সন্ধ্যার রুটিন রাউন্ডে এসে ড. পারিজাত লাহিড়ী শুনলেন একটি স্পেশাল কেবিনে কেন্দ্রীয় সরকারের একজন বিশেষ অতিথি ভর্তি হয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ব্যাপার, তাই গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে। আসল নামধাম কিছু নথিবদ্ধ হয় নি, উপরমহলের নির্দেশে।
শহরের নামকরা মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালের এই বিশেষ কেবিন যেটা সচরাচর ভি আই পি দের জন্য বরাদ্দ থাকে সেই ঘরটায় ঢুকতেই ভূত দেখার মত চমকে উঠলেন পারিজাত। নিশ্চিন্ত মনে টিভি দেখছেন অরিজিত ভদ্র। কোনো নার্স নেই আশে পাশে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে নীরক্ত মুখে ঘামের বিন্দু দেখা দিল পারিজাতের। হাল্কা হেসে অরিজিত বললেন,
“ওয়েলকাম ড. লাহিড়ী, অনেকক্ষণ অপেক্ষা করালেন”।
ঘাম মুছে কম্পিত গলায় পারিজাত বলেন “আপনি? কি হয়েছে আপনার?”
“কিছুই না, একটু চেস্ট পেইনের অভিনয় করে একটা ফলস ইসিজি করাতে হল” মৃদু হাসির সাথে জবাব আসে।
ফোন বা ইমেইল এ তো এসব কথাবার্তা বলা যায় না। আর করলেই আপনি কি জবাব দিতেন?”
ঘাড় ঘুরিয়ে রিমোট এর বাটন টিপে টিভিটা অফ করেন অরিজিত।
চোখের সামনে অন্ধকার নেমে আসে ড. লাহিড়ীর। অসুস্থ বোধ করতে থাকেন। যে কালো অতীত কে রোজ পেছনে ফেলে আসার চেষ্টা করেন তিনি, যে অভিশপ্ত মুহুর্তগুলোকে ভুলতে চান সেটাই আবার একেবারে মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে।
খুব কষ্ট করে বলেন “আমি আমার অতীত কে ভুলে একটা নতুন জীবন শুরু করেছি অরিজিত বাবু। আমাকে ক্ষমা করবেন, আমি আপনার হয়ে আর ও কাজ করতে পারবোনা।”
ঠোঁটে আঙুল চেপে অরিজিত বলেন, “উহুঁ সব ডিটেলস এখানে নয়, দেওয়ালের ও কান আছে। কাল আপনার বাড়ি ঠিক চারটেয় দেখা হচ্ছে। ফাঁকা থাকবেন ও বাড়ি ফাঁকা রাখবেন, প্লিজ। এত নামী ডাক্তার এই ঘরে বেশিক্ষণ থাকলে সন্দেহ হতে পারে, যান আপনার রাউন্ড শেষ করে চলে যান।”
“কিছু একটা সাধারণ ওষুধ প্রেসক্রাইব করে দিয়ে যান। আর হ্যাঁ, রাতে পথ্য হিসেবে ননভেজ এ আপত্তি করবেন না প্লিজ। আমার আবার নিরামিষ একদম চলে না।”
পারিজাত বুঝতে পারেন না কে ঠিক প্রেসক্রিপসন দিচ্ছে এখানে। ঘাড় নেড়ে নিরুত্তরে দরজার দিকে এগোন তিনি।
পিছু ডাকেন অরিজিত “আর হ্যাঁ, আমাকে আপনার ওই স্পেশাল ইঞ্জেকশন টা দেবেন না প্লিজ!”
