24 Oct

অদৃষ্ট ও চেতনার জলছবি

লিখেছেন:তপন মোদক


পর্ব

সেদিন একটা বিশ্রী ব্যাপার ঘটে গেল । এমনিতেই বাবার অসুস্থতা নিয়ে বাড়িতে একটা তিরতিরে চাপ সবসময়ই আছে তার ওপর ঘটনাটায় আমাদের সবার  একদম দিশেহারা  অবস্থা । বাবা দীর্ঘদিন অসুস্থ । বিছানায় প্রায় আট বছর শুয়ে আছেন । সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়েছিল দুহাজার বারোতে । হাসপাতালে দিন পনেরো কাটিয়ে এসে আর উঠতে পারেননি । প্রথম থেকেই একজন আয়া বাবার দেখাশোনা করতেন । গত বছর থেকে দুজন আয়া আর একজন নার্স রাখতে হয়েছে । নার্স দিনে একবার ঘন্টা খানেকের জন্য আসেন । সবাইকেই একটা আয়া সেন্টার থেকে নেওয়া হয়েছে । তারপর ডাক্তারবাবু । তিনি মোটামুটি সপ্তাহে একবার আসেন । তাছাড়া বাড়াবাড়ি হলেও ওনাকে আবার আসতে হয়। এখন বাবার অবস্থা খুবই খারাপ । বেডসোর হয়ে গেছে । বাবার কষ্ট চোখে দেখা যায় না ।  দুজন আয়া – একজন নার্স – ডাক্তারবাবু  আর বাবাকে দেখতে আসার জন্য কেউ না কেউ রোজই আসছেন – সব মিলিয়ে একটা হাসপাতালের পরিবেশ। শোকটোক আমাদের এখন শিকেয় উঠেছে । আমার স্ত্রী আয়াদের বায়না সামলাতে সামলাতে আর আগত শুভানুধ্যায়ীদের জন্য চা আর জলখাবারের যোগান দিতে দিতে নিজে বিছানায় না শুয়ে পড়ে। আমাকে আর ছেলেকে অফিসটা যেতেই হয় । বাবার একটু এদিক ওদিক হলেই ছুটি নিতে হয়েছে প্রচুর। এর মধ্যেই ঘটনাটা ঘটে গেল । ভাগ্যিস দিনটা ছিল রবিবার । একদিন বাবার ঘরে ঢুকে হঠাৎ চোখে পড়ল ঘরে প্রচুর ঝুল হয়েছে । সিলিংএ – জানলায়- ফ্যানের ওপর । কেন জানিনা মেজাজটা খুব গরম হয়ে গেল । মায়াদি মানে কর্মরতা আয়াকে বললাম, সব সময়েই তো বসে আছেন – বাবার ঘরটা একটু পরিস্কার রাখতে পারেন না – এটাও তো আপনার একটা কাজের মধ্যে পড়ে । এই আয়া ভদ্রমহিলাটি বেশ ভদ্র। কোনও কথা বললেন না । বাবার ঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময় বললেন, দাদা কাল সব পরিষ্কার করে দেব – আপনি চিন্তা করবেন না।  সকালে খবরের কাগজটা পড়ছি – হঠাৎ বাবার ঘর থেকে একটা হুড়মুড় করে শব্দ তার সঙ্গে চিৎকার । পড়িমড়ি করে ছুটে গেলাম বাবার ঘরে । দেখি, চেয়ার ওলটানো – আয়া ভদ্রমহিলা মেঝেতে পড়ে আছেন – ডান হাতটাকে বাম হাত দিয়ে ধরে চিৎকার করছেন – বাবার বিছানার ওপর একটা ঝুলঝাড়ু খুব বাজে ভাবে পড়ে আছে । এক মুহূর্ত লাগল ব্যাপারটা বুঝতে। বুঝলাম আমার কপালেও দুঃখ আছে। ইতিমধ্যে ছেলে বউও এসে গেছে । আমি কেমন যেন হতবম্ব হয়ে গেলাম । ছেলে ব্যাপারটা সামাল দিল । ওনাকে বসিয়ে দিয়ে হাতটা দেখতে লাগল । আমি বাবার বিছানা থেকে ঝুলঝাড়ুটাকে সরালাম । ভাগ্য ভাল যে বাবার গায়ে ওটা পড়েনি। ছেলে ইতিমধ্যে