04 Dec

গাঁও মানুষের গালগল্প

লিখেছেন:সুদীপ ঘোষাল


এক

জায়গাটা অট্টহাস সতীপীঠের কাছে। বর্ধমান জেলার কেতুগ্রাম অঞ্চলের দক্ষিণডিহি গ্রামে সুখদেব বাস করে।মাধু তার পাশের প্রতিবেশী। সুখদেব অট্টহাস মন্দিরে সাধুবাবার অনেক কাজ করে দেয়।পরিণামে দুপুরের খাবারটা বাড়িতে লোক না থাকলে খায়।সুখদেব জাতে বাউড়ি।সুখদেব যখন সাধুবাবার কাছে বসে তখন সাধুবাবা এই সতীপীঠের ইতিহাস সুখদেবকে শোনায়।সুখদেব কিছু না বুজলেও চুপ করে শোনে।

সাধুবাবা বলেন,সত্য যুগে দক্ষ যজ্ঞে সগ্তীরামজীবনের শিবনিন্দা সহ্য করতে না পেরে দেহত‍্যাগ করেন। এর পর মহাদেব বীরভদ্রকে পাঠান দক্ষকে বধ করতে।সতীর দেহ নিয়ে তিনি শুরু করেন তাণ্ডবনৃত্য ।ফলে বিষ্ণু  সুদর্শন চক্র দিয়ে সতীর দেহ বিভিন্ন ভাগে খণ্ডিত করেন। এই অংশ গুলো যেখানে পরেচে সেখানে শক্তিপীঠ  হয়েছে বুজলি সুখদেব।

সুকদেব বলে- হুঁ।

-এরপর অনেক বছর কেটে যায়।এই স্থান জঙ্গল হয়ে ওঠে।তখন এ স্থানের নাম ছিল খুলারামপুর বা তুলারামপুর।পরবর্তীতে এই গ্রামের নাম দক্ষিণ ডিহি হয়।এই গ্রামে কিছু কৃষক বাস করত।তারা মাঠে চাষবাদ করত। ঈশানি নদীর ধারে অবস্থিত এ স্থান ছিল ঘন জঙ্গলে ঢাকা। দিনের বেলাতেও ওখানে কেউ যেত না। একদিন কৃষকরা চাষ করতে গিয়ে এক সাধুবাবাকে জঙ্গলে ধ‍্যানমগ্ন দেখতে পায়।তাড়া কৌতূহলী হয়ে দলবদ্ধভাবে তার কাছে যায় ও তাকে প্রণাম করেন।সাধুবাবা এখানে যজ্ঞ করেন।যজ্ঞ শেষে তিনি যজ্ঞস্থানে একটি ত্রিশূল পুঁতে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান।চলে যাবার আগে বলেন, এটি একটি সতীপীঠ, বুজলি। ঘুমিয়ে গেলি নাকি?

– না না আপনি আরও বলেন কেনে।

সাধুবাবা আরও বলেন,এখানে দেবী ফুল্লরা ও ভৈরব বিশ্বেশ ।এখানে দেবীর দন্তুরা চামুণ্ডা মূর্তি ।এখানে দেবীকে অধরেশ্বরী নামে পূজা করা হয়।এখানে আছে এক প্রাচীন শিলামূর্তি।মন্দিরের অষ্টধাতুর মূর্তিটি চুরি হয়ে গেছে।

সাধসারা বছর এখানে ভক্তরা আসে।তবে নভেম্বর থেকে মার্চ মাস এ পাঁচ মাস এখানে বহু ভক্তের সমাগম হয়।বহু ভক্তের ইচ্ছাপূরণ হয়েছে এখানে পূজা দিয়ে ।দোলের সময় এখানে বিশাল মেলা বসে। এখানে থাকার জন্য অতিথি নিবাস আছে।মন্দির থেকে ভক্তদের থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সুখদেব শুনে বলে,পেন্নাম হই সাধুবাবা।আমার মাথায় ওসব ঢোকে না, তবে শুনে ভালো লাগলো বটে।

