লাল রঙের ঝুঁটিওয়ালা মোরগটা সারা মাঠ জুড়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে। আসে পাশে তার সঙ্গী সাথী বাকি মোরগ মুরগিগুলি একটাও নেই। মোরগটা মাঠের এমাথা থেকে ওমাথা দৌড়াচ্ছে, বোধহয় মৃত্যুভয়ে। নিশ্চই বুঝতে পেরেছে যে ওর মৃত্যু আসন্ন। তুলনায় শক্তিশালী এবং উর্বর মস্তিষ্কের প্রাণী মানুষের উৎকৃষ্ট মানের খাদ্য হতে চলেছে সে। ফাঁকা মাঠটার কোনার দিকে রয়েছে একটা খড়ের ছাউনি দেওয়া বেড়ার ঘর। কিছুক্ষন আগেই সেই ঘর থেকে বেরিয়ে মোরগটাকে ধরার জন্য পিছনে ধাওয়া করেছে তার মালিক। মোরগটাও বিনা লড়াইতে আত্মসমর্পণ করতে রাজি নয়। মালিককে রীতিমতন নাকানি চোবানি খাইয়ে ছাড়ছে সে। অবশেষে তাকে হার মানতে হলো মানুষটার দক্ষতার কাছে। ধরা দিলো ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এবার তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করা হবে, মাথাটা ধর থেকে আলাদা করে দেবে শক্তিশালী মানুষটা। তারপর ছাল ছাড়িয়ে, পরিষ্কার করে তেল মশলা দিয়ে রান্না করে পরিবেশন করা হবে আমাদের প্লেটে।
আজ সকালেই আমরা এসে পৌঁছেছি উড়িষ্যার পাহাড় জঙ্গল ঘেরা স্বল্পবসতিপূর্ণ এই গ্রামটাতে। গতকাল রাতে হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে আজ খুব ভোরেই পৌঁছে গেছিলাম আঙ্গুল স্টেশনে। সেখান থেকে গন্তব্যস্থল সাতকোশিয়া অভয়ারণ্য প্রায় একশো কুড়ি কিলোমিটার দূরে। এখানে আসার পরিকল্পনাটা খুবই আকস্মিক ছিল। এক বিশ্বস্ত যোগাযোগ পেয়েই বেরিয়ে পড়েছিলাম তিন বন্ধু, আমি, সুদীপ্ত আর ঝন্টু। ভোরবেলা আঙ্গুল স্টেশন থেকে বেরিয়েই টের পেয়েছিলাম এখানকার আবহাওয়া শহরের তুলনায় অনেকটাই আলাদা। এপ্রিল মাসের ভোরবেলাতেও এখানকার বিশুদ্ধ বাতাসে রয়েছে শীতকালের আমেজ। শ্বাস নিয়েই শরীরে সজীবতা অনুভূত হয়। দীর্ঘদিন বসবাস করলে কর্মক্ষমতা এবং জীবনীশক্তি দুইই বেড়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। জনহীন এই পাহাড় জঙ্গলে আসার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল এডভেঞ্চার। এক পুরানো বন্ধুই দিয়েছিলো এখানকার যোগাযোগ। ভোরবেলা আমরা পৌঁছানোর আগেই নিজের গাড়ি নিয়ে স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিলো সেই যোগাযোগ, নাম কপিল। জনহীন এই পাহাড় জঙ্গলে আমাদের একমাত্র ভরসা সেই। বেশ লম্বা, তবে তার চেহারাটা রোগা। মুখের কাঠিন্য দেখে বোঝা যায় বেশ পরিশ্রমী ধরণের মানুষ। তবে কথা বলার সময় মুখের কাঠিন্য দূর হয়ে হাসি ছড়িয়ে পড়ে তার সারাটা মুখমণ্ডলে। কাজ চালিয়ে নেবার মতন হিন্দি বলতে পারে সে। আমাদের মতন যে কয়েকজন টুরিস্ট বছরের বিভিন্ন সময়ে এখানে এসে পড়ে তাদের জন্যই কপিলের এই হিন্দি শেখা। তার দেখানো চায়ের দোকানে চা খেয়ে ঠান্ডার অনুভুতিটা কিছুটা কেটেছিল। তারপর একটা করে সিগারেট ধরিয়ে গাড়িতে ওঠা।
