24 Oct

পদাধিকার

লিখেছেন:দিলীপ কুমার ঘোষ


একটা উচাটন আজ কোথাও নড়তে দেয়নি, বাড়িতে বেঁধে রেখে দিয়েছে। লিভিং রুমের বাইরে বেরিয়ে, সকাল থেকে কতবার সে এসে দাঁড়িয়েছে ড্রয়িং স্পেসে! সেখান থেকে প্রতীক্ষাকাতর চোখ বাড়ির গেট ছাপিয়ে চলে গেছে রাস্তায়। সারাদিন অপেক্ষায় থেকেছে এক বা একাধিক ব্যক্তির আগমনের। শীতের বেলা শেষ হয়ে এল। ক্ষণস্থায়ী সন্ধ্যা পেরিয়ে নামছে রাত। কেউ কি আর আসবে না তাহলে?

কিন্তু… এর আগে কই কখনও তো এমনটা হয়নি। অঙ্কে সে চিরকালই দড়। সে অঙ্ক কষেছে অথচ অঙ্কের উত্তর মেলেনি, এমন হয়নি কখনও। আজ কেন এমন হল? মিলছে না, কিছুতেই অঙ্ক মেলাতে পারছে না প্রবাল। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তার অস্বস্তিও বাড়ছে। হাতে সময় খুব কম। অথচ তার মনে হচ্ছে সে ঠিকমতো ঘুঁটি-ই সাজিয়ে উঠতে পারেনি। কালকের দ্যূতক্রীড়ায় সে কি তাহলে চাল পর্যন্ত দিতে পারবে না! যদি সত্যিই তাই হয়, এতটা গুরুত্বহীন হয়ে কাল সে সভায় থাকবে কী করে?

শ্বেতা কি আগে কিছু অনুমান করেছিল? নাহলে কেনই বা বলবে, এবার বল আর তোমার কোর্টে থাকবে না, দেখো। নতুন করে আর জাল ছড়িয়ো না প্রবাল, এবার জাল গুটিয়ে নাও।

প্রবাল দাঁতে-দাঁত চিপে মনে মনে বলেছিল, মূর্খ নারী, তুমি এর স্বাদ কী বুঝবে! যার বংশের কেউ কোথাও কোনওদিন কোনও সামাজিক কৌলীন্য পায়নি, মর্যাদা পায়নি, সেই বংশের ছেলে হয়ে আমি যখন সমাজের মাথা হয়ে সব ব্যাপারে কলকাঠি নাড়ার সুযোগ পাচ্ছি তখন তা আমি হেলায় ছেড়ে দেব ভেবেছ? নেভার। কভি নেহি। আমি দেখিয়ে দেব জগৎপুর আর প্রবাল সাহার নাম কীভাবে সমার্থক হয়ে ওঠে।

ড্রয়িং রুমে বসে চায়ে সবে প্রথম চুমুক দিয়েছে, এমন সময় বাইরে গেট খোলার আওয়াজ পেয়ে সতর্ক হল প্রবাল।

প্রবাল আছিস, প্রবাল?

প্রায় ছিটকে বেরিয়ে আসার উপক্রম করল প্রবাল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিয়েছে। এত আগ্রহ দেখালে চলবে না! ফিরে চেয়ারে বসে চায়ে দ্বিতীয় চুমুক দিয়ে স্বাভাবিক স্বরে বলল, কে?

আমি বিপ্লব, সঙ্গে নরেনদাও আছে।

ওহ্, তা তোমরা বাইরে কেন? ভিতরে এসো। দরজা খোলা আছে।

খেলা তাহলে শেষ পর্যন্ত শুরু হয়েছে! তার সমীকরণ বুঝতে কখনও ভুল হয় না। ইঙ্গিতপূর্ণ চোখে একবার শ্বেতার দিকে তাকাল প্রবাল। সে-চোখে একই সঙ্গে খেলা করছিল দাবার চাল শুরু করার আগের মুহূর্তের উত্তেজনা আর অঙ্ক মিলে যাওয়ার উল্লাস। শ্বেতা উঠে কিচেনে ঢুকল।

চেয়ারটা ঘুরিয়ে দরজার দিকে মুখ করে বসল প্রবাল। পশ্চিমের মরা আলোয় দরজার বাইরে এক অদ্ভুত আবছায়া তৈরি হয়েছে। সেই ছায়ার পর্দা ঠেলে দুই কুশীলবকে ঢুকতে দেখে প্রবালের হঠাৎ সোফোক্লিসের গ্রীক ট্র্যাজেডির নিয়তির কথা মনে এল।