দেখে নিয়েছে ভদ্রমহিলার অন্য কোথাও আঘাত লাগেনি । খালি ডান হাতটা বেঁকে গেছে – যন্ত্রনায় ভদ্রমহিলা কাতরাচ্ছেন আর কেঁপে কেঁপে উঠছেন। দিনটা  রবিবার । ডাক্তার পাওয়া যাবে না। এক্স-রে ক্লিনিকও খোলা নেই । ছেলে ফ্রিজ থেকে বরফ আর ভোলিনি স্প্রে আনতে বলে ভদ্রমহিলাকে অভয় দিতে লাগল, কিচ্ছু হয় নি আপনার – একটু সহ্য করুন এক্ষুনি ঠিক হয়ে যাবে । আমার দিকে ফিরে বলল, বাবা রেডি হও – মনে হচ্ছে ফ্রাকচার – হসপিটালে  নিয়ে যেতে হবে। হাসপাতালের নাম শুনে ভদ্রমহিলা আরও জোরে চিৎকার করতে লাগলেন । কান্না থেকে যেটুকু বোঝা গেল, উনি হাসপাতালে কিছুতেই যাবেন না । ইতিমধ্যে বউ ফ্রিজ থেকে বরফ আর একটা ভোলিনি জেল নিয়ে এসেছে । ছেলে ওনার হাতে বরফ ঘষতে ঘষতে মাকে অর্ডার করল, একটা ক্রেপ ব্যান্ডেজ আর প্যারাসিটামল ট্যাবলেট। আমি বউকে বললাম, তুমি থাকো – আমি দেখছি। এই সব করতে করতে বেশ বেলা হয়ে গেল । সকালের জলখাবারের কথা কারোরই মনে নেই। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আশেপাশে বাড়িরও কয়েকজন জমা হয়েছে । প্রচুর সাজেসান আসতে লাগল । ছেলে ওসব পাত্তা না দিয়ে ভদ্রমহিলার হাতে ক্রেপ ব্যাণ্ডেজ জড়িয়ে দিয়েছে। ওর দুজন করিৎকর্মা বন্ধুও এসে গেছে। তারা একটা টোটো যোগাড় করে ভদ্রমহিলাকে বলল, আপনি তো এখন একটু সামলে নিয়েছেন, এখন আপনাকে বাড়ি দিয়ে আসছি – কাল সকালে আমরাই আপনার এক্স-রে করে হাড়ের ডাক্তারকে দেখিয়ে দেবো। ভদ্রমহিলা একটু শান্ত হল মনে হল । তারপর ছেলের বন্ধুরা ভদ্রমহিলাকে ধরাধরি করে টোটোতে তুলে নিয়ে চলে গেল। যাবার সময়ও ভদ্রমহিলার মুখে যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট । সেদিনকার মত আয়ার ব্যাপারটা মিটে গেলেও এরপর অসুস্থ বাবাকে নিয়ে কি হবে। পরের আয়া আসতে সেই সন্ধ্যে সাতটা। এতক্ষণ বাবাকে  কে দেখাশোনা করবে । দীর্ঘদিন বাবার ব্যাপারে আমরা আয়ানির্ভর। বাবার ওষুধপত্র নার্স মেয়েটি আয়াদের বুঝিয়ে দিয়ে যায় । আমরা কেউ জানি না । তাহলে উপায়। ইতিমধ্যে বউ আয়া সেন্টারে ফোন করে বিস্তারিত জানিয়েছে । আয়া সেন্টার আপাতত নার্স মেয়েটিকেই পাঠাচ্ছে – রাতের আয়া আসা পর্যন্ত থাকবে – কাল আয়া সেন্টার অন্য আয়া দেবে । এদিকের ব্যাপারটা মোটামুটি সামাল দেওয়া গেল । সমস্ত ব্যাপারটাতে আমার ভূমিকা নীরব দর্শকের । কিন্তু আমি জানি বিষয়টা এখানেই শেষ নয়। সেটাই সত্য হল । বউ আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল । কেন আমি আয়াকে ঘরের ঝুল ঝাড়ার কথা বলেছি । ছেলে ব্যাপারটা জানত না । ও আমার দিকে একবার তাকিয়ে মা’কে দাবড়ে দিল । তখনকার মত আক্রমণ স্থগিত হলেও – আমি জানি এখানেই এর শেষ নয়।

