Tag Archives: দেবাশিস মজুমদার


  1. অ্যাক্টিভিস্ট, দেবাশিস মজুমদার
    অ্যাক্টিভিস্ট

    ১ ইস্যু ঘুরতে দেওয়া যাবে না। বার্নিং টপিককে আরও বার্নিং করে ধরে রাখতে হবে। ফোনের ওপারের কথা শুনতে শুনতে রাস্তার মোড়ের দোকান থেকে গোল্ড ফ্লেকটায় অগ্নিসংযোগ করল পঙ্কজ। তারপর দোকানের পেছনের দিকের ছায়াঘেরা  বাবলা গাছটার নিচে বেঞ্চি পাতা সেফটি জোনে ঢুকে বাঁ হাতটা  মোবাইলের নীচে  ধরে ,কথা আড়াল করে, নিচু স্বরে বলতে শুরু করল – […]

  2. ভাষা-শহিদ কে জানত একটা কথা থেকেই এত ঝামেলার সৃষ্টি হবে। পটাই মেয়েটার সামনে দাঁড়িয়ে গদাইকে বলেছে - অত ভাবার কিছু নেই।ভাল লাগলে বলে দে-আই লেবু। ব্যস ওখানেই শুরু হল নতুন বিপ্লব।এলাকার দাপুটে নেতা ও কাউন্সিলর সত্যেনদাকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ার মোড়েই ধরেছিল পটাইকে।দলের ছেলেদের সামনেই গরম নিতে আরম্ভ করল আর তারপরই শুরু হল মেয়ের বাবার ধমকানি - চেনো আমাকে? কানেকশন জানো? তোমার থোবড়া বিল্লা করে দিতে পারি একটা ফোনে। দমার ছেলে নয় পটাই। কাউন্সিলর সত্যেনদার সামনে ঝুঙ্কুর বাবাকে বলেই দিয়েছিল - দেখুন, আমাকে চমকে খুব একটা লাভ নেই।একটা উঠতি বয়সের ছেলে।তার লাবারকে আই লেবু বলেছে। তো তাতে হয়েছেটা কি! আর তো কিছুই করে নি! এতেই এত টেম্পো নেওয়ার কি আছে? ওর হয়ে আমি সরি বলে দিচ্ছি।হয়ে গেল। খেল খতম, পয়সা হজম।তবে এটাও জেনে জান আপনার মেয়েরও কিন্তু পিনিক মারার অভ্যেস আছে।খিল্লি ওই প্রথম করেছিল।তাই এত। ঝুঙ্কুর বাবা দাঁত কিড়মিড় করে বলেছে- পিনিক মারা দেখবে? ওকে।আই উইল গিভ ইউ অ্যা লেশেন। তুই থামবি - বলে সত্যেনদার ধমকে আপাতত চুপ করলেও পরে লোকটা চলে যেতেই সত্যনদার সামনেই বলেছে- বালের শিক্ষিত। সত্যেনদার পাল্টা ধমক - মাইণ্ড ইওর ল্যাংগুয়েজ পটাই।ভাষা ঠিক কর।নইলে তাড়াব দল থেকেই।এত নোংরা ল্যাংগুয়েজ।পার্টির ইমেজ বলে একটা কিছু আছে তো নাকি রে! একে তো ইভ টিজিং এর কেস ।তার ওপর স্ল্যাং ইউস।কি বলবে বল লোকে।তোদের এই স্ল্যাং ইউজটা কি বাই বার্থ? তোরা ভদ্র সমাজে বসবাসের অযোগ্য। দলে তো বটেই। পটাই চিৎকার করে বলল- ধূর বাল।ছাড়ো না।এই বালের ইংলিশ, যায় বোঝা না যায় পড়া।যারা বোঝে না,দের সামনে ঝেড়ে কি যে আনন্দ পাও কে জানে!এর চেয়ে বাল, হিন্দি অনেক ভাল। অন্তত বোঝা যায়। গদাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল পটাই এর দিকে পটাই চিৎকার করল- কি বাল? তাকিয়ে দেখছিস কি? থতমত খেয়ে গদাই বলল- দেখছি না শুনছি। কি শুনছিস ? বল না ? খেপে উঠেছে পটাই। তোমার মাতৃভাষা- নরম গলায় বলল উচ্চমাধ্যমিক ফেল গদাই।একটু থেমে আরও নরম গলায় বলল আসলে বুঝতে চাইছি হিন্দি আর তোমার মাতৃভাষার পার্থক্যটা। সত্যেনদা গদাই এর দিকে তাকিয়ে বললেন -'বোঝার কোন চেষ্টাই কোর না গদাই।মাথার সব চুল টেনেও বুঝতে পারবে না, আমিও পারিনি।’ গদাই নিষ্পাপ কণ্ঠে প্রশ্ন করল- কোন বিষয়টা? সত্যেনদার নির্লিপ্ত জবাব- এই একটা ভাষা শহীদ হয় কখন? অন্য ভাষার তাপে না ভুল ব্যবহারের চাপে? একটা সিগারেট ধরিয়ে লম্বা টান দিয়ে ছোট্ট ছোট্ট রিং ছাড়তে ছাড়তেই পটাই বলল- আমাদের এই মাতৃভাষার জোর জান? আমরা জানি।আমাদের সমাজ জানে।