-
রবীন্দ্রগানের পরম্পরায়
[রবীন্দ্রসঙ্গীতের জগতে সুপরিচিত নাম সঞ্জয় গঙ্গোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথের গানের গভীরে ডুবে থাকা মানুষটি এই সঙ্গীতের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন জীবনের পথ চলার আনন্দ।রবীন্দ্রগানের আলোকমাখা পথ ধরে হাঁটতে গিয়ে তিনি কিংবদন্তি শিল্পী সুবিনয় রায়কে শিক্ষক হিসাবে অনেক কাছ থেকে পেয়েছেন। সান্নিধ্যে এসেছেন রবীন্দ্রগানের স্বরলিপিকার শৈলজারঞ্জন মজুমদারের। আর এই ২০২১-এ সুবিনয় রায়ের জন্মশতবার্ষিকীতে আমরা ঋদ্ধ হয়েছি তাঁর সেই সংগীতময় […]
-
স্রোতের উল্টো দিকে হাঁটতেন তিনি
[অমিয়ভূষণ মজুমদার যত বড়মাপের কথাশিল্পী,ঠিক ততখানিই অবহেলিত বলে অভিযোগ।অমিয়ভূষণ মজুমদার ছিলেন আদ্যপ্রান্ত উত্তরবঙ্গের মানুষ।সারাজীবন লিটল ম্যাগাজিনে লিখে যাওয়া বাংলা সাহিত্যের এই রত্ন সাহিত্যের টানে কখনও স্বভূমিচ্যুত হননি।ধারাবাহিক অবহেলার শিকার এই সাহিত্যিককে নিয়েই লিখেছেন আর এক সাহিত্যিক কিন্নর রায়।পূর্ব প্রকাশিত এই লেখাটি সংগ্রহ করে ফের প্রকাশ করল ‘গল্পের সময়’] নিজের গদ্যভঙ্গি, শব্দচয়ন, বিষয় নির্বাচনে অমিয়ভূষণ […]
-
ভারতীয় সাহিত্যঃ ভাষা-বন্ধন
ভারতবর্ষের নানা ভাষার আধুনিক সাহিত্য গড়ে উঠেছে বিদেশী ও বিভাষী ইংরেজের রাজত্বকালে। সে রাজত্বের দু-দশ বছর ভারতবর্ষের ইতিহাসে অতি আধুনিক কাল। কিন্তু এই কালসাম্যই সে সাহিত্য ও রাজত্বের একমাত্র যোগ নয়। ইংরেজ রাজত্বের আনুষঙ্গিক রাজভাষা ইংরেজির প্রচারেতার মাধ্যমে ভারতবাসীর পরিচয় হল আধুনিক ইউরোপের জ্ঞান ও চিন্তা, সাহিত্য ও ভাবের সঙ্গে। এ আধুনিক ইউরোপকে ইউরোপীয়ের বলে […]
-
হাঁদা,ভোঁদা ও নন্টে,ফন্টে/ফিরে দেখা
যারা বই পড়তে ভালোবাসে, বইয়ের অনেক চরিত্রই তাদের কাছে রক্তমাংসের মানুষ হয়ে ওঠে। রাস্তায় চলার পথে অনেককে দেখলেই মনে হয় – ” দ্যাখ, একদম অমুক চরিত্রের মত ” ; কিংবা কাউকে উপহাস করে আমরা বলি – ” এই হাঁদা শোন ” বা ” হাঁদা নাকি! মাথায় গোবর পোরা আছে? ” আবার কেউ মোটা হলেই পাড়ায় […]
-
ফুল ফোটার সময়
বেশ কিছুদিন হলো টের পাচ্ছি আবহাওয়ার পরিবর্তন। বাতাস দিক পরিবর্তন করতে শুরু করেছে। উত্তরের পরিবর্তে দক্ষিণ থেকে আসছে মনকেমন করা বাতাস। তাহলে কি শীত গিয়ে বসন্তের আগমন ঘটতে শুরু করেছে । হয়তো তাই হবে। শিমুল পলাশের শাখা – প্রশাখায় কুঁড়ি আসতে শুরু করেছে। গাছে গাছে আমের মুকুলে মৌমাছিদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে কোকিলের কুহু […]
-
সহজ টানাপোড়েন