 

পর্ব 

আয়া সেন্টার এত ঘন ঘন আয়া পাল্টায় যে তাদের সঙ্গে বিশেষ ঘনিষ্টতা গড়ে ওঠে না। কেবল নামটাই মনে রাখি। মোটামুটি স্বামী পরিত্যক্তা বা দরিদ্র বিধবা বা তিনকুলে কেউ নেই – এই রকম মহিলারাই আয়া সেন্টার থেকে আসে । মায়াদের বাড়ি কোথায় বা বাড়িতে কে কে আছে – এখবর আমার বউ’এরও জানা নেই । পাড়াটা জানে । কিন্তু সে তো বিশাল পাড়া । আমাদের শহরের শেষ প্রান্তে হাই রোডের কাছে একটা জবরদখল বস্তি । সেখানে কাউকে খুঁজে বার করা মুশকিল । বিকালের দিকে মায়ার খোঁজখবর নিতে যাবার কথা উল্লেখ করতেই বউ ঝাঁঝিয়ে উঠল। বলল, অত দরদ দেখানোর প্রয়োজন নেই – অপরাধ করেছ – এখন চুপচাপ বসে থাকো – যা করার ছেলে করবে। সত্যি বলতে কি একটা গিল্টি ফিলিংস মাথার মধ্যে ঘুরছিল । কেন যে ওকে ঝুল ঝাড়ার কথা বললাম !  পরের দিন মায়ার বদলে অন্য আয়া সকাল বেলাতেই চলে এল । বলার মত ব্যাপার হল এর নামও মায়া । আয়া সেন্টার আয়াদের আধার কার্ড – ভোটার কার্ড জমা রাখে। থানা থেকে এরকমই নাকি বলা আছে । সেজন্য আমরা তাদের অত জিজ্ঞাসাবাদ করিনা । আমার আর ছেলের অফিস আছে । ছেলে বন্ধুদের দায়িত্ব দিয়ে অফিস চলে গেল । আমিও রোজকার মত ঘন্টা খানেক বাদে বেরিয়ে গেলাম । অফিসে কলিগদের ঘটনাটা জানালাম। ব্রতীন আমাদের কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা । সে যা বলল তাতে আমার বেশ ভয় ধরে গেল । আয়ার চিকিৎসার খরচ আর ক্ষতিপূরণ ছাড়াও – যতদিন না কাজ করতে পারবে তাকে টেনে যেতে হবে। এমনিতেই আয়া-নার্স-ডাক্তার-ওষুধ ইত্যাদি খরচ নিয়ে আমি নাজেহাল – তার ওপর ব্রতীন যা শোনালো – তাতে তো বাপ-ছেলের মাস মাইনেতে কুলোবে না । আবার ওই কথাটা মনে পড়ল। কেন যে ঘর পরিস্কার করতে – ঝুল ঝাড়তে বললাম ! দুপুরে ক্যান্টিনে সুনীলদা দাঁত খুঁটতে খুঁটতে বলল, মিত্তির- তুমিতো বেশ ঝামেলায় পড়ে গেলে – তবে ব্রতীনের কথায় অত গুরুত্ব দিও না – পরিস্কার অস্বীকার করবে – তুমি কিছুই বলোনি – ও সব আয়া-টায়াদের আমার জানা আছে – ফাঁকিবাজ – তোমার বাবা জল জল করে হেদিয়ে মরবে আর ওরা বসে বসে ঘুমোবে । সুনীলদা অন্য ইউনিয়ন করে । আমরা খুব একটা মিশি না – তবে কেন জানি না আমাকে একটু প্রেফার করে – সেটা অনেক বারই প্রমাণ পেয়েছি । সুনীলদার কথায় খানিকটা মনে বল পেলাম । সন্ধ্যায় বাড়ি গিয়ে বউ’এর কাছে শুনলাম – এক্স-রে, ডাক্তার দেখানো হয়ে গেছে – হাতের একটা হাড় তিন টুকরো হয়ে গেছে – ইমিডিয়েট অপারেসান করাতে হবে । ছেলের বন্ধুরা ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছে – কম খরচের একটা অপারেসান আছে – হাজার পনেরো টাকা খরচ – সেক্ষেত্রে হাতটা চিরকাল বেঁকে থাকবে – কাজ করতে পারবে কিনা সন্দেহ আছে । আর একটা অপারেসান – প্লেট বসিয়ে – যেটা লাখ দুয়েক টাকার মামলা – হাতটা ঠিক হয়ে যাবে । আমার মাথাটা ঝিমঝিম করতে লাগল। বউকে বললাম, ছেলে কি বলছে ? ছেলে এখনও অফিস থেকে ফেরেনি । ও নিশ্চয় বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলেছে । ছেলেটা একদমই প্রাক্টিক্যাল নয়। ভাল চাকরি করে । বিয়ে-থা করেনি । ব্রতীনের কথা যদি বলি ও তাতেই রাজি হয়ে যাবে । অপারেসানের খরচ যে দিতে হবে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। আমার বাড়িতেই দুর্ঘটনাটা ঘটেছে – এবং ওর ডিউটি আওয়ারসের মধ্যেই। আর আমি মনে মনে প্রস্তুতও আছি । এখন প্রশ্নটা হল হাজার পনেরো না দু’লাখ।

 

