ডেপুটি ফরেস্ট অফিসার প্রভাত গড়গড়ি হাত বাড়িয়ে সামনে জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সনাতন সাঁপুইয়ের হাত থেকে কাগজটা নিলেন ।
ডাইরেকটরেক্ট অফ ফরেস্ট, বিকাশ ভবন থেকে ইস্যু হওয়া একটা গভরনমেন্ট অর্ডার, স্টাফ অ্যাপয়েন্টমেন্ট অ্যান্ড পোস্টিং-এর ।
‘…শ্রী সনাতন সাঁপুইকে সুন্দরবন প্লট ১২৬-এর ঝড়খালি ডিএফও অফিসে সিনিয়র ফরেস্ট গার্ড পদে নিযুক্ত করা হচ্ছে ।…ডেপুটি ফরেস্ট অফিসারের কাছে রিপোর্ট করতে হবে আগামী ১লা জুলাইয়ের মধ্যে…।’
গড়গড়ি সাহেব অর্ডারের জরুরী অংশটুকু পড়ে চোখ তুলে তাকালেন সামনে দাঁড়ানো সনাতন সাঁপুইয়ের মুখের দিকে।
আজই পয়লা জুলাই ।
ঝড়খালির ডিএফও তাঁর টিমের নতুন সিনিয়র ফরেস্ট গার্ডের মাথা থেকে পা থেকে অবধি একবার জরিপ করলেন।
নেহাতই সাদামাটা গ্রাম্য চেহারা, ফুলহাতা গোলাপি রঙের সার্ট কালো প্যান্টের মধ্যে গুঁজে পরা, মাথার চুলে প্রচুর তেল দিয়ে সিঁথি কেটে আঁচড়ানো । পায়ে স্নিকার, প্যান্টটা ঢোলা, তাও আবার লম্বায় খাটো, তাই পায়ের গোছ আর জুতোর ফাঁক দিয়ে ক্যাটকেটে লাল রঙের মোজা দেখা যাচ্ছে।
বেশ করে দেখেটেখে নিয়ে নাকমুখ দিয়ে একটা অদ্ভুত আওয়াজ করে ডিএফও বললেন, একেবারে সিনিয়র ফরেস্ট গার্ড !
গড়গড়ি সাহেবের কথাটা এমন ভাবে তাঁর মুখনিঃসৃত হলো যে সেটা সনাতনকে প্রশ্ন, না কি তাঁর বিস্ময় বা হতাশার প্রকাশ, বোঝা গেলো না ।
বেচারি সনাতন ঘাবড়ে গিয়ে বললো, আজ্ঞে ?
ডিএফও সাহেব ওদিকে আর না গিয়ে বললেন, পড়াশোনা কতদূর ?
এবার সনাতন উৎসাহিত হলো, আজ্ঞে, বিএসসি, বোটানি অনার্স, পশ্চিম মেদিনীপুর কলেজ, ফিফটি টু পারসেন্ট স্যার।
– হুম ! বিএসসি অনার্স ! এইবার বুঝলাম ! ওতেই বিকাশ ভবনের সাহেবরা একেবারে বিকশিত হয়ে উঠেছিলেন ! যত্তোসব কেতাবী ভড়ং !
সনাতন ঠিক বুঝতে পারলো না তার কোয়ালিফিকেশন শুনে বস খুশী হয়েছেন কি না।
সে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলো ।
প্রভাত গড়গড়ি এবার বললেন, বসো।
হাজার হোক, সিনিয়র ফরেস্ট গার্ড, ক্লাস থ্রি স্টাফ তো বটে !
সনাতন ধপ করে সামনের চেয়ারটায় বসে পড়লো।
#
– এটাই তো প্রথম চাকরি…না কি ? এরপর গড়গড়ির জিজ্ঞাসা ।
– আজ্ঞে হ্যাঁ স্যার ।
– তবেই বোঝো !
প্রভাত গড়গড়ি হতাশার সুরে বলে উঠলেন । তারপর বললেন, এক্সপিরিয়েন্স বলে তো তোমার কিচ্ছু নেই…না মাঠে না ঘাটে !
– আজ্ঞে…সাপ…সাপ ধরতে পারি । সনাতনের উৎসাহিত উত্তর ।
– হ্যাঁ-অ্যা ! সে তো তোমার পদবী দেখেই বুঝতে পারছি ! তা সাপও কি ওই সনাতন পদ্ধতিতে ধরো…না কি স্টিক-ফিক কিছু লাগে ?
এবার সনাতন বাস্তবিকই উদ্দীপ্ত হয়ে উঠলো, না স্যার । ওসব কিছু লাগে না আমার ! ওই আপনি যেমন বললেন…খালি হাতে ধরি স্যার…আ-কামা সাপ !
