Tag Archives: গল্প


  1. দেওয়াল লিখন অথবা অন্য বসন্ত

    যা কিছু ঘটছে, ঘটে চলেছে তা যেন মণি বসাকের বিধবা বউয়ের মতোই সন্দেহজনক। আজকাল সব কিছুই কি সন্দেহের আশ্রয়েই বেড়ে উঠছে। প্রশ্নটা তারাপদকে করতে গিয়ে নিজের জড়তা টের পাচ্ছিল চৈতন্য। এই যে দিব্যি গেল ডিসেম্বরে একটা হাফসার্টে কাটিয়ে দিয়েছে সে – তা কি সন্দেহের বিষয় নয়? কী মাস এটা? মার্চ। ভোরে অনেককেই সে দেখেছে জ্যাকেট […]

  2. জীবন নদীর ওপারে

    মধ্য সপ্তকের কোমল নিশাদের মতন ঢেউ খাচ্ছিল সায়ন নদীর জল। তার ওপর ফুরিয়ে আসা দিনের আলো। ঘনিয়ে ওঠা রাতের ছায়া। কয়েকটা জেলে মানুষ নিজেদের ভাঙা নাও মেরামত করতে ব্যস্ত কেবল। আরসব ঘাট খালি করে ফিরে গেছে অনেকক্ষণ হল। অনসূয়া বসে আছে একা। তার যাবার তাড়া নেই। যায়গা আছে কী না কে জানে! সে বসে আছে […]

  3. খোয়াই

    তুমি অঞ্জলি ভরে আমাকে দিয়েছ ক্ষয় আমি গ্রহন করেছি ক্ষয়েছি একটু একটু করে… দেখো শিলাবতী নদীতীরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে রাঙা ফুল হয়ে ফুটে আছি… শিলাবতী নদী। সেদিন সুশান্ত অত করে না বললে হয়তো পরিচয় হোত না নদীটির সঙ্গে । আমার তখন পূর্ণ যৌবন, চোখে সানগ্লাস। যা দেখি তাতেই ভালোলাগার রঙ। মেদিনীপুরের গড়বেতায় আমাদের প্রতি শনিবার বসতো চক্ষুশিবির । আমি বাঁকুড়া মেডিকেল থেকে আসতাম। দুপুর থেকে […]

  4. এক বাঘের মাসি

    গাড়ি থেকে নামতেই হাড়কাঁপানো শীতটা গালে চড় কষিয়ে দিল। সোয়েটারের ওপরে উইনচিটারের চেন টেনে দুই হাত ঘষতে থাকলো সুনীল। সবার শেষে গাড়ি থেকে নেমে আঁতকে ওঠে। মাফলার টাইট করে বলল, ‘’কিরে মনোজ, তুই যে কাল বললি গরুমারায় ঠাণ্ডা বেশ কম। এই তার নমুনা ? আমার তো মনে হচ্ছে এক্ষুনি বরফ পরবে। এর চেয়ে সান্তালেখোলার শীত […]

  5. গোরা গোয়েন্দা

    আমার বাল্যবন্ধু গোরক্ষনাথ সেন ওরফে গোরার সাথে আপনাদের পরিচয় ঘটে নি। সে ডিটেকটিভ হতে চায়। ঘরময় বাংলা-ইংরেজী গোয়েন্দা গল্পের বই। সারাদিন সে ওসব নিয়েই চর্চা করে। সংসারে তার খাওয়া-পরার দুশ্চিন্তা করতে হয় না। বছর দুয়েক হল, চাকরীর পরীক্ষা দেওয়ার নাম করে সে একটা ঘর ভাড়া নিয়েছে বাড়ি থেকে সামান্য দূরে। সেখানে একা-ই থাকে। বাড়িতে বলেছে […]

  6. কারচুপি

    রমেনবাবু নিজের দামি হাতঘড়িতে সময়টা দেখলেন। ঠিক সন্ধ্যে ছটা। সাড়ে ছটা থেকে পড়ানো শুরু করতে হবে। ঠিক সন্ধ্যে সাড়ে ছটা। দেরি হলে মুশকিল। তবে এখনও কেউ এসে পৌঁছল না কেন? রমেনবাবু ভাবলেন, “যাক গে! দুজন এলে দুজনকে নিয়েই পড়ানো শুরু করে দেব।” না, একটু ভুলই ভেবে ফেলেছিলেন তিনি। পাঁচ মিনিট পর থেকেই একাদশ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা […]