পর্ব

রাতে বাড়িতে একটা বড়সড় মিটিং হয়ে গেল । যদিও অমীমাংসিত । কোনও সিদ্ধান্তে আসা যায়নি । আমি – আমার ছেলে – ছেলের সেই দুই বন্ধু – আর অবশ্যই আমার বউ। বাবার অসুস্থতা ছাড়া আমাদের জীবন মোটামুটি সরলরেখায় চলে এসেছে । কখনো কোনরকম ঝামেলা-ঝঞ্ঝাটের মধ্য দিয়ে যেতে হয়নি। এই ঘটনাটায় আমরা সবাই বেশ ঘাবড়ে গেছি । আয়া ভদ্রমহিলাটির সেই চিৎকার আর  চোখেমুখে যন্ত্রনার ছাপও ভুলতে পারছি না। মায়াকে বাড়িতে দিয়ে আসার সময় ছেলের বন্ধুরা ওর বাড়ি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে এসেছে । কোনও রকম মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই । দূর সম্পর্কের এক বোনপো আর মায়া দুজনের সংসার । বোনপোটি এক ঘরামীর শাগরেদি করে । মায়া কাজে বেরোনোর সময় নিজের আর বোনপোর জন্য রান্না করে আসে। নিজের রান্নাটা টিফিন কৌটো করে পেশেন্টের বাড়িতে নিয়ে এসে দুপুরে খায়। বোনপোটি আজ মাসির সঙ্গে সঙ্গে ছিল – এক্স-রে বা ডাক্তার দেখানোর সময় ও কথাও বলেছে । মাসিকে ভালবাসে। মাসির কষ্টে বেশ ভেঙ্গে পড়েছে । ছেলে বলল, অপারেসানের সব দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে – হাসপাতালে খরচ অনেক কম – কিন্তু সময় সাপেক্ষ – অপারেসানটা যত তাড়াতাড়ি করানো যায় সেটা দেখতে হবে – বাবা তুমি কি বলছ – আর কোন অপারেসানটা করানো হবে। ছেলে আমার কোর্টে বল ঠেলে দিল। এর মধ্যে ছেলের একজন বন্ধু বলল, মেশোমসাই ওদের কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী কার্ডটাও করানো নেই। তাহলে তো সোনায় সোহাগা। আমি বললাম, দেখ-দুলাখ টাকা এই মুহূর্তে খরচা করা বেশ চাপের- বুঝিয়ে সুজিয়ে যদি ছোট অপারেসানটা করানো যায় – সেটা দেখতে হবে । ছেলের বন্ধুটি বলল, আপনি কিচ্ছু চিন্তা করবেন না মেসোমশাই – ওই হাজার পনেরোতেই করিয়ে দেবো – অপারেসান করানো হচ্ছে ব্যাস – কি অপারেসান – অত বলারও দরকার নেই। ছেলে বলল, ডাক্তার যখন বলেছে – এতে হাতটা ঠিক হবেনা – কোনও দিন ওই হাতে আর কাজ করতে পারবে না – তখন ওই অপারেসানটা  করানোর ভাবনাটাই আমাদের পক্ষে ঠিক হবে না। তারপর বন্ধুদের বলল, তোরা এখন বাড়ি যা – একটু ভাবতে দে – কাল সকালে নার্সিং হোমে ভর্তি করার ব্যাপার তো – কাল আমি অফিস যাছি না – আমি থাকব। যাবার সময় ছেলের যে বন্ধুটি এতক্ষণ কোনও কথা বলেনি সে বলল, আর একটা ব্যাপার সন্তুদা, ওই আয়াদিদির পাড়াতেই থাকে – একটা গুণ্ডা মত ছেলে – বিলটু নাম – সে বলল, হাত ভাঙার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে – কম পক্ষে দশ লাখ টাকা । ছেলের অন্য বন্ধুটি বলল, ছাড় তো – কেন বেকার কথা বলছিস – অনেকে অনেক রকম বলবে – ওসব পাত্তা দেবার দরকার নেই – এই সুযোগে অনেকে মাল কামানোর ধান্দা করবে – একবার নরম হলেই ব্যাস – ঘাড়ে চেপে বসবে । তারপর ছেলেকে বলল, একদম ঘাবড়াস না সন্তু – ওসব ফাঁকা মাল – কিচ্ছু করতে পারবে না – বেশি তড়পালে – নার্সিং হোমেই ভর্তি করবি না – সোজা হাসপাতালে ফেলে দিয়ে আসবি- তারপর দেখা যাবে। ওরা তো এরপর চলে গেল কিন্তু আমাদের  শরীরে কাঁপন ধরিয়ে দিয়ে গেল । এরপর আমিও ছেলেকে অফিসে ব্রতীন যা যা বলেছে – একএক করে বলে ফেললাম । ছেলে বলল, ব্রতীনকাকু তো ঠিকই বলেছে – এরপর আয়াদিদির চলবে কি ভাবে – যতদিন না হাত ঠিক হয় ততদিন ওনার মাইনেটা আমাদের দেওয়া উচিত। এইবার বউ মুখ খুলল, শুধু মাইনে কেন – বাপ-ব্যাটা মিলে ওর সারা জীবনের দায়িত্ব নিয়ে নাও – আর বোনপোটাও বাদ থাকে কেন – তারও ভরণপোষণের দায়িত্ব – একেবারে বাড়িতে নিয়ে এসে তোল দুজনকে- তোর বাপেরও সুবিধা হয়।  ছেলে মাকে ঠাণ্ডা করার জন্য বলল, দেখো মা – এই সময় মাথা গরম করলে চলবে না – পরিস্থিতিটা বুঝতে পারছো । পরিস্থিতি আর বোঝার কি আছে – তোর বাপই তো গণ্ডগোলটা পাকালো – বাবাকে দেখতে যাবার নাম করে আয়াদের সঙ্গে ফুসুর ফুসুর করে – আমি কিছু বুঝিনা , গলা সপ্তমে চড়িয়ে বউ ঝাঁঝিয়ে উঠল। পরিস্থিতি আমার আয়ত্বের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে – এতদিন যা করে এসেছি – ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। একটা সিগারেট খেয়ে আবার ঘরে এলাম – দেখলাম বউ কাঁদছে । ছেলে কি বলেছে জানিনা । ছেলে বলল, বাবা-  যাই হোক না কেন পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে – যা হবার কাল হবে । ঘড়িতে দেখলাম রাত একটা দশ। রাতের খাওয়া এখনও বাকি। আজ সারাদিন বাবাকে দেখতে যাওয়া দূরে থাক – বাবার কথা একবারও মনে পড়েনি।

