20 Oct

ডাকে না ফেলা চিঠি

লিখেছেন:অনিলেশ গোস্বামী


গল্পের সময়ের গল্প

জিরাটের আরতি মন্ডল এখন ইলিয়ট রোডের রিতা ম্যাগডোনাল্ড।

খবরটা প্রথম জানার পর চমকে উঠেছিল রজত। অবশ্য ব্যাপারটা এখন এমন কিছু গোপনীয় নয়, বরং বেশ খোলামেলা কারণ তার স্বামী তাকে নিয়ে বন্ধু-বান্ধবদের বাড়িতে যায় , নিজের বাড়িতেও অনেককে ডাকে ও পরিচয় করিয়ে দেয়। রজত এসব কিছুই জানতোনা, জানার কথাও নয় যদিও রজতের নিজের বাড়িও জিরাটেই , সেখানেই সে বড়ো হয়েছে এবং আরতিকে অনেকদিন আগে থেকেই চিনতো ,মোটামুটি আলাপও ছিল। আরতি বেশ বুদ্ধিমতি, ও সুন্দরীও বলা যায় । সর্বোপরি চেহারার চটক ও দৃষ্টির মধ্যে এমন একটা মাধুর্য আছে যে ওর চোখের দিকে একবার তাকালে বারবার তাকিয়ে দেখতে ইচ্ছে করে সকলের। পাড়ার উঠতি বয়সের ছেলেদের হার্টথ্রব না হলেও তাকে নিয়ে আগ্রহ অনেকেরই ছিলো। এই অনেকের মধ্যে রজত নিজেও একজন  , তার দিক থেকে একটু চোরাটান ছিলো অস্বীকার করার উপায় নেই। রাস্তায় ঘাটে আরতিকে দেখতে পেলে একটু হাসি বিনিময় বা মামুলি কিছু কথাবার্তা, একটু সময় পেরিয়ে গেলে রজতের পরে মনে হতো আরো একটু সময় তার সঙ্গে থাকলে ভালো হতো। হয়তো আরতির চোখে একটু আহ্বানের অপেক্ষায় ছিল কিন্তু যোগাযোগের অভাবে ঘনিষ্ঠ হবার সুযোগ হয়নি।

রজতের সঙ্গে শুধু আরতির নয়, জিরাটের প্রায় কারোরই তেমন ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ অনেকবছর ধরেই নেই তার একটাই কারণ রজত কলকাতায় হোস্টেলে থেকে কলেজ ইউনিভারসিটির পড়াশোনা শেষ করে বছর দুয়েক বিদেশে ছিলো, তারপর যে অফিসে এখন চাকরি করে তাদের কলকাতা হেডঅফিসে কয়েক মাস কাটানোর পরেই দিল্লিতে তাকে বদলী হয়ে যেতে হয়। চারপাঁচ  বছর  কাটাবার পরে সেখানেই ব্রাঞ্চ ম্যানেজার হয়ে আরো পাঁচ বছর থাকতে হয়েছিলো। বছরে একবার ছুটিতে বাড়ি ঘুরে যেত তাও কয়েকটি দিন। ইদানিং সে আরো একটা প্রমোশন পেয়ে মাত্র দু’মাস হলো হেড অফিস কলকাতায় ফিরে এসেছে। তার আগে হেডঅফিসে কর্মসূত্রে মাঝেমাঝে ঝটিকা সফরে এলেও সহকর্মীদের কারো সঙ্গে বিশেষ আলাপের সুযোগ ছিলনা। পরিচয় ছিল মামুলি, ঠিক যতটুকু প্রয়োজন।

কালেভদ্রে অল্প ক’দিনের জন্যে জীরাটে বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এলে একটু ফাঁক পেলেই পাড়ার ছেলেবেলার বন্ধুদের সঙ্গে কিছুক্ষণ আড্ডা হতো । পরস্পরের খোঁজখবর নেওয়া-দেওয়ার ভেতরে আরতির কথা জিজ্ঞেস করলেই সবাই কথা ঘুরিয়ে দিতো অথবা চুপ করে থাকতো। কারণটা বুঝতে পারতোনা রজত। তাই এ ব্যাপারে বেশি কৌতুহল দমন করতো।অনেকগুলি বছর দিল্লিতে কাটিয়ে কলকাতায় আপাতত স্থায়ী হয়ে বেশ ভালই লাগতে শুরু করেছে রজতের। জিরাট থেকে রোজ আসা যাওয়ার প্রশ্নই নেই এবং সেটা সম্ভবও নয়। তার প্রয়োজন নেই কারণ কোম্পানি রজতকে দক্ষিণ কলকাতায় একটি ছিমছম ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। সেখান থেকে প্রতিদিন অফিস যাওয়া আসার জন্য স্টাফকারের ব্যবস্থা আছে। রজত নিজে এখনো গাড়ি কেনেনি।