(১) ডক্টর কেভিন সব রিপোর্টগুলো জড়ো করে বললেন, “সারোগেসি করাতে পারেন কিন্তু এখনই করাবেন কিনা সেটা আপনাদের ওপর।” কলেজের প্রথম দেখায় প্রেম এবং তারপর দুই পরিবারের সম্মতিতে,দশ বছর আগে,বিয়ে হয় অভিরুপ আর শ্রাবস্তীর।বন্ধুরা ঠাট্টা করে বলতো, “একটু ট্র্যাজেডি না থাকলে প্রেমকাহিনী ঠিক জমে না বুঝলি”। কলেজ জীবনের চারবছর অগুন্তি প্রেমের প্রস্তাব পায় ওরা দুজনেই।কিন্তু শ্রাবস্তীর […]
-
মাঘ ফাগুনের গল্প
(১) আজ তিরিশে। তিরিশে জানুয়ারি।আসছে মাসের চোদ্দই ভ্যালেন্টাইন ডে। সেই সুবাদেই সাত তারিখের মধ্যে একটা প্রেমের গল্প জমা দিতে হবে। আজই চোখে পড়ল বিজ্ঞপ্তি। এর মধ্যে তিন তারিখ আমাকে দেখতে আসবে। সেটা অবশ্য নতুন কথা নয়। রবিবারের কাগজ দেখে মা পাত্রী চাই এর ছোট বিজ্ঞাপনগুলো দাগিয়ে রাখে প্রথমে। তারপর মোটা আট নম্বর খাতায় ফোন নম্বরগুলো টুকে রাখে। এক একটা নম্বর লিখে মাঝে খানিকটা করে জায়গা ছেড়ে রাখে। শেষে একটার পর একটা নম্বরে ফোন। মা’র উৎসাহে একটু কি ঘাটতি পড়ছে সম্প্রতি? দুটো ফোন নম্বরের মধ্যে রাখা জায়গা কমছে। আগে ছিল একটা পুরোন ডায়রি, এল. আই . সি.’র। শেষ হতে চার নম্বর রুলটানা খাতা। এখন আট নম্বর সাদা খাতা। সাদা পাতায় লেখা অভ্যেস নেই তেমন মা’র। লাইন বেঁকে যায়। পাতার শেষ দিকে পৌঁছে নম্বরের সঙ্গে লেখার মিল থাকেনা। ফোন করে বেইজ্জতিও হয়ে যায়। তার আগে শুক্রবার থেকে তাগাদা মেরে দাদাকে দিয়ে ফোনে পয়সা ভরায়। মা স্নানে যায় যখন, মঝেমাঝে আমি ছেলেদের ছবিগুলো লুকিয়ে দেখি। এসব লুকোচুরির দরকার ছিলনা আগে। আমি, দাদা, মা সকলে মিলে হুমড়ি খেয়ে ছবি দেখতাম। হাসাহাসি। কেউ টেকো তো কেউ মোটু। বুড়োটে বা অসভ্য টাইপ। এখন আর কাউকেই বাতিল করা হয়না। আর মা ছবি লুকিয়ে রাখে। প্রথমেই সাত পাঁচ ভেবে নিয়ে পরে কান্নাকাটি, মন খারাপ। – আগে কথাবার্তা এগোক খানিক, তারপর ছবি টবি। চুপচাপ মেনে নিই। আর সুযোগমতো টুক করে দেখে নিই। তবে কোন তাবনাকে ঘেঁষতে দিই না মনের চৌহদ্দিতে। এবার বেশ অনেকদিন পর দেখতে আসা অব্দি এগোল। করোনা, ভাদ্র মাস হ্যানাত্যানা। তবে এসব ভাবের ঘরে চুরি। বয়স বাড়ছে, মুখে তার ছাপ পড়ছে। যতই কায়দা করে ছবি তুলে দিক দাদা পাত্রপক্ষ ভোলেনা। বলেই দেয় মুখের ওপর, আরএকটু স্পষ্ট ছবি পাঠান, অথবা কেউ বলে আরও দুচারটে ছবি, ঘরের বাইরে, ন্যাচারাল ছবি নেই? ছবি পছন্দ হল যদি তখন স্কুল, কলেজ, অনার্স না পাস কোর্স, মাস্টার্স করেনি ? গান জানা টানা, সেলাইফোঁড়াই,হাতের কাজ, যেমন মা বলে তখনকার সময়ে ছিল, এখন আর তা নিয়ে অত কেউ মাথা ঘামায় না। এর পর চাকরি। চাকরি