প্রবাল পার্টি থেকে তোকে কেউ ফোন করেছিল? বসতে বসতে জানতে চাইল বিপ্লব।

পার্টি থেকে ফোন…! কেন? কী ব্যাপারে? প্রবাল যেন আকাশ থেকে পড়ল।

বারোয়ারির নতুন কমিটি গঠন নিয়ে।

ওহ্, তাই বলো! না, কেউ ফোন করেনি। আর সত্যি বলতে কী… ব্যাপারটা নিয়ে আমি এবার মাথাও ঘামাচ্ছি না। আসলে অফিসে খুব চাপ যাচ্ছে ক’দিন। কয়েকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব… তা, তোমরা একটু চা খাবে তো?… শ্বেতা-আ, শুনছ—বিপ্লব আর নরেনদার জন্য দু’কাপ চা বানাও তো।

আরে না, না। আমরা আর চা খাব না। এইমাত্র মোহিতের বাড়ি থেকে চা খেয়ে বেরোচ্ছি। ওর সঙ্গেও তো তোর কোনও কথা হয়নি শুনলুম। নরেনদা কথাগুলো বলার সময় গ্রিলের জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে।

হ্যাঁ, মোহিতের সঙ্গে অনেকদিন দেখা হয়নি। তবে মাঝখানে একদিন কল করেছিল— ওর ছেলের কলেজে অ্যাডমিশনের ব্যাপারে একটা সমস্যা দেখা দেওয়ায়।… উঁহু, বারোয়ারি নিয়ে কোনও কথা হয়নি।

শোন প্রবাল, সুনীল ব্যানার্জীকে বদলে এবার তোকে আমরা প্রেসিডেন্ট করব বলে ঠিক করেছি। একটু থেমে প্রবালের মুখের দিকে তাকায় বিপ্লব। জানতে চায়, তোর কোনও আপত্তি নেই তো?

নরেনদা ধরতাই দেয়, না, না, এতে আর ওর আপত্তির কী আছে? তারপর প্রবালের দিকে ফিরে জানতে চায়, কী বলিস প্রবাল?

ধাতস্থ হতে একটু সময় নেয় প্রবাল। ধাক্কাটা সামলে নিয়ে একটা হালকা হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলে, আমার আপত্তি-অনাপত্তিতে কী যায় আসে! জনগণ যদি চায় তো তাই হবে। সব-ই তো সাধারণ সদস্যদের ইচ্ছা।

বিপ্লব একবার তার মুখের দিকে তাকিয়ে, উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলে, আমরা তাহলে উঠছি।

নরেনদা ড্রয়িং রুমের বাইরে পা রাখার আগে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে, প্রবাল, তাহলে এই কথাই রইল।

প্রবালের মনে হল খেলোয়াড় নয়, তার ভূমিকা এখন দর্শকের, আর তার সামনে দিয়ে কোনও অদৃশ্য প্রতিদ্বন্দ্বী গেম-সেট-ম্যাচ নিয়ে চলে যাচ্ছে।

কিন্তু এত সহজে হারতে শেখেনি প্রবাল। প্ল্যান-এ এভাবে ফেল করেছে তো কী হয়েছে, প্ল্যান-বি, প্ল্যান-সি— এসব তো এখনও তার আস্তিনে আছে!

তবে, সে বুঝল, এবারের লড়াইটা কঠিন। তার চালেই তাকে মাত করতে চাইছে তারই শিবিরের দুই সেনাপতি— দুই ধুরন্ধর কিং মেকার— নরেন বিশ্বাস আর বিপ্লব মিত্র।

মোহিত এবার গুছিয়ে নামছে। নিজের স্বভাবসিদ্ধ ঝোড়ো স্টান্স বদলে ধীরে ধীরে জল মেপে এগোচ্ছে। তবে, মোহিত খুব নিশ্চিন্তে নেই। থাকলে নরেনদা-বিপ্লবের তার কাছে আসার প্রয়োজনই পড়ত না।

দীর্ঘ বারো বছর একইভাবে সহ-সম্পাদকের পদে আটকে থেকে মোহিত বোধহয় এতদিনে বুঝতে পেরেছে ভোটের রাজনীতি আর মনোনয়নের রাজনীতি এক নয়— সম্পূর্ণ আলাদা। একটাতে সংখ্যার জয়, অন্যটাতে আস্থার জয়। আর এই জগৎপুর বারোয়ারিতে আস্থার রাজনীতিকে প্রায় শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে প্রবাল। কিন্তু ন’বছর পর তার এই প্রথম মনে হচ্ছে, শুধু আস্থা নয়, সংখ্যাটাও একটা বড় ফ্যাক্টর এবং সেটা এবারের বারোয়ারি কমিটি নির্বাচনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছে। ঠিক আছে, কালকের সাধারণ সভাই দেখতে পাবে সংখ্যার রাজনীতিতেও প্রবাল সাহা কত বড়মাপের খেলোয়াড়!

