তার পদবি কি সে জানে না। তার বাপ কে সে জানেনা ! মায়ের নাম ছিল একটা, লোকে ডাকতো হেমা বলে। ধর্ম কি তাও সে জানে না। মন্দিরে সে যায় ফিরিতে পোসাদ খেতে আর না হয় সুযোগ বুঝে চুরি চামারি করতে, মসজিদে গেলে তাকে ভাগিয়ে দেয় – ‘ভাগ ! তুই তো মুসলমান না !’ বলে। সে শুধু জানে তার নিজের নাম কোমে, কমুয়া, কমল বা কামাল ! পুলিশের খাতায় তার নাম বিভিন্ন থানায় বিভিন্ন, নামের পেছনে কিছু নেই, কিন্তু সেটার আগে পছন্দমতো কিছু একটা, যা মুখে আসে জুড়ে দিতে ভোলেনা ! অতনু স্যারের মতো ভালো অফসার হলে সেটা ‘এই যে ব্যাটা কোমে !’ দিয়ে শুরু হতে পারে আবার হারুন স্যার হলে সেটা হয়ে যায় ‘এই শালা হারামি !’ কিন্তু তাতে কোমের কিছু যায় আসে না, আপাতত সে গড়িয়াহাটের মোড়ে মন দিয়ে শিকার খুঁজছে ! ওস্তাদ, মানে ল্যাংড়া গনি বলে দিয়েছে যে আজকে তার মিনিমাম দুটো কাজ চাইই চাই ! কাজ মানে হাতসাফাই ! সোজা কথায় পকেট কাটা ! কেপমারি ! ‘আজ শালা দুটো কেস না দিতে পারলে তোকে এই তল্লাটে আর যেন না দেখি !’ তার পর ল্যাংড়া গনি একটা হাত ভাঁজ করে আড়াআড়ি চালিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে কি হবে ! কোমে তাই চাপা টেনশন নিয়ে বকরা, মানে শিকার খুঁজছে !
আজ ইস্পেশাল দিন, গড়িয়াহাটে মার্কেটে আজ মানুষের ঢল নেমেছে ! গত কয়েকদিনের উপুড়চুপুর বৃষ্টির পর কাল থেকে রোদ উঠেছে। আজ যেন একটা কি পরব আছে হিঁদুদের, মোয়ালোহা না কি যেন বলে একটা ! সকাল থেকে এখানে সেখানে মাইকে কি একটা বেজে চলেছে, গান আর গলা কাঁপিয়ে একটা লোকের লেকচার ! কখনো খুব জোরে জোরে মন্তর পড়ে, গজ্জন করে, কখনো কাঁদে আর মাঝে মাঝে গান। কোমে বিশেষ কিছু বোঝেনা, খালি জানে, ব্যাপারটা হল, মা দুগ্গা যখন অসুর, মানে মহিষাসুরকে পা দিয়ে চেপে বুকে তিসুলটা বিঁধে দিয়েছিল এটা সেই তখনকার যুদ্ধের গল্প। রাস্তাঘাটে, চায়ের দোকানে লোকেদের কথা থেকে জেনেছে সে। বড়পুজো, মানে দুগ্গাপুজোর ক’দিন আগে পত্যেকবারেই এটা বাজে সবজায়গায়, ছোটবেলা থেকে দেখে আসছে সে। তার ছোটবেলা কেটেছে কখনো ব্রিজের নীচে, কখনো হাইডেন্টের পাইপের মধ্যে, কখনো রাস্তার ধারে পলিথিনের ঝুপড়িতে, আর কখনো বা আকাশের নীচে সিরিফ খোলা রাস্তায় !
নিজের বাবাকে কোনোদিনই দেখেনি কোমে, জ্ঞান হবার পর মাকে দেখেছে, তাকে আর ছোট একটা বোনকে নিয়ে রাস্তায় সিগন্যালে ভিক্ষে করতে। কোনো কোনোদিন খাওয়া জুটতো, কোনো দিন শুধু জল আর মার ! কোনোদিন রাত হলে একটা লোক আসতো ঝুপড়িতে, লাল লাল বড়োবড়ো চোখ, মুখ দিয়ে ভকভক করে বিচ্ছিরি মদের গন্ধ ছাড়তো, মাকে ফিসফিস করে কি বলতো, মা তখন বোনটাকে সাথে দিয়ে কোমেকে ঝুপড়ির বাইরে বার করে দিতো । তারপর লোকটা চলে গেলে মা তখন আবার তাকে আর বোনটাকে ডেকে নিতো ঝুপড়ির ভেতরে।
এরকম একদিন বাইরে বার করে দিতে, কোমে পেলাসটিকের মধ্যে দিয়ে ঝুপড়ির মধ্যে উঁকি মেরেছিল, তাতে লোকটা শরীরটা আদ্দেক বার করে কোমেকে ঠাটিয়ে একটা ঝাপ্পড় মেরেছিল কানের পাশে ! কতটুকুই বা ছিল কোমে তখন, ঝাপ্পড় খেয়ে ছিটকে পড়েছিল ফুটপাতের কোনে সান বাঁধানো গাছতলায় ! কানের পাশে কেটে রক্ত পড়েছিল। মা লোকটাকে কিছুই বলেনি, খানিক পরে বেরিয়ে এসে কোমের কানের পাশে রক্তটা ধুয়ে দিয়েছিল আর কেমন ধারা কষ্ট কষ্ট চোখ নিয়ে কোমেকে আর বোনটাকে বুকের মধ্যে চেপে খানিকক্ষন চুপচাপ বসেছিল। লোকটা যাওয়ার সময় কোমের দিকে ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে কোমরে চেককাটা লুঙ্গির ভাঁজ থেকে দশটা টাকা দিয়েছিল কোমেকে !