আমাদের এই ভাষার জোরেই কিভাবে ওই বালের শিক্ষিত সমাজের ইংলিশ মাড়ানো ধান্দাবাজদের চাপে বাপ বলাতে হয়। সত্যেনদার ধমক এল - ওই ছোটলোকের ভাষার কোন দাম নেই। চকিতে ঘুরে দাঁড়াল পটাই - শুধু দাম কখন বলতো? অন্যকে ভয় দেখাতে বা চমকাতে ? তাই না? যখন আমাদের ডাক পড়ে? মানে যখন আপনারা ডেকে নিয়ে যান, আরকি! থতমত খাওয়া সত্যেনদার দিকে তাকিয়ে গদাই নিষ্পাপ কণ্ঠে বলল - ঘাবড়াবেন না - কথা অমৃত সমান।কি বলেন? ……………………………. নিউ নর্মাল দেবাশিস মজুমদার আমাদের সাধনার ওপরে উঠলে দেখা যায়, উঁচু উঁচু পাহাড় ছোঁয়া মিনারখানা যেন আকাশে হেলান দেওয়া। হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছিলেন ষাটোর্ধ সুখময় তপাদার। - বলেন কি? আপনি সাধন মার্গের মানুষ বুঝি নি তো। - না, না। সাধনা আমাদের ২০ জন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারীদের আবাসন। সেই চারতলা আবাসনের মাথায় উঠলে পাশেই দেখা যেত গঙ্গা।এখন গঙ্গার পাশে খেলনা গম্বুজের মতন ত্রিশতলা নতুন কমপ্লেক্স নিউ কোলকাতা। - জানি একেবারে অত্যাধুনিক ব্যবস্থার অ্যাপার্টমেন্ট।আমার মেয়ের অফিসের বস্ বুক করেছেন একটি।মেয়েও বলছে আমাদের গঙ্গা দর্শনের পাঁচতলার ওপরের ফ্ল্যাটটি বিক্রি করে ওখানেই একটা বুক করতে।এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলেন প্রাতঃভ্রমণকারী নির্বেদ রায়। - ওখানে সব ভাল। একটাই অসুবিধা, সবাই অচেনা। পনেরো কুড়ি হাজার মানুষ গোটা এলাকায়। পাঁচ হাজার মতন ফ্ল্যাট, ত্রিশতলা দশটা টাওয়ার।কে কার? এটাই বুঝি না।হয়ত বা বয়সটা বোঝায় না।এটাও হতে পারে।নিজের যুক্তিতে অটল সুখময়। - আপনি গিয়েছিলেন কখনও? - হ্যাঁ, আমার ভাগ্নী মুন কিনেছে, ২৮ তলায়। গেলাম, থাকলামও একদিন। ভাল বন্দোবস্ত। - হবেই তো। কত বড় কর্পোরেটের ব্যাপার। খারাপ হবে কেন? - না, তা নয়। সাধনার চারতলা আবাসনের সামনে দাঁড়ালে নিজেকে এত ছোট মনে হয় না কখনও। ওপরের বারান্দায় গেলেও না। কিন্তু মুনের চল্লিশতলা টাওয়ার নীচে দাঁড়িয়েও নিজেকে যা মনে হল ওর আঠাশতলার ব্যালকনিতে গিয়েও তাই মনে হল। - কি? - নিজেকে একটা বিন্দুর মতন। - ওসব কিছু না। অত উঁচু তো। তাই ওরকম মনে হয়। - না, আসলে আমার মনে হল, ওপর থেকে নীচে তাকালে মাটির পৃথিবীর মানুষগুলো বিন্দু হয়ে যাচ্ছে আর নীচে দাঁড়ানো মাটির পৃথিবীর মানুষের দল ছোট হতে হতে হয়তো একদিন চাপা পড়ে যাবে। - সে কি! কি করে! - দাপুটে উচ্চতার আগ্রাসী ক্ষুধার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হতাশা আর অভিমানে। - সে তো পাহাড়ের সামনে দাঁড়ালেও হয় আমাদের তাই না? আবার পাহাড়ী উচ্চতা থেকে তাকালেও হয়। - নো – নো।নেভার নেভার।প্রাকৃতিক উচ্চতা বা গুণগত উচ্চতা কোন মানুষকেই নীচু করে না বা ছোট করে না বাঁচার শর্তগুলোকে। - তাহলে আপনি কোন উচ্চতার কথা বলছেন সুখময় দা? - বৈভবের উচ্চতার কথা। - কিন্তু এখন তো চেঞ্জিং সোসাইটির এটাই নর্মাল ডিমাণ্ড সুখময় দা। টু মেক অ্যা ডিফারেন্স বিটুইন কমন অ্যাণ্ড আনকমন ম্যান। - কেন? কেন বলুন তো? - সোসাইটির নর্মাল ডিমাণ্ডকে অ্যাবনর্মাল চাহিদার মুখে ফেলে আর একটা নতুন সোসাইটির বাজার তৈরির জন্য। - কারা তৈরি করছে এই সোসাইটি আর বাজার? - নিউ নর্মাল সোসাইটি আর তাদের বৈভবের দাপুটে সাপ্ল্যায়ার। যাদের উচ্চতার দাপটে ছোট হয়ে যাচ্ছে আমাদের চাহিদাগুলো বিন্দুর মতন।
    দুটি গল্প