শুধু করলে হবেনা, যখন খুশি ছাড়ব কিনা। এটাতে মাস্টার স্ট্রোক হাঁকাতে পারে মা। – ওর চাকরি নিয়ে কোন প্রবলেম হবেনা দিদি। ইচ্ছে হলে ঘরে বসেও…..। এই করোনার সময়ে তো পুরো ঘরে কম্পিউটারেই কাজ করে যাচ্ছে। কোন অফিস? – প্রাইভেট কোম্পানি। এর পর প্রসঙ্গান্তরে যাবার জন্যে মা সামান্য তাড়াহুড়োয়। সোজা একটা উপায় শিখিয়ে দিয়েছি আমিই। – পরীক্ষা টরীক্ষা তো দিচ্ছে। বেটার পেলেই … আজকাল আর বুক ধুকপুকটুকুও করেনা। মা আর দাদাটার জন্যেই কষ্ট হয়। জানি মুখে যাই বলুক, প্রত্যেকবার একটা আশায় কেমন অধীর হয়ে থাকে।শুধু ওদের কথা ভেবেই আপ্রাণ চেষ্টা করি একটা পণ্যের মতো সত্যি মিথ্যে মেশান বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতার মন জিতে নিতে। দাদা বরাবর কুল থাকে। এবারই দেখছি বড্ড ছটফট করছে। (২) যা বলছিলাম, তিরিশ থেকে সাত। এই সাতটা দিন, না আট দিন। জানুয়ারিতে একতিরিশ দিন বলে বাড়তি আরেকটা দিন। ম্যাডাম বলে দিয়েছেন, এই এক সপ্তাহ তোমাকে সময় দিলাম তনু। স্যার বলছিলেন এক তারিখেই তোমার হাতে চিঠি ধরাতে। আমি বলে কয়ে সাতটা দিন চেয়ে নিয়েছি। বরাবরই আমি ম্যাডামের এই বাড়তি স্নেহটুকু বুঝতে পারি। তনুশ্রী থেকে কদিনের মধ্যেই তনু হয়ে গেছি বলে শুধু নয়। গম্ভীর হয়ে থাকলে তুমি , নাহলে তুই হয়ে গেছি সেই কবেই। টি. এ. বিল টিল… ঝামেলা হয়নি কখনই, যেমন রাকেশ কি বাণীদিদের । – ভীড় বাসে টাসে উঠতে যেওনা। টোটো কি অটো করে নিও। আমি থ্রু করিয়ে দেব। তবে আমি বাড়তি সুযোগ নিই নি কখনও এর চেয়ে বেশি। সেরকম হলে তো অ্যাপ ক্যাবের ভাড়াও চেয়ে বসতাম। কিন্তু পরিস্থিতি এখন ঘোরালো হয়ে উঠছে। কোভিডের জন্যে বাজার ডাউন। অনেককেই বসিয়ে দিয়েছে। – একটা কিছু করে দেখা এবার তনু। প্রীতি, মিলনী স্যারের কাছে এসে তোর কথা তুলে ঝামেলা করে গেছে। একটা ক্লায়েন্টও দিতে পারিসনি ….. ছ`মাসের জায়গায় সাড়ে ন`মাস গড়িয়ে গেল। শুধু আমার কথায় তোকে কাগজ ধরায়নি। – বিয়ে হয়ে বাচ্চা ভি পয়দা হবার টাইম পার হয়ে গেল, তনুশ্রী তো এনগেজমেন্ট তকই পৌঁছল না। ঢপ মেরে যাচ্ছি তোর হয়ে এটা ওটা। ওরই লাকটা খারাপ প্রদীপদা। একটা তো প্রায় ফাইনাল হয়ে গেল তখন ছেলের জেঠু করোনায় গেল। তোর ঐ ফরেনের কেসটার কথা জিগ্যেস করছিল। বলে দিলাম ফ্লাইট চালু হলেই ওটা ধরে নেবে তনু। প্রায় ফাইনাল। চোদ্দই ভ্যালেন্টাইন। সাত তারিখের মধ্যে ফাইনাল করতে হবে। একটা একটা করে দিন চলে যাচ্ছে । প্রেসার বাড়ছে,ঘাড়ের কাছে কন্টিনিউয়াস দপদপানি, […]
-
পুকুর
