08 Aug

শালপাতা-চিকেন ও একটি অদ্-ভূতুড়ে কাহিনী

লিখেছেন:দেবাশিস সাহা


।।১।।

ভূতুড়ে গল্পের আসরে যারা প্রায়ই আফসোস করে থাকে – “ঈশ, আমার জীবনে কখনো কোনো ভূতুড়ে এনকাউনটারই হয়নি!” – তাদের এই গল্পটির সাথে অন্তত একবার পরিচয় করিও; তেনা’দের সাথে এনকাউনটারের বাকি ইচ্ছেটুকুর এনকাউনটার হয়ে যাবে কি না, ঠিক নেই!

হ্যাঁ, আমিও তাদের মধ্যেই একজন। ছিলাম! হ্যাঁ, ছিলাম! গত বছর ডিসেম্বরে পুরুলিয়া ভ্রমনে গিয়ে যা অভিজ্ঞতা হয়েছিল, তাতে করে নিজেকে ‘ছিলাম’ এর পর্যায়েই ফেলতে হচ্ছে বৈকি।

ঘড়িতে তখন বিকেল পাঁচটা হবে। ঘন জঙ্গলে মোড়া গড় পঞ্চকোট পাহাড়ে সন্ধ্যা নামতে শুরু করলো বলে। নামার রাস্তা হারিয়ে ফেলে আমাদের দুই বন্ধুর যখন ভয়ে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে এল, কোত্থেকে একটা স্থানীয় ছোকরা এসে আমাদের পথ দেখিয়ে সে যাত্রায় উদ্ধার করেছিল। সমতলে নেমে এসে যখন শুভঙ্করের “জলদি পা চালা” কথামতো ছেলেটিকে কোন বখশিশ না দিয়েই একরকম পালিয়ে এসেছিলাম, তখন বুঝতে পারিনি সে ‘পাপ’ প্রায় পৌনে তিন ঘণ্টার রাস্তা পেরিয়ে সুদুর অযোধ্যা পাহাড়ে এসে আমার ঘাড়ে চাপবে।

একে তো পুরুলিয়া যাবার প্ল্যান যবে থেকে করছি, শুভঙ্করের মুখে এক কথা – “চ! এবার বেগুনকোদরের ভূত দেখবো!” যারা জানে না, তাদের জন্য বলে রাখি – বেগুনকোদর হল গিয়ে পুরুলিয়ার একটা ভূতুড়ে ষ্টেশন। গল্পটা হল এই যে কোন এক ভদ্রমহিলা, ভদ্র ভাষায় যাকে ‘পেত্নি’ বলে, সে নাকি ট্রেন ট্র্যাক ধরে রাতের বেলায় সেখানে হাঁটে। – হ্যাঁ, প্রথমবার জিজ্ঞেস করাতে এরকমই বলেছিল শুভঙ্কর। তবে এই ব্যাপারটা সত্যি যে সোশ্যাল মিডিয়ায় পুরুলিয়া নিয়ে খুঁজতে বসলে তুমি যত না ভ্লগ দেখতে পাবে, তার থেকে অনেক বেশি করে পাবে এই বেগুনকোদরের কাহিনী।

গড় পাহাড় থেকে নেমে এসে ঘেমে-নেয়ে একশা হয়ে দুই বন্ধুতে যখন আখের রস কিনে খাচ্ছি, দোকানদার জিজ্ঞেস করল –

তা, বাবুরা কোথায় কোথায় ঘুরলেন বটে?