  7. আগে বললেই হতো

    ধিনিকিস্টকে পাড়ার সবাই খুব সমীহ করে চলে । সমীহ মানে ভয়মিশ্রিত সমীহ বললেই বোধহয় ঠিকঠাক হয় । তার অনেক কারণও আছে । একটা টাইট গেঞ্জি আর বারমুডা পরা লোকটা যখন পাড়ার মধ্য দিয়ে দুলকি চালে ডিগডিক আওয়াজ তুলে বুলেট চালিয়ে যায় তখন পাঁচটা লোক দূর থেকে হাঁ করে দেখে । হ্যাঁ , দেখার মতোই বটে […]

  8. যমালয়ের দরবারে

    — চিত্রগুপ্ত, কখন থেকে ডাকছি তোকে। আসতে এত সময় লাগে কেন? যমরাজ হুঙ্কার ছাড়েন। — আজ্ঞে হ্যাঁ মহারাজ এই তো এসে গেছি। আসলে আজ খুব কাজের চাপ, অনেকগুলো বডি এসেছে কি না। সব দেখে শুনে পাঠাতে হচ্ছে। তার ওপর মর্ত্যে এখন করোনায় কত কত লোক প্রাণ হারাচ্ছে। সেইসব মৃত দেহ আনতে অনেক ঝামেলা। পি পি […]

  9. ঝগড়ার পরবর্তী অংশ

    – “যদি বাঁচতে চান তো এখনও ভালোয় ভালোয় সত্যি কথাটা বলে দিন। দেখে তো ভদ্রলোক বলেই মনে হচ্ছে। জেলের ঘানি টানাটা কি খুব সুখকর হবে?”…চোখের কোণ দিয়ে তাকাল ডিউটি অফিসার।দৃষ্টিতে পরিষ্কার অবিশ্বাস ফুটে উঠেছে। – “আমি সত্যিই কিছু জানিনা স্যার।আপনাকে তো বললাম, আমার কিছুই মনে পড়ছে না।” – “পড়বে, পড়বে। এখন শুধু মুখে জিজ্ঞেস করছি […]

  10. আগাম

    সামনে তাকিয়ে নাটুকে দেবু একেবারে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। তার ছেলে এখানে কী করছে! ওই মৃতদেহের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে ও ভাবে কাঁদছে কেন ও! কে মারা গেছে! ও ভাবে কাঁদছে মানে তো যে মারা গেছে, সে ওর অত্যন্ত কাছের কেউ। আর ওর কাছের মানে তো তারও কাছের! কিন্তু কে  উনি! খানিক আগে লেবু চা […]

  11. কেতাবি

    বইপোকারা অজয়দের বাড়িতেই থাকে  বলে পাড়ার লোকেরা বিশ্বাস  করত।সাত শরিকের  বাড়িতে গজিয়ে  ওঠা  পুরোনো  ধাঁচের  পরিবারতন্ত্রে লেখক  না থাকলেও  ঠাকুরদার  আমলের  বৈঠকখানার আলমারির ঠাসা বই যে বাড়ির  সব সদস্যরাই আগ্রাসী  পাঠকের মতন গোগ্রাসে  গিলেছেন এ নিয়ে দুর্গানগরের মতন সুদূর আধা মফঃস্বল শহরের লোকেদের কোন  সন্দেহ ছিল না, আর তাই তারাঐ দত্ত বাড়িকে   ‘বইপোকাদের -বাড়ি ‘ […]