কারো দেওয়া একটা বেঢপ সাইজের ফ্রক পড়ে থাকতো বোনটা।
‘তিন্নি ! তিন্নি !’ নামে ডাকলেই একমাথা জট পড়া চুল নিয়ে গুটিগুটি কাছে এসে বসতো ! কথা বলতে পারতো না তো, খালি উঁ-উঁ করতো আর খিদে পেলে সাদা ভাঙা সসপ্যানটা টেনে নিয়ে চুপচাপ সামনে এসে বসতো বোনটা ! রোগা ভোগা ছিল, পেটভরে খেতেও পেতোনা ঠিক মত। চলতে চলতে টলে টলে পড়ে যেত যখন তখন। একদিন ভিক্ষে করতে গিয়ে চোখের সামনেই রাস্তায় গাড়ি চাপা পড়েছিল বোনটা, ওই বেঢপ ফ্রকটা পায়ে লেগে আটকে পড়েছিল, উঠতে গিয়ে আর উঠতে পারেনি। মা টা পাগল হয়ে গিয়েছিল, রাস্তার দিকে তাকিয়ে তিন্নি তিন্নি বলে বিড়বিড় করতো, হি হি করে হেসে উঠতো, কোমে খেতে চাইলে মারতো, তারপর হঠাৎ একদিন কোথায় উধাও হয়ে গেলো। কোমে কিছুদিন এখানে সেখানে থেকে, রোগে ভুগে, ভিক্ষে করে, তারপর চুরি চামারিতে হাত পাকিয়ে, পাকাপাকি ভাবে নাম লেখালো ল্যাংড়া গনির দলে।
সেই কবে মেরেছিল লোকটা, কিন্তু আজও সে সেই ঝাপ্পড়টা ভুলতে পারেনি ! তারপরে জীবনে সে অজস্র কিল চড় লাথি ঘুঁষি আর লাঠির মার খেয়েছে, অগুনতি বার ! কারণে অকারণে ! পকেট কাটতে গিয়ে, চুরি করতে গিয়ে। ধরা পড়ে মারতে মারতে আধমরা করে ছেড়েছে তাকে জনতা ! এমনকি বছর খানেক আগে একটা চুরিতে ধরা পড়ে জনতা তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলে ল্যাম্পপোষ্টে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে সকাল থেকে সন্ধ্যে অবধি কি মারটাই না মেরেছিল ! তেলেভাজার দোকানের উনুনের গরম শিক দিয়ে অবধি বুকে ঢ্যাঁড়া কেটে দিয়েছিল ! মরেই যেত, শেষে কোথা থেকে কতগুলো ছেলেপিলে পুলিশ নিয়ে এসে তাকে প্রথমে থানা আর পরে হসপিটালে নিয়ে যায়। কিন্তু সেসব ছাপিয়ে আবার সেই ঝাপ্পড়টার কথা মনে পড়লো। আনমনে কানের পাশে একবার হাত বুলিয়ে নিল কোমে ওরফে কমুয়া। হাতের বিড়িতে একটা শেষ টান মেরে এগিয়ে গেল ফুটপাতের মধ্যেখানে করে। শিকার দেখতে পেয়েছে সে !
লোকটাকে দেখে বোকাসোকা ছাপোষা গেঁয়ো লোক বলে মনে হয় ! ফুটপাতে ডাই করে রাখা সস্তার ছিটের জামাকাপড়ের মধ্যে হাত ভরে দিয়ে একটার করে জামা তুলছে, দুহাতে সামনে মেলে ধরে আবার রেখে দিচ্ছে, হয় সাইজ আর না হয় রং পছন্দ হচ্ছে না। বোঝাই যাচ্ছে অন্য কোনোদিকে লোকটার হুঁশ নেই। দোকানদার তারস্বরে চেঁচাচ্ছে, ‘লিয়ে যান, লিয়ে যান, এখানে, এর চেয়ে কমে আর কোথাও পাবেন না, এক দাম দু শ টাকা, যে কোনো সাইজ, যা পছন্দ, লিয়ে যান !’
