-“হ্যালো বল,” ফোনের অপরপ্রান্তে বাবার গলা পেয়ে একটু অবাকই হল নির্ঝর। ও তো ফোন করেছিল জেঠতুতো দিদি শীলাকে! যদিও ওরা একদম পিঠোপিঠি, শীলাকে তাই দিদি ভাবতেই পারেনা নির্ঝর। ছোটবেলা থেকে বন্ধুর মতই বেড়ে উঠেছে ওরা।
-“কেমন আছো বাবা?” নিজেকে সামলে নিয়ে কুশল জিজ্ঞাসাবাদে নির্ঝর।
-“ভালো তো থাকতেই হবে। সামনে এত বড় একটা কাজ! সব আমাকেই তো সামলাতে হবে।” শীলার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। দাদার মেয়ের জন্য পাত্র ঠিক করা থেকে শুরু করে বিয়ের যাবতীয় কাজের দায়িত্ব নির্ঝরের বাবা সমর চক্রবর্তীরই। গ্রামের বাড়ী থেকে যাতায়াত করতে অসুবিধা হয় বলে শীলা কলেজে পড়ার সময় থেকে কাকার বাড়ীতেই থাকে। নদীয়ার করিমপুরে শীলাদের গ্রামের বাড়ী। বেশ খানিকটা জমিজায়গাও আছে, চাষবাস হয়। দেখভাল করেন বাড়ীর বড় ছেলে অমর। পড়াশোনা করে চাকরি করার ব্যাপারে অমরের আগ্রহ ছিল না কোনোকালেই। তবে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার ব্যাপারে বাঁধা দেননি কখনো। শীলার পরে এক ছেলে আছে অমর এবং তাঁর স্ত্রী নীলিমার, নীলাঞ্জন। গ্রামের স্কুলে বারো ক্লাসে পড়ে।
-“তা তো বটেই। মা’র শরীর ঠিক আছে তো?”
-“হ্যাঁ। একটু বেরিয়েছে। মন্দিরে গেছে।”
-“দিদি কই?” শীলাকে কখনো দিদি বলে ডাকে না নির্ঝর। তবে বাবার সামনে ওকে নাম ধরে ডাকতে সাহস হল না নির্ঝরের। বাবার বিশাল ব্যক্তিত্বের সামনে কিছুটা জড়সড় হয়ে থাকে সে। শুধু নির্ঝর কেন, পরোপকারী, বিচক্ষণ বুদ্ধির সমরকে তাঁর স্বভাব, ব্যক্তিত্বের জন্য পাড়া প্রতিবেশী, আশেপাশের এলাকার সবাই ভালোবাসে যেমন আবার যথেষ্ট সমীহও করে চলে। শহরতলীর লোকে এক ডাকে চেনে সমরকে। এমনই তাঁর জনপ্রিয়তা, এবারে পৌরসভা নির্বাচনে নির্দল প্রার্থী হয়ে দাঁড়িয়েও জিতে কাউন্সিলর হয়েছেন।
-“বাড়ীতেই আছে। তুই তো ওকেই ফোন করেছিস। শীলা ফোনটা ধর,”
-“কি রে উড্ বি ব্রাইড…কি হালচাল?” শীলার পেছনে লাগার উদ্দেশ্যে হাল্কা চালে কথাটা ছুঁড়ে দিল নির্ঝর। কিন্তু একি! ফোনের অপরপ্রান্তে কোনো সাড়াশব্দ নেই। কান্নার আওয়াজের মত ভেসে আসছে কানে। “দিদি, কি হল তোর…” উত্তর নেই “দ্যাখ, আমি তোকে দিদি বলে ডাকছি। এতদিন তুই বলে বলেও ডাকাতে পারিসনি, আজ নিজে থেকেই বলছি… কিছু তো বল, কাঁদছিস কেনো?”
-“কিছু না, তুই তাড়াতাড়ি চলে আয় রে।” কান্না-ভেজা নীচু গলায় কথাটা বলে ফোন কেটে দিল শীলা।
হতবাক হয়ে হাতের ফোনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল নির্ঝর। শীলার এহেন আচরণের কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছে না সে। বরাবরের হাসিখুশি মেয়ে শীলা। নির্ঝরের থেকে দশ মাসের বড় বয়সে। ছোটবেলায় গ্রামের বাড়ীতে একসাথে থাকার দিনগুলোয় শীলা আর নির্ঝর যেন হরিহর আত্মা ছিল। ঝগড়াঝাঁটি যেমন হত তেমনি চট করে ভাবও হয়ে যেত ওদের মধ্যে। তখন নির্ঝরের ক্লাস সিক্স, গ্রামের বাড়ী ছেড়ে সমর ওর পরিবার নিয়ে উত্তর চব্বিশ পরগণার শহরতলীতে চলে এলে শীলাসহ অন্যান্য তুতো ভাইবোনের সাথে নির্ঝরের দূরত্ব তৈরী হয়। এরপরে কল্যাণীতে কলেজে পড়ার সময় শীলা ওদের বাড়ীতে থাকতে শুরু করলে নির্ঝর আর শীলার পুরনো সখ্যতা ফের গড়ে উঠতে সময় লাগলো না।
-“সারাক্ষণ মেয়েদের ফোন! কারো সাথে প্রেম করছিস নাকি?” সুযোগ পেলেই দিদিগিরি ফলাতে ছাড়ত না শীলা।
-“করছি তো,” শীলাকে রাগানোর জন্য বলত নির্ঝর। প্রেম ব্যাপারটা শীলা পছন্দ করে না। শীলাকে দেখতে বেশ ভালো। কলেজে অনেকেই পছন্দ করে শীলাকে। এক তরুণ লেকচারার তো বাড়ী এসে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিল। কিন্তু শীলাই নাকচ করে দেয়।
-“এসব করে নিজের কেরিয়ারটা আবার নষ্ট করিস না। দেখলাম তো অনেককেই!”