সহকর্মীদের সঙ্গে একটু একটু করে আলাপ হয়েছে, কারো কারো সঙ্গে হৃদ্যতা। রজতের স্বভাবটা বরাবরই খুব মিশুকে,খোলামেলা। সহজেই সবাইকে আপন করে নিতে পারে । স্ট্যাটাস-সচেতন কর্পোরেট কালচার তার পছন্দ নয়। তাই তার তুলনায় কে একটু উঁচু বা কে একটু নীচু স্তরের অফিসার এসব নিয়ে একেবারে মাথা ঘামায়না। এইভাবেই আলাপ হয়েছিল মার্কেটিং ডিভিসনের জন্ নামের স্মার্ট ছেলেটির সঙ্গে।
ওর পুরো নামটা ভালোকরে কেউ বলতে পারেনা ও সেটা নিয়ে কারো মাথাব্যাথা নেই। এটুকু সবাই জানে যে সে একজন এ্যাংলো-ইন্ডিয়ান। ব্যস, ঐ পর্যন্ত। সবার মুখেমুখে সে শুধুই জন্ অর্থাৎ John। এটা তার ডাকনাম নাকি পোষাকি নাম তাও কেউ জানেনা। অবশ্যই অফিস রেকর্ডে তার সম্পূর্ণ নাম ও পদবী লেখা আছে।রজত নিজেও তাকে শুধু জন্ বলেই চেনে।শুনেছে ওর বাবা রেলে কাজ করার সুবাদে দীর্ঘদিন আসানসোলে রেল কলোনিতে পরিবার নিয়ে থাকতেন। জন পড়াশোনা করেছে রেলওয়ের স্কুলে, সহপাঠী ও বন্ধুবান্ধবদের বেশিরভাগ ছিলো বাঙালি। চেহারায় ও কথাবার্তায়  তাকে অনায়াসেই বাঙালি বলে চালিয়েও দেয়া যায়।বাংলাভাষায়  কথাবার্তা একদমই পরিস্কার। আসলে এদের মধ্যে যারা একেবারে প্রথম প্রজন্মের ছিল তাদের মধ্যে চালচলন ও কথাবার্তায় সাহেবীয়ানা খুব ছিল। জন্ হয়তো চতুর্থ বা পঞ্চম প্রজন্মের হবে। তাছাড়া ছোটবেলা থেকে  আসানসোলে থাকার জন্য বাঙালি বন্ধুবান্ধব ও বাতাবরণে অনেকবছর কাটানোর ফলে তার স্বভাব ও রুচির মধ্যে বাঙ্গালীয়ানাই বেশি।

রিটায়ারমেন্টের পর জনের বাবা পরিবার সমেত কলকাতায় ইলিয়ট রোডে চলে আসেন। বাবা-মা প্রয়াত হয়েছেন বছর দুয়েক আগে। এখন সেই ইলিয়ট রোডেই খুব পুরোনো একটা বাড়ি যেটাকে  কয়েকটা ফ্ল্যাটে রূপান্তরিত করে নেওয়া হয়েছে, তার একটা নিয়ে জন আর তার স্ত্রী থাকে। রজত শুনেছে বছর পাঁচেক আগে জন্ বিয়ে করেছে । রজত তখন দিল্লীতে থাকতো।একদিন জন্ বললো,” স্যার আপনাকে একদিন আমার বাড়িতে  যেতেই হবে। কাছেই থাকি,অফিস ছুটির  পর হাঁটতে হাঁটতে চলে যাব।”

জন রজতের চাইতে চার পাঁচ বছরের ছোট, সুন্দর স্মার্ট ও হাসিখুশি মেজাজের ছেলেটিকে রজত বেশ পছন্দ করে, তাই হাসতে হাসতে জবাব দিল,” যাব, তবে তোমাকে ওই ‘স্যর’ বলাটা   ছাড়তে হবে।” জন হেসে ফেললো।সেদিন ছিলো শুক্রবার। অফিসের ছুটির পর রজতের মনটা খুব হালকা ফুরফুরে। পরের দুদিন ছুটি। এই অফিস সপ্তাহে পাঁচদিন খোলা। জন্  এসে বললো, ” বাড়ি ফেরার খুব তাড়া না থাকলে   আমার বাড়িতে একটু চলুন না। কাছেই,   হেঁটে দশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাব।”

রজত শুনেছে বছর পাঁচেক আগে জন বিয়ে করেছে। এটাও জানে ওর বাবা-মা দু’জনেই প্রয়াত। বাড়িতে শুধু জন আর ওর স্ত্রী থাকে।রজত রাজি হলো।” ঠিক আছে, যাচ্ছি তবে বেশিক্ষণ থাকতে   পারবোনা কিন্তু। “ওরা হাঁটতে শুরু করলো। জন বললো, ” আগে চলুনতো। ফেরার সময় বাইকে   পৌঁছে দিতে পারি। ঐসময় ট্যাক্সি পাওয়ার  অসুবিধা আছে।” তারপর একটু হেসে বললো, ” আপনার জন্যে একটা সারপ্রাইজ আছে।”

