24 Oct

সেন্সর

লিখেছেন:দেবাশিস মজুমদার


পর্ব – ১

 বারান্দার ওপর ফটাস শব্দটা জানিয়ে দিল পেপার এল। ধর-এরদের বাড়ি সনাতনবাবু হাজার চেষ্টা করেও বাড়ির লোকেদের পেপার কথাটা কাগজে বদলাতে পারলেন না। উঠে গিয়ে পেপার নিয়ে বসতেই নাতনি আইভি লাফিয়ে বিছানায় উঠে এল। নাইনে উঠেছে। দাদুর রাম ন্যাওটা। কিন্তু নাতনির সামনে প্রথম পাতা ওল্টাতেই পাতা বদলাতে হল। নাহ্‌! বাংলা কাগজে দেখার কিছু থাকে না বলে। পাতা জুড়ে জাপানি তেলের বিজ্ঞাপন, আর তাই পাতা জুড়ে শুয়ে আছে সেই সব রাতপোশাকের নারী। সনাতনের অভিজ্ঞ দৃষ্টি ছবি লেপ্টে বেরিয়ে পাতাটা ঘুরিয়ে দিল তৎক্ষণাৎ। মনে মনে বলল, শালা আর জায়গা পেলি না, কাম দিয়ে এভাবে কামায় রে! বাড়িতে তো সবার মাঝে কাগজ পড়াও দায় হল দেখছি। হঠাৎ ছোট নাতি টম কোথা থেকে দৌড়ে এসে ‘পেপার’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়ল বিছানায়। পেপারটা টানতে গিয়ে পুরো কাগজটা খুলে গেল, তারপর অমায়িক গলায় বলল, স্যরি দাদু। বাবা খুঁজছিল। খেলার রেজাল্ট জানবে বলে।

টম আর আইভির টানাটানিতে পাতাগুলো সব খুলে গিয়ে ব্যাপারটা আরও খোলামেলা করে দিল। ঘরময় ছড়িয়ে যাওয়া কাগজ নিজেই গোছাতে গিয়ে চকচকে বিজ্ঞাপনের পাতাটা হাতে নিয়ে বলল, – দাদু, জাপানি তেল কী? জাপানে তৈরি হয়? বড় জ্যাঠানের ঘরে আছে দেখেছি সেদিন। বাবাকেও বলেছি। আর বলেছি, আমাকে আমেরিকান তেল এনে দিতে।

আইভি ‘এক মিনিট আসছি’ বলে ওদিকে চলে গেল।

পর্ব – ২

সনাতনদের যৌথ পরিবার যৌথ খামারের মতো বসবাস করে। ঝগড়াঝাঁটি করে বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও বেরিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে কোনও ছেলে বা ছেলের বৌয়েরই নেই। আর তাই পাড়ায় এত বড় বাড়িটা যেন – বড় পরিবার সুখী পরিবার তকমা নিজেরাই গায়ে এঁটেছে। তিনটে তলায় তিন ছেলের পরিবারকে রেখে দিয়ে এক তলায় রান্নাঘর, খাবার ঘরের পাশে নিজেদের একটি ঘর রেখে আশি বছরের সনাতন বাড়ি ধরে রাখার গুরু দায়িত্ব কেবল পালন করেননি, নিজেকে যথেষ্ট শক্তসমর্থ রখেছেন প্রৌঢ়ত্বের বাঁধনে। এমন কি নিজের বাহাত্তুরে স্ত্রীকেও অকামজ রেখেও অসমর্থ করেননি দিনগত পাপক্ষয়ের কাজে। রাতে স্ত্রীর গায়ে হাত রাখলে সনাতন এখনও বুঝতে পারেন – ‘আচ্ছে দিন না রহেনে মে ভি উনকা সভি বাত অভি জিন্দা রহা।‘