সুখদেব বাউড়ি বগলে একটা লাঠি আর হাতে একটা হেঁসো নিয়ে ঘোরে রাতদিন।ধারালো হেঁসো দিয়ে শুকনো ডালপালা কাটতে কাটতে বলে,এই হেঁসো দোবো তোর গলায় বসিয়ে যেদিন সেদিন আমার শান্তি হবে।জঙ্গলে তার পাশেই ছিপ হাতে বসেছিল নাড়ু বাউড়ি। সুখদেবের একথা শুনে ভয় পেয়ে বলে ওঠে,কেনে কি করলাম আমি। সুখদেব ওকে দেখেনি এখন তাকে দেখে লাঠি বগলে হেঁসো আর জঙ্গলের শুকনো ডালপালা নিয়ে হনহন করে হাঁটা লাগাল।

সুখদেব এই শুকনো ডালপালা বাড়ির উঠোনে রাখে। তারপর তার ছেলের বউ রান্নাশালে বসে উনুনে গোঁজে শুকনো ডালপালা।

বাউড়ি হল হিন্দু জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। এই বাউরীরা ভারতের কোনাে বহিরাগত জাতি নয়। এরা আমাদের দেশের আদিম অধিবাসী। পূর্ব বর্ধমান  জেলায় বর্তমানে আনুমানিক বাউরী জাতির সংখ্যা প্রায় চার লক্ষের কাছাকাছি। পূর্ব বর্ধমান জেলার নবগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতে  বংশক্রমে বাউরীদের বাস আছে।

গ্রামের প্রধান সাহেব বলেন, সমগ্র জেলাব্যাপী প্রত্যেক থানাতেই এদের বসবাস রয়েছে। তবুও একটা জিনিস বিশেষভাবে লক্ষ্য করবার বিষয় এই যে, পুরুলিয়া জেলার পূর্বাংশ ও বাঁকুড়া জেলার পশ্চিমাংশের যে এলাকাটিকে পশ্চিম রাঢ়ের কেন্দ্রভূমি বলা যেতে পারে, সেই এলাকাতেই বাউরীদের ঘনবসতি গড়ে উঠেছে।

নবগ্রামে বাউড়িদের প্রাধান্য বেশি।প্রধান সাহেব তাদের খোঁজখবর নেন।এবার বন্যায় বাড়ি ভেঙে গেলে সুখদেব পাকা বাড়ি পায়।

সুখদেব নিজের মনে বিড়বিড় করে আর বলে,দোব শালাকে গলায় হেঁসো বসিয়ে।পাশে কেউ থাকলে জিজ্ঞেস করে, কাকে বসাবি রে, সুখদেব?

সুখদেব উত্তর দেয় না। একবার মুখ তুলে তাকিয়ে হাঁটা লাগায়।তার এই পাগলামির জন্য অনেকে তাকে এড়িয়ে চলে।বলা তো যায় না, কখন বেটার বিগার চাপে,একথা বলে তার পাশের বাড়ির মাধু।

সুখদেব বসে থাকার লোক নয়। সারাদিন সে টো টো করে ঘোরে।বাড়িতে সে খালি হাতে ঢোকে না।কখনও গামছায় বাঁধা চুনোমাছ বা কখনও শুকনো ডালপালা নিয়ে ঢোকে বাড়ি।

তার ছেলে আর ছেলের বউ রোজগার করে।সুখদেবের বউটা বড় বন্যায় ভেসে গিয়েছে জলে।এখন ওরা তিনজন।