    ভাষা-শহিদ   কে জানত একটা কথা থেকেই এত ঝামেলার সৃষ্টি হবে। পটাই  মেয়েটার  সামনে  দাঁড়িয়ে গদাইকে বলেছে – অত ভাবার  কিছু নেই।ভাল লাগলে বলে দে-আই লেবু। ব্যস ওখানেই  শুরু  হল নতুন  বিপ্লব।এলাকার  দাপুটে নেতা ও কাউন্সিলর সত্যেনদাকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ার  মোড়েই  ধরেছিল  পটাইকে।দলের  ছেলেদের  সামনেই  গরম নিতে আরম্ভ  করল আর তারপরই শুরু হল মেয়ের  বাবার  […]

  3. বিন্দু বিসর্গ /দেবাশিস মজুমদার
    বিন্দু বিসর্গ

    গল্প আছে ?- রিষড়ার বাঙ্গুর পার্কের ফ্ল্যাটের সান্ধ্য দ্বিপাক্ষিক আড্ডার মধ্যেই  হটাৎ প্রশ্নটা ছুড়েছিল কলকাতার একটি নামী সংবাদপত্রের  সাব এডিটর পীযুষ আশ। গল্প তো আছেই ? খাস্তা, বাসি, টাটকা কোন গল্প শুনতে চাস বল?- চটজলদি পালটা প্রশ্ন ছুঁড়লো লেখক সদানন্দ। সবেমাত্র আই বি- র লার্জ পেগটা শেষ করে গ্লাস নামিয়েছে। সন্দিপনীয় ভাষায় উৎসব শুরু হয়েছে […]

