গল্প পড়ুন
এই মুহুর্তে বাংলা ভাষায় লেখালিখি করেছেন এমন গল্পকারের সংখ্যা কত? সত্যি বলতে কী ‘গল্পের সময়’ তা জানে না। কয়েকজন ব্যাক্তি ও কয়েকটি সংস্থা উদ্যোগ নিয়ে দুই বাংলায় লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের নথিভুক্তকরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু তা কোনও ভাবেই সম্পূর্ন নয় বা হওয়া সম্ভব নয়। কারন প্রতিনিয়তই লেখালিখির জগতে আসছেন বহু মানুষ। ইন্টারনেটে বাংলা গল্পের ম্যাগাজিন করতে গিয়ে আমরা লক্ষ্য করেছি অনেক লেখকই এখনও কম্পিউটার এড়িয়ে চলেন। কাগজ-কলমেই তাঁরা স্বচ্ছন্দ। চিরাচরিত ছাপা ম্যাগাজিন, লিটল ম্যাগ, শারদসংখ্যা বা সংবাদপত্রের সাময়িকীতেই তাঁরা লেখালিখি করেন। অন্যদিকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটে স্বচ্ছন্দ একদল লেখককুল রয়েছেন। তারা ফেসবুকে পোস্ট করছেন, ব্লগ বানাচ্ছেন, ই-ম্যাগাজিনেও লিখছেন। ‘গল্পের সময়’ এই দুই পক্ষকেই চায়। নবীন ও প্রবীন গল্পকারদের গল্প পড়ুন এই পাতায়।
-
মায়ের মাদুলি ও নবজীবনের শেকল
প্রচন্ড স্রোতে নদীতীর ভেঙ্গে কপালকুন্ডলা ডুবে গেলেন।নবকুমার নদীর জলে লাফ দিলেন। কিন্তু অনেক খোঁজাখুঁজি করে নবকুমার, কপালকুন্ডলাকে পেলেন না। স্রোতের তোড়ে দুটি দেহ দুদিকে ভেসে গেলো। তারপর নবকুমার কাটোয়া ঘাটে একটা বাঁশের ধাক্কায় অচৈতন্য হয়ে পরে রইলো।আর কপাল কুন্ডলা কুন্তিঘাটে নদীতীরে পাথরের ধাক্কায় অচৈতন্য হয়ে পড়ে রইলো। কাটোয়া ঘাটে মনা বায়েন স্নান করতে এসে দেখলো, […]
-
নিভৃত সংলাপ
অতসীপিসী আমার দূরসম্পর্কের পিসীমা ছিলেন। তাঁর ছোটভাইয়ের সংসারে তিনি প্রায় গোটা জীবনটাই কাটিয়েছিলেন । তাঁকে কোনোরকম অশ্রদ্ধা বা অসন্মান করার ক্ষমতা কারো ছিলনা। এই উচ্চাসন তিনি নিজের যোগ্যতায় অর্জন করেছিলেন। প্রখর ব্যক্তিত্বময়ী মৃদুভাষী এই মানুষটি আমার মাকে ভীষণ ভালোবাসতেন ।আমার মায়ের থেকে বয়সে অনেকটা বড়ো হলেও নিজের মনের সব কথা বলতেন। নব্বই বছর পেরিয়ে যখন […]
-
পরশুরাম ও অন্য গল্প