 

পর্ব  

পরদিন সকালে ঘুম ভাঙল একটা চেঁচামেচিতে। আজ ছেলে অফিস যাবে না। আমিও অফিসটা ড্রপ করব ভেবে রেখেছি – পরিস্থিতি বুঝে ঠিক করবো। গোলমালটা কোথা থেকে আসছে বুঝতে পারছিলাম না । হঠাৎ আমাদের বাড়ির বেল বাজল – তার সঙ্গে দরজায় ধাক্কার শব্দ। খুব বিশ্রি ভাবে । আমি উঠেই আগে ছেলেকে ডাকলাম – গোলমালের শব্দে ছেলেও উঠে পড়েছে দেখলাম। ছেলে বলল, আমি দেখছি – তুমি কোনও কথা বলবে না । দরজা খুলতেই একটি মাঝ বয়সী ছেলে আমার নাম ধরে চিৎকার করে বলল, বাইরে আসুন। প্রায় গোটা পনেরো ছেলে বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে – মুখ চোখের ভাব ভাল নয়। ছেলে কথা শুরু করল, কি ব্যাপার – আপনারা কারা – এরকম অভদ্র ভাবে চেঁচামাচি করছো কেন । একটি রাফ টাইপের ছেলে এগিয়ে এল, এই এই বেশি ভদ্র ভদ্র করবেন না – ডায়রেক্ট কাজের কথায় চলে আসছি – পরশু মায়াদিকে ফেলে হাত ভেঙে দিয়েছেন – নাম কা ওয়াস্তে – এক্স-রে করে বাড়িতে ফেলে দিয়ে এসেছেন । ছেলে বলল, মোটেই না – ডাক্তার দেখানো হয়েছে – আজ নার্সিং হোমে ভর্তি করার কথা – অপারেসানের জন্য – আর আপনারা কারা – মায়াদি কি বলেছে যে তাকে আমরা ফেলে দিয়ে এসেছি – আর আপনি কে ? আরে আমি বিলটু- বিলটু – পূবের পাড়ায় সবাই আমাকে চেনে – তুমিও আজ থেকে আমাকে চিনে যাবে, ছেলেটি – যার নাম বিলটু – পুরো হিন্দি সিনেমার কায়দায় ছেলেকে চমকাবার চেষ্টা করল। ছেলে বলল, ও তাহলে তুমিই কাল আমার বন্ধুকে চমকেছিলে । পাড়ার জানলাগুলো আধখোলা – সবাই আড়াল থেকে মজা দেখছে । কেউ এগিয়ে আসছে না। পাড়ায় কারো কোনও বিপদ আপদ  হলে আমি এগিয়ে যাই – ছেলে তো কারো কিছু হলে আগ বাড়িয়ে দায়িত্ব নিয়ে নেয় । যদিও ছেলের ঘনিষ্ট বন্ধুরা একটু দূরে থাকে । তারা নিশ্চয়ই এতক্ষণ খবর পেয়ে গেছে । ছেলে, বলল তোমরা কি চাইছ বল । বিলটু চিৎকার করে উঠল, ঘোঁতনা হিসেবটা দে । যার নাম ঘোঁতনা সে একটা কাগজ বার করে বলল, এই যে – মায়ামাসি যদি আরও কুড়ি বছর বাঁচে তাহলে দিনে তিনশ টাকা করে মাইনে হলে মোট কুড়ি বছরে সাত হাজার তিনশ দিন তাহলে – মাইনে হল একুশ লক্ষ নব্বই হাজার টাকা – আর অপারেসানের জন্য দু লাখ টাকা – আর একটা কি যেন – হ্যাঁ – এই তো – ডান হাতের ক্ষতিপূরণ দশ লক্ষ দশ হাজার টাকা – তাহলে মোট হল  চৌত্রিশ লক্ষ টাকা ।  আমাদের অফিসে একবার লিফট ছিঁড়ে পড়ে যাওয়ার জন্য লিফট্ম্যান বেঁচে গেলেও হাত পা ভেঙ্গে গেছিলো – আমাদের ইউনিয়নের নেতা ব্রতীন ঠিক এই ভাবেই হিসেব দিয়েছিল ম্যানেজমেন্টের কাছে ।  বিলটু বলল, এই টাকাটা আমাদের দিয়ে দিন আমরা এক্ষুনি চলে যাব। আমার মাথা ঘুরতে লাগল। কখন বউ বাইরে এসেছিল খেয়াল নেই – আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে ভেতরে চলে গেল। ছেলে বলল আমরা মায়াদির সঙ্গে কথা বলে যা করার করব ।  