দীর্ঘদিন স্টেশন মাস্টার হিসেবে কাজ করেছিলেন গিরিডিতে। গিরিডির মৌসম এখনও তবিয়তের রন্ধ্রে রন্ধ্রে উসকানি দেয়। তিন ছেলে, ছেলের বউ আর পাঁচ পাঁচটি নাতি-নাতনির মধ্যে এই আইভি আর টম-ই দাদু ন্যাওটা। বাকিগুলো সবই  চাকরি বা পড়ার কাজে বাইরে আর একটু দিদান ঘেঁষা। খারাপ লাগে না সনাতনের। ছোটবেলার বহু স্মৃতি মনে আসে। তাদের মধুপুরের বাড়িতে তিনি আর তাঁর দুই দিদি সুকুমারী আর রুকুমারী ছিলেন দাদু ঘেঁষা, বাকিরা সবাই ছিলেন দিদান ন্যাওটা। আর বাড়ির কাচ্চাবাচ্চার সংখ্যাও ছিল তখনকার দিনের মতোই। যেন গোটা দুই ক্রিকেট টিম হয়ে যায়। অথচ কী যে একতা ছিল তা বলে বোঝাবার উপায় নেই। সেই একসঙ্গে থাকার রেওয়াজ সাহাগঞ্জের এই বাড়ি মধুপর্ক-কেও গড়ে তুলতে চেয়েছেন। আজও এই বাড়িতে সান্ধ্যটিভির আড্ডা বসে তাঁরই ঘরের লাগোয়া এক তলার বসার ঘরে। রান্নাঘর এখনও আলাদা হয়নি। বৌদের মধ্যে মন কষাকষি থাকলেও ঘর ভাঙার মতলব হয়নি। সব নাতিনাতনিদের মধ্যে টম আর আইভি বাড়িটাকে মাতিয়ে রাখে বেশি। তাই বলা যায়, আধুনিকতা এ বাড়ির চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকে অনেকক্ষণ, তারপর যেন অনেকটা জবাবদিহি করেই ঢুকতে পারে বাড়ির চৌহদ্দিতে। ছেলে-বৌরা কেউই বাড়িটাকে আলট্রামডার্ন করে তুলতে চায়নি কখনও। ফলে সনাতনী মধুপুরী ধারায় বাড়িটাকে অন্তত আংশিক ধরে রাখতে সফল হয়েছেন অশীতিপর রিটায়ার স্টেশন মাস্টার সনাতন ধর।

পর্ব – ৩     

আধুনিকতার ছোঁয়া যেটুকু এবাড়িতে ঢুকেছে তা নাতি-নাতনিদের হাত ধরেই। বড় নাতি-নাতনিরা সবাই প্রায় পড়াশোনা আর চাকরির কাজে বাড়ির বাইরে থাকলেও অতি আধুনিক জীবনযাপন করে না কখনও। ছোটদের মধ্যে মেজছেলের ঘরের ক্লাস নাইনে পড়া ছোটমেয়ে আইভি আর একদম ছোটছেলের ঘরের একমাত্র ছেলে টমটম যে কিনা সবে ক্লাস ফোরে উঠেছে। এই টমকে নিয়েই মেতে থাকে বাড়ি সারাদিন, কারণ তার কথার খই ফুটছে মুখে। সোজা কথা যে এত সোজাসুজি বলা যায় তা ওকে না দেখলে বড়রাও বিশ্বাস করবে না। সোজাসুজি কথা বলায় ও কাউকে পরোয়াও করে না। আর বড় ছোটর ভেদাভেদটা এবাড়ির আর সবাই মানলেও ছোট মানুষ টম সবচেয়ে ছোট সদস্য হওয়ার সুযোগ নেয় বা পায় নানা ভাবে। যেমন সেদিন খাবার টেবিলে সনাতন হঠাৎ আইভিকে ধরেছিলেন, -হ্যাঁরে, আজ স্কুল যাসনি কেন?

আইভি খেতে খেতে উত্তর করেছিল, – না দাদু, পেটে খুব ব্যথা করছিল তাই।

অভিজ্ঞ সনাতন সব বুঝেই বললেন, ও, আচ্ছা।

হঠাৎ টম বলে উঠল, – এমা কী মিথ্যুক, দাদুকে মিথ্যে বললি? সকালেই যে আমার মাকে বললি পিরিয়ড হয়েছে স্কুল যাব না। দাদুকে অন্য কথা বললি কেন?

আইভি লজ্জায় লাল হয়ে বলল, – এক চড় মারব।

ব্যস, লেগে গেল দুই ভাইবোনে। এক মিনিটে সবাইকে নির্বাক দর্শক বানিয়ে দিতে টমের কোনও জুড়ি নেই। সনাতন বুঝে গেছেন, এক একটা সময় এক একটা মানুষের দেখা পাওয়া যায় যারা সহজ সত্যকে সত্যের চেয়েও বেশি সহজভাবে ধরে ফেলে। আর সেভাবেই সহজ করে কথা বলতে পারে। যা আর সবার বিপদের কারণ হয়। ঠিক তখন সবাই তাকেই দোষে। টমও সেই গোত্রের আর সেই সময়ের ফসল। আর এরা নির্দ্বিধায় শুধু নিজেকে নয় বাড়িকেও প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেবে সহজতর সত্য বলে। অথচ যার সরলতাকে দোষারোপ করা যাবে না কোনও আইনে। টমের এই অকপট সরলতা মুহুর্মুহু বোকা বানায় ঘর ও বাইরের বহু লোককে। ঘরের লোকেরা অপ্রস্তুত হয়, আর বাইরের লোকেরা যতটা হতবাক হয়, বিস্মিত হয় ততটাই।

এই তো সেদিন, পাড়ায় পটাইয়ের পিসি মারা যাওয়ার পর – পটাই কেঁদে ভাসিয়েছে বলে গল্প করছিল চায়ের দোকানের মালিক ফুচান। টম দাঁড়িয়েছিল দাদুর সঙ্গে। হঠাৎ টম জিজ্জেস করল, – ভেসে যাওয়া পটাইকে কিভাবে উদ্ধার করলে?