পরশুরাম সন্ধে থেকে ক্রমাগত গুঁড়ো গুঁড়ো বরফের বৃষ্টিতে চারিদিক সাদা হয়ে এসেছে । এখন বোধহয় রাত দশটা হবে। ডিসেম্বরের শীতের রাত, ঘোলাটে আলোয় আলোকিত রাস্তা নিঝুম । কিছুক্ষণ আগেই পলাশ ঘটনাটা ঘটিয়ে ফেলেছে। এমন নয় যে হঠাৎ উত্তেজনার বশে এমন কাজটা ও করে ফেললো । বরং উলটোটাই সত্যি। মাসের পর মাস পরম প্রিয়জনের রোগশয্যার পাশে […]
-
বিনোদন
সবে স্কুলের গণ্ডী পেরিয়েছি । সত্তর দশকের প্রথম ভাগ । বঙ্গে তখনও দূরদর্শনের পদার্পণ ঘটেনি । রেডিও ছিল অনেক বাড়িতে । সাত পড়ুয়ার পাঠে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কায় রাহা বাড়িতে রেডিও স্থান পায়নি । সেই একান্নবর্তী বাড়ির দুই ক্ষুদেকে প্রাইভেট পড়াবার দায়িত্ব পেলাম আমি। ছাত্রদের পরিবারে ছিল তিন ভাই আর বাল্যবিধবা তাদের বড়দি। সঙ্গে তো ছিলই […]
-
মাঝরাতে রাজপথে
বলাকা বলেছিল “বন্ধুর বিয়ে, অনেকটা দূর। পৌঁছে দেবে? ফেরার সময় আসতে হবে না, বন্ধুদের সঙ্গে চলে আসব।“ সুমন ‘হ্যাঁ’ ‘না’ কিছু বলেনি। কারণ বলাকা জানত এর উত্তর ‘না’ হয় না। রিকশা থেকে নেমে বলাকা উজ্জ্বল পোশাকে আলোকিত তোরণ দিয়ে বিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো। একটু গিয়ে পিছন ফিরে দেখলো, সুমন তখনও দাঁড়িয়ে, টিমটিমে ল্যাম্প পোস্টের আলোয়, […]
-
বাসে আলাপ
ট্রেনে নয় লাক্সারি বাসে চলেছি পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ের দিকে। সাথী ত্রিরিশ জন। কপালগুণে বাসের পেছনে পড়েছিল আমার সিট। আমার দুটো সিট আগে বসেছিল বছর কুড়ির এক তরুণী তার বাবার সঙ্গে। চা-জলখাবারের জন্যে মাঝে একবার বিরতি দেওয়ায় অন্যান্ন সহযাত্রী সহ ওই মেয়েটির সঙ্গে আলাপ হয়। মেয়েটি সবেমাত্র কম্পুউটার সায়েন্স নিয়ে পাশ করে টিসিএসে যুক্ত হয়েছে। কথাবার্তায় […]
-
বাই ডিফল্ট
– ইন্টারভিউ তো দিলেন। এবার বলুন কেমন লাগল আমার মতন বাচ্চা আনকোরা একটা মেয়ের প্রশ্ন? – দারুণ! ও না না, এখন তো এসব বাংলা বললে চলবে না। কি যেন চলছে শব্দটা! ও হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে অ-সাম! ঠিক বললাম তো? – একদম। আপনি এই বয়েসেও এত আপ টু ডেট থাকেন কি করে? আপনার ঐতিহাসিক উপন্যাস […]
-
হুঁ:! ন্যাকামি!
