গল্প পড়ুন
এই মুহুর্তে বাংলা ভাষায় লেখালিখি করেছেন এমন গল্পকারের সংখ্যা কত? সত্যি বলতে কী ‘গল্পের সময়’ তা জানে না। কয়েকজন ব্যাক্তি ও কয়েকটি সংস্থা উদ্যোগ নিয়ে দুই বাংলায় লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের নথিভুক্তকরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু তা কোনও ভাবেই সম্পূর্ন নয় বা হওয়া সম্ভব নয়। কারন প্রতিনিয়তই লেখালিখির জগতে আসছেন বহু মানুষ। ইন্টারনেটে বাংলা গল্পের ম্যাগাজিন করতে গিয়ে আমরা লক্ষ্য করেছি অনেক লেখকই এখনও কম্পিউটার এড়িয়ে চলেন। কাগজ-কলমেই তাঁরা স্বচ্ছন্দ। চিরাচরিত ছাপা ম্যাগাজিন, লিটল ম্যাগ, শারদসংখ্যা বা সংবাদপত্রের সাময়িকীতেই তাঁরা লেখালিখি করেন। অন্যদিকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটে স্বচ্ছন্দ একদল লেখককুল রয়েছেন। তারা ফেসবুকে পোস্ট করছেন, ব্লগ বানাচ্ছেন, ই-ম্যাগাজিনেও লিখছেন। ‘গল্পের সময়’ এই দুই পক্ষকেই চায়। নবীন ও প্রবীন গল্পকারদের গল্প পড়ুন এই পাতায়।
-
যে গল্পটা লেখা হলনা
নাছোড়বান্দা মেয়েটা প্রায়ই বলে কথাটা। — একটা কিছু করুন স্যার — কী করবো বল্ ? আমি বললেই কি শুনবে ? তাছাড়া আমি তো তাকে চিনিনা , দেখিইনি কখনো। — শুনবে , ঠিক শুনবে । আপনার কথা ফেলতে পারবেনা। যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আপনার কাছে একদিন নিয়ে আসবো ? এইরকম কথোপকথন […]
-
কখন তোমার আসবে টেলিফোন
-হ্যালো – -হ্যাঁ- বল…। – ফোন করনি কেন ? -আমিতো ভাবছিলাম তুমি করবে । -আগের দিন আমি করেছিলাম, এবার তো তোমার করার কথা ছিল । -তাই- না ? আমার একদম মনে ছিল না যে এবার আমার পালা । তবে ফোন করার আবার পালাপালি কিসের ? -তুমি সেই একই রকম আছ । । পাঁচটায় আসার কথা, […]
-
একটি প্রেমের গল্প
১ পার্কে ঢোকবার ঘোরানো গেটটার দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে তাকিয়ে অপরাজিতার চোখে প্রায় ব্যথা হওয়ার জোগাড় । এদিকে ওর ভীষণ দেরী হয়ে যাচ্ছে, সূর্য্য ধীরে ধীরে ঢলে পড়ছে পশ্চিমে । একে তো বিকেলবেলায় এই পার্কটায় এসে মানসদার সঙ্গে দেখা করায় বেশ রিস্ক আছে । একটু দূরে মোড়ের মাথায় বাড়িটার তিনতলার একটা ফ্ল্যাটে মেজোমাসী থাকে । কাজে অকাজে এই বিকেলে মেজোমাসী বেরিয়ে এসে […]
-
খোয়াই
তুমি অঞ্জলি ভরে আমাকে দিয়েছ ক্ষয় আমি গ্রহন করেছি ক্ষয়েছি একটু একটু করে… দেখো শিলাবতী নদীতীরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে রাঙা ফুল হয়ে ফুটে আছি… শিলাবতী নদী। সেদিন সুশান্ত অত করে না বললে হয়তো পরিচয় হোত না নদীটির সঙ্গে । আমার তখন পূর্ণ যৌবন, চোখে সানগ্লাস। যা দেখি তাতেই ভালোলাগার রঙ। মেদিনীপুরের গড়বেতায় আমাদের প্রতি শনিবার বসতো চক্ষুশিবির । আমি বাঁকুড়া মেডিকেল থেকে আসতাম। দুপুর থেকে […]