এই বলে সনাতন হাসি হাসি মুখ করে বসের দিকে তাকিয়ে থাকলো ।
প্রভাত গড়গড়িও সনাতনের দিকে তাকিয়ে থাকলেন কয়েক মুহূর্ত, বেশ একদৃষ্টে ।
মানে বোঝবার চেষ্টা করলেন আর কি, সামনে যে মানুষটা বসে আছে সে কি নিখাদ গেঁয়োভুত না কি অতি চালাক !
তারপর একটু সংশয়ের সুরে বললেন, বুঝলাম ! তুমি কি ইন্টারভিউয়ের সময় বিকাশ ভবনের স্যারেদেরও এই খালি হাতে সাপ ধরার কথা বলেছিলে ?
– হ্যাঁ স্যার ! ওঁরা তো খুব প্রশংসা করলেন । একজন বললেন, যেখানে তোমাকে পোস্টিং দিচ্ছি তুমি ওখানে তোমার ওই হাতের কায়দা দেখাবার অনেক সুযোগ পাবে ।
– সে তো বটেই ! ওদের দৌড় বারুইপুর পর্যন্ত, খাঁটি সুন্দরবন তো দেখেনি কেউ !
– তা তো বটেই ! সনাতনের তেল-মাখানো ঝটিতি মন্তব্য।
এবার প্রভাত গড়গড়ি বেশ বিরক্ত হলেন, তা তো বটেই কি আবার ! এটা সুন্দরবন, রয়েল বেঙ্গল টাইগারদের রাজত্ব ! এখানে তোমার ওই বোটানি-ফোটানির বই-পড়া বিদ্যে আর খালিহাতে সাপ ধরার গপ্পো চলবে না । এখানে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে বাঘের ওজন, তার ল্যাজশুদ্দু বডির মাপ, বাঘ না বাঘিনী, সে সুস্থ না অসুস্থ, এই সবই ঠিক করতে হয় আমাদের। আর তোমার ওই ধরা-ধরির কথায়ই বলছি, দরকার পড়লে ঘুম-পাড়ানি গুলিতে ঘায়েল করে গোটা একটা বাঘ ধরতে হবে। তোমাকে একেবারে শুরু থেকে শিখতে হবে এখানে ! বুঝতে পারছো ?
গড়গড়ি শেষ দুটো শব্দের ওপর এক্সট্রা জোর দিলেন ।
– মানে, একেবারে বাঘের বাচ্চা ধরা থেকে শুরু করতে হবে স্যার ? তাই বলছেন ? সনাতন নিপাট ভালমানুষের মতো প্রশ্ন করলো ।
প্রভাত গড়গড়ি আবার চোখ গোল গোল করে এক মুহূর্ত দেখলেন সনাতনকে…’নাহ, এটা মনে হচ্ছে একবারেই ‘র’ !’
তারপর সামলে নিয়ে বললেন, শোন, সিনিয়র ফরেস্ট গার্ডদের একেবারে দরকার না পড়লে জঙ্গলের রোঁদে যেতে হয় না । রোঁদ বোঝো তো…না কি ?
সনাতন ঘাড় নাড়ল । গড়গড়ি আবার শুরু করলেন, হ্যাঁ, যা বলছিলাম। সিনিয়র গার্ডের বেশীর ভাগ সময়ই অফিসে ডেস্কের কাজ থাকে। এই গার্ডদের রোস্টার তৈরি, কাঠুরে আর মউলেদের কাঠ মধুর লাইসেন্স, সেসব ফাইল তৈরি, চিঠি ডেসপ্যাচ, সে অনেক কিছু। এই পোস্টে কাজ করার জন্যে গার্ডরা মুখিয়ে থাকে, বুঝলে ? তুমি তো জঙ্গলের কিছুই জানো না, চেনো না… একেবারে ‘বিক্রম’-এর মতো সোজা এখানে ল্যান্ড করেছো ! তাই তোমাকে দিয়ে সেসব কাজও এখন আমি পাবো না । তুমি মাস তিনেক এখন সপ্তাহে তিনদিন ফরেস্ট গার্ডদের সঙ্গে জঙ্গলে ঘুরবে । আমি বলে দেবো, প্রত্যেক গার্ড তোমাকে যেন তাদের জঙ্গলের শিফটে সঙ্গে নিয়ে যায় । তাদের প্রশ্ন করে করে স-অ-ব কিছু জানবার চেষ্টা করবে । আর, বাকি দুদিন অফিসে ফাইলপত্তরের ঘাঁতঘোঁত বোঝবার কাজ করো।
গড়গড়ি থেমে গেলেন। দেখলেন সনাতন উৎসুক চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে ।
তিনি থামতেই সনাতন ঘাড় হেলিয়ে বললো, আচ্ছা স্যার ।
প্রভাত গড়গড়ি আবার শুরু করলেন, গার্ডদের রেস্টরুমে প্রতুল নামে একজনকে পাবে, অফিসের পিওন, খুব করিতকর্মা, লোকাল ছেলে। এখনই গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করো । সে অফিসের কাছে একটা ঠিকঠাক বাসা দেখে দেবে । এখন যাও । আর হ্যাঁ, প্রতুলের কাছে পরে, আগে পাশের হলে বসেন অফিসের বড়বাবু ভুবনবাবু, তাঁর টেবিলে গিয়ে জয়েনিং রিপোর্টটা দিয়ে দাও । ওঁর কাছে একটা গাইডলাইন বই আছে, বাংলায়, জঙ্গলের ডু-স অ্যান্ড ডোন্ট-স । ওইটা চেয়ে নিয়ে ভালো করে পড়ো। ওটাই আমাদের বেদ, বুঝলে ? ওঁকে আমি বলে দিচ্ছি । সোজা এখন ভুবনবাবুর কাছে চলে যাও ।
লম্বা বক্তৃতা শেষ করে গড়গড়ি সাহেব হাতের কাগজটায় একটা সই করে ভুবনবাবুকে মার্ক করলেন । তারপর সনাতনের দিকে কাগজটা বাড়িয়ে দিয়ে টেবিল থেকে জলের গ্লাসটা তুলে নিলেন ।
সনাতন অর্ডারের কাগজটা নিয়ে ঘাড় নেড়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো ।
তারপর বললো, একটা প্রশ্ন করবো স্যার ?