  4. গল্পের সময়ের গল্প
    কিস্তিমাত

    অত ভাবার কিছু নেই দাদা, নিয়ে নিন — দুধেল আলোয় ভাসা কাউন্টারে টাইট ফিটিংস কালো গেঞ্জির ওপর দিয়ে ক্লিভেজ দেখানো বাচ্চা মেয়েটার মিষ্টি হাসি যেন ওর বক্তব্যকেই সমর্থন করল। তবু নিজেকে লোভের কোপ থেকে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় সরকারী চাকুরে চন্দন নিজেই যুক্তি জুড়লেন– বুঝলাম খুব ভাল, কিন্তু দামটাও যে খুব ভাল। এখন যে এতটা বাজেট পারমিট […]

  5. বাইলাইন

    – কি রে, পরীক্ষা কেমন হল? লকডাউনের এতদিন পর স্কুলে বসে পরীক্ষা দিলি — স্কুল ফেরত মেয়ের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়লেন রুচিরা। – না, মা, অ্যাকচুয়েলি খুব প্রবলেম হচ্ছিল সবার। সবাই তো…অর্ধেক কথা থামিয়ে তার বাপির ঘরের দিকে তাকিয়ে ইশারায় মাকে কাছে ডেকে আদুরে গলায় জড়িয়ে নিচু স্বরে প্রশ্ন করল, – বাপি কোথায়? বাথরুমে? তারপর আরও […]

  6. বিগত

    অনেকক্ষণ  ধরেই  আইভিকে লক্ষ্য করেছিল রুচিরা।বেশ চোখে পড়ার মতন চেঞ্জিং বিহেভিয়ার। খুব বড় না হলেও  ছোট পার্টি নয়।ওর একমাত্র  মেয়ের  বার্থডে পার্টি বলে ওর বর কোনও  ত্রুটি রাখেনি।আগে ককটেল শুনলে লাফিয়ে উঠত আইভি।এমনকি ওর পরপর তিনবার বিয়ে ব্রেকআপের পরও নাচতে নাচতে এসেছে।কোন  হেলদোল নেই। ওর কনসেপ্টও অটল।যতক্ষণ  আছ এনজয় দ্য লাইফ।ওয়ান ম্যান-ওয়ান ওম্যান কনসেপ্ট  জাস্ট  ব্যাক ডেটেড।হরিবোল। […]

  7. সেন্সর

    পর্ব – ১  বারান্দার ওপর ফটাস শব্দটা জানিয়ে দিল পেপার এল। ধর-এরদের বাড়ি সনাতনবাবু হাজার চেষ্টা করেও বাড়ির লোকেদের পেপার কথাটা কাগজে বদলাতে পারলেন না। উঠে গিয়ে পেপার নিয়ে বসতেই নাতনি আইভি লাফিয়ে বিছানায় উঠে এল। নাইনে উঠেছে। দাদুর রাম ন্যাওটা। কিন্তু নাতনির সামনে প্রথম পাতা ওল্টাতেই পাতা বদলাতে হল। নাহ্‌! বাংলা কাগজে দেখার কিছু […]

  8. খেলা হবে

    লেখাটা পড়েছেন? বেরিয়ে গেছে লেখাটা কিন্তু।খুব নরম গলায়  কানের কাছে মুখ নিয়ে কথাটা  বললেন  গল্পের আড্ডা অনলাইন পত্রিকার ছটফটে  সম্পাদক তোর্সা দত্ত। না গো । আমি ওইসব মোবাইল ব্যাবহার জানি না গো- এই পঁচাশি বছর বয়সে ওসব আর শিখতেও চাই না। তুমি বললে এইটাই জানা হলো। তুমি বরং একটা কাগজে তোমাদের নম্বর , আর অন্যান্য […]

  9. বাই ডিফল্ট

    – ইন্টারভিউ তো দিলেন। এবার বলুন কেমন লাগল আমার মতন বাচ্চা আনকোরা একটা মেয়ের প্রশ্ন? – দারুণ! ও না না, এখন তো এসব বাংলা বললে চলবে না। কি যেন চলছে শব্দটা! ও হ্যাঁ হ্যাঁ মনে পড়েছে অ-সাম! ঠিক বললাম তো? – একদম। আপনি এই বয়েসেও এত আপ টু ডেট থাকেন কি করে? আপনার ঐতিহাসিক উপন্যাস […]

