Tag Archives: গল্পের সময় ব্লগ
-
বাংলা,বাঙালি, নতুন বছর- আজকের প্রজন্মের সম্ভাব্য চিন্তা
বাঙলা নববর্ষ, সেটা মাথায় রেখেই ভাবনার খাত কাটা এখন। দেখা যাচ্ছে বাঙলা বছরের শেষপাতাটাই শুধু ক্যালেণ্ডারে টিঁকে আছে। এবার নতুন ক্যালেণ্ডার আসবে। নস্যাৎ হয়ে গেলো একটু একটু করে গোটা একটা বরষকাল। ইংরেজি মাপেই হোক বা বাঙলা মাপে, বিশেষ একটি সম্বৎসর,-যার বারোটি মাস ‘নেই’ হয়ে গেল যে। পড়ে গেল ১৪৩০ বঙ্গাব্দ। হালখাতা হবে, মিষ্টি খাওয়া, আগেকার […]
-
এসো হে বৈশাখ…
আজকাল ইংরেজি নববর্ষ পালনের ঘটা তো ঘনঘটায় পরিণত হয়েছে। অথচ চৈত্র শেষের দিনটা কবে যাচ্ছে আর বৈশাখের প্রথম দিনটা কবে আসছে সেসব নিরুচ্চারই রয়ে যায়।বাংলা বর্ষবরণ বা বাংলা ভাষা নিয়ে পাগলামির জায়গা গুলো আজকাল নেহাৎই সংকুচিত হয়ে আসছে।সন্ধিক্ষণে দুম দাম বাজি ফাটিয়ে, উদ্দাম ডি জে-র ছন্দে মাতোয়ারা হয়ে বা শ্যাম্পেনের ফোয়ারা স্নাত হয়ে তো বাংলা […]
-
নীল খাতা
সেবার ভাদ্রমাসে জেঠিমা শৈলবালা খুব অসুস্থ হয়ে পড়লেন। বাড়ির সক্কলের তিনি বড়-মা। তাঁকে দেখাশোনা করেন আমাদেরই এক জ্ঞাতি পিসি বিনু। সেবার বিনু পিসিও গেলেন তাঁর সতীন-পোর ছেলের মুখে ভাতে। বাড়িতে সেরকম দেখভাল করার লোক নেই। বড়মা শৈলবালা মানুষটা আবার তেমন সুবিধের নয় বলে কাজের মেয়ে হরিদাসী কাছে ঘেঁষে না। পান থেকে চুনটি খসার জো নেই। […]
-
চলো যাই ভিন দেশে
১ উৎসবের দিন হলে বড়মা থালা সাজিয়ে খেতে দেন। বড় জেঠু আর বাবা একসঙ্গে খেতে বসেন। আজ সংক্রান্তি। আজ আমাদের নিরামিষ আহার। প্রায় সাতটা কাঁসার বাটি; বড় কাঁসার থালার পাশে সাজানো। বড়মা ধীর স্থির শান্ত স্বভাবের মানুষ। দেশ যে আজ উত্তপ্ত তার কোন ছাপ বড়মার মুখের কোথাও নেই। এই মাধবদীতে তিনি সবার বড়মা। সে কী […]
-
আউল গোঁসাই এর সমাধি
সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছি। দ্বারিকবাবুর সঙ্গে কথা হয়েছে সাতটা থেকে সাড়ে সাতটার মধ্যে বিজুরি গ্রামের সামনে রাস্তায় দাঁড়াবেন। সাঁইথিয়া হয়ে পৌঁছতে এক ঘন্টার সামান্য বেশি সময় লাগে। কিন্তু আমি ঠিক করেছি পাকা সড়ক না ধরে সাংড়া আর হাতোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রামগুলোর মধ্য দিয়ে গিয়ে সিউড়ি সাঁইথিয়া সড়কে উঠব। সপ্তাহখানেক আগে ঈশ্বরপুর-হাতোড়া রাস্তা মোরাম বোল্ডার দিয়ে […]
-
ওই লোকটার কী হবে ?