রাত আড়াইটে। ঘরে এসে বিল্টু খবর দিল, “ঠাম্মি, এইবার শিগগির চলো! লাইট নিভে গেছে।” শুনে সবাই হৈ হৈ করে উঠল। “চলো, চলো…এখনই চলো।” বিল্টুর ঠাম্মি, অর্থাৎ ঐন্দ্রিলা দেবী হাত তুলে শান্তভাবে চোখ, মুখ নাচিয়ে বললেন, “দাঁড়া বাছা! এখনই কী?! এখনও সময় হয় নি। আরও কিছুক্ষণ যাক। রস জমুক।” তারপর বিল্টুকে তাড়া দিয়ে বললেন,”তুই শুতে যা […]
-
আগুনওয়ালাদের চোখ কান
দুপুর গড়িয়ে গেলে বিষ্টুদের পুকুরঘাটে বাসন মাজতে বসে বহ্নি। আর এইসময় নিজের কথাকে কারুকাজ করে নিতে আসে কবি কৌরব। বহ্নির কারুকাজ বলতে লেখাগুলোকে বাইরের লোকের কাছে বরাত পাইয়ে দেওয়া। বাইরের মানুষের সাথে বহ্নির অনেক যোগাযোগ। আজ ওর এঁটো পাতিলের ওপর টুপ করে কী যেন একটা পড়ল। -“দলা পাকিয়ে কী ফেলছ দেখি?” দেখল তারই দেওয়া সাদা […]
-
এমনিই
|| ১ || সাবওয়ে দিয়ে চিরকালের অভ্যাসের মতো দুটো করে সিঁড়ি টপকে টপকে প্লাটফর্মে উঠে একটা ফাঁকা জায়গা পেয়ে বসে হাঁফাতে লাগলো শুভ | রবিবার সকালে ঘুমটা যেন ভাঙতেই চায় না | অগত্যা এই তাড়াহুড়ো ! নাহ্ ! লেট হয় নি | সাড়ে দশটার গ্যালোপিং বর্ধমানটা পেয়ে যাবো | – ভাবতে ভাবতে চশমাটা খুলে নিয়ে […]
-
সিঁদুরে মেঘ
জীবনে চলার পথে আর পাঁচজনের মতো প্রতিভারও জীবন থেকে অনেক মুখ হারিয়ে গেছে বা কুয়াশাবৃত হয়েছে।তাদের মধ্যে কেউ কেউ তার হৃদয়ের টুকরোও বটে। কোভিডের ঢেউ আছড়ে পড়তেই যেমন তুমুলভাবে নাড়িয়ে দিল প্রতিভাকে, তার সন্তানের পিতা রণজয়কে ছিনিয়ে নিয়ে।পঁয়ত্রিশের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে একমাত্র সন্তান এলিজাকে নিয়ে তার জীবন এক অজানা প্রবাহের মাঝখানে, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা কাটিয়ে একটু […]
-
বড়পিসির চিঠি এবং
সালটা ৭১ কি ৭২। গোটা দেশে রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ডামাডোল। কালোবাজারির দাপটে নাভিশ্বাস। এরকম একটা সময়ে মফস্বলের এক বাড়িতে চিঠিটা এলো। বাইরের ঘর, মাঝের ঘর, ভাঁড়ার ঘর, ঠাকুর ঘর পেরিয়ে উঠোন লাগোয়া নতুন ঘরে আমার ছোটকা মানে এ বাড়ির ছোট ছেলে, সেটা এনে দিলো ঠাকুমাকে। ঠাকুমা চিঠিতে চোখ বুলিয়েই শুরু করলেন হাঁউমাঁউ। সেই চিৎকারে রান্নাঘর থেকে […]
-
পোর্ট্রেট
এ শহরে তখন আমি আনকোরা নতুন। পরিচিত তেমন কেউই ছিলোনা। দুচারজন সদ্যঘনিষ্ঠ সহপাঠীদের ছাড়া চিনতাম স্টেশনের কাছে চায়ের দোকানের মালিক গঙ্গাদা, বটতলার নিতাই আর চালতাবাগানের বাচকুনদা। এছাড়াও আমার খুব ভালো লাগতো আরো একজনকে, তার নাম কেয়ামাসী যার সঙ্গে আমার আলাপটা হঠাৎ হয়ে গিয়েছিলো। একদিন রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় পেছনদিক থেকে জোরে আসা রিক্সার ধাক্কায় পড়ে […]