  10. হাতেখড়ি

    হাতেখড়ি – ১   পুরোহিত মশাই নতুন শ্লেটের ওপর সাদা চকটা রেখে কালো শ্লেটটা ধরে একবার সরস্বতী ঠাকুরের পায়ে ঠেকিয়ে নিজের মাথায় ঠেকালেন আর তারপর ঠেকালেন পাশে বসা হলুদ শাড়ি পরা বাচ্চা মেয়েটার মাথায়, তারপর বললেন – ‘কি নাম মা তোমার?’ উত্তর এল – ‘ছুচিসমিতা।’ -‘বাব্বা, নামের বাহার তো খুব!’ বলে ঠোঁট ওলটালেন আপন খেয়ালে। […]

  11. দলিত

    (১) সবাই বলে পটাই। এমনকি মেয়েরাও, নির্দ্বিধায়। পটাই আসলে কিন্তু কমরেড। পটাই-এর কেউ নেই। কিন্তু পার্টি আছে। কমরেড কথাটা শুনলে পটাইয়ের খুব হাসি পায়, শালা লাল পার্টির অফিস, চারদিক লালে লাল আর শালা বলে কিনা কমরেড! স্ট্রাইকারে খেলত পটাই। ফুটবলের স্পিরিটটা মন থেকে যায়নি। তাই এই মরা বাজারেও পার্টি অফিসটা আগলে পড়ে আছে। আড়ালে ওর […]

  12. অমানুষ

    বিজ্ঞাপনটা চোখে আসতেই নিজেকে মনে মনে প্রস্তুত করতে শুরু করেছিল রতন। চাকরিটা চিড়িয়াখানায়। সরাসরি যোগাযোগের কথা বলা আছে। বিশেষ কিছুই বলা নেই। শুধু সুস্থ সবল চেহারার অধিকারী হতে হবে। মাপজোক যা দিয়েছে তাতে বেশ দস্যুমোহন গোছের স্বাস্থ্য দাবি করেছে। রতনের সবই আছে। ‘ঐটাও’ বেশ বড়। হ্যাঁ, বলা আছে, ‘ঐ’টার কথাও। এবং মোটামুটি একটা মাপের ধারণাও […]

  13. কেতাবি

    বইপোকারা অজয়দের বাড়িতেই থাকে  বলে পাড়ার লোকেরা বিশ্বাস  করত।সাত শরিকের  বাড়িতে গজিয়ে  ওঠা  পুরোনো  ধাঁচের  পরিবারতন্ত্রে লেখক  না থাকলেও  ঠাকুরদার  আমলের  বৈঠকখানার আলমারির ঠাসা বই যে বাড়ির  সব সদস্যরাই আগ্রাসী  পাঠকের মতন গোগ্রাসে  গিলেছেন এ নিয়ে দুর্গানগরের মতন সুদূর আধা মফঃস্বল শহরের লোকেদের কোন  সন্দেহ ছিল না, আর তাই তারাঐ দত্ত বাড়িকে   ‘বইপোকাদের -বাড়ি ‘ […]

  14. গন্ধবাবা

    তাতাই গাছেদের সব কথা জানে। ওর বাড়ির লোক আর পরিচিত লোকেরা অন্তত তাই জানে। তাতাইয়ের ভাল নামটা কমজোরি হয়ে হয়ে কিভাবে হারিয়ে গেছে ও নিজেও সেটা বুঝতে পারে না। বাড়ির পেছনের কয়েক বিঘা জমিতে দাদুর সখের বাগানে যত গাছ  আছে  সবই যেন ওরই  বন্ধু। ওদের দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা ও যেন দেখেই বুঝতে পারে। আর ওরাও […]

