গল্প পড়ুন

এই মুহুর্তে বাংলা ভাষায় লেখালিখি করেছেন এমন গল্পকারের সংখ্যা কত? সত্যি বলতে কী ‘গল্পের সময়’ তা জানে না। কয়েকজন ব্যাক্তি ও কয়েকটি সংস্থা উদ্যোগ নিয়ে দুই বাংলায় লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের নথিভুক্তকরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু তা কোনও ভাবেই সম্পূর্ন নয় বা হওয়া সম্ভব নয়। কারন প্রতিনিয়তই লেখালিখির জগতে আসছেন বহু মানুষ। ইন্টারনেটে বাংলা গল্পের ম্যাগাজিন করতে গিয়ে আমরা লক্ষ্য করেছি অনেক লেখকই এখনও কম্পিউটার এড়িয়ে চলেন। কাগজ-কলমেই তাঁরা স্বচ্ছন্দ। চিরাচরিত ছাপা ম্যাগাজিন, লিটল ম্যাগ, শারদসংখ্যা বা সংবাদপত্রের সাময়িকীতেই তাঁরা লেখালিখি করেন। অন্যদিকে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটে স্বচ্ছন্দ একদল লেখককুল রয়েছেন। তারা ফেসবুকে পোস্ট করছেন, ব্লগ বানাচ্ছেন, ই-ম্যাগাজিনেও লিখছেন। ‘গল্পের সময়’ এই দুই পক্ষকেই চায়। নবীন ও প্রবীন গল্পকারদের গল্প পড়ুন এই পাতায়।


  • হজম শক্তি

    বৃটিশ আমলে যখন গঙ্গার ধারের শহরতলিতে চটকল ও অন্যান্য কলকারখানা গড়ে উঠলো তখন বাঙালি শ্রমিক হতে রাজি হয়নি। মধ্যবিত্ত শ্রেণি একচেটিয়া ভাবে অফিসে বাবু শ্রেণির কাজ করেছে। কিন্তু নিম্নবর্গের মানুষজন কারখানায় কাজ করতে আসেনি। এই সমস্ত কাজ একচেটিয়া ভাবে বিহার থেকে আসা মানুষের দখলে চলে যায়। এদের সঙ্গে আসে বিহারের দলিত শ্রেণির মানুষ। সাফাইওয়ালার কাজে […]


  • নষ্ট মেয়ের গল্প

    “ হ্যাঁ রে হিয়া , তোর শরীর ঠিক আছে তো ?” লতা জানতে চায় । “ হ্যাঁ । কিন্তু হঠাৎ তুমি জানতে চাইছ কেন !” হিয়া অবাক হয়ে বলে । “ না, এ মাসে তো ঘরের পেছনের দড়িতে কিছু দেখলাম না ! তাই বললাম আর কি ।“ এমনিতেই তো সারাটা দিন মেয়েটার সাথে কথা হয় […]


  • ভাইরাস

    একটানা প্রায় ঘন্টা দুয়েক বকবক লোকাল চালানোর পর থামল জনি । একটা মাঝারি অক্সি-ক্যান থেকে এক ফুসফুস অক্সিজেন ইনটেক করল,  এই কোম্পানির অক্সিজেনটা অনেক ফ্রেস।   ঠিক যেন হাজার বছর আগের ভোরবেলার অক্সিজেন । এই ব্র্যান্ডটাই ব্যবহার করে  জনি । তাই এই সতেরতেও বেশ ইয়াংই আছে জনি। জনি রয়।  বিখ্যাত রয় অ্যান্ড  রয় কোম্পানির মালিক মিস্টার […]