বাঃ, পুকুরের জলটা তো তেমনিই টলটলে আছে! ঠিক যেন আয়না। টিফিনে ঐ জলে আমরা মুখ দেখে চুল ঠিক করে নিতাম। ওপাড়ের তালসারিতে কত বাবুই পাখির বাসা ছিল। যাঃ, বাবুইগুলো কোথায় গেল, তালসারিটা তো একইরকম আছে। ও পাশের ঐ রাধাচূড়া গাছটাও তেমনিই ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে। হলুদ ফুলে ছেয়ে থাকত গাছটা। ঝরা ফুলে পুকুরের জলটাও হলুদ হয়ে […]
-
অমৃতরস
“দিন রজনী কত অমৃতরস…” পরিচিত ধীর পায়ের চলনে নীলাদ্রির গুনগুনানিতে ছেদ পড়ে। শব্দটা যেন ইতস্তত করেও শেষমেশ ওর পিঠ ঘেঁষে দাঁড়ালো,আস…..আসবো? – এসেই তো পড়েছো। ঘাড় না ফিরিয়েই জবাব দেয় নীলাদ্রি। – দাদা। আগন্তুকের স্বরটা কেমন কাঁদো কাঁদো ঠেকলো।। এবার খানিকটা বাধ্য হয়েই নীলাদ্রিকে মুখ ফেরাতে হলো…. না এতো তার পরিচিত কেউ নয়। দরজার সামনে […]
-
তৃষিতকাল
আমি যদি কোন চিত্রকর হতাম তাহলে পটে তার ছবি আঁকতাম। তারপর সে ছবি হয়তো ফেসবুকে আপলোড করে,পত্রিকার পাতায় ছাপিয়ে কিংবা পোস্টার বানিয়ে দেয়ালে দেয়ালে সাটিয়ে দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিতাম- এই সেই মেয়ে, এই সেই মেয়ে যাকে আমি খুঁজছি। যদি আমি আত্রেয়ি তীরের মৃৎশিল্পী শ্যামাঙ্গের মতো হতাম, তাহলে তার পুত্তলি বানিয়ে লগে নিয়ে ঘুরতাম আর লোকজনকে […]
-
যে গল্পটা লেখা হলনা
নাছোড়বান্দা মেয়েটা প্রায়ই বলে কথাটা। — একটা কিছু করুন স্যার — কী করবো বল্ ? আমি বললেই কি শুনবে ? তাছাড়া আমি তো তাকে চিনিনা , দেখিইনি কখনো। — শুনবে , ঠিক শুনবে । আপনার কথা ফেলতে পারবেনা। যদি আপত্তি না থাকে তাহলে আপনার কাছে একদিন নিয়ে আসবো ? এইরকম কথোপকথন […]
-
কখন তোমার আসবে টেলিফোন
-হ্যালো – -হ্যাঁ- বল…। – ফোন করনি কেন ? -আমিতো ভাবছিলাম তুমি করবে । -আগের দিন আমি করেছিলাম, এবার তো তোমার করার কথা ছিল । -তাই- না ? আমার একদম মনে ছিল না যে এবার আমার পালা । তবে ফোন করার আবার পালাপালি কিসের ? -তুমি সেই একই রকম আছ । । পাঁচটায় আসার কথা, […]
-
একটি প্রেমের গল্প
১ পার্কে ঢোকবার ঘোরানো গেটটার দিকে একনাগাড়ে তাকিয়ে তাকিয়ে অপরাজিতার চোখে প্রায় ব্যথা হওয়ার জোগাড় । এদিকে ওর ভীষণ দেরী হয়ে যাচ্ছে, সূর্য্য ধীরে ধীরে ঢলে পড়ছে পশ্চিমে । একে তো বিকেলবেলায় এই পার্কটায় এসে মানসদার সঙ্গে দেখা করায় বেশ রিস্ক আছে । একটু দূরে মোড়ের মাথায় বাড়িটার তিনতলার একটা ফ্ল্যাটে মেজোমাসী থাকে । কাজে অকাজে এই বিকেলে মেজোমাসী বেরিয়ে এসে […]
-
খোয়াই