  15. স্টাইল

    কি হল পেলে? – স্ত্রীর উত্তেজিত  কন্ঠের প্রশ্নের উত্তরে নীরব রইলেন  ধূর্জটিবাবু। ” না”,বলছে- “অল দি রুট্স ইন দিস লাইনস আর বিজি,প্লিজ  ডায়াল  আফটার  সামটাইমস।” ইস্- এই এক ঢং এর কথা – কত মানুষ নিরুপায়  হয়ে আর একটা  মানুষকে খোঁজে, সেটা  একদলের কোন হুঁশ  থাকলে  হয়।- স্ত্রীর অকাট্য  যুক্তি আর ধীরাজকে না পাওয়ার উত্তেজনা  এবং […]

  16. ব্রণ সুন্দরী

    বুঢঢা গালে টক দই মাখছে। রোজই মাখে। কারণ ওর দিদিও মাখে। ওর দিদি মানে টুকি; পাড়ার ‘আমরা সবাই’ সঙ্ঘের ছেলেরা যাকে পিছনে বলে ‘ব্রণ সুন্দরী’। গালে ব্রণ, নাকের ডগায় তিল। খুব সমস্যা ওর । শেহনাজ হোসেন থেকে কেয়া শেঠ, ফেয়ারনেস ক্রিম থেকে ফেসপ্যাক ওর গালে সাম্রাজ্য বিস্তার করে চলে গেল। কত বিউটিশিয়ান ক্রিম, ল্যাভেন্ডার ওয়াটার, […]

  17. দিগন্ত-পরি

    প্লেনটা ছোট হলেও দেখতে ভাল। আগেকার দিন হলে বলত ‘হেলিপ্যাড’। এখন একটা গালভরা নাম হয়েছে ‘মিনিজেট’। মিনিস্কার্ট, মিনিবাস সব শুনেছে পরি কিন্তু আকাশযাত্রার এমন গাড়ির নামটা সেদিন নেটবুকের নেটকাগজে পড়ল সে। বেশ ভালই। তার ওপর পুরনো  বিদেশী। তাই বিশ্বাস করে বরকে বলল, ‘বুক করো’। সটাসট বুক। ঝটপট সার্ভিস। বাড়ির চিলেকোঠার ঘরটায় একটা এয়ারল্যান্ডিং গ্যারেজ করা […]

  18. নো এন্ট্রি

    নো এন্ট্রি – ১   “তাই  বলছিলাম, মানুষের  ভালোবাসায় আমাদের  দল চলে, কর্পোরেট এর টাকায় নয়,আজকের  এই সমাবেশে জনগণের উপস্থিতি  সেকথা  প্রমাণ  করছে, সবসময় আপনারা  এভাবেই আমাদের  পাশে  থাকবেন, আপনারাই পারেন আগামী নির্বাচনে  আমাদের দলের  মতামতকে সারা দেশের  মানুষের  সামনে  তুলে  ধরতে, —–, তাই  আজকের  মত আগমী নির্বাচন এর দিনগুলিতে  এভাবেই উপস্থিত থেকে  ভোট বাক্সে […]

  19. ১০০% লাভ

    তন্ময়কে সবাই বলে ‘আসলি খিলাড়ি’। খেলতে নামলে ড্র করে খেলা শেষ করা ওর ধাতে নেই। চেহারায় যে ধাতু থাকলে স্মার্ট বলা যায় সেগুলোর বাইরেও ইমেজ নামে একটা বস্তু ওর আছে যা থাকলে আগেকার দিনে রককালচারে বলত—-লেডিকিলার। যদিও এখনকার দিনে লেডিকে কিল করতে হয় না,শহরে বেশির ভাগ লেডিই কিল করে রাখে ছেলেদের।তাই শব্দটা অর্থে র অবকর্ষতায় […]

  20. চেনা লেখক অচেনা কাহিনী

    লেখক শিক্ষক  বাংলা সাহিত্যে খুব বেশি  নেই বললেই চলে । লেখকদের  শিক্ষকের কথা বলছি না, বলছি এমন শিক্ষক মশাইদের কথা যাঁরা লিখতে  এসেছেন আর জগতজোড়া খ্যাতি পেয়েছেন এমন সংখ্যা কম হওয়ার মূল কারণ শিক্ষক  সত্তার সঙ্গে লেখক সত্তার সহজাত  বিরোধ। এটি  যদিও  বহু  চর্চিত একটি  বিষয়  তবুও বর্তমান  প্রবন্ধের  আলোচিত  সাহিত্যিকের জীবন শিক্ষক সত্তায় বাঁধা  […]