আখের রসে চুমুক দিতে দিতে শুভঙ্কর বলল –

ওই তো অযোধ্যা সার্কিটের মধ্যে তোমার ওই তুরগা ফল্স, আপার ড্যাম, লোয়ার ড্যাম, আর …… অ্যাই দেবাশিস ওটা যেন কি লেক ছিল যেখানে তুই আমাকে গুগল ম্যাপ দেখে দেখে ঘাটে নিয়ে যাচ্ছিলিস, …… হ্যাঁ, মার্বেল লেক! আজ গড় সার্কিট কমপ্লিট করলাম, কাল ওই মুরগুমা, খয়রাবেরা ড্যাম ওগুলো কভার করব; আর ওই বামনি ফল্স শুনেছি ফেমাস খুব, ওটা তো দেখবই।

আচ্ছা। বামনি যেতে হলে একটু সকালের দিকে বেরোবেন বটে। ন’টার আগে গেট খোলে না, কিন্তু বেলা বাড়লে ভিড়ও বাড়ে বুঝলেন কি না? এখন সিজন তো। তবে সকালে বাইক সাবধানে চালাবেন। কুয়াশা পড়ছে তো খুব আজকাল কি না।

কাল? না না ! আমরা তো এখনই অযোধ্যা রওনা দেব। আমাদের হোটেল বুক আছে।

কথাটা যেই বললাম, লোকটি ক’ সেকেন্ড চুপ করে নিয়ে বলে উঠল –

বলেন কি? এখন এত রাতে এতদূর যাবেন? পাহাড়ি রাস্তা!

এত রাত কোথায়? – আমি বললাম।

হ্যাঁ, আড়াই – তিন ঘণ্টার রাস্তা তো বটেই। আর রাতের বেলা রাস্তাটা খুব একটা ভালো না বটে।

হ্যাঁ, বছর কয়েক আগে হাতি বেরিয়েছিল শুনেছি। – উত্তরে আমি বললাম।

শুধু হাতি না বাবুরা।

তাহলে কি?

কিছুক্ষন আবার চুপ করে থেকে লোকটি বলে উঠল –

আপনারা হলেন গিয়ে শহুরে বাবু, বিশ্বাস যাবেন কেনে? শোনা যায় ‘তেনা’-দের জন্য এতটা রাস্তা রাতের বেলায় চট  করে কেউ খুব একটা কেউ যায় না।

এই ‘তেনারা’ শুনে আমার আবার বিরক্তি হল। আলাদাই ফ্যান-ফলোয়িং চলছে ভাই ‘তেনা’ দের! তবে হ্যাঁ। সত্যি তো। এতটা রাস্তা। তার উপর সন্ধেও নামছে। শুভঙ্করের দিকে তাকালাম।

গেলাস-টা খতম করে দোকানদারকে পয়সা মিটিয়ে হেলমেট পড়তে পড়তে বলল – “চ!”

।।২।।

রাস্তায় যেতে যেতে তবু একবার জিজ্ঞেস করলাম –

ভাই, এতটা রাস্তা যাবি? ধারে কাছে কোথাও কোন হোটেল দেখে থেকে গেলে হত না?

পাগল হয়েছিস তুই? আজ ডিনারে শালপাতা-চিকেন করবে বলেছে। অর্ডার দিয়ে এসেছি। প্রান যায় যাক, ওই  শালপাতা-চিকেন আমার চাই!

এক-দেড় ঘণ্টা মতো চালিয়ে একটা চার মাথার মোড়ে এসে বাইক আস্তে করে শুভঙ্কর বলল –

ওটা ওখানে কি বেচছে রে ভাই? কাবাব – টাবাব নাকি বল তো?

এখান থেকে তো ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, গিয়ে দেখি চ।

খিদে তো পেয়েছিল, গিয়ে দেখি খাসির মাংসের চাট বিক্রি হচ্ছে।

ওরেব্বাস! পঞ্চাশ টাকায় খাসির মাংস! নাম নাম! – বলে বাইক থেকে একরকম লাফিয়ে নামল শুভঙ্কর।

দু’ বন্ধুতে মিলে জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে যেই না উঠেছি, দোকানদার বলল –

কোথা থেকে এয়েচেন বাবুরা?