সুখদেবের মনে পড়ে, সেবার বানে ঘরবাড়ি ভেঙে গেলে বটগাছের ডালে তারা ওঠে সবাই।একই ডালে সবাই থাকায় ডালটা মট করে ভেঙে পড়ে জলে।সুখদেব ছেলেকে বাঁচায় ভীষণ স্রোত থেকে কিন্তু বউটাকে বাঁচাতে পারে নি।সেইথেকে সুখদেবের মাথাটা কেমন পাক খেয়ে শুধু বানের জলের স্রোতের মত ঘুরপাক খায়। কোনকিছু সাজাতে পারে না। ঘুমোবার সময় বলে ওঠে, দোব শালার গলায় পেঁচিয়ে।

আসলে বাড়িভাঙার কারণ অতিরিক্ত ছাড়া জল। পঞ্চায়েতের বড়বাবু বলেন,ম্যানমেড ফ্ল্যাড।বুঝিয়ে বলাতে সুখদেব বুঝতে পারে।সে বড়বাবুকে বলে,লিয়ে আসতে পারেন ওকে আমার সামনে।একটা লাঠির ঘা ওর পিঠে বসালে বউ মরার দুঃখটা কমত একটুখানি।

বড়বাবু বলে,ওসব বলতে নাই সুখদেব। তোমার দুঃখ গ্রামের সবাই বোঝে।

সুখদেব ভাবে,কই বাউড়িদের ছেলেমেয়েগোলা নেকাপড়া শেখে না কেনে।সারাজেবন শালা আমাদের মত হয়ে থাকলে হবে।

মাধু বলে ছেলেমেয়েরা তার কথা শুনে গ্রামের স্কুলে পড়ে।সকলে সুখদেবকে বুঝতে লারে।ওর মনে একটা সোনার পাথর আছে।

মাধুর কথা শুনে বড়বাবু বলে, তুই তো সুখদেবকে বিয়ে করতে পারিস।তু তো বাঁজা বলে শ্বশুরঘর থেকে চলে এলি।এখন ওকে বিয়ে করে সুখে থাক।

মাধুর বলে, এ কথাটা মনে আসে নাই ত লয়,তবে পাগলাটা যদি মারে?

বড়বাবু বলেন,ও মারবে না।মুখে বড়াই করে।

তারপর মাধু ঝাঁট দিয়ে বড়বাবুর ঘর পরিষ্কার করে।বড়বাবু পেছনদিকে জড়িয়ে ধরে আদর করে।তারপর পাঁচশ টাকা গুঁজে দেয় মাধুর গতরে।

সুখদেব বাড়িতে ভাত থেকে মদ তৈরি করে।বাউড়িপাড়ার পাশ দিয়ে গেলে এই পচাভাতের গন্ধ ভুরভুর করে।

মাধু বলে কি করে হয় গো মদ?

সুখদেব বলে,তোর কি দরকার।তবে জানতে যখন চাইছিস,তবে শোন। ভাত পচে গেলে একটি বড় হাঁড়িতে বসিয়ে তা ফের ফোটানো হয় উনুনে। ওই হাঁড়ির উপরে বসানো হয় আরও একটি হাঁড়ি। পচা ভাতের বাষ্প পাইপের মাধ্যমে ফোঁটা ফোঁটা করে জমা হয় জারিকেনে বা বোতলে।

মাধু বলে, এটাই হচ্ছে চোলাই মদ বা ইথাইল অ্যালকোহল।

সুখদেব বলে,তু তো একটু নেকাপড়া জানিস। তুই বলতি পারবি কি এটা।আমি বুঝি না।ভালো লাগে খাই,বউটার মায়া গুলে খাই, ব্যাস।

মদ খেয়ে নেশার চোখে,  মাধুকে আড়চোখে দেখে সুখদেব।সে বলে,আমার কাছে চালাকি লয়,দোব শালা গলায় পেঁচিয়ে।

মাধু ধরাপড়ার ভয়ে ঘরে ঢোকে আর ঘরের ফুটো দিয়ে দেখে মাধু, সুখদেব ওর বউকে খোঁজে তার বাড়ির চারপাশে।বড়মায়া হয় মাধুর। আকার ধোঁয়ার মত ভালোবাসটা গভীরে গিয়ে জলে ভেজে। সুখদেবের মনটা কখন যে মাধু ধরে ফেলে, সে জানে না।

