ঘুম আর শেষঘুম এক নয়, শেষ ঘুম হলো মৃত্যু। শেষ ঘুম একবারে অজ্ঞান,এক্কেবারে নিস্তার। ঘুমও নিস্তার- কিছু সময়ের জন্য ভুল-ঠিক, কর্তব্যাকর্তব্য,মায়া না মতিভ্রম, সুমতি- কুমতির হাত থেকে বাঁচা। শেষ ঘুমে তাই হয়তো স্বর্গ আসে ও ঘুমের মাঝে দেখা দেয় স্বপ্ন নামে ক্ষণস্বর্গ।
রিটায়ার করা- ইস্তক প্রফুল্লবাবুর ঘুরে ফিরে ঘুম ছাড়া আর কিছুই ঠিক মনে হচ্ছে না।হ্যাঁ যতদিন ফ্যাক্টরি যেতে হতো ততোদিনও অবশ্য এরকমই ভাবতেন, ঠিক কোথাও ভুল আছে, তাঁর মন খচখচ করছে, তো এর বিশেষ কোনো কারণ আছেই আছে। তবু আগে রাত্রে সুন্দর ঘুমটা হতো,বত্রিশটা বছর নেহাত দু-একটা ছুটকো-ছাটকা ব্যতিক্রম বাদে তিনি শুতেন আর ঘুমিয়ে ন্যাতা-পরদিন ঠিক ঠিক পাঁচটাতেই চোখ মেলতেন। ছটায় ফ্যাক্টরির ভোঁ বাজার সঙ্গে সঙ্গে হাজির। বিকাল নটায় রাত্রের ছুটির ভোঁ- বাজা পর্যন্ত কাজ।ঘরে ফিরে একটু ঝাঁট দিয়ে নিতেন, ঠাকুরের কুলুঙ্গিতে বাতাসা জল দিতেন। সামান্য দুটো পাউরুটি বা মুড়ি-চিঁড়ে ফলাহার করে যখন কপালে হাত দুটি ঠেকিয়ে ‘জয় মা, জয় মা’ বলতেন- ক্রমশঃ একটু বেঁকে যাওয়া পিঠটি বিছানার তলে প্রায় পুরোই লম্বা করে শুয়ে তিনি চরাচরের সর্বোত্তম সুখ-শান্তি পেয়ে যেতেন। পরদিন কারখানা পৌঁছনোর পরে এই ভুল ঠিকের গোলমাল শুরু হতো। আবার ছুটি হ’লেই তারা পালিয়ে যেতো।তাহলে জীবনের ভুলের সঙ্গে ধরা যেতে পারে ঘুম না হওয়ার সম্পর্ক নেই।
এতদিন তবু যাহোক চলে গেলো। কিন্তু এখন বড়ো বিষম যন্ত্রণা। তখন বুঝি ছিলো গোনার ভুল, দেখার ভুল, বোঝার-পড়ার ভুল, মানুষমাত্রেই ভুল করে তাতেই সব শেষ।এখন এই ভুল না ঠিক,ঠিক না ভুল-কোথায় যেন ভুল হলো,না কি হয়ে আসছিলো, কেমন যেন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে শুধু , সবচেয়ে মারাত্মক- ভুল না মনে হয়ে মনে হচ্ছে অন্যায়। সর্বক্ষণ এ রকম অস্থিরতা।এখন তিনি সকালে মর্নিং-ওয়াক করেন।শুধু অবশ্য ঘরমুখে।একটু ছোলা-গুড় খান নিয়ম করে, কিন্তু ওই এক খচখচ করা কিছুতে যায় না। গোদের ওপর বিষফোড়া,ঘুমও আর মোটে হয় না।
রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে মাঝে মাঝে চোখ বুজিয়ে ফেলেন। কিন্তু চোখ বুজিয়ে তিনি হাঁটতে পারেন না। আ- হা- কেউই তো পারে না।মাঝে মাঝে চোখ বুজে যেই একটু তৃপ্তি পান, অমনি একটা ঝড়ের মতো দুদ্দাড় করে ঘাড়ের কাছে ছুটে আসে কোনো মোটর-ভ্যানের ঘ্যাটঘ্যাট ঘ্যাটঘ্যাট । টেম্পোর হর্নের কিরিক্কিরিক তীব্র কাঁদুনি ঠিক তাঁকে তখনই ধাওয়া করে-অ্যারেস্ট করে- বিজাতীয় অ্যালার্মের মতো তাঁর বোজা চোখ খুলে দিয়ে যায়- একফোঁটা মস্তিটুকুকে বিচ্ছিরিভাবে খামচে দেয়।আবার ভুল-ঠিক, ঠিক-ভুল করতে করতে হয়তো তিনি পোস্ট-আপিসের দিকে এগোন কদাপি বাস স্টপে এসে দাঁড়িয়ে চটকা ভাঙে।