  12. পিংকির স্বপ্ন

    তার বয়স পাঁচ কি ছয়। আর তার নাম পিংকি।  গৃহবন্দী অবস্হায় কাটে তার দিন।  হোম কোয়ারেনটাইনে রয়েছে। দাদু   মারা গেছেন কালরূপী নোভেল করোনাবাইরাস সংক্রমণের করাল গ্রাসে। আজ সারা বিশ্ব ছোট্ট একটা অণুজীবের আক্রমণে থরহরি কম্পমান। সারা বিশ্বজুড়ে এ যাবৎ ছিয়ানব্বই লক্ষেরও বেশি আক্রান্ত। প্রাণ চলে গিয়েছে পাঁচ লক্ষের কাছাকাছি। থামার কোন লক্ষণ নেই। ছোট্ট পিংকির […]

  13. অনিকেত

    ফোনটা আসতই এক দিন।এক দিন না একদিন আসতই ফোনটা।নিশ্চিত জানত ঋভু।আঠাশ বছর ধরে। আমি সুমনা – চিনবে না হয়তো।আমি… বুঝতে পেরেছি।যদিও বুঝতে পারাটা অদ্ভুত।কিম্বা হয়তো খুব স্বাভাবিক। নতুবা  ঋভুর এই নিশ্চিত অপেক্ষা কার্যকারণহীন সাট্টার নম্বর ধরার মতো  খেলো হয়ে যেত। সম্পর্ক আছে কিছু ? থাকলেও অত্যন্ত জটিল।কিম্বা হয়তো একদম সোজা সরল।মণিকা স্বামী, ছেলেকে ছেড়ে পালিয়েছিল পার্থজিতের সঙ্গে।কিম্বা পার্থজিত মেয়ে আর বউকে ছেড়ে পালিয়েছিল মণিকার সঙ্গে।পুরোন ঘটনা।বহু যোগ বিয়োগ, ভুল উত্তর , না মেলা ভাগশেষ…. সুমনার এই ফোনটাও উত্তরমালায় ছিলনা।তথাপি সুমনা ফোন করেছিল। যখন আঠাশ বছর পার।আঠাশ বছর পার তবু  ঋভু জানতো এই অনিবার্য ফোনের কথা। কোন প্রস্তুতি নেয়নি যদিও।উত্তর প্রতি -উত্তরের কোন ক্রম তৈরি করেনি সে মনে মনে কদাপি। কিছু ঘটনা, কোন স্মৃতি, কোন অপেক্ষা সতত সজীব থেকে যায়। আজীবন। আর এখন তো মাত্রই আঠাশ বছর। – আঠাশ বছর আগে তোমার বয়স কত ছিল?  সুমনার প্রশ্ন কি প্রস্তুতিবিহীন? জানেনা ঋভু।এই প্রথম আটকে রাখা স্রোতমুখ খুলে যায়। এতটুকু সতর্ক হবার সময় পায়না – শনিবার ছিল ছ’ বছরের জন্মদিন। স্কুলের বন্ধুরা এসেছিল। ওদের মা বাবা,পাড়ার বন্ধু, পিসিমণি, জেঠুমণিরা… ।সোমবার সকালে চলে গিয়েছিল।অফিস ট্যুর বলে বেরিয়ে গিয়েছিল। আমাকে আর বাবাকে। ফেরেনি আর। কোথায় গিয়েছিল তুমি জান। – তোমার ক্ষেত্রে সাডন শক ছিল।আমরা জানতাম।আমি আর মা।জানতাম বাবা থাকবেনা আর আমাদের সঙ্গে। কলকাতা যেত।ঠাম্মির বাড়ি যাবার কথা বলে।অথচ ঠাম্মি ফোন করে বাবাকে চাইত।আমি মাকে বলতে পারতাম না সেকথা।মা’ও হয়তো অনেক কিছু লুকিয়ে রাখতে চাইত আমার থেকে।মণিকা নামটা হাওয়ায়  ভাসত। চলতে ফিরতে ধাক্কা খেতাম আমরা। আমি আর মা। ছোট্ট ওয়ান রুম ফ্ল্যাট।