রাত থেকেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি ।সকালেও থামবার কোন লক্ষণ নেই। মধ্যপ্রদেশের সাতপুরায় পাহাড়ের উপর বিশাল গেস্টহাউস, নামটাও বেশ – হিলটপ গেস্ট হাউস। নামটা যতই রোমান্টিক হোকনা কেন এই মুহূর্তে তন্ময়ের সেখানে খুব ভালো লাগছেনা না। তার মূল কারণ সেখানে আজ সে ছাড়া আর কোন লোক আসেনি, অত বড় ফাঁকা একটা বিশাল বাড়ি তাকে যেন গিলে খেতে আসছে। অবশ্য এই অবস্থায় বাইরে থেকে কোনো লোক আসবেই বা কেমন করে । তন্ময়ের ব্যাপারটা আলাদা। এটা তার প্রথম চাকরি ।কলকাতা হেড অফিসে দিন পনেরো আগে ইন্টারভিউ হল তার ঠিক দুদিন পরেই আবার ডাক। সেদিনই সব ফাইনাল হয়ে গেলো। তন্ময়ের মনটা খুব ফুরফুরে। মধ্যপ্রদেশের সাতপুরা সুপার থার্মাল পাওয়ার স্টেশনে এসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সেখানেই পোস্টিং। হেড অফিস থেকেই হাওড়া বোম্বে ভায়া নাগপুর- এই ট্রেনের টিকিট বুক করে দিয়েছে। তিনদিন পরে রওনা , তন্ময় একা অতএব কোন অসুবিধা হবার কথা নয়।
নাগপুরে নেমে গাড়ি বদলে যে স্টেশনে নামতে হবে তার নাম জীবনে প্রথম শুনল তন্ময়। স্টেশনের নাম ঘোড়াডুংরি। অফিসে বলে দিয়েছিল এবং এটাও বলেছিল যে সেখানে ট্রেন পৌঁছাবে খুব সকালের দিকে। ওই নির্জন পাহাড়ি জায়গায় কোন পাবলিক যানবাহন পাওয়ার প্রশ্নই নেই তবে খবর দেওয়া আছে কোম্পানির নিজস্ব জীপ সেখানে থাকবে, সেটাই তন্ময়কে পৌঁছে দেবে হিলটপ গেস্টহাউসে । যতদিন না তার কোয়ার্টারের ব্যবস্থা হচ্ছে সে গেস্ট হাউসেই থাকবে ।সেখান থেকেই যাতায়াত করবে তাদের গাড়িতে।
ঝিরঝিরি বৃষ্টির মধ্যে উঁচুনিচু পাহাড়ি পথে প্রায় আধঘন্টা লাগলো পৌঁছাতে । তন্ময় দেখল গেস্ট হাউসটা বিশাল কিন্তু ভীষণ পুরোনো ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জীর্ণ দশা ।একটু অপেক্ষা করার পর একজন এলো ,বুঝলো সেই ম্যানেজার ।সে জানালো খবর ছিল তাই তন্ময়ের জন্য দোতলার একটা ঘর সাফসুতরো করে রেডি করা আছে। লাঞ্চ বা ডিনার এখানে করলে আগে বলতে হবে কারণ এখানে খুব কম লোক আজকাল আসে। ম্যানেজার সঙ্গে করে নিয়ে গিয়ে দোতলার বারান্দায় একেবারে শেষের একটা ঘরে নিয়ে গেল। সেই ‘সাফসুতরো’ ঘর দেখে তন্ময় বেশ হতাশ হলো । আয়তনে ঘরটা খুব বড় বটে কিন্তু শুধু দরজাটা বাদে জানলাগুলো ভালো করে বন্ধ হয় না, টয়লেটটা মোটামুটি । যে দুটো জানলা অনেক চেষ্টাতেও বন্ধ হয়না তার ঠিক সামনে একটা গাছের ডাল বাধা দিচ্ছে।
তন্ময় বললো, এত চমৎকার গেস্ট হাউসের এই অবস্থা? ম্যানেজার জবাবে জানালো, “দেখুন, ২৫-৩০ বছর আগে যখন এই প্রজেক্ট তৈরি হচ্ছিল সেই সময় বেশ কিছু বিদেশী ইঞ্জিনিয়ার এখানে এসে অনেকদিন ছিল। তাদের থাকার জন্যই এটা তৈরি হয়েছিল। তখন সত্যিই খুব চমৎকার ছিল। প্রজেক্ট শেষ হবার পর তারা সব একে একে ফিরে গেল। তারপর থেকেই আস্তে আস্তে এমন দৈন্যদশা ।এখন এটা খুব একটা ব্যবহারও হয়না । আপনার মত দুএকজন কালেভদ্রে আসে, তাও মাত্র কয়েকদিন থাকে।