এতোবছর টেবিল-চেয়ারে দিনে চোদ্দ ঘন্টা বসে থেকে কোনদিন এমন ঘুমে চোখ বুজে আসে নি।বরং উল্টোটাই ঘটতো।সন্ধ্যের পরেও ট্রাক- মালপত্র লোড-আনলোডের সময় তাঁর চোখে পলক পড়তো না। একটা মাছিও তাঁকে এড়িয়ে গেট টপকেছে বলে তিনি শোনেন নি। এমনি কি আর তিন শিফটই তাঁকেই গুনে গেঁথে রাখতে দিতো ম্যানেজমেন্ট! শুধু বড়ো সাহেবরা, আর ফোরম্যানরা বাদে সব্বাইকার হাজিরাও ছিলো তাঁর টেবিলে, বাইরের লোকও আসতো-ছাত্র, প্রফেসরও, তাঁরা বার হয়েছেন কি না, সই মিলিয়ে রাখতেন।
দ্বিজু থাকলে কী আশ্চর্য !সুযোগ পেলেই দাঁড়িয়ে চোখ বুজে বা বসে চোখ খুলেই ঘুমিয়ে নিতো।এমনকি ও ব্যাটা স্যালুট করতে দাঁড়িয়ে, অনেক সময় ঘুমিয়ে পড়ত তিনি স্বচক্ষে দেখেছেন।এখন তিনি ক্লান্তিতে ফেটে পড়েন, চোখ বোজেন ও খোলেন, আর কিছু না গিলেই ঢুলু ঢুলু হয়ে পড়েন।
কারখানায় তাঁর এমনি এমনি তো এই মান-মর্যাদা বলো, দায়-দায়িত্ব বলো, কী বিশ্বাসযোগ্যতাই বলো চিরটাকাল ছিলো না। সময় লেগেছে, চেষ্টা করতে হয়েছে, বড়ো থেকে ছোটো সকলকে চিনতে হয়েছে, একটু বিশেষভাবে। দেহাত ছেড়ে এলেন যখন ছেলেরা একজন ছয়,একজন দুই।এখানেই এসেছিলেন শুনে যে ইন্ডিয়ান অরগ্যানিক ফার্টিলাইসার কোম্পানি লোক নেবে।ততক্ষণে সব জায়গা ভর্তি, শুধু বড়োসাহেবের সুনজরে পড়ে গিয়ে শুভক্ষণে তাঁর গতি হয়ে গিয়েছিলো। যেমনই হোক মাসমাইনেটি বাঁধা।ছেলেদুটো লেখাপড়া করতে পারলো, ওদের মা গায়ে মাখার তেল-সাবান পেলো, এমনকী একটি কমদামি মঙ্গলসূত্র অবধি।
ছেলেদের ঘর-দোর হয়েছে, ওদের মা হপ্তা অন্তে আরেক পুত্রের বাড়ি যায় থাকতে।তাঁর আর ইচ্ছে হয় না ফিরে যেতে। তিনি যে রিটায়ার করলেন তাও বোধহয় কারুর মনে নেই। এখানে এই ছোট ঘরখানা তিনি কিনেছেন, শুধু ঘরখানাই,আর ঘরটুকুর উল্টোমুখে তার চানঘর বাইরে ।তাঁর গৃহলক্ষ্মীকে কিন্তু কিন্তু করে বলা হয়নি।
তাঁর গৃহলক্ষ্মী বর্তমানে দু’দুটি গৃহের অন্তর –বাহিরে নিয়ম সহকারে প্রতিষ্ঠিতা। ছোটছেলে ইস্কুলে লেখাপড়ার মতোই লেখালিখির কাজ পেয়েছে। তারও মাসমাইনের চেকনাই তিনি দেখে এসেছেন।ওদের মা কিন্তু দু-ভাইয়ের পার্টিশন-পাটাতনের থেকে ক’হাত দূরে গোরু-বাছুর পেলে আসছেন। গোয়ালটির ভোগ-রোগ-যোগ-ঘোগকে অবশ্য বলতে হবে এজমালি।এক সপ্তাহ মাকে পালন করে একজন, অন্যজন দেখে পরের হপ্তায়।যেহেতু বড়োজনের হাটের উশুল হপ্তায় হয়। তাদের মা প্রত্যহ দু-বেলা গোয়াল কাঁড়েন । এখনো লুকিয়ে-চুরিয়ে ঘুঁটে দেন, হাতের হাজায় তুঁতে ঘষে জ্বালায় মরেন, আর রোজ ছেলের ছেলেদের হাতে সকালের প্রাতরাশ হিসেবে তুলে দেন এক গেলাস করে নির্জলা দুধ।
সেদিন তো গেলেন , টাকাপয়সা দিলেন। ঘরদুয়ার তো নেই তাই বেলা পড়তে পড়তে ছেলেদের মা বললেন, ‘এবার এসো গে, কতোখানি সে পথ যাবে, তাই না?’ সমর্থনও পেয়ে গেলেন। প্রফুল্ল বাবু ঘাড় নাড়লেন। তাও তো ছেলেরা দেখেনি, দেখলে বলতো ‘নেয়ে ধুয়ে এসো গে আগে, তারপর কথা।“বড় ছেলের গৃহলক্ষ্মী বলেছে, “বাবা একটা কাচা কাপড় পরুন, এই দড়িতে আছে।“নাতির দিকে দেখিয়ে বলল, ‘ওই দেখুন’। আদেখলা ছেলেটির চাউনি তাঁর মোটমাট ভালো লাগে নি। তিনি আর বললেন না, “মিষ্টি তাঁর সঙ্গেই এসেছে, তা আর কাচা কাপড়ে না দিলেও কী?”
