20 Oct

ইস্টি কুটুম

লিখেছেন:রূপা সেনগুপ্ত


গল্পের সময় ব্লগ

কাকিমা বীণাপানি দীঘির জলে সাঁতার কাটছেন। অনু ঘাটের পাড়ে দাঁড়িয়ে। হাতে শুকনো গামছা একখানি। ঠাকুমা ননিবালা অনুকে বলেছেন, যা তো বিনুর লগে ঘাটপাড়ে। সোমত্ত মাইয়া মানুষ ! একা একা নাইয়া আইব নাকি! পথে তো শিয়াল কুত্তার অভাব নাই। এসব শুনে বালিকা অনু পোষা কুকুর ভুলোর দিকে তাকায়। ভুলোর আপন মনে পেট চুলকানো দেখে কিছুতেই সোমত্ত মাইয়া মানুষের সঙ্গে কুকুরের কী বিরোধ তা আন্দাজ করতে পারে না !

কাকিমা স্নান শেষে প্রথমে তাঁর বুকে জড়ানো ভেজা গামছাখানি দিয়ে পিছন ফিরে তাঁর চুলে মোছেন। তারপর সেই গামছা নিংড়ে দুহাত পিছনে নিয়ে অদ্ভুত কায়দায় চুল ঝাড়লেন। অনু দেখেছে পাছা ছড়িয়ে প্রায় হাঁটু অবধি লম্বা চুল তাঁর। ইনি অনুর সেজ কাকিমা। এবাড়ির সবচেয়ে সুন্দর বউ ইনি। যদিও তিনি ফর্সা নন, বরং একটু কালোর দিকেই রংটা।

অনুর হাত থেকে শুকনো গামছাখানি নিয়ে ভাল করে গায়ে জড়িয়ে নেন বিনু। তারপর বোসপুকুর ছেড়ে রায়দের আমবাগানের ভিতর দিয়ে ভাসুর-ঝি অনুর সঙ্গে বাড়ির পথ ধরেন। সঙ্গে চলনদার নিয়ে পথ চলতে একেবারেই পছন্দ করেন না বিনু। তাঁর চরিত্রের একটু চপলতা আছে এটা বেশ টের পান শাশুড়ি ননিবালা। একটু তাই বেশি সতর্ক থাকেন তিনি।

ননিবালা দাসীর পাঁচ ছেলে। সেজ ছেলে বিভাস একটু অন্য ধারার মানুষ। বিপ্লবীদের সঙ্গে তাঁর ভালই যোগাযোগ ছিল। ১৯৪৯ সালে তাঁরা যখন দেশ ছাড়েন তখন সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিল সেজ ছেলে বিভাস।

তাঁর স্বামী হরিমাধব কিছুতেই ‘পাকিস্তান’ কে মন থেকে মানতে পারছিলেন না। তিনি কেবলই বলতেন, বংশ পরম্পরায় আমরা যে জমির অন্ন খাইলাম, যে মানসম্মান লইয়া এতদিন আছিলাম, আজ কেমন জানি মনে হয় দ্যাশটা অন্য লোকের হইয়া গেসে।

আসলে সেসময় অনেকেই মনে করছিলেন তাঁরা যেন নিজভূমে পরবাসী।

প্রত্যক্ষ আঘাত না পেলেও তাঁদের কেবলই মনে হতে লাগল অন্যের মর্জির ওপর নির্ভর করে বেশিদিন বেঁচে থাকা যায় না।

মোটামুটি কাজে লাগে এমন জিনিসপত্র নিয়ে দেশগ্রাম ছেড়ে  এসে উঠলেন গঙ্গাপারের এই গ্রামে। এই গ্রাম থেকে গঙ্গা যদিও অনেক দূর।  প্রায় চার মাইল। রেল স্টেশন, সেও প্রায় দুই মাইল।

একটা ছোট পাকা বাড়ি যে হরিমাধব কী করে জোগাড় করেছিলেন তা কেবল গৃহদেবতা রাধামাধবই জানেন। কিন্তু ননিবালা এসে দেখলেন শোয়ার ঘর মোটে দুইটা ! একটা রান্নাঘর আর সামনে পিছনে বড় বারান্দা। এই ছিরিছাদহীন বাড়িটা দেখে ননিবালা কেঁদেই ফেললেন। তারপর ওই পিছনের বারান্দা ঘিরে দুপাশে দুটো ঘর তুলে তাঁরা থাকতে শুরু করলেন। ছেলে বৌমা নাতি নাতনি সহ প্রায় পনের জনের যৌথ পরিবারটি না জানি কী করে ওই ঘর নামক খোপগুলোয় নিজেদের অবস্থান করে নিল! ননিবালা ভেবেই কুল পান না ! ধীরে ধীরে ননিবালা সংসার জীবনে চলতে ফিরতে শুরু করলেন। আজকাল তো আগের মতোই দুপুরে চৌকির তলা থেকে মাদুর আর পানের বাটা বের করে বেশ হাত পা ছড়িয়ে পান সাজতে বসেন। বড় বউ উমারানী এসে হাত পেতে একখানি পান নেন। তারপর দুজনে মিলে ফেলে আসা দিনের গল্প করেন। হঠাৎ করে আগের কোনও প্রতিবেশীর দেশত্যাগের কথা কানে এলে চর্চা করতে বসেন। তাঁরা এসে কোথায় উঠল তা না জানা অবধি যেন এই দুজনের শান্তি নেই।

