হাত জোড় করা মানুষ। ওরা,অরা। কারো কাছে ‘এই আমরা”।কথায় কথায় মুখখানি ভীষণ- গলার সামনে হাত জড়ো মুদ্রা।মুখ ভীষণ হবার অন্য কারণ-কম্পিউটারে একইরকম মূর্তি সার বেঁধে চলছে। লোকের দরজায় কড়া নাড়ছে। আকাশ এখন সিসি টিভি। লোককে কিছু বা বলছে। কৌতুক করছে! না উপহাস। ওদের মধ্যে আমি ছিলাম। ক্ষমা চেয়েছিলাম হয়তো চেনা মানুষের কাছে। অচেনা মানুষের কাছে চেয়েছি মুখের স্নায়ু কোমল হোক।মনে থাকে না অচেনা মানুষের সঙ্গে ভুল –ঠিক করে ফেললে। হাল্কা হ’তে চাইছিলাম।
কেঊ পিছন ফিরতেই শুনিয়ে বলছিল-“আমাদের ভয় পাচ্ছে।” হাত মুঠো হয়ে যায় অজান্তে।মুখে দেখা দিয়েছিল শক্ত কাটাকুটি।
“কী দরকার বৌমা। পরে চড়াও হবে। চাঁদার বহর তো দেখছ? ভেতরে চলো –চলো ভেতরে।”-চাপা তর্জন- চাপা খেদও।
আমার সামনে দলের নানা পোর্ট-ফোলিও-ধারী। এবার আমরা সকলকে নানা রকম ফিতে পরিয়ে এনেছি- বড়ো নেতা, আরও বড়ো নেতা- তারও বড়ো নেতা-সব্বাই করজোড়ে।করজোড়ে ব্যথার উপশম। যত ওপরতলার মানুষ-তত হাত দুটি স্লিপারি।সে আর কে দেখছে!
চার-চার দশকের জয়- নিঃসপত্ন আস্থালাভ-জয়-জয়কার।কে একজন হঠাৎ কী যেন অন্য ভঙ্গি করেছে।ছোট্ট ছেলেটা চিল চিৎকার করে উঠলো।কিশোরী মেয়েটার রান্না পুড়ে গেছে- মুখপুড়ি! সত্যিই পোড়া- মনে হয় অ্যাসিডে বুঝি।
নাঃ। ওর চেয়ে আমি এখনো অনেক সুন্দর –আর কতো বেশি সফল কেউ কেউ নিশ্চয়ই ভাবে।হাত জড়ো ওকে দেখালাম।মানি ঈশ্বর, মানি তন্ত্র, মানি তন্ত্রী, মানি আমার চাই নিরাপত্তা।সর্বভূতে নিরাপত্তা পাওয়াতে ক্ষমতার সঙ্গে চাই বহুতল যোগ।এখন হাতদুটো জুড়ে রাখাই বড়ো সাধনা।
দু-আঙুলে দেখাতে পারি ‘ভিক্টরি’।ভিক্টরি দৌড় নয়-মিছিল।তখন মেঘলা।গুর গুর করছে মেঘ। জানলার কপাট পড়ছিল ছিটকিনির পরোয়া না করে।
– আমার মেয়েকে আমি চিনি।–কারুর সামনে মাথা ঝোঁকায় না-তাকে বলেছি হাত জোড় করে চাইবে ভোট। মুখ রাখবে হাসি-হাসি।দরদী প্রার্থী। ভুল করো না।তোমার বয়সী আমাদের গভর্নমেন্ট।কতো গর্বের।
বুড়ো আঙুল নেড়ে বলেছে-এই পাত্তরে ভোট না দিলে কী হবে জানে না এখনও। জামাই বাবাজীবন বরং বলেন-‘আমি হাত জোড় করছি- নিছক নাটক বই তো নয়!
আকাশে রাতে ঘোলাটে ভাব। সিসিটিভি কেটে গেছে। আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করিনা- “কাকে ভোট দিয়েছ? এই ইভিএমে একটা ভোটও ওদের থাকার কথা নয়। সব মার্কামারা ছিলো।“ উনি চেঁচিয়ে বলেন যেন ওনাকে আগেই কেউ শিখিয়েছে বলতে-“তুমি নিজেও মেয়ের বিরুদ্ধে নিজেই ভোট দিয়েছ? এই সিটে কনটেস্ট হয়? আমাকে বোকা বুঝিও না। আর হাঁকডাক কোরো না । বাকি সব জিতেছে, তোমার মেয়ে বাদে।“
আজ জলার বুজোনো জায়গায় বারো তলা বাড়ি কাঁপছে খুব। ওদিকে অটিস্টিক বাচ্চাদের স্কুলে বোমা পড়েছে।
আজ স্কুল ছুটি। কাল আবার এই ওয়ার্ডে বনধ। ভোট পুনর্গণনা না হওয়া অবধি ইস্কুল খুলবে না।
আগুন নেভেনি ইস্কুলে। শোনা যাচ্ছে যারা শেষমেষ জিতবে তারাই নাকি আবার ভাঙা ইস্কুল নতুন করে দেবে।
বানানবিধি ও মতামত লেখকের নিজস্ব
Tags: গল্প, গল্প হলো কি না, তন্বী মুখোপাধ্যায়
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।