সবসময় তিনি ঘাড় নেড়েছেন, সেদিনও ঘাড় কাত করলেন।
শাউড়ির দিকে কি ওরা চোখ তুলেও তাকায় না? নাকি এই আজীবন খাটিয়ার বিছানা ব্যবহার করা ঠাকুমা ওদের কাছে একটা কোন বেড়ার কচা গাছের মতো, বা ঐ বাসস্ট্যান্ডের বেঞ্চি, নতুবা লাল রোয়াকের মতো,নাকি বারোয়ারি মায়ের ভাঙা নাটমন্দিরের মতো? ঠায়- পায় সমান।এক কাঁসি পান্তা হলেই যাঁর চলে,তিনি ঠিক জানেন- সেই তাঁর প্রৌঢ়া স্ত্রী নিজেও তো বটে কিছুর পরোয়া করেন না- এখন তাঁর অত্যন্ত অচেনা তাঁর এই স্ত্রী সম্ভবত আজ একজন নির্ভীক তথা মোটের ওপর স্বনির্ভর ভদ্রমহিলা, কিছুতেই বোধহয় তাঁর আর কিছু যায় আসে না।
তাঁর বেশ খারাপ লাগল, ও কি কোনোদিন একটা পরিষ্কার কাপড়ও পরবে না? সচরাচর ব্লাউজের বালাই নেই। না ছিঃ, তিনি ঘেন্না করেন না কিছুই, কম্পোস্টের মধ্যেই তো ইহজীবন: আজও ভালো লাগে দুটো গাছ পোঁতার আগে গর্ত খুঁড়ে একটু তাদের আহার তৈরি করে দিতে! ভালো কিন্তু আজ বাসেন না, নাঃ, কেউ কাউকে নয়।
আসল কথা,সাতজন্ম তিনিই তাঁর সহধর্মিনী এও মিছে নয়। মিছে নয় দেশঘর, সংসার, মা, সন্তানদের ,মায় সামাজিকতা ইহলোকের সব ঠিক-ঠিকানা তিনি ।ঠিক যেন একটা মস্ত মাচার মতো ধরে রাখলেন। সেই ভুলটাই কি সবকিছু এমন করে দিলো? মোটার থেকে মোটা কাপড়, গোড়ালি থেকে কতো ওপরে।‘ তা হোক গে। পায়ের গোছ এখনো কেমন! প্রফুল্ল বাবুর বুক ধড়ফড় করে ওঠে।
নিদ্রাহীনতা ক্রমশ মনে হচ্ছে তাঁর মতো একজন নেহাত গোবেচারা পাতি লোককেও হাতের মুঠোয় পেয়ে পেড়ে ফেলতে ছাড়ছে না। রিটায়ার করার সঙ্গে সঙ্গে কটা জমা টাকা দেখেই অনিদ্রা তাঁকে আক্রমণ করলো!ভুল করল। মজার কথা, এই রোগে মধ্য রাত্রিতে তিনি যেমন সবল, দিবাভাগে আবার ততোখানি দুর্বল।
আর মধ্যমগ্রামে এপাড়ায় নিম্ন-মধ্যবিত্ত লোকই বেশি, তবে তারা শহুরে।মনের ভাব বুঝতে কষ্ট করবে না কেন? তা মানে।জীবনরস গাঁজিয়ে যাওয়া নিয়ে তাদের ছুঁৎমার্গ নেই, আবার বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় অনেককিছুই না ছেঁকে পাতে নেয় না।
কোনোদিন তারা কোনো শাড়ির কোণাচ দেখলো না, ঘরে কি বারান্দায় যেমন, তেমন রান্নার চুলোই নেই, হেঁসেল তো অচেনা দৃশ্য এঁর জীবনে ।তাই তারাও প্রত্যয় যায়না তাঁর সংসারের বাস্তব- রিপোর্টে। লোকটার মেয়েটেয়ে নিয়েও ছুঁকছুঁক নেই।পাড়াস্থ সবাই ভাবে সংসার, এসব প্রফুল্লের হয় স্বপ্ন না হয় নিজেকে চোখঠারা ম্যাদামি- কী মনকে বুঝ দেওয়া জল্পনা! হয়তো মজা –নতুন পরিহাস।চ্যাঙড়া- প্যাঙড়া ডাকে ‘কী প্রফুল্লদা-‘ যাঃ। রিটায়ার করে গেলেন, এখনও যে একটা চুলও পাকেনি।“কেউ বলে,দিব্যি বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দেওয়া যায় – পরবেন নাকি টোপর?’তারপর ছুঁড়ে দেয় ইয়ে মানে হেঃ,’ আর একবার!’