পার্টিশন করে কোনক্রমে দুটো খুপরি।  কিছু আড়াল করার উপায় ছিল না। মণিকা, মণিকা , মণিকা – একটা বেলুনের মতো ফুলে উঠছিল ক্রমশ।ঘরের মাঝখানটা জুড়ে ফুলে উঠছিল।আমাদের- আমাকে আর মা’কে  ঠেলে দিচ্ছিল।দেওয়ালের সঙ্গে পিষে চেপ্টে দিচ্ছিল।বাবা ঢুকে পড়েছিল বেলুনটার ভেতর। পুরোটা ঢুকতেই ফেটে  গেল। বম্ব ব্লাস্ট। আমাদের নাকে মুখে বিষাক্ত গ্যাস ।দম আটকে মরে গিয়েছিলাম যেন।স্প্লিন্টারে ছিন্নভিন্ন হয়ে ছিটকে পড়েছিলাম।অথচ এরকম , ঠিক এরকমই ঘটবে আমি জানতাম ।ভোরে কতবার দেখেছি এই স্বপ্নটা। ঘুম ভেঙে ভেবেছি আজই হয়তো। স্কুল থেকে ফিরে ভাবতাম আজই হয়তো।টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম আমরা । মা আর আমি। পার্থজিত মিত্র’র স্ত্রী আর মেয়ে। – বাবাকে ঢিল মারতো পাড়ার ছেলেরা। অফিস যাবার পথে।ফেরার পথে গলির মোড়ের জটলা থেকে বেড়ালের ডাক, গাধার ডাক। সব চুল উঠে গেল বাবার, জানো?  দু তিন মাসের মধ্যে পুরো টাক ।টাকলু বাবু  টাকলু বাবু করতো।ছড়া কাটতো… টাকলু গেল মাছ ধরতে কোন সে নদীর কূলে, চুল নিয়ে গেল কোলাব্যাং আর বউ নিয়ে গেল কে রে? স্কুলের বন্ধুর মা’রা আমার জন্যে আলাদা করে টিফিন পাঠাতো। সেই সঙ্গে আবার সাবধানও  করে দিত – ঋভুর সঙ্গে বেশি কথা বলার দরকার নেই। কোন ম্যাম আমাকে বকতোনা।অন্য ছেলেদের শাস্তি দিত । আমাকে বলতো – ঋভু তুমি  পরের দিন হোম – ওয়ার্কটা সাবমিট করে দিও।সেশনের মাঝপথেই স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলাম। পরের বছর নতুন স্কুল।বাংলা মিডিয়াম।হস্টেল।স্কুলের পর কলেজ।হস্টেল। মা মরা ছেলে। সকলকে বলতে বলতে – সেই ছ বছর থেকে সমানে বলতে বলতে… বাবা অফিস থেকে সাইটে ট্রান্সফার নিয়ে নিল। এই সাইট, ঐ সাইট… দেড় বছর, কোথাও দু বছর। – দেখা হয়নি আর কখনও? – ডিভোর্সের কেস চলছিল যখন, আমাকে যেতে হয়েছিল একবার বাবার সঙ্গে।লাথি দেখিয়েছিলাম কোর্টরুমেই। – মা তোমার কথা বলতো।মানে মণিকার ছেলের কথা। বলতো বাচ্চাটা একা বড় হবে। মা তোমার কথা বললে আমি রেগে উঠতাম। অথচ পরে আমিও ভাবতাম। স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছে বাচ্চা ছেলে একটা। অন্ধকার অন্ধকার বাড়ি। অপছন্দের খাবার । – বাবা দারুণ রান্না করে। আমিও। হস্টেলের ছুটিতে বাবার সাইটে চলে যেতাম।ঐ কদিন কিচেনে বাবা কাউকে ঢুকতেই দিত না। […]