জলের গ্লাসটা ঠোঁটে তুলে প্রভাত গড়গড়ি বললেন, করো।
– ওই যে ‘বিক্রম’ বললেন, উনি কে স্যার…আর একজন সিনিয়র ফরেস্ট গার্ড ?
সনাতনের প্রশ্ন শুনে ডিএফও গড়গড়ি গলায় জল আটকে বিষম খেলেন ।
কাশতে কাশতে গেলাসটা তাড়াতাড়ি টেবিলে নামিয়ে রেখে তিনি সনাতনের দিকে তাকিয়ে হাসবেন, না কাঁদবেন, না কি শাট আপ বলবেন প্রথমে বুঝতে পারলেন না ।
তারপর একটু সামলে নিয়ে ভাবলেন, জঙ্গলের এই দৈনন্দিন গতানুগতিক জীবনে একটু বিনোদন এলে মন্দ কি !
এই একঘেয়ে আর বিপদসংকুল অফিসের জন্য ওটাও জরুরি ।
হাসি চেপে গড়গড়ি সাহেব বললেন, সেটা পরে বলবো । এখন যাও তো, যাও ।
২
প্রভাত গড়গড়ি যতটা ভেবেছিলেন তার কিছুটা তো সত্যি হলো।
কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সনাতন তার বিভিন্ন কার্যকলাপের কারণে অফিসের লোকেদের কাছে হাসিমজার খোরাক হয়ে দাঁড়ালো।
তবে সত্যি বলতে কি, ওকে নিয়ে ডিএফও অফিসের নাতিবৃহৎ কর্মচারীর সংখ্যা দুভাগে ভাগ হয়ে গেলো ।
একভাগ তাকে গাঁয়ের হদ্দ বোকা একটা অকিঞ্চিৎকর মানুষ হিসাবে দাগিয়ে দিতে চাইলো । এমন কি তারা ওর সার্ভিস বুক-এ সদ্য পেস্ট করা বিএসসি অনার্স সার্টিফিকেটের কপিটার সত্যতা বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলো ।
এর সঙ্গে বিকাশ ভবনে তার বিশেষ ওজনদার মুরুব্বির খোঁজ ও উৎকোচের পরিমাণ সম্বন্ধে অনুমানের বন্যা বয়ে যেতে লাগলো ।
আর একদল এইসব মত ও সন্দেহকে আজগুবি বলে উড়িয়ে দিয়ে যুক্তি দিলো, সনাতন হচ্ছে একজন সত্যিকারের ভদ্র, শিষ্ট সরল মানুষ, যেরকম আজকের দিনে গাঁয়েও মেলা দুস্কর। ওর নিপাট সরল সাধারণ ব্যবহারকে বোকামি ভাবলে সেটাই একটা শহুরে বোকামি হয়ে দাঁড়াবে !
বলা বাহুল্য এ সব আলোচনাই সনাতনের পেছনে হতে লাগলো ।
তাই তাকে নিয়ে অফিসে এই সব গুরুতর কূটকচালি আলোচনা ও তজ্জনিত মতবিরোধের বিন্দুবিসর্গ আঁচ না পেয়ে সনাতন সকলের সঙ্গে এমন বন্ধুভাবে মিশতে লাগলো যে, সন্দেহপ্রবণ প্রথম দলও কিছুটা ধন্দে পড়ে গেলো ।
কিছুদিনের মধ্যেই দেখা গেলো সনাতনের মেধা ও স্মৃতি দুই-ই জবরদস্ত !
