১
ইস্যু ঘুরতে দেওয়া যাবে না। বার্নিং টপিককে আরও বার্নিং করে ধরে রাখতে হবে। ফোনের ওপারের কথা শুনতে শুনতে রাস্তার মোড়ের দোকান থেকে গোল্ড ফ্লেকটায় অগ্নিসংযোগ করল পঙ্কজ। তারপর দোকানের পেছনের দিকের ছায়াঘেরা বাবলা গাছটার নিচে বেঞ্চি পাতা সেফটি জোনে ঢুকে বাঁ হাতটা মোবাইলের নীচে ধরে ,কথা আড়াল করে, নিচু স্বরে বলতে শুরু করল – আরে শোনো শোনো,রোহিতদা ;শুনতে পাচ্ছি সবই। ফোন স্পীকারে চলে গিয়েছিল। এই চাঁপাতলার দিকটা হেভি সেনসিটিভ। খোঁচর ভর্তি। তাই একটু সরে এলাম, বলো এবার।
ওপারের শীতল কন্ঠ বলছে –শোন, পাবলিক কিন্তু ইস্যু খেয়ে গেছে। লোক জমায়েত দেখছিস। এমনিতেই মানুষ খেপে আছে। শুধু লিডারশিপ ঠিকঠাক দিতে হবে।
পঙ্কজ গলা নামাল– সবাই তো ঝোল টানছে গো। প্রগতিশীলদের সায়ন্তনী, জাতীয়তাবাদীদের রুচিরা সবাই মঞ্চ নিয়ে ফেলছে। কী করি বলতো?
ওটা কিছুতেই করা যাবে না। ভেতরে লোক ঢোকা। তুই এক কাজ কর, আমাদের বঙ্কিমদার মেয়ে বহ্নিশিখাকে নামা। মেয়টা বলে ভালো, অধ্যাপিকা, রূপেও বেশ টনকো, গুডি গার্ল ইমেজ আছে। খাবে পাবলিক। কথা বল।
কারেক্ট। সব থেকে বড় বহ্নির ওপর কোনও দলের ছাপ নেই।
তোর তো নিজের লোক শুনি। আজকের মিটিং এ তোল। হিসেব ওল্টাতেই হবে। আন্দোলনের রাশ আমাদের হাতে রাখতেই হবে। মনে রাখিস। আর আখেরে তোরই লাভ।
তুমি না যা তা।
আমি যা তা। আচ্ছা বেশ , এই যে গত পনের দিন ধরে টানা অবরোধ কর্মসূচি চলছে নানা জায়গাতে। সেখান থেকে প্রতিদিন বহ্নি, তোর স্কুটিতে চেপে বাড়ি ফিরছে কেন? ওর সদ্য বিবাহিত বর সুগত কোথায় গেল?
তোমায় কে বলল?
কেন ডি- এন- এস এফ(গনতান্ত্রিক জাতীয় ধর্মনিরপেক্ষ ফোরাম) র নরোত্তম।
সে কি! ওর সাথে কথা বললে! ওদের বিরুদ্ধেই তো আমাদের এই এত বড় আন্দোলন চলছে।
তাতে কি!
২
ওফফ্, সায়ন্তনী, তোকে তো ফোনে পাওয়াই যায় না। লাইক 2k ছাড়িয়েছে বলে আমাদের ফোন ধরবিই না। শোন না, কাল কিন্তু তোকে ব্ল্যাক জামদানিটাতে হেভি মানিয়েছিল। সব্বাই বলল। এমনকি তোমার প্রাণের বহ্নির বর সুগতদাও। -এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে থামল রুচিরা।
ধ্যাৎ, খালি বাজে কথা। এই গরমে পোষায় নাকি এসব শাড়ি। এরপর তো আবার শুনছি ,লিডারশিপ মহামিছিলের ডাক দেবে। আবার রোহিতবাবুদের নাগরিক মঞ্চের লোকেরাও নাকি আসবে শুনছি।
আমিও তাই শুনলাম।
কিন্তু রুচিরা, একটা জিনিস বুঝছি না, বহ্নিশিখাকে কাল থেকে রোহিতদারা গুঁজছে কেন বল তো?