  • মেয়েলি সাজ

    -হ্যালো, ডাক্তারবাবু বলছেন? – হাঁ, বলছি। – একবার আমাদের বাড়িতে আসতে হবে এখুনি। -কেন কি হয়েছে? -আমার  বৌমা হঠাৎ খুব অসুস্হ হয়ে পড়েছে। হাত-পা ছেড়ে দিয়েছে। খুব ঘামছে আর বলছে বুকের ভেতরটা কেমন করছে। কেউ যেন চেপে ধরেছে। আপনি ডাক্তারবাবু প্লিজ একবার আসুন এখুনি। – দেখুন চেম্বারে কয়েকজন রোগী আছেন এখনও। ওদেরকে দেখে আসছি। – […]


  • স্বেচ্ছা নির্বাসন

    ফেসবুকের সার্চ লেখা জায়গাটায় গিয়ে দময়ন্তি টাইপ করে “অর্কপ্রভ ব্যানার্জি”। প্রায় ছয় বছর পর দময়ন্তির মনে পড়ে তারও একটা ফেসবুক আ্যকাউন্ট ছিল। অর্কই খুলে দিয়েছিল এই মুখপত্রিকা। এতগুলো বছরে সাইক্রিয়াটিস্ট দময়ন্তি বসুর একবারও মনে আসেনি ফেসবুকের কথা। সময়, ইচ্ছে কোনোটাই নেই তার। সারাদিন কেটে যায় কতরকম গল্প শুনতে। সকাল থেকে হরেকরকম চরিত্র।তাদের বিভিন্ন মানসিক স্টেটাস আপডেট করারএকমাত্র নির্ভরযোগ্য স্থান দময়ন্তির চেম্বার। তাই দময়ন্তির […]


  • দলিত

    (১) সবাই বলে পটাই। এমনকি মেয়েরাও, নির্দ্বিধায়। পটাই আসলে কিন্তু কমরেড। পটাই-এর কেউ নেই। কিন্তু পার্টি আছে। কমরেড কথাটা শুনলে পটাইয়ের খুব হাসি পায়, শালা লাল পার্টির অফিস, চারদিক লালে লাল আর শালা বলে কিনা কমরেড! স্ট্রাইকারে খেলত পটাই। ফুটবলের স্পিরিটটা মন থেকে যায়নি। তাই এই মরা বাজারেও পার্টি অফিসটা আগলে পড়ে আছে। আড়ালে ওর […]


  • স্বপ্নের বাড়ি

    তাড়াতাড়ি করে হাতের কাজ সারছিল রুমি। যদি একটু সময় বাঁচিয়ে আজ আগে আগে তিন্নিকে স্কুল থেকে আনতে যেতে পারে তাহলে স্কুলে পৌঁছানোর আগে একবার মায়ের কাছে ঢুঁ মেরে যাবে। কদিন যাবৎ মায়ের শরীরটা একদম ভালো যাচ্ছে না। এমনিতে মায়ের প্রেসার হাই। ইদানিং চিন্তা করে করে আবার সুগারটাও বাড়িয়ে ফেলেছে। তাছাড়া হাঁটুর ব্যথা, বাত, অম্বল এসবতো […]


  • লাল ব্রিজ

    ‘এ ভাই, তোর কাছে কোনো জম্পেশ স্টোরি আছে? … বা হেব্বি কোনো স্টোরি টেলার?’ সে’বার জানুয়ারি মাসের এক শনিবারের মেঘমেদুর দুপুরবেলায় ফোন করে আমাকে এই প্রশ্নটাই করেছিল সমর। সমর আমার ছেলেবেলার বন্ধু, সেই সময় সে একটা স্বল্পনামী খবরের কাগজের অফিসে ইন্টার্নশিপ করছিল। ওর খুব ইচ্ছে ছিল যাতে ওই অফিসেই ওর চাকরি জুটে যায়। কিন্তু ক্ষীণ […]