-
আলোক শিখা
মঞ্জু অনেকক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে। ভোর থেকে বিছানা ছেড়ে ঘরের কাজকর্ম কোনমতে কিছুটা শেষ করে এসে দাঁড়িয়েছে লাইনে। তার সামনে অনেকে লাইনে দাঁড়িয়েছে। কলকাতা থেকে নামকরা ডাক্তারবাবুরা আসবেন তাদের গাঁয়ের স্বাস্হ্য শিবিরে। গাঁ বলতে ছিটমহল। চলমেঘা। বাংলাদেশের গা ঘেঁসা বর্ডারে। জমিদারি দখলটা বাংলাদেশের। তবে ভারতীয় আইনযুক্ত সুযোগ-সুবিধেগুলো পায় তাদের গাঁয়ের লোকেরা। লোকজন বলতে মেরেকেটে দুশোর […]
-
মনের মানুষটা
অর্পির আজ মনটা ভীষণ খারাপ। ভেবেছিল আজ ওর একত্রিশতম জন্মদিনে শুভম অন্যন্য বারের মত ওকে বিছানায় থাকতেই ভোরবেলা ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ বলে উইশ করবে। কিন্তু বিছানায় তো দুরের কথা, অফিস যাবার আগে বাড়িতে বা অফিস গিয়েও যে কমপক্ষে ফোনে উইশ করবে, সারাদিনে তার কোন লক্ষনই নেই। অর্পি, মানে অর্পিতাকে, যাকে শুভমই বিয়ের পর থেকেই আদর […]
-
ধর্ষিতা
ফোনটা দুবার বেজে থেমে গেল। ঋষিতা ফোনের সামনে বসেছিল। সে ইচ্ছে করে রিসিভ করেনি। যত সব বাজে ফোন। কাকে দিচ্ছি , বয়স কত ,কত দেবেন – এরকম হাজার প্রশ্ন । একজন তো বলেই ফেলল ,না হয় দিলাম । আপনার উপকার হলো। তাহলে ও তো অর্থ দিয়ে দায়মুক্ত হতে পারবেন না। শুধু অর্থ দিয়ে কি অমূল্যধন […]
-
অকপটঃএকটি জীবন নাট্য
মেয়েটি বাড়িতেই ছিল । হঠাৎ তার মোবাইল ফোনটা ঝনঝন শব্দে বেজে উঠলো । আর তার পর … মানালি : হ্যালো কি ব্যাপার ! এযে অবিশ্বাস্য , গায়ে চিমটি কেটে দেখতে ইচ্ছে করছে জেগে আছি নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি ? ফিরোজ : ন্যাকামো না করে সরাসরি বলবি হয়েছেটা কি ? মানালি : ন্যাকামোটাতো মেয়েদের সহজাত , ওটা ছাড়ি […]
-
নৈশ-ভ্রমণ
(কৃষ্ণ বলদেব বৈদ – জন্ম ২৭ জুলাই’১৯২৭, ভিগা পাঞ্জাব। কয়েক বছর অধ্যাপনা করার পর ১৯৬৬ সালে উচ্চশিক্ষার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট। ১৯৮৫তে নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর পদ থেকে অবসর নিয়ে ভোপালে ভারত ভবনের সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১০ সালে ফিরে যান মার্কিন দেশে। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক আর সাহিত্য সমালোচনা গদ্যসাহিত্যের নানা মাধ্যমে স্মরণীয় কাজের […]
