02 Oct

সীতা

লিখেছেন:রূপা সেনগুপ্ত


রূপা সেনগুপ্ত / সীতা

সীতা লিখেছেন:রূপা সেনগুপ্ত

অশোক বাড়ি ফিরছিল রিক্সা করে। এভাবে রিক্সাভাড়া সচরাচর সে খরচ করে না। শিখা বলে সে নাকি কিপ্টে। অশোক মুচকি হেসে এড়িয়ে যায়। ব্যাংক কর্মী অশোকের একটা ছোট বাড়ি আছে। ব্যাংক লোন করে প্রথমে জমি কিনেছিল সে। পরে লোন শোধ হলে বাড়ির জন্য লোন নেয়। অশোক বেশ হিসেবী । একটা ডায়েরি তে সে সব হিসেব গুছিয়ে লিখে রাখে। খুব গরম পড়েছে। তার ওপর গনগনে রোদ্দুর। বড় পিসিমা চলে গেলেন গত বুধবার রাতে হঠাৎই। দাদা নারায়ণ পরদিন প্রায় ভোর রাতে ফোন করে খবরটা দেয়। সে আর শিখা পিছনের বস্তির নান্টুর অটো রিক্সা ভাড়া করে তক্ষুনি রওনা দেয়। আজ গিয়েছিল হবিষ্যি নিয়ে। এসব ব্যবস্থাপনা শিখার। বড়পিসিমা আশোককে সন্তানের মতো স্নেহ করতেন। হিসেবী অশোক গত দুদিন খাতা খুলে হিসেব লিখতে বসলেও এই খরচটুকু খাতায় তোলে না।

মাথার ওপর তেতে ওঠা সূর্য। রাস্তার পিচ যেন গলতে শুরু করেছে। কলকাতা থেকে চল্লিশ কিলোমিটার দূরে এই মফস্বল শহরটিতে এবার খুবই গরম পড়েছে। রাস্তার ধারে ধারে শরবতের দোকান বসেছে। কত রকমের শরবত। পাতি লেবু আবার  কাগজি বা গন্ধরাজ লেবু নুন চিনির শরবত। একটু পয়সা বেশি দিলে মোসম্বি লেবুর শরবতও পাওয়া যায়। আজকাল অনেকে আবার এদিকে ছাতুর শরবতও বিক্রি করছে।এসব না কিনে রিক্সা দাঁড় করিয়ে দুটো ডাব কিনে নিল অশোক।

বাড়ি ফিরে স্নান করে অশোক। গতমাসে একটা রেফ্রিজারেটর কিনেছে সে। ডাবের জল কাঁচের গ্লাসে ঢেলে ফ্রিজে ঢুকিয়ে দেয় শিখা। নিঃসন্তান শিখা যখন যেটুকু আবদার করে সেটুকু মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে অশোক। শিখা বকবক করে বড় পিসিমার কথা বলতে থাকে। বড় পিসিমার শ্বশুরবাড়ির দিকের আত্মীয়া শিখা। খুব অল্প বয়েসে বড় পিসিমার বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পর বাপের বাড়িতেই ছিলেন পিসিমা। তখনকার দিনে অত ছোট মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে পাঠানোর রীতি ছিল না। বাপের বাড়িতে থাকাকালীন আসে সেই দুঃসংবাদ। তাঁর বর সাপের কামড়ে মারা গেছেন। বাল্যকালেই বিধবা হন বড় পিসিমা। অশোক গল্প শুনেছে বড় পিসিমা নাকি কোনওদিন স্বামীর ঘর করেননি। তাঁর স্বামীর চেহারা কেমন ছিল তাও তাঁর ঠিকঠাক মনে নেই। অশোকের ঠাকুরদা পিসিমাকে ফের বিয়ে দেন।  বিধবাবিবাহ আইন তো কবেই পাশ হয়ে গেছে কিন্তু গ্রামে শহরে বিধবাবিবাহ তেমন ভাবে চালু হয় নি। তবু পিসিমার বিয়ে হলো। কারণ, অশোকের ঠাকুরদা ছিলেন অতি উদার মনের মানুষ।  তিনি ছিলেন তাঁদের নতুন গ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। একটু অন্য ধারার মানুষ ছিলেন তিনি।  অশোকের ঠাকুমাকে বুঝিয়ে বললেন যে তাঁর এই অকালবিধবা মেয়েটির তিনি বিয়ে দিতে চান।