পালসিটে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে শেষ হওয়ার পর শক্তিগড়ে ল্যাংচা বিরতি । তখন বাসযাত্রী ও চালক কন্ডাক্টারের দশ-পনেরো মিনিটের দ্রুত অবসরযাপন । ল্যাংচা কেনা, খাওয়া এবং প্যাকেটবন্দি করে ব্যাগে ভরার বাইরেও চা-কচুরি-মুড়িমশলা-শশা-ডাব-জিলিপি । পাশাপাশি, পুরুষযাত্রীদের বেআবরু হাইওয়ের দুপাশে বেপরোয়া জলবিয়োগ । মহিলাদের কথা ভেবে দোকান সংলগ্ন ছোট ছোট টিনঘেরা টয়লেট । সেখানে শাড়ির পেছনে চুড়িদার, তার পেছনে […]
-
গ্রাম ছুঁয়ে গ্রামের গল্প
আমরা বসেছি বলরাম মণ্ডলের দাওয়াতে। মণ্ডল মশাই বড় গৃহস্থ। সিলিং-সারপ্লাস জমি যাওয়ার পরেও হাতে যা আছে, তা চাষ করতে বেশ কিছু মুনিশ মাহিন্দার লাগে। মাথা ছাড়ানো চওড়া দেয়ালের একদিকে নিচু দরজা দিয়ে মাথা নামিয়ে ঢুকতে হয় তাঁর বাড়িতে। এক কোণে বেশ বড় গোয়াল। দুটো মরাই। আমাকে যারা মণ্ডল মশাইয়ের খোঁজ দিয়েছেন, বাড়ি পর্যন্ত সঙ্গে এসেছেন […]
-
মা, সেজোমামা আর আমাদের রেডিওটা
গনেশ চ্যাটার্জির মেয়ে বোধহয় এবার হেরেই যাচ্ছে। ছমাস ধরে। রোজ একটু করে। আরেকটু করে। মা এখন হাঁটতে গেলে পড়ে যায়। দোতলার বারান্দার জানালা দিয়ে রামুকে আর বকেনা – বাগানের কাজে ফাঁকি দিলেও। কল্পনাকে ব্যাগের থেকে টাকা বের করে বাজার করতে দেয়না আর। সে ব্যাগটাই হারিয়ে গেছে কবে। চেনা মুখগুলো হারিয়ে যাচ্ছে স্মৃতি থেকে। সুখ দুঃখের কত স্মৃতির অনুক্রম বদলে যাচ্ছে। প্রতিদিন। মাকে আজকাল বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়নি কতদিন । আমার ভাইপো সমীর ডাক্তার ছিলো। অনেক ভালো ভালো […]
-
মহালয়া মানেই মন কেমন
আমাদের মহালয়াতে রেডিও ছিল। কাশফুল ছিল, খড়ে নদীর ধারে বেড়ানো ছিল। ভোরবেলা তখন শিশির পড়তো, হিম হিম ঠাণ্ডা লাগতো। বীরেন ভদ্র তখন বছরে একবারই শোনা যেত, যখন তখন ক্যাসেট চালানোর রেওয়াজ ছিল না। একেবারে তিথি মেনে দেবীপক্ষের সূচনাতেই তাঁর জাগো জাগো মা শুনে আমাদের মন কেমন করে উঠত। দেখতুম বাবা মায়ের মুখে হাসি, চোখে জল। […]
-
জনান্তিকে ভিন্নতর আলাপ ।। গল্পের সময় ব্লগ
‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন’ – কবির এহেন অনুভবের সঙ্গে একমত নন এমন লেখক সম্ভবত নেই। কাহিনী বা কিস্সার খোঁজে কোথায় না কোথায় যেতে হয় তাঁকে। দেশভাগ হোক বা মুক্তিযুদ্ধ, দাঙ্গা হোক বা নদী ভাঙন – গল্পের পটভূমি হতে পারে সবই। সময়ের সঙ্গেই লেখার প্রয়োজনে নিষিদ্ধপল্লী থেকে নির্জন সমুদ্র […]