  • চিত্রাঙ্গদা অ্যাট দি রেট অফ

    অনেকদিন হয়ে গেল হ্যাপেনিং কোন সম্পর্কে নেই পার্থ। নতুন কম্পানিতে যোগ দেওয়ার সাথে সাথে তাকে কয়েক বছরের জন্য কানাডা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে বিপুল কাজের ভার সামলে আলাদা করে আর কাউকে ডেট করার মতন সময় কুলিয়ে ওঠা যায়নি। দু একটা ডিস্কের রাতপরী এক রাতের শ্রান্তি হরনকারী হয়ে এলেও তাদের সাথে সম্পর্কে যাওয়ার কথা পার্থ কোনদিন […]


  • অমৃতসর

    স্বাধীনতার আগে জালিয়ানওয়ালাবাগে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। এই হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে হিন্দু এবং মুসলমান দু-ই ছিল। হিন্দু এবং মুসলমান, মুসলমান এবং শিখদের আলাদা আলাদা ভাবে চেনার কোন অসুবিধা হচ্ছিল না। তাদের চেহারা, তাদের মেজাজ, তাদের চাল-চলন এবং ধর্ম পৃথক হওয়া সত্ত্বেও, জালিয়ানওয়ালাবাগে আজ তাদের সবাইকে এক এবং অভিন্ন করে দিয়েছিল। তাদের হৃদয়ে একই উৎসাহ […]


  • গুরমুখ সিং-এর উইল

    প্রথমে টুকটাক চাকু-চালাচালি, তারপর দু-তরফের জোর লড়াইয়ের খবর আসতে লাগল। এই লড়াইয়ে চাকু, কৃপাণ, তলোয়ার এবং বন্দুক বেপরোয়া চলল। কখনও কখনও বা দেশী বোমা ফাটার খবরও আসতে লাগল। অমৃতসরের অধিকাংশ মানুষেরই ধারণা ছিল এই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বেশীদিন স্থায়ী হবে না। আপাতত উৎসাহ উদ্দীপনা আছে, এই উৎসাহ উদ্দীপনা মিইয়ে গেলেই অবস্থা আপসে-আপ ঠিক হয়ে যাবে। এর […]


  • অমরত্ব

    অধিকাংশ মানুষের মধ্যেই একটি ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়, যাকে কোনও নীতিশাস্ত্রীয় বাক্যের দ্বারা প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এই আগ্রহ যতক্ষণ না পরিতৃপ্ত হচ্ছে ততক্ষণ এই জাতীয় মানুষের শরীর মনকে উদ্দীপ্ত, উত্তেজিত, চনমনে করে রাখে। এই অতি আগ্রহের নাম দেওয়া যেতে পারে — অমরত্বের বাসনা। অমরত্বের বাসনা কিন্তু সাধারণ মানুষদের মধ্যে কম। কিন্তু যাঁদের […]


  • সুইমিং পুল

    কর্পোরেশন দপ্তরে এ নিয়ে যত চিঠি পাঠানো হয়েছে, তার ফাইল এত মোটা হয়ে গেছে যে সেটা তুলতে পারা একজন মানুষের কম্ম নয়। ভি.আই.পি.কে বাড়িতে ডাকার আগেই মনে ভয় ছিল, মিসেস ওঁর সামনে নালার সমস্যা তুলে ধরতে পারে। কারণ আমি ওর মানসিক অবস্থা জানি। সেই জন্যই বুঝিয়েছিলাম, “দেখ, নালা-টালা তুচ্ছ জিনিস। ওটা ভি.আই.পির বাঁহাতের ও না,চোখের […]


  • কাক না কাউয়া

    “ কাউয়া আবার পক্ষী হইল কবে ?” “ ক্যান , কাউয়া পক্ষী না !” “ না । কাউয়া তো কাউয়াই ।“ “ ক্যান , শুনস নাই মাইনষেরা অগো পোলাদের কয় ,ঐ দেখ চড়ুই পাখি ,ঐ দেখ শালিক পাখি,কিন্তু কাউরে শুনছস কাক পাখি বা কাউয়া পাখি কইতে । তাই কাউয়ারে কাউয়াই কয় । “ “ কিন্তু […]