সকাল পেরিয়ে সূর্য তখন প্রায় মাথার উপরে। পেটে অসম্ভব খিদের জ্বালা নিয়ে আমরা তিনটি প্রাণী কপিলকে বারবার বিরক্ত করতে বাধ্য হচ্ছি। বেশ কিছুটা পথ ধরে দুপাশে ফাঁকা মাঠ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনি। তার মাঝে মাঝে দু’একটা খড়ের চালের বেড়ার ঘর। ঝনটু বেশ বিরক্ত হয়েই বললো, কোথায় নিয়ে এলে বলো তো? পয়সা খরচ করে এই ফাঁকা মাঠ দেখতে এসেছি নাকি? তার উপর একটাও মদের দোকান নেই। ঝন্টু কথাগুলো বাংলায় বললেও শেষের কথাটা ঠিকই বুঝে গেলো কপিল। হাসি হাসি মুখে হিন্দিতে বললো, আরে দাদা চলুন না, এখুনি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমি কপিলের কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে করে জিজ্ঞেস করলাম, সুখা পাওয়া যাবে? ঠিক বুঝতে পারলো না ও। সুদীপ্ত বুঝিয়ে বললো, গাঁজা পাওয়া যায়? কপিল হে হে করে হেসে উঠে বললো, সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। খিদের জ্বালায় যখন সহ্যের বাঁধ ভাঙতে চলেছে ঠিক তখন গাড়িটা ডান দিকে ঘুরিয়ে মাঠের মাঝখানে খড়ের চালওয়ালা একটা বেড়ার ঘরের সামনে দাঁড় করলো কপিল। গাড়ি থেকে নামতে নামতে বললো, চলুন দাদা। এই হলো এখানকার বেস্ট রেস্টুরেন্ট। দেখে বিন্দুমাত্র ভক্তি না হলেও খিদের জ্বালা আর সহ্য করা যাচ্ছে না। ভিতরে ঢুকে পেতে রাখা কাঠের চৌকিতে বসলাম আমরা। কপিল লুঙ্গি পরে খালি গায়ে চেয়ারে পা তুলে বসে থাকা একজন নাদুস নুদুস চেহারার লোকের সাথে স্থানীয় ভাষায় কথা বলতে লাগলো। পরে জানতে পারলাম ইনি একই সাথে এই রেস্টুরেন্টের মালিক,কুক,ওয়েটার এবং বারটেন্ডার। ঝনটু এবার কপিলকে একটা গালাগাল দিয়ে বললো, আগে কিছু খাবার ব্যবস্থা করো। আর দেখো মদ পাওয়া যায় নাকি।
মোরগটা কাটার আগে লোকটা আমাদের সামনে এনে দেখালো একবার। দুহাতে ধরা অবস্থায় ডি এস এল আর দিয়ে তার একটা ছবি নিলো ঝনটু। বললো, মোরগটা বেশ ভাগ্যবান, কটা মোরগ নিজের জীবদ্দশায় ডি এস এল আর ক্যামেরায় তোলা ছবির মডেল হতে পারে। কথাটা শুনে বেশ জোরে হেসে উঠলো কপিল। ঝন্টু আর সুদীপ্তর ততক্ষনে দু পেগ করে ওল্ড মঙ্ক রাম পেটে পড়েছে। নিজেদের সাথে কপিলকেও খাইয়ে দিয়েছে দু পেগ। সে একটু উত্তেজিত হয়ে পড়েছে। পেটের চিরন্তন সমস্যাটার কারণে যথারীতি আমি এলকোহলজনিত উত্তেজনা থেকে দূরে। সুদীপ্ত ইতিমধ্যেই দেশি মুরগির ছ’টা সেদ্ধ ডিম্ খেয়ে ফেলেছে। আমরাও দু’টো করে ওমলেট শেষ করেছি। কিছুক্ষনের মধ্যেই প্লেটে সাজিয়ে নিয়ে আসা হবে কয়েক মুহূর্ত আগে মাঠে ছুটে বেড়ানো সেই সৌভাগ্যবান মোরগের কষা মাংস। তার অপূর্ব স্বাদ কল্পনা করে ইতিমধ্যেই সকলের জিভে জল আসছে।
ভোরবেলায় আঙ্গুল স্টেশনে খাওয়া চায়ের মতোই কপিলের ব্যবহারও বেশ উষ্ণ। প্রথম থেকেই সে দারুন ভাবে মিশে গেছে আমাদের সঙ্গে। ঝন্টুর সাথে তার একটা খুনসুটির সম্পর্ক তৈরী হয়েছে। এতো অবধি সারাটা পথ কপিল যা যা বলেছে ঝন্টু তার প্রত্যেকটি কথার বিরোধিতা করেছে। নানা ভাবে সে কপিলকে উত্যক্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অনবরত। সাতকোশিয়া অভয়ারণ্য পৌঁছাবার আগে কপিল আমাদের হাতি দেখাবার জন্য একটা উঁচু টিলার উপর নিয়ে গেলো। সেখান থেকে নিচে একটা সমতল ভূমি দেখা যায়, যার চারপাশে পাহাড় আর জঙ্গল দিয়ে ঘেরা। কপিল সেইদিকে দেখিয়ে বললো, ওটা একটা সল্টপিট। প্রায়ই জন্তু জানোয়ার আসে ওখানে। কাল