পরে অশোক তাঁর ঠাকুর্দার মুখে শুনেছে ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ২৬ জুলাই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনাধীন সময়ে, তখনকার ভারতের গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসির সাহায্যে ও  ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের চেষ্টায়  বড়লাট লর্ড ক্যানিং বিধবা বিবাহকে আইনি স্বীকৃতি দেন।

বড় পিসিমা ততদিনে ম্যাট্রিক পাশ করে ফেলেছেন। বিপত্নীক বিভূতি রায়ের সঙ্গে পিসির বিয়ে হয়ে যায়। এই পিসির প্রথম যে বিয়ে হয় সেই শ্বশুরবাড়ির আত্মীয় শিখা।

শিখা ঠান্ডা ডাবের জল একগ্লাস নিয়ে অশোকের পাশে এসে বসল। বলল, জানো পিসিমার ওই আগের বর মানে ভানুকাকু শুনেছি খুব সুন্দর দেখতে ছিলেন। ভানুকাকুর পরের ভাই কানুকাকুকে তো তুমি দেখেছ, পিংকুর বিয়েতে এসেছিল । কানুকাকু তো একবার রামকৃষ্ণ যাত্রাপালায় বিবেকানন্দ সেজেছিল! কী সুন্দর দেখতে লাগছিল। যেন স্বয়ং স্বামীজি। সবাই বলে ভানুকাকু আরও সুন্দর ছিল নাকি!

ছোট ছোট চুমুক দিয়ে অশোক ডাবের জল পান করে। পাশে বসে থাকা শিখার কথা শুনেও যেন শোনে না। মাথায় কিলবিল করে অনেক কথা। বড় পিসিমার কাছে প্রথম অক্ষর পরিচয় হয় অশোকের। খুব যত্ন করে পড়াতেন তিনি। তৃতীয় সন্তান স্বপনের জন্মের সময় বেশ কয়েক মাস তিনি বাপের ঘরে ছিলেন। তখন ছোট্ট অশোক গা ঘেঁষে থাকত তাঁর। আজ যেন বড্ড মনটা খারাপ লাগছে। অশোক বুঝল একটু নিজের মতো থাকতে হবে তাকে। সে শিখাকে বললো আমি একটু ঘুমোতে চাই শিখা। শরীরটা ভাল নেই। এই বলে সে শোয়ার ঘরের দিকে চলল।

সীতা লিখেছেন:রূপা সেনগুপ্ত

তখন পঞ্চাশের শেষ দিক হবে। বড় পিসিমা এসেছেন বাপের বাড়িতে। তাঁর এই চৈত্র মাসে আসার কারণ দুটি। এক দাদুভাইয়ের শরীর খারাপ তাঁকে দেখতে আসা। দুই রামযাত্রা দেখা। এই সময় মা-তারা সংঘের মাঠে বসে রামযাত্রার আসর। পালা চলবে পুরো একমাস। বড় পিসিমার সঙ্গী তখন বালক অশোক। রাত নটা নাগাদ বসত যাত্রার আসর। চারদিক খোলা মঞ্চ, হ্যাজাকের হলুদ আলোর সঙ্গে যাত্রাদলের অধিকারীর জোরে বাজানো হারমোনিয়াম যেন হাতছানি দিয়ে ডাকত পাড়ার বালক বালিকাদের। খুব দ্রুত ইস্কুলের পড়া শেষ করে রাতের খাওয়া সেরে যাত্রা শুনতে যেত সকলে। আগের দিন রাতে যাত্রা শেষ হওয়ার একটু আগেই ঘোষণা করে দেওয়া হত পরেরদিন কী হবে! যেমন কখনও বলা হত কাল সীতার বিয়ে বা কাল রামের বনবাস। এক্ষেত্রে নারী পুরুষ দুটো চরিত্রই অভিনয় করত কোনও পুরুষ অভিনেতা। সেকালে মহিলারা তেমন ভাবে পাড়ার যাত্রা থিয়েটারে অভিনয় করত না। অশোকের খুব মনে পড়ে আগের দিন রাতে সীতার অভিনয় করেছিল যে ছেলেটি সে পরের দিন শন্তিদার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে বিড়ি খাচ্ছিল! অশোকের একটু অবাক লেগেছিল। আসলে বালক অশোক মনে মনে সীতার আসনে ওই ছেলেটিকেই বসিয়ে দিয়েছিল। বড় পিসিমার পাশে যাত্রার আসরে পাতা চট বা ত্রিপলের ওপর বসত অশোক। এদিকটায় মহিলারা বসত। পাড়ার পিসি কাকি ঠাকুমাদের টুকরো কথাবার্তা,পান দোক্তার গন্ধে একটা অদ্ভুত পরিবেশ তৈরি হতো। অশোক পিসিমার পাশটিতে চুপটি করে বসে যাত্রা দেখত। অভিনীত যে কোন নারীচরিত্র তাঁকে মুগ্ধ করত!।