যেটা ওকে বলে দেওয়া হয়, সেটা ও প্রায় ভোলেই না ।
দু সপ্তাহের মধ্যেই সনাতন সুন্দরবনের প্রধান প্রধান গাছগাছালি, সুন্দরী, হেঁতাল, গরান, বাইন, কেউড়া, পশুর, কাঁকড়া, গর্জন, ধুতুল, গেওয়া সব চিনে ফেললো ।
রয়েল বেঙ্গল টাইগার যে পরশ, হেদো আর গোলপাতা ঝাড়ের মধ্যেই আস্তানা গাড়ে তা-ও ওর জানা হয়ে গেলো ।
তার ওপর অফিসের দেওয়ালে টাঙ্গানো সুন্দরবনের ম্যাপ দেখে একটা কাগজে লাইন টেনে টেনে বড়ো বড়ো নদী আর খাঁড়িগুলোর একটা চলনসই ম্যাপও এঁকে ফেললো ।
অফিসের কলিগরা বেশ অবাক হয়ে দেখলো সনাতনের আঁকার হাতটাও বেশ ভালো ।
কেউ প্রশংসা করলে সনাতন অপ্রস্তুত হাসি হেসে বললো, ঠিকঠাক আঁকা না শিখলে তার বোটানি পাশ করাই হতো না ।
বিনয় করে আরও বললো, এ আর কি ! তার অনেক ক্লাসমেট নাকি ওর থেকে অনেক ভালো আঁকতে পারতো।
#
সনাতনের এইসব কারিকুরি দেখতে দেখতে প্রায় দুমাস কেটে গেলো ।
তার বুদ্ধি-বিবেচনার রকমসকম নিয়ে যখন অফিসের মধ্যে একটা নতুন ভাবনাচিন্তার তোড়জোড় চলছে এমন সময় দিনদুপুরে অফিসের বড়ো হলঘরটায় একটা কাণ্ড ঘটলো ।
ঝিরঝিরে বর্ষার সেই দুপুর বেলায় অফিসে কাজকর্ম আর সঙ্গে সঙ্গে অবাধ গুলতানি আর কূটকচালি চলছে । বলাবাহুল্য আলোচনার কেন্দ্রে প্রভাত গড়গড়ি।
সনাতন নিজের টেবিলে বসে একটা ফাইল তৈরির কাজে ব্যস্ত ।
এমন সময় ক্লার্ক জীবন মাইতির টেবিলের পাশ দিয়ে সরসর করে হলটার মাঝখানে বেরিয়ে এলো একটা আস্ত তিন সাড়ে তিনফুট লম্বা গোখরো সাপ ।
জীবনের দেয়াল-ঘেঁষা টেবিলের পাশেই জল যাওয়ার ছোট নর্দমার মুখ। সেখান দিয়েই
বাবাজি ঢুকে পড়েছেন বোধহয় ।
তারপর সে এক হুলুস্থুল কাণ্ড !
কে বলবে এটা খাঁটি সুন্দরবনের ভেতরে খোদ বনদপ্তরের একটা অফিস !
হলের মধ্যে যারা ছিলো প্রায় সব্বাই ধপাধপ উঠে পড়লো নিজের নিজের টেবিলের ওপর ।
অতো মানুষের পায়ের শব্দে সন্ত্রস্ত সাপ তো ঢুকে পড়লো আলমারির সারির তলায়, ল্যাজের কিছুটা কেবল দেখা যাতে লাগলো ।
তারপর শুরু হল সমস্বরে চিৎকার চেঁচামেচি, ক্যাচিং স্টিক কোথায়, আরে তাড়াতাড়ি স্টিক আনো, গ্লাভস আনো, থলে আনো।
কোলকাতার সারপেক্স কোম্পানি থেকে কতকগুলো স্টিক আনানো হয়েছে কদিন আগেই, বর্ষাকালে এখানে এগুলো প্রায় রোজকার দরকারি জিনিস ।
টেবিলের ওপরে দাঁড়িয়ে নড়বড় করতে করতে প্রৌঢ় ভুবনবাবু চেঁচিয়ে উঠলেন,
প্র-তুল, প্র-তুল, যা-ও যা-ও, জলদি স্টোর থেকে একটা স্টিক নিয়ে এসো। আর গার্ডরুমে কে আছে দ্যাখো, হাঁক দাও, শীগগির যা-ও।
প্রতুল দৌড়োল হুকুম তামিল করতে।
এদিকে সনাতন চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছিলো, টেবিলে ওঠেনি। ধীরেসুস্থে সে এগিয়ে গেলো আলমারিগুলোর দিকে ।
মিনিট খানেকের মধ্যেই প্রতুল ফিরে এলো, এক হাতে হুক-মাথা লম্বা স্টিক আর অন্য হাতে একটা ক্যাম্বিসের থলে।
দরজার গোড়ায় দাঁড়িয়ে ও সবে বলতে শুরু করেছে, সমরদাকে ডেকেছি, এক্ষুণি আস…প্রতুলের মুখের কথা মুখেই থেকে গেলো।
ঘরের অন্য সকলের মতো ওর চোখও গোল হয়ে গেলো, মুখ স্পিকটি নট !