রাতেও একটা হাতির দোল ওখানে তান্ডব করেছে। যদিও একটানা বাইনোকুলারে চোখ লাগিয়ে এবং এক প্যাকেট সিগারেট শেষ করে বহুক্ষণ অপেক্ষা করার পরেও হাতির দেখা মেলেনি। অধৈর্য হয়ে ঝন্টু যখন রীতিমতন গালাগাল দিতে শুরু করেছে, তখন কপিল ওই দিকে দেখিয়ে বললো, ওই যে হরিণ। আমরা সকলেই তাকালাম সেই দিকে। দূর থেকে হরিণ দেখে বেশ উত্তেজিত হলাম মনে মনে। সুদীপ্ত বললো, এখানেই হরিণ, তবে জঙ্গলে বাঘ না হলেও চিতা তো দেখা যাবেই। কপিল বললো, বাঘও দেখা যেতে পারে দাদা। চোখের থেকে বাইনোকুলারটা নামিয়ে একটা বাজে গালাগাল দিয়ে ঝন্টু বললো, শালা! ছাগল দেখিয়ে হরিণ বলছো? ভালো করে দেখো, হরিণ নয় কতগুলো ছাগল চড়ে বেড়াচ্ছে। উপায় না দেখে দাঁত বের করে হাসতে লাগলো কপিল। আরো কিছুক্ষন সময়ের অপচয় করে এগিয়ে চললাম আমরা। পাহাড়-জঞ্জলের মধ্যে দিয়ে কিছুটা কাঁচা মাটির রাস্তা পার হয়ে আমরা এসে পড়লাম পিচ মোড়ানো জাতীয় সড়কে।
দুটি বেশ বড় বড় প্লেটে সাজিয়ে আনা হয়েছে রান্না করা মোরগটাকে। এতটুকু চেনা যাচ্ছে না আর তাকে। তেল মসলায় মাখামাখি হয়ে তার শরীরের টুকরোগুলো এখন আমাদের পেটে যাবার জন্য অপেক্ষা করছে। সেই মুহূর্তে পৃথিবীর সব চেয়ে বিখ্যাত রেস্টুরেন্টের সর্বেসর্বা লোকটি আরও একটা রামের বোতল নিয়ে এসে হাজির হলো। বসার চৌকির উপর রেখে সেও পাশে বসে পড়লো, হয়তো ফ্রিতে দু’এক পেগ পাবার আসায়। তিন পেগ খাবার পর কপিল নিজেই বুঝেছে তার লিমিট শেষ। তাকে আবার গাড়ি চালাতে হবে। কিন্তু চার পেগের পর ঝন্টু রীতিমতন নাছোড়বান্দা। সে কপিলকে আরও খাওয়াবেই। নেশাগ্রস্ত মানুষ অনেক সময় বেশি উদার হয়ে যায়। অবশ্য সেই উদারতা অন্যের বিরক্তির কারণও হয়ে ওঠে কখনও কখনও। অবশেষে সুদীপ্তর মধ্যস্থতায় তখনকার মতন মদ খাওয়া বন্ধ হলো। সৌভাগ্যবান মোরগটির শ্রাদ্ধশান্তি সেরে, চওড়া বিল মিটিয়ে, দুটি অতিরিক্ত মদের বোতল নিয়ে আমরা রওনা দিলাম সাতকোশিয়া অভয়ারণ্যের দিকে।
একটা দিগন্ত বিসতৃত মাঠের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে দূরে দেখা গেলো জঙ্গলের অববাহিকা। ল্যান্ডস্কেপে জঙ্গলের সাথে পাহাড়ও উঁকি দিচ্ছিলো পিছন থেকে। তখনও দেখা যায়নি আর এক প্রধান আকর্ষণ খরস্রোতা মহানদী। জঙ্গল-পাহাড়-নদী এই তিনে মিলে গড়ে তুলেছে সাতকোশিয়ার অপরূপ প্রকৃতি। গাড়িতে যেতে যেতেই কপিল বলে দিলো, জঙ্গলের ভিতর কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে হবে। জঙ্গলের ভেতর কোনোভাবেই পায়ে হেটে চলা যাবে না। কোনোরকম পারফিউম অথবা সুগন্ধি ব্যবহার না করাই ভালো। নিজের ব্যাগ খুলে যদি স্প্রের বোতলটা খুলে সকলের গায়ে ছিটিয়ে দিলো ঝন্টু। ইচ্ছে করে কপিলের গায়ে বেশি করে স্প্রে করে দিলো। বেচারা কপিল প্রায় কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো, দাদা! আমি হাত জোড় করে বলছি এরকম করবেন না। এটা জঙ্গল, প্রতি পদক্ষেপে বিপদ এখানে। ঝন্টু তার পিঠে একটা চাপড় মেরে হা হা করে হেসে উঠলো। বললো, দেখি পারফিউমের গন্ধে সত্যিকারের বাঘ আসে নাকি! নাহলে তো কুকুরকেই বাঘ মনে করে খুশি থাকতে হবে। যা হরিণ দেখালে কপিল ভাই!