ও,বাবা! ডুবে ডুবে জল খাও, আর এটুকু খবর রাখো না, তোমার প্রাণের সুগতদার নতুনবউ রেগুলার ওই নেকুনায়ক রোহিত- সমাজপতির ডান হাত সেই ঢ্যামনা ব্যাটা পঙ্কজ পুরকায়স্থর স্কুটির সওয়ারী। বলো মামণি, এরপর তোমাদের দলের সুগতদা কি বোঝাতে পারবে বিপ্লব কোথায় হয়?
অ্যাকচুয়ালি ঠিক কারা লিড দিচ্ছে এত বড় আন্দোলনটা,রুচিরা?
আরে ছাড় না। তোর ফেসবুক লাইক বাড়ছে কিনা দ্যাখ। রেগুলার এত বড় টপিকের কমেন্ট আপডেট পড়ছে। হু হু করে ভিউয়ার বাড়ছে। আর এখন আমরা ছাড়া বলার মতন লোক কাউকে দেখেছিস ওখানে। সত্যি বলতে কি,বেশিরভাগই ক্যামন যেন ক্যাবলা ,ক্যাবলা, স্লাইট ক্যালানে টাইপের। ভাল ইংরেজি জানে কটা লোক বল তো?
এটা কিন্তু তুই ঠিকই বলেছিস।
শোন ওসব ছাড়। বহ্নি ঢুকলে না হাওয়া খুলে নেবে। যা মেয়ে তো জানো না। দেখতে ওরকম নেকুপুষু, একখানা চিজ। আর ওর ওই লাভার পঙ্কজ। হাড়ে হারামজাদা। আমাদের দলের যুথিকা দি আজও বলল– খেলা জমে গেছে, রাশ ছাড়বি না। টেনে রাখ, ঘোলা জলে মাছ ধরতেই হবে, রুচিরা।
ওসব বিনোদবাবু আর যুথিকাদিদের মতন ওপরতলার নেতাদের ব্যাপার। দ্যাখ রুচিরা, এই গরমে আজ শাড়ি পরে যাব না কিন্ত ।সালোয়ার ইজ দ্য বেস্ট।
ব্ল্যাক পরিস কিন্তু। আইদার ব্ল্যাক অর রেড। নাথিং এলস্। সুগতদারা যদি লিড দেয় রেডটাই প্রেফার করবে। খুব বোল্ড কালার না। বহ্নির নাকি রেড অ্যালার্জি ! বেচারা!! সাধে কি তোর প্রতি সুগত এত ফিদা!!
ধ্যৎ, তুই খুব অসভ্য, জানিস তো।
সেই জন্যই তো ,তোর বরকে টুপি পরিয়ে তোদের জননেতা সুগতদার সাথে আলাপ করিয়েছিলাম।
রাগ করছিস কেন? শোন না, আমি চাই বহ্নি ওদের নেতৃত্ব দিক।
আর তুমি কি দেখবে সুন্দরী, সুগতদার দল না সংসার?
৩
শোনো গুরু। টাকুদা ফোন করেছিল। বাংলার গ্লাসটা নামিয়ে ফোন রেখে পা ছড়িয়ে বসল বঙ্কা। উলটো দিকে মদন। এলাকার ডন হলেও নামে এবং কাজেও বেশ ক্যাবলা।
কী ব্যাপার বলো তো গুরু। হঠাৎ হৈচৈ বেধে গেল, একটার পর একটা মিছিল। গরমেন্ট নাকি উলটে যাবে।
শুনছি তো তাইরে মদন ।টাকুদা বলল হালকা মার। থানা কোনও রিস্ক নেবে না।
বলে কী রে থানার টাকুদা। মদন রঙেই আছে – বললাম, – কেন দাদা এখন কোনও দায়িত্ব নেবে না? সারা বছর টাকা যোগাব, আর টেনশনের সময় আমাদের দেখবে না?