আজ অনুর খুব ভোরেই ঘুম ভেঙে গেছে। আড়মোড়া ভেঙে খোলা জানলা দিয়ে উঠোনে তাকালে অনু দেখতে পায় কেমন অদ্ভুত হালকা মিঠে রোদে উঠোন ছেয়ে আছে। ঘুমকাতুরে অনু অন্য দিন একটু বেলা করে ওঠে। উঠোনে কাজের মেয়ে মায়ামাসিকেই বকবক করে কুটনো কুটতে দেখে। এক গামলা আলুর তরকারি হয় রোজ সকালে। ওই তরকারি সকলে আটার রুটি দিয়ে খায়, আবার তাঁর বাবা ও কাকা টিফিনকৌটোয় ভরে দোকানে ও অফিসে নিয়ে যান।তার কাকিমা বিনু স্নান সেরে ঘরের কাজে টুকটাক হাত লাগান।

ঠাকুমা ননিবালা বলতেন  – তাঁর দেশগ্রামে নাকি বাদল দিন ছাড়া মাথার ওপর মিঠে রোদ নিয়ে শুরু হতো সকাল। এমন সুন্দর সকালের বর্ণনা তিনি দিতেন! বলতেন, সূর্যোদয়ের আগেই মোরগের ডাকে ঘুম ভাঙত। গ্রামের মধ্যে যে কটি মুসলমান পরিবার ছিল তাঁরা মুরগি পুষতেন। সে সময় হিন্দু বাড়িতে মুরগির প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। শীতের ভোরে দুয়ার খুলে বের হলেই চোখে পড়ত ঘন কুয়াশা। উঠোনের দুই ধারে হলুদ গাঁদাফুল অথবা টগর ফুল, কত জবাফুলের গাছ ছিল তাঁদের! লংকা জবা, পঞ্চমুখী জবা, কলকে ফুলের গাছও ছিল দুটো। ঠাকুরদালানের গা ঘেঁষে ছিল একটা শেফালী ফুলের গাছ। একসারি পাঁপড়ি সাজানো লাল রঙের পেতিগাঁদা ফুলও নাকি ফুঁটে থাকত সারা উঠান জুড়ে। পোষা বিলাই ধলা, পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়াত। গোয়ালঘর থেকে গাই মঙ্গলাও  ডেকে উঠত – হাম্বা। সুযোগ পেলেই ঠাকুমা তাঁর গ্রামের গল্প বলতেন। কত কী বলতেন! যেন সোনা দিয়ে তৈরি ছিল সে গ্রাম! ছিল খেত ভরা সোনার বরণ ধান, ধানের উপর ঠিকরে পড়ত সোনা রঙা রোদ আর গাছে গাছে সোনার পাখি ইস্টি কুটুম !

মা প্রায়ই পাশের বাড়ির চাপা কাকিমাকে বলেন, যখন এ দ্যাশে আইলাম তখন তো অনু প্যাটে। এ দ্যাশে আইওনের পরে অনু জন্মাইল ওই সাবডিভিশন হাসপাতালে। তখন তো শাশুড়ি মায়ের বয়স পঞ্চাশও হয় নাই। অনুর বাবার তখন বয়স বছর তিরিশ হইব। শুনছি অনুর বাবায় নাকি ওনার সাতেরো বছরের সন্তান।

এসব গল্প শুনে অনুর খুব আফসোস হয়। যদি আর একটু আগে জন্মাত, তবে তো ওই সোনার গ্রামটাকে দেখে আসতে পারত।