দুই

মোহ আর ভালবাসা সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস, বলো প্রবাল?

হঠাৎ!

নাহ্, এতদিন ভাবতাম বারোয়ারি তোমার প্যাশন, ভালবাসা; কিন্তু আজ বুঝতে পারছি সেটা মোহ ছাড়া আর কিছু নয়। আগামীকাল যদি তুমি বারোয়ারির মূল পদে আর না থাকো বারোয়ারি নিয়ে তোমার বিন্দুমাত্র ভাবনা থাকবে না। তোমার মন থেকেই মুছে যাবে বারোয়ারির অস্তিত্ব। তার ভাল-খারাপ নিয়ে তোমার মধ্যে আর কোনও আবেগই থাকবে না।

কিন্তু সেদিন আমার জীবনে আসবে না,ডার্লিং! জগৎপুর বারোয়ারি আর প্রবাল সাহা চিরকাল সমার্থক হয়েই থেকে যাবে। জগৎপুর বারোয়ারি মানেই প্রবাল সাহা আর প্রবাল সাহা মানেই জগৎপুর বারোয়ারি।

এই যে নিজেকে তুমি বারোয়ারির পরিপূরক ভাবছ, নিজেকে ভাবছ নির্বিকল্প, এর দাম কিন্তু একদিন তোমাকে চোকাতে হবে।

দেখো শ্বেতা, যাত্রাপালার বিবেকের ভূমিকা পালন করতে চাও করো, কিন্তু তাতে আমার অবস্থানের কোনও বদল ঘটবে না।

আচ্ছা প্রবাল, পদ তোমাকে কী দেয় বলো তো?

এই দুনিয়ায় পদ-ই তো সবকিছু। আর শোনোনি, চেয়ার মেকস্ এ ম্যান! পদ না থাকলে সেই মানুষের কোনও গুরুত্ব নেই। পদে না থাকা মানুষ তো মনুষ্য পদবাচ্যই নয়।

সেইজন্যই বুঝি শুধু হোমমেকার হওয়ার জন্য তুমি আমাকে গুরুত্ব দাও না, আর অফিসের এসিটিও নীপাকে মাথায় করে রাখো?

ডোন্ট টেক ইট পার্সোনালি, শ্বেতা।

নাহ্, পনেরো বছর ধরে তো তোমাকেও একটু একটু চিনছি। আর যত চিনছি ততই ভাবছি এখনও তোমাকে চেনার কত বাকি!

তোমার কী হয়েছে বলো তো?

আসলে আমি ভিতর থেকে চাইছি না তুমি আবার বারোয়ারির সেক্রেটারি হও। তিনটে টার্ম তো থাকলে। নয়-নয় করে ন’বছর। এবার ছাড়ো। এরপর থেকে গেলে লোকে পদলোভী বলবে। এই পদ আঁকড়ে থাকার পিছনে স্বার্থ খুঁজবে। ঋভু বড় হচ্ছে। ছেলেটার দিকে তাকাও। একবছর পরে মাধ্যমিক দেবে। ছেলেটাকে দেখো। বারোয়ারি কিন্তু তোমার ভবিষ্যৎ নয়, ঋভুই তোমার ভবিষ্যৎ।

ওসব কথা ছাড়ো। যে মানুষ হওয়ার সে ঠিকই মানুষ হবে। সফল হওয়ার থাকলে সফলও হবে।… আর তুমি অত ভাবছই বা কেন? নিজে থেকে সুবিধা করতে না পারলে আমি তো আছি! কোনও না কোনওভাবে ওর কেরিয়ার ঠিক ম্যানেজ করে দেব।

বাহ্, প্রবাল বাহ্! বাইরে তুমি ভীষণ পোলিশড একজন মানুষ। নৈতিকতার শেষ কথা, বিনয়ের অবতার। ভিতরে আসল মূল্যবোধের জায়গায় তোমার মতো এত দুর্নীতিগ্রস্ত মানুষও খুব কম হয় কিন্তু।

তুমি আর নৈতিকতা-মূল্যবোধের পাঠদান করতে এসো না! শ্বশুর-শাশুড়ির সঙ্গে কী আচরণ করো তুমি?

ওটাই তোমার এসকেপ রুট। কিছু বলতে গেলে ওই একটা ফাঁক দিয়েই তো তুমি সবসময় গলে বেরিয়ে যাও। হ্যাঁ, স্বীকার করছি আমি সহনশীল নই, শর্ট টেম্পারড-ও বটে। কিন্তু তোমার মতো ধূর্তও নই।

সবদিক সামলাতে গেলে ধূর্তই হতে হয়। লোকে অভিনয়টাই দেখে, ক’জন আর আসল ঘটনা জানতে পারে।… আচ্ছা, কী ব্যাপার বলো তো, তুমি হঠাৎ আমার একনম্বর সমালোচক হয়ে উঠলে কেন?