বর্ধমান থেকে! – হ্যাঁ, রাস্তাঘাটে ভুলভাল ঠিকানা বলা আমাদের পুরনো স্বভাব। মুর্শিদাবাদে গিয়ে তো ব্যাঙ্গালোর বলেছিলাম!

আচ্ছা, এখন যাবেন কোথায় বটে?

অযোধ্যা! – শুভঙ্কর বলল।

দোকানদার খানিক থেমে বলল –

এখন? এই রাত্তিরবেলা পাহাড়ে চড়বেন?

আবারো আমি বিরক্তির চোখে শুভঙ্করের দিকে তাকালাম। হাত ধুয়ে দোকানদারকে পয়সা মিটিয়ে হেলমেট পড়তে পড়তে বলল – “চ!”

গোশালা মোড় থেকে  আরও এক ঘণ্টা মতো চালানোর পর শুরু হল একটা সোজা টানা রাস্তা। অন্ধকারে বোঝার উপায় নেই দুপাশে ক্ষেত আছে, নাকি জঙ্গল! রাস্তায় আসার পথে যেখানেই দাঁড়িয়েছি, যাকেই রাস্তা জিজ্ঞেস করছি, সবার মুখ যেন শুনেই ভয়ে সাদা হয়ে যাচ্ছে – “এত্ত রাতে পাহাড়ে চড়বেন?” টের পেলাম যখন সত্যি সত্যি অযোধ্যা পাহাড়ের চড়াই শুরু হল। দিনের বেলায় দুপাশের পাহাড় ও সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মনোরম শোভা দেখতে দেখতে ওঠা, আর রাত্রিবেলা ঘন অন্ধকার আর কুয়াশা ভরা রাস্তায় ফগ-লাইট মেরে ওঠা – আকাশ-পাতাল তফাৎ! মাঝে মধ্যে একটা – দুটো চারচাকাকে নেমে যেতে দেখলাম। সত্যি তো! লোক নামছে বটে! কিন্তু উঠছি শুধু আমরাই! সব ওই শালপাতা-চিকেন এর দৌলতে!

যেখানে আমরা ছিলাম, সেই বাইকার্স ক্যাম্প থেকে মোটামুটি তখনও ছ-সাত কিলোমিটার রাস্তা বাকি হবে। বাইকের আলোয় একটা মাইল ফলক দেখে চমকে উঠলাম!

“বেগুনকোদর”!

ভাই এই নামে পাহাড়ের ওপরও একটা গ্রাম আছে?

দাঁত বের করে কাঁধ নাচাতে নাচাতে শুভঙ্কর বলে উঠল –

সেই বেগুনকোদরেরই তো চিকেন খাবি রে পাগলা!

না! একে আর কিছু বলে লাভ নেই! ম্যাপ দেখতে লাগলাম। কিছুটা পথ চড়াইয়ের পর দেখলাম পাকা সড়ক শেষ হয়ে মাটির আর পাথুরে রাস্তা শুরু হয়েছে। গ্রামটার ভিতর দিয়ে গেছে সেই রাস্তা। গ্রামটা কেমন যেন নিঝুম! শুনশান! মাটির দেওয়াল আর খড়ের ছাউনি দেওয়া ছোট্ট ছোট্ট ঘরগুলো পূর্ণিমার আলোয় নির্জন কোন মায়াবী আবহ তৈরি করছিল যেন! ঠিক তখনই হঠাৎ শুভঙ্কর বাইকটা আস্তে করল।

কি হল কি ? আবার আস্তে করছিস কেন? – বিরক্তির স্বরে বললাম।

ভাই, ওদিকে দেখ!