বর্ষা আইল অথচ পাতে এক টুকরা ইলিশ পড়ল না, দুইটা গরম ভাত ইলিশের তেল দিয়া  মাইখ্যা  খাওন গেল না! আহা মুচমুচে ভাজা ইলিশ মাছের ডিমও চাখা গেল না !—  হরিমাধব খেতে বসে এসব কথা তুললে ননিবালা চোখ টিপেন। সেজ ছেলে বিভাস বড় বাজারে যে দোকানটায় খাতা লেখার মানে হিসেব-পত্তর গুছিয়ে রাখার কাজ করছিল সেটা এখন প্রায় মাস দুই হল নেই। অত্যন্ত সৎ ও অন্য ধারার মানুষ বিভাস ঠিক যেন সমাজের সঙ্গে মানিয়ে গুছিয়ে চলতে পারছে না। প্রায়ই তাঁর উপার্জন থাকে না।

এসব মনে রাখতে পারেন না বৃদ্ধ হরিমাধব। ননিবালা সামলে সুমলে চলেন। সম্প্রতি একটা মোটামুটি ভাল চাকরি পেয়ে বড় ছেলে বিভূতি পরিবার নিয়ে চক্রধরপুরে চলে গেছে। প্রতিমাসে নিয়ম করে বাবা মায়ের ভরণপোষণের টাকা সে বেশ খানিকটা পাঠায় । ওই টাকা আর মেজ ছেলে বিমলের রেডিমেড জামাকাপড়ের দোকানের উপর সংসারটা দাঁড়িয়ে আছে। ছোট ছেলে দুটি কলেজে পড়ে। নিজেদের পড়ার খরচ নিজেরাই ছাত্র পড়িয়ে জোগাড় করে। আনমনে ননিবালা ভাবেন কত বড় জামা কাপড়ের দোকান ছিল তাঁদের। জয়দেবপুরের লোক এক ডাকে তাঁদের চিনত।  রাধারানী বস্ত্রালয়ের মালিক হরিমাধব বাবুর নাম প্রায় সবাই জানত।

ননিবালা বিরক্ত হলে, অপ্রস্তুত হরিমাধব কলমি শাক দিয়ে দ্রুত ভাত মেখে খেতে থাকেন। পাশে বসে অনুও শাক ভাত খেয়ে নেয়।

দুপুরে আজকাল একা একাই পান সাজতে বসেন ননিবালা। ভাবেন তাঁর বড় বৌমা সেই কবে বছর বারো বয়সে বউ হয়ে এল। সেই থেকে তো ননিবালার গা ঘেঁষেই বড় হল, মা হল। বড্ড কান্নাকাটি করছিল মেয়েটা যাওয়ার সময়। পান খেতে বড্ড ভালবাসত সে। বড় বৌমা উমারানী তো তেমন লেখাপড়া জানে না। পত্র লিখতে সে পারবে না। বিভূতিকে তাই তিনি বারে বারে বলে দেন, সে যেন উমার বয়ানে মাসে একখানি পত্র লেখে। তবে মেয়েটা তেমন মন খুলে কথা বলতেও জানে না। সব পত্রেই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই কথা লিখে যায়।

মেজ বউ ঝর্ণা মানে অনুর মা বেশ লেখাপড়া জানে। বেশ বুদ্ধিমতি, চটপটে। গুছিয়ে কাজ সেরে সে দুপুরবেলায় খবরের কাগজ পড়ে।

ননিবালার ঝর্ণাকে নিয়ে ভিতরে ভিতরে বেশ একটা গর্ব আছে। এই সম্বন্ধটা ননিবালা নিজেই করেছেন। নরসিংদীতে তাঁর কাকিমার বোনের শ্বশুরবাড়ি। ওই বোনেরই জায়ের মেয়ে ঝর্ণা।

শুধু দুশ্চিন্তা তাঁর সেজ বৌমা বিনুকে নিয়ে।  বড্ড চপল স্বভাব মেয়েটির। তাঁদের দুটো বাড়ির পরে বরিশাল থেকে আসা একটা পরিবার থাকে। অতি সজ্জন তাঁরা। তাঁদের বাড়ির বড় ছেলেটি ডাক্তারি পাশ দিয়েছে গত বছর। সদরে চেম্বার । গ্রামেও একটা চেম্বার খুলেছে। সে নাকি একটা রেডিও কিনেছে। প্রায় দিনই বিকেলবেলায় সেই রেডিওতে গান শুনতে ও বাড়ি গিয়ে বসে থাকে বিনু। ডাক্তারবাবুর বউয়ের সঙ্গে সই পাতিয়েছে নাকি! এসব কথা নাতনি অনুর থেকে জানতে পারেন তিনি। এসব ননিবালার মোটেও পছন্দ নয়। কিন্তু বৌমাদের সঙ্গে জোর  দিয়ে তিনি কোনও দিনই তেমন শাসন বারণ করতে পারেন না। তবে নাতনি অনুকে তিনি লোকের বাড়ি গিয়ে গান শুনতে বসে পড়তে বারণ করেন।