  21. চেনা লেখক অচেনা কাহিনী

    সাহিত্যজীবন ব্যাপারটা নিয়ে নানা সময়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সাহিত্য জীবন কি সাহিত্যিকের ব্যাক্তিজীবন ? না সাহিত্যিকের ব্যাক্তিজীবন তাঁর সাহিত্যিকে কতটা প্রভাবিত করেছে তার বিচার। অনেকেই এ প্রশ্নের মীমাংসা করতে পারেননি। সাধুসঙ্গের আশায় যেমন পূর্ণ্যার্থী ঘোরেন, প্রকৃত পাঠকও তেমনই সাহিত্যিককে খুঁজে খুঁজে ফেরেন, নানা চাকায় ফেলে, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানাভাবে বিশ্লেষণ করেন। কতটা তাঁর পড়া পাঠের ওপর […]

  22. দোস্তি

           [  এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না – এই স্পষ্ট উচ্চারণ তাঁর। তিনি বরাবরই ছিলেন সহজে কঠিন কথা বলার মানুষ। তিনি নবারুণ ভট্টাচার্য। আমাদের ফ্যাতাড়ু। শুদ্ধ সাহিত্য-সংস্কৃতির নামে ধামাধরা আতুপুতুদের তোয়াক্কা না করা পুরন্দর ভাট। জুলাই মাস ছিল এই ব্যাতিক্রমী সাহিত্যিকের মৃত্যু মাস। দীর্ঘ সময়ের ঘনিষ্টতা থেকে দেখা নবারুণের একটি কোলাজ চিত্র […]

  23. অদূরে

    (১) ফোনটা পেয়ে একটু থমকে রইলেন অবিনাশবাবু। কি লিখবেন? ভেবে পেলেন না। সাধারন দু একটা ভাবনা যা মাথায় এল সব মামুলি পর্যায়ের। অথচ এতবড় পত্রিকার এত নামজাদা সম্পাদকের রিকোয়েস্ট। তার ওপর পত্রিকাটিও বেশ বড়। আজকাল পুরো পত্রিকা খুটিয়ে না পড়লেও কেনার অভ্যেস অনেকের আছে। ফলত না কিনে অনেকেই থাকতে পারেনা। তার ওপর স্ট্যাটাসের একটা ব্যাপার […]

  24. ও রকম মনে হয়

      খবরের কাগজটা মুড়ে পাশ ফিরে শুল রবি। জানলাটা বন্ধ করাই ছিল। এসিটা দু পয়েন্ট বাড়িয়ে দিল। মাইকটা গান শোনাবেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে চিৎকার আর বাড়িয়েছে – ‘চক্ষে আমার তৃষ্ণা’। ভর দুপুরেও ইচ্ছা থাক বা না থাক, বছরের কয়েকটা দিন, গৃহবাসীদের দ্বার খুলতেই হবে। অর্থাৎ কান খুলতেই হবে। পুজো, ভোটপুজো, রক্তদান মিলিয়ে দিনের সংখ্যা বাড়ছেই। ভাল […]

  25. ম্যাক্সিম গোর্কির মৃত্যু ও কয়েকটি বিতর্কিত প্রসঙ্গ

    ১৯৩৬ সালের ১৮ জুন মস্কো রেডিও ম্যাক্সিম গোর্কির মৃত্যু সংবাদ ঘোষণা করে। মস্কো রেডিও শোকবার্তায়  তাঁকে  ‘শ্রমিকের বন্ধু’ আর কমিউনিজমের বিজয়পথের একজন যোদ্ধা হিসাবে বর্ননা করেছিল। তাঁর মৃত্যু লেনিনের মৃত্যুর পর রাশিয়ার অন্যতম উল্লেখযোগ্য ঘটনা হিসাবে ধরা হয়ে থাকে। তাঁর শেষকৃত্য অনুষ্ঠানও পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়, সম্পন্ন হয়েছিল। তাঁর শববাহী শকট নিয়ে মস্কোর কেন্দ্রস্থলে কয়েক লক্ষ […]