অফিস থেকে বেরিয়ে পার্ক ষ্ট্রিটে বাঁদিকে একটু এগিয়ে আবার বাঁদিকের রাস্তায় ঢুকে পড়লো। এ রাস্তার নাম ম্যাকলিয়ড ষ্ট্রিট, সেটা পেরোলোই ইলিয়ট রোড। মিনিট পনেরো পরে ওরা একটা পুরোনো বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো।জন বললো এই বাড়িটা খুবই পুরোনো। অনেকদিন আগের এই বাড়িটার ভেতরেই ছটা ফ্ল্যাট বার করা হয়েছে, তার মধ্যেই একটা ওদের।এইসব পুরোনো আমলের বাড়িতে সাধারণত চওড়া কাঠের সিঁড়ি থাকে , এখানেও সেইরকম আছে। রঙের সেই জৌলুশ এখন থাকার কথাও নয়, কিছুটা বিবর্ণ হয়ে গেছে। উঠতে উঠতে কানে আসছিল কেউ একটা গিটার বাজিয়ে একটা ইংরেজি গানের সুরে গান গাইছে।জন জিজ্ঞেস করলো, ” সারপ্রাইজটা কী সেটা একবারও জানতে  চাইছেননা রজতদা ?”

রজত জবাবে বললো, ” দেখাই যাক, আগে থেকেই জানা থাকলে  সাসপেন্স নষ্ট হয়ে যায়।”তিনতলায় পৌঁছে ওদের ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে রজত লক্ষ্য করলো দরজার গায়ে লেখা John McDonald আর তার ঠিক নীচে Rita McDonald। জন্ ডোর-বেল বাজালো পরপর দুবার।

দরজা খুলে সামনে যে দাঁড়ালো তাকে দেখে রজতের বিস্ময়ের ঘোর কাটতেই চায় না। এ কাকে দেখছে? এত বড়ো সারপ্রাইজ তার জন্য অপেক্ষা করছিল সে তো ভাবতেই পারেনি। কালো জিন্সের ওপর অরেঞ্জ টপ আর মাথায় বর্ণাঢ্য চুল নিয়ে যে সুন্দরী মহিলা তার সামনে এইমুহুর্তে দাঁড়িয়ে তার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ বিস্ময়ে কথা হারিয়ে ফেলেছে রজত।

“কী হলো রজতদা ,ভেতরে আসবে না?” – রজতকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করলো আরতি। হ্যাঁ, জিরাটের সেই আরতি মন্ডল, বর্তমানে জন ম্যাকডোনাল্ডের ঘরণী রিতা ম্যাকডোনাল্ড।সামনেই একটা বসার ঘর। পুরোনো রংচটা দেয়াল, মান্ধাতার আমলের কড়িবরগা। সেখানেই একটা সোফায় বসলো। আরতির সঙ্গে দেখা হলো প্রায় একযুগ পরে। ইতিমধ্যে তার চেহারায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে লক্ষ্য করলো। একটু পৃথুলা, তবে মুখটা বিশেষকরে চোখদুটি সেইরকমই সুন্দর আছে আর সবমিলিয়ে একটা শহুরে সফিস্টিকেশনের ছাপ বেশভূষা ও আচার আচরণে। নামটা ‘আরতি’ থেকে বদলে কেমন করে ‘রিতা’ হয়েছে সেটা রজত আন্দাজ করতে পারছে। সবকিছু জিজ্ঞেস করার দরকার হয়না, বুঝে নিতে হয়।

” বোসো রজতদা, জন্ ফোন করে আমাকে   জানিয়েছিল তোমার এখানে আসার কথা”।অফিস থেকে সরাসরি এসেছে, তাই  একটু পরে ভেতর থেকে কফির সঙ্গে কয়েকটি স্যান্ডুইচ নিয়ে ট্রে হাতে আরতি এসে সেন্টার টেবিলে রেখে রজতের ঠিক পাশের সোফায় বসল। সুন্দর একটা পারফিউমের গন্ধ পেল রজত।তারপর তাদের গল্পের আর শেষ হয়না, চলতেই থাকে।  ছোটবেলার কথা, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের কথা, ছোটখাটো ঝগড়া আর ভুলে যাওয়া মান-অভিমান। কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতের দিকে। হঠাৎ খেয়াল হলো এবার ফিরতে হবে। জন যখন কিছুক্ষণের জন্য ভেতরে গেলো সেই অবসরে একবার রজত জিজ্ঞেস করলো জনের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ হয়েছিলো।