-
যীশু যেদিন ক্রশ-বিদ্ধ হয়েছিলেন
[রুশীয় গল্প ‘On the day of Crucifixion’-এর অনুবাদ। গল্পটি অনুবাদ করেছেন কুমারেশ ঘোষ] যে অভিশপ্ত দিনে, ধর্মগুরু যীশুখ্রীষ্টকে অন্যায় ভাবে অন্যান্য খুনী বদমায়েসদের সঙ্গে গলগথা শহরে ক্রশে বিদ্ধ করা হয়েছিল – সেইদিন সকাল থেকে জেরুজালেমের এক ব্যবসাদার, নাম তার বেন-টবিন ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলো দাঁতের যন্ত্রণায়। আগেরদিন থেকে যন্ত্রণা শুরু হয়। প্রথমে আক্কেল দাঁদের পাশের দাঁতটা, […]
-
উজিতপুরের মাঠ পেরিয়ে
‘খবর্দার! তুমি ওদিকে যাবে না। এই না বলছি তো না। যাবে না, যাবে না, যাবে না।’ – শ্যামলী চোখ পাকিয়ে আমাকে বলল। বউয়ের বারণ। আমি পাজামার ওপর বিনা গেঞ্জিতে হাফ পাঞ্জাবি গলিয়ে সবে দরজা খুলে বেরিয়েছি, জানালা দিয়ে ওই বাঘিনীর গর্জন। আমি উজিতপুরের মাঠের দিকের রাস্তা না ধরে রেল স্টেশনের গ্যাঞ্জামের দিকের সড়কটি ধরলাম। পাখি […]
-
অমানুষ
বিজ্ঞাপনটা চোখে আসতেই নিজেকে মনে মনে প্রস্তুত করতে শুরু করেছিল রতন। চাকরিটা চিড়িয়াখানায়। সরাসরি যোগাযোগের কথা বলা আছে। বিশেষ কিছুই বলা নেই। শুধু সুস্থ সবল চেহারার অধিকারী হতে হবে। মাপজোক যা দিয়েছে তাতে বেশ দস্যুমোহন গোছের স্বাস্থ্য দাবি করেছে। রতনের সবই আছে। ‘ঐটাও’ বেশ বড়। হ্যাঁ, বলা আছে, ‘ঐ’টার কথাও। এবং মোটামুটি একটা মাপের ধারণাও […]
-
এক বাঘের মাসি
গাড়ি থেকে নামতেই হাড়কাঁপানো শীতটা গালে চড় কষিয়ে দিল। সোয়েটারের ওপরে উইনচিটারের চেন টেনে দুই হাত ঘষতে থাকলো সুনীল। সবার শেষে গাড়ি থেকে নেমে আঁতকে ওঠে। মাফলার টাইট করে বলল, ‘’কিরে মনোজ, তুই যে কাল বললি গরুমারায় ঠাণ্ডা বেশ কম। এই তার নমুনা ? আমার তো মনে হচ্ছে এক্ষুনি বরফ পরবে। এর চেয়ে সান্তালেখোলার শীত […]
-
গোরা গোয়েন্দা
আমার বাল্যবন্ধু গোরক্ষনাথ সেন ওরফে গোরার সাথে আপনাদের পরিচয় ঘটে নি। সে ডিটেকটিভ হতে চায়। ঘরময় বাংলা-ইংরেজী গোয়েন্দা গল্পের বই। সারাদিন সে ওসব নিয়েই চর্চা করে। সংসারে তার খাওয়া-পরার দুশ্চিন্তা করতে হয় না। বছর দুয়েক হল, চাকরীর পরীক্ষা দেওয়ার নাম করে সে একটা ঘর ভাড়া নিয়েছে বাড়ি থেকে সামান্য দূরে। সেখানে একা-ই থাকে। বাড়িতে বলেছে […]
-
কারচুপি
রমেনবাবু নিজের দামি হাতঘড়িতে সময়টা দেখলেন। ঠিক সন্ধ্যে ছটা। সাড়ে ছটা থেকে পড়ানো শুরু করতে হবে। ঠিক সন্ধ্যে সাড়ে ছটা। দেরি হলে মুশকিল। তবে এখনও কেউ এসে পৌঁছল না কেন? রমেনবাবু ভাবলেন, “যাক গে! দুজন এলে দুজনকে নিয়েই পড়ানো শুরু করে দেব।” না, একটু ভুলই ভেবে ফেলেছিলেন তিনি। পাঁচ মিনিট পর থেকেই একাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা […]