সমালোচনা নয়, রতন দাসকে করা তোমার ফোনটা আমার চোখ খুলে দিয়েছে। বুঝতে পারছিলাম যে-বারোয়ারির তুমি হর্তা-কর্তা-বিধাতা— যার সঙ্গে তুমি বলো নাড়ির টান— সেই বারোয়ারিকেই তুমি প্রকৃত ভালবাস না। খুব খারাপ লাগছিল জানো, যখন উপলব্ধি করছিলাম তুমি আজ ক্ষমতার মোহে— প্রয়োজন পড়লে—বারোয়ারির এতদিনের স্পিরিটের অবমাননা করে তাকে কলুষিত করতেও প্রস্তুত।

ওহ্, তুমি তাহলে সবই শুনেছ! কিন্তু শ্বেতা, কারও ফোনে আড়িপাতা নিশ্চয়ই সভ্যতা নয়।

প্রবাল, তুমি আমাকে সভ্যতা-ভদ্রতা শেখাচ্ছ! নিজের আচরণের কথা ভাবো। ক্ষমতায় থাকার সময় যে-রাজনৈতিক দল বিরোধী দলের সাপোর্টার বলে তোমার বাবাকে ফিজিক্যালি অ্যাসল্ট করেছিল, আজ শুধু পদে থাকার মোহে তুমি গোপনে সেই দলের সমর্থন কিনতে চাইছ! এটা তোমার কোন সুস্থ মানসিকতার পরিচয়?

ইয়েস, যেখানে ডিল করার দরকার সেখানে আমি ডিল-ই করব। খেমটা নাচতে নেমে ঘোমটা টেনে মুখ লুকোনোর কোনও প্রয়োজন আছে বলে আমার মনে হয় না। ভাবের ঘরে আমি চুরি করি না।নিজের কাছে আমি পরিষ্কার। কী করছি সেটা আমি জানি। কেন করছি সেটাও আমার কাছে খুব স্পষ্ট।

তাহলে তো আর কথাই নেই!

একদমই তাই। আগামী চব্বিশ ঘন্টা আমি আমার কনসায়েন্সকে লক করে রাখছি। এখন আমার একটাই লক্ষ্য— নিজের পজিশনে টিকে থাকা। আর আমার মতো টার্গেট ওরিয়েন্টেড মানুষ যে তার জন্য শেষ পর্যন্ত কতদূর যেতে পারে তা তোমার মতো বুদ্ধিমতী নিশ্চয়ই অনুমান করতে পারছে।

 

তিন

কে বলে শুধু গ্রামের মেয়েরাই পরনিন্দা-পরচর্চা করে! প্রত্যেকদিন সকাল সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত যুবক সংঘের বাইরের রকে মাদুর পেতে যে-আড্ডা বসে সেটাকে নিখাদ পিন্ডি চটকানোর আসর বলাই ভাল। পঞ্চাশের এদিক-ওদিক কয়েকজন পুরুষমানুষ সেখানে বসে বসে কার মেয়ে কার সঙ্গে কী করে বেড়াচ্ছে, কার বৌ কার সঙ্গে ঢলাঢলি করছে, কোন ছেলে বাবা-মাকে দেখছে না, কোন শাশুড়ি বৌমাকে পাক দিচ্ছে, কোন বৌমা শাশুড়িকে রগড়াচ্ছে, কাদের বনিবনা হচ্ছে না— মূলত এসব চর্চাই করতে থাকে। প্রবাল যে মাঝে মাঝে ভিতর থেকে বিরক্ত হয়ে পড়ে না তা নয়, কিন্তু তার মনে হয় বারোয়ারি চালাতে গেলে এই খুঁটিনাটিগুলো সম্পর্কেও সবসময় ওয়াকিবহাল থাকা দরকার। অবশ্য আজকের চর্চা এসব ছাড়িয়ে বারোয়ারির নতুন কমিটি গঠনের দিকে মোড় নিল।

এমনিতে প্রবাল একদমই স্বাস্থ্য সচেতন নয়। কিন্তু শুধু এই আড্ডার টানে সকাল-সকাল উঠে মিনিট তিনেক হেঁটে আসে। গ্রীষ্মকালে সকাল হয়ে যায়। কিন্তু শীতকালে ভালভাবে আলো ফোটে না, তার আগেই উঠে পড়তে হয়। গতরাতে ঘুম ভেঙে যাচ্ছিল বারবার। শেষমেশ ভোর পাঁচটাতে সে বিছানা ছেড়েছে।

আড্ডা দিতে তখনও কেউ হাজির হয়নি দেখে প্রবাল নিজেই মাদুর পেতে বসল। বেশিক্ষণ কাটল না। এক এক করে আড্ডায় সবাই এসে জড়ো হল।

বিধান সাঁতরা বলল, কী বুঝছ রমেনদা, ত্রিমূর্তি এবারও সেই একই থাকবে, না বদলাবে?