আরও কিছুদূর এগিয়ে, লাল মাটির রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে সামনে দেখা গেলো কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা একটা বিশাল জায়গা। লোহার গেটের বাইরে এসে গাড়িটা দাঁড় করলো কপিল। ভিতরে পাশাপাশি অনেক গুলো তাবু খাটানো রয়েছে। বাইরে থেকে বেশ বড় দেখাচ্ছে তাঁবুগুলোকে। এরই মধ্যে একটাতে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাঁবুতে ঢোকার আগে কপিল আমাদের পুরো জায়গাটা ঘুরিয়ে দেখালো। পাহাড়ের ঢালে একটা উঁচু জায়গায় তাঁবুগুলো খাটানো হয়েছে। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে আরও নিচে নেমে গেলে মহানদীর অববাহিকা। কপিল জানালো, কয়েক বছর আগে পর্যন্তও মহানদীর তীরে বালির উপরেই তাঁবুগুলো খাটানো হতো। কিছুদিন আগে এক ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে। মহানদী থেকে ঘড়িয়াল উঠে এসে ঢুকে পড়েছিল একটা তাঁবুতে। দু’জন পর্যটককে ঘোরতর ভাবে জখম করেছিল ঘড়িয়ালটি। তারপর থেকে তাঁবুগুলো সরিয়ে নেওয়া হয় পাহাড়ের ঢালে। এই গল্প শুনেই একটা এডভেঞ্চারের গন্ধ পাওয়া গেলো। ঝন্টু বললো, আজ তাহলে মহানদীতে স্নান করতেই হবে। কপিল কিন্তু একেবারেই রাজি নয়। সে জানে যে কোনো মুহূর্তে বিপদ ঘটতে পারে। কিন্তু আমাদের অদম্য ইচ্ছেশক্তির সামনে তাকে হার মানতে হলো। তবে সে আমাদের একা ছাড়তে রাজি নয়। বললো, একটা শর্তেই আমি রাজি। আমি পারে দাঁড়িয়ে ক্রমাগত পাথর ছুঁড়বো জলে আর আপনারা একে একে স্নান করে আসবেন। বেশি দূর যাওয়া চলবে না। তাঁবুতে জামাকাপড় ছেড়ে রেখে তোয়ালে পরে নিলাম আমরা। বাইরে বেরিয়ে লাফাতে লাফাতে নামতে লাগলাম পাহাড়ের ঢাল বেয়ে। বেশ বেলা হয়ে গেছে ততক্ষনে। কোথা থেকে যেন একটা এয়ার গান জোগাড় করেছে কপিল। সেটা কাঁধে তুলে বীরদর্পে আমাদের পিছনে আসছে সে। নদীর ধারের অনেকগুলো বড় বড় পাথরের একটির উপর দাঁড়িয়ে বাইনোকুলারে চোখ রাখলো ঝন্টু। আমাকে ডেকে দেখালো নদীর অপর পাশে যেখান থেকে জঙ্গল শুরু হয়েছে সেখানে জলে ভেসে থাকতে দেখা যাচ্ছে কয়েকটি ঘড়িয়াল। শুধুই মাথাগুলো জলে ভেসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তাই দেখে ঝন্টু আর জলে নামতে রাজি হলো না। কপিল তাকে নিয়ে ঠাট্টা করে হেসে উঠলো। ঝন্টু তাকে কয়েকটা নোংরা গালাগাল দিলো। কপিল আরও জোরে হেসে উঠলো।
বেশ কিছুক্ষন জলে থাকার পর ঠান্ডা ভাবটা শরীরে সয়ে গেছে আমার আর সুদীপ্তর। ঝন্টু তার ডি এস এল আর দিয়ে পারে দাঁড়িয়েই ছবি তুলে চলেছে। কপিলের নজর রয়েছে জলে। হঠাৎ সুদীপ্তর ঠিক পাশে সাবানের ফেনা সরিয়ে ভেসে উঠলো ঘড়িয়ালের একটি কালো মাথা। দেখার পর কয়েক মুহূর্ত নিশ্চল ভাবে রইলো সুদীপ্ত। তারপরই জল থেকে বেরিয়ে আসার প্রানপন প্রচেষ্টা শুরু করলো সে। কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না আমি। তবে সুদীপ্তকে দেখে ঘোর বিপদের আশঙ্কা হলো। জল থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলাম আমিও। মৃত্যুর