“হুঁহ-“ –সারা দিনের যত্তো বাজে কথা ইদানীং শুলেই তাঁর এক এক করে মনে পড়ে যায়। তিনি উঠে বসেন।মুষ্ট্যাঘাত করে এইসব মন্তব্যের মালিকদের ধরাশায়ী করতে চান মনে মনে।মাঝেমাঝে ভেঙিয়ে ওঠেন,’নাঃ চুল –দাড়ি কিচ্ছু পাকে নি’, ঝাপসা আয়নার সামনে ঝুঁকে শাদা-কালো চুলের গোছায় টান মেরে বলেন, ‘এগুলো তবে কী? অ্যাঁ!”
কিন্তু তাঁর নিজেরও কি লাগবে মুষ্টিযোগ? কী যে হলো? সারারাত্রি চোখের সামনে ঘুরে বেড়ায়, হাজার সব ভালো লাগা বস্তুর কাটিং-এর মতো ছাঁটা দৃশ্য। সেই বাস্তুর দোকানের নীল কাপড়-পরা আগুন –রঙ গণেশমূর্তি, তার পরই মনে আসে সেই লাফিং বুদ্ধেরা,হাসছে তো হাসছেই,দ্বিজু বা দ্বিজমোহনের হাতে দেখা রামকৃষ্ণের বিশেষ একটা দাঁড়ানো অবস্থার ভাব-সমাধির ছবি, একটা মাথা আর কাঁধ- মেয়ের মুখ,অল্পবয়সে সেই গিন্নির হাতে তুলে নেয়া মঙ্গলসূত্রখানা,যেটা তিনি পয়সা থাকতেও কিনে দেন নি,মিছে বলেছিলেন। নাতির জন্যে যে দামি খেলনা মোটরগাড়ি তিনি কিনে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেটাও ভুলতে পারেন নি,কতো দামি খেলনা।
আর চোখের সামনে ভাসে দুধ দুইয়ে মা তাঁকে অমনি এক গেলাস থুঁতিথুতি দুধ দিতেন।কচি হাত দুটো মেলে দিয়ে ছোটো ছেলেটা কোলে উঠতে চাইত যখন সেই মুহূর্তটা কখন এক পর্দা-জোড়া বিরাট ছবি হয়ে ওঠে।প্রফুল্লবাবু ওকে টপ করে তুলে নিয়ে নাকে নাক ঠেকাতে গিয়ে দেখেন কখন ছবিটা কেমন গোল্লা পাকিয়ে দূরে বহুদূরে গিয়ে শুয়ে মিলিয়ে গিয়েছে বেরঙ দেয়ালে। এমনি বেকার সময়ের আজ হপ্তাপূর্তি।
ঠক করে মাথা ঠুকে গিয়েছিল, একী?- হোটেলে খেতে এসে উনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন নাকি?
অল্পপয়সার পাইস হোটেল, আজীবন বেঞ্চির কোণটাই তাঁর পছন্দ।আগে তো ঘুমিয়ে পড়েছেন বলে মনে পড়ছে না। তবু ঘুমিয়েছেন ভেবে তাঁর আনন্দ হলো। তাহলে, অনিদ্রা রোগ তাঁর হয়নি। শুনেছেন, রাত্রে বিনিদ্র থাকলে হস্তীও পরলোকগমন করে।যেজন্য তাঁর কদিন খুব ভয় লাগছিলো।ঘুমিয়েছেন বলে নিশ্চয়ই খানিকটা নিদ্রার অভাব মিটেছে। আবার বাড়ি ফিরতে গিয়ে পোস্ট-অফিসের পথ ধরে, যেখানে তাঁর জীবনের সব টাকাগুলো সঞ্চিত আছে- মশলা চিবোতে চিবোতে তাঁর মনে হলো ওটা বুঝি ঘুম ছিলো না, তন্দ্রামতো এসেছিলো।যেই ভাবলেন, ঘুম হয়নি সমস্ত স্ফূর্তি তাঁর ক্ষণিকে উবে গেলো।দুপুরবেলা ঘরে সব আলো আসার ফাঁক- ফোকর বুজিয়ে তাঁকে এক্ষুণি রাত বানিয়ে নিতে হবে, আর ঘুমোতেও হবে এক্ষুণি, ভালো সময় চলে গেলে কিচ্ছু হয় না। তিনি হনহন করে হেঁটে ঘেমে চোখ-মুখ লাল করে বাসায় এলেন।
এর মধ্যে তাঁর কাজে না যাওয়ার কতোগুলো দিন বসে বসে কাটছে। তাঁর গৃহলক্ষ্মী এক ছেলের ঘর থেকে আর এক ছেলের ঘরে গেছেন। নির্বিলম্ব ছুটি তাঁর।