এবার বর্ষায় টিনের চালের ঘর দুখানির খুব ক্ষতি হয়ে গেছে। ফুটো টিন দিয়ে জল ঝরঝর করে পড়ে বিছানাপত্তর সব ভিজে গেছে। ঝর্ণা, বিনু, অনু ননিবালা বালতি গামলা পেতে সামাল দিয়েছে কোনওমতে। অন্তত দুটো টিন বদল করতে হবে। বাকিটায় পিচ-চট  দিয়ে ঠেকিয়ে রাখতে হবে। হাতে তেমন টাকাপয়সা নেই। সংসারের হাল দেখে বৃদ্ধ হরিমাধব স্থানীয় একটা মুদিখানায় সাহায্যকারীর কাজ নিয়েছে। সেদিন কী একটি কিনতে গিয়ে দোকানে বাবাকে দশ কেজি চাল মেপে খদ্দেরকে কোলকুঁজো হয়ে দিতে দেখে ফেলে ছোট ছেলে মানিক। খুব কষ্ট পেয়েছে ছেলেটা। বড় সরকারি চাকরি করার শখ খুব। খুব পড়াশুনা করে সে। ননিবালা বোঝায় তাকে। বলে ভাল করে লেখাপড়াটা চালিয়ে যেতে হবে। একটা চাকরি হলেই সংসারে একটু সুসার হবে।

কাঠের ছোট আলমারিটা খুলে ননিবালা ছোট কাপড়ের ব্যাগটা বার করে আনে। খুলে খুচরো পয়সা কটা গুনতে বসে। ঠিক এই সময় ডাকপিওন এসে হাঁক পাড়ে, চিঠি আছে –  হরিমাধব চৌধুরী।

মেজ বউ ঝর্ণা পোস্টকার্ডটি হাত পেতে নেয়। চোখ বুলিয়ে পড়ে নেয় খানিক। চোখ তুলে দেখে শাশুড়ি ননিবালা জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে।

ইস্কুল থেকে ফিরে অনু শুনতে পায় বাবার ছোট পিসিমা দেশ থেকে চলে আসছেন। এত কাল শুনে এসেছেন উনি নাকি বিরাট ধনী বাড়ির বউ। বালাপুরের জমিদারদের জ্ঞাতি আত্মীয় হন ইনি। দেশভাগের পরে এতদিন তাঁরা থেকে গেছিলেন। কারন তাঁর শাশুড়িমা কিছুতেই তাঁদের দেশ ছাড়বেন না। তিনি গত হয়েছেন মাস পাঁচেক হলো।

এদেশে একটা বাড়ির ব্যবস্থা তাঁরা করেছেন। শুধু গোছগাছ করার ওই সময়টুকু তাঁরা থাকবেন। তাছাড়া বাবার পিসিমা গৌরী অনেক বছর বাপের ঘরে আসেন নি।

ননিবালা ভাবেন সে এক দিন ছিল ! পুজোর সময় আর জামাই ষষ্ঠীতে ননিবালার তিন ননদই আসত। নাইওরিদের আনন্দই আলাদা! হাতে হাতে চটপট লাড়ু মোয়া উপড়া তক্তি তৈরি হয়ে যেত! সারা বাড়িতে উৎসব উৎসব ভাব। শ্বশুরমশাই নিজে হাতে বাবুরহাট থেকে বাজার করে আনতেন ! এসব আজ স্বপ্ন বলে মনে হয় ননিবালার।

“আমি হাটে মানুষ- ঘাটে মানুষ- মাঠে মানুষ দেখতে পাই- ও ভাইরে ভাই মানুষের মনুষ্যত্ব নাই-” গান গাইতে গাইতে সুবল এসে উঠোনে দাঁড়ায়। এখন সকাল দশটা। বর্ষাকাল যেয়েও যেন যায় নি।

বড় ঘরটা ছোট ঠাকুরঝি গৌরী আর তার বর প্রদীপবাবুকে ছেড়ে দিতে হবে। সুবলকে তাই টিন পাল্টানো আর মেরামতের কাজটা করতে বলে ননিবালা।

গান গাইতে গাইতে সুবল কাজ সারে। বিনু স্নান সেরে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে সুবলের গান শুনে থমকে দাঁড়ায়।

বারান্দার পূব কোণে জামগাছটায় বসে সেই থেকে পাখিটা ডেকেই চলেছে ইস্টি -কুটুম, ইস্টি-কুটুম …।

যে ঘরের চাল সারাই হচ্ছে সে ঘরে বিনু আর বিভাস থাকে। সাত বছর হল বিয়ে হয়েছে । এখনো কোনও সন্তান তাঁদের হয়নি। কেমন যেন অগোছালো ছিস্টিছাড়া মানুষ তার স্বামীটি। বেশির ভাগ রাতেই বিনু বিছানায় এসে দেখে স্বামীটি তাঁর ঘুমিয়ে কাদা।