-“জ্ঞান দিস না। আচ্ছা সত্যি কথা বল তো, আজ অবধি কাউকে তোর ভালো লাগেনি?”
-“লেগেছে, তবে সারাজীবন কাটানো যাবে এমন কাউকে মনে হয়নি।”
-“বাঃ! বাবা, কাকারা যাকে পছন্দ করবে তার সাথে সারাজীবন কাটানো যাবে কিনা বুঝবি কি করে?”
-“দেরী আছে সেসবের। তখন ভাবব।”
এক সরকারী চাকুরে ছেলেকে পাত্র ঠিক করেছেন সমর। মিউনিসিপ্যালিটি অফিসে ক্লার্ক, পাকা চাকরি। কাজের সূত্রে নির্ঝর বাড়ীর বাইরে থাকে। অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিল বলে বিয়েটা ঠিক হওয়ার পর শীলার সাথে সেভাবে কথাই হয়নি। শীলার আজকের আচরণ ভাবাচ্ছিল নির্ঝরকে। তবে কি পাত্র পছন্দ হয়নি শীলার?
(২)
গত কয়েকদিন ধরে বেশ খোশমেজাজেই ছিলেন অমর। মেয়ের বিয়ের দিন এগিয়ে আসছে, করিৎকর্মা ভাইয়ের সৌজন্যে অমরকে সেভাবে কোনো টেনশন নিতে হচ্ছে না। ক্ষেতে এবারে ফলন খুব ভালো হয়েছে। হাতে তাই ভালোই টাকাপয়সা রয়েছে অমরের। পাত্রপক্ষের কোনো দাবীদাওয়া না থাকলেও মেয়েকে সোনাদানা, গয়নাগাটি দিয়ে বেশ সাজিয়ে গুছিয়েই পাঠাবেন ঠিক করে রেখেছেন তিনি। খাট, ড্রেসিং টেবিল, আলমারি, এসব ছাড়াও পাত্রকে বাইক, অত্যাধুনিক মোবাইল, মিউজিক সিস্টেম দেবেন। ভাইয়ের সাথে আলোচনা করে সব ঠিক করে ফেলেছেন। বুদ্ধিমান ভাইয়ের মতামতের ওপর ভরসা করেন অমর।
-“কেনাকাটা সব কমপ্লিট?”
-“আমি কাজ কখনো ফেলে রাখিনা দাদা।”
-“সে তো জানি রে! তুই আছিস বলেই তো ভরসা পাই…ভালো পাত্র, ভালো পরিবার। শোন, আমি টাকাপয়সা গুছিয়ে নিয়ে আসছি, তোকে সবকিছু মিটিয়ে দেব গিয়ে।”
-“আমি তো টাকা চাইনি এখনি।” বিয়ের যাবতীয় খরচ নিজের পকেট থেকেই করেছেন সমর এযাবৎ।
-“তা চাসনি বটে! তবে আমাকে তো দিতে হবে। তুই কত করবি আর। মেয়েটার পড়াশোনা, থাকা খাওয়ার খরচ তো তুইই চালাচ্ছিস কয়েক বছর ধরে!”