রমেন হালদার বলল, সে আমি আর কী জানি? আমি তো বারোয়ারিতে যায়-ই না।… তবে শুনছি এবার নাকি খুব পলিটিক্স হচ্ছে।

অলোক রায় জানতে চাইল, তোর কী মনে হচ্ছে প্রবাল?

আমি এসব নিয়ে ভাবছি না। আসলে আমি খুব চাইছি এবারের টার্মটা সরে থাকতে। কিন্তু… চাইলেই তো হবে না, সবই তো জনতা-জনার্দনের মর্জি! তারা ছাড়লে হয়!

রমেন হালদার বলল, জানি না পাবলিকের মর্জি কী হবে, কিন্তু তোর এবার সত্যিই একটু রিলিফ পাওয়া দরকার। অনেকদিনই তো তোকে দায়িত্ব সামলাতে হল। তাছাড়া… মাঝে মাঝে মুখবদল হওয়ারও তো প্রয়োজন আছে নাকি!

প্রবাল জানে রমেনদা মোহিতের ঘনিষ্ঠ। আর মোহিতের হাত ধরে বারোয়ারির কমিটিতে প্রথমবার ঢুকেই কোষাধ্যক্ষ হওয়ার তালে আছে!

নয়ন পাল বলল, কিন্তু প্রবাল ছাড়া বারোয়ারি চলবে?

প্রবাল বলল, কী যে বলো না নয়নদা! রাম ছাড়া কি রাজত্ব চলেনি?

অলোক রায় বলল, তা চলবে না কেন? কিন্তু… কতখানি ফেয়ার চলবে সেটাই প্রশ্ন।

এটাই প্রবালের সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট। আর্থিক ব্যাপারে তার সততা প্রশ্নাতীত এবং লোকে সেটা বিশ্বাসও করে। আর বড়-বড় প্রতিষ্ঠান মানেই যেখানে টাকা-পয়সা নিয়ে অনেক অস্বচ্ছতার অভিযোগ শোনা যায়, সেখানে প্রবালের হিসেব-নিকেশ নিয়ে স্বচ্ছতাই তাকে বছরের পর বছর ডিভিডেন্ড দিয়ে চলেছে।

সারা বছর ধরে জগৎপুর বারোয়ারিতে অনুষ্ঠান লেগেই রয়েছে। যাকে বলে বারো মাসে তেরো পার্বণ। দুর্গাপুজো, জগদ্ধাত্রীপুজো, কালীপুজো, জয়চন্ডীমাতার পুজো, জন্মাষ্টমী, রথযাত্রা, দোল উৎসব, চড়ক উৎসব, বিজয়া সম্মিলনী, যাত্রাপালা — একের পর এক অনুষ্ঠান। বছরে প্রায় পঁচিশ-তিরিশ লাখ টাকার জমা-খরচ। সেই আয়-ব্যয়ের হিসাব নিয়ে আজ পর্যন্ত কেউ প্রবালের দিকে আঙুল তুলতে পারেনি।

আর এখানেই মোহিত সরকার ঝাড় খেয়ে যাচ্ছে। নাহলে তার সদিচ্ছা, কর্মোদ্যোগ— কোনও কিছুর কমতি নেই। সে দু’বারের পঞ্চায়েত সদস্য— গ্রাম থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত। পঞ্চায়েতে বিরোধী দল ক্ষমতায় থাকার সময়ও সে যথেষ্ট লড়াই করে পঞ্চায়েত থেকে টাকা আদায় করে এনে গ্রামে সরকারি কাজ করিয়েছে। আর এখন তো নিজেদের পঞ্চায়েত! ঢালাই রাস্তা, রাস্তায় পাশে পাকা ড্রেন, সাতশো ফুটের কল, বাড়ি বাড়ি টাইম কলের জল, পোস্টে পোস্টে এলইডি ল্যাম্প—এককথায় জগৎপুরে উন্নয়নের জোয়ার নিয়ে এসেছে মোহিত। প্রবালের যেখানে বারোয়ারির গদি আঁকড়ে থাকার নেশা— বারোয়ারি এলাকার উন্নতি নিয়ে মাথাব্যথা নেই— মোহিতের কিন্তু তা নয়। তার এক এবং একমাত্র অ্যাজেন্ডা— জগৎপুরের উন্নয়ন। আর তার জন্য সে ঝুঁকিও নেয়। কিন্তু সে হিসাব করে দেখেছে জগৎপুরকে তার স্বপ্নের মডেল গ্রাম হিসাবে গড়ে তুলতে গেলে আরও আরও বেশি টাকার প্রয়োজন। তার মনে হয়েছে পঞ্চায়েত-পঞ্চায়েত সমিতি-জেলা পরিষদ-এমএলএ অথবা এমপি ল্যাডের আর্থিক সহায়তার বাইরেও গ্রামের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন গ্রামের সদস্যের হাতে একটা ফান্ড— মোটা অঙ্কের তহবিল। শুধু মনে হওয়াতেই শেষ হলে ঠিক ছিল, কিন্তু সেখানেই না-থেমে সেই তহবিল গড়তে প্রায় তোলাবাজির মতো তোলা আদায় করতে শুরু করার ফলেই আজ স্বখাত সলিলে ডুবতে বসেছে মোহিত।