গেলাসে মাল ঢালছে বঙ্কা – আরে আমার ফোন তো পরশু থেকে বন্ধ ছিল। রিচার্জ ছিল না। কাল রাত্তিরে বউ টাকা দিয়ে চার্জ করাতেই দেখি একসাথে পি এ-র(প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের) সুগতদা, এস- এন পি (সেকুলার ন্যাশনালিস্ট পার্টির বিনোদার পরপর ফোন।
আরে শালা কি কারবার দ্যাখ – একচুমুকে গলায় বাংলার গ্লাস উল্টে দিয়ে সশব্দে গ্লাস নামিয়ে ডান হাতের দুআঙুলে ঠোঁটের কোণের মাল- মাখা থুতুটুকু মুছে বাঁ দিকের বুক পকেট থেকে সিগ্রেটের প্যাকেট বের করতে করতে বলল মদন – সুগতদা আর বিনোদদা রাস্তায় মিটিং করছিল। আমার বউ কাজ থেকে ফিরছিল।অনেক কথা জিজ্ঞাসা করেছে।
কি কি জানতে চেয়েছে?
দুজনেরই একইকথা। তোদের কী খবর বল? কে কে ফোন করেছে? এইসব।
কী বলেছে?
আমি জানি না, ও জানে বলে পাশ কাটিয়েছে। তোকে কি কি জিগ্গেস করল রে বঙ্কা?
আমি শালা ফোন শুনেই বুঝেছি, কেস জন্ডিস। হ্যালো হ্যালো শুনতে পাচ্ছি না বলে ফোন কেটে দিয়েছি।
শোন মদন আজ থেকে সব সিম খুলে নে। আর এলাকা থেকে টাকা তোলা বন্ধ। পারলে বউকে নিয়ে স্টেটের বাইরে ঘুরে আয়, আমাকে কালীকিঙ্করদাও ফোন করেছিল,একই পথ বাতলেছে।
ঠিক। বউও বলছিল বিহারে ওর মাসির বাড়ি যাবে।
তাই ভালো, চলে যা।এ শালার ঝামেলা না মিটলে কোনও মালামাল অফার নেই গুরু।
একদম হালকা হয় যা। থানার বিষ্ণুদা, টাকুদা সব্বাই তাই বলল। কারা আসছে দেখে হিসসা ঠিক করে কাজ চালু হবে। আপাতত নো মস্তানি, নো তোলাবাজি।
হঠাৎ কেন এমন হল বল তো?
পাক্কা গাণ্ডু রয়ে গেলি রে,মদন,দেখছিস না, এখন আন্দোলন চলছে।
৪
মনসাতলা চৌরাস্তা যাবে না দাদা। তিন ঘন্টা ধরে অবরোধ চলছে। দেখছেন না কী অবস্থা রাজ্যজুড়ে। সুগতবাবু, বিনোদবাবুদের মিটিং চলছে। হেঁটে বেরিয়ে যান। অটোওলার কথা শুনে রেগে গেলেন বর্ষীয়ান অধ্যাপক শশাঙ্ক দত্ত।
আন্দোলনের ছিড়িছাঁদ আছে! রেগুলার এইরকম চললে পেশেন্ট পার্টির কী হবে বলোতো?
ডাক্তার দেখানোর ছিল বুঝি?
অবশ্যই। হল না, ফিরেই যাই। জানি না বাবা, এই সুগত ,বিনোদ আর রোহিতদের মধ্যেই কারা কখন কবে যে একটু শান্তি দেবে এই আন্দোলনে ইতি টেনে কে জানে? সাধারণ মানুষ কবে যে একজন অসাধারণ নেতা পাবে —একটু সাধারণভাবে বাঁচার জন্য কে জানে।
৫
পরন্তপ, শোন – একদম কারেক্ট সময় এটাই। এর আগে এইরকম ব্রহ্মমূহুর্ত আমরা কখনও পাই নি। পরমাণু বোমা বিস্ফোরণের সময়ে একবার পেয়েছিলাম।সেবার আমাদের ‘সাথী’ পত্রিকা কত বিক্রি হয়েছিল মনে আছে? এবারের মাস মুভমেন্টটা একদম বার্নিং টপিক হয়ে গেছে। আজ আন্দোলন এক মাস হয়ে গেল। অন্য চেহারা নিচ্ছে ক্রমশ।
বিক্রি হবে বলছিস?