স্টলের সামনে বেশ ভীড়, একটু ঠেলাঠেলি আরম্ভ হলো। ভালো করে দেখতে লোকটা এবার বসে পড়লো ফুটপাতে। এবার লোকটার ঢলঢলে প্যান্টের ডান পকেটে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে মানি ব্যাগটা, ফুলে আছে প্যান্টের পাশটা ! কোমে আর দেরি করেনা, ভীড়ের মধ্যে মিশে গিয়ে ডানদিক ঘেঁষে দাঁড়ায় লোকটার, ভীড়ের মধ্যে হাত গলিয়ে বাম কাঁধে নখ দিয়ে চাপ দিতেই লোকটা ‘আঃ !’ বলে উঠে দাঁড়ায় ! বোকার মতো পিছনের আর পাশের লোকগুলোর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে কি ব্যাপার ! কোমে আস্তে আস্তে পিছনে হটে আসে, তার কাজ হয়ে গেছে, এখানে তার আর কিছু দেখার বা নেওয়ার নেই।
*
আজ সদানন্দের মন একদম ভালো নেই, ডিউটিতে সে আসতে চায়নি ! ছোট মেয়েটার জ্বর কাল সন্ধ্যে থেকে। মেজবাবুকে সে কথা বলতে মেজবাবু তার দিকে চোখ তুলে না তাকিয়েই বললো, ‘ভাই রে, পুলিশের চাকরিতে যেদিন ঢুকেছো সেদিনই বাপ মা ভাই বোন বৌ ছেলে মেয়ে সব্বার পাশে ঢ্যাঁড়া দিয়ে দিতে হবে সে কথা বলেনি বুঝি কেউ ? পুলিশের নিজেরই শরীর খারাপ হতে নেই তো বৌ ছেলে মেয়ে ! আমাদের ঝড়, বৃষ্টি, বিয়েবাড়ি, অন্নপ্রাশন, ছেলেমেয়ের স্কুল, ফাংশন, দুগ্গাপুজো, কালীপুজো, দেওয়ালি, কাওয়ালি কিচ্ছু নেই ! কিচ্ছু নেই কিন্তু আবার সব আছে। মানে, সব্বাই এইসব ফুর্তি করে উদযাপন করবে আর তুমি শালা চোখের জল চোখে নিয়ে, সোনা মুখ করে দাঁড়িয়ে, দায়িত্ব নিয়ে সবার ফুর্তি সুসম্পন্ন করাবে। সেখানে পান থেকে চুন খসলেই ‘সব ব্যাটাকে ছেড়ে দিয়ে বেঁড়ে ব্যাটাকে ধর ! হুঁ ! কত পাপ করলে — হুঁহ !‘
বেল্টটা কোমরে আঁটতে আঁটতে কথাটা আর শেষ করলো না মেজবাবু।
তারপর কি ভেবে মেজবাবু বললো, ‘এক কাজ করো, তোমার সাথে অখিলের ডিউটি এক্সচেঞ্জ করে দিচ্ছি, আজকের দিনটা বাড়ির কাছাকাছি গড়িয়াহাটে থাকো, হঠাৎ দরকার পড়লে যেতে পারবে। মানসের ডিউটি আছে পাশের জোনে, মানসকে বলে দিচ্ছি, দেখো, আমি এইটুকু করতে পারি !’