এতদিন যেখানে সেখানে ইট-বালি-স্টোন চিপ পড়েছে। যতদিন ইচ্ছা পড়ে থেকেছে। গ্রামের লোকজন অথবা বিল্ডার্সকে তার জন্য কাউকে কৈফিয়ত দিতে হয়নি, টাকা দেওয়ার তো প্রশ্নই ওঠেনি। কিন্তু এখন রাস্তার ধারে, সরকারি জায়গায় অথবা ভেস্টেড ল্যান্ডে বিল্ডিং মেটিরিয়াল পড়লে তার কৈফিয়ত তলব করে— জিনিসের পরিমাণ এবং তা পড়ে থাকার দিনসংখ্যা হিসাব করে—নিজের ইচ্ছামতো টাকা তুলছে মোহিত। কায়েমি স্বার্থে আঘাত লাগায় অনেকে তার ওপর চটলেও সে সে-সবকে পাত্তা দেওয়ার কোনও প্রয়োজনই বোধ করে না। উল্টে টাকা আদায়ে জোর-জবরদস্তি করতেও সে পিছপা হয় না। কারণ তার বদ্ধমূল ধারণা দুনিয়ায় ভাল কথায় সহজে কেউ টাকা দেয় না।

সে টাকাপয়সার কোনও হিসাবও রাখে না এবং কাউকে হিসাব দেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করে না। আর্থিক কেলেঙ্কারির অস্ত্র শানিয়ে তার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে তাই দলের বিরোধী গোষ্ঠী এবং বিরোধী দল— উভয়েরই সুবিধা হয়েছে। কিন্তু মোহিতের কাজ করার ভঙ্গিই হোক অথবা উন্নয়নের মডেলে মজেই হোক যুবসমাজের একটা বিরাট অংশ তাকে পছন্দ করে। আর তারা এবার প্রবলভাবে চাইছে বারোয়ারির তখতে বসুক মোহিত সরকার।

পেটোয়া কিছু লোকজন ছাড়া প্রবাল সাহাকে ভিতর থেকে খুব কমজনই পছন্দ করে। তার উচ্চপদস্থ সরকারি চাকরি, উচ্চশিক্ষা, আইন-আদালতের কাজে দক্ষতাকে লোকে স্বীকার করে। কিন্তু তার সম্পর্কে অনেকের আশাভঙ্গ হচ্ছে। প্রবালের নীরব দাবি সবাই তাকে সব ব্যাপারে বিশ্বাস করুক, কিন্তু সে নিজে কাউকে কোনও বিষয়ে একচুল বিশ্বাস করে না। নিজেকে ছাড়া সে কাউকে যোগ্য ভাবে না, তার ধারণা তার অবর্তমানে জগৎপুর বারোয়ারি মুখ থুবড়ে পড়বে। বারোয়ারির রক্ষণাবেক্ষণ, ভালমন্দ যেন একা তার ওপরই বর্তায়। তার এই অদ্ভুত স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার কারণেই বিগত ন’বছরে বারোয়ারিতে কোনও নতুন যোগ্য ছেলে উঠে আসেনি, তৈরি হয়নি বিকল্প নেতৃত্ব। স্বৈরাচারী শাসকের মতো প্রয়োজনে সে যে- কোনও কাউকে ব্যবহার করেছে আর তারপর প্রয়োজন মিটলে তাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে দু’বার ভাবেনি। ফলে বারোয়ারিতে আজ আর তার কোনও প্রকৃত বন্ধু নেই। তার সঙ্গী যারা, তারা ক্ষমতার লোভে তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। তাদের স্বার্থ ফুরোলে প্রবালের বিরুদ্ধাচরণ করতে তাদের এক সেকেন্ডও সময় লাগবে না। প্রবাল সাহা তাই জগৎপুর বারোয়ারির যতই মুকুটহীন সম্রাট হোক না কেন, আসলে সে একা ও নিঃসঙ্গ।