প্রতি বছর কালী পুজোর পরে পরে ঠিক ভাইফোঁটার পরের দিন নতুন বাজারে যাত্রাপালা বসত। এখানে অবশ্য তাঁর যাওয়া হত না। তার দুদিন পরেই বার্ষিক পরীক্ষা। বাবা এসময় একদম ঘর থেকে বের হতে দিতেন না। লেখাপড়ায় অশোক মাঝারি মাপের, কখনও অকৃতকার্য হয় নি। তবু বাবা স্বপ্ন দেখতেন অশোক বড় হয়ে সোনাকাকার মতো ডাক্তার হবে।

সেবার খুব বন্যা হল দুর্গাপুজোর মুখে মুখে। বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিল ইস্কুলবাড়িতে। পরীক্ষা পিছিয়ে গেল প্রায় দিন পনের। জল নামলে পুজো হল একটু ছোট করে। নতুন বাজারের বিক্রেতারা মিলে অভিনয় করল চাঁদসদাগর। এবার অশোক বাবার অনুমতি নিয়ে মেজঠাকুমার সঙ্গে যাত্রাপালা দেখতে গেল। এখনও মনে পড়ে মাছ বিক্রেতা তাপস কাকার অভিনয়। তিনি চাঁদসদাগর। তিনি মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে বলছেন সেই বিখ্যাত ডায়লগ – “যে হাতে পূজেছি আমি দেব শূলপানি / সে হাতে পূজিব আমি চ্যাং মুড়ি কানি!”

এত কিছু সত্বেও অশোকের কিন্তু ভাল লেগেছিল বেহুলাকে। সেই ছোটবেলু থেকে ফর্সা মাঝারি চেহারার গোঁফ কামানো একটু মেয়েলি ঢংয়ের রতন কাকু সবজি বিক্রি করতে আসত। সে-ই অভিনয় করেছিল বেহুলার চরিত্রে।

বাবার সঙ্গে বাজারে গিয়ে অনেকবার এই রতন কাকুর থেকে পেঁপে আর চালকুমড়ো কিনেছে অশোক। সে-ই যাত্রাপালায় বেহুলা সেজে নেচে গেয়ে সবার সঙ্গে বালক অশোকেরও মন জিতে নিল।

সে ছুটির দুপুরে চিলেকোঠার ঘরে একা একা অভিনয় করত। কখনও সীতা , কখনও বেহুলা তো কখনও শকুন্তলা। ধীরে ধীরে বাড়ির ভিতরেই ঠাকুমা কাকিমা এমন দুএকজন দর্শক তাঁর জুটে গেল। বেশ উৎসাহ সে পাচ্ছিল। কিন্তু বাদ সাধলেন তাঁর মা। তিনি তো কান্নাকাটি জুড়ে দিলেন। পরিষ্কার বললেন এ চলবে না। ছেলে তাঁর কেমন ধারা মেয়েলি মেয়েলি হয়ে যাচ্ছে। মেয়েলি মার্কা ছেলে তাঁর নাকি দু চোখের বিষ। অশোকের বাল্যকালেই অভিনয় অভিনয় খেলা ও যাত্রাপালা দেখার ইতি ঘটল।

৩.