পর্ব – ৪

গোলমাল কিছু একটা কয়েকদিন ধরেই বাড়িতে চলছে আন্দাজ করেছিলেন সনাতন। স্ত্রীকে মাঠে নামিয়েও মূল কারণ উদ্ধার করতে পারেননি। আর যত দিন যাচ্ছে স্ত্রীও হয়ে উঠছে বেশ ভোঁদাই। ছোটবৌটাও একটু মড টাইপ। তাকে হঠাৎ করে জিজ্ঞাসা করে ফেলল, – হ্যাঁরে কদিন ধরেই দেখছি টম তোদের ঘরে আর শুতে যেতে চাইছে না কেন রে?

এরা আজকালকার মেয়ে, প্রশ্ন শুনেই উত্তর সাজিয়ে নেয় বাস্তুঘুঘু সব। ঠিক দিল কথা ঘুরিয়ে, – না মা, ও খুব দুষ্টু তো! এই তো ওর স্কুলের বনানী আন্টি ডেকে পাঠিয়েছিল কিছু হোমওয়ার্ক করে নিয়ে যাচ্ছে না বলে। ও কিছু না। তোমার ছেলেকে তো জানোই কেমন বদরাগী। গার্জেন কল হওয়ায় রোজ চেপে ধরছে। হোমওয়ার্ক চেক হচ্ছে। আর তোমাদের আদরের টমও তো তোমাদেরই ছেলের ছেলে না! সেও কি কথায় কম যায়? তাই একটু খটাখটি বকাবকি হচ্ছে। রাতে শুতে চাইছে না আমাদের সঙ্গে। ও কিচ্ছু না। সামান্য ব্যাপার।

 

কিন্তু ও যে অবশ্যই অসামান্য ব্যাপার এই হিসেব বুড়ো হাড়েও টের পেয়েছিলেন সনাতন। কয়েকটি ঘটনাক্রমে। টমের মুখ থেকে ভেসে আসা একটা কথা এখনও কানে লেগে আছে, – আমি আর তোমাদের ঘরে শোব না, শোব না, শোব না। যাও।

আর ঠিক তার পরদিন রান্নাঘরের পাশ দিয়ে বাথরুমে যাওয়ার সময় বড় আর মেজো বৌমার চাপা কথপোকথন শুনেছিলেন কান খাড়া করে।

–      এত পাকা বাচ্চা সামলাবে কে? সব ওই ফেসবুক আর ফোনের দান।

–      কতবার পই পই করে মুন্নিকে বললাম, ফোনে হাত দিতে দিস না। শোনেনি কথা এখন বুঝুক।

বাকি কথা চাপা হাসির মধ্যে মিলিয়ে গিয়েছিল। বাথরুমে যাওয়ার সময় সবসময়ই পা টিপে টিপে আসেন কান খাড়া করে অন্দরমহলের ওপর নজরদারি করতে, আর তাই বাথরুমে পড়ে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়ে পায়ের স্লিপার সরিয়েছেন ইচ্ছে করেই। আগে এসবের দরকার পড়ত না। হাঁড়ির খবর যোগাত বউ’ই। বয়স বাড়া আর বাতের ব্যথায় বউটা হচ্ছে দিন দিন ভোঁদাই। তাই খবর যোগাড়ের দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হয়েছে। বিশেষত অন্দরমহলে নিজেদের প্রাধান্য বজায় রাখতে। সেদিনেও ঘরে ফিরে বুঝলেন, পুরো ব্যাপারটা বড়দের। যা ছোটরা জেনে ফেলায় ফেঁসে গেছে বড়রা।

ঘরে ফিরে স্ত্রীকে রসিয়ে বলতে যাবেন বলে কাছে টেনেছেন যেই, ওম! হাঁদা বউটা বলে কিনা, – আবার কী হল গো? বড়বৌমা আবার বুঝি তোমার নামে মেজোর কাছে নিন্দে করছিল?

-ধ্যাৎ! বলে গিন্নিকে দূরে ঠেলে দিয়ে গজগজ করে উঠলেন সনাতন, – ওসব নয় গো, ওসব নয়। এবাড়িতে বড়দের বড় বার বেড়েছে। ছোটদের বড় না করে তুলেই বার করে দিচ্ছে ঘর থেকে, বুঝলে?

স্ত্রী কাপড় ভাঁজ করে আলনায় রাখতে রাখতে বললেন, – সে আবার কী গো?