এক সময় বিনুর ভাল লাগত টিনের চালের উপর  বৃষ্টি পড়ার ঝমঝম শব্দ! এক টানা ব্যাঙের ডাকে বিনুর ঘুম এসে যেত। এখন কিন্তু বৃষ্টির শব্দ, ব্যাঙের ডাক কোনওটাই আর তেমন ভাল লাগে না। সে বুঝে উঠতে পারে না এখন কেন এমনটা হয়। তবে বর্ষা ও শরৎ এলে বিনু একটা অস্থিরতায় ভোগে। আজকাল বছর এগারোর ভাসুরঝি অনুর পড়া শেষ হলে দাস বাড়িতে রামায়ণ পাঠ শুনতে যায়। তবু তাঁর দেহ মন কোনটাই ঠাণ্ডা হয় না।

দুপুরে দুই জা আর শাশুড়ি একসঙ্গে খেতে বসলে শাশুড়ি বিনুকে বলেন, বাড়িতে ইস্টি কুটুম আইব। তোমাগো পিসিমা গৌরীর লগে ওর এক আত্মীয় আইব। ওর ভাসুরের শালার কেডা হয় জানি। ওই লোকটায় নাকি পুলিশে চাকরি করে। গঙ্গার ওই পাড়ে কোনখানে বদলি হইসে। আগে এই দেশেরই অন্য কোনখানে আছিল। ওরাই গৌরীগো বাড়ির খোঁজ দিসে। সোমত্ত পুরুষ মানুষ থাকবো কয়টা দিন। বিভাসের লগেই শুইব। তুমি ওই কয়টা দিন আমার আর অনুর লগে আমাগো ঘরের মেঝেতে…।

কথা শেষ না হতেই বিনু ঘাড় নেড়ে জবাব দেয়। তার কোন অসুবিধা নেই। যদি তেমন বোধহয় তবে শাশুড়িমা তাকে নৈহাটিতে তার বাপের ঘরেও পাঠিয়ে দিতে পারেন।

জবাব শুনে মেজ বউ ঝর্ণা বুঝতে পারে যে বিনুর এই ব্যবস্থাপনায় তেমন সায় নেই। নিঃসন্তান বিনু তার ঘর তার বিছানা তেমন ছাড়তে চায় না। মেয়েটাকে দেখে তাঁর বেশ মায়া হয়।

ঝর্ণা খাবার গুছাতে গুছাতে বলে,  মা ওই লোকেরে আলাদা ঘর দেওন ভাল। ছোটপিসিমায় নয় আপনার লগেই থাকব। ওই লোকে আর পিসামশাই এক ঘরে থাকুক। আপনেরা ননদ বৌদি কত দিন বাদে সাক্ষাৎ করতাসেন। একঘরে শুইয়া গল্প করবেন রাইত ভর। অচেনা লোক, তায় আবার পুলিশ! বিভাস ঠাকুরপোর ঘরে তারে দিয়েন না।

ননিবালা ভাবলেন এটা তো তিনি ভাবেন নি। বিভাস তো আবার লুকাইয়া কী সব পার্টি করে! তিনি মনে মনে মেজ বউ ঝর্ণার বুদ্ধির তারিফ করেন। আর খুব দ্রুত ঘাড় নেড়ে সায় দিয়ে বলেন এটাই ঠিক ব্যবস্থা।

বিনু আসলে জানে না তাকে বিভাস অবহেলা করে কিনা! কিন্তু সে  মনে করে বিভাসের আবেগ কমে গেছে, কোথাও যেন বাঁধনটা আলগা। একজন আরেকজনকে কাছে পাওয়ার জন্য যে আবেগ লাগে বা যে আবেগ থাকা দরকার সেটা বিভাসের নেই। বিনু ভাবে যদি একটা সন্তান তাঁদের থাকত তবে হয়ত এমনটা হত না।

শাশুড়ি ননিবালাও খুব চেষ্টা করেন। বাকি দুই ছেলে বৌমার মতো এরাও ভাল থাকুক তা তিনিও চান।

আজ যে মেয়েটি বউ হয়ে তাঁর ঘরে এল, একটা সময় সে-ই আবার নিজের সন্তানকে বিয়ে দিয়ে শাশুড়ি হবে। ছেলে বিয়ে দিয়ে ঘরে বউ আনবে। সময়ের দুই প্রান্তে দাঁড়ানো দুটি মানুষ তো দুটি আলাদা সত্ত্বা। বউ যদি শাশুড়িকে অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে আর শাশুড়িও যদি বউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করেন তবে তো ভারী সমস্যা।  ননিবালা বউমাদের আত্মার বন্ধনে বাঁধতে চান।  বৌমাদের সুখ দুঃখের ভাগিদার হতে চান। তাই তিনি বিনুর জন্য হঠাৎ খুব কষ্ট অনুভব করেন।