আলবাৎ হবে। কারা লিখেছে দেখ। বঙ্কিম রায়, ঋজুরেখ দত্ত, প্রাণগোবিন্দ রায় , নরহরি সমাদ্দার, সুখহরণ পোদ্দার, চিন্তাহরণ রায়। সব একেকজন বাঘা বাঘা চিন্তাবিদ।
বুঝলাম। সব নানা দলের নেতা।
ওটাই তো খাবে। রঙ বেচে কী হবে। সবাই রঙিন।
পরিচয় লিপি কী দেব?
সমাজকর্মী। সোসাল অ্যাক্টিভিস্ট।
সবাই?কিন্ত এরা তো রাজনৈতিক কর্মী!
এখন কেউ নিজের দল দেখিয়ে লিখতে চায় না, লেখে সমাজকর্মী।
এতে কী হয়?
বিশ্বাসের ওজন বেড়ে যায়।
বাব্বা। এতো দারুণ ব্যবস্থা। ঘরে ঢুকলেন প্রবীণ ধর্ম নিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী নেতা রুদ্রকিংশুক বটব্যাল। পরন্তাপের দাদু।
আমাদের সময় বিশ্বাসের ওজন বাড়াতে সমাজকর্মীর তকমা দিতে বা নিতে হত না। সমাজ জানত আমরা কে। আর কতটা কাজ করেছি। আচ্ছা বল তো, এই লোকগুলো এই যে লিখছে সব নানা তত্ত্বকথা, এরা নিজেরা এই কাজ কতটা করেছে? শুধু আইডিয়া সেল। গান্ধীজী তো নিজে যা করতেন, সেসবই আইডিয়া হয়ে যেত। উলটো হচ্ছে কেন?
ওগুলো ব্যাকডেটেড পলিসি দাদু। গ্ল্যামারটাই এখন সব গো। যত ছোট দলই করো পরিচয়ে বিরাট হবে। নইলে ভাও পাবেনা।
বুঝলাম, এক্সিউটিভ, অ্যাক্টিভিস্ট তাই এত ধাক্কামারা শব্দ।
না এদের অনেকেই নানা জায়গায় কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের কাজ করছেন। কন্ট্রিবিউশন আছে, নানা এলাকার ডেভেলপমেন্টে।
নিজের এলাকায় লোকে চেনে?
ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে এরা ফিগার।
বাহ্। আপন গ্রামে না রচি গৃহ বিশ্বে মিলায়ে যাবে। তা তোদের সংখ্যার নাম কি?
সমাজ বিপ্লব, গণ আন্দোলন – এক নতুন দিশা।
কত ছাপাবি?
এই তিনশো, লাগলে আরও দুশো।
বাহ্ দুশো লোক পড়লেই গণ আন্দোলন গড়ে উঠবে?
কেন? একটা ভাবনা তো হল।
সে তো বটেই। আমিও তো অনেককিছু ভাবি মানুষ ও সমাজ নিয়ে।
প্লাস একটা পাবলিসিটি হলো তো দাদু।
এইটা বল। এটাই আসল, বই লিখলে পাবলিসিটি হয়। – যে কোনও আন্দোলনে থিঙ্কাররা আসল শক্তি – এটা তুমি মানবে তো দাদু? আমাদের রোহিতদাদের দ্যাখো। তোমাদের যুগের ওসব যুথিকা-বিনোদ -দের দিয়ে কিস্যু হবে না। আর এই ধর্মের তাস খেলা ইউ এন পির কালীকিঙ্কর – আরো বোগাস। আর পি এ-র সুগতদের তো খুঁজে পাওয়া যাবে না গো!
তাই নতুন থিঙ্কার হতে বই প্রকাশ। কিন্তু সমাজের বর্তমান পরিস্থিতি কীভাবে বদলাবে? এই মানসিক বিপ্লব করে? না অ্যাকচুয়াল অ্যাক্টিভিস্ট হয়ে?