-
জন পজারের বাংলো
১ ‘সরকারী জীপ-এ করেরাঁচি থেকে এসে প্রথমযেদিন একতলা বাংলোটা দেখতে এলাম তখনই খুব পছন্দ হয়ে গিয়েছিল,বুঝলে সুশীল । ব্রিটিশ আমলের আর্কিটেকচার,বড়ো বড়ো পাঁচ-ছটা ঘর,বাংলোর তিনপাশ ঘেরা উঁচুরেলিং দেওয়া বারান্দা,বিরাট কম্পাউনডের সঙ্গে একটা আউটহাউস, বাড়ীর পেছন দিকে গোটাকতক বড়ো বড়ো আম,জাম আরজলেবী গাছ, বাংলোর সামনে গাড়ীবারান্দা থেকে একটা লাল মোরামের রাস্তা গেট অবধি চলে এসেছে । […]
-
ছায়া দীর্ঘতর
শ্রীরামপুরে গঙ্গার ধারে মদের কারখানা । তবে সে এখন অতীত। অতি বৃদ্ধ সে । মুখ বন্ধ বসে আছে । নেশা তার দিকে আর কাউকেই টেনে আনে না । বোতলের টুংটাং পিয়ানো বাজেনা আর , কাউকে কিছু পিয়ানোর দায়ও নেই তার এখন। তার সামনেই সিমেন্ট বাঁধানো গোল বেঞ্চিটা এখন খুব জীর্ণ। জঞ্জালময়। কত আগাছা ভিড় করে […]
-
ইলেকশন ডিউটি
মলয়বাবুর মাথায় যেন বজ্রাঘাত হল। সারাজীবন বিহারে কাটিয়ে একমাস হল কলকাতায় হেডঅফিসে বদলি হয়ে এসেছেন। এখনো অফিসের ঘাঁতঘোত বিশেষ বোঝেননি। অসুবিধায় পড়লে যে কাকে ধরতে হবে, অফিসের মধ্যে কেন্দ্রবিন্দুটি যে ঠিক কোথায়, তার হদিস এখনও করে উঠতে পারেননি। ফলে তিনি চোখে অন্ধকার দেখলেন। মলয়বাবু চিরকালই শান্তিপ্রিয় লোক- ঝুটঝামেলায় তাঁর বড় ভয়। সেরকম সম্ভাবনা দেখা দিলেই […]
-
অভিনেত্রীর খোঁজে
উল্টোদিকের সোফায় বসে থাকা মেয়েটা এতক্ষণ মন দিয়ে একটা ম্যাগাজিন পড়ছিল। পত্রিকাটা মুখের ওপর থেকে সরিয়ে নিতে এবার ওর পুরো মুখটা দেখতে পেল রাজীব। হাতের ম্যাগাজিনটা বেশ খানিকটা জোরেই নিচু টেবিলটায় রাখল মেয়েটা। মুখে বেশ বিরক্তিচিহ্ন। বিরক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। সেই বেলা এগারোটা থেকে অপেক্ষা করছে, আর এখন প্রায় চারটে বাজে। রাজীবেরও এবার বেশ অধৈর্য লাগছিল। […]
-
ডিসেকশন হলের ভূতেরা
নবীন বরণ উৎসব চলছে। নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের ফ্রেসারস ওয়েলকাম দিচ্ছেন সিনিয়র দাদারা। আমাদের এক হৃষ্টপুষ্ট বন্ধুর হাতে এক সিনিয়র দাদা গোলাপ ফুলের সঙ্গে ধরিয়ে দিলেন পেল্লাই সাইজের একটি কাতলা মাছ। সেইসঙ্গে ঘোষণা করলেন আজ থেকে ওর নাম দেওয়া হল ‘কাতলা’। কাতলাই বটে। চেহারার সঙ্গে একদম মানানসই। সারা অনুষ্ঠান জুড়ে বয়ে গেল […]
-
আগেকার