শুভঙ্কর যেদিকে ইশারা করল, রাস্তার ডানদিকটায় দেখি একটি মাটির বাড়ির দরজার সামনে কে যেন একটা দাঁড়িয়ে আছে। অন্ধকারে স্পষ্ট কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। তবে হ্যাঁ কেউ তো আছে সেখানে। চেষ্টা করে যতটা বোঝা যায় – একটি রুক্ষকায় মহিলা! পরনে সাদা শাড়ি আর ঘোমটা টানা! কিচ্ছু করছে না। ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। একভাবে।

শুভঙ্কর গাড়িটা আরও আস্তে করল। সকাল থেকে যা যা শুনে চলেছি, আমার কেমন যেন একটা খটকা লাগলো। ফিস ফিস করে বললাম –

ভাই থামাস না! চল! চল! চল! চলতে থাক! স্পিড কমাস না! চুপচাপ চল! একদম স্পিড কমাস না ভাই, চ! চ! চ!  – বলেই রাস্তাটার অন্যদিকে মুখটা ঘুরিয়ে নিলাম।

দাঁড়া না! – বলে শুভঙ্কর ওই ছায়ামূর্তিটার দিকে হেডলাইটের আলোটা ফেলার চেষ্টা করল। না, নতুন কিছু দেখলাম না আমরা! একজন রুক্ষকায় মহিলা, সাদা শাড়ি, ঘোমটা টানা, কিচ্ছু করছে না, দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ!

আর এক মুহূর্ত সেখানে থামলে, আমরাই তাঁর শালপাতা-মানুষ ডিনার হয়ে যেতাম না কে বলতে পারে!

।।৩।।

বাইকার্স ক্যাম্পে ফেরত এসে দেখি গোটা ক্যাম্পে আমরা দুজন আর ক্যাম্পের কর্মীরা জনা কয়েক ছাড়া আর কেউ নেই। সক্কালবেলা বাচ্চা – বুড়োদের যে গ্রূপটাকে ক্যারাটে প্র্যাকটিস করতে দেখে গেলাম, তারাও শুনলাম আজ নাকি গড় পঞ্চকোট ট্রিপে গেছে, ফিরবে কাল।

বন-ফায়ারের কাছে বসে ক্যাম্পের কর্মী রামেশ্বরকে বললাম ঘটনাটা। সেও কিছুক্ষন ওই রাস্তার লোকগুলোর মতো চোখ দুটো গোল গোল করে তাকিয়ে রইল, তারপর গভীর স্বরে বলে উঠল –

আপনারা ভুলেও তাঁর মুখ দেখে ফেলেননি তো বটে?

আমি শুভঙ্করের দিকে তাকিয়ে বললাম – আমি তো দেখতে পাইনি ঠিক করে কিছু, তুই দেখেছিলিস কি?

ধুর! তুই আর দাঁড়াতে দিলি কোথায় ওখানে যে দেখব?

এ ব্যাটার কিনা আফসোস হচ্ছে! রামেশ্বর বলতে লাগলো –

শোনা যায় ভুল করেও যদি কেউ তাঁর দিকে চেয়ে ফেলে, সে নাকি তাকে খুঁজতে খুঁজতে পিছন পিছন ঠিক চলে আসে।

একটা ঢোক গিলে কৌতূহলের সুরে বললাম –

তা , … তারপর!

তারপর নাকি সে এসে দরজায় কড়া নাড়ে! আর দরজা খুলতেই …

দরজা খুলতেই …

রামেশ্বর একবার আমার দিকে তাকাল, একবার শুভঙ্করের দিকে, তারপর গলা আরও নিচু করে বলল –

তারপর তাকে নিয়ে যায়, রেখে যায় একজোড়া ছেঁড়া কালো চটি , আর …

আর!! –শুভঙ্করেরও ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গেছে এবার।

আর একফালি কচি বেগুন!

অ্যা! কচি বেগুন? কি? – ডিসেম্বরের শীতে ঘাম মুছতে মুছতে বললাম – “কিসব বলছ দাদা? নেশা-টেশা করেছো নাকি? যাও চিকেনটা রেডি হল কিনা দেখ গিয়ে! যত্তসব!