সবাই টেবিলের ওপর, আর আলমারির পাশে সনাতন দাঁড়িয়ে আছে, মুখে একটু যেন লজ্জিত ভাব।
ওর ডানহাতের মুঠিতে সাপটার মাথা আর বাঁহাতে শক্ত করে ধরে রেখেছে ল্যাজটা !
দুহাতের মাঝে আটকানো সাপের তিনফুট লম্বা শরীরটা মাঝে মাঝে এঁকেবেঁকে ঝটকা দিয়ে উঠছে। ।
ঠিক এই সময় আর এক কাণ্ড ঘটলো।
হইচই শুনেই বোধহয় প্রভাত গড়গড়ি দরজায় এসে দাঁড়ালেন।
সবাই টেবিলের ওপর দাঁড়িয়ে আছে দেখে বেশ রাগের গলায় বলে উঠলেন, এ কি ! এসব কি হচ্ছে এখানে ? ভুবনবাবু ?
ভুবনবাবু কিছু জবাব দেবার আগেই তাঁর চোখ গিয়ে পড়লো সনাতনের ওপর।
বিস্ময়, ত্রাস আর অকল্পনা মিশিয়ে এবার তাঁর মুখ দিয়ে সজোরে যে আওয়াজটা বেরোল, তাতেই বোধহয় ঘাবড়ে গিয়ে এক মুহূর্তের জন্য সনাতনের ডান হাতের মুঠো আলগা হয়ে গেলো ।
আর অহিপুঙ্গবের মাথা সনাতনের হাত থেকে বেরিয়ে গিয়ে শূন্যে ঝুলতে লাগলো ।
ঘরের প্রায় সকলের মুখ থেকেই আতঙ্কের একটা চাপা আওয়াজ উঠলো ।
কিন্তু সে আওয়াজ মেলাতে না মেলাতেই সনাতন আবার ক্ষিপ্রগতিতে ডান হাত দিয়ে অদ্ভুত দক্ষতায় সাপটার মাথা চেপে ধরে সকলের দিকে তাকিয়ে একটু বোকার মতো হেসে বললো, ওই স্যার এসে গেলেন তো, তাই আমি একটু ঘাবড়ে গিয়ে…
সম্বিত প্রথমে ফিরে এলো ফরেস্ট গার্ড সমরের।
তাড়াতাড়ি প্রতুলের হাত থেকে থলেটা নিয়ে সনাতনের কাছে এগিয়ে এসে ও হাতের থলেটার মুখটা একটু খুলে সনাতনের সামনে ধরলো।
সনাতন দক্ষ সাপুড়ের মতো ডানহাতটা থলের মুখে ঢুকিয়ে সাপটাকে থলের মধ্যে আটকে ফেললো।
চারদিকে স্বস্তির অস্ফুট আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে গুঞ্জন শুরু হয়ে গেলো…সনাতনের সাহস আর দক্ষতা তার পূর্বঘোষিত আত্মপরিচয়ের প্রতিপাদ্যের সঙ্গে এই মুহূর্তে হাতেনাতে প্রমাণিত হয়ে গেছে…গুঞ্জন তো এখন হবেই !
প্রভাত গড়গড়ি আটকে থাকা নিঃশ্বাসটা ছেড়ে বললেন, সনাতন তুমি হাতটা ডেটল দিয়ে ভালো করে ধুয়ে আমার চেম্বারে এসো । আর প্রতুল, তুইও আয় ।
৩
– সাপটা কোনখান দিয়ে হলের মধ্যে ঢুকেছিলো প্রতুল, আন্দাজ করতে পারলি ?