আরতি হেসে বললো,” আজ নয়, পরে একদিন বলবো। সেসব   কথা বলতে শুরু করলে অনেক সময়   লাগবে। এরপর একদিন আসবে, হাতে   সময় নিয়ে, তখন বলবো।”অফিসে নতুন দায়িত্ব ও কাজের চাপ ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে, দিনগুলো কেটে যাচ্ছিল এতো দ্রুত যেন বুঝতেই পারছিলনা রজত।। সেই সঙ্গে ঘনঘন ট্যুর লেগেই ছিল। রজত একা মানুষ, তার কলকাতার ফ্ল্যাট বেশিরভাগ সময় তালা বন্ধই থাকে।এদিকে জন্ তার কাজ নিয়েও ঘোরাঘুরির মধ্যেই থাকে। কলকাতা অফিসে খুব কম পাওয়া যায় তাকে। মার্কেটিং ডিভিশনের প্রয়োজন অনুযায়ী তাকে বাইরে যেতেই হয়। তাই বেশ কয়েক মাস ধরে ওর সঙ্গে রজতের দেখাসাক্ষাৎ খুবই কমে গেছে। দেখা হলে কদাচিৎ একটু আধটু ব্যক্তিগত গল্প হয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই আরতির কথা এসে যায়। রজত জানে পাঁচবছরের ওপর ওদের বিয়ে হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত ওরা নিঃসন্তান। আরতি নিজেও চাকরি করে, বিয়ের আগে যে ট্রাভেল এজেন্সিতে কাজ করতো, সেইখানেই।একদিন হঠাৎ সকালের দিকে আরতির ফোন,”আজ দুপুরে আমার বাড়িতে চলে এসো রজতদা। এখানেই লাঞ্চ করবে, কোনো অসুবিধা আছে?”রজতের কাছে এই আহ্বান কিছুটা অপ্রত্যাশিত। জন্ গতকাল দুদিনের জন্য ট্যুরে গেছে দুর্গাপুরে। ওদের ফ্ল্যাটে আরতির একাই থাকার কথা। জিজ্ঞেস করল,”তুমি আজ অফিসে যাওনি।”

” না ,আজ আমি ছুটি নিয়েছি। ভাবলাম তুমি যদি কলকাতা অফিসেই থাকো তাহলে লাঞ্চে ডেকে নিলে গল্প করার জন্য প্রায় ঘন্টাখানেক সময় পাওয়া যাবে । অসুবিধা না থাকলে ঠিক একটার সময় বেরিয়ে সোজা চলে এসো প্লিজ। আমি অপেক্ষা করব।”
অফিস থেকে ঠিক একটার সময় বেরিয়ে ইলিয়ট রোডে পৌঁছতে দশ মিনিটের বেশি লাগলোনা। দরজায় বেল বাজাবার কোন দরকার হলোনা, কাঠের সিঁড়ি দিয়ে তিন তলায় উঠে রজত দেখলো ফ্ল্যাটের দরজা খুলে আরতি হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। রজতকে দেখেই বললো, ” জানালা দিয়ে দেখতে পেলাম তোমাকে তাই দরজা খুলেই রেখেছি।”

রজত ভেতরে ঢুকতেই বললো,” এসো সময় বেশি নেই, চলো একেবারে ডাইনিং টেবিলেই বসবে।” রজত লক্ষ্য করলো টেবিলটা লাঞ্চের জন্য বেশ সাজানো হয়েছে। সুদৃশ্য টেবিলম্যাটের ওপর প্লেটের দুপাশে ফর্ক আর ছুরি, মাথার কাছে স্পুন, টেবিলের মাঝখানে ফ্লাওয়ার ভাসে একগুচ্ছ টাটকা গোলাপ। খাবারের পাত্রগুলোর কভার খুলে আরতি নিজেই রজতের প্লেটে বেশ কিছুটা চিকেন-ভর্তা রাখলো। তার পাশে অন্য একটা প্লেটে হটকেশ থেকে সদ্য বার করা গরম পরোটা, সামনে একটা পাত্রে অনেকটা স্যালাড। আরতি বললো, ” শুরু করো রজত দা ,সব আমি নিজে হাতে বানিয়েছি। খাবার শেষে ডেজার্ট হিসেবে আইসক্রিম, সেটাও আমার নিজের বানানো।”

রজতের মনের ভাব বোধহয় বুঝতে পারলো আরতি। তাই জানালো,  “তোমাকে দিয়ে তারপর আমি নেবো। আমরা কোনো রান্নার লোক রাখিনি। দুজনেই ব্রেকফাস্ট করে অফিসে বেরিয়ে যাই, লাঞ্চ বাইরে শুধু রাতের বেলার রান্নাটা করি। তাও দুজনে ভাগাভাগি করে, ছুটির দিনে অবশ্য অন্য ব্যবস্থা। ”

খেতে খেতে জমিয়ে গল্প শুরু করলো ওরা। ফেলে আসা দীর্ঘ সময়ের কত কথা জমে আছে, কত প্রশ্ন, সময়ের পলি সরিয়ে অতীতের ঘ্রাণ। রজতের স্বাভাবিক কথায় কিছু প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে,  ” আমি তো অনেক বছর ধরেই বাইরে বাইরে কাটাচ্ছি আরতি। এর মধ্যে জিরাটে ঠিক   কবে তোমাকে শেষ দেখেছিলাম মনে করতে পারছিনা ।মাঝখানে বেশ কয়েকটা বছরের কোন খবরই তো জানিনা।”