সদানন্দ চুপচাপ ঘাড় নাড়লো। এটুকুই বা কে করে ! আপদে বিপদে ওই মেজবাবুই সদানন্দের ভরসা। রাজি না হয়ে সদানন্দর উপায় ছিলোনা। তাই মহালয়ার দিনে সদানন্দ তেঁতো মন নিয়ে সকাল থেকে জনতার রক্ষাকর্তা হয়ে গড়িয়াহাটের মোড়ে দাঁড়িয়ে।
ভীড়ের মধ্যে হঠাৎ সদানন্দর মনে হলো কোথায় যেন একটা মুখ দেখলো, যেটা তার খুব চেনা। আত্মীয় বন্ধু কেউ নয়, চেনার ব্যাপারটা থানার চৌহদ্দিতে, এবং সেটা গরাদের পেছনে। মুখটা একবার দেখা দিয়েই ভিড়ে হারিয়ে গেলো। আর সাথে সাথে মনে পড়লো, লোকটা ছিল ছিঁচকে চোর অথবা পকেটমার বা কেপমার ! মাস আষ্টেক আগেই থানায় আনা হয়েছিল কি একটা কেসে ! নামটা কমুয়া না জামুয়া কি যেন একটা ! জনতার মার খেয়ে প্রায় মরতে বসেছিল, ল্যাম্প পোস্টে বেঁধে উদোম মেরেছিল ব্যাটাকে ! হসপিটালে ছিল দিন চারেক। মনে মনে বিরক্ত হলো সদা, মার দেবার বেলা লোকের অভাব নেই, কোর্টে সাক্ষী দেবার বেলায় একটাকেও খুঁজে পাওয়া যায়না। সম্ভবত আইন হাতে তুলে নেবার শাস্তির ভয়ে কেউ সাক্ষী দিতে আসেনি। কেপমারটা বোধহয় প্রমানের অভাবে ছাড়া পেয়ে গিয়েছিলো। ভাবলো, আজকে ব্যাটাকে এখানে দেখাটা আশ্চর্য্য কিছু নয়, খুব স্বাভাবিক। এখনই তো এই কেপমার চোর জোচ্চোরগুলোকে সবচেয়ে বেশি দেখা যাবে, গুড়ের টিনে পিঁপড়ে থিকথিক করবে ! দুনিয়ার যত গাঁটকাটা, চোর জোচ্চোরগুলোর এখনই তো সুবর্ণ সুযোগ । গাদাগাদি ভিড়, কিনতে পাগল হিতাহিত জ্ঞানশূন্য জনতা, আর প্রায় সবার পকেটে টাকা ! সদানন্দ এবার আরো সজাগ দৃষ্টি নিয়ে তার পুলিশের চোখ দিয়ে সামনের ভিড়টাকে ছাঁকতে শুরু করলো !
*
বিনোদবিহারী বা বেন্দা দোনোমোনা করে শেষে রিস্কটা নিয়েই ফেললো। এতো লোক কেনাকাটা করছে, সংখ্যায় মেয়েরাই বেশি । সবার ট্যাঁকে টাকা আছে, বেন্দার কাছে যা টাকা আছে তার চেয়ে বেশিই হবে ! তারা যদি নির্ভয়ে কেনাকাটা করতে পারে, সে পারবে না ? সে রিস্কটা নিয়েই ফেললো। প্যান্টে হাত বুলিয়ে টাকার ব্যাগটা ভালো করে দেখে নিল আর একবার। তারপর স্থির করলো পুজোর কেনাকাটা খানিকটা করেই সে বাড়ি ফিরবে। গড়িয়াহাট মার্কেট সস্তাই হবে তার বাড়ির কাছের দোকানের চেয়ে। আজই সে বোনাসের টাকাটা পেয়েছে ! শালা বৃজলাল মালিক বলে যা খুশি তাই করবে ! সেই কবে থেকে বোনাসের টাকাটা দেবে দেবে করে এতো দিন ঘুরিয়ে শেষে আজ দিলো, তাও মহালয়ার দিন ভোর থেকে উদয়াস্ত খাটিয়ে নিয়ে ! বড়বাজার থেকে মাল এনে, লেবেলিং করিয়ে, গুনে গেঁথে সাজিয়ে দিয়ে তবে এতক্ষনে ছুটি পেয়েছে সে।
ভাবলো, এক অর্থে ভালোই হলো, অনেকটা টাকা ! এমাসের মাইনের টাকাটা আর এক মাসের পুজো বোনাস একসাথে দিয়েছে ! অন্য দিন দিলে সন্ধ্যেবেলা ভিড়ে ভর্তি বাস ট্রেন ধরে টাকাটা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হতো। যা দিনকাল, কোনো ভরসা নেই ! বাসে ট্রেনে কেপমার, পকেটমার থিকথিক করছে। খুব রিস্ক হয়ে যেত ! আজ ছুটির দিন, ডাউন ট্রেনে ভিড় হলেও বরং আপের লোকাল ফাঁকাই হবে এসময়। তারপর আবার উজিয়ে তাকে একদিন আবার কলকাতা আসতে হতো পুজোর কেনাকাটা করতে অথবা কাছের বাজারে যেতে হতো অফিস করে বাড়ি ফিরে। তার চেয়ে এ ভালোই হলো !