  • পড়ুন গল্পের সময়ের গল্প

    এই মুহুর্তে বাংলা ভাষায় লেখালিখি করেছেন এমন গল্পকারের সংখ্যা কত? সত্যি বলতে কী ‘গল্পের সময়’ তা জানে না। কয়েকজন ব্যাক্তি ও কয়েকটি সংস্থা উদ্যোগ নিয়ে দুই বাংলায় লেখক-কবি-সাহিত্যিকদের নথিভুক্তকরনের উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু তা কোনও ভাবেই সম্পূর্ন নয় বা হওয়া সম্ভব নয়। কারন প্রতিনিয়তই লেখালিখির জগতে আসছেন বহু মানুষ। ইন্টারনেটে বাংলা গল্পের ম্যাগাজিন করতে গিয়ে আমরা […]


  • দুই পুরুষ

    প্রথম পুরুষ  -‘শোন, রাজীবের  কাছে কাল যেটা শুনলাম সেটা কি সত্যি ? তোর সঙ্গে নাকি অহনার  ব্রেক-আপ হয়ে গিয়েছে ?’ -‘ব্রেক-আপ ! ওঃ…আজকাল তো এই কথাটাই চালু হয়েছে ।’ – ‘কথা একদম ঘোরাস না সুশান্ত । আমার প্রশ্নটার জবাব দে । তোদের দুজনের মধ্যে কি হয়েছে আমাকে পরিস্কার বল তো ? তোর সঙ্গে অহনার কবে দেখা হয়েছে শেষ ? ফোনে কথা হচ্ছে না ?’ – […]


  • স্নানযাত্রা

    দুম দুম করে পিঠে গোটা কতক কিল বসিয়ে দিল বিধু । তার সঙ্গে তারস্বরে চিৎকার – বার্লি জোটে না দুধ খেতে এসেছে । বেরো বলছি, বেরো, চোখের সামনে থেকে দুর হয়ে যা । দম আটকে যাওয়া কান্নাটা এবার তীক্ষ্ন স্বরে বেরিয়ে এলো ।  আবার মারবে বলে তেড়ে যেতেই দেড় বছরের বড় দিদি মতি দৌড়ে এসে […]


  • ইনবক্স

    রাত আড়াইটা নাগাদ মোবাইলের স্ক্রিন জ্বলে উঠলো। পাশ ফিরে হাতে নেয়ার চেষ্টা করলাম। অচেনা নম্বর থেকে ম্যাসেজ, এতো রাতে। পড়ার জন্য বারান্দায় চলে যাওয়া দরকার। পাশেই মুন্নী ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে। এয়ারকন্ডিশন চলছে ঘরটায়। তবু ঘেমে নেয়ে আছে মুন্নী। ও ভীষণ ক্লান্ত। মুন্নী আমার স্ত্রী। আমাদের বিবাহিত জীবনের প্রায় ছ’বছর আমরা পার করে ফেলেছি। ওর […]


  • এক-ফালি চাঁদ

    বাইরের অন্ধকার বারান্দায় রেলিংয়ে কপোল ঠেকিয়ে নির্বাক, নিশ্চুপ পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনন্যা। তার বাষ্প ভরা চোখের কোন থেকে গাল বেয়ে নামছে জমাট বাঁধা কষ্টের ফল্গু ধারা। বারান্দার এদিকটায় রাত্রির এক টুকরো কালো আকাশটাকে খুব ভালো করে দেখা যায়, আর দেখা যায় কাস্তের মতো টানানো এক-ফালি চাঁদ। নীচের ড্রয়িং রুম থেকে বাংলা সিরিয়ালের বিরতির মাঝে […]