রজতের এইসব কৌতুহল আরতি  বুঝতে পারে, তাই বললো,  “সংক্ষেপে বলছি শোনো । আমি যখন হুগলী মহসিন কলেজে বাংলা অনার্সের ছাত্রী, ফাইনাল ইয়ারে, তখন খবর পেয়েছিলাম তুমি বিদেশে চলে গিয়েছ। বোধহয় দু-তিন বছরের জন্য। তারপর তো ফিরে এসে অল্প কিছুদিন পরে তোমাদের কলকাতা অফিস হয়ে দিল্লিতে। এসব খবর আমি জানতাম। এমনকি আমাদের সব বন্ধু-বান্ধবরাও জানতো । তুমি বরাবর ভীষণ মেধাবী ছিলে, তোমার গতিবিধি আমাদের নাগালের বাইরে ছিল। দেখো রজতদা, এখন বলতে বাধা নেই তোমার খবর কিন্তু মেয়েরাই বেশি রাখতো। আমার বাড়ির অবস্থা কোনোদিনই ভালো ছিলোনা। আমার কলেজে পড়া একরকম জেদের বশে। আমি চাইছিলাম চাকরি করে বাবার পাশে দাঁড়াবো। এদিকে বুঝতে পারছিলাম যে আমার গ্রাজুয়েশন হয়ে যাবার পর বাড়িতে বিয়ের ব্যবস্থা নিয়ে কথাবার্তা শুরু করেছিল। আমি বিদ্রোহ করে একজনের সাহায্যে কলকাতায় মাঝারি মাপের একটা ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি জোগাড় করলাম। আহামরি কিছু নয়, রিসেপশনিস্ট। তবুতো পায়ের তলায় একটু শক্ত মাটি পেয়েছিলাম। এখন অবশ্য কিছুটা পদোন্নতি হয়ে পাবলিসিটি বিভাগের দায়িত্ব পেয়েছি।”

রজত চুপচাপ শুনছিল ,এই দীর্ঘ পথ পরিক্রমার কিছুটা জানা গেল। আরতি বুঝতে পারছিল রজত আসলে কি জানতে চাইছে, তাই নিজে থেকেই সরাসরি বললো,  ” জনের সঙ্গে আলাপ সেইখানেই। ও যে এ্যাংলোইন্ডিয়ান সেটা ওকে দেখে কিন্তু একটুও বোঝা যায়না। চেহারায়, আচার-আচরণে বাঙালিয়ানার ছাপ বেশি। সেন্টজেভিয়ার্স কলেজ থেকে বি.কম পাস করে এই কোম্পানিতেই মার্কেটিং এর কাজ করতো। জন ভীষণ ভদ্র, স্মার্ট ও উদার মনের।প্রথম আলাপেই ভালো লেগে গেলো। তারপর যা হয়, একটু একটু করে ঘনিষ্ঠ হলাম। বুঝলাম এই মানুষটির ওপর নির্ভর করা যায়। তারপর আমরা অনেক আলোচনা করে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম । যখন এই সিদ্ধান্ত নিলাম, ওর বাড়িতে কোনো আপত্তি ছিলনা। তবে আমার বাবা-মায়ের তীব্র আপত্তি ছিলো। এমনিতেই তারা ভীষণ রক্ষণশীল। তারপর জন্ ধর্মে খ্রিস্টান। মায়ের সোজা কথা যে এবাড়িতে নারায়নের প্রতিষ্ঠা করে নিত্যসেবা হয়। কোনো কারণেই এইসব অনাচার এখানে চলবেনা। অনেক তর্কবিতর্ক হলো। আমি মাকে বললাম,” তোমার কাছে আমার জীবনের ভালোবাসা   ও সুখের থেকে তোমাদের সংস্কার বেশি   বড়ো হলো ? মায়ের একটাই কথা তাদের অনুমতি ছাড়া যদি নিজের ইচ্ছেতে এই ছেলেকেই বিয়ে করি তাহলে কিন্তু এবাড়ির দরজা চিরকালের জন্য বন্ধ হবে। আমি অবশ্যই ঢুকতে পারবো কিন্তু জন চৌকাঠ মাড়াতে পারবেনা।”