পর্ব – ৫

হিসেব করেই টম দাদুভাইয়ের জন্যে প্রিয় আম সন্দেশ নিয়ে এসেছিলেন সনাতন। বাড়ির বাকি সদস্যরা চলে গেছে গঙ্গার ওপারে খড়দহে সনাতনের এক জ্ঞাতি খুড়তুতো ভাইয়ের ছোটমেয়ের ছোটছেলের অন্নপ্রাশনে। সনাতনের ছোটছেলে মৈনাক আর ছোটবৌ মুন্নি গেলেও নাতি টম দাদুর ইশারা বুঝে নিজেই স্কুলের হোমওয়ার্ক আছে আর ইচ্ছে করছে না বলে থেকে গেল দাদু ঠাম্মির কাছে। আগে আরও ছোটবেলায় টম দাদু ঠাম্মির কাছে থাকত নির্দ্বিধায়। ইদানীং থাকতে চায় না একেবারেই। আর এইখানেই সনাতনের প্রশ্নের শুরু। কারণ শুধু টম নয়, আইভি থেকে শুরু করে বড় হয়ে যাওয়া সব নাতি নাতনিই থেকেছে তাঁদের কাছে বহু সময়।

সনাতনও জানেন দাদু ঠাম্মির কাছে ছেলে মেয়েকে পাঠানোর আড়ালে থাকে বাবা-মা’র এক সনাতনী ইচ্ছাপোষণের আহ্লাদ। আর এই নিয়ে নিজের স্ত্রী সরমাকে মজা করে কিছু বলতে গেলেই পাল্টা শুনতে হত একটাই প্রশ্ন, – মৈনাক কেন এসেছিল মনে আছে তো? বুড়ো বয়সে আর বড় হতে যেও না। বয়স কত হল সে খেয়াল রাখো?

কিন্তু তাঁর যাবতীয় খেয়ালকে গুলিয়ে দিয়ে আম সন্দেশ খাওয়া শেষ করে নাতি টম যখন জানাল যে, সে আর কারও ঘরে রাতে থাকবে না। কারণ তার নিজের ঘর দরকার। পরের দিন আবার আমসন্দেশ খাওয়ানোর লোভ দেখিয়ে টমের পেট থেকে যেটুকু কথা বের হল, তা শুনে আশির কোটা ছোঁয়া সনাতনের সব সনাতনী বিশ্বাস অবিশ্বাসী হয়ে উঠল। দাদু ঠাম্মিকে টম সোজাসুজি জানাল, রোজ রাতে খাটের ঝাঁকুনিতে ঘুম ভাঙলেই ওর চেনা বাবা-মাকে অন্যরকম দেখে সে। কারওরই গায়ে কাপড়-জামা নেই, আর একজনের ওপর অন্যজন। আর কী সব বিচিত্র চিৎকার চেঁচামেচি হওয়ায় ভয় পেয়ে সেদিন আঁতকে উঠে টমের চিৎকার করে ফেলায় গোলামাল বেঁধে যায়!

এই অবধি শুনে সনাতন বুঝলেন সমস্যাটি প্রাচীন, কিন্তু নতুনরূপে দেখা দিয়েছে। কিন্তু টম যখন দাদুকে কাছে টেনে নিয়ে আস্তে আস্তে বলল, – জানো দাদু, ওরা সব লাইভ ব্লু করে।

তখন সনাতনের হাতের কাপ থেকে কিছুটা চা ছিটকে পড়ল ট্রে-র ওপর। কোনওমতে নিজেকে সামলে বাধ্য ছাত্রের মতো নাতিকে প্রশ্ন ছুঁড়লেন, -তোকে কে বলল?

টম চটপট জবাব দিল, – স্কুলে অদিতি বলেছে আমায়। ওর বাবা-মা’ও করে লাইভ ব্লু। অদিতি বলেছে, ও ভয় পায় না। তাই মুখ বুজে মটকা মেরে শুয়ে সব দেখে আর শোনেও সব কথা। অদিতি বলেছে ওগুলো বড়দের কথা। রাতেরবেলার কথা তো, বোঝা যায় না। আরও বলেছে, আমি আর তুই বড় হলে যখন শোব, আমরাও বলব!

 

মুখে কথা সরছে না সনাতনের। স্ত্রী সরমার দিকে তাকাতেই শুভদৃষ্টির সময়ের মতো চোখ নামিয়ে নিল সরমা। তারপর সামাল দেওয়ার জন্যে বলল, – ও তো ছোট, তাই এসব বলেছে। পরে বড় হলে দেখবে সব বদলে গেছে। যাও, তোমাকে আর ভয় পেতে হবে না। তুমি এবার থেকে আমাদের কাছে শোবে, বাবা-মা’র কাছে শুতে হবে না।

-না না – বাধা দিল টম। আমি তোমাদের কাছেও শোব না। তোমরাও লাইভ ব্লু করবে।

কী উত্তর দেবেন ভেবে পাচ্ছে না কেউ! সনাতন অবস্থা সামাল দিতে নাতিকে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়লেন, – এসব মোবাইলের থেকে শিখেছ বুঝি? স্কুলের টিচাররা ত এসব শেখান না! নাকি বন্ধুদের কাছ থেকে শিখেছ?