কূট যুক্তিতে এর উত্তর কখনও খুঁজবে না দাদু ।
ঠিক, দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন রুদ্রকিংশুক – আমরা রিয়েল অ্যাকশান চেয়েছি। মানসিক বিপ্লব বুঝি নি। তাই মানসিক বিপ্লবীর মতো শুধুই আন্দোলন এর শাঁস খেতে শখের সমাজকর্মী হতে পারিনি রে বাবা।তাই আর পপুলার অ্যাক্টিভিস্ট তকমা পাওয়া হল না কখনও।
৬
শুনছি, বলেন নরোত্তমদা?
বোকাচোদা, মিডিয়া মারাচ্ছিস, ওখানে তোকে কেন বসানো হয়েছে জানিস।
তোতলাচ্ছে নবীন সাংবাদিক রণবীর জোয়ারদার।- না মানে দাদা বুঝুন, ইস্যু সেনসিটিভ হয়ে গেছে। মুভমেন্ট মাস হয়ে গেছে। একটু ধৈর্য ধরতে হবে। পাবলিককে এখন কিছুই বোঝানো কষ্টকর হবে।
তোদের প্রতি মাসে এতগুলো পয়সা গুনছি কেন?
দাদা, পাবলিক অন্য চ্যানেলের কথাও শুনছেতো? সেখানে আমরা শুধুই আপনাদের পক্ষে বললে মুশকিল হবে। টি আর পি র কথাও তো মাথায় রাখতে হবে!
শুয়োরের বাচ্চা! সেই জন্যই তুমি রোহিত, সুগত, বিনোদ, কালীকিঙ্কর দের চ্যানেলে বসাচ্ছো। আর আমাদের ভুলে যাচ্ছ।
সবাই বসাচ্ছে। আর আপনাদের বসালে টি আর পি কমছে।
টি আর পি না পেছনে ঢুকিয়ে দেব।আমার পয়সায় খাবে। আর আমাকে বাদ দেবে। এই বালের আন্দোলনের নামে ক্ষমতা গেলে খাবি কিরে গান্ডু!
মিথ্যেই রাগ করছেন। কিস্যু হবে না।
মানে?
বিজনেস তো করতে হবে আপনাকে। এত টাকা কামালেন। ব্যাক ফুটে চলে যান। বহ্নির সাথে কথা হয়েছে। রোহিত সেটিং আছে। আর ওদিকে বুড়ো বিনোদদার প্রাণের রুচিরা।
কথা হয়েছে?
একদম।ফুল সেট ।
বিউটিফুল।
নরোত্তমদা, একটাই কথা মাথায় রাখুন। আন্দোলন চলাকালীন আপনি কিন্তু একজন বোবামানুষ।
৭
শোনো কালীকিঙ্কর দা, ফোন করছি একটা বিশেষ কারণে।
বলো না রোহিত, তোমার ফোনের অপেক্ষা করছিলাম।
পরিস্থিতি যেদিকে তোমরা অ্যাডভান্টেজে আছো। সুগতর সাথে কথা হয়েছে। এখনই চেপে দাও নরোত্তমদের। ওরা না পারলে গোষ্ঠী সংঘর্ষ লাগাবে।
আমি দেখে নিতে পারি। তোমরা অ্যাক্টিভিস্ট, আমাদের মতন উগ্র জাতীয়তাবাদীদের (ইউ- এন পি) সমর্থন দেবে কী করে? লোকেদের বোঝাবে কী করে?
সব হবে। রাজনীতিতে এখন কোনও রঙ হয় না। সবাই লাল, সবাই সবুজ, সবাই গেরুয়া।
বুঝলাম।
তোমরা ক্ষমতায় এলে আমাদের নীতির কী হবে গো রোহিত? তোমাদের নীতির?