বাউড়িপাড়ায় উনুনকে, আকা বলে।ওদের কিছু কিছু ভাষা নিজস্ব।তাদের সমাজে প্রচলিত ভাষা।আর তাদের কথায় কথা বলে আনন্দ পায় মাধুর মত মেয়েরা। বন্যাকে ওরা বান বলে,কেন কে বলে কেনে।

একদিন রাতে মাধু স্নপ্ন দেখে, সুখদেব তার ওপরে চেপে সুখের বানে ভেসে চলেছে দেহবানের জলে।মাধু ধরপর করে উঠে দেখে না স্বপ্ন নয়,তার পাশে সুখদেব হাঁপাইছে।তার  ঘরের চাল খড়ের। খড়ের চাল ফুটো করে সুখদেব ঢুকে তাকে সুখের বানে ভাসিয়েছে।মাধু মনের আনন্দে সুখদেবকে জড়িয়ে ধরে। ভোরবেলায় আবার সুখদেব ঘর থেকে বেরিয়ে জঙ্গলে যায়, তালপাতার খোঁজে।সে ভাবে, ঘরের চালটা ফুটো হইছে, তালপাতা দিয়ে বেঁধে দিলেই হবে।তা না হলি বর্ষার জল ঢুকে মাধুকে ভেজাবে।বড়বাবুকে অফিসে যেতে দেখে, বানের জলের মত সাহসে সে  বলে ওঠে,দোব শালাকে গলায় পেঁচিয়ে।

বড়বাবু ভয়ে তার দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বিন্দু হয়ে মিলিয়ে যায়।

দুই

মাধুকে কেউ আর নাম ধরে ডাকে না।সকলে বলে,বাউড়িপাড়ার বউ।বাউড়ি বউ ধাই মায়ের কাজ জানে।পূর্বে সে গর্ভবতী নারীর গর্ভ খালাস করত, বাড়িতে।বাউড়ি বউ বলত,তালপাতার ধার দিয়ে নাড়ি কাটলে সেপটিক হয় না গো।সেদিন নাপিত বউ বলল,আর এ কাজ করো না কেনে?

বাউড়ি বউ বলে,এখন কত হাসপাতাল হয়েছে।হাসপাতালে খালাস হওয়াই ভালো গো।কোনো ভয় থাকে না।

নাপিত বউ খুশি হয়ে বলে,তা ঠিক বটে।

হারু নাপিত আর বাবুরাম সর্দার গাজনে লাঠালাঠি করেছে।দুজনেরই মাথা ফেটেছে।গ্রামে দুটো দল হয়েছে।একটা হারু নাপিতের দল আর একটা বাবুরামের দল।বাবুরামের বুকের পাটা দেখলেই হারু নাপিত ক্ষুরটা বের করে একটা রাবারে ঘষে ধার করার জন্য। কেউ জিজ্ঞেস করলে হারু বলে,মাষ্টারের বাড়ি যাব গো।দু সপ্তাহ যাওয়া হয় নাই।

বাবুরাম জানে আসছে বছর গাজনে ওরা আবার মারার চক্রান্ত করবে।বাবুরামও কম যায় না।লাঠিতে তেল মাখিয়ে রাখে।

তারপর বন্যা এল।অজয়নদের বাঁধ ভেঙে জল ছুটেছে গ্রাম ভাসিয়ে।

বাবুরাম গ্রামের সকলের জিনিসপত্র বাবুদের ছাদে তুলছে।ছাদে বসে হারু নাপিত মাল গুছিয়ে রাখছে।বাবুদের এই তিনতলা বাড়িতে বন্যা এলে সকলে আশ্রয় নেয়। এই অসময়ে হারু বলে,বাবুরাম সকলের প্রাণ বাঁচাতে হবে।বাবুরাম বলে,তুমি সাহস দিলে বাবুরাম একাই একশ জনের কাজ করবে।