হাতমুখ ধুয়ে তন্ময় ব্রেকফাস্ট সেরে নিল। তারপর ওর স্টেশন ম্যানেজারকে ওখানকার ল্যান্ডফোন থেকে একটা ফোন করল। ওই অঞ্চলে মোবাইলের টাওয়ার পাওয়া শক্ত আর গেস্ট হাউসের ওয়াইফাই খারাপ ।তাই একটি মাত্র ল্যান্ডফোন আছে ,সেটাই ভরসা। সেখান থেকে বাড়িতে সকালে মায়ের সাথে কথা বলেছিল।
যত বেলা বাড়তে লাগলো তত বেশি ঘনঘটা , আবহাওয়া ক্রমশ আরও খারাপ হতে শুরু করলো । কী করে পাওয়ার হাউসে পৌঁছাবে ভাবছিল তন্ময়। ওর বস্ খবর পাঠালেন এত বেশি দুর্যোগে আজ আসার দরকার নেই। এতদূর জার্ণি করে এসেছে, আজ বিশ্রাম করুক। কাল দেখা যাবে।
লাঞ্চ শেষে ক্লান্ত শরীরে তন্ময় নিজের ঘরে ঘুমিয়ে অনেকটা সময় কাটালো। ঘুম ভাঙলো প্রায় বিকেল শেষ হবার পর। ঘরের ভেতর একটা নরম চেয়ারে চুপচাপ বসে রইল সে।
এতক্ষণে বৃষ্টির জোর একটু কমে এসেছে। এখন ঝিরঝির করে একটানা হয়ে যাচ্ছে, বাইরে এর মধ্যেই আবছা অন্ধকারের চাদরে ঢেকে যাচ্ছে চরাচর, পাহাড়ের রেখাগুলো অস্পষ্ট হয়ে গেছে। কোথাও কোনো মানুষের উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে না।
বাড়ির বাইরে একা একা চাকরি করার জন্য থাকতে আসা তন্ময়ের এই প্রথম ।তাই ঘরের মধ্যে বসে বসে বাড়ির কথা , আত্মীয়দের কথা ,বন্ধুদের কথা ভীষণ মনে পড়ছে। তন্ময়
ভাবছিল বাড়ির সবাইকে ছেড়ে দূরে থাকার এইতো শুরু।
সে ভাবছিল কিছুদিন আগে থেকেই রতনমামার শরীরটা গোলমাল করছিল এখন বেশ বাড়াবাড়ি চলছে। তন্ময়ের মনটা খুব খারাপ লাগছে। তন্ময়কে ভীষণ ভালোবাসেন , এখানে আসার পর থেকেই তার কথাটা বারবার মনে আসছিল। চাকরিটা পাবার দিন তন্ময়ের থেকে বেশি আনন্দ হয়েছিল তার। হইচই ফেলে দিয়েছিলেন বাড়িতে । রওনা হবার দিন তাকে প্রায় শয্যাশায়ী দেখে তন্ময়ের একদম ভালো লাগেনি । সেই অবস্থাতেও বলেছিলেন – চিন্তা করিসনি ,তোর চাকরির জায়গায় আমিই প্রথম বেড়াতে যাব ,কথা দিলাম।
নিজের মামা ছিলেন না বটে অর্থাৎ লতায় পাতায় সম্পর্কে মামা কিন্তু তাতেও ভালোবাসার কোন কমতি ছিল না। তন্ময় ছোট থেকেই রতনকে মামা বলে ডাকতো যেমন তার অন্য ভাইবোনরাও ডাকতো ।সেটা তিনি অর্জন করেছিলেন নিজগুণে । তার সুন্দর প্রাণবন্ত স্বভাবের জন্য বাড়ির সবাই তাকে ভালোবাসতো।
তন্ময়দের সাবেক বিরাট বনেদী বাড়িতে অসংখ্য ঘর ছিল ।বাড়িতে দূরে কাছের অনেক মানুষ থাকতেন, এক অর্থে তারা হয়তো পরিস্থিতির কারণেই থাকতে বাধ্য হয়েছিলেন কিন্তু তন্ময় ছেলেবেলা থেকেই দেখে এসেছে যে যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গেই তারা সবাই থাকতেন ।এটা বোধহয় ছিল তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য।
রতনমামা বেশ ছোটবেলা থেকে এই বাড়িতে এসে গিয়েছিল, ঠিক কি পরিস্থিতিতে তা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাতোনা কোনদিন। মামা পাড়াতেও খুব জনপ্রিয় ছিলেন। লম্বা চওড়া ফর্সা চেহারা, সবাই বেশ সমীহ করে চলত। দেখতে অনেকটা সিনেমার নায়কের মতোই ছিল ।তন্ময় যখন স্কুলে পড়ে সেই সময় মামা সত্যিই একটা সিনেমায় নায়কের বন্ধুর ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এটা স্থানীয় একটা সিনেমা হলে রিলিজ করেছিল। তন্ময়ের মনে আছে সেই হলের সামনে বিপুল আয়তনের বিজ্ঞাপনের দেওয়ালে নায়িকা সমেত দু-তিনজনের সঙ্গে বেশ বড় করে রতনমামাকেও আঁকা হয়েছিল যেটা পথ চলতি অনেক চেনা মানুষ একটু দাঁড়িয়ে দেখে নিত। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই ছবি একদম চলেনি তাই মামার জীবনের সেটাই হয়ে গিয়েছিল প্রথম এবং শেষ সিনেমা, আর কোনদিন ওই পথ মাড়ায়নি।