আরতি কিছুক্ষন চুপ করে রইলো। ধীরে ধীরে শুরু করলো,  “এরপর যা ঘটবে সেটা তুমি নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছো। অল্প কথায় বলছি। দুরন্ত অভিমানে আর জেদে আমি শুধু বাবা-মা নয়,জিরাট জায়গাটার সঙ্গেই  সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করে জনের হাত ধরে বেরিয়ে পড়লাম। মিথ্যা বলবোনা, জন আমার ভালোবাসাকে মর্যাদা দিয়ে আমাকে সাদরে তার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিল।
আমাদের এক সহকর্মীর সঙ্গে আগেই কথা বলা ছিল, বাড়ি থেকে বেরিয়ে কলকাতায় সোজা তার ছোট্ট ফ্ল্যাট ,যেখানে সে একাই থাকতো, সেখানে আমি চলে এলাম। জনের আগ্রহে ও পরামর্শে পরের দিনই আমরা স্পেশাল ম্যারেজ অফিসারের সঙ্গে দেখা করে নোটিস জমা দিলাম। অফিসের সবাই আমাদের পাশে ছিল, এর ঠিক একমাস পরে আমাদের বিয়ে হয়ে গেল। তিনজন সাক্ষী জোগাড় করতে কোনো অসুবিধাই হয়নি। তারপর থেকে আমি ইলিয়ট রোডের এই বাড়িতে থাকতে শুরু করলাম।”

আরতি একটু দম নিলো। রজত চুপচাপ অনেককিছু ভাবতে লাগল। আরতির জীবনের সমস্যা, তার চড়াইউৎরাই পেরিয়ে আসা পথ, তার তীব্র ভালোবাসার কাহিনী। নিজের জীবনের অনেক ভাবনা সামনে চলে আসতে লাগলো, মন বড়ো জটিল অঙ্ক হঠাৎ চলার পথে বিছিয়ে দেয়। আরতির জীবনে উথালপাথাল ভালোবাসার ঘটনা শুনতে শুনতে বুকের কোথাও কি একটু চিনচিনে ব্যাথা ? এতোদিন পরে এসব ভাবনাকে উস্কে দিতে চাইছেনা রজত। হ্যাঁ, আজকের রজত অর্থাৎ এই বিখ্যাত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির সিনিয়র  ম্যানেজার রজত মজুমদার।

রজত ঘড়ি দেখলো। এবার উঠতে হবে। আরতিকে বলে অফিসের পথে রওনা হলো। তার একটু আগে আরতি বললো,” এরপর একদিন অফিসের ছুটির পর   আমার কাছে আসতে হবে। আমি ফোনে   কথা বলে নেবো। সেদিন একেবারে ডিনার সেরে ফিরবে।” একটু ইতস্তত করে মুচকি হেসে আবার বললো, ” সেদিন তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ   থাকবে।” আরতির বাড়ি থেকে বেরিয়ে রজত ভাবছিলো আরতি আবার কী সারপ্রাইজ দেবে, কী হতে পারে! এইসব ভাবতে ভাবতে অফিস পৌঁছে গেল।

কলকাতা শহর চিরকালই মিছিল আর আন্দোলনে সরগরম। রাজ্যের নির্বাচন আসন্ন , চারিদিকে রাজনৈতিক ক্ষমতার পালাবদলের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে ।কাগজে কাগজে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তাদের মতামত ও সমীক্ষা লিখে যাচ্ছেন। মাঝে দু’বার বাংলা বন্ধ হয়ে গেছে, রজত নিজে অবশ্য এইসব বন্ধ উপেক্ষা করে যথেষ্ট কষ্ট করেও অফিসে এসেছিল। ডাকা হয়েছিল বারো ঘণ্টার বন্ধ , সকাল ছটা থেকে সন্ধ্যা ছটা । তাই বাড়ি ফিরতে অসুবিধা হয়নি রজতের। এর মধ্যে রজত এক মাসের জন্য জাপান ঘুরে এসেছে একটা বিশেষ টেকনোলজি ট্রান্সফারের ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য। জন্ নিজেও খুব ব্যস্ত, কাজের চাপ বেড়ে গেছে অসম্ভব। মাঝখানে দুদিন অফিসের পর দুজনে একটা রেস্তোরায় বসে গল্প করতে করতে কফি খেয়েছিল। কলকাতার অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা ছাড়া আর কোনো কথাই হয়নি।

সেদিন আরতির বাড়িতে লাঞ্চের পর বেশ কয়েকটা মাস কেটে গেছে এর মধ্যে দু-তিনবার আরতি রজতকে মোবাইলে চেষ্টা করেও ধরতে পারেনি। রজত নিজেই ফোন ধরেনি। একমাত্র কারণ রজতের অতিরিক্ত ব্যস্ততা, পরে ফোন ব্যাক করতেও ভুলে যায়। পরে হয়তো লক্ষ্য করেছে আরতির দিক থেকে গোটা দশেক মিসড কল এসেছিলো।কিছুদিন আগে রজত গাড়ি কিনেছে ।এখন সেই গাড়ি নিয়ে নিজেই ড্রাইভ করে অফিসে বা ক্লাবে যাতায়াত করে। আপাতত কাজের চাপ কিছুটা কম, ঠিক পাঁচটায় বেরোতে পারে। এইরকম একদিন বিকেলের দিকে আরতির ফোন,