কেনাকাটা বেশি কিছু নয়। মায়ের আর বৌয়ের একটা শাড়ি, মেয়ে তিন্নির দুটো ফ্রক, আর নিজের জন্যে একটা হাফ পাঞ্জাবি। বাকি বৌয়ের নিজস্ব কিছু কেনাকাটা আছে, সেগুলো সাঁতরাগাছি বাজার থেকে কিনে নেবে বৌ দেখেশুনে ! সে ডিপার্টমেন্টটা একেবারে বৌয়ের, ওই ব্যাপারে সে মাথা ঘামায় না ! নতুন বিয়ের পরের বছর একবার সে জিজ্ঞেস করেছিল যে বৌয়ের কি কি নিজস্ব জিনিসপত্র লাগবে, বলে দিলে সে কিনে আনতে পারে। তাতে বৌ এমন হেসে উঠে গড়িয়ে পড়েছিল, যে সে তারপর থেকে কোনোদিন আর এর মধ্যে নাক গলানোর সাহস করেনি। সেটা মনে হতে তার এতদিন পরেও একটু লজ্জা করলো ! কি বোকা হাঁদাই ছিল সে ! অবশ্য অলকা মানে তার বৌয়ের কাছে সে এখনো বোকা হাঁদাই ! উঠতে বসতে শুনিয়ে দেয় বিনোদবিহারীর নাকি বাস্তববুদ্ধি বলে কিছু নেই ! সে মরুকগে, স্কুলে পন্ডিতমশাই কেন জানিনা মাঝে মাঝেই বলতেন, ‘স্ত্রীবুদ্ধি প্রলয়ঙ্করী !’ অলকার স্বভাব প্রলয়ঙ্করী নয় মোটেই ! যাকগে, পকেটের মধ্যে বোনাসের টাকাটা সাবধানে নিয়ে সে পা বাড়ালো বাস স্ট্যান্ডের দিকে।
বাস স্ট্যান্ডটা কাছেই, হেঁটে যেতে মিনিট পাঁচেক, আদ্ধেক পথ যেতেই কানে এলো ‘লিয়ে যান, লিয়ে যান, এখানে, এর চেয়ে কমে কোথাও পেলে সব মাল ফিরি, জামা ফ্রক লেগিন্স টপ, যা লাগে লিয়ে যান, আর মাত্র ক খানা পড়ে আছে,—আজই লাস্ট ! এরপর আর পাবেন না !’
ঘাড় ঘুরিয়ে একবার সেদিকে দেখতেই চোখ আটকে গেলো বিনোদবিহারীর। বড়ো ঘের দেওয়া এরকম ফ্রকের কথা তিন্নির জন্য তিন্নির মা বলছিল বটে কদিন আগে ! দেখাই যাকনা জিনিসটা কিরকম হয়, বৌ বলছিলো সাঁত্রাগাছিতে দেখেছে, দাম নাকি সাড়ে চারশো টাকা ! এখানে বলছে ‘যা নেবে সব দুশো !’ দুশো টাকার মাল ব্রিজ পেরোলেই ডবল ! শালা চোরে জগৎ ভর্তি ! এখানে একবার দেখলে ক্ষতিতো কিছু নেই ! ভালো লাগলে নেবে আর না হলে নেবেনা ! যাকগে, বাজারটা মেয়ের জামা দিয়েই শুরু করা যাক।
তার জামার ভেতরের বুক পকেটে ভাঙানি আছে, পাঁচটা একশো টাকা, এখানে তাকে মানি ব্যাগ বার করতে হবে না। বেন্দা, বিনোদবিহারী দাস, গুটিগুটি এগিয়ে গেলো ফুটপাতে ঢেলে ‘বিক্কিরি করা বাচ্চাদের ‘ডেরেশ মেটেরিয়ালের’ দোকানের দিকে। তারপর জগৎ ভুলে মেয়ে তিন্নির রঙের সাথে রং মিলিয়ে মাপ মতো ফ্রক পছন্দ করতে লেগে পড়লো। হুঁশ ফিরলো বাম কাঁধের ওপর তীক্ষ্ণ একটা ব্যাথায় কাতরে উঠে। কে কি ফোটালো দেখতে গিয়ে কাউকেই দেখতে পেলোনা। হঠাৎ মনে পড়লো, বোনাসের টাকাটার কথা, ধড়াস করে উঠলো বুকটা, – কেপমার ! চমকে উঠে পকেটে হাত দিয়ে মানিব্যাগটা দেখতে গিয়ে আবিষ্কার করলো সেটা সেখানে নেই ! মেয়ের সদ্য চয়েস করা জামাটা হাতে ধরে সে বজ্রাহতের মতো স্থানু হয়ে বসে পড়লো রাস্তায়।
*