-“ওসব ছাড়, বৌদি আর অঞ্জনকে নিয়ে চলে আয়। হাতে হাতে কাজটা তুলে দি।”
দু’দিন বাদে ছেলের আশীর্বাদ, চারদিনের দিন শীলার বিয়ে। অমর ছেলে আর বৌয়ের সাথে আজ সকালে ভাইয়ের বাড়ী রওনা হয়েছিলেন। ট্রেনে আসার সময় মাঝরাস্তায় খবরটা পেলেন। ভিড় ট্রেনে বিভিন্ন আওয়াজের মধ্যেও যখন বুঝতে পারলেন কি হয়েছে, মাথাটা ঘুরে গেছিল অমরের। কৃষ্ণনগর লোকালে বসার জায়গা পেয়েছিলেন ভাগ্যিস! সীটে বসে থাকার জন্য সামলে নিতে পারলেন নিজেকে। দাঁড়ানো অবস্থায় থাকলে পড়ে গিয়ে আরো একটা অঘটন ঘটতে পারতো।
বারবার জিজ্ঞাসা করলেও নীলিমা আর নীলাঞ্জনকে ট্রেনে কিছু বলেননি অমর। বাড়ী গেলে তো জেনেই যাবে সব। তবে বাড়ী অবধি যাওয়ার আগেই নীলিমারা জেনে গেল। ষ্টেশনে ভীম এসেছিল, সমরদের বাড়ীর অনেকদিনের পুরোনো কাজের লোক। অমর আর নীলিমাকে দেখতেই কেঁদেকেটে একসা। নীলিমা আর অঞ্জন জেনেই গেছে যখন অমর ওদের সাথে আর বাড়ী অবধি গেলেন না। মালপত্রসহ নীলিমা, অঞ্জনকে গাড়ীতে তুলে ভীমের সাথে বাড়ী রওনা করিয়ে অমর ছুটলেন ‘জিআরপি’র কাছে। হয়ত ওখানেই রয়েছে নির্ঝর। নির্ঝরের পাশে এখন ওর দাঁড়ানো দরকার। এত অল্পবয়সে এদিন দেখতে হচ্ছে! ভেঙে পড়ারই কথা। অমরের নিজেরই তো মাথা খারাপ হয়ে রয়েছে খবরটা শোনা ইস্তক।
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা প্রাতঃভ্রমণ কখনো মিস করতেন না সমর। প্রতিদিন ভোরে অন্ধকার থাকতে বেরিয়ে হাঁটা, ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করে ঘন্টাখানেক বাদে বাড়ী ফিরতেন। আজকেও রোজকার মত মর্নিং- -ওয়াকে বেরিয়েছিলেন সমর। তবে আজ আর নির্দিষ্ট সময়ে সমর ফিরলেন না বাড়ীতে! ফেরার পথে রোজ রেললাইন পার হয়ে একটা শর্টকাট রাস্তা ধরতেন সমর। নির্ঝর আর ওর মা কল্পনার কাছে লোক মারফৎ খবর এল রেললাইনের ধারে সমরের রক্তাক্ত ছিন্নভিন্ন দেহ পড়ে আছে।
(৩)
মর্গের সামনে থেকে একটু সরে সিগারেট ধরালো অরিত্র! কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সমরবাবুর পরিবারের লোকজন। তাদের ঘিরে রয়েছে বেশ কিছু মানুষের জটলা। এলাকাতে যথেষ্ট জনপ্রিয় ব্যক্তি তায় আবার কাউন্সিলর। মৃত্যুর কারণ অ্যাক্সিডেন্ট হলেও জনবিক্ষোভের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। পরিস্থিতি যাতে কন্ট্রোলে থাকে তার জন্য লোকাল থানার ওসি অরিত্র ব্যানার্জি বেশ সজাগ।
পকেটে রাখা মোবাইল নড়েচড়ে জানান দিল কেউ কল করেছে। অরিত্র দেখল বসের ফোন। সমরবাবুর অকস্মাৎ মৃত্যুতে ওদের ডিপার্টমেন্ট যে বেশ চাপে রয়েছে তা বলাই বাহুল্য।
-“পোস্টমর্টেম হল?”
-“এখনো চলছে স্যার।”
-“পরিস্থিতি কিরকম বুঝছ’?”
-“কন্ট্রোলেই আছে স্যার! রেললাইনের ধারের এলাকা থেকে বিক্ষোভের খবর আসছে, ফোর্স পাঠানো হয়েছে। নজর রাখছে তারা।”
-“সমরবাবু তো কোনো পার্টিতে ইনভলভ্ড ছিলেন না!”