  • ধনকুদরা

    জমির উপর উবু হয়ে বসে এক মনে ধান গাছের চারার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করছিল বুধু সোরেন। পাতার দু’ধারে বেশ ধার । একটু অসতর্ক হলেই হাত কেটে যেতে পারে ! পাতাটা হঠাৎ ভারী হয়ে যাওয়ায় বুধু বুঝতে পারে ,সে এসে গেছে ! বুধু আলতো করে পাতাটা ছেড়ে দিয়ে মৃদু  হাসে । ধান গাছের চারা দুলতে […]


  • মা

    ১ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের হলঘরটার থেকে অনিরুদ্ধ বেরিয়ে আসতেই বিতান আর অচ্যুত প্রায় দৌড়ে গেলো ওর কাছে । দরজার পাশে রাখা  টুলটায় বসে জুতো পরতে পরতে অনিরুদ্ধ যে ইশারা করলো তার অর্থ হয়, এখানে নয় বাইরে গিয়ে সে সব বলছে । আইসিইউয়ের বাইরের এনক্লোজারের কাঁচের দরজাটা ঠেলে বেরিয়ে এসে তিনজনে  হাসপাতালের তিনতলার করিডোর দিয়ে হাঁটতে লাগলো । বিতানের বিহ্বল মুখচোখে রাত্রি জাগার ক্লান্তি আর অজানা […]


  • দেওয়াল লিখন অথবা অন্য বসন্ত

    যা কিছু ঘটছে, ঘটে চলেছে তা যেন মণি বসাকের বিধবা বউয়ের মতোই সন্দেহজনক। আজকাল সব কিছুই কি সন্দেহের আশ্রয়েই বেড়ে উঠছে। প্রশ্নটা তারাপদকে করতে গিয়ে নিজের জড়তা টের পাচ্ছিল চৈতন্য। এই যে দিব্যি গেল ডিসেম্বরে একটা হাফসার্টে কাটিয়ে দিয়েছে সে – তা কি সন্দেহের বিষয় নয়? কী মাস এটা? মার্চ। ভোরে অনেককেই সে দেখেছে জ্যাকেট […]


  • নন্দন

    পাড়ায় ঢোকার অনেক আগেই নন্দনের মাথা নিচু হয়ে গেল। অথচ এই ক’দিন আগেও পাড়ায় ঢোকার আগে গলির মুখে যে চায়ের দোকানটা  আছে, সেখানে বন্ধুদের সঙ্গে খানিকক্ষণ আড্ডা দিয়ে কয়েক প্রস্থ‌ চা খেয়ে তার পর বাড়ির দিকে পা বাড়াত। কিন্তু এখন! বিয়ে করাটাই ওর ঝকমারি হয়েছে। পাঁচ মাসও হয়নি বিয়ে করেছে, তার মধ্যেই এই! অষ্টমঙ্গলার গিঁট […]


  • জীবন নদীর ওপারে

    মধ্য সপ্তকের কোমল নিশাদের মতন ঢেউ খাচ্ছিল সায়ন নদীর জল। তার ওপর ফুরিয়ে আসা দিনের আলো। ঘনিয়ে ওঠা রাতের ছায়া। কয়েকটা জেলে মানুষ নিজেদের ভাঙা নাও মেরামত করতে ব্যস্ত কেবল। আরসব ঘাট খালি করে ফিরে গেছে অনেকক্ষণ হল। অনসূয়া বসে আছে একা। তার যাবার তাড়া নেই। যায়গা আছে কী না কে জানে! সে বসে আছে […]


  • ফুল ফোটার সময়

    বেশ কিছুদিন হলো টের পাচ্ছি আবহাওয়ার পরিবর্তন। বাতাস দিক পরিবর্তন করতে শুরু করেছে। উত্তরের পরিবর্তে দক্ষিণ থেকে আসছে মনকেমন করা বাতাস। তাহলে কি শীত গিয়ে বসন্তের আগমন ঘটতে শুরু করেছে । হয়তো তাই হবে। শিমুল পলাশের শাখা – প্রশাখায় কুঁড়ি আসতে শুরু করেছে। গাছে গাছে আমের মুকুলে মৌমাছিদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে কোকিলের কুহু […]