আসল পাহাড়টা এখানেও না- খাদে গড়িয়ে সন্দেহের স্থান দেখিয়ে দেবে-কতটা পথ পেরোলে সরু নিব ভেঙে টপ করে দেখা যাবে লাল কালি পড়া- যদি বলি নাব্যতা-যেখানে উপত্যকা সেখানে লাল রক্তের ঘর। পরিষ্কার করে বলবে তারা যারা নিজেদের গল্প রাখতে পেরেছে বয়ঃসন্ধি থেকে বার্দ্ধক্যে পৌঁছানোর মাঝে,হাতে সময় রেখে মৌজে মৌজে বেঁচেছে, একসময় ভজনকে তারা ধমকাবার এক্তিয়ার পায় […]
-
হাতেখড়ি
হাতেখড়ি – ১ পুরোহিত মশাই নতুন শ্লেটের ওপর সাদা চকটা রেখে কালো শ্লেটটা ধরে একবার সরস্বতী ঠাকুরের পায়ে ঠেকিয়ে নিজের মাথায় ঠেকালেন আর তারপর ঠেকালেন পাশে বসা হলুদ শাড়ি পরা বাচ্চা মেয়েটার মাথায়, তারপর বললেন – ‘কি নাম মা তোমার?’ উত্তর এল – ‘ছুচিসমিতা।’ -‘বাব্বা, নামের বাহার তো খুব!’ বলে ঠোঁট ওলটালেন আপন খেয়ালে। […]
-
স্নান
এক বালতি গরম জল। ঘড়িতে সময়…ঠিক সকাল আটটা পনেরো। কাঁটায় কাঁটায় বাজলেই শুরু হয়ে যায় চাপান উতোর। ব্যপারটা প্রায় রোজই হয় অনেকটা এরকম…এই বাড়িতে একটা ইমার্সন হীটার আছে, যা দিয়ে এঁরা স্নানের জন্য জল গরম করে থাকেন। সারাবছরের বাঁধাধরা কাজ। দুজনকেই গরম জলে স্নান করতে হয়। দুজনেরই ভয়ানক ঠাণ্ডার ধাত। সারাবছর ধরে এঁদের কারণে, অকারণে […]
-
কামড়ুম জংশন*
[একটি গল্প, বা যে কোনও লেখাই, একবার পঠিত হওয়ার পর পাঠককে পুনর্পাঠের অনুরোধ করা যায় না। সেটা অন্যায়। একই নামে, ‘কামড়ুম জংশন’ গল্পটি সদ্যই যা এবছরের শারদ ‘নতুন গল্পপত্র’ পত্রিকায় প্রকাশ হওয়ার পর আমি আরেকটি গল্প হিসেবে একই নামে এই গল্পটি লিখেছি। কবে ভিন্নতা বোঝাতে এই গল্পটির নামের পাশে একটি (*) তারকা চিহ্ন দিয়েছি। যাঁরা […]
-
ঘুরে দাঁড়ানো
কাগজে খবরটি পড়েই অন্তরাত্মা হায় হায় করে উঠেছিল। পরক্ষণেই ক্রোধ। প্রচণ্ড ক্রোধ। ক্রোধ প্রশমিত হওয়ার পর দাদাসুলভ সহানুভূতি। ভুল করলি ভাইটি। বড় ভুল। খুব ভালো রেজাল্ট করে খানাকুল না চাঁপাডাঙার ওদিক থেকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে পড়তে এলি কলকাতায়। কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্সে। জানি তো আমাদের ইংরিজিতে ভুল হয়। গ্রামারে নয়। প্রোনানসিয়েশনে। আমরা গার্ডিয়ানকে বলি গার্জেন, কোয়েশ্চেনকে […]
-
কালসর্প
দিনগুলি বৃষ্টির মতই ফোঁটাফোঁটা গলেগলে পড়ে গেলো। বাদলের মেঘ- ঘন আকাশ। পিঁপড়েগুলো। সাদা ডানায় পরি হলো। মুঠো থেকে পড়ে গেলো পাতা ঝরার বয়স। আর্যর কতোক পাতা মিশে গেছে মাটির মধ্যে। কতোক পুড়ে গেছে। কতোক আদপোড়া হয়ে নিভে গেছে। তারপর? কলমি শাকের বিছানা। পটলের বালিশ। স্নানযাত্রা। অরোনা … ছুটির দিনে আর্য যখন ঘরের কৌটো-বাওটা ম্যাগাজিন পুরানো […]
-
মেঘের চিঠি
