ক্যামেরাখানা বহুদিন পর হাতে নিল জয়ন্ত সান্যাল । তখন মোবাইল এর এমন রমরমা ছিলনা । উঠতে বসতে মানুষ ছবি তুলত না । কাজেকম্মে ফটোগ্রাফার ডেকে ছবি তোলানো হত । জয়ন্ত’র বরাবর ছবি তোলার সখ । সামান্য মাইনের চাকরির পাশাপাশি সখের ফটোগ্রাফিটা সে পার্ট টাইম পেশায় পরিণত করেছিল । এতে বাড়তি দু’পয়সা সংসারে আসত । বনানীও তাই আপত্তি করেনি ।
সেদিন আট বছরের ছেলেটার জন্মদিন ছিল । নুন আনতে তখন পান্তা ফুরিয়ে যায় , এমন ছিল তাদের অবস্থা । ইচ্ছে থাকলেও তিলুর আর পাঁচজন বন্ধুদের মত জাঁকজমক করে জন্মদিন পালন করতে পারত না জয়ন্ত । বনানী যথাসাধ্য চেষ্টা করে এই দিন একটু ভালোমন্দ ছেলের পাতে তুলে দিত । সঙ্গে থাকত এক বাটি সুস্বাদু পায়েস । তাই নিয়েই তিলুর খুশির অন্ত থাকতনা ।
বনানী বাপ ছেলেকে সাজিয়ে গুছিয়ে খেতে দিত । জয়ন্ত ছেলের দিকে তাকিয়ে রসিকতা করত , “ তিলু তোর অনারে আমার ও কেমন ভালোমন্দ জুটে যাচ্ছে দেখ !” তিলু মিটিমিটি হাসত । কিন্তু আট বছরের জন্মদিনে হঠাৎ শান্ত ছেলেটা আবদার করে বসল , “ বাবা আমার কিন্তু জন্মদিনের উপহার চাই”।
“কী চাই বাবা ?” সস্নেহে ছেলের মাথায় হাত বোলায় জয়ন্ত । বনানী একটু শঙ্কিত হয় । জয়ন্ত চোখের ইশারায় তাকে আশ্বস্ত করে । ছেলে এমন কিছু চাইবেনা সে জানে ।
ক্যামেরাটা টেবিলের উপর ছিল । সেদিকে ইঙ্গিত করে তিলু বলে ওঠে, আমার ছবি তুলে দিতে হবে । ছেলের আবদার শুনে জয়ন্ত হো হো করে হেসে ওঠে । খাওয়াদাওয়ার শেষে খান দুই ছবি তুলেই ক্যামেরা গুছিয়ে জয়ন্ত রেখে দেয় । কিন্তু তিলুর আরো ছবি চাই । জয়ন্ত ফিল্ম খরচের ব্যাপারে অতি সাবধানী । পরশু দিন পরেশ মণ্ডলের মেয়ের আইবুড়ো ভাতে ছবি তুলতে হবে । ছবি পিছু টাকা পাবে । নতুন ফিল্ম কেনা মাসের শেষে সম্ভবও না ।
ছেলে মুখ ভার করে চোখে জল নিয়ে স্কুলে চলে গেল। ছেলের শুকনো মুখটা দেখে বাপের বুকটাও মোচড় দিয়ে উঠল । সেও শুকনো মুখে অফিস বেরিয়ে গেল ।
ফিরল সন্ধ্যে বেলায় বাস এক্সিডেন্টে ছেলের তালগোল পাকানো দেহটা নিয়ে । সকালে জানতেই পারেনি , বাঁচিয়ে রাখা ফিল্মগুলোই রাত বাড়লে তিলুর জন্য খরচ করতে হবে !
Tags: উপহার, গল্প, মহুয়া মল্লিক
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।