  • সহজ টানাপোড়েন

    (১) ডক্টর কেভিন সব রিপোর্টগুলো জড়ো করে বললেন, “সারোগেসি করাতে পারেন কিন্তু এখনই করাবেন কিনা সেটা আপনাদের ওপর।” কলেজের প্রথম দেখায় প্রেম এবং তারপর দুই পরিবারের সম্মতিতে,দশ বছর আগে,বিয়ে হয় অভিরুপ আর শ্রাবস্তীর।বন্ধুরা ঠাট্টা করে বলতো, “একটু ট্র্যাজেডি না থাকলে প্রেমকাহিনী ঠিক জমে না বুঝলি”। কলেজ জীবনের চারবছর অগুন্তি প্রেমের প্রস্তাব পায় ওরা দুজনেই।কিন্তু শ্রাবস্তীর […]


  • মাঘ ফাগুনের গল্প

    (১) আজ তিরিশে। তিরিশে জানুয়ারি।আসছে মাসের  চোদ্দই ভ্যালেন্টাইন ডে। সেই সুবাদেই সাত তারিখের মধ্যে একটা প্রেমের গল্প জমা দিতে হবে। আজই চোখে পড়ল বিজ্ঞপ্তি। এর মধ্যে তিন তারিখ আমাকে দেখতে আসবে। সেটা অবশ্য নতুন কথা নয়। রবিবারের কাগজ দেখে মা পাত্রী চাই এর ছোট বিজ্ঞাপনগুলো দাগিয়ে রাখে প্রথমে। তারপর মোটা আট নম্বর খাতায় ফোন নম্বরগুলো টুকে রাখে। এক একটা নম্বর লিখে মাঝে খানিকটা করে জায়গা ছেড়ে রাখে। শেষে একটার পর একটা নম্বরে ফোন। মা’র উৎসাহে একটু কি ঘাটতি পড়ছে সম্প্রতি? দুটো ফোন নম্বরের মধ্যে রাখা জায়গা কমছে। আগে ছিল একটা পুরোন ডায়রি, এল. আই . সি.’র। শেষ হতে চার নম্বর রুলটানা খাতা। এখন আট নম্বর সাদা খাতা। সাদা পাতায় লেখা অভ্যেস নেই তেমন মা’র। লাইন বেঁকে যায়। পাতার শেষ দিকে পৌঁছে নম্বরের সঙ্গে লেখার মিল থাকেনা। ফোন করে বেইজ্জতিও হয়ে যায়।  তার আগে শুক্রবার থেকে তাগাদা মেরে দাদাকে দিয়ে ফোনে পয়সা ভরায়। মা স্নানে যায় যখন, মঝেমাঝে আমি ছেলেদের ছবিগুলো লুকিয়ে দেখি। এসব লুকোচুরির দরকার ছিলনা আগে। আমি, দাদা, মা সকলে মিলে হুমড়ি খেয়ে ছবি দেখতাম। হাসাহাসি। কেউ টেকো তো কেউ মোটু। বুড়োটে বা অসভ্য টাইপ। এখন আর কাউকেই বাতিল করা হয়না। আর মা ছবি লুকিয়ে রাখে। প্রথমেই সাত পাঁচ ভেবে নিয়ে পরে কান্নাকাটি, মন খারাপ। – আগে কথাবার্তা এগোক খানিক, তারপর ছবি টবি। চুপচাপ মেনে নিই। আর সুযোগমতো টুক করে দেখে নিই। তবে কোন  তাবনাকে ঘেঁষতে দিই না মনের চৌহদ্দিতে। এবার বেশ অনেকদিন পর দেখতে আসা অব্দি এগোল। করোনা, ভাদ্র মাস হ্যানাত্যানা। তবে এসব ভাবের ঘরে চুরি। বয়স বাড়ছে, মুখে তার ছাপ পড়ছে। যতই কায়দা করে ছবি তুলে দিক দাদা পাত্রপক্ষ ভোলেনা। বলেই দেয় মুখের ওপর, আরএকটু স্পষ্ট ছবি পাঠান, অথবা কেউ বলে আরও দুচারটে ছবি, ঘরের বাইরে, ন্যাচারাল ছবি নেই? ছবি পছন্দ হল যদি তখন স্কুল, কলেজ, অনার্স না পাস কোর্স, মাস্টার্স  করেনি ? গান জানা টানা, সেলাইফোঁড়াই,হাতের কাজ, যেমন মা বলে তখনকার