আসল পাহাড়টা এখানেও না- খাদে গড়িয়ে সন্দেহের স্থান দেখিয়ে দেবে-কতটা পথ পেরোলে সরু নিব ভেঙে টপ করে দেখা যাবে লাল কালি পড়া- যদি বলি নাব্যতা-যেখানে উপত্যকা সেখানে লাল রক্তের ঘর।
পরিষ্কার করে বলবে তারা যারা নিজেদের গল্প রাখতে পেরেছে বয়ঃসন্ধি থেকে বার্দ্ধক্যে পৌঁছানোর মাঝে,হাতে সময় রেখে মৌজে মৌজে বেঁচেছে, একসময় ভজনকে তারা ধমকাবার এক্তিয়ার পায় সেই জোরে। অনেকেই বিলক্ষণ জানেন ভদ্দরলোকিয়ানা ভজনকে সহজে কাত করতে পারেনা। নেহাত সোজা ঢঙে গড়ানোর বৃত্তান্ত নয় সে যে।
আঙুল ধরে চল ভজন। না আব্বা, না আম্মা, না দাদাজি, আমি বড়ো হয়ে গেছি।বিষুণকো বলো। ভজন সঙ্গে সঙ্গে যাবে না। না সাহেবলোগ আমি অতো বড়ো হই নি। আঙুলের কাঁটা ভিজে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত কোথায় গিয়ে পড়ে কেউ জানে না।অলৌকিক হয়েছে চুঁইয়ে পড়া বাতাস। খাদানের নীচে পরলোক। ভজন ভুরু কোঁচকালে আলো শুষে নেয় কালো মুখের ওপর ভাগটা।
খুলি ধরে থাকিস। পাহাড়ের কাঁচা উতরোই।
পাহাড়টা আসলে এখানে না। হাড়েতে কোয়ার্টজ দৌড়ে যেত। কনক্রিট মাথা- খাদানে গড়ানে চমকে তাকিয়ে ।
চোখটার জায়গায় গর্ত। আগেকার চোখ কবেই গলে গিয়েছে।ভজন চোখটা বড়ো নরম। আঁখ নরম জায়গা। দেখিস নি একটুক বালি ঢুকলে কী করকর করে। পাহাড়ে শোয়া করিস না নাদান। ভয় তুই পাবি। হাতে তোর করোটি।
আমলার সাঙ্গাথি বুনো ভ্যাদড়া গন্ধ –ওরা সব ছ্যাতলা পাতা- দিব্যি বুনো-গরম ছিল রক্তটুক্কানি – মিলিয়ে গিয়ে ম্যাদা মারা ঠান্ডা- আরও অলীক ঠান্ডা।ভজনকে কে শুইয়ে রাখবে। ঠান্ডা হাওয়া? নিম? মহুল?
ভজন বস্তা নিয়ে এগোয়- পাহাড় পা দিয়ে ছুঁয়ে আছে মানুষ। একদম পাহাড়। একজন মানবসন্তান।পসিনা পড়ে।পাহাড়ের শরীরে।ওটা পাহাড়। কঠিন-পাঙ্গাস। চক্ষু নেই, কার কার থাকে? খুলি আছে।
গনগনে আঁচে আঙার।চুলো দেখে ভজন বলে সেও রোটির জন্য ভাবে।অফুরান ভাবে।অথচ আঙুল ছাড়তে মানা আছে। খাদানের পর খাদান- তারপর মাঠ-গোবরলেপা ঘরের বাট।শুকনো গোবরের লোকালয় গন্ধ।
ঘন গভীরে তাকিয়ে দেখিস না। শুধু বিষুণের জন্যে। হল্কুও। দাদা। পূর্নিকা মৌসি।ভজন বিষুণদের মাথার খুলি খুঁজে পাবে । আঙুল ছেড়ে বিষুণ যেভাবে নেমে গেছে। ভজন নেমে যাবে। একভাবে। তরতরিয়ে- যেন গাঁয়ের খালের নাব্যতা। আর তার প্ররোচনা।
দেবে যাওয়া স্মৃতিগুলোর মধ্যে না গেলে কী উপায়ে মনে করা যাবে ওরা কী করত। ও আর বিষুণ। খাদানের শাদাকালোয় ?আর দাদার আঙুল ধরে রাত কাবার। ভুস করে শুশুক জানোয়ারের মতন ভেসে উঠলো যেই চান্দটা, বেঠিক গ্রহ ধড়মড় করে উঠলো। আকাশটা কিন্তু ওদের ঠিকানা হয়নি কস্মিনকালে- তবে পাতালটা হয়েছে।
কড়া আন্ধার। কয়লার মতো কালো।ভুষো নয়-নিকষ দেওয়ালে। বাড়ি খাচ্ছিল কিছু।মাথার খুলি তো ছুট ছিল বিষুণটার।যদি টুকরাগুলো নাপাওয়া যায় ওই গর্তে!
যদি আলো নিয়ে চোরকুঠরিতে ধর্ণা দেওয়া যায়- আলোর দেওতা না দেখিয়ে পারবেন কি?চুমোয় চুমোয় চুবিয়ে দেবে তখন বিষুণের কাকের বাসা মাথাখানা।
হাতে ধরা করোটিতে হাজার জোনাকি জ্বলছে- এই নিভছে।আবার জ্বলছে। এই নিভছে। ভজন বলতে বাধ্য হলে করোটি হাতে নিলে সারারাত কয়লা ঝিক্ মিক জ্বলে-মাত্র নেভে-আবার জ্বলে ওঠে।তার মাথায় চমকে উঠছে আঙ্গার আর আন্ধার।
[বানানবিধি/মতামত লেখকের নিজস্ব]
Tags: আগেকার, গল্প, তন্বী মুখোপাধ্যায়
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।