-
আগে বললেই হতো
ধিনিকিস্টকে পাড়ার সবাই খুব সমীহ করে চলে । সমীহ মানে ভয়মিশ্রিত সমীহ বললেই বোধহয় ঠিকঠাক হয় । তার অনেক কারণও আছে । একটা টাইট গেঞ্জি আর বারমুডা পরা লোকটা যখন পাড়ার মধ্য দিয়ে দুলকি চালে ডিগডিক আওয়াজ তুলে বুলেট চালিয়ে যায় তখন পাঁচটা লোক দূর থেকে হাঁ করে দেখে । হ্যাঁ , দেখার মতোই বটে […]
-
যমালয়ের দরবারে
— চিত্রগুপ্ত, কখন থেকে ডাকছি তোকে। আসতে এত সময় লাগে কেন? যমরাজ হুঙ্কার ছাড়েন। — আজ্ঞে হ্যাঁ মহারাজ এই তো এসে গেছি। আসলে আজ খুব কাজের চাপ, অনেকগুলো বডি এসেছে কি না। সব দেখে শুনে পাঠাতে হচ্ছে। তার ওপর মর্ত্যে এখন করোনায় কত কত লোক প্রাণ হারাচ্ছে। সেইসব মৃত দেহ আনতে অনেক ঝামেলা। পি পি […]
-
ঝগড়ার পরবর্তী অংশ
– “যদি বাঁচতে চান তো এখনও ভালোয় ভালোয় সত্যি কথাটা বলে দিন। দেখে তো ভদ্রলোক বলেই মনে হচ্ছে। জেলের ঘানি টানাটা কি খুব সুখকর হবে?”…চোখের কোণ দিয়ে তাকাল ডিউটি অফিসার।দৃষ্টিতে পরিষ্কার অবিশ্বাস ফুটে উঠেছে। – “আমি সত্যিই কিছু জানিনা স্যার।আপনাকে তো বললাম, আমার কিছুই মনে পড়ছে না।” – “পড়বে, পড়বে। এখন শুধু মুখে জিজ্ঞেস করছি […]
-
অন্তমিল বাকি
অন্ধকার আকাশটা আজ ভালো দেখা যাচ্ছে না। কিছু তারা আকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একটা ধোঁয়ার মত অস্পষ্টতা জাল বিছিয়ে রেখেছে। উঁচু ঢিবিটার উপর শুয়ে আছি আকাশের দিকে তাকিয়ে। মাঝেমাঝেই এখানে আসি। বিশেষকরে মনের ওপর কোনো পাথর চেপে বসলে এই আকাশ আমার ব্যর্থতাকে অনেকটা ভাগ করে নেয়। জামা প্যান্টের পেছনটা ভিজে গেছে, ঘাসের উপরের জল এখনো […]
-
আগাম
সামনে তাকিয়ে নাটুকে দেবু একেবারে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। তার ছেলে এখানে কী করছে! ওই মৃতদেহের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে ও ভাবে কাঁদছে কেন ও! কে মারা গেছে! ও ভাবে কাঁদছে মানে তো যে মারা গেছে, সে ওর অত্যন্ত কাছের কেউ। আর ওর কাছের মানে তো তারও কাছের! কিন্তু কে উনি! খানিক আগে লেবু চা […]
-
কেতাবি
বইপোকারা অজয়দের বাড়িতেই থাকে বলে পাড়ার লোকেরা বিশ্বাস করত।সাত শরিকের বাড়িতে গজিয়ে ওঠা পুরোনো ধাঁচের পরিবারতন্ত্রে লেখক না থাকলেও ঠাকুরদার আমলের বৈঠকখানার আলমারির ঠাসা বই যে বাড়ির সব সদস্যরাই আগ্রাসী পাঠকের মতন গোগ্রাসে গিলেছেন এ নিয়ে দুর্গানগরের মতন সুদূর আধা মফঃস্বল শহরের লোকেদের কোন সন্দেহ ছিল না, আর তাই তারাঐ দত্ত বাড়িকে ‘বইপোকাদের -বাড়ি ‘ […]