  26. বিচ্ছেদ

    ”যাচ্ছেতাই” শব্দটা যথেষ্ট নয় বলেই মনে হচ্ছিল রচনার। একটা ঘটনা ঘটলেও ঠিক ছিল। তা নয় পরপর, একতার পর একটা। নিজের উপরই ভরসা কাটছিল। ঠিক কথা সংসারে চলতে গেলে সমস্যা আসবেই। কিন্তু তা বলে এরকম। জ্যোতিষের কথাটা মনে এল – “মাথা ঠাণ্ডা রাখুন কটা দিন।” তারপর মনে হল দূর ও সব ফালতু। ওরা ফেরেববাজ। পাথর দিয়ে […]

  27. চেনা লেখক অচেনা কাহিনী

    চেনা জানা জগৎটাই আমাদের কাছে ধোঁয়াশা। এই জগতটারই কোন সঠিক চেহারা আমরা বুঝি না যতক্ষণ না অচেনা নানা কাহিনী, চেনার জগতের হাত ধরে আমাদের চেনা মানুষগুলোকে আরও ভালভাবে চিনিয়ে দিয়ে যায়। তাই অচেনা মানুষরা আমাদের পরিচিত জগতের মধ্যে যতটা না প্রভাব ফেলে চেনা লোকের নতুন নতুন না জানা ঘটনা আমাদের বেশি করে ভাবায়। লেখক পাঠকের […]

  28. ইসমত চুঘতাই সম্পর্কে মান্টো

    [ইসমত চুঘতাই সম্পর্কে সাদাত হাসান মান্টোর এই লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ‘দ্য  অ্যানুয়্যাল অব উর্দু স্টাডিজ’ পত্রিকায়। এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন মহম্মদ উমর মেনন। লেখাটি উর্দু থেকে ইংরাজিতে অনুবাদ করেছেন মহম্মদ আসাবুদ্দিন। সেটিরই বাংলা অনুবাদ করেছেন দেবাশিস মজুমদার।] ইসমত সম্পর্কে আমি যা লিখছি তা কোনো লজ্জা থেকে নয়। আসলে তাঁর কাছে একটা ঋণ রয়ে গেছে। […]

  29. থ্রু – লেন্স

    তখনও ‘উড’-কালচার শুরু হয়নি। মানে হলিউড, বলিউড, টলিউড–এসব আর কি। তখনও সিডি, ডিভিডি, ক্যাসেট জন্ম নেয় নি। মানুষ সিনেমাকে ‘ফিলিম’ বলতেই অভ্যস্ত। অন্তত আমাদের দেশের সাধারণ মানুষেরা তো বটেই। তারা বলত ‘বোম্বের ফিলিম’ আর ‘আংরেজি ফিলিম’। আর বাংলা কিন্তু হলে ‘বাংলা বই’। এইসব সময়ে হল মানে সিনেমা হল – মানে এক রহস্যময় জগৎ। আর পর্দায় […]

  30. নিশ্চিন্দপুরের হারিয়ে যাওয়া কাহিনী

    [১৯৯৫ সালে এটি লেখেন লেখক।ওই বছর নিশ্চিন্দপুর গ্রামে সত্যজিৎ রায়ের আবক্ষ মূর্তির উন্মোচন করেন তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের  মাননীয় রাজ্যপাল। উদ্যোক্তা পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও পথের পাঁচালি সংস্থা। ওই অনুষ্ঠানের সংবাদ সংগ্রহের জন্য তৎকালীন একটি বহুল প্রচারিত সংবাদপত্রের সাংবাদিক হিসাবে নিশ্চিন্দপুর গিয়েছিলেন লেখক। নেহাতই অনুসন্ধিৎসার বশে  সেদিন গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে আর এলাকার মানুষগুলোর সঙ্গে কথা  বলতে বলতে খোঁজ […]

যোগাযোগ


email:galpersamay@gmail.com

Your message has been sent. Thank you!

গল্পের সময় পরিবার
সমীর
অগ্নীশ্বর
দেবাশিস
চিন্ময়
পার্থ
মিতালি
জাগরণ
দেবব্রত

© 2016 - 2025 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