তাঁর একই ভিটে এখন দুই ভাগ হয়ে অন্যরকম দেখাচ্ছে। দু-বাড়ির মাঝখানে খুঁটি দিয়ে উঠে সিমের সম্ভাবনায় মাচা ভরে গেছে ,মাজা মাজাবেগনি রঙের ফুল ধরেছে তাতে।ঐ শীতের আগে তাঁর ঘর যাওয়া। ফেরার সময় মনে হলো –সবই অন্য কারুর, তাঁর কিছু নয়।
ঘুমের আশায় কিন্তু সময় বৃথাই গেলো। তিনটের সময় গিয়ে শেষে উঠোনের ওপারে ঘুমিয়ে থাকা পাতকুয়োটা থেকে বালতি বালতি জল তুলে গায়ে ঢাললেন। তখন মনে হলো কুয়োর মধ্যে কালো চেহারার একটা স্নিগ্ধ মেয়ের চোখ ঝকমক করছে, অবাক তরল ভাবমদির চোখ তার। সে যখন তখন আবার ঘুমিয়েও পড়তে পারে, তার চোখের পক্ষ্ম এমন ভারি। প্রফুল্লবাবুর ওরি মধ্যে শরীর ঠাণ্ডা হলো, মাথাও।
একবার কারখানায় ঢুঁ মারবেন নাকি? দ্বিজু তো আছে। এই দ্বিজমোহন কে তিনিই এনেছিলেন। চালাকচতুর ছোকরা, তবে একটা পিকপকেটের দলে কী করে ঢুকে পড়েছিল। ওর দাদা ব্রিজমোহনের ধরাকরায় আর থাকতে পারেননি প্রফুল্লবাবু। কী ভাগ্যি! দ্বিজু কোনদিন আর ওর দাদার মন ভেঙে দেয় নি। বড়সাহেবের সেই আওয়াজ আবার শুনেছিলেন,”হুজ দেয়ার?”চমকে কেঁপে ছোটো ছেলেটাকেই সামনে ঠেলে দিয়েছিলেন, ছেলের এলম ছিলো, বাঘের কাছ থেকে চাকরি অবশ্য সেই আদায় করেছিলো।তিনি বলেছিলেন, ‘সাব্বাস”।আর আসার সময় কী যেন ভেবে সাহেব তাঁকে ডেকে গোটা একটা শিফট ওভারটাইম দিয়েছিলেন।পা না ঠুকেই সৈন্যদের মতো বলতে পেরেছিলেন,’ইয়েস সার’।
সারাদিন চৌকি দেওয়া অভ্যেসটি ছিলো, এবার তিনি রাতে চৌকি দিতে শুরু করলেন। ঘুম হয় না কিছুতেই, যদি অন্ততঃ সকালে লোচন চেষ্টা ছাড়াই নিমীলিত হয়।ক্লান্তি দুরপনেয়। আজকাল কুকুরগুলোও নেই, রাতে পাহারার বাঁশি নেই,আর নেই সেই পাগলিটা।কোথায় যেন সবই চলে যেতে থাকে। তবে ঘুম না হলে অনেক জটিল সব কারণ সামনে উদয় হয়, ভূতের মতো চিন্তার মধ্যে উপদ্রব করে, নিজেদের এলাকা বানিয়ে দিব্যি বসে যায়। কখনও তিনি ঢোলেন, তারাও ঢোলে।সেই বাসস্টপ, উল্টোদিকে সিনেমাহলে,একটা গেট বন্ধ,সেখানে পোস্ট-আফিস, সেখানে তাঁর সব সঞ্চয়, সব আয়, সব লাভের কড়ি জমানো। কড়িই বটে, ওকে টাকা বলেনা।
কদ্দিন এতে চলবে? তিনি যদি অনেক দিন বাঁচেন,সুদ যদি কমে যায়। যদি যায় নয় যাবেই।
তবু তো পবনদেবের হোটেল আছে। দুবেলা খান, মাসের শেষ দিনে পয়সা। বারোশো টাকা দিতে হবে । কম নাকি?এই তো চুক্তি।এখনও অনেকদিন তিনি মিল পাবেন। আজ মোটে এ মাসের দশ তারিখ। এই প্রথম তাঁর একটু আনন্দ হলো। লোকটা মহা বোকা যদি তিনি মাসের উনতিরিশ তারিখে পালিয়ে যান, ঠকান , পয়সা না দেন। কী করবে? যদি তিনি মাসের মাঝখানে মরেই যান, তবে? তাঁর খুব ইচ্ছে করছিল তাঁকে বদান্যতা দেখানোর জন্য লোকটিকে মাশুল দিতে বাধ্য করতে। অমন ভালোমানষির ক্যাঁতায় আগুন। তবে তাঁর মনে হলো পবন মোটামুটি কেপ্পন নয়, খাবার ভরপেটই দেয়।লোকটি একটুও ঝানু ব্যবসাদার নয় বলে এখন তাঁর ভালো লাগছে না। এই রাতদুপুরে।