-
পিংকির স্বপ্ন
তার বয়স পাঁচ কি ছয়। আর তার নাম পিংকি। গৃহবন্দী অবস্হায় কাটে তার দিন। হোম কোয়ারেনটাইনে রয়েছে। দাদু মারা গেছেন কালরূপী নোভেল করোনাবাইরাস সংক্রমণের করাল গ্রাসে। আজ সারা বিশ্ব ছোট্ট একটা অণুজীবের আক্রমণে থরহরি কম্পমান। সারা বিশ্বজুড়ে এ যাবৎ ছিয়ানব্বই লক্ষেরও বেশি আক্রান্ত। প্রাণ চলে গিয়েছে পাঁচ লক্ষের কাছাকাছি। থামার কোন লক্ষণ নেই। ছোট্ট পিংকির […]
-
অনিকেত
ফোনটা আসতই এক দিন।এক দিন না একদিন আসতই ফোনটা।নিশ্চিত জানত ঋভু।আঠাশ বছর ধরে। আমি সুমনা – চিনবে না হয়তো।আমি… বুঝতে পেরেছি।যদিও বুঝতে পারাটা অদ্ভুত।কিম্বা হয়তো খুব স্বাভাবিক। নতুবা ঋভুর এই নিশ্চিত অপেক্ষা কার্যকারণহীন সাট্টার নম্বর ধরার মতো খেলো হয়ে যেত। সম্পর্ক আছে কিছু ? থাকলেও অত্যন্ত জটিল।কিম্বা হয়তো একদম সোজা সরল।মণিকা স্বামী, ছেলেকে ছেড়ে পালিয়েছিল পার্থজিতের সঙ্গে।কিম্বা পার্থজিত মেয়ে আর বউকে ছেড়ে পালিয়েছিল মণিকার সঙ্গে।পুরোন ঘটনা।বহু যোগ বিয়োগ, ভুল উত্তর , না মেলা ভাগশেষ…. সুমনার এই ফোনটাও উত্তরমালায় ছিলনা।তথাপি সুমনা ফোন করেছিল। যখন আঠাশ বছর পার।আঠাশ বছর পার তবু ঋভু জানতো এই অনিবার্য ফোনের কথা। কোন প্রস্তুতি নেয়নি যদিও।উত্তর প্রতি -উত্তরের কোন ক্রম তৈরি করেনি সে মনে মনে কদাপি। কিছু ঘটনা, কোন স্মৃতি, কোন অপেক্ষা সতত সজীব থেকে যায়। আজীবন। আর এখন তো মাত্রই আঠাশ বছর। – আঠাশ বছর আগে তোমার বয়স কত ছিল? সুমনার প্রশ্ন কি প্রস্তুতিবিহীন? জানেনা ঋভু।এই প্রথম আটকে রাখা স্রোতমুখ খুলে যায়। এতটুকু সতর্ক হবার সময় পায়না – শনিবার ছিল ছ’ বছরের জন্মদিন। স্কুলের বন্ধুরা এসেছিল। ওদের মা বাবা,পাড়ার বন্ধু, পিসিমণি, জেঠুমণিরা… ।সোমবার সকালে চলে গিয়েছিল।অফিস ট্যুর বলে বেরিয়ে গিয়েছিল। আমাকে আর বাবাকে। ফেরেনি আর। কোথায় গিয়েছিল তুমি জান। – তোমার ক্ষেত্রে সাডন শক ছিল।আমরা জানতাম।আমি আর মা।জানতাম বাবা থাকবেনা আর আমাদের সঙ্গে। কলকাতা যেত।ঠাম্মির বাড়ি যাবার কথা বলে।অথচ ঠাম্মি ফোন করে বাবাকে চাইত।আমি মাকে বলতে পারতাম না সেকথা।মা’ও হয়তো অনেক কিছু লুকিয়ে রাখতে চাইত আমার থেকে।মণিকা নামটা হাওয়ায় ভাসত। চলতে ফিরতে ধাক্কা খেতাম আমরা। আমি আর মা। ছোট্ট ওয়ান রুম ফ্ল্যাট।পার্টিশন করে কোনক্রমে দুটো খুপরি। কিছু আড়াল করার উপায় ছিল না। মণিকা, মণিকা , মণিকা – একটা বেলুনের মতো ফুলে উঠছিল ক্রমশ।ঘরের মাঝখানটা জুড়ে ফুলে উঠছিল।আমাদের- আমাকে আর মা’কে ঠেলে দিচ্ছিল।দেওয়ালের সঙ্গে পিষে চেপ্টে দিচ্ছিল।