আপনি মিথ্যে কখা বলছেন- গর্জে ওঠেন ডিউটি অফিসার নির্মল সেন
উল্টো দিকে চেয়ারে বসা লোকটি ষেন আরো কুঁকড়ে যায়৷
মুখে বেশ কদিনের না কামানো দাড়ি, চোখে অসহায় করুণ দৃষ্টি
না স্যার বিশ্বাস করুন আমি দাদাকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরেছি….আমাকে জেলে দিন – ককিয়ে উঠে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে লোকটি ৷
হতাশ অফিসার….পুলিশের চাকরী জীবনে নানা অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন, কিন্তু এই রকম অভিজ্ঞতা কোনদিন হয়নি৷
দেখুন সুদীপ বাবু আপনার দাদার পোষ্টমর্টেম রিপোর্টে কিন্তু বলছে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারনে স্বাভাবিক মৃত্যু৷বালিশ চাপা দিলে অল্প বিস্তর ধ্বস্তাধ্বস্তির চিন্হ থাকতো….সেটা পর্যন্ত পাওযা যায়নি৷ তা হলে মিথ্যে কথা শুধু শুধু বলছেন কেন ?
তিন পর্দা স্বর তুলে ধমক দিলেন নির্মল সেন ,কোলকাতা পুলিশের দুঁদে অফিসার৷কেন ? কেন? কেন ?
উপস্থিত আরো কয়েক জন জুনিয়র অফিসার প্রশ্নের চক্রব্যুহে জর্জরিত করতে থাকেন ,আপাত নিরীহ সুদীপ বোসকে৷
মিনমিনে প্রতিরোধ আর বিপক্ষের সুকৌশলী জেরায় একসময় ভেঙে পড়ে সুদীপ বোস৷
ডুকরে চিৎকার করে বলে- খিদে,…..আমার যে বড় খিদে পায় স্যার।
কি বলছেন আপনি ?
উত্তেজনায় ডেসিবেলের অঙ্ক ছাড়িয়ে গেল নির্মল সেনের কন্ঠস্বর।
দাদার মাথায় জলপটি দিতাম….দাদা বলেছিল ও বেশিদিন বাঁচবেনা ….মরে গেলে পুলিশ কে বলবি তুই আমায় বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছিস৷ জেলে গেলে তবু দুটো খেতে পাবি ৷
স্যার আমি বিকম পাস৷ মা , বাবার পেনসন পেত কুড়ি হাজার টাকা ৷ আমাদের তিনজনের চলে যেত৷ দাদা সবসময় অসুস্থ থাকতো…মা ও৷ আমি রান্না করতাম৷ কোনদিন বাড়ির বাইরে যেতাম না৷ মা মরে গেলে টাকা নেই….ভাড়া ফ্ল্যাট ছেড়ে বস্তি তে ঘর ভাড়া নিলাম৷ আস্তে আস্তে জমা টাকা সব শেষ হয়ে গেল ৷ দাদা বিছানা থেকে উঠতো না৷ আমার কিন্ত খুব ক্ষিদে পেত .,.খুব৷
স্যার আমাকে জেলে ঢুকিয়ে দিন৷ আমি কোন কাজ পারিনা ….আমার খিদে পায় খুব ….স্যার মনে করুন না আমি আমার দাদাকে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছি,…
স্যার আমার বড্ড খিদে পায…বড্ড…
গভীর রাতে এক ক্ষুধাতুর মানুষের আর্ত চিৎকার থানার দরজা ভেদ করে শান বাঁধানো ঝাঁকড়া ছাতিম গাছে আশ্রয় নেওয়া কয়েকটা পাখির রাতের ঘুম বরবাদ করে ৷
[ মতামত বানানবিধি লেখকের নিজস্ব]
Tags: খিদে, গল্প, তন্ময় ভট্টাচার্য
email:galpersamay@gmail.com
পীযূষ কান্তি দাস on March 22, 2024
“খিদে” মন ছুঁয়ে গেল।
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।