প্রভাত গড়গড়ির চেম্বারে নাগ এপিসোডের প্রাথমিক তদন্ত শুরু হয়েছে ।
চেয়ারে বসে উদ্বিগ্নমুখে গড়গড়ি, টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতুল আর সনাতন ।
– আন্দাজ কি স্যার, ওই তো…ললিতদার চেয়ারের পেছনে জল যাওয়ার নর্দমার মুখের জালিটা ভেঙ্গে গেছে, ওইখান দিয়েই ব্যাটা ঢুকেছিল ।
প্রভাত গড়গড়ি যন্ত্রচালিতের মতো ঝুঁকে নিজের চেয়ারের পেছনের দিকে তাকালেন । পরিষ্কার সাদা দেওয়াল, কোন গর্ত নেই ! তারপর চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ঘরের চার দেওয়াল আর মেঝের সংযোগরেখা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলেন ।
‘নাহ, এই চেম্বারে কোন জল যাওয়ার ব্যাপার-স্যাপার নেই ।’
গড়গড়ি সাহেব একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে পড়ে বললেন, প্রতুল, তুই বড়বাবুকে বলে ইম্প্রেস্ট থেকে টাকা নিয়ে শক্ত এসএস জালি কিনে এনে ওখানে লাগাবার ব্যবস্থা কর, আজই। আর কার্বলিকটা হপ্তায় দুদিনের জায়গায় চারদিন ছড়িয়ে দে। বর্ষাকাল । বৃষ্টির জলে ধুয়ে এফেক্ট চলে যাচ্ছে ।
সনাতন এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বসের হাবভাব লক্ষ্য করছিলো, কথাবার্তা শুনছিলো । এবার বলে উঠলো, এরকম কিছু হলেই আমাকে ডাকবেন স্যার । আমি তো আছি ।
প্রভাত গড়গড়ি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, সনাতনের কথায় থেমে গিয়ে তার দিকে এক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলেন ।
তারপর আবার প্রতুলকে বললেন, সনাতন তো আর সব ঘরে হামেহাল হাজির থাকবে না । বাজারে জালি কিনতে যাওয়ার আগে অফিসের সব ঘরের নর্দমার মুখ চেক করে নে। যতগুলো পালটাবার মতো মনে হবে সব পালটে দিবি । আর দুটো এক্সট্রা কিনে আনবি। সনাতন, তুমি বসো।
শেষ বাক্যটা সনাতনকে বলে গড়গড়ি হাত নেড়ে প্রতুলকে ইঙ্গিত করলেন বেরিয়ে পড়ার জন্য। প্রতুল বেরিয়ে গেলো ।
– শোন সনাতন, আজকে এখন যেটা ঘটলো, তাতে প্রমাণ অবশ্য হলো যে তুমি নিজের সম্বন্ধে বানিয়ে গল্প বলোনি। আমি তো নিজের চোখে দেখলাম…তোমার স্কিল দেখে নিজেই হতবাক হয়ে গেছি । অনেক ঘাঘু গার্ডও খালি হাতে এমনটা পারে না ।
প্রভাত গড়গড়ি থেমে গিয়ে সামনে রাখা জলের গ্লাস থেকে এক ঢোঁক জল খেলেন ।
সনাতন লজ্জিত মুখে নিজের প্রশংসা শুনে যাচ্ছে।
– তবে এটা তো সরকারি অফিস, তোমরা সবাই সরকারি কর্মচারী । অফিস এরিয়াতে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তার জবাবদিহি শুধু আমাকেই করতে হবে । সেই দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্যে আমি কোন প্রিভেন্টিভ মেজার নিয়েছিলাম কিনা সেটাই প্রথমে দেখা হবে। অফিসের বাইরে, জঙ্গলের মধ্যে কিছু হলে সে একেবারে অন্য ব্যাপার, প্রফেশনাল হ্যাজারড। একেই তো এই জঙ্গলে পড়ে আছি পাঁচ বছরের বেশি, না প্রমোশন, না ট্রান্সফার । এর মধ্যে যদি আবার কোন এনকোয়ারি কমিটির সামনে পড়তে হয়…
প্রভাত গড়গড়ি থেমে গিয়ে ভাবলেন, এতো সব ব্যাপার এই আনকোরা সনাতন বুঝতে পারছে না নিশ্চয়ই ।
সনাতনকে জিজ্ঞেস করলেন, বুঝতে পারছো, কি বলতে চাইছি ?
সনাতন যেভাবে ঘাড় নাড়লো তার মানে হয় সে বুঝতে পারছে ।
– মোদ্দা কথাটা হচ্ছে, ভবিষ্যতে কোনদিন তুমি ওই খালি হাতে সাপ ধরতে যাবে না । কখনোই না । সাপ ধরার জন্যে স্টিক আছে, গ্লাভস আছে, ধরতে হলে প্রপার কায়দায় ধরবে। আমার ট্রান্সফারের অ্যাপ্লিকেশন বিকাশ ভবনে পড়ে আছে, এখন আমি কোন রিস্কের মধ্যে যেতে চাই না । বুঝলে ?
সনাতন বললো, হ্যাঁ স্যার । তবে আপনি স্যার ট্রান্সফার হয়ে চলে গেলে আমার জন্যে এই অফিসটা একেবারে…সনাতন থেমে গেলো ।
ডিএফও গড়গড়ি এক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলেন সনাতনের দিকে ।
তারপর একটু নরম সুরে বললেন, তোমার কাজের প্রগ্রেসের ব্যাপারে আমি সব খবরই রাখছি। সাধারণ বুদ্ধিটা ঠিকমতো অ্যাপ্লাই করলে তুমি তাড়াতাড়ি উন্নতি করবে। এখন যাও ।
#
ক্রিং ক্রিং করে মোবাইলটা দুতিনবার বেজে থেমে গেলো ।
প্রথমবার বাজতেই প্রভাত গড়গড়ির ঘুমটা ভেঙে গিয়েছিলো ।
ঘুমচোখে মশারির ভেতর থেকে জানলার বাইরে দেখলেন ঘন অন্ধকারের মধ্যে যেন প্রথম আলোর আভাস ফুটে উঠেছে ।
‘কটা বাজে ! এই ভোররাতে কে আবার ফোন করলো !’