-“না স্যর। ওঁকে রুলিং পার্টি, অপোজিশন থেকে বেশ কয়েকবার অফার দেওয়া হয়েছিল পার্টির টিকিটে দাঁড়াতে। উনি রাজি হননি। এলাকার মানুষের রাগের কারণ এখানেই। দলে টানতে না পেরে ওঁকে এভাবে সরিয়ে দেওয়া হল, এরকম কথাও শোনা যাচ্ছে।”
-“বি অ্যালার্ট! বেগতিক দেখলেই আমাকে ইনফর্ম করবে।”
-“ডেফিনিটলি স্যর।”
পোস্টমর্টেম হয়ে গেলে যাবতীয় ফর্ম্যালিটি কমপ্লিট করে অরিত্র পরিবারের হাতে বডি তুলে দিল। ঘটনাস্থল থেকে সেরকম উল্লেখযোগ্য কিছু পাওয়া যায়নি। এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে যা পড়েছিল, সবই সমরবাবুর জিনিস। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলছে, অ্যাক্সিডেন্টই মৃত্যুর কারণ। সবকিছু যাচাই করে দেখে অরিত্রও মোটামুটি নিশ্চিন্ত হল। এরইমধ্যে জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। শহরতলীর মেইন বাজার ব্যবসায়ীরা বন্ধ রেখেছে সমরবাবুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। বাজার বন্ধ রাখা নিয়ে রুলিং পার্টির লোকজন হম্বিতম্বি করলেও পরিস্থিতি অরিত্রর হাতের বাইরে যায়নি কখনো। নির্বিরোধী, পরোপকারী মানুষটাকে সব পার্টির লোকেই শ্রদ্ধা করত বোঝা যাচ্ছে।
রুটিন এনকোয়ারি করতে অরিত্রকে সমরবাবুর বাড়ীতে যেতেই হত। ধাক্কাটা সামলে নেওয়ার জন্য সময় দিয়ে বিকেলের দিকে এসেছে অরিত্র। দরজা খুলে যে ওকে ভেতরে নিয়ে গেল, তাকে দেখে ডিউটিরত অবস্থাতেও অরিত্রর কিঞ্চিৎ চিত্তচাঞ্চল্য ঘটল। শোকবিধ্বস্ত বাড়ীতে জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসে এরকম সৌন্দর্যের সাক্ষাৎ মিলবে, ভাবেনি অরিত্র।
-“আপনি?”
-“আমি ওঁর ভাইঝি।”
-“কী নাম আপনার?”
-“শীলা চক্রবর্তী।”
-“আপনারই তো বিয়ে দু’দিন বাদে?”
-“হ্যাঁ, ছিল। এখন এই অবস্থায় তো আর সম্ভব না।”
প্রশ্নোত্তরের ফাঁকে অরিত্র শীলাকে ভালো করে লক্ষ্য করছিল। মেয়েটাকে বেশ আত্মবিশ্বাসী লাগছে। বিয়ের জাস্ট আগেই এরকম একটা আঘাতের জেরে বিয়েটা ভেস্তে যেতে বসেছে, তবু শীলা খুব ভেঙে পড়েছে বলে তো মনে হচ্ছে না! আজকের দিনের শিক্ষিত মেয়ে, জানে যে বাস্তব পরিস্থিতিটা মেনে নিতে হবে। একটা অ্যাক্সিডেন্টাল কেসের রুটিন জিজ্ঞাসাবাদ করতে এসে শীলাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অনেক প্রশ্নই করছিল অরিত্র। বিরক্ত হচ্ছিল শীলা।
-“কলেজে বয়ফ্রেন্ড থাকা না থাকার সাথে কাকার অ্যাক্সিডেন্টের কি সম্পর্ক?” শীলাকে ঝাঁঝিয়ে উঠতে দেখে অরিত্র সামলে নিল নিজেকে।
-“বিয়েটা আপনার সম্মতিতে হচ্ছিল?”
-“হ্যাঁ, আপনি কি ইঙ্গিত করতে চাইছেন অফিসার?”
-“কিছু না, জাস্ট জানতে চাইছিলাম।”
-“যদি বলি বিয়েতে আমার মতে ছিল না! তাহলে কী বলবেন?” অরিত্রর চোখে চোখ রেখে কথাটা বলল শীলা। একটু অপ্রস্তুত হয় অরিত্র। “বিয়েটা আটকাতে আমি কিছু করেছি?”
-“আহ্ শীলু! কি যাতা বলছিস ওনাকে,” একজন মধ্য চল্লিশের ভদ্রমহিলা এসে দাঁড়িয়েছেন। ইনি সমরবাবুর স্ত্রী কল্পনাদেবী। সমরবাবুর সাথে কল্পনাদেবীকে বিভিন্ন জায়গাতে কয়েকবার দেখেছে অরিত্র। সমরের যাবতীয় কাজে কল্পনা সবসময় সমর্থন করেন, একথা জানে সবাই। সমরবাবুই বড় মুখ করে বলতেন। ওঁদের স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও খুব ভালো ছিল। কল্পনাকে এখন দেখে আগের চেহারার কথা মনে পড়ল অরিত্রর। স্বামীর মৃত্যুতে একবেলার মধ্যেই চেহারার আমূল পরিবর্তন ঘটে গেছে।
-“আমাদের সবকিছুই খতিয়ে দেখতে হয় শীলা। আপনার থেকে কো-অপারেশনের আশা করতে পারি নিশ্চই!”
-“বাচ্চা মেয়ে। যা ঘটল, মাথার ঠিক নেই। আপনি মাইন্ড করবেন না অফিসার। আপনার যা জানার আছে, আমি বলছি।” মানবিকতার খাতিরে কল্পনাদেবীকে কিছু জেরা করতে ইচ্ছে করছিল না অরিত্রর। তবু ডিউটি বলে কথা!
সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করে একদম শেষে সমরের ছেলে নির্ঝরের মুখোমুখি হল অরিত্র। নির্ঝরের বক্তব্যে একটা চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এল ওর।
-“সমরবাবুর ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য থানাতে নিয়ে যেতে চাই স্যর! ঝামেলা হতে পারে, আপনি অ্যাডিশনাল ফোর্স রেডি রাখুন।”
-“কেন অরিত্র! কিছু পেলে?”
-“নির্ঝর অ্যাক্সিডেন্টের সময় স্পটে ছিল। ঘটনাটা ওর সামনেই ঘটেছে!”
(৪)
ভোরবেলা ঘুম ভেঙে গেল শীলার। তবে ঘুমিয়েছে আর কোথায়! নির্ঝরের অপেক্ষাতে অনেক রাত অবধি জেগে ছিল বাড়ীর সবাই। নির্ঝর ফিরতে ওর থমথমে মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা আঁচ করতে চাইছিল শীলা। ইন্সপেক্টরটা যা পাকা! কোনোভাবে নির্ঝরকে ফাঁসাতে চাইছে না তো!
-“অত ভাবছিস কেন? আমি স্পটে ছিলাম বলে ঘটনাটার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ জানতে চাইলো, বললাম।”
-“ব্যস? এতক্ষণ ধরে শুধু বিবরণ দিলি?”
-“বাবাকে সাবধান করিনি কেন জানতে চাইছিল! বললাম, ভোরে যা কুয়াশা থাকে! দু’হাত দূরের কিছু দেখাই যাচ্ছিল না। ট্রেন কোন লাইনে আসছে বুঝতে পারিনি।”
-“আর কিছু?”
-“স্পট থেকে বাবার মোবাইল পেয়েছে পুলিশ। রোজই উনি মোবাইল নিয়ে হাঁটতে বেরোন কিনা, লাইন পার করার সময় ফোনে কথা বলতেন কিনা…এইসব নানা প্রশ্ন।”
-‘একটা অ্যাক্সিডেন্ট নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছে কেন কে জানে! অফিসারটাকে দেখে আমার একদম ভালো লাগেনি।”
-“ও তো ডিউটি করছে। বাবা যেহেতু পাবলিক ফিগার, তাই পুলিশ ডিপার্টমেন্ট এই ঘটনায় বেশ চাপে আছে রে। এত অল্পবয়সে বাবাকে হারানোর জন্য আমাকে সমবেদনাও জানালো। রাত হয়ে গেছে বলে তো থানার গাড়ীতে করেই বাড়ী পাঠালো।”
বিছানা ছেড়ে ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে বাগানে এল শীলা। বাড়ীর সামনে কিছুটা জায়গা জুড়ে বিভিন্ন গাছ লাগিয়েছে কাকীমা। গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা; কাকীমা খুব যত্ন করে গাছের। আজও কালকের মতই ঘন কুয়াশা চারদিকে। অল্প দূরের কিছু নজরে আসছে না। মাস দুয়েক আগে থেকে শীলার সুন্দর স্বচ্ছ হাসিখুশি জীবনের আঙিনাতেও কুয়াশা ছেয়ে রয়েছে। সুন্দর ভবিষ্যতের কোনো ছবিই আর নজরে আসছে না।
নির্ঝর না বললেও শীলা বিলক্ষণ জানে কাল পুলিশের কাছে ভালোই হুজ্জতি পোহাতে হয়েছে ওকে। একবার যখন ডেকেছে, আবারও ডাকবে নির্ঝরকে। কাল মোবাইল নিয়ে প্রশ্ন করেছে, নির্ঝর যাই উত্তর দিক না কেন, সেটা ওরা যাচাই করবেই। শীলা জানে মোবাইলের লোকেশন আর কল রেকর্ডস ঘেঁটে অনেক ক্লু জোগাড় করে পুলিশ। এতক্ষণে অফিসারটা নিশ্চ’ই সে কাজ শুরু করেও দিয়েছে। নাহ্, তদন্তের আরো ভেতরে ঢুকে পুলিশ কিছু সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর আগে ইন্সপেক্টরের সাথে শীলার দেখা হওয়াটা খুব দরকারি। নাহলে আরো একটা বড় ভুল হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে বাড়ীর বাকি লোক জেগে ওঠার আগেই বেরিয়ে পড়ল শীলা।
কোয়ার্টারের দরজা খুলে এত সকালে শীলাকে দেখে অরিত্র বেশ অবাক হল। তদন্তের কাজে সারারাত ধরে বিভিন্ন সূত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে অরিত্ররও রাতে ঘুম হয়নি। তাই স্বপ্ন যে দেখছে না এটা নিশ্চিত। ঘুম চোখে ভুল দেখার কোনো সম্ভাবনাও নেই। সত্যিই শীলা এসেছে ওর কাছে। মৃত্যুর তদন্তের কাজে ব্যস্ত না হলে সাতসকালে বাড়ীর দোরগোড়াতে এহেন সুন্দরীর দর্শন, নিজের সৌভাগ্যকে বাহবা দিত অরিত্র। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অন্যরকম। শীলা ওকে পছন্দ করে না, তাও ওর কাছে এসেছে। নিশ্চই এমন কিছু কথা বলতে যা অরিত্রর কাছে শ্রুতিমধুর হবে না। এমনিতেই কাল কল রেকর্ডস ঘেঁটে কিছু ক্লু পেয়েছে অরিত্র, সমরবাবুর মৃত্যুটা অ্যাক্সিডেন্টের সিম্পল কেস বলে আর মনে হচ্ছে না ওর। আজ নির্ঝরকে ডেকে আরেক প্রস্থ জিজ্ঞাসাবাদ করার ইচ্ছে আছে।
-“আসুন, এত সকালে কি ব্যাপার?”