দেখালাম, সে আর কোন কোথা বলল না। চুপচাপ আগুনে কাঠ দিতে লাগলো। কিছুক্ষন সব চুপ। ঝি ঝি পোকার ডাক আরও তীব্রতর হল। নীরবতা ভাঙল শুভঙ্করই –

ধ্যার! সব ফালতু কথা! আমরা তো আছি ক্যাম্পে! দরজা পাবে কই? আর কড়া-ই বা নাড়বে কি করে?

রাত্রি দশটা নাগাদ শালপাতায় মোড়া থালাভর্তি চিকেন আমাদের ক্যাম্পে দিয়ে গেল রামেশ্বর। সঙ্গে লেবু, শশা-পেয়াজ, কাঁচালঙ্কা আর কটা হাত-রুটি। ক্যাম্পের চেনটা টেনে দিয়ে আমরা একরকম ঝাঁপিয়ে পড়লাম চিকেন এর পিস গুলোর দিকে। কি দারুন স্বাদ, মুখে দিলেই মিলিয়ে যাচ্ছে। উপরে লেবুর রস ছড়িয়ে দিতেই গন্ধে মন-মাতাল হয়ে গেল যেন। চোখ বন্ধ করে দুই বন্ধুতে খেতে খেতে বললাম – “আহা! পুরুলিয়া আর শালপাতা-চিকেন! সার্থক!!”

।।৪।।

রাত্রে খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পরেছি। হঠাৎ পেটটা মোচর দিয়ে উঠল। না গেলেই নয়। মনে হয় ওই খাসির মাংসের কামাল। উফ কি বিপদ রে বাবা! এত ঠাণ্ডায় যে বেরতেই ইচ্ছে করে না।

কিন্তু বেরতে হল বৈকি। ক্যাম্পের যেদিকে আমাদের তাঁবুটা ছিল, তার উল্টোদিকে খাঁদটার কাছে তিনটে পাশাপাশি কমন বাথরুম। চপ্পল পায়ে শিশির ভেজা ঘাস মাড়িয়ে দৌড়ে গিয়ে ঢুকলাম সেখানে।

সকাল থেকে যা যা হয়ে চলেছে, সেই সমস্ত আকাস-কুসুম চিন্তাভাবনা মাথায় ঘুরতে লাগলো। পাহাড়ের উপর এত সুন্দর আর ছোট্ট একটি গ্রাম এই সীতারামপুর। ‘ছোটনাগপুর মালভূমি ’ –র ব্যাপারে শুধু বইতেই পরেছিলাম, না এলে বুঝতেও পারতাম না আসলে এও একটা পাহাড়ই বটে। আর এখানকার পরিবেশ, আকাশ-বাতাস আর আবহাওয়ার স্নিগ্ধতা যে কোন মানুষের মনে ধরে যাবে নিমেষেই! আবার এরই মধ্যে যতসব উল্টোপাল্টা গাঁজাখুরি গল্প। বিরক্তি লাগলো একটু। ভাবলাম – ধুর! কেই বা ছিল ওই মহিলা! কোন কাজেই সেখানে দাঁড়িয়ে ছিল হয়তো! বেকার বেকার বেশি ভাবতে গেছি! কোন এক সময়ে ছেলেবেলায়  বইয়ের পাতায় ‘টেনিদা’ কে বলতে দেখেছিলাম – “কোন ভয়ে  কম্পিত নয় আমার হৃদয়!” – ভাবতে ভাবতে আপন মনেই হাসছি, হঠাৎ –

বাথ্রুমের টিনের দরজাটায় বাইরে থেকে কে যেন দু’বার টোকা মারল।

ঠক ঠক! রাগে মাথাটা ভীষণ গরম হয়ে গেল। বললাম –

এ শুভঙ্কর! দেখ, অনেক হয়েছে! ফালতু ইয়ার্কি মারিস না একদম!