পাশ থেকে সহধর্মিণী বলে উঠলেন, কে ফোন করছে গো ?
– দেখছি, তুমি ঘুমোও ।
বলে গড়গড়ি সাহেব মশারির তলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা তুললেন ।
‘চারটে বাজে । এই সময়ে কে ফোন করতে পারে !’
কোলকাতায় বৃদ্ধা মা আছেন । একটু শঙ্কিত হয়ে প্রভাত গড়গড়ি লাস্ট কলটা দেখতে যাবেন এমন সময় আবার ফোনটা আবার বেজে উঠলো ।
তাড়াতাড়ি বিছানায় উঠে বসে রিসিভ বাটনটা টিপেই দেখলেন, সনাতন কল করছে ।
‘কি ব্যাপার কি ! ভোর রাতে, চারটের সময় সনাতনের ফোন!’
চোখটা জ্বালা জ্বালা করছে…গড়গড়ির ঘুমের গলায় বললেন, কি ব্যাপার সনাতন ? এখন ফোন করছো ?
– স্যার…ঘুমোচ্ছিলেন ?
সনাতনের গলায় উত্তেজনার আভাস রয়েছে মনে হলো তাঁর ।
তবু প্রভাত গড়গড়ি বেশ রেগে গেলেন ।
‘চার মাস কেটে গেছে কিন্তু এই ছেলেটা সেই গেঁয়ো ভুতই রয়ে গেলো!’
– এই ভোররাতে আর কি করতে পারি বলে তোমার মনে হচ্ছে সনাতন ?
-স্যার, ভেরি সরি আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম। কিন্তু কেউ জানবার আগে আপনাকে জানাতে চাইছিলাম স্যার। তাই সকাল হবার আগেই…
একটা বড়ো হাই তুলে ফিসফিস করে গড়গড়ি বললেন, বলো, কি ব্যাপার। তাড়াতাড়ি বলো। কি এমন জরুরী…
-ওটা হয়ে গেছে স্যার ! করে ফেলেছি ! সনাতনের উত্তেজিত কণ্ঠস্বর ।
– কি হয়ে গেছে ! কি করে ফেলেছো !
প্রভাত গড়গড়ির ঘুম এখনও কাটেনি, কিছুই বুঝতে পারছেন না ।
– ওই যে স্যার, প্রথম দিনেই আপনি বলেছিলেন না…সনাতন. একেবারে প্রথম থেকে তোমায় শুরু করতে হবে…সেইটা এতদিনে হয়ে গেছে স্যার !
এবার গড়গড়ি বেশ বিরক্ত হলেন…ভোর রাত্তিরে ঘুম ভাঙ্গিয়ে এ কি শুরু করেছে !
ডিএফওসুলভ একটা জোরে ধমক দিতে যাবেন, পাশে ঘুমন্ত বৌয়ের কথা ভেবে নিজেকে সম্বরণ করলেন। ফিসফিসানির মধ্যে যতটা জোর দেওয়া যায়…বললেন, কি ধানাইপানাই করছো সনাতন ! আসল কথাটা বলো…তাড়াতাড়ি ।
– ওই যে স্যার…বাঘের বাচ্চা ? ধরে ফেলেছি !
– অ্যাঁ !
– হ্যাঁ স্যার !
– দাঁড়াও দাঁড়াও ! তুমি…বাঘের বাচ্চা…ধরে ফেলেছো ? মানে ? তুমি এখন কোথায় ?
প্রভাত গড়গড়ির ঘুম একেবারে ছুটে গেলো । ঘুমন্ত বৌয়ের দিকে একবার দেখে নিয়ে সন্তর্পণে বিছানা থেকে নেমে পাশের ঘরে যেতে যেতে ফিসফিসিয়ে বললেন, খুলে বলো সনাতন…আমাকে সবটা খুলে বলো ।
– স্যার, ভোররাতে ঘর থেকে বেরিয়ে বাথরুম করতে যাচ্ছি, এমন সময়ে দেখি অন্ধকার উঠোনে হলুদের মধ্যে কালো ডোরাকাটা একটা ছোট্ট জানোয়ার, একেবারে ছোট্ট, শুয়ে ঘুমিয়ে আছে। উঠোনে একটা বড়ো চুবড়ি ছিল…আমি সেইটা ওর ওপর চাপা দিয়ে দুটো বড়ো ইট চুবড়ির ওপর সেট করে দিয়েছি স্যার ! আমি তো ওই চুবড়িটার পাশেই দাঁড়িয়ে আপনার সাথে কথা বলছি স্যার ।
প্রভাত গড়গড়ি মুহূর্তে কর্তব্য ঠিক করে নিলেন ।
সুন্দরবনে রয়াল বেঙ্গল টাইগারের জ্যান্ত বাচ্চা কব্জা করা !