দূত কিন্তু নড়াচড়া করলো না। অথচ তাকে পাশে দেখে ছ’ফুট লম্বা এবং চল্লিশ ইঞ্চি ছাতির সুদীপ্তও মৃত্যুভয়ে কেঁপে উঠলো। জামাকাপড় পরেই একটা বড় পাথর হাতে তুলে নিয়ে জলে নেমে পড়লো কপিল। এতটুকুও ভয় ছিল না তার শরীর-মনে। পাথরটা ছুড়ে দিলো ঘরিয়ালটাকে লক্ষ্য করে। সেটা তার গায়ে লাগলো কিনা তা বোঝা গেলো না। তবে ঘরিয়ালটা মিলিয়ে গেলো মহানদীর জলে। জল থেকে উঠে এসে কপিল বেশ ঝাঁজের সাথে বললো, আমি আগেই বলেছিলাম, বিপদ আছে। এবার বিশ্বাস হলো তো? আপনারা শহরের মানুষরা জঙ্গলকে চিড়িয়াখানা মনে করেন। কিন্তু বুঝতে পারেন না এই জঙ্গল জন্তু-জানোয়ারগুলোর বাসস্থান। সুযোগ পেলে জান নিতে ছাড়বে না। ওরা একটাই ভাষা বোঝে। প্রাণভয়ে তখনও ঠিকমতো কথা বলতে পারছে না সুদীপ্ত। জল থেকে বেরিয়ে এসে শুধুই জাঙ্গিয়া পরে দাঁড়িয়ে আমরা দু’জন। সেই অবস্থাতেই আমাদের ছবি তুলছে ঝন্টু। দাঁত বের করে কপিলকে ক্ষেপাচ্ছে। বললো, আরে দেখো, কপিল একটা আস্ত ঘড়িয়াল মেরে ফেলেছে। সুদীপ্ত এবার রেগে গিয়ে তাকে চুপ করতে বললো। সে আবার দাঁত বের করে বললো, চলো তোমায় দু’পেগ রাম দিচ্ছি। সব ঠিক হয়ে যাবে। সদ্য কাটিয়ে ওঠা প্রাণসংশয়কর পরিস্থিতিতেও সবাই হেসে ফেললাম ঝন্টুর কথায়।
নদী থেকে ফিরে দুপুরের খাবার খেতেই আমাদের প্রায় বিকাল চারটে বেজে গেলো। দুপুরের দিকে বেশ গরম লাগছিলো। খালি গায়ে তাঁবুর বাইরে চেয়ার পেতে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমরা। কপিল আমাদের জঙ্গলের গল্প শোনাচ্ছিল। যথারীতি ঝন্টু তাকে নিয়ে মজা করছিলো। কপিল কিন্তু বেশ নিষ্ঠার সাথে গল্প বলে আমাদের বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করছিলো। ঝন্টু নিজের ঘাড়ের কাছে কিছু একটা অনুভব করে রিফ্লেক্সের কারণেই হাত দিয়ে একটা ঝাপ্টা মারলো। আমাদের ঠিক সামনে তাঁবুর মেঝেতে পাতা কার্পেটের উপর এসে পড়লো একটা বিশাল আকারের মাকড়শা। এতো বড় আর গাঢ় ধূসর রঙের মাকড়শা আগে কোনো দিন দেখিনি। কপিল এক মুহূর্ত দেরি না করে উঠে গেলো। তাঁবুর পশে রাখা একটা মোটা লাঠি নিয়ে এলো। কিন্তু ততক্ষনে মাকড়শাটা সেখান থেকে সরে পড়েছে, সামনের ফুলের বাগানটায় হারিয়ে গেছে সেটা। নিজের চেয়ারে বসে পরে কপিল বললো, খুব জোর বেঁচে গেছো, দাদা! কামড়ালে ২৪ ঘন্টা বিছানায় শুয়ে থাকতে হতো। জ্বরে কাবু হয়ে পড়তে। যতই কপিলের কথা শুনছিলাম ততই জঙ্গল সম্পর্কে একটা সমীহ তৈরী হচ্ছিলো মনে মনে। ঝন্টু হেসে হেসে কপিলকে ব্যঙ্গ করে বললো, তুমি শালা আর কত ঢপ দেবে? তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে সাতকোশিয়া নয় আমরা আমাজনের জঙ্গলে এসেছি। তারপর আবার একটা নোংরা গালাগাল দিলো।