তুমি অঞ্জলি ভরে আমাকে দিয়েছ ক্ষয় আমি গ্রহন করেছি ক্ষয়েছি একটু একটু করে… দেখো শিলাবতী নদীতীরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে রাঙা ফুল হয়ে ফুটে আছি… শিলাবতী নদী। সেদিন সুশান্ত অত করে না বললে হয়তো পরিচয় হোত না নদীটির সঙ্গে । আমার তখন পূর্ণ যৌবন, চোখে সানগ্লাস। যা দেখি তাতেই ভালোলাগার রঙ। মেদিনীপুরের গড়বেতায় আমাদের প্রতি শনিবার বসতো চক্ষুশিবির । আমি বাঁকুড়া মেডিকেল থেকে আসতাম। দুপুর থেকে […]
-
আলোক শিখা
মঞ্জু অনেকক্ষণ ধরে লাইনে দাঁড়িয়ে। ভোর থেকে বিছানা ছেড়ে ঘরের কাজকর্ম কোনমতে কিছুটা শেষ করে এসে দাঁড়িয়েছে লাইনে। তার সামনে অনেকে লাইনে দাঁড়িয়েছে। কলকাতা থেকে নামকরা ডাক্তারবাবুরা আসবেন তাদের গাঁয়ের স্বাস্হ্য শিবিরে। গাঁ বলতে ছিটমহল। চলমেঘা। বাংলাদেশের গা ঘেঁসা বর্ডারে। জমিদারি দখলটা বাংলাদেশের। তবে ভারতীয় আইনযুক্ত সুযোগ-সুবিধেগুলো পায় তাদের গাঁয়ের লোকেরা। লোকজন বলতে মেরেকেটে দুশোর […]
-
মনের মানুষটা
অর্পির আজ মনটা ভীষণ খারাপ। ভেবেছিল আজ ওর একত্রিশতম জন্মদিনে শুভম অন্যন্য বারের মত ওকে বিছানায় থাকতেই ভোরবেলা ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ বলে উইশ করবে। কিন্তু বিছানায় তো দুরের কথা, অফিস যাবার আগে বাড়িতে বা অফিস গিয়েও যে কমপক্ষে ফোনে উইশ করবে, সারাদিনে তার কোন লক্ষনই নেই। অর্পি, মানে অর্পিতাকে, যাকে শুভমই বিয়ের পর থেকেই আদর […]
-
ধর্ষিতা
ফোনটা দুবার বেজে থেমে গেল। ঋষিতা ফোনের সামনে বসেছিল। সে ইচ্ছে করে রিসিভ করেনি। যত সব বাজে ফোন। কাকে দিচ্ছি , বয়স কত ,কত দেবেন – এরকম হাজার প্রশ্ন । একজন তো বলেই ফেলল ,না হয় দিলাম । আপনার উপকার হলো। তাহলে ও তো অর্থ দিয়ে দায়মুক্ত হতে পারবেন না। শুধু অর্থ দিয়ে কি অমূল্যধন […]
-
অকপটঃএকটি জীবন নাট্য
মেয়েটি বাড়িতেই ছিল । হঠাৎ তার মোবাইল ফোনটা ঝনঝন শব্দে বেজে উঠলো । আর তার পর … মানালি : হ্যালো কি ব্যাপার ! এযে অবিশ্বাস্য , গায়ে চিমটি কেটে দেখতে ইচ্ছে করছে জেগে আছি নাকি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছি ? ফিরোজ : ন্যাকামো না করে সরাসরি বলবি হয়েছেটা কি ? মানালি : ন্যাকামোটাতো মেয়েদের সহজাত , ওটা ছাড়ি […]
-
নৈশ-ভ্রমণ
(কৃষ্ণ বলদেব বৈদ – জন্ম ২৭ জুলাই’১৯২৭, ভিগা পাঞ্জাব। কয়েক বছর অধ্যাপনা করার পর ১৯৬৬ সালে উচ্চশিক্ষার্থে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট। ১৯৮৫তে নিউইয়র্ক স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর পদ থেকে অবসর নিয়ে ভোপালে ভারত ভবনের সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১০ সালে ফিরে যান মার্কিন দেশে। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক আর সাহিত্য সমালোচনা গদ্যসাহিত্যের নানা মাধ্যমে স্মরণীয় কাজের […]