কেস এখন আর মায়াদির হাতে নেই – পাড়ার ভালমন্দ চালবেচাল – উল্টোসিধে সব দেখার দায়িত্ব এখন এই বিলটুর হাতে, বিলটু বেশ দাপটের সঙ্গে বলে চলে, ঘরে ঢুকতে দিন – টেবিলে বসে চা খেতে খেতে – কি বলে – নিগোসিয়েসন করুন  কিছু কমতে পারে – কি বলেন কাকু । বলেই আমার দিকে তাকিয়ে  খ্যাঁক খ্যাঁক করে হাসতে লাগল। ইতিমধ্যে ছেলের এক বন্ধু চলে এসেছে । ছেলে একটু সাহস পেয়েছে মনে হল। ছেলে বলল, তোমরা এইভাবে মস্তানি করতে পারো না – আমি এক্ষুনি পুলিশকে ফোন করছি । তারপর বন্ধুকে বলল,  এই অমিত তুই একটু মাধবদাকে ফোন করতো । মাধব পাল আমাদের ওয়ার্ডের কমিশনার । একটু মিনমনে টাইপের । বিলটুকে সিধে করা ওর কম্মো নয় । বরং পুলিশ এলে কিছু সুরাহা হতে পারে । বিলটু বলল, ও সব পুলিশ ফুলিশ আমাদের দেখিও না – ভাবছ টাকাটা আমরা একা খাব – ওখানেও ভাগ যাবে – আমরা নিগোসিয়েসন করে চলে যাবার পর পুলিশ এসে লাঠি ঘোরাবে । আমি আর থাকতে পারলাম না । বললাম, দেখো বাবা বিলটু – আমরা ছাপোষা মানুষ – অত টাকা পাবো কোথায়। এই তো কাকু – আপনি ভালভাবে ভদ্দরলোকের মত কথা বলছেন – বললাম তো – টেবিলে বসুন – আন্টিকে চা করতে বলুন – কমে যাবে – আমি কথা দিচ্ছি – অনেকটাই কমে যাবে- অপারেসানটা আমরা না হয় হাসপাতাল থেকে করিয়ে দেবো – ওখানেই তো আপনার দুলাখ টাকা কমে গেল, বিলটু কথাগুলো বলেই আমাকে ঠেলে ভেতরে ঢুকতে গেল। এইবার ছেলে রুখে দাঁড়াল । দরজার কাছ থেকে বিলটুকে ঠেলে দিয়ে চিৎকার করে উঠল, দেখি কার কত বড়  সাহস আমাদের ঘরে ঢোকে – এটা বস্তি না – ভদ্রলোকের পাড়া । একটা ঝটাপটি লেগে গেল । বিলটু প্রথমে বুঝতে পারেনি এইভাবে বাধাটা আসবে । প্রথম ঝটকায় বিলটু রাস্তায় পড়ে গেল । বিলটুর সাগরেদরা আমার ছেলে আর ওর বন্ধুর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল । আমি কি করব বুঝতে বুঝতেই অনেক কিছু ঘটে গেল । আমার বউ ঘর থেকে ছুটে বেরিয়ে আমার ছেলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল । সম্ভবত মহিলা দেখে ওরা একটু সংযত হয়ে গেল । শুরু হয়ে গেল বিলটু আর ওর সাগরেদদের অকথ্য ভাষায় চিৎকার । এইসব গণ্ডগোল নিজের নিয়মেই এক সময় শেষ হয়। এখানেও তার অন্যথা হল না । বিলটু একটু পিছু হটে গেল । তারপর শাঁসাতে লাগল, দেখে নেব – কেমন টাকা না দিয়ে থাকতে পারেন – নিগোসিয়েসন আর হবে না – পুরো টাকাটাই দিতে হবে । ইতিমধ্যে ছেলে উঠে দাঁড়িয়েছে । ওর টি শার্টটা ছিঁড়ে গেছে। ঠোঁটের পাশ থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। সেই অবস্থায় ছেলে বলতে লাগল, দু টাকার ফুটো মস্তান – ফোট – ফের যদি এ পাড়ায় দেখি জ্যান্ত ফিরবি না । ছেলে কোথা থেকে এত সাহস পেল জানিনা । এমনিতে ও বেশ নিরীহ টাইপের । সে যাই হোক ছেলের এই কথাটা শুনে বিলটুরা পিছিয়ে গেল । যাবার সময় বলে গেল আবার আসবে – আমরা যেন টাকাটা রেডি রাখি।