চার

জগৎপুর বারোয়ারি দু’শো দশ বছরের ঐতিহ্যশালী বারোয়ারি। গ্রামের সম্মানের আধারস্বরূপ। কিন্তু এমন ঐতিহ্যমন্ডিত প্রতিষ্ঠান হওয়া সত্ত্বেও বারোয়ারির কার্যকরী সমিতির নির্বাচন বড়ই সংক্ষিপ্ত ও আকস্মিক। কার্যকরী সমিতির সকলকেই সাধারণ সভা থেকে মনোনীত করা হয়। বারোয়ারির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান ব্যক্তি সম্পাদক। তাঁর হাতেই ন্যস্ত সমস্ত ক্ষমতা এবং দায়িত্ব। নৈবেদ্যর নাড়ুর মতো একজন সভাপতিও মনোনীত হন। যদিও তাঁর গুরুত্ব কার্যকরী সমিতি এবং সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আর থাকেন একজন মনোনীত কোষাধ্যক্ষ। তিনি কোষের অধ্যক্ষ—যক্ষের ধনের মতো অর্থ রক্ষা করেন। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অর্থ ব্যয় করার কোনও ক্ষমতা তাঁর নেই।

এবারে হাওয়া যা তাতে মনে হয় সাধারণ সভা মোহিত সরকারকেই সম্পাদক পদে মনোনীত করবে। খেলা ঘোরাতে গেলে এখন একমাত্র ভরসা রতন দাসের কেরামতি।

দুপুরে খেতে বসে শ্বেতা প্রবালকে বলল, প্রায় পাঁচশো ঘরকে একসাথে বেঁধে রেখে, উৎসবের ময়দানে সকলকে টেনে আনার যে আশ্চর্য স্পিরিট  বারোয়ারির রয়েছে, তা কিন্তু রাজনীতি ঢোকেনি বলেই।

আরে সেজন্যই তো আমি মোহিতকে আটকাতে চাইছি।

শুধু সেজন্যই, না বারোয়ারির মুখ হিসাবে নিজেকে জাহির করতে না পারলে তোমার ইগোতে লাগবে— ইমেজ ধাক্কা খাবে, সেই আশঙ্কায়?

বারোয়ারিকে তো আমি নিজের থেকে আলাদা করে দেখি না। আর কোনও প্রতিষ্ঠানকে নিজের ভাবা কি অপরাধ নাকি?

না, একদমই না। ভালবেসে নিজের ভাবতে পারলে কোনও অপরাধ নেই। কিন্তু মোহবশত নিজেকে সেই প্রতিষ্ঠান ভাবাটা অপরাধ।

প্রবাল এর আগে কখনও সাধারণ সভার জমায়েত নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন বোধ করেনি। সেসব বিপ্লব এবং নরেনদাই সামলায়। দু’জনেই বারোয়ারি-অন্ত প্রাণ। বারোয়ারির প্রতি অদ্ভুত তাদের ভালবাসা। ভালবাসা যত না, তার চেয়ে বেশি যেন মায়া-মমতা। চাইলেই তারা নিজেরা প্রধান তিন পদের যে কোনও পদে মনোনীত হতে পারে। কিন্তু রাবার-স্ট্যাম্প থাকা পদ নেওয়ার তুলনায় বারোয়ারির ভাল করতে পারবে এমন মানুষজনের মনোনয়নের জন্য সমর্থন জুটিয়ে আনাকেই তারা তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য বলে মনে করে।

এই প্রথম তাদের মনে হয়েছে প্রবাল বারোয়ারির ভালমন্দের তুলনায় নিজের ভালমন্দ নিয়ে বেশি ভাবছে। বারোয়ারি তার কাছে হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক অধিকারের জায়গা। বারোয়ারির প্রকৃত উন্নয়ন নিয়ে না ভেবে, নিজের নাম কীভাবে ছড়াবে তার দিকে লক্ষ্য রেখেই তার যত প্ল্যান-প্রোগ্রাম। এ তো ভাল কথা নয়! তাই ঝুঁকি নিয়েও তারা এবার মোহিতকে মূল দায়িত্বে নিয়ে আসতে চাইছে। বারোয়ারির চেয়ারে বসে কোনও রকম রাজনীতি না-করার প্রতিশ্রুতি তারা অবশ্য মোহিতের কাছ থেকে আদায় করে নিয়েছে। সভাপতি হিসাবে তারা ভেবেছে প্রবালের নাম আর কোষাধ্যক্ষ হিসাবে তাদের পছন্দ রতন দাস— পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রামের পরাজিত প্রার্থী।