-
খন্ডস্মৃতির আলো-অন্ধকার
স্মৃতি আসলে ঠিক কী ? কেমন তার চেনা অবয়ব ? কীভাবেই বা দূর অতীত থেকে সে পৌঁছে যায় এই আজকের একটা সকালে বা সন্ধ্যেয় ? কোন পথ দিয়ে সে আসে ? আর কোন পথে কেমনভাবেই তা হারিয়ে যায় ? শুনতে পাই স্মৃতিহারা মানুষের কাছে ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসে কাছের স্মৃতি অথচ জীবনের দূরপ্রান্তে কোনো তুচ্ছ […]
-
মাটি দেশের টানে
বিরাজুল মানুষ হয়েছে তার চেনা জগতে। ভোরের আজানের সঙ্গে সঙ্গেই আম্মির মুখ দেখে শুরু হতো তার দিন। সারাদিন স্কুলে কাটতো ছেলেবেলার জগত। মনে পরে স্কুল থেকে এসেই ব্যাট হাতে বেরিয়ে পরতো ক্ষেত্রপালতলার মাঠে। জাহাঙ্গীর,মতিউল্লাহ,সিরাজ,ইজাজুর,সামিম, সুদীপ্ত,বাবু,ভম্বল,বিশ্বরূপ,মিলু,অধির সব বন্ধুরা জড়ো হতো ক্রিকেট খেলবে বলে। খেলার শেষে বসে গল্প করতো। প্যান্ট না পরে লুঙ্গি পরে মাঠে এলে তার […]
-
তৃতীয় বৃত্তে অপরাজিতা
(এটা তো গল্পই নয় । সেই অর্থে আমার লেখাও নয় । ইতিহাসের লেখা । যারা নিয়মিত অসাধারণ খবরের খোঁজ রাখেন তাঁদের মনেও পড়তে পারে । আগে যাঁরা এ নিয়ে লিখেছেন এই সুযোগে তাঁদের স্বীকৃতিও জানাই ।) ২০২০ আমাদের সামাজিক দূরত্ব শেখালো – এ কথাটা একদমই সত্যি নয়। সামাজিক দূরত্বের বীজ আমাদের রক্তে । আমরা মানে তুমি, আমি, ওই সিংহটা, হরিণ, পায়রা, টিয়া আর বিষাক্ত সাপটাও – অর্থাৎ সব প্রাণীই । আমাদের ঘিরে থাকে তিনটি বৃত্ত । বাইরের […]
-
অংশহর(পর্ব ২)
“খাঁটি ও নির্ভেজাল ভূতের দেখা পেতে হলে আপনাকে ওয়েস্ট এন্ড পার্ক আসতেই হবে…” সোহা আলি খান অথবা মুরাকামি কে একথা বলেছিলেন, ঠিক খেয়াল নেই কিন্তু কথাটা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। আমাদের মাদারপাড়ায় যদি আপনি আসেন ঘুরতে ফিরতে আপনার ভূতের সাথে ঠোক্কর লাগবে। যাকে বলে ভূতে ভূতে ধুল পরিমাণ। রাত্রি নামলেই আমাদের পাঁচিলে সাদা থান পরা এক […]
-
ঐক্য-বাক্য-নাট্য
প্ল্যাটফরম যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে কিছুটা এগোলেই লেভেল ক্রশিং। লেভেল ক্রশিং পেরিয়ে একটা ধূলো ভরা ঢালু রাস্তা এঁকে বেঁকে এগিয়ে বাজার চত্বর পেরিয়ে কিছুটা উঠে যেখানে বড়ো রাস্তায় পৌঁছোল ঠিক সেখানেই একটু জিরিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের এই চায়ের দোকান। মণিদার চায়ের দোকান নামে এর পরিচয়। মণিদা নেই। তাঁর ছবি আছে দোকানে। দোকান চালায় মণিদার […]