-“আচ্ছা আপনারা নির্ঝরকে এত হ্যারাস করছেন কেন?” ঘরে না ঢুকে বাইরে থেকেই প্রশ্নটা করল শীলা।
-“আপনি কি এটাই জিজ্ঞেস করতে এলেন?”
-“যদি তাই হয়।” উফফ, কি জটিল মেয়ে রে বাবা। সব কথাতেই ট্যারা জবাব।
-“তাহলে বলব আমাদের কাজে আপনি মাথা গলাবেন না। শুধু এটুকু জেনে রাখুন, নির্ঝরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর্ব আজও চলবে। কিছু এভিডেন্স আমার হাতে এসেছে যা থেকে নির্ঝরকে…”
-“ভুল…বিরাট ভুল করছেন আপনি অফিসার। নির্ঝরকে জেরা করা বন্ধ করুন, ও ইনোসেন্ট!”
-“কী বলতে চান স্পষ্ট করে বলুন।” বিরক্ত হয়ে কড়া গলায় বলে উঠল অরিত্র। ওর কাজে ডিপার্টমেন্টের কোনো লোকেরই নাক গলানো পছন্দ করে না অরিত্র। আর শীলা তো বাইরের লোক। বেশী বাড়াবাড়ি করলে ভদ্রতাটাও আর বজায় রাখবে না অরিত্র।
-“অফিসার, আমি বয়ান দিতে চাই! প্লিজ…”
(৫)
কী বিচিত্র মানুষের মনের গতিপ্রকৃতি! দুর্ঘটনার পরেরদিন রাতে সমরবাবুর বাড়ী থেকে বেরোনোর সময় এই কথাটাই মাথাতে ঘুরছিল অরিত্রর। গাড়ীতে ওঠার সময় বারান্দায় দাঁড়ানো শীলার দিকে নজর গেল অরিত্রর। চাঁদের আলো শীলার মুখে এসে পড়েছে। ওই সুন্দর মুখের বিষাদমাখা হাসির আড়ালে এত কিছু লুকিয়ে রয়েছে না জানলে বিশ্বাস করা কঠিন।
-“সত্যকে কোনো কোনো সময় সামনে আসতে নেই। কিছু সত্য আছে যা আমাদের মানসিকভাবে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে যায়! অসহায়ের মত মেনে নেওয়া ছাড়া আমাদের কিছু করার থাকে না!” আজ সকালে বয়ানের শুরুতে শীলা বলেছিল কথাটা।
-“ভণিতা ছেড়ে পয়েন্টে আসুন। এইভাবে বয়ান নেওয়া যায় না, তাও আপনার অনুরোধে আমি রাজি হয়েছি।”
-“সোজা কথাই শুনুন তাহলে। ওটা অ্যাক্সিডেন্ট ছিল না, প্ল্যান করে কাকাকে মেরেছি আমি। না মেরে উপায় ছিল না, জানেন!”