” রজতদা,  অনেকদিন তোমার সঙ্গে দেখা   হয়নি।এখনতো একটু হালকা পরিবেশ, জন্ বলছিলো। খুব অসুবিধা না থাকলে অফিস ফেরত চলে এসো আমার কাছে। একেবারে ডিনার সেরে ফিরবে। আমি অপেক্ষায় থাকবো। এসো প্লিজ।” রজত ঘড়ি দেখলো, পাঁচটা বাজতে ঘন্টাখানেক দেরি। রজত ভাবছিল আরতি কীএকটা কথা যেন বললো – ‘আমার কাছে’। বলছে ‘অপেক্ষায় থাকবো’। এ ব্যস্ত দুনিয়ায় কে আর কার জন্যে অপেক্ষায় থাকে। রজতের বুকের সেই চিনচিনে ব্যাথা, বুক ভেদ করে হঠাৎ একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো কি?

অফিস থেকে বের হতে অবশ্য ছটা হয়ে গেল। গাড়ি নিয়ে ম্যাকলিয়ড ষ্ট্রিটে না ঢুকে সোজা গিয়ে বাঁদিকে নোনাপুকুর হয়ে ইলিয়াট রোডে পৌঁছল, তারপর জন ও আরতির বাড়ির কাছে গাড়ি পার্ক করে  সোজা উঠে গেল নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটে। পিংক রঙের শাড়ি পরেছে আরতি সঙ্গে ম্যাচিং ব্লাউজ চুলটা পনিটেল করা, ভীষণ মিষ্টি দেখাচ্ছিলো, তাকিয়ে থাকলো রজত। আরতি ওর হাত থেকে ব্রিফকেসটা নিয়ে ভেতরে চলে গেল আর ওকে হাত ধরে ড্রয়িংরুমের কোণে একটা সোফায় বসিয়ে দিল। নিজেও তার পাশেরটায় বসল আরাম করে। একটু আগে রুম ফ্রেশনার স্প্রে করার জন্য সুন্দর একটা গন্ধে ভরপুর ঘরের বাতাস।

” কী খাবে বল, কফি চলবে তো ?” রজত রাজি হওয়ার দু মিনিটের মধ্যেই কফি চলে এল টেবিলে, অর্থাৎ ব্যবস্থা প্রায় করাই ছিল তাই বেশি দেরি লাগলোনা । আরতি   বললো জন বাড়িতে নেই এখন। একজন অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে গেছে ,বলে গেছে ফিরতে রাত হতে পারে। কফি গরম থাকতে থাকতে চুমুক দিল রজত।তারপর গল্প শুরু হলো আরতির কলকাতাবাসের অভিজ্ঞতা, জন ও তার আত্মীয়-স্বজনদের কথা – এইসব আর কি ।এভাবে বেশ কিছুটা সময় কাটল, রজতকে কাছে পেয়ে আরতির খুশি যেন ধরেনা ।বললো,” তোমাকে বেশি রাত পর্যন্ত আটকে রাখবো না । আমি নিজে এখন খাবোনা ,জন এলে ওর সঙ্গে বসব। যাও ওয়াশরুমে গিয়ে তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো ,আমি ততক্ষণে ডিনার সাজাই।” খুব হালকা কিন্তু ভীষণ সুস্বাদু সব রান্না। কোনো ব্যাপারেই আড়ম্বর নেই  কিন্তু সবকিছুর মধ্যেই আন্তরিকতার ছোঁয়া। এটা আরতির সঙ্গে নতুন করে দেখা হবার প্রথম দিন থেকেই রজতকে  স্পর্শ করেছিল। খাওয়া সম্পূর্ণ,একদম শেষে পুডিং, সেটাও খুব তৃপ্তি করে খেলো রজত।

খাওয়ার পর আরো একবার  দুজনে পাশাপাশি সোফায় বসে পড়লো।” আমি শুনেছিলাম তুমি বাংলায় অনার্স নিয়ে গ্রাজুয়েশন করেছিলে কিন্তু তারপর আর পড়াশোনা করলেনা কেন, আমি জানি না এর কারণ কি আরতি। তুমিতো লেখাপড়ায় যথেষ্ট ভালো ছিলেন।” রজতের এই প্রশ্নে আরতির মুখে একটু করুন হাসি ফুটে উঠলো ।” সকলের সব সাধ কি পূরণ হয় রজতদা। আমাদের বাড়ির আর্থিক পরিস্থিতি বিশেষ ভালো ছিলোনা। তখন চাকরি করে বাবার পাশে দাঁড়াবো বলে মরিয়া হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর অবশ্য কিছুদিন পরে সবই কেমন ওলোটপালোট হয়ে গেল।”

আরতীর জীবনের ওলোটপালোটের খবর কিছুটা রজত ইতিমধ্যেই জেনেছে। তাই চুপ করে থাকলো। বলল, ” যা  ঘটে গেছে তাইতে তুমিতো নিশ্চয়ই সুখী হয়েছো আরতি।” এই কথায় রজতের চোখের দিকে স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে আরতি জবাব দিলো, ” হ্যাঁ, সেটা অবশ্যই বলতে পারো।”একটু থেমে হঠাৎ প্রশ্ন করলো,  ” যদি কিছু মনে না করো একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করছি । আচ্ছা, তুমি বিয়ে করোনি কেন রজতদা ?”