টমের চটজলদি জবাব, – হ্যাঁ, মোবাইলেও দেখেছি। আদিত্য একদিন মোবাইল এনেছিল। কিন্তু সেগুলো তো ব্লু, এগুলো লাইভ ব্লু। আমাদের সোমা আন্টির ছেলে বিজয়, ওই বলেছে। ও রোজ রাতে দেখে সোমা আন্টিকে লাইভ ব্লু করতে।

হাত-পা বেশ অবশ লাগছে সনাতনের। তিনি বুঝতে পারছেন না নাতির ভাবনাকে থামাবেন কোন পথে, বা ঘোরাবেন কোন দিকে? লাইভ ব্লু কথাটা যার মনে গেঁথে গেছে, তাকে লাইভ ব্লু’র আসল সত্য থেকে সরালেও ছোটমনে বড় হয়ে যাওয়া কথা ব্যবহারের ইচ্ছেটা কিছুতেই সরাতে পারবেন না, এটা তিনি পরিষ্কার বুঝে গেছেন। বুড়ো হয়েও বড়দের বুদ্ধিতে মাত করতে পারলেন না টমের প্রশ্নগুলোর উত্তর যুগিয়ে।

পর্ব – ৬

পরদিন সকালে নাতির সমস্যার কথা আর নিজের অক্ষমতার কথা জানালেন অনুজপ্রতিম শিশুমনোবিদ নীরদবরণ হাজরাকে। নীরদের উদ্যোগেই শিশু মানসিকতার নানা সমস্যা নিয়ে পূর্ববর্তী সরকার স্কুলজীবনে যৌনশিক্ষা সংক্রান্ত আলোচনা চালু করেছিল। নীরদ অভিজ্ঞ মানুষ। সব মন দিয়ে শুনে বললেন, – সনাতনদা, সামলানো যাচ্ছে না – না স্মার্টফোনকে, না বাচ্চাদের! কী যে পরিস্থিতি বোঝাতে পারব বা। নানা নতুন নতুন সমস্যা নিয়ে আসছে লোকে। যাইহোক আপনার নাতিকে পুরো ব্যাপারটা স্বপ্ন বলে বুঝিয়ে দিন। লাভ হবে কিনা জানি না, তবে অনেক বাচ্ছাদের বোঝানো গেছে। আসলে কী জানেন, এক কামরার ফ্ল্যাট, ছোট জায়গা। মানুষই বা করবে কি! আর বাচ্চারাই বা কী বুঝবে!

পর্ব – ৭

বিকেলে টমকে সঙ্গে নিয়ে নাতির প্রিয় খাবার আমসন্দেশ কেনার জন্যে বেরোলেন সনাতন। সন্দেশ কিনে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যেই হল। মাঝে একটা টয় শপে খেলনা কিনবেন বলে ঢুকতে গেলেন। বাধা দিল টম। বলল, – না ওসব খেলনা ফালতু তুমি বরং আমাকে একটা কর্ডলেস হেডফোন কিনে দিও, মোবাইলে গেম খেলতে কাজে লাগবে।

মনের বিরক্তি মনেই চেপে নাতির কথাতেই রাজি হলেন সনাতন। নাতিও পছন্দসই জিনিসের আশ্বাস পেয়ে বেশ খুশি খুশি। সুযোগ বুঝে বললেন, – আরও কিছু পাওয়া যাবে, যদি রাতে আমার কাছে থাক।

নাতির চটজলদি জবাব, – থাকতে তো পারি। যদি তুমি রাতে লাইভ ব্লু না কর!

-শোনও, তুমি যা দেখেছ তা স্বপ্ন। আমরাও ছোটবেলায় দেখেছি। ছোটরা ঘুমের মধ্যে ওরকম স্বপ্ন দেখে। বড় হয়ে গেলে আর দেখে না।

– তাহলে বন্ধুরা যে বলে ওরাও লাইভ ব্লু দেখে। অদিতি, বিশাখা, বিজয়, আদিত্য সবাই তো দেখে বাবা-মায়ের পাশে শুয়ে শুয়ে লাইভ ব্লু। বাবা-মা’রা কিরকম চেঁচায়। কেউ কাউকে ছাড়ে না। ওরা খুব মজা পায়। খুব হাসাহাসি করে। আর আমার খুব ভয় করে, কারওর যদি কিছু হয়ে যায়? আমাকে তো কেউ তখন ডাকে না। যেদিন আমি চেঁচিয়ে উঠলাম বাবা হাত বাড়িয়ে মাথা বালিশে ঠেসে ধরে বলল, – ঘুমিয়ে পড়। চারদিকে ভূতেরা ঘুরছে, ধরে নেবে। আমাকে যদি কেউ সত্যি সত্যি এরকম করে ধরে কী হবে? টমের কথায় অসহায়তা ধরা পড়ল।