বাবা ঢুকে পড়েছিল বেলুনটার ভেতর। পুরোটা ঢুকতেই ফেটে গেল। বম্ব ব্লাস্ট। আমাদের নাকে মুখে বিষাক্ত গ্যাস ।দম আটকে মরে গিয়েছিলাম যেন।স্প্লিন্টারে ছিন্নভিন্ন হয়ে ছিটকে পড়েছিলাম।অথচ এরকম , ঠিক এরকমই ঘটবে আমি জানতাম ।ভোরে কতবার দেখেছি এই স্বপ্নটা। ঘুম ভেঙে ভেবেছি আজই হয়তো। স্কুল থেকে ফিরে ভাবতাম আজই হয়তো।টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম আমরা । মা আর আমি। পার্থজিত মিত্র’র স্ত্রী আর মেয়ে। – বাবাকে ঢিল মারতো পাড়ার ছেলেরা। অফিস যাবার পথে।ফেরার পথে গলির মোড়ের জটলা থেকে বেড়ালের ডাক, গাধার ডাক। সব চুল উঠে গেল বাবার, জানো? দু তিন মাসের মধ্যে পুরো টাক ।টাকলু বাবু টাকলু বাবু করতো।ছড়া কাটতো… টাকলু গেল মাছ ধরতে কোন সে নদীর কূলে, চুল নিয়ে গেল কোলাব্যাং আর বউ নিয়ে গেল কে রে? স্কুলের বন্ধুর মা’রা আমার জন্যে আলাদা করে টিফিন পাঠাতো। সেই সঙ্গে আবার সাবধানও করে দিত – ঋভুর সঙ্গে বেশি কথা বলার দরকার নেই। কোন ম্যাম আমাকে বকতোনা।অন্য ছেলেদের শাস্তি দিত । আমাকে বলতো – ঋভু তুমি পরের দিন হোম – ওয়ার্কটা সাবমিট করে দিও।সেশনের মাঝপথেই স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরের বছর নতুন স্কুল।বাংলা মিডিয়াম।হস্টেল।স্কুলের পর কলেজ।হস্টেল। মা মরা ছেলে। সকলকে বলতে বলতে – সেই ছ বছর থেকে সমানে বলতে বলতে… বাবা অফিস থেকে সাইটে ট্রান্সফার নিয়ে নিল। এই সাইট, ঐ সাইট… দেড় বছর, কোথাও দু বছর। – দেখা হয়নি আর কখনও? – ডিভোর্সের কেস চলছিল যখন, আমাকে যেতে হয়েছিল একবার বাবার সঙ্গে।লাথি দেখিয়েছিলাম কোর্টরুমেই। – মা তোমার কথা বলতো।মানে মণিকার ছেলের কথা। বলতো বাচ্চাটা একা বড় হবে। মা তোমার কথা বললে আমি রেগে উঠতাম। অথচ পরে আমিও ভাবতাম। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছে বাচ্চা ছেলে একটা। অন্ধকার অন্ধকার বাড়ি। অপছন্দের খাবার । – বাবা দারুণ রান্না করে। আমিও। হস্টেলের ছুটিতে বাবার সাইটে চলে যেতাম।ঐ কদিন কিচেনে বাবা কাউকে ঢুকতেই দিত না। […]
-
পাকু বুড়ি
‘পাকু বুড়হিকে বিশ্বাস লাগে না। উ তুকতাক জানহে!’ ‘তোহকে বলেহেচে!’ ‘তো শিবেনের বাপ যিরাতে মইরলো উ রাইতেই তো কেশবের সাঁড়াটা গলা কাটা পড়হে ছিল বাঁশ ঝাড়হে ——- সি রাতেই তো সবাই ঘুমাই গেলে বুড়হি জোরে জোরে লাগরা গাইছিল।’’ ‘শিবেনের বাপ মরার সাথে, খটাশের সাঁড়া ধরার আর বুড়হির লাগরার কি সাথ আছেহ?’ ‘তুই দেখেহেচিস কে সাঁড়া […]
-
পলাশের দিন