একটু অপ্রস্তুত রজত হালকা স্বরে জবাব দিলো,  ” আমাকে কেউ বিয়ে করলোনা যে, তাই বিয়ে হলোনা। এই বুড়ো বয়সে আর কি করে
এসব ভাববো। তুমি ঘটকালি করবে ?”হাসিঠাট্টায় আরও কিছুটা সময় কাটিয়ে রজত বাড়ি ফিরে যাবার জন্যে উঠে পড়লো। আরতির দিকে তাকিয়ে বললো,” না, জন নিশ্চয়ই আরো দেরি করবে। এবার চলি, খুব ভালো সময়টা কাটালাম। আচ্ছা, তুমি কী একটা সারপ্রাইজ দেবে বলেছিলে।”

আরতি হাসতে হাসতে জবাব দিলো, ” তোমার ব্রিফকেসে রেখে দিয়েছি। বাড়ি পৌঁছে সেটা খুললেই পেয়ে যাবে।”ফেরার পথে রজত ভাবছিল কী হতে পারে সেটা। ফ্ল্যাটে পৌঁছে অফিসের পোষাক বদলে ঘরে বসে ব্রিফকেস খুলে দেখলো বহুদিন ধরে যত্নে রাখা বিবর্ণ হয়ে যাওয়া একটা ভীষণ পুরোনো খাম যার ওপরে রজতের নাম ও জিরাটের বাড়ির ঠিকানা লেখা। বুঝতে পারলো বহুকাল আগে লেখা একটি চিঠি যেটা যেকোনও কারণেই হোক পোস্ট করা হয়নি। চেয়ারে বসে খামটা ছিঁড়ে দেখলো হাতে লেখা একটি ছোট্ট চিঠি।

রজতদা,অনেক দ্বিধা সঙ্কোচ কাটিয়ে মনস্থির করলাম এই চিঠিটা লেখার। কিন্তু বিশ্বাস করো খুব ভয়ে ভয়ে লিখছি।জানি, তোমার পাশে থাকার কোনো যোগ্যতাই আমার হয়তো নেই। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও তোমার চিন্তা আমার মন থেকে সরাতে পারছিনা। আমার চিন্তায়, আমার স্বপ্নে বারবার শুধু তুমিই এসে যাও।  তোমাকে ধরে আমি বাঁচতে চাই রজতদা। এই চিঠিটা কেমন করে তোমার হাতে পৌঁছবে আমি জানিনা। আমারতো মোবাইল ফোন নেই, থাকলেও সুবিধা হতোনা কারণ তোমার ফোন নম্বর আমি জানিনা।তাই হয়তো খামের ওপর তোমার বাড়ির ঠিকানা লিখে ডাকবাক্সে ফেলবো।কিন্তু এই চিঠি লিখে যদি অন্যায় করে থাকি তুমি আমাকে ক্ষমা করে দিও।

আরতি চিঠিটা পড়ে রজত বুঝতে পারলো আরতি এই সারপ্রাইজের কথাই বলেছিল। চিঠির তারিখ দেখে বুঝতে পারলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে তখন ও বিদেশে পৌঁছে গিয়েছিল। পড়া শেষ করে ওর ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে এসে দাঁড়িয়ে থাকলো। শরতের নির্মেঘ আকাশে জ্বলজ্বল করছে অজস্র তারা। আলো-আঁধারের মায়াময় প্রান্তরে চল্লিশ ছুঁইছুঁই রজতের মনে অতীতের সঙ্গে বর্তমানের দোলা। না, কোনো দূঃখ নয়, কোনো না-পাওয়ার বেদনার রেশ নেই, নেই কোনো বিষাদের ছায়া,তার বদলে সমস্ত মনপ্রাণ জুড়ে এক আশ্চর্য পর্যবেক্ষণ, এক আশ্চর্য আনন্দে মন আলোকিত হয়ে উঠেছে। রজত ভাবছিল সে কিছুই হারায়নি, কোনো এক অজ্ঞাত কারণে তার হৃদয় ছুঁয়ে নেমে আসছে ভালোবাসার ইঙ্গিত । ব্যালকনিতে সুন্দর হাওয়া, রজতের বুকজুড়ে কবিতার নিঃশব্দ উচ্চারণ। মনে পড়ে গেলো কবি প্রবণপালন চট্টোপাধ্যায়ের একটি কবিতার লাইন – ” এমন করে তো বাতাস মাখিনি বহুদিন”

Tags: , ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