না । না। পবনদেবের সঙ্গে তিনি চুক্তি ঠিক করবেন, রোজ মিল, রোজ পয়সা। হয়তো একটু স্পেশাল কনসেসনে। অন্য সুযোগ নেওয়া চলবে না।
ঘুমে আর চিন্তায় কিন্তু তাঁদের সোয়ামি-ইস্তিরির মতোই রিলেশন। একদম পটে না। নাহয়,বস্তুজগতের ব্যাপারেই ভাবছেন,তাও বা তিনি ভাবছেন কেন? ভাবের সঙ্গে ঘুমের ভারি আড়াআড়ি। কোনটা আগে মুরগি না ডিম? ভাবনা আগে না ঘুম-পালানো আগে? রাত যতো বাড়ে, তাঁর ততো স্মৃতিকাতরতা ঘন হয়।
কখনো পা দোলান।কখনো তাঁর পা তাঁকে টানে তিনি বড়োরাস্তা দিয়ে মন্থর পায়ে হাঁটতে থাকেন।
কখনও ভেবেছেন, একটা গ্যাস নিয়ে রেঁধে খেলে কেমন হয়! তিনি রাঁধতে পারেন। বাবুদের পিকনিকে সাহেবদের উৎসবে তিনি রেঁধেছেন বেশ ক’বার। মাসছয়েকে কিছু বাঁচবে। বড্ড খিদে পেলে আর রাস্তার ডালবড়া আর চা খেয়ে কুড়িটাকা খরচা হয়ে যাবে না। একটা প্যান্ট করাতে হবে, ইউনিফরম ছাড়া ।বাদামি রঙের নয়, শুধু কালো না হয় স্বাধীন চকলেট রঙের ট্রাউজার, এখন আর স্ট্রাইপ এসব পরবেন না।
কালো, ছাই ছাই, এসব আবার রঙ হলো নাকি। গভীর নীল রঙ হলো রঙ। যেমন , সমুদ্র। হাত দিলে হাতে রঙ থেকে যাবে। আর একটা ভালো দাড়ি কামানোর জন্য আরশি।
হঠাৎ কিচকিচ করে উথলে উঠল পাখিগুলো, ভোর হয়ে গেল কীভাবে যেন! চোখ খোলাই আছে।
রাত নিশুত, ঘুমের নাম নেই, একটা হাইও ওঠে না। পিঠের পেশিগুলোতে খুব একটা আড়ষ্টতা।
তা হলেও তিনি মতলব করলেন আর একবার যাবেন তাঁর সেই আসল বাড়িতে, তাঁর ভিটে, তাঁর মফস্বলে। অনেক দূর কোলকাতা থেকে। ট্রেনে চার ঘন্টা, তারপর বাস, সেখানকার নাম পেয়ারাতলা বাস-আড্ডা, মিনিট ছয়েক পায়ে হাঁটতেও হবে। উঠোনে দুধে-আলতা, সন্ধ্যামণি।ছোটো বাড়িখানি, তাতে কী? তাঁর ভরাভর্তি সংসার, সবসময় সেখানে কণ্ঠকলোচ্ছ্বাস।ছেলেরা, বউমারা, তাঁর গৃহলক্ষ্মী, আর দুই বালক।
শুধু কী নেই যেন? নেই সেই রাজকুমারী? নেই কোনো ছোট্ট মেয়ে।হাল্কা দেহ, চঞ্চল পা, গরবিনী।যার হাতে মেলার প্যাঁচানো প্যাঁচানো লারেলাপ্পা চুড়ি, পায়ে গুজরি, পায়ে আলতা, ছুটোছুটি যেন শরতের বাদল।নিরবধি রিনরিনে পিনপিনে গলা। সস্তার আর খেলো সব কিছু যে হেসে উড়িয়ে দেবে, দেবে আহ্লাদে একেকবার হাততালি। কখন না কখন তার কথা শুনে বাইরের লোকে বলবে, ‘এঁচোড়ে পাকা’।
এইরকম মেয়েই হয়তো ছিলো সেই বড়ো মেয়েটির কোলে। যে রেললাইন পেরোতে যাচ্ছে দেখেও বলেন নি, যে ট্রেনটি আসছে সেটি থামবে না। কেমন যেন চুপ করে থাকতে, কী ঘটে দেখতে ইচ্ছে করেছিল তখন।মারাত্মক কিছু বোধহয় হয়নি। তাও তিনি সম্পূর্ণ জানেন না । তবে কোন অন্তরে অন্তরে জানেন যে, তাঁর না বলাটা ঠিক ছিলো না, নিমেষে পাস করেছিলো সুতীব্র আওয়াজ করা এক্সপ্রেস ট্রেন। মনে হয় হুমড়ি খেয়ে এপারে পড়লো তারা। তাঁর মন খুব খারাপ ছিলো, তাই এসব হয়েছে, মনে করলেন প্রফুল্লবাবু,আত্মস্নেহে নাকি আতঙ্কে।