রতন মামার নিজস্ব কোন পরিবার ছিলনা , সারা জীবন বিয়েই করেনি ।এইবাড়ির সবাইকেই সে ভালোবাসতো নিজের পরিবারের মতো। তন্ময়দের বাড়িতে বিশাল পরিবারের একজন বধুর দূরসম্পর্কের ভাই হত। সেই সূত্রেই এ বাড়িতে তার প্রথম আসা। এবাড়ির মালিকদের তখন মস্ত ব্যবসা । সেখানেই চালাকচতুর রতনমামা কিছু একটা কাজ করতো।
নানা কারণে প্রথাগত লেখাপড়ায় মামা খুব বেশিদিন এগোতে পারেনি বটে তবে নিজের উৎসাহে সে অনেক কিছু পড়াশোনা করত। তন্ময়ের মনে আছে বাড়িতে স্কুল পড়ুয়া তাদের ছোটদের দল যখন সময় পেতো রতন মামাকে ঘিরে কিছু শুনতে চাইতো। তখন মাঝে মাঝে সঞ্চয়িতা খুলে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃতি এমনকি বিশ্লেষণও চলতো। তন্ময়দের অনুরোধে শাহজাহান বা সিরাজদ্দৌলা নাটকের অংশবিশেষের সংলাপ চমৎকার বলে যেতেন। এক কথায় রতনমামা ছিলেন তন্ময় সমেত বাড়ির সব ছোটদের কাছে হিরো ।
আবার পাড়াতেও যেকোনও গন্ডগোল এমনকি কারো পারিবারিক অশান্তি মেটাতেও তার ডাক পড়তো। ঐরকম দীর্ঘ সুপুরুষ একজন মানুষ যখন সেই ভিড়ের মধ্যে গিয়ে দাঁড়াতো তখন গোটা পরিস্থিতি সে হাতের মুঠোয় নিতে পারতো। সবাই চুপ করে গিয়ে বলতো- এ্যাই, কেউ গোলমাল করবিনা – ‘শোন্ রতনদা কি বলছে।’ এইভাবে যেকোন গন্ডগোল মিটিয়ে দিতে তার বেশিক্ষণ লাগতোনা।
সাতপুরায় তন্ময়ের আরো আটদশদিন কেটে গেলো। কোয়ার্টারের ব্যবস্থা এখনো হয়নি। সহকর্মীদের সঙ্গে খুব ভাব হয়ে গেছে। সবমিলিয়ে তন্ময়ের এখানে থাকতে বেশ ভালো লাগছে।
আষাঢ় মাসের একটানা নাছোড়বান্দা বৃষ্টি একবার শুরু হলে আর যেন থামতেই চায়না।
সেইরকমই একদিন ঘন বর্ষার রাত, জানালাগুলো সব ছিটকিনি দিয়ে ঘরের দরজা ভেতর থেকে ভালো করে বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো তন্ময়। এর মধ্যে আরো সপ্তাহখানেক থাকা হয়ে গেছে। জায়গাটা ভালো লাগতেও শুরু করেছে। রাত হয়ে গেছে বলে তন্ময়ের শুয়ে পড়তে ইচ্ছে হলো। এখানে জানালার বাইরে থেকে সারারাত ধরে নানা রকম আওয়াজ পাওয়া যায়, যেটা প্রথম প্রথম চমকে দিত ওকে ।এই কটা দিনে অবশ্য কিছুটা অভ্যাস হয়ে গেছে।
রাত একটু একটু করে বাড়তে লাগলো, ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়তেই ক্লান্ত তন্ময়ের দুচোখে গভীর ঘুম নেমে এলো। কতক্ষণ ঘুমিয়েছিল মনে নেই হঠাৎ ঘুমটা আচমকা ভেঙে আবছা অন্ধকারেই দেখতে পেল একজন লম্বা মানুষ তার বিছানার ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছে ।রাত তখন কটা হবে তন্ময় বুঝতে পারছেনা। প্রথমটা ভীষণ ভয় পেয়ে গেল । তারপরেই হাতের কাছে যে টর্চটা রাখা ছিল, মনের জোর নিয়ে সেটা জ্বালিয়ে দিল। টর্চের আলোয় লোকটার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠলো – কে ? কে আপনি ?