জ্বলন্ত চোখে তাকান ড. লাহিড়ী।
“সরি, ব্যাড জোক, গুডনাইট ডক্টর”, কম্বলে মুখ ঢাকেন অরিজিত।
রাত্রে ঘুম আসে না পারিজাতের। ওয়াশ বেসিনে বারবার মুখ ধুতে গিয়ে প্রতিচ্ছবি টাকে কেমন অচেনা মনে হয়। এটাই কি সব থেকে বড় শত্রু তাঁর? একটা দুর্ঘটনা এভাবে তাঁর সমস্ত জীবন কে শেষ করে দেবে কোনোদিন ভাবতে পারেন নি। আজ অরিজিত কে দেখে চমকে উঠলেও প্রতিটি দিন, প্রতিটি মুহুর্ত তিনি তো এই অশুভ ক্ষণের আশংকাতেই কাটিয়েছেন।
উফফ, মাথার রগ দপদপ করতে থাকে, ঘুমের ওষুধ কোনো কাজ দেবে না আজ। একটা এক্সপেরিমেন্ট, এক দুর্মর অসুখের জীবনদায়ী প্রতিষেধক যা তাঁকে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে দিতে পারত তার কি ভয়ংকর পরিণতি হলো। কিছুটা গাফিলতি আর কিছুটা দুর্ভাগ্য আজ এক সর্বনাশা পরিণামের দিকে ঠেলে দিয়েছে তাঁকে।
চোরাবালি গ্রাস করছে, বাঁচবার উপায় জানা নেই।
ঠিক বিকেল চারটেয় কথামত কলিংবেল বাজলো।
কায়দা করে নমিতা আর ছেলে কে নমিতার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন পারিজাত। বাড়ি ফাঁকা, শুধু বুড়ো মালিটা বাগানে কাজ করছে। অন্য চাকরবাকর দের ছুটি আজ।
“আমি আপনাকে ক্রিসমাস বা নিউ ইয়ার এর আগাম শুভেচ্ছা জানাতে কলকাতা আসি নি সেটা নিশ্চয় বলার অপেক্ষা রাখে না ড. লাহিড়ী”
“তাহলে?” উত্তর জানা থাকা সত্বেও শুকনো গলায় প্রশ্নটা ছুঁড়ে দেন পারিজাত।
“আপনার সাহায্য চাই ড. লাহিড়ী, ঠিক ছ বছর আগের মত”। গলায় একটু মিনতির সুর অরিজিতের।
“ইম্পসিবল, এ হতে পারে না, আমি কাল সারারাত ভেবে দেখেছি, আমার পক্ষে কোনোভবেই আপনাকে সাহায্য করা সম্ভব নয়”।
“আট বছর আগের সেই দিন টা এত সহজে ভুলে গেলেন ডাক্তার বাবু”?
তাঁর অন্ধকারময় অতীত ফের সেই প্রশ্নের মুখে এনে ফেলছে।
“আপনি এভাবে আমাকে বারবার ব্ল্যাকমেল করতে পারেন না, অরিজিত বাবু”। চাপা চিৎকার বেরিয়ে আসে ড. লাহিড়ীর কন্ঠস্বরে।
“আমি আপনাকে ব্ল্যাকমেল করছি না শুধু আপনার দায়বদ্ধতা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি” – শান্ত গলায় বলেন অরিজিত।
“কিসের দায়বদ্ধতা, হ্যাঁ? কিসের দায়বদ্ধতা?”
দৃশ্য গুলো ফ্ল্যাশব্যাকের মত চোখের সামনে ভাসতে থাকে ড. লাহিড়ীর। হাসপাতালের চাকরি করলেও চিকিৎসা বিজ্ঞানের নানান গবেষণায় নিজেকে ডুবিয়ে রাখাই ছিল তাঁর আসল সাধনা। দিনরাত নিজের ল্যাবে প্রাণঘাতী রোগের ঔষধির পরীক্ষানিরীক্ষা তে নিমজ্জিত থাকতেন তিনি। নিজেকে নিয়ে খুব উচ্চাশা ছিল যে শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাবিজ্ঞানী দের সংগে একদিন তাঁর নাম উচ্চারিত হবে।
একটা এক্সপেরিমেন্ট এর প্রত্যাশিত ফলের খুব কাছাকাছি পৌঁছে গেছিলেন তিনি আর তখনি ঘটল এক মারাত্মক বিপর্যয়।
দুর্ভাগ্যক্রমে তিনি প্রতিষেধকের পরিবর্তে আবিষ্কার করে ফেলেন এক ভয়ংকর বিষ!
