মহা সমস্যায় পড়েছেন মিস্টার রায় । নানা দিক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভেবে দেখেছেন । সমাধানের দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না কিছুতেই ।
মনমরা হয়ে আছে ছোট্ট তুলি সোনা , মিস্টার রায়ের আদরের মেয়ে । কদিন ধরে ছবি আঁকছে না , খেলছে না , হাসছে না , কাঁদছে না , মুখেও কিছু তুলছে না । এভাবে চললে বাঁচবে কী করে ? যাকে বলা যায় মহা বিপত্তি ।
বিপত্তির উৎপত্তি সেদিন সম্ভ্রান্ত এক রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে । এসি শোভিত রেস্টুরেন্টের খাদ্য সম্ভারের মূল্য তালিকা দেখলে সাধারণ মধ্যবিত্তের চোখ কপালে উঠে যাবে । হাশি খুশি শৈশব ছড়ানো তুলি কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে আছে ।
অনেক ভেবে মিস্টার রায় ডেকে পাঠালেন ডাক্তার ধরকে , যদি ধরতে পারেন এর কারণ । ডাক্তার ধর মিস্টার রায়ের বিশেষ বন্ধু , আর তুলির প্রিয় ডক্টর আঙ্কেল ।
ডক্টর আঙ্কেলের বিস্তর প্রশ্নস্তর পেরিয়ে তুলির আলতো বুলি ফোটে , ” সেদিন রেস্টুরেন্টে খাওয়ার সময় আস্ত একটা ককরোচ্ গিলে ফেলেছি । ডেভিল ককরোচটা বিরিয়ানির মধ্যেই হাইড করে ছিল । পেটের ভেতর সেটা এখনো খচ্ খচ্ করছে । ”
রায়বাবু সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন , কথাটা ঠিক সত্যি নয় । আসলে সেদিন বিরিয়ানি খাওয়া প্রায় শেষ , ও নাকি প্লেটর কানায় এক টুকরো ককরোচের লেগ দেখতে পেয়েছে । যতই বোঝাই ককরোচের লেগের টুকরো নয় , ওই রকম দেখতে অন্য কিছু । ভবি কিন্তু ভোলবার নয় । ”
তুলির কাতর আর্তি , ” না , ডক্টর আঙ্কেল , সত্যি বলছি ওটা লেগই ছিল। পুরো ককরোচটা সার্টেনলি বিরিয়ানির সঙ্গে গিলে ফেলেছি । ”
গম্ভীর মুখে ডাক্তার ধর বললেন , ” মিস্টার রায় , তুলি সত্যি কথাই বলছে । ওর পেটে ছোট্ট একটা অপারেশন করে ককরোচটা বার করতে হবে । দুদিনের জন্য ওকে ভর্তি করতে হবে আমার নার্সিং হোমে । ”
যুক্তিহীন প্রস্তাব জেনেও কপালে চিন্তার ভাঁজ নিয়ে ডাক্তার ধরের কথায় রাজি হতেই হলো মিস্টার রায়কে।
হাসি খুশির ডালি সাজিয়ে দুদিন পরে ফিরে এলো তুলি । আবার ছবি আঁকছে , খেলছে , হাসছে এটা ওটা খাওয়ার বায়না ধরেছে । মিস্টার রায় বেজায় খুশি ।
খুশি আর পরম স্বস্তির বাতাবরণে একান্তে দুই বন্ধুর কথোপকথন _
মিস্টার রায় , ” সত্যি তুলির পেট কেটে আরশোলা বার করা হলো ? ”
ডাক্তার ধারা , ” খুব কম সময়ের জন্য অজ্ঞান করে অপারেশন টেবিলে তুলিকে তুলে , সার্জিক্যাল ছুরির ডগা বুলিয়ে পেটের এক ইঞ্চি নুনছাল কেটে মেডিকেটেড টেপ লাগিয়ে দিলাম । ”
” আর বেডের পাশে এক ঠ্যাং কাটা একটা আরশোলা ? ”
” ওটা আগেই জোগাড় করে রেখেছিলাম । তুলির জ্ঞান ফিরতেই বললাম _ দ্যাখো তুলিমা , পেটে সেঁধিয়ে থাকা সেই ডেভিল ককরোচ্ বার করে দিয়েছি ! ”
” তাহলে , মিথ্যে অপারেশনের নাটক ? ”
” তুলি আলতো ভাবে একবার পেটে হাত বুলিয়ে নিলো । হাসিতে উদ্ভাসিত হলো ওর মুখ , ওই মিথ্যে অপারেশনের দৌলতেই তো ! তারপর নার্সিং হোমে মানসিক বিশ্রাম দুদিন । ”
[মতামত ও বানানবিধি লেখকের নিজস্ব]
Tags: আসান, গল্প, সুদর্শন মুখোটী
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।