কোমে এই কায়দাটা বেশ ভালোই রপ্ত করেছে, মানে কেপমারির পরে দ্রুত ভিড়ের মধ্যে লুকিয়ে পড়াটা। জোরেও নয়, খুব আস্তেও নয়, প্রত্যেক ভিড়ের একটা নিজস্ব গতি আছে, তার সাথে তাল রেখে এক্কেবারে ‘কেউ না’ হয়ে যাওয়া। মুখে তো নয়ই, এমনকি মনে মনে অবধি সাধারণ বনে যাওয়া ! এই যে কেপমারিটা করে এলো, কোথ্থাও যেন তার ছাপ না পড়ে ! এক্কেবারে মনে প্রাণে ‘কিচ্ছু জানিনা স্যার !’ ভাব ! একটু এদিক ওদিক বেচাল হলে মুশকিল ! কারণ কেপমারিটা করার সময় যদি কারো চোখে পড়ে যায়, সে যেন ভিড়ের মধ্যে তাকে আর দেখলেও আলাদা করে চিনতে না পারে ! সতর্ক কিন্তু নিরীহ ভাবে ভিড়ের মধ্যে দিয়ে কাটিয়ে কাটিয়ে সে যখন সুলভ শৌচাগারের সামনে এক টাকা দিয়ে টিকিটটা নিল, তখনই সে হাঁফ ছাড়লো ! নাহ, তাকে কেউ দেখেনি ! এবার পায়খানায় ঢুকে নিশ্চিন্তে মানিব্যাগটা খুলে দেখতেই মেজাজ খুশ হয়ে গেলো ! শালা, এক্কেবারে দশটা দু হাজার টাকার নোট, বিশ হাজার টাকা ! আর দুটো পঞ্চাশ টাকার নোট আলাদা করে অন্য খাপে। আজ শালা তাকে পায় কে ! ওস্তাদ কে দিতে হবে ব্যাগ শুদ্ধ, এখানে গদ্দারী করলে আখেরে ফল ভালো হবেনা। ওস্তাদকে ব্যাগ দিয়েও তার ভাগে পাওনা বেশ ভালোই হবে।
প্রথম কাজটা ভালো ভাবে উৎরে গেছে, টেনশনে থাকা পেটও খালি হলো এখন, খিদে পেয়েছে সাংঘাতিক, এবারে সে পেট ভরে কিছু খাবে। খালি পঞ্চাশ টাকার নোট দুটো সরিয়ে নিলেই হবে ! বিরিয়ানি আর চিকেন চাঁপ ! মানিব্যাগটা খুলে টাকার নোট দুটো বার করতেই চোখে পড়লো ব্যাগের সামনে একটা ছবি ! একটা বাচ্চা মেয়ে, বছর পাঁচ কি ছয়, টিকটিকে রোগা, একটা হলুদ রঙের ওপর কালো ছোপ বেঢপ সাইজের হাত কাটা ফ্রক পড়ে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আছে ! একটা হাত কোমরে আর একটা হাত মাথার ওপরে তোলা। ব্যাগটা মুড়তে গিয়েও মুড়তে পারলো না কোমে। চোখের কাছে এনে ভালো করে দেখতে লাগলো ছবিটা। ছবিটার নিচে একটা নাম লেখা, ইংরিজিতে বড়ো অক্ষরে। সিনেমার পোস্টার আর সাইনবোর্ড পড়া সীমিত অক্ষরজ্ঞান নিয়ে নামটা পড়তে পারলো কেপমার কোমে। আর তারপর কেন কে জানে, কেপমারটা সুলভ শৌচাগারের দুর্গন্ধে ভরা বন্ধ তিন ফিট বাই তিন ফিট পায়খানাতে বসে রইলো অনেকক্ষন।
*
ডাক্তারখানাতে অনেকক্ষন ঝিম ধরে বসে রইলো বিনোদবিহারী ! শরীরে একফোঁটা শক্তি নেই তার। তার চোখের সামনে থেকে পুজোর সমস্ত আনন্দ মুছে গিয়ে সেখানে এখন শুধুই একটা শূন্যতা। সামনের রাস্তায় এই উৎসবমুখর জনতার কোলাহল এখন তার কাছে একটা প্রকান্ড বিদ্রুপ মনে হচ্ছে। কোন মুখে বাড়ি ফিরবে সে ? বাড়ি গিয়ে সে কি বলবে ? মেয়েটা বসে আছে বাপ তার কখন আসবে, পুজোর জামা কিনতে যাবে, বুড়ি মা আর বউ বসে, পুজোর কটা দিন বছরভোর দুঃখ ভুলে আনন্দ করবে বলে। গোটা মাসটা সামনে পড়ে, কি করে চলবে ? যতবার ভাবছে, ভয়ে, আশংকায়, আর একটা বিষণ্ণ অপমানে গা হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে তার। মনে হচ্ছে, যা ঘটেছে আর তার সামনে এখন যা যা হচ্ছে সেটা একটা দুঃস্বপ্ন ! একবার জোর করে উঠতে গিয়ে মাথা ঘুরে গেলো বিনোদবিহারীর। সে আবার কোনোক্রমে বসে পড়লো বেঞ্চের ওপর।
সদানন্দ ভিড় দেখে এগিয়ে এলো ফুটপাতের দোকানটার দিকে। একটা লোক অজ্ঞান হয়ে রাস্তায় শুয়ে পড়েছে আর তাকে ঘিরে কিছু লোক বোতল থেকে মুখে মাথায় জল ঢালছে। সদানন্দ একদম সামনে এসে হাত নেড়ে বললো, ‘দেখি, সরুন আপনারা, আমাকে দেখতে দিন দেখি কি হয়েছে !’