– ওটা বাবা নয়, বাবার কথা বেশি ভাব তো? স্বপ্নে সবাই ওরকম কথা বলে। ওটাই শুনেছ। তোমার বন্ধুরাও শোনে। বড় হলে বুঝবে ওগুলো সব ছেলেবেলার ছোট্ট ছোট্ট স্বপ্নের গল্প। আজ আমার আর ঠাম্মির কাছে শো-ও দেখবে কাল আবার গিফট্‌।

-আরিব্বাস! তাহলে তো শুতেই হচ্ছে।

বল নিজের কোর্টে বুঝতে পেরেই সপাটে ব্যাট চালালেন সনাতন, -দাদু ঠাম্মির কাছে থাকলে ওই সব স্বপ্ন আর তাড়া করে না।

-বেশ ঠিক আছে শোব। বলে দৌড়ে বাড়ি ঢুকেই নিজের কাজে মেতে গেল টম। রাতে যথারীতি আশ্রয় নিল দাদু ঠাম্মির ঘরেই।

রাতে এমনিতেই কম ঘুমোন সনাতন। ওয়াল ক্লকের যান্ত্রিক টিক্‌ টিক্‌ আর গিন্নির নাক ডাকার মধ্যেও নাইট ল্যাম্পের আলোয় লক্ষ্য করলেন নাতি ঘন ঘন এপাশ ওপাশ করছে। মাঝে একবার দেখলেন উঠে বসেছে। কিছুক্ষণ পর আবার উঠল। জিজ্ঞেস করলেন, – কী হয়েছে?

-হিস্‌ যাব।

টমের হিস্‌ করে এসে শুয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সনাতনের দুচোখের পাতা এক হয়ে এল। মোবাইলের অ্যালার্ম বাজায় ঘুম ভেঙে দেখলেন, সকাল ঠিক সাতটা। টম আগে উঠে ঠাম্মির সঙ্গে মুখে ব্রাশ গুঁজে বারান্দায় পায়চারি করছে। ফ্রেশ হয়ে চা নিয়ে বসতেই নাতি এসে গা ঘেঁষে বসল, – আজ দেবে তো কর্ডলেস হেডফোন?

-ও হ্যাঁ, মনে আছে। তবে এবার থেকে তোমাকে আমাদের এখানেই শুতে হবে কিন্তু।

ওস্তাদ নাতিকে নিজের কাছে টেনে বাঁধতে চাইলেন সনাতন।

-হ্যাঁ সে শুতে পারি। কিন্তু মাঝে মধ্যে আমাকেও জিনিসপত্র ছাড়তে হবে কিছু কিছু।

-বেশ তাই হবে। ঘুম কেমন হল কাল?

-হিস্‌ করেই ঘুমিয়ে পড়েছি। হিস্‌ করার আগে অবধি জেগে ছিলাম, লাইভ ব্লু দেখিনি কিন্তু। আচ্ছা স্বপ্ন কী তোমাদের ঘরে আসে না?

– না একদম না। বুড়োদের ঘরে স্বপ্ন একদম ঢোকে না।

-কেন?

-আসলে বুড়োদের তো কোনও স্বপ্ন থাকে না, তাই স্বপ্নও দেখা দিতে চায় না। তাই লাইভ ব্লু-ও আসে না।

-কিন্তু আমার বন্ধুরা যে বলে, লাইভ ব্লু রাত হলেই শুরু হয়!

-সে তো হতেই পারে। স্বপ্ন এলে হতেই পারে। ওসব ওরা বোঝে না, ছোট তো! দেখ না, স্বপ্নের কোনও লাইভ ক্লু নেই। মানে জীবিত কোনও প্রমাণ নেই। তাই ভোর হলে স্বপ্নও নেই। স্বপ্নের প্রমাণ কেউ দিতে পারবে? পারবে না।

-বুঝেছি, স্বপ্নের কোনও লাইভ ক্লু নেই তাই লাইভ ব্লুও নেই। তাই পুরোটাই স্বপ্ন আর স্বপ্ন। দাদু ঠাম্মির ঘরে স্বপ্ন আসে না, তাই লাইভ ব্লু-ও আসে না…বলতে বলতে সারা বাড়ি ছুটে বেড়াতে লাগল টম।

সনাতন বৌমাদের আঁচল চাপা হাসি আর আইভির অন্য কাজে সরে যাওয়া দেখে বুঝলেন সবার আচরণেই হাঁপ ছেড়ে বাঁচার ইঙ্গিত রয়েছে। এরপর বেশ কয়েক রাত দাদু ঠাম্মির বিছানায় নিশ্চিত আশ্রয় হল টমের।