তারপর আবার চিৎকার – রতনমামা তুমি ?
রতন ভাবতে লাগলো এখন এখানে এত রাতে কেমন করে সে এলো। ঘোড়াডুংরী স্টেশনে এমনিতেই কোন গাড়িটাড়ি থাকেনা, সেখান থেকে এতটা পথ কেমন করে চলে এলো, চিনলোই বা কেমনকরে ? তাছাড়া এই ঘরের দরজাটা খুলে দিল কে ?
রতনমামা কোন জবাব দিলনা। একইরকম ভাবে দাঁড়িয়ে রইলো। শুধু আস্তে বলল – ‘আমি চললাম রে ,ভালো থাকিস।’ তন্ময় সঙ্গে সঙ্গে বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠলো। তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে ঘরের একটি মাত্র আলোর সুইচটা অন করে আশ্চর্য হয়ে দেখলো ঘর একদম ফাঁকা। কেউ কোথাও নেই । দরজার কাছে গিয়ে দেখল দরজা ভেতর থেকে আগের মতই বন্ধ আছে। অনেকক্ষণ চেয়ারে চুপচাপ বসে রইল ঘরের আলো জ্বেলেই । ঘোরটা কাটার পরে উঠে দরজা খুলে দেখলো বৃষ্টি তখনও একটু একটু পড়ছে, যদিও ভোর হয়ে আসছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো তন্ময়। প্রচন্ড দুশ্চিন্তা আর মনের অস্থিরতা কমাতে নিচে নেমে গেস্ট হাউসের ফোনটা থেকে বাড়ির ল্যান্ডলাইনে যোগাযোগ করলো। ওপারে ফোন ধরেই মায়ের কান্নাভেজা গলা, কোনোমতে বললেন — “গত রাতে শেষের দিকে রতন আমাদের ছেড়ে চলে গেলো রে। যাবার আগে বারবার তোর নাম করছিল।”
তন্ময়ের শরীর থেকে সব শক্তি যেন শেষ হয়ে গেছে, ভালো করে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা। ভাবছিল কিছুক্ষন আগেই ঘরের মধ্যে যে দৃশ্য দেখলো তা কি সম্ভব ? নাকি সবটাই মনের ভুল ? কাকতালীয়।
বাইরের দিকে তাকিয়ে তন্ময় লক্ষ্য করলো বৃষ্টি থেমে গেছে, দিনের আলো দেখা যাচ্ছে।
প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আর একটা ফোন এলো পাওয়ার স্টেশন থেকে । জরুরী তলব, ভোরের দিকে একটা মেজর ব্রেকডাউন হয়ে গেছে। আধঘন্টার মধ্যে গাড়ি পৌঁছে যাবে, তন্ময় যেন সেই গাড়িতে চলে আসে।
গাড়িতে যাবার সময় রতনমামার জন্যে তন্ময়ের মনটা ভীষন খারাপ , কতো পুরোনো কথা মনে আসছিল। সবকিছু ছাপিয়ে যে চিন্তাটা সমস্ত মনজুড়ে ছিলো সেটা গতরাতের ঘটনা। কোনোভাবেই সেই চিন্তা তাকে রেহাই দিচ্ছিলনা। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে খেয়াল করলো সে তার গন্তব্যে পৌঁছে গেছে।
[মতামত ও বানানবিধি লেখকের নিজস্ব ]
Tags: অনিলেশ গোস্বামী, গল্প, সে কথা রেখেছিল
email:galpersamay@gmail.com
» আষাঢ়ে গল্প on August 8, 2023
[…] সে কথা রেখেছিল […]
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।