-“ডিটেইল্সে বলুন।”
-“কলেজে পড়ার সময় থেকে কাকার বাড়ীতে থাকি আমি। সব ঠিকই চলছিল, আমার গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট হলে বাবা বিয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। কাকা দেখেশুনে পাত্র ঠিক করলেন। এ ব্যাপারে আমার কোনো চয়েস ছিল না, বরাবর চেয়েছি বাড়ী থেকে যাকে ঠিক করবে তাকেই ঘিরে আমার স্বপ্নের দুনিয়া সাজিয়ে নেব। ছেলেটার নাম সুদীপ, যার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। ভদ্র, অমায়িক ছেলে। বাড়ীতে জানিয়ে আমরা কয়েকবার দেখাসাক্ষাৎ করেছি। ভালোলাগা বাড়ছিল দু’তরফেই। বিয়ের আর দু-আড়াই মাস বাকি! আমার জীবনটা ছারখার করে দিল একটা দুর্ঘটনা। আমাকে রেপ্ড হতে হল।”
-“কে?” শীলার শেষ কথাটায় অরিত্রর ভেতরটা নড়ে গেলেও বাইরে নিজেকে অবিচলিত রেখে বয়ান শুনছে অরিত্র।
-“শুনলে বিশ্বাস করবেন না, তবে এই সত্যিটা আমার শরীরের প্রতিটা অংশে নির্মমভাবে খোদাই হয়ে গেছে। সন্ধ্যেবেলাতে কাকীমা ভীমদাকে নিয়ে মন্দিরে পুজো দিতে গেছিলেন। সেদিন অন্যান্যদিনের থেকে আলাদা লাগছিল কাকাকে। আমার ঘরে কাকা সচরাচর আসেন না, সেদিন এলেন। কাছে বসে অফিসে কত টেনশনে থাকতে হয় সে গল্প করতে করতে হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরে শক্তিপ্রয়োগ করতে শুরু করলেন…ঘটনাটা এতই হতবুদ্ধি করে দিল আমাকে যে আমি বুঝতেই পারছিলাম না কি করা উচিৎ। যখন পড়িমরি করে নিজেকে বাঁচাতে চাইলাম, অনেক দেরী হয়ে গেছে। কাকা আমার কচি যৌবনের স্বাদে মাতোয়ারা, পশুর শক্তি ভর করেছে তাকে। ছিঁড়েখুঁড়ে ভোগ করল আমাকে। সেই প্রথম আমার নারীত্বের সম্মান কামুক পুরুষের ভোগের আগুনে পুড়ল, তবে সেটাই শেষ ছিল না। সুযোগের অভাব হত না কাকার, আর তার পুরোপুরি ফায়দা তুলতো সে। কাউকে বলতে পারতাম না, কেউ আমার কথা বিশ্বাসই করবে না জানতাম। এমনকি নিজের বাবা-মাও না। অনেক ভেবে সমস্ত সংকোচ দূরে সরিয়ে সুদীপকে সব জানালাম। ও হেসেই উড়িয়ে দিল। এসব নাকি আমার মনের কল্পনা। টিভিতে ক্রাইম থ্রিলার দেখে দেখে আমার মাথাটাই গেছে। আমি অবাক হলাম সুদীপের আচরণে, তবে আরো অবাক হওয়ার বাকি ছিল আমার।” দম নিতে থামলো শীলা। অরিত্র চুপ, সময় দিচ্ছে শীলাকে।
-“কাকা আমাকে ভালো করে বুঝিয়ে দিল যে সুদীপ ওর হাতের পুতুল ছাড়া কিছুই না! কাকাকে কোনো কাজেই বাঁধা দেবে না সে। বিয়ের পরেও আমার মুক্তি নেই। এভাবেই কাকার ভোগ লালসা চরিতার্থ করে যেতে হবে, যতদিন সে চাইবে। মানসিক, শারীরিকভাবে আমি যখন প্রচন্ড বিধ্বস্ত, সেইসময় একদিন নির্ঝরের ফোন এল! ও তো আমার বন্ধু, ওকে জানাবো ভাবলাম। কিন্তু কাকা সামনে ছিল বলে কিছু বলা হল না। তবে ফোনে আমার কান্না শুনে নির্ঝর পরেরদিন সকালে আবার ফোন করল। সব খুলে বললাম ওকে। নির্ঝর কিন্তু আমাকে বিশ্বাস করল অফিসার। দিদিকে বাঁচাতে নিজের বাবাকে চরম শাস্তি দেওয়ার প্ল্যান করল নির্ঝর!”
সকালবেলায় শীলার বয়ানের পরে নির্ঝর আর সুদীপকে ডেকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে অরিত্র। সুদীপের মত কাপুরুষকে দেখে অরিত্রর ইচ্ছা করছিল মেরে ওর মেরুদণ্ডটা সোজা করে দেয়। সুদীপের কাছে একটু সহমর্মিতা আর ভরসা পেলে শীলাকে নিশ্চই ক্রাইমের রাস্তায় যেতে হত না।