দ্বিজু ঠিক করেছিল মেয়ে হলে নেবে না তারা। তখনই মনে হয়েছিল কি কিছু? নাঃ, কিছু মনে হয়নি। এমনি দু-বার তিনবারেও তিনি ভেতরের রাগ- বিরক্তি চেপে গিয়েছিলেন।দশ বছর তো হবেই -ওদের ঘরে আজও আর ছোট্ট কেউ নেই।দ্বিজু অভিযোগ করতো, বৌ নাকি শুধু রাক্ষসের মতো ভালোমন্দ খায়! তিনি অবশ্য দেখেছেন যে দ্বিজুর বৌ বেড়াল পোষে।তারা ইঁদুর মারে।নরম শরীর বলেও বেড়াল ভালোবাসে।
নিজের ছেলের বিয়েতে পণ নিতে মত দিয়ে ফেললেন।
পরক্ষণেই অস্বস্তি জমা হয়েছে। ছেলের অবশ্য আপত্তি হয় নি। তখন মা মানে ছেলে, ছেলে মানে মা।
নরক থেকে উদ্ধার করার পুতেরা বলেছে, “বাবু আমাদের জন্যে কিছুই করে নি। যা করেছে সবই মা। এখনও মা আর কতো করবে?‘ তাই যদি তো মাকেই বা কেন একখানা ভালো কাপড় কিনে দিস না।
ট্যানা পরেই স্বর্গাদপি গরীয়সী স্বর্গলোকেও যাবেন সন্দেহ নেই।
তাঁর নিজের মাতাঠাকুরানীও কিন্তু ছিলেন বউমা অন্তপ্রাণ। তা তো হবেনই, তাঁর শেষ কাজ করলেন যে ওই সতীলক্ষ্মী। দুজনে মিলতোও। তাঁরও দুই ছেলে, একজন তখন নিরুদ্দেশ, আর একজন? সেই বা কোথায়?
নাঃএবারে শেষ মাসমাইনে পেয়েছেন, কর্তব্য না করে এ মাসে পালানো যাবে না।খুব মনে লাগল সেদিন সন্ধ্যেবেলা চলে যেতে বলায়, সারারাত কাটলো কিনা জেটিতে বসে! তবে খুব আরাম লাগছিল ফুরফুরে হাওয়ায়। সেদিনও তিনি ঘুমিয়েছিলেন বাসে উঠেই, আর স্বপ্ন দেখেছিলেন রাজকুমারির। দ্বিজু , দ্বিজুর বৌ, ওর বাবা, মা, দাদা, তাঁর মা, বৌ সকলে বাসের দরজা আগলেছে মেয়েটার জন্যে- ওকে ফিরে যেতে হবে। ভিড় করে আছে অনেকে,এদের পেছনে তিনিও আছেন, জুলজুল করে দেখছেন; আঙুল তুলে তাকে তাঁর মাও এমনকী রাস্তা দেখাচ্ছেন। কী বলছেন? আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না। রাজকুমারী গর্বিত পায়ে চলে যাচ্ছে, সেও ছোট্ট আঙুল তুলে বুঝি দূর আকাশে কী দেখালো। চলে যাচ্ছে, ছোট জুতোয় টুকটুক শব্দ করে চলে গেলো রাজার দেশে।
তিনি কি কিছু দিতেন না রাজকুমারিকে? যতোবার মাইনে বেড়েছে ততোবার কি বাড়ির বরাদ্দ বদলান নি? আশ্চর্য, কেউ তা দেখল না।কুড়ি বছর বয়সে বিয়ে, তাও তো জননীরই ইচ্ছাপূরণে।সপ্তদশী রোগা মুখের বৌ।
আসলে এরা সত্যি সত্যি জাত ঘুঁটেকুড়ুনি কোন পালঙ্কে বসাবে ননী, চিনি দিয়ে গড়া স্বপ্নের বালিকাকে ভেবেই পেলো না? ওরা বিশ্বাস করেনি রাখহরি নামে গ্রামের মানুষটা সোনার না পারুন, রুপোর না পারুন একটা কাঠের খাট ফুল্ল সুন্দর মেয়ের কি নাতনির জন্যে অর্ডার দিতেনই।
প্রফুল্ল নামটা বাবার দেওয়া। রাখহরি বলে কারা যেন ডাকতেন, আত্মীয়-স্বজন, গ্রাম-সম্পর্কে এ ও সে,বুড়িদিদা, যাঁর চোখ না থাকলেও চোখের ছোঁয়া ছিলো, প্রণাম করলেই, সারা মুখে-মাথায় পুরোনো স্মৃতির মতো আদরমাখিয়ে দিতেন।
পাড়ার ঘন্টা, ভোলা, নীলমণি তবু ছাড়ে না, “কোথায় গেছলে দাদু এতো সকাল সকাল?’ “হাঁটতে?’