“It was an accident, just an accident” – নিজের মাথা চেপে ধরে ক্রুদ্ধ স্বরে বলেন ড. লাহিড়ী।
“কিন্ত আমার কাছে ওটা যুগান্তকারী আবিষ্কার ডাক্তারবাবু” – অরিজিতের শান্ত প্রত্যয়ী উত্তর।
“না, যে আবিষ্কার মানব কল্যাণে নয়, তাকে আমি যুগান্তকারী মানি না, বিশ্বের কোনো শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ তা মানবে না। ইনফ্যাক্ট রিসার্চ নিয়ে আমার সমস্ত স্বপ্ন মরে যায় ওই বিষাক্ত আবিস্কারের পর” – কথা গুলো বলে একটু দম নেন পারিজাত।
“তাছাড়া আপনার তো কিছুই অজানা নয়, নতুন করে আর কি বলবো বলুন, অরিজিত বাবু?”
আট বছর আগে যে সময় এই বিষ আবিষ্কার করেন পারিজাত, সেই সময় একটা অন্য কেস এ জড়িয়ে পড়েন তিনি। এক রোগিণীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। অরিজিত তখন রাজ্য সরকারের অধীনস্থ ইনভেস্টিগেটিং অফিসার, কেসটার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন।
রোগিণীর মৃত্যুর সংগে এই বিষের কোনো যোগসাজশ ছিল না। কিন্তু তদন্তে এই আবিস্কারের কথা বেরিয়ে পড়ে এবং ড. লাহিড়ী অরিজিতের সামনে সব স্বীকার করতে বাধ্য হন।
অরিজিত বলেন – “আপনি জানেন ড. লাহিড়ী, গাফিলতির অভিযোগ সত্যি ছিল, আপনি সেসময় নিজের রিসার্চ নিয়ে এতটাই মগ্ন ছিলেন যে কিছু ভুল চিকিৎসা হয়েছিল, হয়ত অন্যমনস্কতার বশে”।
এর কোনো উত্তর দিতে পারেন না পারিজাত, ঘটনাটা সত্যি।
অরিজিত কফির কাপ টা হাতে নিয়ে সোফা থেকে উঠে একটু পায়চারি করতে করতে বলে চলেন “আপনি জানেন যে সব তথ্য প্রমাণ আপনার বিরুদ্ধে থাকা সত্বেও আমি নিজের হাতে সুনিপুণ ভাবে সেগুলো কে লোপাট করে আপনাকে অভিযোগ মুক্ত করি”
পারিজাত এবার ক্রুদ্ধস্বরে ফেটে পড়েন
“হ্যাঁ কারণ তত ক্ষণে আপনি জেনে গেছেন এক ভয়ংকর গোপন সত্য, দুর্ঘটনাবশত আমার হাতে আবিষ্কৃত ওই বিষ মানুষের দেহে কাজ শুরু করে ৬ থেকে ৮ মাস পর, একে একে তার লিভার, অগ্ন্যাশয়, কিডনি কে আক্রমণ করে সেগুলো কে অকেজো করে ফেলে এবং তার চরম পরিণতি ‘মাল্টিপল অর্গান ফেলিওর’ ও মৃত্যু।”
অরিজিত অভিবাদনের ভঙ্গী তে ঘাড় নাড়ে এবং করতালি তে বসবার ঘর ভরিয়ে বলে – “ব্র্যাভো, আপনার এই আবিষ্কার এর জন্য আরো একবার অভিনন্দন ড. লাহিড়ী, আপনি জাস্ট একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা মিস করে গেলেন – রক্তে এই নতুন বিষের ট্রেস পাওয়া অসম্ভব, মৃত্যুর কারন হিসেবে কোনো দিন প্রমান করা যাবে না”
পারিজাত মাথার দুপাশ চেপে বলেন – “আর তাতেই আপনার মাথায় ওই ভয়ংকর সর্বনাশা বুদ্ধি আসে।আপনি অপেক্ষা করেছিলেন রাজ্যসরকারের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের ইন্টেলিজেন্স বিভাগ এ আপনার বদলী হওয়া অবিধি। আপনি অপেক্ষা করেছিলেন নিজের হাতে ট্রান্সবর্ডার টেররিজম এর দায়িত্ব আসা অবধি”।