  14. পাকু বুড়ি

    ‘পাকু বুড়হিকে বিশ্বাস লাগে না। উ তুকতাক জানহে!’ ‘তোহকে বলেহেচে!’ ‘তো শিবেনের বাপ যিরাতে মইরলো উ রাইতেই তো কেশবের সাঁড়াটা গলা কাটা পড়হে ছিল বাঁশ ঝাড়হে ——- সি রাতেই তো সবাই ঘুমাই গেলে বুড়হি জোরে জোরে লাগরা গাইছিল।’’ ‘শিবেনের বাপ মরার সাথে, খটাশের সাঁড়া ধরার আর বুড়হির লাগরার কি সাথ আছেহ?’ ‘তুই দেখেহেচিস কে সাঁড়া […]

  15. পলাশের দিন

    একটা কুকুর আর একটা কুকুরকে তাড়া করেছে।  হয়ত বেপাড়ায় ঢুকে পড়েছিল। দুটো কুকুরের তীব্র দৌড় দেখলাম এক ঝলক। তারপরেই হঠাৎ ছিটকে পড়লাম রাস্তার পাশের ঝোঁপজঙ্গলে। ভাগ‍্যিস রাস্তার পাশের জঙ্গল কাটার কথা মিউনিসিপ‍্যলিটি মাঝে মাঝে ভুলে যায়, তাই বেরিয়ে আসতে পারলাম অক্ষত দেহ নিয়ে। হাত পা ঝেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে দেখি, আমার সাইকেল আর একটা স্কুটি জড়াজড়ি […]

  16. বিলম্বিত ফাগুন

    “বলছি  এ বাড়িতে কেউ কি আছে আমার কথা শোনার মত? না কি আমি একেবারেই উপেক্ষিত? এই অনাহূতের দিকে একবার একটু  দেখলে তো উদ্ধার হই”  শিবশঙ্করবাবু রাগ দেখাতে দেখাতে  এ ঘর ও ঘর পায়চারি করছেন । কিন্তু রান্নাঘরের সামনে যেতে পারছেন না।রান্নাঘরে শাশুড়ি বৌমা রান্নায় ব্যস্ত। শিবশঙ্করবাবুর রাগকে পাত্তাই দিচ্ছেন না মীনাক্ষী দেবী।আজ রবিবার। রাজ্যের কাজ।তাছাড়া […]

  17. মুক্তির স্বাদ

    সারা দিন ঘরে আটকে থাকার পরে তিতির বিকেলে তার মা-কে ছাদে নিয়ে যাবার জন্য তিতিবিরক্ত করে তোলে।খাওয়া,ঘুম, অনলাইনে পড়ার বাইরে সামান্য টিভি বা সেলফোন দেখা ছাড়া সারাদিন আর আছে কি?নইলে বসে থাকো খাটে, চেয়ারে,অথবা ছোট ওই বারান্দায়।কাগজ পড়তেও তার ইচ্ছে হয় না।পাঁচ-সাত মিনিটে দেখে মুড়ে রাখে।ঘরে যতই খেলার ইচ্ছে হোক,জায়গা কই !লাফাতে সাধ হলেও এক […]

  18. গোলাম-হিরো

    চেপে পড়ুন দিদিমণি। দেরী করবেন না যেন আর বেশি — আহিরী দোনোমনা করছিল বেশ। মধ্যবয়স্ক, লম্বা, দেহাতি লোকটা তার অচেনা। এই ভর সন্ধ্যেবেলা তার মোটরবাইকে আহিরী কে বাড়ি পৌঁছে দেবার কথা বলছে লোকটা। চকিতে হাতঘড়িটার দিকে একবার তাকায় আহিরী।সাড়ে পাঁচটার কাঁটা ছুঁইছুঁই। নারায়ণপুর স্কুলের পাট চুকে গেছে সেই কবে ! পাশের নদীপাড়ে সূর্য্যি এখন নিবু […]

  19. ছোটবেলার বন্ধু

    ছোটোবেলার বন্ধু-র ব্যাপার-ই আলাদা। সময় বদলালেও তাকে যেন ঠিক চেনা যায়। তার কথাবার্তা, চাল-চলন ইত্যাদি যদি পালটেও যায়, তবু তাকে অন্য পাঁচজনের চেয়ে বেশী নিকটের মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। অনেকটা নিজের ছায়ার মত। দিনের বিভিন্ন সময় রূপগতভাবে পালটে গেলেও শেষ পর্যন্ত কিন্তু সাথে থেকে যায়। নিবারণ চৌধুরি নিজেকে এই ব্যাপারে খুব ভাগ্যবান মনে করেন। নিবারণবাবু […]