ভোলা- টুপু চায় চকলেট। তিনি কোনরকমে পাশ কাটান, “এখন কি দোকান খুলেছে নাকি, দেখছিস না?….’
ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে যান তিনি। আজই একবার বাড়ি যাবেন। সন্ধ্যে রাতে টাকাটা দিয়েই ফিরে আসবেন। জেটিতে বসে থাকবেন, সকালে বাসে চোখ জুড়ে ঘুম নামবে।
ঘরের শিকলে হাত দেওয়া মাত্রই ঐ উপযাচক হয়ে এলেন আর একজনা। যে ভয় পাচ্ছিলেন তাই হলো। এখন তিনি বললেন, ধাত- ইনসমনিয়া-এরকম রাতে টহল দিতে হবে না, একটু ওষুধ নিয়ে আসবেন, আমি লিখে দেবোখন! কী ভাবছেন , কিচ্ছু লাগবে না, আঙুলের কায়দায় টাকা বুঝিয়ে দিলেন। বলেই যাচ্ছিলেন- কতোজনকে এমনি কতো উপদেশ দিই, ঠিক কাজে লেগে যায়। আমি মানুষ চিনি। নেশাটেশা তো আপনার নেই।
এতদিনও তিনি ওষুধের খোঁজই নেন নি? ভাবছে কী পাগল লোকটা! তিনি এমনকি যতোবার যাতায়াত করেছেন একটা –দুটো মেলাটোনিন কিনে এনেছেন প্রেসক্রিপশন ছাড়াই। যারা আত্মহত্যা করে তারা ঠিক এমনিই করে অবশ্য, প্রি –প্ল্যানড আত্মহত্যা।কিন্তু তিনি নিজেকে খুবই ভালবাসেন, তিনি ওষুধ কিনে রেখেছেন কেননা, একসময় তিনি রোজ রাত্রে ঘুমোবেন।
এখন নানা পরীক্ষা করে দেখা যাক না, যদি ভালোয় ভালোয় ঘুম আসে।
একজন ঠাকুরবাবাও চেনা আছেন , তাঁর সঙ্গে দেখা হয়েছে। তিনি তো বলেছেন,’ ঘুম ঠিক আসবে।‘
‘গ্রীষ্মের পরে অবধারিত বর্ষা।‘
আগে অবশ্য হেসেছেন,বলেছেন,’ লোকে জাগতে চায়, তুই ঘুমোতে চাস, বলিস কীরে?’ ‘যতক্ষণ পারিস তাঁকে ডাক’ ।
ঘুমের বেদনাই তাঁর চাই, রোগের আরাম চাই, ভগবানকে ডাকার ধৈর্য আর প্রফুল্লবাবুর নেই।
তিনি কোনদিন স্বজ্ঞানে কারুর একতিল ক্ষতি করেন নি এই তাঁর যথেষ্ট।
উপযাচকের কাছে যাবেন আজ।দেখা যাক , সে কী ওষুধ দেয়? রাস্তার ওপারে বেশ বড়ো শাদা বাড়ি।
রবিবার। বাড়িতেই পাওয়া গেলো ভদ্রলোককে।চুপি চুপি কানের কাছে মুখ এনে বললেন, আমার স্ত্রীর বহুদিন ট্রিটমেন্ট চলছে, ক্যান্সার-পেশেন্ট, একেবারে ভালো হননি বটে তবে অনেকটা ভালো আছেন। ছেলে- মেয়ে হস্টেলে। আমাকে উনি সহ্য করতে পারেন না। একটু পারবেন ওনাকে দেখতে?
শুনেই চোখ কপালে রাখহরির।প্রথম ভীষণ চেঁচিয়ে ওঠার চেষ্টা করে মারাত্মক বিফল হলেন রাখহরি ওরফে প্রফুল্লবাবু। থম মেরে গেলেন।
নানা তেমন কিছু নয়, ওনাকে দেখাশুনো করার মহিলা অ্যাটেন্ডেন্ট রেখেছি।
তবে সারাদিন তো আমি থাকি না। এই ধরুন ফলটা ওষুধটা কিনে এনে দেওয়া, রে দিতে নিয়ে যাওয়া। কিছু খেতে চাইলেন হয়তো,তো আপনাকে আমি পুষিয়ে দেব। আপনি দায়িত্ববান মানুষ, দেখেই বুঝেছি, এ-পথেই যাচ্ছেন আর আসছেন।
কেমন একটা অভিভূত কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, স্বর ক্রমশ নেমে খুব ক্লান্ত শোনালো- ‘আসলকথা আপনাকে ওনার ভালো লেগেছে। আপনি একেবারে ওনার বাবার মতো দেখতে।‘
না ভাববেন না, ওনার বাবা মা আর বেঁচে নেই।
[মতামত ও বানানবিধি লেখকের ব্যক্তিগত]
Tags: গল্প, ঘুম এনে দেবে কেউ, তন্বী মুখোপাধ্যায়
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।