12 Jun

দুটি গল্প

লিখেছেন:ধ্রুব বাগচী


দুটি গল্প / ধ্রুব বাগচী

গিফট

রাসবিহারী এভেন্যুর ফুটপাত।

একটা  লাইটপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে থাকার ব্যবসা ভূষণের।

ওর মতে এটাই লেটেস্ট ইনফরমেশন টেকনোলজি। সারাবছর তো বটেই, চৈত্র বৈশাখে ভূষণের কাজের চাপ বাড়ে। নিজের কোম্পানিতে নিজেকেই ওভার টাইম দেয় তখন।

ব্যাপারটা ভেবে ফিক করে একটু হেসে নিল। হঠাৎ  কানের কাছে এক প্রৌঢ়ের গলা- “আচ্ছা ভাই, খানদানি লুঙ্গি কোন দোকানটায় পাবো বলো তো?”

– “খা- ন- দা- নি …  পিরিয়ডটা বলুন।মুঘল না মীরজাফর?”

– “মীরজাফর হলেই চলবে।”

– “ঠিক আছে । পাঁচটা দোকান ছেড়ে ডান হাতে লুঙ্গি প্যালেস। এখন সেলের বাজার বলে কুড়ি নিলাম। এই নিন কুপন স্যর।”

টাকাটা জিন্সের পকেটে রাখতে রাখতে দেখল, একজন উঠতি কিশোরী একমুঠো উৎকণ্ঠা নিয়ে তার দিকেই আসছে।

– “দাদা, ট্রাঙ্গুলার পার্কের ৩৫৬ নং বাড়িটায় কিভাবে যাব”।

মেয়েটির চোখে চোখ রেখে, আবার চোখ বুঁজে কিছু ভেবে নিয়ে, খচ্ করে একটা কুপন ছিঁড়ে তার হাতে ধরিয়ে দিল। “হুম, কেসটা রোমান্টিক। অন্যসময় হলে পঞ্চাশ, সেলের বাজার বলে চল্লিশ”।

ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে মেয়েটি কিছু বলতে যাচ্ছিল। ভূষণ বলল, “সোজা গিয়ে বাঁদিকের রাস্তা, প্রথম বাড়িটা ছেড়ে পরেরটাই আপনার। বাড়ির নাম্বার মিলিয়ে কলিং বেল মারবেন। আর হ্যাঁ, ছেলেটি এখনও বাড়িতে আছে।”

মেয়েটিকে বিদায় দিয়ে ভুষণ পাশের ঘুগনির দোকানে গিয়ে এক প্লেট ঘুগনি আর দু পিস সেঁকা পাউরুটি চাইলো। এটাই আজকের টিফিন। খেতে খেতে দেখলো, একজন বৃদ্ধ ভদ্রলোক এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন আর ছটফট  করছেন। এগিয়ে গেল ভূষণ।  বিলিতি কায়দায় বলল- “মে আই হেল্প ইউ স্যার”

লোকটি বাঁ হাতে ধুতির কোঁচা সামলাতে সামলাতে ডানহাতের কনিষ্ঠ আঙুল তুলে  দেখালেন ওনার জলবিয়োগের কথা।

ভূষন তাঁর বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলটি কাঁধের পিছন দিকে দেখিয়ে দিয়ে বললো, “চলে যান। খালি আছে।”

মিনিট খানেক পর ভদ্রলোক এসে ভূষণ কে বললেন, “অনেক উপকার করলে বাবা।”

“ঠিক আছে স্যার। সিনিয়র সিটিজেনদের ফ্রি সার্ভিস দিই”।

ভদ্রলোক সাতপাঁচ না বুঝে একটুখানি হেসে চলে গেলেন।

ভূষণকে চেনে না এমন মানুষ গোটা এরিয়ায় প্রায় এখন আর নেই। এই ব্যবসা কিছুটা পৈত্রিক বলা যেতে পারে। তবে সে সব ছিল চ্যারিটি। এখন কড়ি ফেলে মাখো তেল। এই সবই মাথার ওপর উটকো মেঘের দিকে তাকিয়ে ভাবছিল। চোখ নামাতেই দেখলো আবার সেই উঠতি মেয়েটি।

চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি। ভূষণ ধারালো চোখে মেয়েটিকে মেপে নিল।

-” কি ব্যাপার কেস খেয়ে গেছেন তো?”

– ” আগে টাকা ফেরত দিন”

– “ফেরত দেব মানে ! কি ভেবেছেন ভূষণ পালের বিজনেস আজকের? আমার ইনফরমেশনে কোন ভুল থাকে না”।

-” গিয়ে দেখলাম দশ মিনিট আগে ও বেরিয়ে গেছে আর ওর মা আমাকে ভালো করে চিনে নিল।”

– “এখন আপনি যদি লেট করেন তাহলে আমার কিছু করার নেই।”

“তাহলে এখন কি করবো স্যার? খুব দরকার যে, আর ফোনটাও বাড়িতে ফেলে এসেছি।”

– ” এবার পথে আসুন। তবে খরচা আছে”

– “রাজি স্যার”

– ” সোজা কালীঘাট মেট্রো স্টেশনের গায়ে, ডানদিকের ফুটপাতে গোটা চারেক ক্যারমের আড্ডা। সেখানেই ওকে পাবেন, তবে রাত আটটা পর্যন্ত”।

-” ঠিক আছে স্যার , কত লাগবে?”

– “এটা গিফট, পয়লা বোশেখের।”

 

তাহাদের কথা

ওদের দুজনের হাতের টোলখাওয়া অ্যালুমিনিয়মের থালা দুটির বয়স প্রায় ন’ বছর হয়ে গেল। মন্দিরের প্রবেশপথে দুধারের রঙ্গিন তোরণের গায়ে শুয়ে বসে প্রতিদিনের যাপন।

বোশেক মাসের প্রথম দিন। মন্দিরে হালখাতার ভিড়, জোড়া বেঁধে পুজো দেওয়ার ভিড়। ওরা দুজন, লোকজনের কথাবার্তায় বুঝতে পারলো, আজ বিশেষ একটা দিন। ছাতা পড়া দাঁতে,  একগাল হেসে ভিখারী প্রৌঢ়টি ওপাশের প্রৌঢ়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “একবার ইদিকে আয় না “।

[বানানবিধি ও মতামত লেখকের নিজস্ব]

Tags: , ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