হারু বলে,আমার দলের ছেলেপুলেরাও তোমার কথায় কাজ করবে।এই শিবে, যা তো বাবুরামের সঙ্গে।

শিবে বলে,চল বাবুরামদা, আমরা গ্রামের লোকের কাজে লাগি।বানে সব ভেসে যেচে। অই দেখ বাবুরামদা একটা খড়ের চালে পরিবারের সবাই ভেসে চলেছে।

বাবুরাম হাঁক পাড়ে,ভয় নাই আমরা আছি।তারপর সাঁতার কেটে খড়ের চালটা দুজনে ধরে ডাঙায় নিয়ে আসে।

এইভাবেই মিলেমিশে চলে গ্রাম্য সভ্যতার  নৌকা।অজয়নদের আশেপাশে অনেক পীঠস্থান আছে।হারু নাপিত সন্ধ্যাবেলায় মন্ডপতলায় বসে তার বন্ধুদের বলে,ক্ষীরগাঁয়ের দেবী, ৫১ পীঠের এক পীঠ। ক্ষীরগ্রামস্থিত দেবী যোগাদ্যার পূজা কাহিনীর ইতিবৃত্ত উদঘাটনে উঠে আসা গল্পটির বর্ণনায় ৷ শোনা যায় একদা হরিদত্ত নামে এক রাজার সন্নিকট দেবীর আগমনে শুরু হয় এই পূজা ৷ সপ্তাহব্যাপী মহাধুমধামের মধ্য দিয়ে চলে ৷ কিন্তু অত্যাশ্চর্য ঘটনাটি হল পূজা হত নরবলি দিয়ে ৷

কাটোয়া মহকুমার কেতুগ্রাম থানার একটি প্রাচীন ও সমৃদ্ধ জনপদ কেতুগ্রাম। কাটোয়া শহর থেকে কাটোয়া-বহরমপুর বাসে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরত্বে ঈশানী নদীর তীরে প্রাচীন গ্রাম বহুলা অন্যতম সতীপীঠ নামে পরিচিত। পূর্বনাম বহুলা হলেও বর্তমানে এটি কেতুগ্রাম নামেই বেশি পরিচিত। তিলি রাজবংশের কেতুরাজগণ এখানে রাজত্ব করেন এবং নাম হয় কেতুগড়। তার থেকেই কেতুগ্রাম হয়েছে। পীঠ নির্ণয়তন্ত্রের মতে, এই বহুলায় দেবীর বাম বাহু পড়েছিল। শাস্ত্রে আছে, বহুলায়াং বামবাহুর্বহুলাখ্যা চ দেবতা/ভীরুকো দেবতাস্তত্র সর্বসিদ্ধিপ্রদায়কঃ।
কঙ্কালেশ্বরী মন্দিরটি বর্ধমান শহরের কাঞ্চন নগরে অবস্থিত। ১৭০০ খ্রিস্টাব্দে দামোদরের পাশের নদীতে মন্দিরের কালী প্রতিমাটি পাওয়া গিয়েছিল। মন্দিরে নয়টি শৃঙ্গ রয়েছে যার ফলে “নবরত্ন মন্দির” নামে পরিচিত। এটি পূর্ব বর্ধমানের দ্বিতীয় নবরত্নবিয়ে  মন্দির। হারু নাপিতের ব্রাহ্মণদের সঙ্গে ওঠাবসা ফলে এসব খবর তার নখদর্পনে।