-
‘গল্পের সময়’-এর ৫ম বর্ষে আমরা
এই দুহাজার একুশে‘গল্পের সময়’ এসে দাড়িয়েছে ঠিক সেই বিন্দুতে যা অতীত লগ্ন থেকে ভবিষ্যৎ অগ্রগমনের প্রাগ্রসর মুহূর্ত। কিছুটা পথ পেরিয়ে এসে এই একক কম্প্রমান দ্বীপের মতো মুহূর্তটিতে দাঁড়িয়ে প্রবহমান কালের অবিচ্ছিন্ন স্রোতকে যেন একবার বুঝে নেওয়া যায় হয়তবা। ‘গল্পের সময়’-এর দীর্ঘপথ অতিক্রণের কোনো মহিমান্বিত অভিজ্ঞতা নেই। সে পেরিয়ে এসেছে মাত্র চারটি বছর। আর এই চার […]
-
যীশু যেদিন ক্রশ-বিদ্ধ হয়েছিলেন
[রুশীয় গল্প ‘On the day of Crucifixion’-এর অনুবাদ। গল্পটি অনুবাদ করেছেন কুমারেশ ঘোষ] যে অভিশপ্ত দিনে, ধর্মগুরু যীশুখ্রীষ্টকে অন্যায় ভাবে অন্যান্য খুনী বদমায়েসদের সঙ্গে গলগথা শহরে ক্রশে বিদ্ধ করা হয়েছিল – সেইদিন সকাল থেকে জেরুজালেমের এক ব্যবসাদার, নাম তার বেন-টবিন ভীষণ কষ্ট পাচ্ছিলো দাঁতের যন্ত্রণায়। আগেরদিন থেকে যন্ত্রণা শুরু হয়। প্রথমে আক্কেল দাঁদের পাশের দাঁতটা, […]
-
ঐক্য-বাক্য-নাট্য
প্ল্যাটফরম যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে কিছুটা এগোলেই লেভেল ক্রশিং। লেভেল ক্রশিং পেরিয়ে একটা ধূলো ভরা ঢালু রাস্তা এঁকে বেঁকে এগিয়ে বাজার চত্বর পেরিয়ে কিছুটা উঠে যেখানে বড়ো রাস্তায় পৌঁছোল ঠিক সেখানেই একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের এই চায়ের দোকান। মণিদার চায়ের দোকান নামে এর পরিচয়। মণিদা নেই। তাঁর ছবি আছে দোকানে। দোকান চালায় মণিদার […]
-
শ্যামাপোকা
অনেক সময় অনেক কারণেই মানুষ তাঁর নাম হারিয়ে ফেলেন। আমার ঠাকুমাকে তো জ্ঞান হওয়া ইস্তক শুনছি সবাই ডাকে – ব্যালার মা । বেলা আমার বড় পিসির নাম। আর এই বেলাই লোকমুখে ব্যালা। গল্পে শোনা, আমার ঠাকুমা তাঁর ছেলেপুলেদের নিয়ে সেই মেঘনা নদীর পার ছেড়ে গোয়ালন্দগামী স্টিমারে চেপে বসেন ১৯৫৮ সালে, তারপর ট্রেনে দর্শনা ও এ […]
-
অংশহর
প্রথম পর্ব ওয়েস্ট এন্ড পার্কের যে ৫০ বছরের বাড়িটা থেকে আমরা মাস তিনেক আগে উঠে আসি, সেটা ১৯৬৭ সালের ঝঞ্ঝা-বিক্ষুব্ধ পরিস্থিতিতে আমার দাদু শ্রী সুবোধ চন্দ্র চক্রবর্তী তৈরি করেছিলেন। আসাম থেকে একপ্রকার পালিয়ে এসে। বংগাল খেদা ‘আন্দোলন’-এর শিকার হয়ে। আমি তারও ১৭ বছর পর ওখানে জন্মাই। সে অর্থে ওয়েস্ট এন্ড পার্ক আমার মাদার পাড়া। ‘বাম’ […]
-
রবীন্দ্রনাথ ও লালন ফকির