সুবলের কাজ শেষ করতে বেলা হয়ে যায়। পুকুর থেকে স্নান সেরে সুবল বারান্দায় পিঁড়ি পেতে বসে। ননিবালা ভাত বেড়ে গুছিয়ে দেন। নিজেও পিঁড়ি একখানি নিয়ে বলেন, কাইল আর একবার আইস খনে। কয়টা ডাব পাইড়া দিবি। কাইলও দুফুড়ে খাইয়া যাইস।

গ্রামে যাঁদের বাড়িতে নারকেল গাছে আছে, তাঁদের কেউ কেউ কাঁদি-কাঁদি ডাব নামিয়েও সঙ্কুলান করে উঠতে পারছেন না। তারই মধ্যে কোনও ডাব হয়তো কেটে দেখা যাচ্ছে জল নেই ভেতরে। কারও বাড়িতে ডাবের গড়ন আঁকাবাকা, গায়ে কালো দাগ। কারও আবার বাড়ির গাছে ডাবই হচ্ছে না কিছুতে। সব মিলিয়ে নারকেল গাছ নিয়ে প্রচুর অভাব-অভিযোগ। প্রচুর দুশ্চিন্তা।

ননিবালাদের এই বাড়িতে তিনটা গাছ। তিনটাই তাঁর নিজের হাতে সেই পঞ্চাশ সনে লাগানো। আজ এগারো বছর বাদে তিনি ভাবেন ভাগ্যিস তিনি এসব গাছপালা লাগিয়েছিলেন।

বাড়ির উঠোনে লাগানো নারকেল গাছে সার দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করে না কেউ। নারকেল গাছের রোগপোকা নিয়েও সাধারণ লোকজনের খুব একটা ধারণা নেই। অথচ, একটু যত্ন নিলে নারকেল গাছেও প্রচুর ফল ধরবে, জল হবে ভাল, শাঁস মোটা। এসব কথা ননিবালা শুনেছেন। ব্যস ওই অবধি!

সুবল পরের দিন দুপুরের দিকে আসবে এমন কথা দিয়ে কলতলায় হাত ধুতে চলে যায়।

বিনু ঘরে গিয়ে বড় আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বুকের কাপরখানা একটু আলগা করে। বড্ড গরম লাগে তাঁর। এঘরে একটা বড় আয়না আছে। দুবছর আগে তাঁর স্বামী যেখানে কাজ করত সেখান থেকে পুজোয় বোনাস পেয়েছিলেন। তখন গঞ্জের বাজার থেকে এই আয়নাটা কেনা হয়। আয়নার দিকে তাকিয়ে বিনু দেখে সে বেশ একটু ভারী হয়েছে। বুক পাছা দুইই তার বেশ ভারী । পরনের ব্লাউস থেকে অনেকটাই উঁচু হয়ে বের হয়ে আছে তার বুক। নিজেকে বিভোর হয়ে দেখে বিনু!

একটা রিক্সা আর একটা ভ্যান রিক্সা নিয়ে ইস্টিশনে বোনকে আনতে গিয়েছিলেন হরিমাধব।

গেটের মুখে লাগানো কামিনীফুল গাছের গোড়ায় এসে দাঁড়ান ননিবালা। অপেক্ষা করেন একটা মানুষের জন্য! একটা ফেলে আসা সোনালী দিনের জন্য! যে দিনগুলি হুট করে এসে পড়ে গৌরীর  হাত ধরে। সদ্য বিবাহিতা ননিবালার কালীপুকুর সাঁতরে এপার ওপার হওয়ার সঙ্গী তো ছিল ওই গৌরী! তাঁরা একসঙ্গে মাটির পুতুল বানাতেন! একসঙ্গে পা মেলে বসে ষোল গুটি খেলতেন! ডাঙ গুটি খেললেই কেবল মা রাগ করতেন। সেই গৌরীর বিয়ে হলো! শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার সময় ননিবালাকে জড়িয়ে সে কী কান্না!