চলে এল বাবুরামের বিয়ে। বিয়ে পাশের গ্রামের মেয়ের সঙ্গে হবে।হারু নাপিত ব্রাহ্মণ নিয়ে এসে হাজির হল বাবুরামের বাড়িতে।খুব ধুমধাম  করে বিয়ে হয়ে গেল।এবার বর ঘরে ঢুকতে গিয়ে দেখল,দরজা বন্ধ কনের ঘরের।মেয়েরা বরকে ঘিরে ধরেছে,পাঁচহাজার না দিলে কনের ঘরে বরকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।এবার ডাকা হল হারু নাপিতকে।হারু নাপিত ছড়া ধরল,শুনুন শুনুন নারীগণ, দরজা বন্ধ কী কারণ।কোন শাস্ত্রে লেখা আছে,ইহার বিবরণ।আপনারা হাজার টাকা নিন,মিষ্টমুখ করে নিয়ে রামসীতার মিলন  করে দিন।

সঙ্গে  সঙ্গে সকল নারীগণ হাততালি দিয়ে দরজা খুলে দিলেন খুশিমনে।

তিন

চন্ডীদাসের মত ছিপ ফেলে বিপিন মাছ ধরছে ফাতনার কথা ভুলে। ডাগর দুপুর জলে নেমেছে।বাউরি বৌ গুগুলি আর  ঝিনুক ধরছ জলের তলা থেকে। তার সুডৌল স্তন ঝুঁকে পরেছে জল ছুঁয়ে। জল কখনও সখনও রসে ডুবিয়ে দিচ্ছে যুবতী হৃদয়। বিপিন দেখছে ভিজে নিতম্বে খাজুরাহের ছবি।বিপিন ভাবছে ঝিনুক, গুগুলির সোহাগ, বাউরিবৌকে সোহাগী প্রেমিকা রূপে গড়ে তুলেছে । কালো জঙ্গুলে মোহময়ী পুকুরের পাড়ে গাছ গাছালির স্নেহচ্ছায়া।  দুপুরে মিথুনছায়ায় হাঁস হয়ে উঠেছে বসন্তমায়া। কোন এক অদৃশ্য টানে বাউরিবৌ মাঝে মাঝে তাকায় বিপিনের দিকে। কেউ কোথাও নেই। দুপুরের অবসর বাউরি বৌ ধরে শামুক, ঝিনুক। অলস স্বামীর খপ্পরে পরে জীবনে তার লড়াই প্রকট হয়ে উঠেছে। বিপিন বেকার যুবক। তাই ছিপ নিয়ে বসে এই সময়ে বাউরিবৌকে দেখার লোভে। সুন্দরী বাউরি বৌ ভোলে না এই বসন্তসময়। কি বর্ষা, কি শীত বা গ্রীষ্ম দুজনের বসন্তসময় কেড়ে নিতে পারে না।

আজ নির্ভিক পৌরুষ জলে নেমেছে। বাউরিবৌ কাপড় ঝেড়ে জলে ধুয়ে নিচ্ছে। দুজনেই ডুবে আছে আকন্ঠ শীতল জলিয় আবরণে। জলের নিচে চলেছে জলকেলি। একটা পানকৌড়ি ডুবে ডুবে   মাছ ধরার কৌশল দেখায়  প্রেমিক প্রেমিকাকে। ছিপ ডাঙায় তুলে দেখে বিপিন, একটা বড় রুই ধরা পড়েছে বড়শিতে। বাউরিবৌ সোহাগী আঁচলে তুলে নেয় বিপিনের প্রেম।

বাউড়ি বউ বিপিনকে বলে,তোমার বিয়ে হওয়া বউ পছন্দ হলো কেনে?

বিপিন বলে,আমি সুখদেবকে জানি।শালা পাগল, তোর মত ডাগর মেয়ের খিদে ও মেটাতে পারে না আর তোর চোখ আমাকে টানে।

বাউড়ি বউ ভিজে কাপড়ে রাস্তা দিয়ে চলে যায় খাজুরাহের মূর্তির মত।বিপিন অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখে, রাস্তা কেমন ভিজে গেয়েচে প্রেমিকার ভালোবাসায়।

[ বানানবিধি ও মতামত লেখকের নিজস্ব]

Tags: , ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