বেশ তাড়াতাড়ি সন্ধ্যে নেমে এলো। তবে পরিষ্কার আকাশ আর গোল থালার মতন একটা চাঁদের কল্যানে ফুটফুটে জোৎস্না চারদিকে। বছরের এই সময়েও সূর্য ডোবার পর থেকেই হালকা ঠান্ডা অনুভব হচ্ছিলো। সন্ধ্যে থেকেই রামের বোতল আর বিশেষ অনুরোধ করে বানানো তেল চিপছিপে চিকেন পকোড়া নিয়ে বসে পড়েছে ঝন্টু। তাঁবুর বাইরে ঝাঁকড়া কদম গাছটার তলায় টেবিল পেতে তার চারদিকে গোল হয়ে চেয়ার নিয়ে বসেছিলাম আমরা। সুদীপ্ত বললো, কপিল ভাই জন্তু জানোয়ার তো কিছুই দেখা হলো না আমাদের। শুনেছি রাতের জঙ্গলে অনেক জানোয়ার বের হয়। চলো গাড়ি নিয়ে জঙ্গলে ঘুরে আসা যাক। উত্তরে কপিল বললো, রাতে জঙ্গলে ঢোকা নিষেধ। তোমরা যদি আর একদিন থাকতে তবে কাল সকালে অবশ্যই জঙ্গলের কোর এরিয়ায় ঘুরিয়ে আনতাম। রামের গ্লাসে এক চুমুক দিয়ে ঝন্টু বললো, পুরো টাকাটাই শালা জলে গেলো। কপিল আমাদের ভালোই চার অক্ষরের বোকা বানালো। নাও নাও মদ খাও। আমি তখন একটা জয়েন্ট বানাচ্ছিলাম। হঠাৎ কপিল উঠে চলে গেলো সেখান থেকে। ঝন্টুকে ধমক দিয়ে বললাম, তুই প্রথম থেকেই ওকে আজে বাজে কথা বলে চলেছিস। ও যদি রেগে গিয়ে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যায় এই অচেনা জঙ্গলের মধ্যে আমাদের অবস্থাটা কি হবে ভেবেছিস। ফোনের নেটওয়ার্কও কাজ করে না এখানে। ঝন্টু জোরে হেসে উঠে বললো, ওই জন্যই তো মালটাকে পুরো টাকা দেইনি। টাকা না নিয়ে যাবে কোথায়? তর্কে ভাটা পড়লো কপিল এসে যাওয়ায়। চাঁদের আলোয় কপিলের সাদা দাঁতগুলো দেখা গেলো যখন সে হেসে বললো, দাদা ব্যবস্থা করে ফেলেছি। তাড়াতাড়ি ডিনার সেরে ন’টা নাগাদ বেরিয়ে পড়তে হবে। ফরেস্ট গেটের যে সিকিউরিটি আছে ও থাকবে আমাদের সঙ্গে। ওকে কিছু টাকা ধরে দিতে হবে। যদি ডি এফ ও জানতে পারে তবে আমার লাইসেন্স ক্যানসেল করে দেবে। বাইরে কাউকে কিছু বলবেন না আর রাতে জঙ্গলে ছবি তুলবেন না।
ডিনার সেরে বেরিয়ে পড়লাম আমরা। ঝন্টু বসেছে সামনের সিটে, কপিলের পাশে। আমি আর সুদীপ্ত মাঝের সিটে। কিছুদূর এগিয়ে ফরেস্ট গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো সুমো গাড়িটা। বেটে খাটো একটা লোক এসে গেট খুলে দিলো। জঙ্গলের কোর এরিয়ায় ঢুকে এলো গাড়িটা। সিকিউরিটির লোকটা গেট বন্ধ করে গাড়ির পিছন দিকে এসে উঠে বসলো। জঙ্গলের সরু, কাঁচা রাস্তাটা গাড়ির হেড লাইটের আলোয় স্পষ্ট দেখা গেলো। কিছু দূর যাবার পর কপিল হেড লাইট ডিম্ করে দিলো। চার দিকে ঘন জঙ্গল, চাঁদের আলোও তা ভেদ করে ভিতরে পৌঁছাতে পারছে না। অদ্ভুত সব আওয়াজ ভেসে আসছে কানে। তার কোনও কোনও টা বেশ ভয়ঙ্কর। রাতের জঙ্গলে কোনও শক্তিশালী হয়তো কোনও দুর্বলকে আঘাত করছে। তার শেষ শব্দ ভেসে বেড়াচ্ছে জঙ্গলের বাতাসে। খুব আলাদা এক অনুভূতি, সেখানে যে উপস্থিত একমাত্র তার পক্ষেই তা অনুভব করা সম্ভব। শরীরের প্রত্যেকটা রোমকূপে অনুভব করা যায় জঙ্গলের প্রতি জেগে ওঠা সমীহ। ঝন্টু কি একটা বলতে যাচ্ছিলো। হঠাৎ বেশ জোরে ব্রেক করে দাঁড়িয়ে গেলো গাড়িটা। ডিম্ করা হেড লাইট নিভিয়ে দিলো কপিল। কাউকে কিছু বলতে হলো না। একদম সামনেই রাস্তার উপরে দেখতে পেলাম তারার মতন জ্বলজ্বল করছে দুটি চোখ। খুব আস্তে আস্তে কপিল শুধু বললো, ব্ল্যাক লেপার্ড। গাড়ির পিছনে বসে থাকা সিকিউরিটির লোকটা চার ব্যাটারির টর্চ লাইটটা জ্বালিয়ে ফোকাস করলো সামনের দিকে। স্পষ্ট দেখা গেলো মিশমিশে কালো রঙের বিড়ালের মতো কিন্তু আকারে বেশ বড় একটা জন্তু রাস্তার ঠিক মাঝখানে বসে আছে। সোজা তাকিয়ে আছে গাড়িটার দিকে, যেন এখুনি ঝাঁপিয়ে পড়বে। কিছুক্ষন টর্চের আলোটা ধরে রাখা হলো তার শরীরে। জন্তুটা নড়াচড়া করলো না কয়েক মুহূর্ত। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ে মিশে গেলো পাশের ঘন জঙ্গলে। হেড লাইট জ্বালিয়ে গাড়িটা এগিয়ে নিয়ে চললো কপিল। সবাই একদম চুপচাপ, এতক্ষনে বোধয় জঙ্গলের প্রতি একটা সম্ভ্রম জেগেছে ঝন্টুর মনেও। এখানে রাস্তাটা বেশ চওড়া। কপিল বললো, হাতি চলাচল করে এই রাস্তা দিয়ে। ভাগ্য ভালো থাকলে দেখা যেতে পারে। ভাগ্য বলে যদি কিছু থেকে থাকে তবে তা আমাদের ভালোই ছিল সেদিন। কিছুদূর এগোতেই দেখা গেলো রাস্তার একপাশের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে অন্য পাশের জঙ্গলে যাচ্ছে চারটে হাতি। ওরা সাধারণত দলবদ্ধ ভাবেই ঘোরে। এবার আর হেড লাইট বন্ধ হলো না। পরিষ্কার দেখতে পেলাম বিশাল আকারের চারটি হাতি একের পিছনে আরেকটি। কিছুটা দূরত্ব রেখে গাড়িটা দাঁড় করিয়েছে কপিল। কপিল বললো, হাতিদের মেজাজের ঠিক নেই। মেজাজ খারাপ থাকলে গাড়ি দেখলে তেড়ে এসে আক্রমণ করতে পারে।
হাতঘড়িতে দেখলাম তখন রাত এগারোটা বেজে দশ মিনিট। গাড়িটা এবার আর একটা রাস্তা ধরেছে। কপিল বললো, আমরা ফিরছি এবার। সিকিউরিটির লোকটা ডান পাশে একটা উঁচু ঢিপির দিকে টর্চ লাইট দেখিয়ে বললো, এটা এই জঙ্গলের সব চেয়ে বড় সল্টপিট। অনেক জানোয়ার আসে এখানে নোনা জল খেতে। গাড়ি থেকে নেমে দেখে আসবেন নাকি একবার? সঙ্গে সঙ্গে কপিল আপত্তি জানালো। আমি আর সুদীপ্ত বেশ আগ্রহী হয়ে উঠলাম। ঝন্টু কিন্তু বেশ চুপচাপ হয়ে গেছে। সিকিউরিটির লোকটা অভয় দিয়ে নিয়ে চললো আমাদের। গাড়ি থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই বুঝলাম আমরা কোনও এক আলাদা পৃথিবীতে এসে পড়েছি। এই পরিবেশ আমাদের সম্পূর্ণ অচেনা। এখানকার প্রকৃতির শব্দ একেবারে আলাদা। কৃত্রিমতার এতটুকু ছোঁয়া নেই, একেবারে খাঁটি। অনুভব করলাম, হৃদপিন্ডটা বেশ জোরে জোরে লাফাচ্ছে বুকের মধ্যে। লোকটা টর্চ জ্বেলে আগে আগে চললো। সামনে দেখা যাচ্ছে সাদা বালির উঁচু ঢিপি। তাতে বিরাট আকারের কয়েকটি গর্ত। লোকটা আস্তে আস্তে বললো, হাতির পায়ের ছাপ। ঢিপির উপর উঠে দেখলাম সামনের দিকে ঢাল নেমে গেছে। চারদিকে বালির ঢিপির মাঝখানে একটা জলাশয়। টর্চ বন্ধ করে দিলো লোকটা। চাঁদের আলোয় চকচক করছে সাদা বালি। পরিষ্কার আকাশে তারারা জ্বলজ্বল করছে। প্রস্বাসের সাথে বিশুদ্ধ বাতাস নিচ্ছে ফুসফুস। অকৃত্রিম প্রকৃতি শরীরে এক অন্যরকম অনুভূতির সঞ্চার করছে। ভয়, সমীহ আর অসম্ভব ভালোলাগা মিলেমিশে একাকার সে অনুভূতিতে। আবছা আলোয় সামনের জলাশয়ে দেখা গেলো ছোট ছোট কয়েকটি জন্তু, বোধয় হরিণ, সম্বর, শিয়াল অথবা শুয়োর। লোকটি বললো, এবার ফিরে চলুন। এখানে বেশিক্ষন দাঁড়ানো ঠিক হবে না।