রিক্সার হর্নের আওয়াজে চমক ভাঙে ননিবালার। গৌরী নেমে আসে। অবস্থাপন্ন ঘরের বউয়ের যে চাকচিক্ক থাকে তার থেকে একটু বেশিই যেন সুন্দরী গৌরী। একটা শান্ত সুন্দর শ্রী তাঁর মুখ ঘিরে। চিবুকে হাত দিয়ে আদর করেন ননিবালা।

বাড়ির সকলের সঙ্গে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় বিনু। ভ্যান রিক্সায় দুটো ফুল লতাপাতা আঁকা ট্রাংক। আর খান চারেক মাঝারি বাক্স প্যাটরা নামাতে হাত লাগায় তাঁর দুই দেওর। সঙ্গে ওই কুটুম লোকটিও না! কোঁকড়া চুল গাল বসা লম্বাটে মুখের ওই ছেলেটিকে দেখে বিনুর হঠাৎ মাথাটা চক্কর দিয়ে ওঠে। ও তো গুরুপদ! পাশে দাঁড়ানো বালিকা অনু জড়িয়ে ধরে কাকিমাকে। দ্রুত পায়ে নিজের ঘরে ঢুকে যায় বিনু। অনুও পিছে পিছে যায়। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারে না।

আবার কেন ওর জীবনে গুরুপদ ফিরে এলো !  ঘরের কোণে রাখা কলসি থেকে এক গ্লাস জল গড়িয়ে খেল বিনু। কেন এল সে ? তার ভাঙাচোরা ঘর বসত নিয়ে সে তো দিব্বি কাটিয়ে দিচ্ছিল !

দুলালী পিসিমা মানে গুরুপদর মায়ের দেশ ছাড়ার দুদিন আগে নদীর কিনারের ওই আমলকি তলায় লুকিয়ে দেখা করতে গেছিল বিনু। গুরুপদ বলেছিল

– চল না বিনুদি আমাগো লগে।  মায় রে কমু ?

– তর মায় সব টের পাইসে। তুই কি কিছুই বোঝোস না! তাই তো উনি তড়িঘড়ি ইন্ডিয়ায় চললেন।

– তাই নাকি ?

– গত পরশু বিকালে আমারে ডাইক্যা কইসেন। আমি যেন তোরে ভুইল্যা যাই। আর তোর লগে যেন যোগাযোগ না করি। মাকালীর পা ছুঁইয়া কথা দিলাম যে তারে!

– কী কইরা জানল কও তো !

ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বিনু জানায় চম্পা বৌদি  সব বলে দিয়েছেন।

বয়সে দেড় বছরের ছোট গুরুপদর সঙ্গে ভালবাসার বন্ধনে জড়িয়ে যায় বিনু। তাঁরা দুজনে ঠিক করে দেশ ছেড়ে ইন্ডিয়ায় গিয়ে তারা ঘর বাঁধবে।

এসব জানতে পেরে গুরুপদর মা সাত তাড়াতাড়ি দেশের পাট গুটিয়ে ফেলেন।

পৃথিবী অনেক ছোট। এখানে এমনটি ভাবার কোনও কারণ নেই যে কারও সাথে একবারে সম্পর্ক ছিন্ন করে দিলে তার সাথে দ্বিতীয়বার আর দেখা হবে না। চলার পথে কিংবা অন্যান্য যেকোনও ভাবেই হোক পুরনো সম্পর্কের মানুষটির সাথে পুনরায় দেখা হয়ে যেতেই পারে। অনেকেই আগের সম্পর্কটি ভুলতে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না।

এই যেমন গুরুপদর সঙ্গে বিনুর দেখা হলো।

কুটুম বাড়ির লোক তাই গুরুপদর খাতিরযত্ন যাতে ভালভাবে হয় সেদিকে নজর দিলেন ননিবালা।

দুপুরে জামাইয়ের পাশে বসিয়ে ভাত বেড়ে দিলেন নিজের হাতে। বিনু হাতে হাতে সাহায্য করছিল নতমুখে। গুরুপদ বিনুকে দেখে চমকে উঠে বলল, আরে বিনুদি না ! একই রকমই আছো তো!

মনে মনে ভাবে অন্তত দশ বছর পর দেখা। চেহারায়, আদলে পরিবর্তন ঘটেছে অনেক। প্রাণবন্ত, চঞ্চল ছিপছিপে তরুণীটি এখন কিছুটা পৃথুলা, পূর্ণবয়স্ক নারী।