অরিজিত বলেন “কারেক্ট, আপনারা তো সব ই জানেন; এই যে এক এক জন উগ্রবাদী ধরা পড়ে তার পর আল্টিমেটলি কি কি হয়? হয় সরকারি খরচে তাদের পুষতে হয় কখনো দশ কখনো বিশ বছর। নাহয় তাদের ছাড়ানোর জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রর চাপ, অন্য কোনো আক্রমণ এবং পণবন্দী নির্দোষ সাধারণ মানুষ! আদালতে অনির্দিষ্টকাল ধরে মামলা চলে ও তরুন বিচারপতি বৃদ্ধ বয়সে যদি মামলার রায় ও দেন তখন হাজারখানেক রাজনৈতিক দল আর হিউম্যান রাইটস ঝাঁপিয়ে পড়ে এদের স্বাধিকার রক্ষার্থে।”
কফির কাপ টাকে ঠক করে টেবিলে নামিয়ে রেখে তেতো গলায় বলেন অরিজিত “অথচ মুম্বাই, হায়দারাবাদ এ যখন সিরিয়াল ব্লাস্ট হয় তখন কোথায় থাকে এই মানবাধিকার সংগঠন গুলো? আর পলিটিকাল পার্টির র কথা যত কম বলা যায় তত ই ভালো। সংখ্যালঘু ভোটব্যাংকের রাজনীতির তাস খেলে চলে এরা একের পর এক”।
পারিজাতের ও গলা চড়ে, উত্তেজনায় উঠে দাঁড়ান – “ আর আপনি যে পন্থা নিয়েছেন সেটা কি আইনত ঠিক না নীতিগত ভাবে সংগত? ৬ বছর আগে দিল্লির হাসপাতালে ৪ জন জখম জঙ্গির শরীরে ওই বিষ ইঞ্জেক্ট করেছি আমি, আপনার নির্দেশে! রোগিণী মৃত্যুর অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাসের এত বড় প্রতিদান ??একজন ডাক্তারের পক্ষে এর থেকে বড় শাস্তি আর কি হতে পারে অরিজিত বাবু? জীবন বাঁচানো যার পেশাগত দায়বদ্ধতা তার হাত দিয়ে জেনে শুনে ৪ জন কে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেওয়া? আপনি কে ওদের মৃত্যুদন্ডের বিধান দেওয়ার? সেটা তো আদালত এর কাজ। আর ধরা পড়লে আপনি আপনার ডিপার্টমেন্ট কে কি জবাবদিহি করবেন”?
অরজিত উঠে এসে জানালার পাশে দাঁড়ায় – “অনেক গুলো কঠিন প্রশ্ন করলেন ডাক্তার বাবু, আমি যা করছি আমি জানি তা আইনত ঠিক নয় কিন্তু নীতির কথা যদি বলেন তাহলে আমি বলবো আমি খুব গর্বিত। আমার সোজা হিসেব- মারি অরি পারি যে কৌশলে”।
আমি রাসবিহারীর ভক্ত ডাক্তারবাবু, ডান হাত কে জানতে দিই না বাম হাত কি করছে। এই গেমপ্ল্যান আমার, আমার একার; আইবি, র, পি.এম.ও কারুর কাছে এই ঘটনার জবাবদিহি করার দায় নেই। সাক্ষী যত কম রাখা যায় তত ই ভালো। শুধু আমি আর আপনি, মাঝখানে কোনো তৃতীয় ব্যাক্তি নেই”।
“শত্রুপক্ষ খুব শক্তিশালী ড. লাহিড়ী, দেখছেন না বিশ্বব্যাপী কিভাবে একের পর এক আতংকবাদী হামলা হচ্ছে? অগণিত মানুষের প্রাণহানি ঘটছে; নির্দোষ, সম্পুর্ণ নিরাপরাধ মানুষ মরছে রোজ আর আমরা নির্বাক হয়ে তামাশা দেখছি!এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার দায় কি শুধু মিলিটারি, বি.এস.এফ আর আমাদের ডিপার্টমেণ্টের ?সমাজের অন্যদের কোনো দায় নেই?আসুন ড. লাহিড়ী এগিয়ে আসুন, দেশের দায় পালন করুন।”
“ওই যে মালি টা বাগানে কাজ করছে ও কি ওই ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা ফুল গুলোতে শুধু সার আর জল দেয়? কীটনাশক স্প্রে করে না? আগাছা সাফ করে না? কীটনাশক না দিলে ফুল গুলো ঠিক মতন ফুটত? আপনি ও ঠিক তেমনি ভাবে সমাজের কিছু জঘন্য কীট কে বিনাশ করতে আমাদের সাহায্য করছেন ড. লাহিড়ী। সুস্থভাবে বাকিদের বাঁচবার জন্য, এটুকু কি প্রয়োজনীয় নয়? আপনার আবিষ্কার কি আলটিমেটলি মানবকল্যানে ব্যাবহৃত হচ্ছে না? আমাদের না হোক ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভাবুন!”