ওদিকে কোন জবাব নেই। আমার বিরক্তি যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেল। বললাম –

না! লিখতে পারব না। তোমরা চারটে ইয়ার-দোস্ত বহুকাল পর এক জায়গায় হলে একে অন্যকে যে ভাষায় সম্বোধন করে থাকো, সেটা যদি কোন ওয়েব সিরিজ হয়, তবে সে সিরিজের আধ-এক খানা এপিসোড আওরে নিয়ে, তারপর বললাম –

বেরিয়ে এমন পেদান পেদাবো না তোকে! দেখিস!

বাইরে যেই থাকুক না কেন; আর কোন শব্দ করল না; কিন্তু আমার চেতনা আমাকে স্পষ্ট জানান দিল যে সে বাইরেই আছে! ভয় ও বিরক্তি একসাথে আমার মাথায় চড়তে থাকল। এভাবে কতক্ষন বসে থাকা যায়?

দেখলাম বাথ্রুমের একদিকের দেওয়ালে একটা চ্যালাকাঠ দাঁড় করিয়ে রাখা আছে। ভাবলাম – যা হবে হয়ে যাক! এ নিশ্চই কোন নচ্ছার লোকের কাজ! আর সহ্য করা যাচ্ছে না! যেই হোক, আগে পেটাবো, তারপর দেখব ভূত না মানুষ!!

কোন আওয়াজ না করে ছিটকিনি টা আলগা করে দিলাম। তারপর, দরজাটা সজোরে এক ধাক্কা মেরে খুললাম। দরজায় একরকম ঠেসেই বোধ হয় সে দাঁড়িয়ে ছিল। আচমকা দরজাটা খোলায়, এক ধাক্কায় এক হাত দূর গিয়ে পড়লো সে। অন্ধকারে ঠিক মতো দেখা যাচ্ছিল না। তবু চ্যালাকাঠটা দিয়ে পিঠের উপর দুমদাম দিলাম বেশ করে কয়েক ঘা! পায়ে মারলাম, উঠবার সুযোগ দিই নি, দিলেই যদি এক লাফে ঘাড়ে চেপে বসে! ও না! এ তো কোন মানুষ হবে, ঘাড়ে চাপবে কেমন করে? রাগের বশে মাথায় কি সব ভাবতে লেগেছিলাম খেয়াল নেই! ডজন খানেক বারি মারার পর হঠাৎ –

দেবাশিস! অ্যাই দেবাশিস!

শুভঙ্করের গলা না ? চকিতেই পিছন ঘুরে দেখলাম, তারপর সামনে ঘুরলাম – কেউ নেই!!

এ কি! এই এক নিমেষে কোথায় হাওয়া হয়ে গেল? এ কি করে সম্ভব ? আমার সারা শরীরে হঠাৎ কাপুনি  দিয়ে উঠল! হাত থেকে পরে গেল কাঠের টুকরোটা।

দেখি শুভঙ্কর দৌড়ে দৌড়ে আসছে । তারপর যা দেখলাম তাতে আমার আত্মারাম খাঁচা হয়ে গেল!

ভাই দেখ। – বলে শুভঙ্কর সামনে এসে দাঁড়াল। দেখি ওর এক হাতে একজোড়া কালো ছেঁড়া চপ্পল, আর অন্য হাতে একফালি কচি বেগুন!!

সক্কাল সক্কাল তলপি–তলপা গুটিয়ে যখন মানে মানে আর প্রান নিয়ে কেটে পড়ার তাল করছি, বাইকে স্টার্ট দিয়ে কাঁদো – কাঁদো মুখে শুভঙ্কর বলে উঠল –

ভাই, বামনি ফলস ?

কোন দিকে না তাকিয়ে হেলমেটটা পড়তে পড়তে বললাম –

চ! বাড়ি চ!

[মতামত ও বানানবিধি লেখকের নিজস্ব ] 

Tags: , ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • » আষাঢ়ে গল্প on August 8, 2023

    […] […]

    মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