পর্ব – ৮        

হপ্তাখানেক পর ছোটবৌমা আর টমের চেঁচামেচিতে বিকেলের দিকে ঘুম ভাঙল সনাতনের। চিৎকার করে কাঁদছে টম আর বলছে, – আমি কী করব? দাদুই তো বলেছে লাইভ ব্লু’র স্বপ্ন হয়ে যাওয়ার কথা। আমি সে কথাটাই স্কুলে বলেছি। সোমা মিস’ই তো ধরে নিয়ে গেল হেড মিস-এর কাছে। বললেন, এই হল কালপ্রিট।

ব্যাপার বুঝে গেলেন সনাতন। ডাকলেন টম আর টমের মা’কে। ছোটবৌ এমনিতে একটু ঠোঁটকাটা হলেও এবাড়ির নিয়মের বাইরে যেতে চায় না কখনও। ঘরে ঢুকেই বলল, – বাবা খুব বাজে ব্যাপার। যা তা বলেছে স্কুলে আপনার নাতিকে নিয়ে। নাতি আবার আপনার নাম বলে এসেছে স্কুলে। ওকে না টি সি দেয়। আপনি একটু দেখুন।

আজ ওদের স্কুলের উঁচু ক্লাসের একজনকে টি সি দিল। স্কুলের অনলাইন ক্লাসের হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে কোনও বাজে ছবি পোস্ট করে ফেলেছে বলে।

-আচ্ছা তুমি যাও, আমি দেখছি -বলে বৌমাকে সরালেন সনাতন। কাছে ডাকলেন নাতিকে, – কী হয়েছে রে স্কুলে?

টেনশন হলেই টম দ্রুত কথা বলে, -দেখ না সোমা মিস আর ওর ছেলে বিজয় আমাকে হেড মিসের কাছে নিয়ে গিয়ে ফাঁসিয়ে দিল।

-কেন? কি বলেছিস ওদের? গলা গম্ভীর করলেন সনাতন।

-না না, বিশ্বাস করো দাদু, আমি ওদের কিচ্ছু বলিনি। আমি তো তোমাদের কাছে এখন শুই রোজ। ঘুমিয়েও পড়ি। কিন্তু স্কুল গেলেই বন্ধুরা আগের মতো লাইভ ব্লু’র গল্প করবে বলে আমাকে ডাকে। আমি উত্তর দিই না। কদিন ধরেই ডাকছিল, আমি যাচ্ছিলাম না। অন্য বেঞ্চে বসে টিফিন খাচ্ছিলাম রণজয়দের সঙ্গে। আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে গেল ওদের ওখানে। বলল, বল কী দেখেছিস!

আমি বললাম, আমি দাদুর ঘরে ঘুমোই এখন। স্বপ্ন দাদুর ঘরে যায় না। তাই লাইভ ব্লু’ও দেখি না। আমার দাদু বলেছে, স্বপ্নের কোনও লাইভ ক্লু থাকে না। তাই স্বপ্নও সত্যি হয় না। বিজয় তখন আমাকে ধমকাল, – আবার ন্যাকা সাজা হচ্ছে? লাইভ ক্লু খোঁজা হচ্ছে? কাল আমি লাইভ ক্লু আনব।

আজ বিজয় এনেছিল একটা প্যাকেট, কী নাম বলল ভুলে গেছি।

পিঠের শিরদাঁড়া দিয়ে ঠাণ্ডা স্রোত নামল সনাতনের। বুঝে গেলেন বিজয়ের দৌড় কতটা। শক্ত হয়ে বললেন, – তারপর?

-আজ টিফিনে বিজয় প্যাকেটটা এনে বলল, এই নে তোর লাইভ ক্লু। এই কথা বলে একটু থামল টম। তারপর আবার বলল, – আমিও ছাড়িনি দাদু। বললাম, এটা ডেড ক্লু। লাইভ কোথায়? জীবন্ত প্রমাণ চাই। এটা চলবে না।

নিজের নাতির বুদ্ধির তারিফ করবেন না না বকা দেবেন নিজেই ঠিক করতে পারলেন না সনাতন। টম তখনও বলে চলেছে, – সেই সময় বেল পড়ে যাওয়ায় ক্লাসে ঢুকলেন ঝুমা মিস। বিজয়ের হাতে তখনও ওই প্যাকেটটা ধরা। টেনে এক চড় কষালেন  বিজয়ের গালে মিস। প্রচণ্ড রেগে মিস বললেন, – কে এনেছে এসব?

বিজয় এত অসভ্য চড় খেয়ে সরাসরি আমার দিকে আঙ্গুল তুলে দেখাল। ঝুমা মিস তক্ষুনি আমাকে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন হেড মিসের রুমে। হেড মিস জিজ্ঞেস করলেন, – তুমি এসব এনেছ?