সীতা লিখেছেন:রূপা সেনগুপ্ত

আর পাঁচটা সাধারণ ছেলের মতো অশোক বালক থেকে যুবক হল। চেষ্টা করে ব্যাংকে একটা চাকরি জুটিয়ে নিল। যথা সময়ে বিয়ে হল। বিয়ের পাঁচ বছর পরে অশোক ধরে নিল সে আর শিখা সন্তানের মুখ দেখতে পারবে না। হলে এতদিনে হয়ে যেত। শিখার হাতে মিছিমিছি কতগুলি জ্যোতিষীর দেওয়া আংটি আর পেটে ডাক্তারবাবুর দেওয়া একগাদা ওষুধ ঢুকল! শিখার কোন অভিযোগ নেই। মেয়েটা খুব ভাল। সংসারের সব কিছুর সঙ্গে সে খুব সহজে মানিয়ে নেয়।

কিন্তু অশোকের মা একটু হতাশ। তিনি চুপি চুপি বলেন, তুই ডাক্তারকে বলেছিলি যে ছোটবেলায় তুই মেয়ে সাজতে ভালবাসতিস? অশোক অবাক হয়ে বলে, ওমা! সেটা আবার কী কথা! অমন তো কত জনেই সাজে। তাঁদের কি বাচ্চাকাচ্চা নেই নাকি!

মা বোধহয় কিছু ভাবছেন কিন্তু ঠিক প্রকাশ করতে পারছেন না।

অশোক আজও থিয়েটারে ফিমেল রোল করে। কেউ জানে না। ব্যাংকের রিক্রিয়েশন ক্লাবের ও একজন অতি পরিচিত স্বনামধন্য শিল্পী। ওই ক্লাবের কয়েকজনকে  নিয়ে একটা নাটকের দল তৈরি করেছেন অফিসের ব্যানার্জিদা। গতবার গোবরডাঙ্গায় ক্যাশিয়ার বিধানবাবুদের ক্লাবে নাটক প্রতিযোগিতায় ‘আজকের সীতা’ নাটকে অশোক মূল চরিত্রে অভিনয় করে। তাঁদের অভিনীত নাটক দ্বিতীয় হয় আর সেরা অভিনেতা পুরস্কার অশোক জিতে নেয়। এসব কথা অশোক কাউকে বলে না। শুধু জানত বড় পিসিমা। তিনি যদিও বলেছিলেন সে যেন নারী চরিত্রে সঙ্গে পুরুষ চরিত্রেও অভিনয় করে। জীবনে সব চ্যালেঞ্জ গ্রহন করতে হয়। এইসব কারণে এই পিসিমাটি অশোকের খুব প্রিয় ছিলেন।

সমাজের বিভিন্ন স্তরের নারী চরিত্র সুন্দর করে অভিনয়ের ভিতর দিয়ে ফুটিয়ে তোলা বেশ কঠিন কাজ। সে কাজ অশোক পারে। সে একবার লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করা একজন আয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছিল। আয়ার সঙ্গে মানবিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া এক বৃদ্ধা রুগী যিনি শেষ পর্যন্ত তাঁর বাড়িটি আয়া মেয়েটিকে দান করে যান; বিষয়টি এত সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছিল যে দর্শক হাততালি দিয়ে সাধুবাদ জানায়। পৌরাণিক আধুনিক সব নারী চরিত্র অশোকের মনে খেলা করে যায়।

আজ অফিসে যেতে একটু দেরি হয়ে গেল। বড় পিসিমার পারলৌকিক কাজ মিটিয়ে গতকাল অশোক আর শিখা একটু রাত করে বাড়ি ফিরেছে।  আজ সকালে উঠতে একটু দেরি করে ফেলে অশোক। অফিসে পৌঁছে নিজের কাজের জায়গায় বসে এক গ্লাস জল খেল সে। ঠিক তখুনি ক্লাবের সেক্রেটারি ব্যানার্জিদা ডাক দিলেন। অশোক শুনল সোদপুরে যেতে হবে। ওদিকে নাকি নাট্য উৎসব হচ্ছে। অশোক একটু চমকে গেল। ওদিকে তো শিখার বাপের বাড়ি! যদি কেউ দেখে ফেলে। ব্যানার্জিদা তাঁকে রেডি হতে বললেন। বললেন, আগামী শনিবার সন্ধ্যা ছ’টায় তাঁদের শো। অশোক নিজের কাজে মন দিল কিন্তু একটু মনটা খচ খচ করছিল তাঁর।