সব খবরই প্রবাল রাখে। কিন্তু রতন দাসকে প্রবাল আরও বড় টোপ দিয়েছে। রতন দাসের দলের লোকজন প্রবালকে সংখ্যার জোরে সম্পাদক পদে মনোনীত করবে। আর তার বিনিময়ে সামনের পঞ্চায়েত ইলেকশনে প্রবাল তার গ্রিপে থাকা লোকজন নিয়ে বসে যাবে এবং নেক্সট টার্মে বারোয়ারির পরবর্তী সম্পাদক হিসাবে রতন দাসকে নিয়ে আসবে।

সাধারণ সভায় এবার উপস্থিতির সংখ্যা একশো ছাড়িয়ে গেছে। অন্যান্যবার উপস্থিত আশি-নব্বইজন সদস্যের মধ্যে দু’-তিনজন প্রত্যেকটা পদে একজন করে ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করে, আট-দশজন তাদের সমর্থন করে, আর বাকিরা চুপ থেকে বা হাত তুলে ঘাড় নেড়ে সমর্থন জানায়। এইভাবেই নির্বিবাদে-নির্ঝঞ্ঝাটে গঠিত হয় তেইশ সদস্যের কার্যকরী সমিতি।

কিন্তু এবার মনে হয় সবকিছু এত সহজে হবে না। রতন দাসের যেখানে বেস সেই রায়পাড়া এবং মালপাড়া থেকে এমন অনেক লোক এসেছে যাদের কখনও বারোয়ারির কোনও কাজে দেখা যায়নি। নরেন বিশ্বাস এবং বিপ্লব মিত্র পরস্পরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছে। মোহিত সরকারকে সভা শুরুর আগে যেমন খোলামেলা এবং ডাকাবুকো লাগছিল আর তা লাগছে না। আত্মবিশ্বাস হারিয়ে স্পষ্টতই স্নায়ুচাপে ভুগতে আরম্ভ করেছে সে।

প্রবাল তাদের চোখমুখের দিকে তাকিয়ে বুঝে নিল — কী ঘটতে চলেছে সেটা তাদের কাছে স্পষ্ট নয়। তবে সভায় তারা যে সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে একথা তাদের কাছে জলের মতো পরিষ্কার। মোহিত এর আগে কখনও ভোটের রাজনীতিতে পরাজয়ের সম্মুখীন হয়নি। কিন্তু নিজের বিচক্ষণতা দিয়ে সে বুঝতে পারছে আজ তার রাজনৈতিক পরাজয় নিশ্চিত। এখন কী করবে মোহিত!

প্রবাল এবং রতন দাসের চোখের দিকে তাকিয়ে রীতিমতো আতঙ্কিত ও বিভ্রান্ত মোহিতের মনের কথা যেন পড়ে নিতে পারছে প্রবাল। ছিঃ, প্রবাল আমাকে হারাবে বলে এভাবে অপোনেন্ট পার্টির সঙ্গে হাত মেলাল! অথচ আমি ছেলের সামনে প্রবালকে আদর্শ হিসাবে খাড়া করি এবং ছেলেকে ওর মতো হওয়ার জন্য বলি। সেই প্রবাল সকলের বিশ্বাসের অমর্যাদা করে বারোয়ারির আত্মাকে এভাবে কলুষিত করছে, সঙ্কীর্ণ রাজনীতির কালনাগিনীকে এভাবে লোহার বাসরঘরে ঢোকার রন্ধ্রপথ চিনিয়ে দিচ্ছে! না, এটা আমি কিছুতেই হতে দেব না। আমি রাজনীতির কারবারি। আমি বুঝি স্বার্থসিদ্ধির রাজনীতি কীভাবে চরম ধ্বংস ডেকে আনে। আমি থাকব আমার জগৎপুর উন্নয়নের মডেল নিয়ে। প্রবাল পড়ে থাক বারোয়ারি নিয়ে। সবচেয়ে বড় কথা বারোয়ারি যেন থাকে বারোয়ারির জায়গাতেই। প্রবালের মোহ যদি কোনও দিন কাটে বারোয়ারির উন্নয়নে ঝাঁপাতে আমি দু’বার ভাবব না। কিন্তু এখন প্রবালের মোহ কাটাতে গেলে বারোয়ারির নষ্ট হওয়া কেউ আটকাতে পারবে না।

প্রবাল একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল। সামনে কালচক্রের মতো কিছু দুলে উঠতে দেখে সে সচেতন হল। দেখল মোহিত নরেনদা এবং বিপ্লবের দিকে ইঙ্গিতপূর্ণ চোখে তাকিয়ে সম্পাদক হিসাবে প্রবাল সাহার নাম প্রস্তাব করল। প্রথমে একটু থতমত খেয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে রতন দাস সেই প্রস্তাব সমর্থন করল। আর তার দলবল সোৎসাহে রতন দাসের সঙ্গে গলা মেলাল।

Tags: , ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