[বর্তমান প্রবন্ধটি দেবাশিস মুখোপাধ্যায় (দে মু) তৈরি করেছিলেন সুধীর চক্রবর্তীর একটি বক্তৃতাকে ভিত্তি করে। সমগ্র বক্তৃতাটি ইন্দুমতী সভাগৃহে বসে রেকর্ড করেছিলেন দেবাশিস বাবু। পরবর্তীতে এটি নন্দন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল বছর পনেরো আগে। সুধীর চক্রবর্তীর মৃত্যুর পর দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের অনুমতি ক্রমে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় সেই বক্তৃতার সংক্ষিপ্ত রূপ প্রকাশ করা হল।] রবীন্দ্রনাথ ও লালন ফকির – নাম […]
-
রাজনীতির অনুষঙ্গে বিমল করের গল্প/প্রতিক্রিয়া ও প্রতিবাদ
রাজনীতির আলোতে দেখার জন্য বিমল করের চারটি গল্প মুখ্যত গ্রহণ করা হয়েছে। অতি পরিচিত গল্পগুলি এই তালিকায় অনুপস্থিত।তাঁর পঞ্চাশটি স্বনির্বাচিত গল্পে অবশ্য এই চারটি গল্পই আছে।ঐ সংকলনের ভূমিকায় লেখক মন্তব্য করেছেন , “ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে, এই পঞ্চাশটি গল্পই লেখকের পক্ষ থেকে যথেষ্ট।এর বেশি নাই বা থাকল।লেখক তাঁর চয়নে রাখায় এই গল্পগুলি লেখক-মানসে স্বতন্ত্রভাবে বেঁচেছিল […]
-
পান্থজনের সখা
গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে যখন হঠাৎ করেই জীবনবীমা নিগমে একটা চাকরি পেয়ে গিয়েছিলাম তখন তার নিরাপত্তা ও নানারকম সুযোগ-সুবিধা নিয়ে চেনামহলে একটা ধন্য ধন্য রব উঠেছিল। কিন্তু সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে একটা সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাজে মন বসানো বড় কঠিন। ইচ্ছের বিরুদ্ধে সেই মরুভূমিতে পথ হাঁটার সংকটকালে মরুদ্যান বলতে ছিল জীবনবীমা নিগমের পূর্বাঞ্চলীয় […]
-
এইসব দিনরাত্রি পেরিয়ে যেতে যেতে…
আজ এই দুহাজার একুশের সকালবেলায় ‘গল্পের সময়’ এসে দাড়িয়েছে ঠিক সেই বিন্দুতে যা অতীত লগ্ন থেকে ভবিষ্যৎ অগ্রগমনের প্রাগ্রসর মুহূর্ত। কিছুটা পথ পেরিয়ে এসে এই একক কম্প্রমান দ্বীপের মতো মুহূর্তটিতে দাঁড়িয়ে প্রবহমান কালের অবিচ্ছিন্ন স্রোতকে যেন একবার বুঝে নেওয়া যায় হয়তবা। ‘গল্পের সময়’-এর দীর্ঘপথ অতিক্রণের কোনো মহিমান্বিত অভিজ্ঞতা নেই। সে পেরিয়ে এসেছে মাত্র চারটি বছর। […]
-
উজিতপুরের মাঠ পেরিয়ে
‘খবর্দার! তুমি ওদিকে যাবে না। এই না বলছি তো না। যাবে না, যাবে না, যাবে না।’ – শ্যামলী চোখ পাকিয়ে আমাকে বলল। বউয়ের বারণ। আমি পাজামার ওপর বিনা গেঞ্জিতে হাফ পাঞ্জাবি গলিয়ে সবে দরজা খুলে বেরিয়েছি, জানালা দিয়ে ওই বাঘিনীর গর্জন। আমি উজিতপুরের মাঠের দিকের রাস্তা না ধরে রেল স্টেশনের গ্যাঞ্জামের দিকের সড়কটি ধরলাম। পাখি […]