এই নাটকটা লিখেছেন রবিদা। নায়িকা সীতা একজন চাকুরীজীবী মহিলা। সে সর্বদা স্বামী রঘুর কাছে নিজের সততার পরীক্ষা দিয়ে চলেছে। তবু যেন বিশ্বাস অর্জন করতে পারছে না। এদিকে স্বামী সংসার চাকরি সব কিছুই সে সামলে চলেছে। এই চরিত্রে অশোক দুর্দান্ত অভিনয় করছে। স্বামীর প্রতি প্রেমের দৃশ্যে সাবলীল অভিনয় তাঁর। দেখে মনেই হবে না যে সীতার চরিত্রে যে অভিনয় করছে সে একজন পুরুষ।

আজ সন্ধ্যায় সোদপুরের শো ছিল।  খুব ভাল অভিনয় করেছে সকলে। অশোক তার মধ্যে সেরা একথা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই শো শিখা দেখেছে। দেখেছে শিখার দিদি বৌদি। অশোক জেনেছে অনেক পরে। বাড়ি ফিরে। রাত্রে বিছানায় শুতে যাওয়ার আগে শিখা চুল বাঁধে। সামনের বসার ঘরে বসে টিভি দেখছিল অশোক। শিখা পাশে গিয়ে বসল। চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বললো, এত দিন কেন মিথ্যা কথা বলে যেতে! সত্যি বললে কী হতো! আমি কি বারণ করতাম নাকি?

অশোক গুছিয়ে নিয়ে ধীর স্বরে বলল, আমি ফিমেল রোল করি। যদি তোমার খারাপ লাগে ?

শিখা পাশে বেশ ঘন হয়ে বসল। বললো ওমা অভিনেতা তো অভিনেতাই হয়! আর তুমি তো অভিনয় করছ!

শিখা এবার বলে, দেখো সংসারে জীবনে আমরা সবাই অভিনয় করে চলেছি। আর চলতে চলতে ঢুকে গেছি সেই সব চরিত্রে। এখন কোনটা আসল আর কোনটা অভিনয় তার তফাৎ করতে পারি না। বিয়ের পর প্রায় আট দশ মাস আমার প্রেমিক বিজয়দার সঙ্গে আমি গোপনে যোগাযোগ করতাম। ভাবতাম তাঁর কাছে ফিরে যাব। সে সময়টা তো আমি তোমার বউয়ের অভিনয় করে গেছি! তারপর নিজেই কেমন সরে এলাম। তোমাকে, তোমার মা ও পরিবারের অন্যান্যদের পছন্দ করতে শুরু করলাম। আর দিব্বি ঢুকে পড়লাম এই সংসার জীবনে। এখন এই জীবন কোনও কিছুর বিনিময়েই আমি হারাতে চাই না । মাঝে মাঝে ভাবি আমি কি অভিনয় করছি! অশোক শিখাকে জড়িয়ে ধরে বলে শিখা এসব ভেবে কোন লাভ নেই। এই সব নিয়েই জীবন। আসল সত্যিটা কী জানো? তুমি আর আমি পরস্পরকে ভরসা করি। ব্যস আর কী চাই? শিখা অশোকের বুকে মুখ গুজে বলে, না গো আমি তোমাকে ভালবাসি। অশোক হো হো করে হেসে বলে জানি তো!

[মতামত ও বানানবিধি লেখকের ব্যক্তিগত]

Tags: , ,

 

 

 




  • খোঁজ করুন




  • আমাদের ফেসবুক পেজ

  • মতামত

    আপনার মন্তব্য লিখুন

    আপনার ইমেল গোপনীয় থাকবে।




    Notify me when new comments are added.

    যোগাযোগ


    email:galpersamay@gmail.com

    Your message has been sent. Thank you!

    গল্পের সময় পরিবার
    সমীর
    অগ্নীশ্বর
    দেবাশিস
    চিন্ময়
    পার্থ
    মিতালি
    জাগরণ
    দেবব্রত

    © 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