  20. ফিলহাল

    শহরের একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাটে দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করা কতক যুবক সহসা লক্ষ্য করলো নিজেদের মধ্যে বেশকিছু পরিবর্তন। তারা আর আগের মতো নেই, কেমন যেন বদলে গেছে। তুমুল হাসি খুশি আর প্রানবন্ত অবস্থা কবে মিইয়ে গেছে সে খবর তারা রাখে নি। আর এখন একসাথে থেকেও তারা যার যার প্রত্যেকে আলাদা। সবাই এক রুমে খায়, এক […]

  21. উলটাবুড়ি

    অফিসের আইডিতে যখন মেলটা ঢুকলো তখন অফিস আওয়ার শেষ। তবে সরকারী কাজের চাপে বিডিও ও তাঁর কয়েকজন অফিসারকে বেশ রাত পর্যন্ত কাজ করতেই হয়। মেলটা জাতীয় উপজাতি কমিশন থেকে পাঠানো। জাতীয় কমিশন যখন গুরুত্ব দিতেই হবে। চিঠিতে জানানো হয়েছে কমিশনের ফুল বেঞ্চ আগামী পরশু জেলা সফরে আসছেন এবং তারা নির্বাচিত কয়েকজন উপজাতি মহিলার সাথে আলোচনায় বসতে চান। চিঠিতে […]

  22. বিজয়া

    ।। ১ ।। পৃথিবীতে কাঙাল অনেকরকম হয় | কিন্তু সবচেয়ে বড় কাঙাল হল সে যে ভালোবাসার কাঙাল | মানতে একটু অসুবিধা হলেও আদতে এরকম হয় যে একজন মানুষ নিঃস্ব হয়েও খুশি অথচ আরেকজন সব পেয়েও আসলে মনের দিক থেকে ভিখারী | সুখ–দুঃখ কে দাঁড়িপাল্লার এক দিকে তুলে অন্যদিকে যদি টাকা পয়সা দিয়ে মাপা হত তাহলে […]

  23. বেনামী

    ১ যন্তর মন্তরের উলটো দিকের ‘দি পার্ক ‘  হোটেলটায় বেশী আসা হয় নি আমার । বোধ হয় বিয়ের রিসেপশনের নেমন্তন্ন রাখতে বার দুয়েক আসতে হয়েছিল । যে কোনো কারণেই হোক বড়ো মাপের টেকনিক্যাল সেমিনার বা কনফারেন্স বিশেষ হয় না এখানে । সেজন্যেই এই স্টার হোটেলে আমার আসার কোনো কারণ ঘটেনি । সত্যপ্রকাশের ফোনটা পাওয়ার পর ইন্টারেস্টিং […]

  24. ইউসুফ মিঞার জমি

    সকাল বেলাই সুরজিতের ডাক পড়ল ডিরেক্টর সাহেবের ঘরে । হেড অফিসের চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বললেন- মিঃ মন্ডল, পানাগড়ে চাকরি জীবন শুরু করেছিলেন, পানাগড় নিয়ে লড়াইও করলেন অনেক, এবার গিয়ে প্রজেক্ট গুটিয়ে ফেলুন তাড়াতাড়ি। ইন্সপেকশন বাংলো রেডি করে রাখতে বলেছি, কিছু স্টাফ এখনও আছে । দুজন স্টোরকিপার থাকছে, তাদের নিয়ে আসেট লিস্ট তৈরি করে তাড়াতাড়ি ডিসপোসাল […]

  25. জন্মান্তর

    শীতের রাত । চারিদিক সুনসান । ফাঁকা প্ল্যাটফর্মের শেষের দিকে যে লম্বা সিমেন্টের বেঞ্চি সেখানেই রোজ শুয়ে পড়ে হারু । প্রতিটি রাতেই কিছুদিন ধরে এটাই তার শোবার জায়গা। বেশ আরামেই ঘুমিয়ে থাকে। খোলা জায়গায় জোর হাওয়ায় মশার অত্যাচার নেই। তাছাড়া ভবঘুরে হারুর দিনের শেষে ক্লান্তিতে চোখ জড়িয়ে আসে গভীর ঘুমে । পরনে ছিন্ন জামাকাপড় , […]