আমি সব খুলে বললাম। ওমা! সোমা মিস সঙ্গে সঙ্গে ঘরে ঢুকে বললেন, – না বড়দি, আমি আপনাকে বলছি এই আসল কালপ্রিট। আমার ছেলে বিজয় কালই সব বলেছে আমাকে।

-বেশ, বুঝলাম। হাত তুলে থামালেন সনাতন।

ফোন তুলে যোগাযোগ করলেন তাঁর বিপদের ত্রাতা নীরজের সঙ্গে। সব শুনে নীরজ বলল, – আপনি ছাড়ুন দাদা। আমি কথা বলছি ওদের সঙ্গে। সন্ধ্যেবেলা জানাব।

পর্ব – ৯

চিন্তা বাড়িয়ে সন্ধ্যা গড়িয়ে নীরজ নিজে এল ন’টা নাগাদ। ঘরে ঢুকেই বলল, কাউকেই স্কুলে যেতে হবে না। একটু চা খাওয়ান বৌদি।

বউকে চা বানাতে বলে সনাতন জিজ্ঞেস করলেন, – এতো আশ্চর্যের ব্যাপার গো, কী করে মিটল সব?

-না না, চিন্তার কিছু নেই। তেমন কোনও বড় ব্যাপারও নয়। ছোটদের ব্যাপার। ওদের অনেকেই পরিচিত। কনফারেন্স কলে হেড মিস, সেক্রেটরি সবাইকে নিয়ে কথা বললাম। সবাই ছিলেন।

-কী কথা হল? জানতে চাইলেন সনাতন।

– না প্রসঙ্গটা তুলে সবাইকে বললাম, ছেলেটা যখন স্বপ্নের কথা বলেছে তখন ওর স্বুপ্নকে ভাঙবেন না। ওই স্বপ্নকে বাস্তবের মাটিতে নামালেই, স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে যাবে। বাস্তবও হয়ে উঠবে আরও রূঢ় বাস্তব। এটা ভুলে যাবেন না, তখন ওই রূঢ় বাস্তব দুঃস্বপ্নের মতো ভয়ঙ্কর হয়ে যাবে। যে শিশুমনে স্বপ্ন তৈরি হয়ে গেছে তাকে চ্যালেঞ্জ করতে যাবেন না। যারা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ছে তাদের পাঠিয়ে দিন অন্য সেকশনে, সমস্যা মিটে যাবে।

হেড মিস অবশ্য কোনও কথা বলেননি। সেক্রেটরিকে বোঝালাম, – আধুনিক ধারণায় সেন্সর শব্দটার মানে বদলেছে জানেন তো, কোনও ভাবনাকে কাটা বা ছাঁটা নয়। বরং মেকস্‌  অ্যান এরর ইন সেন্স অফ এ চাইল্ড।

-রাইট, অ্যাবসুলুটলি কারেক্ট। তাই তো ওকে শেখানো হয়েছে লাইভ ব্লু একটা স্বপ্ন। ও তাই শিখেছে এবং বলেছে। আহ্লাদে আটখানা হয়ে চেয়ারে নিজেকে এলিয়ে দিতে দিতে বললেন সনাতন, – ইউ আর কারেক্ট ইন ইয়োর পয়েন্ট, জবর শিক্ষা দিয়েছ তাহলে ওদের।

বিজয়ীর হাসি হেসে চায়ে চুমুক দিয়ে নীরজ বলল, – একদম। চুপ করে মেনে নিতে বাধ্য হল সবাই। তোমার নাতির কোনও দোষ নেই, ওটা স্বপ্ন ছিল বাস্তবে নেই।

কথার মাঝেই হাঁপাতে হাঁপাতে ঘরে ঢুকল টম, চোখে জল। বলল, – দাদু দাদু।

সনাতন জিজ্ঞেস করলেন, – কী হয়েছে রে?

-ছোটদি মারল। কাঁদতে কাঁদতে বলল টম।

-কেন আবার কী হল? আইভি কে আবার কী বলেছিস? ও তো কাউকে মারে না!

এবার এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে গেল টম, – না না, শোনও না ও ফোনে ওর আন্টিকে জিজ্ঞেস করছিল একটা রচনা দিয়েছে স্কুলে। তোমার জীবনের স্বপ্ন, কোনও বইতে নেই, কোথায় পাব আন্টি? আমি খেলছিলাম, ওর কথা শুনে বললাম, কেন বাড়িতেই ওপরের ঘরে। লাইভ ব্লু। তারপর ছোটদি…

হাত তুলে নাতিকে থামালেন সনাতন। সবাই চুপ করে যাওয়াতে আপনা আপনিই থেমে গেল টম। সনাতনের চোখ সোজা গিয়ে পড়ল নীরজের ওপর, এমন ঘটনার জন্যে তৈরি ছিল না মনোবিদ নীরজ। কোল থেকে গড়িয়ে পড়ে গেল তার ফোনটা। নিচু হয়ে ফোনটা তুলতে গিয়ে নীরজের মুখ দিয়ে নিজের অজান্তেই বেড়িয়ে এল, – সেন্সর — এরর ইন সেন্স। নাথিং এলস্‌। এটাই রোগ, এটাই ওষুধ।

Tags: , ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