লোকজন একটু সরে জায়গা করে দিল সদাকে। দোকানদার ছেলেটি সদানন্দকে দেখে বুঝতে পেরেছে যে সদানন্দ পুলিশ। কঠিন পরিস্থিতিতে পুলিশের ভাবভঙ্গি সাধারণ মানুষের থেকে আলাদা হয় বলেই হয়তো বুঝতে পেরেছে। সামনে এসে প্রথমেই বললো, ‘স্যার, আমি কিন্তু কিছু জানিনা, লোকটা জামা দেখছিল, দেখতে দেখতে হঠাৎই বসে পড়ে চেঁচিয়ে উঠে অজ্ঞানের মতো হয়ে গেলো। মিরগি আছে বোধয় !’
জলের ছিটেয় জ্ঞান ফেরার পর ডুকরে কেঁদে উঠলো লোকটা, তারপর কখনো গুঙিয়ে গুঙিয়ে কখনো হাউহাউ করে কেঁদে যা বললো তাতে সদানন্দর আর কোনো সন্দেহ রইল না ! হ্যাঁ, সে ঠিকই দেখেছিল, এ সেই কমুয়া না জামুয়ার হাতের কাজই বটে ! এই লোকটার ওপরে কেপমারি করেছে ! ধরাধরি করে জুবুথুবু লোকটাকে কাছেই উল্টোদিকে ডাক্তারখানায় নিয়ে গিয়ে ডাক্তারের সহকর্মীকে নিজের পরিচয় দিয়ে আর কি ঘটেছে সেটা বলে বেরিয়ে এলো সদানন্দ বটব্যাল। কলকাতা পুলিশের দায়িত্বশীল কনস্টেবল। নাহ, কেপমারটাকে খুঁজে বার করা কঠিন হবে না, তবে ও টাকা আর ফেরত পাওয়া যাবে বলে মনে হয়না। এতক্ষনে টাকাগুলো ভাগ বাঁটোয়ারা হয়ে গায়েব হয়ে গেছে, এই যা দুঃখের ! খারাপ লাগলো, কিন্তু সদানন্দ কি বা করতে পারে ? তবু লোকটাকে ধরা একান্ত প্রয়োজন, সে এবার ডাক্তারখানা থেকে বেরিয়ে দ্রুত হাঁটা দিলো। দেখা যাক খোয়া যাওয়া টাকার খানিকটাও যদি উদ্ধার করা যায় !
সবচেয়ে আগে এই প্রফেশনে শেখা একটা গোল্ডেন রুল মনে পড়লো সদানন্দর, লোকটা সর্বপ্রথমে ব্যাগটা সঙ্গীসাথীদের কাছে পাচার করার চেষ্টা করবে, আর সেটা না হলে একটা নির্জন জায়গা খুঁজবে গা ঢাকা দিয়ে মানিব্যাগটা খালি করার জন্যে। কিন্তু কাছাকাছি সঙ্গী সাথী সম্ভবত কেউ ছিলোনা, কারণ তা হলে সদানন্দকে চিনতে পেরে সঙ্গী সাথী লোকটাকে কেপমারি কাজটা করতে দিতোনা। হাজার হোক, সদানন্দ এত বছরের অভিজ্ঞতায় দেখেছে যে পুলিশের চোখ যেমন অপরাধীকে চিনে নেয়, অপরাধীর চোখও পুলিশ চিনতে ভুল করেনা। কেপমারটা একলা থাকায় সদানন্দকে চিনতে পারেনি। কাজেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগটা পাচার হয়নি বলেই মনে হয় । এবার দ্বিতীয় সম্ভাবনাটা হলো, এই ভিড়ে সবচেয়ে কাছের নির্জন জায়গা কোথায় হতে পারে যেখানে লোক চক্ষুর অন্তরালে কেপমারটা ব্যাগটা হালকা করবে ? একটা জায়গায় মনে হলো সদানন্দর ! ঘটনাটা ঘটার পর প্রায় মিনিট পনেরো কেটে গেছে, এতক্ষনে হয়তো সেখানও কিছুই পাওয়া যাবে না। তবু চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি ! সে সেই জায়গাটার উদ্দেশ্যে খুব দ্রুত পা চালিয়ে দিল।
সুলভ শৌচালয়ের ছেলেটাকে কেপমারটার চেহারার বর্ণনা দিয়ে জেরা করে যখন সে বুঝলো যে সে ঠিক জায়গায়ই এসেছে ততক্ষনে কিন্তু সেখান থেকে পাখি উড়েছে ! নাহ আর তাড়া নেই ! বেচারি ভিক্টিমটাকে নিয়ে গিয়ে থানায় একটা এফআইআর করাতে হবে, জানা হয়নি লোকটার হাতে বাড়ি ফেরার টাকা পয়সা আছে কিনা, না থাকলে কিছু একটা বন্দোবস্ত করে দিতে হবে। সদানন্দ ডাক্তার খানার দিকে ফিরলো।
*
‘এই যে, ও দাদা ! এটা কি আপনার ব্যাগ ? রাস্তায় পেলাম, ওই সামনের ডেরেশ মেটেরিয়ালের জামাওয়ালা বললো আপনি নাকি ব্যাগ হারিয়েছেন !’