নির্ঝর আজ স্বীকার করেছে সব। জিগ্স’ পাজ্লের সবকিছু মিলে গেলেও একটা খটকা থেকে গেছে অরিত্রর মনে। কল রেকর্ডস বলছে, ঠিক যেসময় অ্যাক্সিডেন্ট হয় ফোন অন ছিল সমরের। পৌনে ছটার আশেপাশে একটা এক্সপ্রেস ট্রেন যায় এই শহরতলীর ওপর দিয়ে। ওই ট্রেনটাকেই টার্গেট করেছিল নির্ঝর। ঘটনার দুদিন আগে থেকে জগিং করার নামে বেরিয়ে ফেরার পথে বাবার সাথেই রেললাইন পার হত নির্ঝর। সেদিন ট্রেন আসার অল্প আগে নির্ঝর কাউকে ফোনে রিং করেছিল। তারপরেই সেই নাম্বার থেকেই সমরের কাছে ফোন আসে। ফোনে কথা বলতে ব্যস্ত থাকায় সমর ট্রেনের আওয়াজ খেয়াল করেননি। অরিত্র বুঝতে পারছিল, বোনের ইজ্জৎ বাঁচাতে ভাই বাবাকে প্ল্যান করে ট্রেনের তলায় ফেলে সেই মার্ডারকে অ্যাক্সিডেন্ট বলে চালাতে চেয়েছে। কিন্তু এই পুরো ব্যাপারটায় শীলা ছাড়া আরো একজনের ভূমিকাও রয়েছে। সে ব্যাপারে নির্ঝর কিছু ভাঙছে না।
একে বাড়ী ভর্তি লোকজন, তারওপর আশেপাশের বাড়ী থেকে উৎসাহী লোকেরাও ভিড় জমিয়েছে। সবার সামনে ব্যাপারটা আলোচনা করতে চাইছিল না অরিত্র। শীলার যা ক্ষতি হওয়ার তো হয়েইছে, সব জানাজানি হলে এই সমাজে আর মুখ দেখানোর মত জায়গাতেও থাকবে না সে। তবে সমরবাবুর স্ত্রী কল্পনাদেবীকে পুরো ব্যাপারটা জানানো জরুরী বলে ওর ঘরে বসেই কথাবার্তা শুরু করল অরিত্র।
-“শীলার বয়ান আর আমাদের তদন্তে পাওয়া যাবতীয় তথ্য মিলে গেছে ম্যাডাম। সমরবাবু অ্যাক্সিডেন্টে মারা যাননি! প্ল্যান করে যে লাইন দিয়ে ওইসময় এক্সপ্রেস ট্রেন যায়, সেই লাইনেই রাখা হয়েছিল সমরবাবুকে। ট্রেন আসার সময় ওনাকে ফোনে ব্যস্ত করে রাখা হয় যাতে উনি গাড়ীর আওয়াজ শুনতে না পান। একটাই খটকা, ট্রেন আসার মুহূর্তে ওনাকে ফোনটা কে করেছিল?” কল্পনাদেবীর মত ব্যক্তিত্বময়ী মহিলাকে তাঁর স্বামীর কুকীর্তির কথা শোনাতে একটু ইতস্তত করছিল অরিত্র।
-“আমি।” কল্পনাদেবীর শীতল কঠিন কণ্ঠস্বরে চমকে গেল অরিত্র। “আপনি আরো একটু চেষ্টা করলেই জানতে পেরে যেতেন। নির্ঝর গাড়ী আসার খবর পেয়ে আমাকে রিং করে সিগন্যাল দেয়। তারপরে আমি ফোন করি সমরকে। মর্নিং ওয়াকে বেরিয়ে একমাত্র আমার ফোন ছাড়া আর কারো ফোন ধরত না সমর।”
-“আপনি সব জানতেন?”
-“হ্যাঁ, শীলা ফোনে নির্ঝরকে ওর দুর্দশার কথা বলছিল যখন, শুনে ফেলি। তারপরে শীলাকে জিজ্ঞাসা করতেই…” কল্পনাদেবীর শান্ত সমাহিত মুখের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল অরিত্র।
গাড়ীতে থানায় ফেরার পথে অরিত্র ভাবছিল, সব খটকাই তো দূর হল। তবু ঠিক খুশি হতে পারছে না অরিত্র। একটু পরেই বসকে কেসের পুরো রিপোর্ট দিতে হবে। রিং হচ্ছে, বসেরই ফোন।
-“কেসের কী খবর অরিত্র?”
-“কেস ক্লোজ্ড। ওটা দুর্ঘটনাই, ঘটনাস্থলে নির্ঝরের উপস্থিতি নেহাত-ই কো-ইন্সিডেন্স! রেগুলার জগিং করে ওইসময় ও ফিরত বাড়ীতে। আমি থানায় পৌঁছে আপনাকে রিপোর্ট পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
ঠিকই বলেছিল শীলা। সব সত্যকে সামনে আনতে নেই। মেয়েটার অতীতের মত ভবিষ্যৎও কুয়াশায় ঢেকে দিতে চায় না অরিত্র। কুয়াশার সমস্ত স্তর ভেদ করে যে আলো, সেই আলোর ঠিকানাই হয়ে উঠতে পারে কিনা ভাবছিল অরিত্র।
Tags: অংশু প্রতিম দে, কুয়াশা, গল্প
email:galpersamay@gmail.com
Titas Mouni De on October 29, 2020
বেশ টানটান উপভোগ্য লেখা
Susmita De on October 29, 2020
বেশ ভালো লাগল। এই দুনিয়ায় কত রকমের যে মানুষ আছে তা কল্পনাও করা যায় না। গল্পটিতে যেমন শীলার কাকার মত অমানুষ আছে আবার শীলার কাকিমা এবং ভাইএর মত মানুষও আছে। এই নিয়েই তো দুনিয়া। বাস্তব গল্প, ভালো গল্প।
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।