একে একে বাড়ির সকলে জেনে গেল যে গুরুপদ বিনুর দূর সম্পর্কিত ভাই।

রাতে শুয়ে শুয়ে বিনু ভাবে, মন ভাঙে যখন  প্রেমাস্পদ দূরে সরে যায়। কিন্তু প্রেম তো মরে না। মনের গহিন কোণে, যাকে আমরা বলি অবচেতন, সেখানে সুপ্ত অবস্থায় থেকে যায়। গুরুপদকে দেখার পর থেকে বিনুর বুকের ভিতর কেমন যেন একটা অনুভুতি হয়। এটাকে কি ভালবাসা বলে ? না সেরকম তো নয়। পাশে শুয়ে থাকা বিভাসের দিকে তাকায়। ক্লান্ত হেরে যাওয়া একটা মানুষ যেন, কত কী বলে সব বিনু বোঝে না। দিন বদলের কথা বলে। বলে সবার জন্য পেট ভরা আহার, স্বাস্থ্য আর শিক্ষা চাই। এসব ছাড়া বেঁচে থাকা যায় নাকি? মুখের ওপর হ্যারিকেনের মৃদু আলোয় বিনু বুঝতে পারে না তাঁর স্বামীটি ঘুমিয়ে, না জেগে রয়েছে। কেমন একটা মায়া হয় বিনুর। পরম মমতায় মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় সে।

চমকে ওঠে বিনু ! বিভাস তাঁর হাতখানি চেপে ধরে বলে ,

– আমি তোমারে কিছুই দিতে পারি না। তবুও তুমি এত ভালবাস বিনু !

– আমিও তো কিছু চাই না।

– কেন চাও না? অধিকার বুইঝ্যা নিতে হয়। নাইলে কাইড়া নিতে হয়। বলে হা হা করে হেসে ওঠে বিভাস।

এভাবে দুটো দিন কেটে গেল। বিনু রোজকার পরনের সুতির শাড়ি বদলে তুলে রাখা দুটো তাঁতের কাপড় বের করে নিল। ও কি একটু বেশি সাজগোজ করছে? ও কি গুরুপদর নজর কাড়তে চাইছে? ও নিজেও ঠিক বুঝে উঠতে পারে না! আসলে পরিচ্ছন্ন থাকতে বিনু পছন্দ করে।

দু দিন বাদে বিনু সকালে উঠে রোজকার মতো কাজ শুরু করে। সব বিছানাপত্র ভাসুরঝি অনুর সাহায্যে গুছিয়ে ফেলা তার নিত্যদিনের কাজ। শ্বশুরমশাইয়ের বরাদ্দ ঘরটিতে কুটুম গুরুপদর শোয়ার ব্যবস্থা হয়েছে তা বিনু জানে। ইচ্ছে করেই দেরি করে সে। অন্য ঘরদোরের কাজ সামলে বিনু অবশেষে ওই ঘরে যায়। গিয়ে দেখে ঘর ফাঁকা। গুরুপদ ও তার বাক্স প্যাটরা কিছুই নেই ! কোথায় গেল সে!

বালিকা অনু মশারির দড়ি খুলতে খুলতে বলে, ওই নতুন ইস্টি তো সকালেই চইল্যা গেল। আমারে ব্যাগ খুইল্যা দেখাইল গো কাকিমা, কী সুন্দর ওনার বউ ! আর কী সুন্দর ওনার মাইয়া! অফিসে কার থিকা নাকি খবর পাইসে ওনার বউয়ের শরীর খারাপ, তাই পিসি ঠাকুমার অনুমতি লইয়া আইজ ভোরেই চইল্যা গেসে। ওই যে গো কৃষ্ণনগর, ওইখানে অরা থাকে।

ও হ্যাঁ, আমারে কইল ওনার বউ সুরমা নাকি তোমার চেনা। তোমারই বইন। বোধহয় তোমার কেমনতর পিসির মাইয়া, তাই না ? বিনু ঘাড় নাড়ে। তারপর বিনু একগাল হেসে আপন মনে কাজ করতে করতে ভাবে, আজ সুন্দর করে সেজে বিভাসের সঙ্গে বের হবে।  বিকেলের দিকে একটু গঙ্গার ধারে মন্দিরে যাবে তারা।

আজও জামগাছের ডালে বসে পাখিটা ডেকে ওঠে ইস্টি- কুটুম, ইস্টি – কুটুম।

[ বানানবিধি ও মতামত লেখকের নিজস্ব]

Tags: , , ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • Mitali Mitra on October 28, 2023

    ইস্টি কুটুম মেদ বর্জিত ছোট্ট লেখা পড়েছি। দেশভাগের সময় নিয়ে অনেক লেখা পড়েছি। তবে এটি অন্যরকম। যন্ত্রনার থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব রয়েছে একটা ভরাট সংসারের দিনযাপনে। পূর্ব বঙ্গের সঙ্গে দূরতম সম্পর্ক না থাকলেও মনে দোলা দিয়ে যায়। সমৃদ্ধ যৌথ পরিবারে আত্মীয় স্বজনদের আনাগোনার সুখস্মৃতিতে কোথাও একাত্ম হয়ে যাচ্ছি। গল্পের সময়-এ আপনার আরও লেখা পড়তে পারব আশা করি।

    মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