সময়ে ছিল, এখন আর তা নিয়ে অত কেউ মাথা ঘামায় না। এর পর চাকরি। চাকরি শুধু করলে হবেনা, যখন খুশি ছাড়ব কিনা। এটাতে মাস্টার স্ট্রোক হাঁকাতে পারে মা। – ওর চাকরি নিয়ে কোন প্রবলেম হবেনা দিদি। ইচ্ছে হলে ঘরে বসেও…..। এই করোনার সময়ে তো পুরো ঘরে কম্পিউটারেই কাজ করে যাচ্ছে। কোন অফিস? – প্রাইভেট কোম্পানি। এর পর প্রসঙ্গান্তরে যাবার জন্যে মা সামান্য তাড়াহুড়োয়। সোজা একটা উপায় শিখিয়ে দিয়েছি আমিই। – পরীক্ষা টরীক্ষা তো দিচ্ছে। বেটার পেলেই … আজকাল আর বুক ধুকপুকটুকুও করেনা। মা আর দাদাটার জন্যেই কষ্ট হয়। জানি মুখে যাই বলুক, প্রত্যেকবার একটা আশায় কেমন অধীর হয়ে থাকে।শুধু ওদের কথা ভেবেই আপ্রাণ চেষ্টা করি একটা পণ্যের মতো সত্যি মিথ্যে মেশান বিজ্ঞাপন দিয়ে  ক্রেতার  মন জিতে নিতে। দাদা বরাবর কুল থাকে। এবারই দেখছি বড্ড ছটফট করছে। (২) যা বলছিলাম, তিরিশ থেকে সাত। এই সাতটা দিন, না আট দিন। জানুয়ারিতে একতিরিশ দিন বলে বাড়তি আরেকটা দিন। ম্যাডাম বলে দিয়েছেন, এই এক  সপ্তাহ তোমাকে সময় দিলাম তনু। স্যার বলছিলেন এক তারিখেই তোমার হাতে চিঠি ধরাতে। আমি বলে কয়ে সাতটা দিন চেয়ে নিয়েছি। বরাবরই আমি ম্যাডামের  এই বাড়তি স্নেহটুকু বুঝতে পারি। তনুশ্রী থেকে কদিনের মধ্যেই তনু হয়ে গেছি বলে শুধু নয়। গম্ভীর হয়ে থাকলে তুমি , নাহলে তুই হয়ে গেছি সেই কবেই। টি. এ. বিল টিল… ঝামেলা হয়নি কখনই, যেমন রাকেশ কি বাণীদিদের । – ভীড় বাসে টাসে উঠতে যেওনা। টোটো কি অটো করে নিও। আমি থ্রু করিয়ে দেব। তবে আমি বাড়তি সুযোগ নিই নি কখনও এর চেয়ে বেশি। সেরকম হলে তো অ্যাপ ক্যাবের ভাড়াও চেয়ে বসতাম। কিন্তু পরিস্থিতি এখন ঘোরালো হয়ে উঠছে। কোভিডের জন্যে বাজার ডাউন। অনেককেই বসিয়ে দিয়েছে। – একটা কিছু করে দেখা এবার তনু। প্রীতি, মিলনী স্যারের কাছে এসে তোর কথা তুলে ঝামেলা করে গেছে। একটা ক্লায়েন্টও দিতে পারিসনি ….. ছ`মাসের জায়গায় সাড়ে ন`মাস গড়িয়ে গেল। শুধু আমার কথায় তোকে কাগজ ধরায়নি। – বিয়ে হয়ে বাচ্চা ভি পয়দা হবার টাইম পার হয়ে গেল, তনুশ্রী তো এনগেজমেন্ট তকই পৌঁছল না। ঢপ মেরে যাচ্ছি তোর হয়ে এটা ওটা। ওরই লাকটা খারাপ প্রদীপদা। একটা তো প্রায় ফাইনাল হয়ে গেল তখন ছেলের জেঠু করোনায় গেল। তোর ঐ ফরেনের কেসটার কথা জিগ্যেস করছিল। বলে দিলাম ফ্লাইট চালু হলেই ওটা ধরে নেবে তনু। প্রায় ফাইনাল। চোদ্দই ভ্যালেন্টাইন। সাত তারিখের মধ্যে ফাইনাল করতে হবে। একটা একটা করে দিন চলে যাচ্ছে । প্রেসার বাড়ছে,ঘাড়ের কাছে  কন্টিনিউয়াস দপদপানি, […]