মায়ের কাছে পড়তে বসতাম। আমার পড়ার সময়ে মায়ের মুখটা আলোয় ভরে যেত।মা বলতেন,ভাল করে পড়ে মানুষ হও। লিলুয়ার পটুয়াপাড়ায় আমরা ঘরভাড়া নিয়ে থাকতাম বাবার চাকরিসূত্রে।ভাড়া বাড়ির সামনে একটা কুলগাছ ছিল। টালির চাল। তখন চোর ডাকাতের উপদ্রব ছিল খুব। আমার বাবা সন্ধে হলেই দরজা জানলা বন্ধ করে দিতেন। আমরা চার ভাই। কিন্তু বড়দা গ্রামের বাড়িতে কাকাবাবুর […]
-
একজন কুকুরের জবানবন্দি
এভাবে যে ধীরে ধীরে আমি একটা হই হই কাণ্ডের মধ্যে ঢুকে পড়ব তা কোনওদিন স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি। কোনও একটা ঘটনা, তার প্রভাব, তার অভিঘাত যে এরকমভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে সে কথা ভাবতে আজ আমার কেমন যেন আশ্চর্য লাগে। কীভাবে যেন কী হয়ে গেল? আজ প্রতিটা মানুষ শিউরে উঠছে আমার বলা কথা শুনে। বলছে এও কী […]
-
বুমেরাং
“মন্টু, শুনলাম নাকি ওই নীল দোতলা বাড়ির ছোট ছেলেটার করোনা হয়েছে?” “হ্যাঁ জেঠিমা আমিও তাই শুনলাম।” “হবে না ,চোপর দিন মোটরসাইকেলে কাঁধে সিলিন্ডার মিলিন্ডার নিয়ে ডাক্তার সেজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কি না কি সব গ্ৰুপ ট্রুপ খুলে মানুষের সেবা করছে।আরে বাবা তুই কি ডাক্তার ?বেশি পাকা !এই করে এ পাড়ায় তো ওই করোনা ঢোকালো!” মন্টু জলের […]
-
স্ত্রীধন
ভোর হতে না হতেই দুধ দোয়াতে আসে রামু গোয়ালা আর খবরের কাগজ নিয়ে বিকাশের সাইকেলের টুং টাং শব্দে জেগে ওঠে এই পাড়াটা। কেউ কেউ নিমদাঁতন হাতে পঞ্চায়েতের বসানো টিউবওয়েল এর কাছে এসে বিকাশকে ডেকে একটা খবরের কাগজ কিনে নেন। গুটি গুটি পায়ে এ বাড়ি ও বাড়ি থেকে দু চারজন বেকার বৃদ্ধ বের হয়ে এসে ওই […]
-
অন্য ভূমিকায়
( এক ) — কীসব আবোলতাবোল কথা বলছিস পাগলের মতো।এ হয়না,কখনও হতে পারেনা। নিজের চিৎকারে নিজেই চমকে উঠলো দীপক। স্বাতী পাশেই দাঁড়িয়ে। দীপক আর স্বাতীর হাত দুটো বরুণ তখনও তার দু’হাতের তালুর মধ্যে বজ্রমুষ্টিতে ধরে আছে। হাসপাতালের কেবিনে সেই মূহূর্তে ওরা তিনজন। একটু পরে হাসপাতালের লোকেরা ট্রলি নিয়ে আসবে । বরুণকে নিয়ে যাবে আইসিসিইউতে। […]
-
অঘনাশন
১ পাদুটো মুঠোয় ধরে উলটো করে ঝুলিয়ে দ্রুত পিঠে হালকা কয়েকটা চাপড় মারার পরই বেবী কেঁদে উঠলো । ওটি নার্স, ডাক্তার অলোক, পেডিয়াট্রিশিয়ান আর এনাসথেটিসটদের সারজিক্যাল মুখোশ ঢাকা মুখগুলো থেকে একটা ক্ষীণ ও-ও আওয়াজ বেরিয়ে এলো । সুমিতাভ হাঁফ ছেড়ে একটা নিশ্বাস নিয়ে তাড়াতাড়ি বাঁপাশে দাঁড়িয়ে থাকা নার্সের প্রসারিত হাতের মধ্যে বেবিকে দিয়ে […]