 

আবার পর্ব  

পরদিন সকালেই ছেলে আর ছেলের দুই বন্ধু কথামত টোটো ডেকে বেরিয়ে পড়ল । তার আগেই ছেলে নার্সিং হোমের সঙ্গে কথা বলে নিয়েছে । ঠিক হয়েছে হাতে প্লেট বসিয়েই অপারেসান হবে । প্রথমে দশ হাজার টাকা জমা দিতে হবে নার্সিং হোমে । আমি অফিস গিয়ে একটা লোনের ব্যবস্থা করব। ছেলেও কিছুটা দেবে। ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে ছেলে ফিরে এল। আমি তখন অফিস যাবার জন্য জুতোটা পায়ে গলাচ্ছি। ছেলেকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লাম। ছেলের মুখে একরাশ উৎকণ্ঠা – বলল, ভেতরে চল – কথা আছে। ছেলে যা বলল তা হল, ওরা আয়া ভদ্রমহিলার বাড়ি গিয়ে দেখে তালা বন্ধ । আশেপাশে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে ভদ্রমহিলা বোনপোকে নিয়ে বেগমপুরে গেছে কোনও এক ওঝার কাছে । তিনি নাকি শেকড়-বাকড় দিয়ে হাত বেঁধে দেবে – তাতেই হাত ভাল হয়ে যাবে। আমি কিছুক্ষণ কোনও কথা বলতে পারলাম না । ঘটনার মোড় কোনদিকে নিচ্ছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না – আমরা কি নিস্কৃতি পেয়ে গেলাম না আরও কোনও বড় ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে চলেছি ! ছেলের এক বন্ধু নাকি বলেছে, বেঁচে গেলি । সত্যিই কি বেঁচে গেলাম । ছেলে বলল, এখন আমাদের আর কিছু করার নেই – ঘটনা যেমন যেমন এগোবে – সেরকম ডিসিসান নেবো । আমি বললাম, তোর বন্ধুকে কে যেন ক্ষতিপূরণের কথা বলেছিল – সেরকম কাউকে দেখলি । ছেলে বলল, না না ওরকম কাউকে পাইনি – কেউ কিছু বলেনি আমাদের – যাও তুমি অফিস চলে যাও – আমি আর বেরোবো না। বউ বলল, তোমাকেও আর অফিস যেতে হবে না – বরং বিকালের দিকে দুজনে ওর বাড়ি গিয়ে ব্যাপারটা ঠিকমত বুঝে এস – সন্তু তো বাড়িটা দেখে এসেছে । বউ’এর কথা আমার বেশ যুক্তিযুক্ত মনে হল। ছেলেও রাজি হল – বলল, নার্সিং হোমে জমা দেবার জন্য টাকাটা তো রইল –  ব্যাপারটা যদি এখানেই মিটে যায় – তাহলে টাকাটা ওনাকে দিয়ে আসব।