  • পুকুর

    বাঃ, পুকুরের জলটা তো তেমনিই টলটলে আছে! ঠিক যেন আয়না। টিফিনে ঐ জলে আমরা  মুখ দেখে চুল ঠিক করে নিতাম।  ওপাড়ের তালসারিতে কত বাবুই পাখির বাসা ছিল। যাঃ, বাবুইগুলো কোথায় গেল, তালসারিটা তো একইরকম আছে। ও পাশের ঐ রাধাচূড়া গাছটাও তেমনিই ঝুঁকে দাঁড়িয়ে আছে। হলুদ ফুলে ছেয়ে থাকত গাছটা। ঝরা ফুলে পুকুরের জলটাও হলুদ হয়ে […]


  • অমৃতরস

    “দিন রজনী কত অমৃতরস…” পরিচিত ধীর পায়ের চলনে নীলাদ্রির গুনগুনানিতে ছেদ পড়ে। শব্দটা যেন ইতস্তত করেও শেষমেশ ওর পিঠ ঘেঁষে দাঁড়ালো,আস…..আসবো? – এসেই তো পড়েছো। ঘাড় না ফিরিয়েই জবাব দেয় নীলাদ্রি। – দাদা। আগন্তুকের স্বরটা কেমন কাঁদো কাঁদো ঠেকলো।। এবার খানিকটা বাধ্য হয়েই নীলাদ্রিকে মুখ ফেরাতে হলো…. না এতো তার পরিচিত কেউ নয়। দরজার সামনে […]


  • তৃষিতকাল

    আমি যদি কোন চিত্রকর হতাম তাহলে পটে তার ছবি আঁকতাম। তারপর সে ছবি হয়তো ফেসবুকে আপলোড করে,পত্রিকার পাতায় ছাপিয়ে কিংবা পোস্টার বানিয়ে দেয়ালে দেয়ালে সাটিয়ে দিয়ে সবাইকে জানিয়ে দিতাম- এই সেই মেয়ে, এই সেই মেয়ে যাকে আমি খুঁজছি। যদি আমি আত্রেয়ি তীরের মৃৎশিল্পী শ্যামাঙ্গের মতো হতাম, তাহলে তার পুত্তলি বানিয়ে লগে নিয়ে ঘুরতাম আর লোকজনকে […]


যোগাযোগ


email:galpersamay@gmail.com

Your message has been sent. Thank you!

গল্পের সময় পরিবার
সমীর
অগ্নীশ্বর
দেবাশিস
চিন্ময়
পার্থ
মিতালি
জাগরণ
দেবব্রত

© 2016 - 2024 গল্পের সময়। ডিজাইন করেছেন অগ্নীশ্বর। নামাঙ্কন করেছেন পার্থ