নিতে রাজি তারা।
কিন্তু নিরাশ হয় আবার তারা সত্যিটা জেনে। দময়ন্তি অর্কপ্রভ শুধুই প্রিয়বন্ধু। একটি ছেলে
এবং মেয়ে শুধুমাত্র বন্ধুত্বের অঙ্গীকারে ভালবাসতেপারে দুজন দুজনকে এটা বুঝতে পারে না অশিক্ষিত সমাজ। ভয়দেখানো হয় দময়ন্তির চেম্বার তুলে দেওয়া হবে যদি না সে বন্ধ করে
অর্করসাথে যোগাযোগ। রটিয়ে দেওয়া হয়, দময়ন্তির বাড়ির নীচের চেম্বারে চলে নোংরা বিকৃতরূপী শারীরিক খেলা।
বিপ্রকে একদিন অজ্ঞাত কারা যেন খুব মারধর করে রাস্তার অন্ধকারে।অ্যাসিডে পুঁড়িয়ে দেওয়া হয় বিপ্রর মুখ। সবে সুস্থ হয়ে উঠতে থাকাআত্মবিশ্বাস হেরে যায় সামাজিক নৃশংসতার কাছে। সমর্পণ করে অর্ক তার ভালবাসা পরিবারের ক্ষমতাশীল জেদের কাছে।
দময়ন্তি তাও চেষ্টা করেছিল যোগাযোগ করার কিন্তু শেষবারের মতন অর্কবলে, “বাড়ির দেখা মেয়েকেই বিয়ে করবে সে। বিপ্রকে বাচানোর একমাত্রউপায় এটাই”।
প্রতিশ্রুতি চেয়ে নেয় তার কাছে এই বলে যে, “ রটানো সত্যিটা যেন মেনে নেয়দময়ন্তি। ইরা যেন কোনওদিন জানতে না পারে বিপ্রর কথা”।
হারিয়ে যায় বিপ্র। কোনওদিন বিপ্র জানতে পারেনা ইরাকে বিয়ে করলেওভালবাসেনি তাকে
অর্কপ্রভ। আর ইরা জানতে পারেনি তার স্বামীরকোনও পরকিয়া ছিল না দময়ন্তির সাথে।
ক্ষতবিক্ষত অ্যাসিডে পোড়াভালবাসাকে নিজের হৃদয়ে দগ্ধ করে চারবছর ইরাকে ভালো
রাখতেচেয়েছিল অর্ক কিন্তু মেটাতে পারেনি ইরার শারীরিক ভালবাসার চাহিদা।অর্কর সবটাই যে কেবল বিপ্রর অধিকার। কিন্তু ইরা জেনে এসছে দময়ন্তি দায়ী এসবের জন্য তাই বিয়ের পর একবারই দেখা করে ইরা অনেক খারাপকথা শুনিয়েছাল দময়ন্তিকে। কিন্তু দময়ন্তির মতন অন্তর্মুখীদের কাছেসুরক্ষিত থাকে বন্ধুকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিরা।
কোভিডে আক্রান্ত অর্ককে শেষ দেখাটুকুও দেখতে পারেনি কেউ। বিদ্রুপ, অবহেলায় কাটানো জীবনটা শেষ সময়ে তাই হয়তো অভিমানে কাউকেকাছে আসতে দেয়নি। চুপ করে কাঁদছে ইরা। হঠাৎ সে বলে ওঠে, “একটা পেন্টিংরেখে গেছে অর্ক দময়ন্তির জন্য। হোম আইসোলেশনে থাকাকালীনপেন্টিংটা
করেছিল অর্কপ্রভ। আই.সি.ইউতে মৃত্যমুখে যাওয়ার আগে ইরাকেবলে গেছিল দময়ন্তির সাথে দেখা করে তাকে সেটা দিয়ে দেওয়ার জন্য।ইরা তা দেবে না ভেবেছিল দময়ন্তিকে। এতদিন
অর্কর কোভিডে আক্রান্তহয়ে একাকি মৃত্যটাকেই ইরা ভাবত অর্কের প্রায়শ্চিত্ত। আজ সে বোঝে সবাইকে দূরে করে দিয়ে অর্কর এটা চূড়ান্ত প্রতিশোধ।
ভিডিওকলে ছবিটা দেখায় ইরা। দময়ন্তি ঝাপসা চোখে দেখে তিন বন্ধু বসে আছে একটা বেঞ্চে ভিক্টোরিয়ার সামনে। মুখগুলো খুব চেনা।
দময়ন্তির ফেসবুকে একটা প্রোফাইল থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এসে পড়েআছে অনেকদিন আগে। প্রোফাইলে শুধুমাত্র মুখের ডানদিক দৃশ্যায়মান। কভার পেজে লেখা, “স্ট্যান্ড এগেনস্ট ইনহিউমান ভাইরাসেস”।
[বানানবিধি/মতামত লেখকের নিজস্ব]
Tags: গল্প, সুষ্মিতা রায়চৌধুরী, স্বেচ্ছা নির্বাসন
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।