বুকশেলফ এর উপর থেকে একটা ফ্রেমে আঁটা ছবি তুলে নেন অরিজিত। মানালি তে পারিজাতের তোলা নমিতা আর তাঁর ছেলের, প্রাণোচ্ছল হাসি ধরা পড়েছে অসাধারণ নৈসর্গিক দৃশ্যের প্রেক্ষাপটে।
“নাই বা পেল আপনার আবিষ্কার বিজ্ঞানসমাজের স্বীকৃতি, নাই বা পেলেন আপনি তথাকথিত পুরস্কার বা সম্মান কিন্তু অন্তত একটু ভালো সমাজ একটু দূষণমুক্ত রাষ্ট্র গড়বার কাজে আমাদের সাহায্য করতে পারছেন আপনি, এই টা কি কম?”
পারিজাত নিরুত্তর, হৃৎপিন্ড অত্যন্ত দ্রুতগতি তে চলাচল শুরু করেছে, এক কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন করে ফেলেছেন অরিজিত তাঁকে। একটা সিদ্ধান্তে আসতেই হবে। হয় এস্পার নয় ওস্পার।
অরিজিতের ধৈর্যচ্যূতি ঘটে – “চুপ করে থাকবেন না ড. লাহিড়ী, ছাড়া পেলে ওই জঙ্গি গুলো কিন্তু আবার আক্রমণ শানাবে, হয়ত ভীড় ট্রেনে বা শপিং মল এ, কাল হয়ত আপনি,আমি বা আমাদের পরিবার ওদের নিশানার শিকার হব। আর দ্বিধা করবেন না, এ এক ভয়ংকর যুগসন্ধিক্ষণ; your counrty needs you, your country is calling you- এ ডাকে সাড়া না দিয়ে দায় এড়াবেন না প্লিজ!”
পারিজাত কিছুক্ষণ চুপ করে বসে ভাবেন মাথা নীচু করে, তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলেন-
“আবার কি দিল্লি? তাহলে তো ব্যাগ গোছাতে হবে!”
অরিজিত সাগ্রহে তাঁর সামনে এসে বলেন – “না এবার অপারেশন কলকাতা, কিছু পাক জঙ্গি একটা বড়সড় হামলার প্ল্যান নিয়ে কলকাতা এসেছিল। ইন্টেলিজেন্স এর কাছে আগে থেকেই ইনফরমেশন ছিল। একটা শুট আউটে কাল কয়েক জন মারা যায় আর ৬ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে”।
ড. লাহিড়ী এগিয়ে এসে করমর্দন করেন “ডান”!
অরিজিত ভদ্র দুহাতে তাঁর হাত চেপে ধরেন। চোখেমুখে উপচে পড়ছে কৃতজ্ঞতা।
বাইরের বাগানে মালিটা মুখে একটা কাপড় বেঁধে কীটনাশক স্প্রে করে যাচ্ছে, জানালা দিয়ে গন্ধ বৈঠকখানায় পৌঁছোয়।
Tags: কীটনাশক, গল্প, হিল্লোল ভট্টাচার্য
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।