15 Apr

মাল্যভূষণ

লিখেছেন:সুদর্শন মুখোটী


গীতাঞ্জলি রায় সকাল থেকে ব্যস্ত। আজ রবীন্দ্রজয়ন্তী। দু’মাস ধরে কিশোর কিশোরীরা আন্তরিক প্রয়াসে রিহার্সাল দিয়ে আসছে। আজ সেই দিন, পঁচিশে বৈশাখ। শান্তিনিকেতনী ভাবধারায় সেজে উঠছে মঞ্চ।আজ সন্ধ্যায় হবে রবীন্দ্র স্মরণ।

গীতাঞ্জলি শিক্ষালাভ করেছে শান্তিনিকেতনে, বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পাড়ার কিশোর কিশোরীদের নিয়ে গড়ে তুলেছে ‘কৈশোরিকী’, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। ‌‌‌‌‌‌‌‌‌রবীন্দ্রসঙ্গীত, আবৃত্তি, নৃত্য পরিবেশন করবে কৈশোররিকীর সদস্যরা।অভিনীত হবে  ‘ডাকঘর’ নাটকের নির্বাচিত অংশ।গীতাঞ্জলির তীক্ষ্ণ নজর আর ঘাম ঝরানো পরিশ্রম দৈনিক রিহার্সালে।অনুষ্ঠানে প্রতিটি প্রর্দশন নিখুঁত হতে হবে।অংশগ্রহণকারীরাও প্রাণ ঢেলে অনুশীলন করেছে।

গীতাঞ্জলি রায় নিশ্চিত,অনুষ্ঠান সর্বাঙ্গ সুন্দর হয়ে উঠবে।রবীন্দ্র সংস্কৃতি প্রশিক্ষণে ব্যস্ত গীতাঞ্জলি মনে মনে ভেবেছে,ভাগ্য তাকে উদার সহযোগিতা করেছে।  কৈশোরিকীতে বহু সবুজ প্রতিভার সমাবেশ ঘটেছে।এদের সঠিক পরিচর্চা করতে পারলে একদিন বাংলা তথা ভারতের সাংস্কৃতিক সম্পদ হয়ে উঠবে।

ভাবনার আকাশে কিঞ্চিৎ চিন্তা মেঘের আনাগোনা।গত বছরের মতো যদি সন্ধ্যায় হঠাৎ ঝড় বৃষ্টি হয়! আবহাওয়া দপ্তর আশ্বস্ত করেছে,আগামি আটচল্লিশ ঘণ্টায় ঝড় বাদলের সম্ভাবনা নেই। মাঝে মাঝে মনে হয়,রবীন্দ্রনাথ কেন কালবৈশাখীর কালে জন্মালেন।সুরক্ষার ঘেরাটোপে প্রেক্ষাগৃহ তাদের নয়, ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় পাড়ার মাঠে তৈরি হয়েছে খোলা মঞ্চ।

কৈশোরিকীর সদস্যরা খুবই আন্তরিক। আজ সকালে তারা এক ডালি সাদা রজনীগন্ধা ফুল এনে দিয়েছে।গীতাঞ্জলি সারা দুপুর সেই ফুলের মালা গেঁথেছে। কৈশোরিকীর পক্ষ থেকে  রবীন্দ্রনাথের ছবিতে মালা পরাবে।রবীন্দ্রনাথের ছবি সাদা রজনীগন্ধার মালা ছাড়া কি মানায় !

মালা গাঁথার শেষে সুতোর দুই প্রান্ত বাঁধতেই হয়ে গেলো বেশ বড় একটা মালা। ভালোই হয়েছে। কবিগুরুর বড় ছবিটায় মালাটা দু-ফেলতা করে পরানো যাবে। মালাটা,গোড়ে মালার মতো মোটা দেখাবে।খুব সুন্দর মানাবে।

বিকেল গড়িয়ে চলেছে,এবার মঞ্চে যেতে হবে।তদারক করতে হবে মঞ্চের সাজসজ্জা,অনুষ্ঠানের কুশীলবদের সাজগোজ,সব ঠিক ঠাক হলো কিনা।রবীন্দ্রনাথের ছবিটাও সাদা কাপড় মোড়া কাঠের চেয়ারে সসম্মানে বসাতে হবে,মঞ্চের একদিকে।

সাজিতে নিজের হাতে গাঁথা মালা সাজিয়ে,ঘরের কোণে সযত্নে রাখা  ছবিটা তুলতে গিয়ে গীতাঞ্জলি তো অবাক! চোখে পড়লো,ছবিটার পাশেই এক‌ই মাপের হাতে আঁকা,কার্ডবোর্ডে সাটা একটি রবিঠাকুরের ছবি।

পেছন থেকে ক্ষণিকা বলে উঠল, “মা,ছবিটা আমি এঁকেছি।কেমন হয়েছে?”

গীতাঞ্জলি অবাক হল, চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া তার মেয়ে,ফ্রেমে বাঁধানো ছবিটা দেখে দেখে এতো সুন্দর ছবি এঁকেছে! ওকে এবার কৈশোরিকীর সদস্য করে নিতে হবে।

গীতাঞ্জলি একটু থামলো।মালাটাকে নিপুণ হাতে দু-ভাগে ভাগ করলো। মনে মনে বললো, একটা মালা শোভা পাবে মঞ্চের কবিঠাকুরের ছবিতে।অন্যটায় সেজে উঠবে ঘরের রবীন্দ্রনাথের ছবি।

Tags: , ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • Ashis Kumar Chakraborty on January 13, 2024

    খুব ভালো লাগলো লেখাটা। শুভেচ্ছা রইল লেখক এবং সকল সদস্যদের জন্য।

    মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