সব ঠিক করতে হবে বসে। বসতে হবে, কমন এজেন্ডা বের করা যাবে। নরোত্তমদের পাবলিক চাইছে না। কমন মিনিমাম প্রোগ্রাম।
বেশ। কথা বলছি ওপরতলার সাথে। আসলে সম্পূর্ণ অপোজিট পোল এক হচ্ছে সেটাই,
বলুন, বৃহত্তম গণতান্ত্রিক স্বার্থে।
দারুণ বলেছ কিন্তু।
শুধু একটাই অনুরোধ, আমাদের যারা জেলে আছে ছাড়তে হবে।
কাদের ভরতে হবে, নরোত্তমদের?
কারেক্ট।
ওরা ছেড়ে দেবে ভাবছ?
নরোত্তমদের ওপরতলায় হাত দেবে কেন? নীচুতলায় হাত দাও। ভরতে থাকো। ওপরতলা বামাল তোমাদের হয়ে যাবে। তোমরা সেন্ট্রাল ফোর্স। অ্যাডভানটেজ নাও।
আর তোমাদের সমাজ বদলের বাণী?
নীরবে নিভৃতে কাঁদে।
অসাধারণ।
আসলে কী জানেন, অনেক ভেবে আমরা দেখেছি, মানে আমি, রতন, সুতনু – দেখুন পাওয়ার ইক্যুয়াল টু পলিটিক্স অ্যান্ড পলিটিক্স ইক্যুয়াল টু পাওয়ার। অ্যান্ড অল পাওয়ার ইস কালার ব্লাইন্ড। ইউ ক্যান ইউস ইওর পাওয়ার ফর সার্টেন পিরিওড ফর ওয়েলফেয়ার অফ দ্য সোসাইটি। আপনি পাওয়ারকে মিস ইউসকারীদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছেন। নরোত্তমরা ইডিয়েট। পাওয়ার ধরে রাখার ক্ষমতা জানে না।
শোনো,সবার সেটাথাকে না – কারো কারো থাকে।
জানো রোহিত, আমার দাদামশাই ছিলেন খুব বড় সাধক। উনি বলতেন, ভগবান ভগবান করে মানুষ, হাতের সামনে ভগবান এসে গেলে সামলাতে পারবে না। গুরু সেইজন্য সবাইকে সব পাওয়ার দেন না। থাক গে, এসব তোমরা তো মানবে না। তাই তোমার পদ্ধতিতেই জিজ্ঞাসা করি। এই যে আমাদের সাথে সমঝোতায় তোমরা আসতে চাইছো, সুগত, বিনোদরা না হয় মানছে, তোমার অনুগামীদের কী বোঝাবে?
খুব সোজা, আলাদা প্ল্যাটফর্ম হবে। তাতে সবাই এককাট্টা নরোত্তমদের গণতান্ত্রিক মোর্চা দূর হটাও। বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্র স্বার্থ দূরে সরানো হল।
বাহ্, আসলে আমি পুরনো দিনের মানুষ। এত আধুনিক কূটনীতি বুঝি কম। এটুকু বুঝলাম – পাওয়ার বা শক্তির প্রয়োজনে রাজনৈতিক বিশ্বাস ক্ষুদ্র হয়ে যেতে পারে। এটাই কুটনৈতিক শর্ত।
এত কূট যুক্তিতে যাবেন না। কাজ করতে পারবেন না। রাজনীতি মানেই কূটনীতি। প্লেন অ্যান্ড সিম্পল।
আর যারা লড়ল এতদিন ধরে।
সব্বাই অ্যাক্টিভিস্ট। আমাদের এবং আপনাদের সব্বাই। মাস মুভমেন্ট অ্যাক্টিভিস্ট।
হেসে ফেললেন কালীকিঙ্কর – আর আমরা দ্য গ্রেট লিডারস্ অফ বোথ পোল?
মিস্টি হাসছে রোহিত – কেন? দ্য গ্রেট প্যাসিভ ডিক্টেটরস্।
[ বানানবিধি লেখকের নিজস্ব]
Tags: Debasis Majumdar, Galper Samay, short story, অ্যাক্টিভিস্ট, গল্প, দেবাশিস মজুমদার
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।