চোখের সামনে যেন তিনি মন্ত্রীর কমেনডেশন সার্টিফিকেট আর বিকাশ ভবনের হেড কোয়ার্টারে ট্রান্সফার অর্ডারটা ভেসে উঠতে দেখলেন…অর্ডারের প্রথম প্যারায় প্রমোশনের কথাটা মেনশন করা আছে !
– সনাতন, তুমি আর কাউকে বলোনি তো ?
– না স্যার…আমি তো আপনাকেই প্রথমে…
-ব্যস ব্যস ! আমি পাঁচ মিনিটে তোমার বাড়ি পৌঁছোচ্ছি। শিরিষতলার মোড়েই তো তোমার বাসাটা…পাঁচ মিনিট লাগবে ।
ঠিক এক মিনিটে পোশাকটা বদলে ডিএফও জীপে স্টার্ট দিলেন।
পুবের আকাশে তখন সবে গোলাপি আভা দেখা দিয়েছে, সে আভার কিছুটা ছড়িয়ে পড়ছে প্রভাত গড়গড়ির মনে ।
সনাতন তার বাসার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলো ।
ডিএফও তাড়াতাড়ি জীপ থেকে নেমে ওর দিকে এগিয়ে গেলেন,
– কই, কোথায় তোমার চুবড়ি, আর দক্ষিণ রায়ের পোলাপান ?
সনাতনের হাবভাবে যে কোন উত্তেজনা নেই গড়গড়ি সেটা তেমন খেয়াল করলেন না।
উঠোনে চাপা দেওয়া চুবড়িটা দেখেই তিনি এগিয়ে যেতে যেতেই পেছন থেকে সনাতন ডেকে উঠলো, স্যার, স্যার ।
প্রভাত গড়গড়ি বললেন, কি, কি বলছো ? আরে, ঝুড়ির ওপরের ইট সরিয়ে দিয়েছ কেন সনাতন ? বাঘের ছোট বাচ্চার শক্তিও আমি দেখেছি…ছাগলের ঠ্যাঙ টেনে নিয়ে যাবার শক্তি….
বলতে বলতে ডিএফও সাহেব বিরাট চুবড়িটা উঠিয়ে ফেললেন। হতবাক হয়ে কোনওরকমে বলে উঠলেন, এ কি ! এটা কি ! সনাতন !
পেছনে সনাতন দাঁড়িয়ে ছিল চোরের মতো।
একটু এগিয়ে এসে আমতা আমতা করে ক্ষীণ স্বরে বললো, না…মানে..স্যার…তখন বেশ অন্ধকার ছিলো তো…আমি ওই আবছা আলোয় হলদের ওপরে কালো ডোরা দেখে…আমি ঠিক বুঝতে পারিনি স্যার…ভেরি সরি স্যার…
প্রভাত গড়গড়ির ইচ্ছে করছিলো একটা বিরাশি সিক্কার চড় মেরে সনাতনকে শুইয়ে ফেলেন…কোনমতে নিজেকে সম্বরণ করার জন্য তিনবার বড়ো করে নিঃশ্বাস নিলেন ।
‘ছি ছি ছি…এই ডোরাকাটা বেড়ালবাচ্চার জন্যে, এই আস্ত গবেট সনাতনের কথায় ভোররাতের ঘুমটা ছেড়ে…ইস…ছি ছি…আমি শালা কতো কি ভেবে নিলাম…এর সঙ্গে বেশীদিন থাকলে আমিও তো গবেট…’
পেছন থেকে সনাতনের ক্ষীণস্বর ভেসে এলো, আমার মনে হচ্ছে স্যার, এই বেড়াল বাচ্চাটার বাবা বা মা, কেউ একজন…মানে বাঘের জিনটা না থাকলে এরকম নিখুঁত ডোরা…’
ডিএফও প্রভাত গড়গড়ি এবার আর থাকতে পারলেন না, ঘুরে গিয়ে ভোরের নিস্তব্ধতা ভেঙে জোরে চেঁচিয়ে উঠলেন, চু-উ-প ! এ-ক-দ-ম চুপ ! একটা কথাও মুখ থেকে বার করবে না তুমি । আস্ত গর্দভ কোথাকার ! সনাতন তুমি তিনদিন সাসপেন্ড…পুরো তিনটে দিন আমাকে যেন তোমার মুখ দেখতে না হয় !
বলেই গড়গড়ি সাহেব হনহন করে এগিয়ে গিয়ে লাফিয়ে জীপে উঠে সজোরে ইগ্নিশন চাবিটা ঘুরিয়ে অ্যাকসিলেটারটা পুরো চেপে দিলেন ।
গাড়িটা বোধহয় গিয়ারে ছিল, বিরাট ঝটকা দিয়ে লাফিয়ে উঠে তীরবেগে বেরিয়ে গেল।
মতামত ও বানানবিধি লেখকের নিজস্ব
Tags: অথ ব্যাঘ্র শাবক কথা, গল্প, সিদ্ধার্থ সান্যাল
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।