একটা কুকুর আর একটা কুকুরকে তাড়া করেছে। হয়ত বেপাড়ায় ঢুকে পড়েছিল। দুটো কুকুরের তীব্র দৌড় দেখলাম এক ঝলক। তারপরেই হঠাৎ ছিটকে পড়লাম রাস্তার পাশের ঝোঁপজঙ্গলে। ভাগ্যিস রাস্তার পাশের জঙ্গল কাটার কথা মিউনিসিপ্যলিটি মাঝে মাঝে ভুলে যায়, তাই বেরিয়ে আসতে পারলাম অক্ষত দেহ নিয়ে। হাত পা ঝেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে দেখি, আমার সাইকেল আর একটা স্কুটি জড়াজড়ি […]
-
বিলম্বিত ফাগুন
“বলছি এ বাড়িতে কেউ কি আছে আমার কথা শোনার মত? না কি আমি একেবারেই উপেক্ষিত? এই অনাহূতের দিকে একবার একটু দেখলে তো উদ্ধার হই” শিবশঙ্করবাবু রাগ দেখাতে দেখাতে এ ঘর ও ঘর পায়চারি করছেন । কিন্তু রান্নাঘরের সামনে যেতে পারছেন না।রান্নাঘরে শাশুড়ি বৌমা রান্নায় ব্যস্ত। শিবশঙ্করবাবুর রাগকে পাত্তাই দিচ্ছেন না মীনাক্ষী দেবী।আজ রবিবার। রাজ্যের কাজ।তাছাড়া […]
-
মুক্তির স্বাদ
সারা দিন ঘরে আটকে থাকার পরে তিতির বিকেলে তার মা-কে ছাদে নিয়ে যাবার জন্য তিতিবিরক্ত করে তোলে।খাওয়া,ঘুম, অনলাইনে পড়ার বাইরে সামান্য টিভি বা সেলফোন দেখা ছাড়া সারাদিন আর আছে কি?নইলে বসে থাকো খাটে, চেয়ারে,অথবা ছোট ওই বারান্দায়।কাগজ পড়তেও তার ইচ্ছে হয় না।পাঁচ-সাত মিনিটে দেখে মুড়ে রাখে।ঘরে যতই খেলার ইচ্ছে হোক,জায়গা কই !লাফাতে সাধ হলেও এক […]
-
গোলাম-হিরো
চেপে পড়ুন দিদিমণি। দেরী করবেন না যেন আর বেশি — আহিরী দোনোমনা করছিল বেশ। মধ্যবয়স্ক, লম্বা, দেহাতি লোকটা তার অচেনা। এই ভর সন্ধ্যেবেলা তার মোটরবাইকে আহিরী কে বাড়ি পৌঁছে দেবার কথা বলছে লোকটা। চকিতে হাতঘড়িটার দিকে একবার তাকায় আহিরী।সাড়ে পাঁচটার কাঁটা ছুঁইছুঁই। নারায়ণপুর স্কুলের পাট চুকে গেছে সেই কবে ! পাশের নদীপাড়ে সূর্য্যি এখন নিবু […]
-
ছোটবেলার বন্ধু
ছোটোবেলার বন্ধু-র ব্যাপার-ই আলাদা। সময় বদলালেও তাকে যেন ঠিক চেনা যায়। তার কথাবার্তা, চাল-চলন ইত্যাদি যদি পালটেও যায়, তবু তাকে অন্য পাঁচজনের চেয়ে বেশী নিকটের মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। অনেকটা নিজের ছায়ার মত। দিনের বিভিন্ন সময় রূপগতভাবে পালটে গেলেও শেষ পর্যন্ত কিন্তু সাথে থেকে যায়। নিবারণ চৌধুরি নিজেকে এই ব্যাপারে খুব ভাগ্যবান মনে করেন। নিবারণবাবু […]
-
ফিলহাল
শহরের একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করা কতক যুবক সহসা লক্ষ্য করলো নিজেদের মধ্যে বেশকিছু পরিবর্তন। তারা আর আগের মতো নেই, কেমন যেন বদলে গেছে। তুমুল হাসি খুশি আর প্রানবন্ত অবস্থা কবে মিইয়ে গেছে সে খবর তারা রাখে নি। আর এখন একসাথে থেকেও তারা যার যার প্রত্যেকে আলাদা। সবাই এক রুমে খায়, এক […]