কিছুটা এসেই দূর থেকে গাড়িটা দেখতে পেলাম। গাড়ির পাশেই বিশাল আকারের মহিষের মতো একটা জন্তু দেখা গেলো। গাড়ির ভিতরে রয়েছে কপিল আর ঝন্টু। সিকিউরিটির লোকটা ভয়ার্ত গলায় বললো, বাইসন। গাড়ির ভিতর থেকে ঝন্টু বোধয় তার চোখে মোবাইলের আলো ফেললো। এবার আর নিস্তার নেই। প্রচন্ড শব্দ করে ডাকাডাকি শুরু করলো বাইসনটা। রেগে গেলে অনায়াসে গাড়ি উল্টে দেবার ক্ষমতা রাখে বাইসন। আমরা তিনটি মানুষ তখন গাড়ির বাইরে। যে কোনও মুহূর্তে প্রাণটা নিয়ে নিতে পারে কোনও এক ভয়ঙ্কর জানোয়ার এসে। আর বোধয় বাড়ি ফেরা হলো না। সুদীপ্তর দিকে তাকিয়েও কিছু বলে উঠতে পারলাম না, তারও একই অবস্থা। মোবাইলের আলোটা নিভিয়ে দিলো ঝন্টু, নিশ্চই কপিলের বকা খেয়ে।
দূর থেকে চাঁদের আলোয় দেখতে পেলাম গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো একজন। চেহারা দেখে বুঝলাম কপিল। হাতে বন্দুকের মতন কিছু একটা। সঙ্গে সঙ্গে বেশ জোরে একটা আওয়াজ হলো। আকাশের দিকে মুখ করে শক্তিশালী এয়ারগানটা চালিয়ে দিলো কপিল। বাইসনটা দৌড়ে পালালো জঙ্গলের ভিতর। আমরা তিন জনও মৃত্যুভয়ে দৌড় লাগলাম গাড়িটার দিকে। বন্দুকের আওয়াজ শুনে মুহূর্তের মধ্যে ছুটে আসতে পারে কেনও ভয়ঙ্কর জন্তু। কিভাবে গাড়ির কাছে পৌঁছেছিলাম তা মনে পড়েনি পরে, কখনোই। আমরা ভিতরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ি চালিয়ে দিলো কপিল, স্টার্ট দেওয়াই ছিল। হাত-পা কাঁপছে তখনও। ঝন্টু বোধয় গাড়ির ভিতরে বসে বসেই কাঁপছিলো। আর কোথাও দাঁড়ালো না গাড়িটা। জঙ্গলের কোর এরিয়া ছেড়ে বেরিয়ে সোজা এসে দাঁড়ালো আমাদের তাঁবুর সামনে। তখনও গাড়ি থেকে নামতে চাইছে না কেউ, কপিল নেমে এলো সবার আগে। আমাদের কিছু না বলে নিজে থেকেই পাঁচশো টাকা গুঁজে দিলো সিকিউরিটির হাতে। একে একে নেমে এলাম আমরা। চুপচাপ গিয়ে ঢুকলাম তাঁবুর মধ্যে। সুদীপ্ত আর ঝন্টু একটা করে রামের পেগ গলায় ঢেলে শুয়ে পড়লো। ঘড়িতে তখন রাত আড়াইটে। একটা সিগারেট ধরিয়ে তাঁবুর বাইরে এলাম। আদিম, অকৃত্রিম পৃথিবীর সাথে সঙ্গমের সাধ আমার বহুদিনের। কিন্তু এই পৃথিবী বড় ভয়ঙ্কর। এখানে বেঁচে থাকার অভ্যেস আমার নেই। তাই মনের মধ্যে অদ্ভুত ভালোলাগার অনুভূতি নিয়েও বারবার মনে হতে লাগলো, কখন বাড়ি ফিরবো? কখন প্রিয়জনদের দেখতে পাবো?
পরদিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরেই তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম। আমাদের ফেরার ট্রেন ভুবনেশ্বর থেকে, এখান থেকে প্রায় আড়াই ঘন্টা। রাতে কারোরই সেভাবে ঘুম হয়নি। সারাটা রাস্তা ঘুমিয়েই কাটলো। ভুবনেশ্বর স্টেশনের বাইরে বিদায় জানালাম কপিলকে। একে একে এগিয়ে গেলাম আমি আর সুদীপ্ত। বিদায় বেলায় কপিলকে বুকে জড়িয়ে ধরলো ঝন্টু। মুখে কিছু না বললেও কপিলের মতন একজন মানুষের প্রতি রইলো আমাদের কৃতজ্ঞতা, যা শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে মিটিয়ে দেওয়া যায় না, উচিতও নয়…
Tags: অচেনা অরণ্যে, গল্প, বিশ্বজিৎ সাহা
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।