  26. জুজু

    (১) আত্মহত্যার প্রথম প্রচেষ্টা সকাল থেকে এক নাগারে বৃষ্টিটা পড়েই যাচ্ছে । নার্সিং হোম থেকে একটু দূরেই চায়ের দোকান । একটা  চা মেরে আসবো – সে উপায়ও নেই । রিনি অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার সময় বলেছিল ছাতাটা নিতে – বউ’এর কথা বাসি হলে মিঠে হয় । আমার জীবনে বারবার এটা প্রমাণ হয়েছে । সমু’র বউ’এর অ্যাসিড খাবার […]

  27. যাদুপেন্সিল ও সেই লোকটা

    “ওফফফফ!!…বাব্বাঃ!!…বাঁচা গেল।”  লোকটা তো বড্ড তড়বড়ে! পরনে ছোট ঝুলের পাঞ্জাবি আর জিন্স।চোখে চড়া পাওয়ারের চশমা। লোকটাকে কার মত যেন ঠিক একটা দেখতে। কিছুতেই মনে করতে পারল না বাবাই। ব্যস্ত-সমস্ত হয়ে সরু প্যাসেজটা দিয়ে এদিকে আসতে আসতে, ভারী ব্যাগটার কানায় দুজনকে জোরদার ধাক্কা লাগিয়ে, খুব বিনয়ের সঙ্গে সরি বলতে গিয়ে, আরও দুজনকে ধাক্কা লাগাল! তারপর কাঁচুমাচু […]

  28. কুয়াশা

    -“হ্যালো বল,” ফোনের অপরপ্রান্তে বাবার গলা পেয়ে একটু অবাকই হল নির্ঝর। ও তো ফোন করেছিল জেঠতুতো দিদি শীলাকে! যদিও ওরা একদম পিঠোপিঠি, শীলাকে তাই দিদি ভাবতেই পারেনা নির্ঝর। ছোটবেলা থেকে বন্ধুর মতই বেড়ে উঠেছে ওরা। -“কেমন আছো বাবা?” নিজেকে সামলে নিয়ে কুশল জিজ্ঞাসাবাদে নির্ঝর। -“ভালো তো থাকতেই হবে। সামনে এত বড় একটা কাজ! সব আমাকেই […]

  29. পুণ্যপাত্র

    গোয়ালা বাড়ির গোবরগুলো গাদাদরে কিনে নেয় সরলার মা। বর্ষা বিদায় নিলে ওগুলোর সাথে তুষকুঁড়ো মিশিয়ে মুঠো পাকিয়ে চণ্ডীমণ্ডপের পেছনের দেওয়ালে ঘুঁটে দেয়। এরপর শুকিয়ে বস্তা ভরে বাজারের ছোটছোট চায়ের দোকানগুলোতে বিক্রি করে। জগৎ ঘোষের বড় মেয়ে ঐশী। ঐশী উচ্চ শিক্ষিত। বড় মানুষের মন বলতে যা বোঝায়, তার থেকে অনেকটা আলাদা ঐশী। আজ অনেকগুলো সরা পড়েছে […]

  30. পলেস্তরার আড়ালে

    ॥১॥ সুধাংশুর বাড়িতে জোর আড্ডা। সুধাংশুশেখর রায় আজ পা রাখছেন ৬২ বছর বয়সে। জগদীশ সেন বললেন, “সুধাংশু, তোমার চেহারায় বেশ একটা গ্লেস এসেছে।”  জগদীশ সেন সুধাংশুর প্রতিবেশী। আজ ১২ বছর তারা পাশাপাশি বাড়িতে দিন কাটাচ্ছেন। এরমধ্যে একবারটিও তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়নি। এর কৃতিত্ব অবশ্য  জগদীশবাবুরই। জগদীশবাবু ঝুটঝামেলাহীন, নির্বিরোধী, নিরীহ মানুষ না হলে কোনদিন হয়তো দুজনে […]

যোগাযোগ


email:galpersamay@gmail.com

Your message has been sent. Thank you!

গল্পের সময় পরিবার
সমীর
অগ্নীশ্বর
দেবাশিস
চিন্ময়
পার্থ
মিতালি
জাগরণ
দেবব্রত

© 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