বিনোদবিহারীর মনে হচ্ছে এখনো স্বপ্ন দেখছে ! ছেলেটা বলে কি ? বিনোদবিহারী ঝাঁপিয়ে পড়লো ডাক্তারখানার দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা খোঁচা খোঁচা দাড়িওয়ালা পাঁচফুটের রোগা কালো ছেলেটার হাতে ধরা ব্যাগটার ওপর ! সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ খুলে দেখলো সেখানে দু হাজার টাকার নোটগুলো যেমন ছিল তেমনি আছে ! দু চোখ ছাপিয়ে জল বাঁধ মানলো না বিনোদবিহারীর, থরথর করে কম্পমান ঠোঁট কি বলতে চাইলো বোঝা গেলোনা। আর সেই মুহূর্তেই দরজায় এসে দাঁড়ালো সদানন্দ বটব্যাল, ঝট করে এসে চেপে ধরলো রোগা কেপমারটার না খেতে পাওয়া বিশীর্ণ ঘাড়টা ! বললো, ‘তুই ব্যাটা সেই কমুয়া না জামুয়া কেপমারটা না ? গতবারে অমন মার খেয়েও তোর শালা শিক্ষা হয়নি ? চল শালা থানায়, আজ শালা হাতেনাতে ধরেছি তোকে !”
*
সদানন্দ রাস্তায় এসে একবার ভালো করে তাকালো শক্ত করে ধরে থাকা কেপমারটার দিকে। বিশ্বাস হয়না সদানন্দর, ব্যাটা নামটাও তো ঠিকই বলছে, কোমে, কমুয়া ! বিশ্বাস হয়না এই আকাঠ কালুয়া কেপমারটা নাকি ব্যাগটা ইন্টাক্ট ফিরিয়ে দিয়েছে, একটি পয়সাও খোয়া যায় নি ! সদানন্দ আবার ভালো করে একবার তাকালো কেপমারটার দিকে। হঠাৎই ফোনের শব্দে সম্বিৎ ফিরলো সদার, খেয়াল হলো, পকেটে ফোনটা বাজছে, বাড়ি থেকে নয় তো ? বুকটা ধক করে উঠলো !
বাম হাতে ফোনটা কানে তুলতেই বৌয়ের গলা। ‘শোনো, শ্রীরামপুর থেকে দাদা এসেছে, ডাক্তার দেখিয়ে আনলাম তিন্নিকে, বললো, ভয়ের কিছু নেই, ঠান্ডা লাগিয়েছে তোমার লাডলি, এন্টিবায়োটিক দিয়েছে, দুদিন খেলেই ঠিক হয়ে যাবে ! তুমি বেশি চিন্তা করোনা, বুঝলে ? তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরো, আর সন্ধ্যেয় ফেরার সময় বিরিয়ানি আর চিকেন চাঁপ আনবে, তোমার আদুরী খাবে বলে বায়না করেছে ! এখন রাখছি, বুঝলে !’
ডান হাতটা আলগা হয়ে এলো সদানন্দের, কি মনে হলো, মানিব্যাগটা বার করলো, একটা একশো টাকার নোট বার করে কালো রোগা খোঁচা খোঁচা দাড়িওয়ালা কেপমারটার হাতে দিয়ে বললো, ‘যা: এবারকার মতো ছেড়ে দিলাম, আমার এলাকায় যেন আর না দেখি ! আর এই নে, এটা দিয়ে বিরিয়ানি আর চিকেন চাঁপ খেয়ে নিগে যা, যা:, পালা হতচ্ছাড়া !’
হাতঘড়ি দেখলো সদা, ঘড়ি বলছে সাড়ে বারোটা, কিন্তু এইসময় কে আবার কোথায় মহিষাসুরমর্দিনীটা চালিয়ে দিয়েছে, ফুল ভলিউমে বাজছে মন্দ্র স্বরে,
– আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জীর। ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা; প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমনবার্তা। আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি অসীম-ছন্দে বেজে উঠে রূপলোক ও রসলোকে আনে নবভাবমাধুরীর সঞ্জীবন —- !’
গানটা আরম্ভ হলো,- ”বাজলো তোমার আলোর বেণু, মাতলো যে ভুবন !’
আজ যে মহালয়া !
[বানানবিধি ও মতামত লেখকের নিজস্ব]
Tags: short story, আজ মহালয়া, গল্প, গল্পের সময়, হিয়া রাজা
email:galpersamay@gmail.com
মতামত
আপনার মন্তব্য লিখুন
আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।