বিকালে আমি আর ছেলে সেই টোটোতে চেপে পূবের পাড়ার দিকে রওয়ানা দিলাম । এদিকটা অনেক আগে আমার আসাযাওয়া ছিল । আগে এলাকাটা পঞ্চায়েতের মধ্যে ছিল । এখন আমাদের মিউনিসিপ্যালিটির মধ্যে । আগে চারিদিকে জঙ্গলের মত ছিল । আমার সাইকেল শেখার প্রথম দিকে এখানে রোজ আসতাম। সোজা দিল্লী রোডে গিয়ে রাস্তাটা মিশেছে। দিল্লি রোডের কাছাকাছিই একটা বিশাল বস্তি । টোটো মায়ার বাড়ির একেবারে সামনে থামল। ঠিক সামনে নয় – দুটো বাড়ি একটা গোয়াল পেরিয়ে মায়ার ঘর। দর্মা দেওয়া টালির চাল । মায়া আমাদের দুজনকে দেখে বেরিয়ে এল । হাতে দেখলাম একটা কাঠের লম্বা টুকরো কিছু শেকড় দিয়ে জড়ানো – মুখে যন্ত্রণার কোনও লেশ নেই । আমাদের দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে বলল, আসুন কাকু – বাবুও এসেছ । তারপর আমার বাবার আর বউ’এর খবর নিয়ে একটা টুল আর প্লাস্টিকের চেয়ার বাইরে বার করে উঠোনে বসতে দিল । ছেলে বলল, পিসি হাত কেমন আছে – এখনও যন্ত্রণা আছে । না বাবু – একটু ব্যাথা মত আছে – ও নিয়ে চিন্তা কোরো না – কদিনেই ভাল হয়ে যাবে, হাসি মুখেই মায়া উত্তর দিল । ছেলে এটা সেটা কথা বলতে লাগল । বোনপোর কথা জিজ্ঞেস করল। সে এখন বাড়িতে নেই । ছেলের কথার মাঝে আমি বাড়িটা দেখতে লাগলাম – এক চিলতে উঠোনে – বেগুন গাছ – লঙ্কা গাছ – আরও কয়েকটা না জানা গাছ বেশ যত্ন করে লাগানো । একটা লাউ গাছ টালির চালে উঠেছে। কয়েকটা নধর লাউ আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসছে । এবার মায়ার দিকে চোখ গেল – মাঝ বয়সী – চাপা গায়ের রঙ হলেও চেহারার মধ্যে একটা চোরা আভিজাত্য আছে । এনার অতীত আমার জানা নেই। এই ঘিঞ্জি বস্তিতে যারা বাস করছে তাদের প্রত্যেকের এক একটা ইতিহাস আছে । মায়াকে আমি সেভাবে কোনও দিন দেখিনি । ওর বংশপরিচয় – কোথা থেকে এসেছে – বিবাহিত না অবিবাহিত – বিধবা না সধবা – আমার কিচ্ছু জানা নেই । এখন মনে হচ্ছে কাল বউ যে নোংরা ইঙ্গিতটা দিল তার পেছনে কারণ যথেষ্ট । এবার আমি মুখ খুললাম। বললাম, তাহলে সুস্থ হয়ে আবার আমাদের বাড়িতে এসো – যদিও জানি না বাবা কতদিন আর আছেন । না কাকু – এই কাজ আর করব না ভাবছি – বোনপোটাও বারণ করছে – বলছে ওর রোজগারেই দুজনের চলে যাবে – তাছাড়া কাকু – আর মৃত্যু দেখতে আমার ভাল লাগছে না – আয়া সেন্টার থেকে আমাকে এই কাজগুলোই দেয় – যাদের আর কোনও আশা নেই – তবুও যদি সেরকম পেসেন্ট দিত – যাকে সুস্থ করে তুললাম – একটা আনন্দ পাওয়া যেত – কাজটার মধ্যে একটা মজা থাকত , মায়া যেন একটা ঘোরের মধ্যে কথাগুলো বলতে লাগল। হঠাৎ ওর সম্বিত ফিরলো, এই দেখুন আমিই খালি বকবক করে যাচ্ছি – আপনাদের জন্য একটু চা করি । ছেলে আমি দুজনেই বাধা দিলাম । মায়াও আর জোর করল না । আমি সেই গিল্টি কনসাস থেকে বললাম, দেখো মায়া – আমি যদি সেদিন তোমায় ঝুল পরিষ্কার করার কথা না বলতাম তাহলে তো এই দুর্ঘটনাটা হত না । আমার কথা মাঝপথে থামিয়ে মায়া বলল, সেকি বলছেন কাকু – ওটা তো আমার ডিউটি – একবার কেন হাজার বার বলবেন – পেশেন্টের ঘর পরিষ্কার রাখা – বিছানা পরিষ্কার রাখা আমাদের কাজের মধ্যে পড়ে – অদৃষ্ট – অদৃষ্ট এড়ানো যায় না – কাজে ফাঁকি দিয়েছিলাম – তাই ভগবান এমন শাস্তিটা দিল – ও নিয়ে আপনি কিছু মন খারাপ করবেন না । ছেলে বলল, পিসি যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলছি – আজকে আমাদের একটু ফলটল আনা উচিৎ ছিল – একদম খেয়াল করিনি – যদি কিছু টাকা রাখেন – আমাদের ভাল লাগবে। মায়া সঙ্গে সঙ্গে বাধা দিয়ে উঠল , একি বলছ বাবু – আমার জন্য তোমাদের কত খরচ হল – হাড়ের ছবি তোলা – তারপর ডাক্তার দেখানো – গাড়ি করে বাড়িতে দিয়ে যাওয়া – ছিঃ ছিঃ – এরপর আবার টাকা নিলে অধম্ম হবে – তারপর তোমার দাদুর চিকিৎসার জন্য কত টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে বলত – ও টাকা তুমি তোমার দাদুর জন্য খরচ কোরো। তারপর বলল, আপনাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে কাকু – বিকেল বিকেল বেরিয়ে পড়ুন – দাঁড়ান একটু – আপনাদের একটা জিনিষ দিই – এই প্রথমবার আমার বাড়ি এসেছেন । এরপর মায়া বেড়ার গায়ে রাখা একটা আঁকশি দিয়ে বাঁ হাতে করে টালির চালে একটা লাউকে টেনে আনলো । ছেলেকে বলল, বাবু ওইখান থেকে কাটারিটা নাও তো – তোমার হাত চলে যাবে – লাউটাকে কেটে নামাও।

এরপর আমরা বাপবেটা টোটো চেপে বাড়ির দিকে যেতে লাগলাম। ছেলের পকেটে সেই দশ হাজার টাকা আর আমার কোলে একটা নধর লাউ। লাউটা তখনও আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে ।

Tags: , ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